Skip to main content

নবরূপা

#নবরূপা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

রাস্তার মোড়ের লাল বাড়িটা আজ যেন বড়ই চুপচাপ।উল্টোদিকের বাড়িতে থাকা সোনাই কতবার করে ঘুরে গেছে বারান্দায়। মাঝে মাঝেই এসে বারান্দায় দাঁড়ায় আর গালে হাত দিয়ে লালবাড়ির দিকে তাকায় ঐ বুঝি বিয়াস কাম্মা হাত নাড়বে বারান্দায় দাঁড়িয়ে অন্তুকে খাওয়াতে খাওয়াতে।আর তারপর কত এলোমেলো বকবক করবে," সোনাই বুড়ি এই দ‍্যাখ আমার কোলে উঠেছে অন্তু বুড়ো।"
      ওপাশ থেকে খিলখিল করে হেসে উঠতো সোনাই," ও মা কাম্মা আমিও বুড়ি আর অন্তুও বুড়ো! কেন গো? আমার আট আর ওর তো সাত।তুমি এটুকুও জানোনা যে আমরা বাচ্চা।"
       ও পাশ থেকে বুড়ো আঙ্গুলের কাঁচকলা দেখিয়ে কাম্মা বলতো," দুটোই তোরা বুড়োবুড়ি।কই তোদের দাঁত আছে দেখাতো দেখি?"
       মুখে চাপা দেয় সোনাই,সত‍্যিই তো সেই কবে সামনের চারটে দাঁত পড়েছে এখনো উঠলোনা কিছুতেই।অন্তুটারও তাই,এই সেদিন বলছিলো," সোনাইদি,দাঁতটা কবে জন্ম নেবে বলতো? আমি সেদিন হ‍্যাপি বার্থডে বলেই চকোলেট খাবো। দাঁতের ফাঁক দিয়ে চকোলেট গলায় চলে গেছিলো জানো।"
          দুজনেই দুজনের দুঃখ বুঝেছিলো সেদিন,একেই বন্ধুরা ফোকলা বলছে তারপর চকোলেট গলায় চলে যাচ্ছে আর পারা যায়না।

      তারপর কতদিন চলে গেছে অন্তুর দাঁতের হ‍্যাপি বার্থডের চকলেটের ভাগ পেয়েছিলো সোনাইও। বিয়াস কাম্মা আর বুয়া আঙ্কেলের সাথে মাঝে মাঝেই যখন অন্তু ওকে টাটা করে বেড়াতে যেতো। সোনাই এসে মায়ের কাছে বায়না করতো.." মা বাপিকে বলোনা আমরাও কোথাও যাবো।অন্তু তো ঘুরতে গেলো মা বাবার সাথে।"
        মা ঠাম্মার দিকে তাকিয়ে চুপ করতে বলতো। পরে বলতো," অন্তুর বাবা চাকরি করে।আমাদের তো দোকান মা,দাদু খুব বকবে যখন তখন দোকান ছেড়ে বাইরে বেরোলে।"
             সোনাইয়ের মন ভেসে যেতো অন্তুর সঙ্গে কখনো চিড়িয়াখানায় আবার কখনো সায়েন্সসিটিতে। কখনো বা অন্তু রঙ বেরঙের বেলুন উড়িয়ে দিতো ওর দিকে।সোনাইদি মা কিনেছে তোর জন‍্য।বেলুনের রঙে মন উড়ে যেতো সোনাইয়ের ময়দানের সবুজে। ও তো গেছে বাবার সাথে দুএকবার ভিক্টোরিয়া, তখন এমনি বেলুন কিনে দিয়েছে বাবা।
           কিন্তু হঠাৎই অন্তুদের লাল বাড়িটা যেন কালো পর্দায় ঢাকা পড়লো।বারান্দায় কতদিন অন্তুকে দেখেনে সোনাই। ঠাম্মাকে বলতে শুনেছে ইশ্ কি কান্ড মাগো! এই জন‍্যই বলেনা বেশি উড়তে নেই।হোটেল রেস্টুরেন্টে খাওয়া,বাইরে যাওয়া, এত কিছুর পরেও আবার সেই বাইরের মেয়েমানুষ লাগলো! ছিঃ,খারাপ লাগে বিয়াসের জন‍্য। হাসিখুশি ভালোমানুষ মেয়েটা।"
           কিচ্ছু মাথায় ঢোকেনা সোনাইয়ের, কদিন ওদের বারান্দার ছিটকিনি দিয়ে রেখেছে মা, শুধু মালতী মাসি এলে একবার খোলে মুছতে তারই ফাঁকে উঁকি দেয় সোনাই। কাম্মার ঘরের জানলা দরজা সব বন্ধ,অন্তুকেও কোথাও দেখতে পায়না।
        মাকে অনেক করে জিজ্ঞেস করে জানতে পেরেছে বুয়া আঙ্কেল আকাশের তারা হয়ে গেছে।
   " মা তারা হয়ে যাওয়া কি গো? মরে গেছে?"
   মা ওকে জড়িয়ে ধরে বলে," ওসব কথা বলতে নেই। আকাশ থেকে সবাই সব দেখে বুয়া আঙ্কেলও দেখছে অন্তুকে আর বিয়াস কাম্মাকে।

*******************
 প্রথমে কদিন হসপিটালে ছুটোছুটি তারপর বুয়ার চলে যাওয়ায় প্রথমে যন্ত্রণা তারপর শুধুই শূন‍্যতা। শুধু জিজ্ঞেস করা হলোনা কি অপূর্ণতা ছিলো বিয়াসের যে বুয়াকে শ্রীনন্দার সাথে মন্দারমণি যেতে হয়েছিলো অফিসের কাজে যাচ্ছি বলে।
             হয়ত গাড়ি চালানোর সময় আটপৌরে ভালোবাসার বাইরে গিয়ে মানে ডালভাতের বদলে বিরিয়ানি খেতে গিয়ে বেসামাল হয়ে গিয়েছিলো বুয়া তাই দুর্ঘটনা।শ্রীনন্দা ওখানেই শেষ, বুয়া বেঁচেছিলো দুদিন। তাকিয়েছিলো বিয়াসের দিকে হয়ত কিছু বলতে চেয়েছিলো কিন্তু বলতে পারেনি শুধু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়েছিলো। বিয়াস বাড়িতে রাধাগোবিন্দের সামনে দাঁড়িয়ে বলেছিলো..বিয়াসের ভালোবাসার বুয়া হয়ত আর ফিরবেনা,তবুও তুমি অন্তুর বাবাকে ফিরিয়ে দাও।
         তবে সব চাওয়া কি সত‍্যি হয়? তাই বোধহয় অন্তুর বাবাও আর ফিরলোনা। বিয়াস বন্ধ ঘরে নিজেকে জিজ্ঞেস করেছিলো.." আচ্ছা ওর কি কষ্ট হচ্ছে? না রাগ আর অভিমান হচ্ছে বুয়ার ওপর?কি না পাওয়া ছিলো বুয়ার তার খবর এই দশবছরে কোনদিন পায়নি বিয়াস। আচ্ছা পরকীয়া কি অভাবে হয় না সবটাই স্বভাবে? কিন্তু বিয়াস কেন প্রেম ভাঙার শব্দটা টের পায়নি কে জানে? আজ হঠাৎই ঘর ভাঙার ধাক্কাটা আর নিতে পারছেনা।তার সাথে মনটাও যে ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।"
            অন্তু বিয়াসের সাদা শাড়ি পরা চেহারাটা দেখে খুব ভয় পেয়েছে।বাড়ির লোকজন কেউই ওকে সামলাতে পারছেনা।শাশুড়িমা তো স্পষ্টই বললেন," নিজের শোক সামলাবো না এই ছেলেকে সামলাবো? মাকে দেখে বলে কিনা "তুমি কি ভূত যে এমন ফ‍্যাটফেটে সাদা শাড়ি পরেছো? তোমাকে দেখে আমার ভয় লাগছে।" ভগবান আমি কোনদিকে যে যাই?"
        বিয়াসের আজকাল নিজেকে কেমন যেন ভূত বলেই মনে হয়,এলোমেলো উস্কোখুস্কো চুল,সাদা শাড়ি,ন‍্যাড়া হাত।একসময় জড়ির চওড়া পাড় শাড়িতে,গয়নায় আর সিঁদুরের ছোঁয়াতে অন্নপূর্ণা রূপে বারান্দায় উত্তর পূর্বে রাখা টবের তুলসী গাছে জল দিতো বিয়াস। মা বলেছিলো," স্নান করে তুলসী গাছে জল দিবি।স্বামী সোহাগিনী জন্ম এয়োস্ত্রী হয়ে থাকবি তাহলে।
         সোনাই মাঝে মাঝেই বলতো," কাম্মা কি করছো গো?"
   " এই তো গাছে জল দিচ্ছি। তোর স্নান হয়নি পাকাবুড়ি?"
    " স্নান করবো তো এক্ষুনি।তোমাকে দেখতে এলাম,তোমাকে কি সুন্দর দেখতে গো!"

      শিশু মনের সরলতা মাখা শব্দগুলো ছুঁয়ে যেতো বিয়াসকে। আজ যেমন ছুঁয়ে যায় বাক‍্যবাণ.."ছেলেটাকে বোধহয় তেমন ধরে রাখতেই পারেনি।নাহলে এমন হয়? এখন তো নিজের ছেলেও কাছে আসেনা মাকে ভূত বলে।"
           একলা বন্ধ ঘরে দম আটকে আসে বিয়াসের বাইরের দরজাটা খুলেছে প্রায় দশদিন বাদে।দুপুরবেলা এখন,বাড়ির সবাই ঘুমিয়েছে।অন্তু নিচে শ্বশুরমশাইয়ের কাছেই রয়েছে কদিন।
            বসন্তের মিঠে হাওয়া মাখে বিয়াসের ক্লান্ত বিধ্বস্ত জলমাখা মুখচোখ।বাড়ির পাশের কৃষ্ণচূড়া গাছটা ফুলে ফুলে লাল হয়েছে। মনটা উড়ে যায় ওর প্রথম বিয়ে হয়ে এ বাড়িতে আসার দিনটাতে, মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলো লাল গাছের পাশের লালবাড়িটা দেখে।তারপর তো কত বসন্তেই না ফুলের রঙে চোখ ডুবিয়ে সিঁদুরের রঙে লাল করেছে বুয়ার সাদা গেঞ্জি। " ইশ্ গেলো গেঞ্জিটা। এবার এটাকে লুকিয়ে রাখতে হবে।"
"বেশ হয়েছে,আদর করতে এলে এমন একটু দাগ লাগবেই। দাগ আচ্ছা হ‍্যায়।" বিয়াস আদর মেখে বলতো।
       " খুব বিজ্ঞাপনের ভাষা শিখেছো! তোমার হচ্ছে দাঁড়াও।"
     বুয়ার পাগল পাগল আদরে বিয়াসের সাথে লাজে রাঙা হত কৃষ্ণচূড়া গাছটাও।
              হঠাৎই অনেকদিন বাদে সোনাইকে দেখে বিয়াস। চোখাচোখি হয়ে যায় বিয়াসের সঙ্গে সোনাইয়ের। বিয়াসের বিষণ্ণ চোখদুটো সোনাইয়ের মুখের হাসি আর কাম্মা শোনার জন‍্য অপেক্ষা করে।হঠাৎই দেখে সোনাই যেন ভয় পেয়ে ছুটে ঘরে চলে গেলো। দুম করে ওদের বাড়ির ভারী দরজাটা বন্ধ হয়ে গেলো।বিয়াসও দরজা বন্ধ করলো ভীষণ এক কষ্ট নিয়ে,অন্তুর মত সোনাইও ওকে ভয় পাচ্ছে? সত‍্যিই কি ও ভূত হয়ে গেছে?
           নিচ থেকে অন্তুর কান্না শুনতে পায়," আমি দুধ খাবোনা,আমাকে ফিশফ্রাই দাও।যেমন বাবা আনতো।আমি বেরু যাবো গাড়ি করে।"

*****************
   দুদিন বাদেই বুয়ার কাজ,খুব দরকার না হলে নিজের ঘরেই থাকে বিয়াস। ভোরবেলা হঠাৎই দরজায় শব্দ হয়।সারারাত ঘুম না এসে ভোরে চোখটা লেগে গেছে।
         '' বিয়াস দরজা খোল আমি মুন্নী,দরজা খোল।"
       বিছানা থেকে লাফিয়ে ওঠে বিয়াস মুন্নী এসেছে? ফোনে অনেক কান্নাকাটি করেছে ও তবুও মনটা যেন কেমন করে ওঠে।আগে মুন্নী এলে চাঁদের হাট বসতো বাড়িতে। মুন্নী বিয়াসের বেস্টফ্রেন্ড ছিলো একসময়, এখন ছোট ননদ। ওর ঘটকালিতেই বিয়াস আর বুয়ার বিয়েটা হয় ও এখন বিয়ের পর কানপুরে থাকে।
             একটু সময় নিয়ে দরজা খোলে বিয়াস।তারমধ‍্যে দরজায় আরো কয়েকবার নাড়া দিয়েছে মুন্নী তারপর বিয়াসকে দেখেই চমকে ওঠে.. "এ কি ভূতের মত চেহারা করেছিস! কত শখ করে তোকে আমার বৌদি করে এনেছিলাম।মাকে বলেছিলাম,এই পাড়াতে এমন সুন্দরী কটা বৌ আছে দেখাও তো দেখি? দাদাটা যে কি করলো? নিজেকে খুব ছোট লাগছে রে।"
        দুজনের কারো কান্নাই আজ আর বাঁধ মানলোনা যত মান অভিমান কষ্ট সবই আজ বাঁধভাঙা ঢেউয়ের মত আছড়ে পড়লো বিয়াসের দুই চোখ বেয়ে।
      মুন্নী আসাতে অন্তু আশ্রয় নিয়েছে পিয়ের কাছে। একটা সময় পিসি আসতোনা মুখে পি পি করতো এখনো সেটাই রয়ে গেছে।

               অনেকদিন বাদে রান্নাঘরে ঢুকেছে বিয়াস শাশুড়িমা আপত্তি করলেও শোনেনি। মুন্নীই বুঝিয়েছে মাকে," দাদামণির জন‍্য একটু রান্না করতে চাইছে করুকনা মা। ওকে ওর মত করতে দাও।"
         পিঠে,পায়েস,পাটিসাপটা খুব পছন্দ ছিলো বুয়ার।প্রতি শীতেই করে খাওয়াতে হত তাকে।তাই আজ শেষ বারের মত রান্না করে বিয়াস।মনে মনে বলে," আমি জানি তুমি ভুল করেছিলে,তবে আমাকে ভালোবাসতেনা বিশ্বাস করিনা।"
     হঠাৎই মনে হলো..সেই পাপের শাস্তিই কি ভগবান দিলেন? নিজের মনকেই শাসন করে বিয়াস। সব গুছিয়ে সাজিয়ে থালায় বাড়ে।মুন্নী তাড়া দেয়," তোর হয়েছে? চল এবার একটু পরিস্কার হয়ে নে।"
        " এই তো বেশ আছি, আর লাগবেনা কিছু।"
   "ছেলেটা ভয়ে গুটিয়ে আছে,আজ ওকে কোলে নিবি।"
      মুন্নী এনে ওকে বড় ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়..শাড়ি ব্লাউজ এগিয়ে দেয় ওর দিকে.." আমি একদম ব্লাউজ বানিয়ে নিয়ে এসেছি,নে পরে ফেল।এবার বকবো কিন্তু।"
      শাড়িটা হাতে নিয়ে চমকে ওঠে বিয়াস কনক চাঁপা রঙের শাড়িতে মেরুন পাড়.." আমি পরবো না এটা তো লালই।"
  " এটা লাল নয় বুদ্ধুরাম,চিরকালই বুদ্ধু রয়ে গেলি। আর লাল পরলেই বা কি? লাল রঙ কি দাদা এনেছিলো যে সাথে করে নিয়ে গেলো? লাল তো শক্তির রঙ। মনে শক্তি আনতে হবেনা? ছেলেকে মানুষ করবে কে শুনি?"

          পিঠের বোতাম গুলো আটকে শাড়িটা পরিয়ে দেয় যত্নে বন্ধুবৌদিকে মুন্নী।আলমারি খুলে মণিপুরী বালাজোড়া, গলায় একটা সরু চেন আর কানের দুল সব পরিয়ে কপালে ছোট্ট টিপের বিন্দু এঁকে দেয় যত্নে।

     নিচে তখন অনেক লোকজন এসেছে বিয়াসকে দেখে সবাই অবাক হয়।অনেকে কানাকানিও করে।ওর পিসিশাশুড়ি বলেই ফেলে.." বাবা আজও তোমাকে সাজতে হলো? রূপ তো একদম ফেটে বেরোচ্ছে।হাজার হোক বেধবা মানুষ...."
     চোখ ফেটে জল আসে বিয়াসের মুন্নী এগিয়ে যায় কিছু বলতে হঠাৎই ছুটে আসে অন্তু কোথা থেকে। পাগলের মত বিয়াসকে জড়িয়ে ধরে.." মা তুমি আবার আমার মা হয়েছো? আর ভূত হবেনা তো?"
        কান্নায় আদরে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে বুকে বিয়াস। ততক্ষণে সোনাইরাও এসে পড়েছে। সোনাই এসে জড়িয়ে ধরেছে ওকে.." তোমাকে কি সুন্দর লাগছে কাম্মা একদম দুগ্গা মায়ের মত।"
                      আজ হয়ত এইটুকুর দরকার ছিলো ভূত থেকে মানুষ হবার জন‍্য।কানে আসে মুন্নী বলছে," কখনো বাঁচতে আর বাঁচাতে খোলশটুকু লাগে পিসি। মানুষ মরে ভূত না পেত্নী কি হয় জানিনা। চোখের সামনে জ‍্যান্ত ভূতকে ঘোরাঘুরি করতে আমি দিতে পারবোনা।ঠাকুমা বলতো তোমার মনে নেই সাজলে গুজলে বেটি আর লেপলে পুছলে মাটি। আজ থেকে অন্তুর জন‍্য বৌদি এমন থাকবে,যাতে ও বুঝতে না পারে বাবা নেই।"
সমাপ্ত:-
         
  
    

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...