Skip to main content

জীবন যখন যেমন(১০)

পরিচ্ছন্ন হয়ে নিজের ঘরে এসে বিছানায় শরীর এলিয়ে দেয় রবীন কেন যেন খুব শান্তি লাগছে আজ, মনে হচ্ছে জীবনটা বড় সুন্দর। হয়ত এর থেকে আর বেশি কিছু চাওয়া সন্তানের কাছে থাকতে পারেনা। 
     সন্তান যখন তাকে বড় করার পেছনে বাবা মায়ের অবদান, তাদের কষ্ট অথবা ভালোবাসা দিয়ে তাদের ঘিরে রাখাটা বুঝতে পারে সেটাই হয়ত অনেক বড় প্রাপ্তি। দুষ্টু যেমন বুঝেছে বাবা কতটা ভালোবাসে ওকে যে ওর না পাওয়ার যন্ত্রণাটুকু জানতে পেরেই ছুটে এসেছে পাগলের মতো।
      বালিশে মাথাটা রাখার সাথে সাথে মস্তিষ্ক কিন্তু বিশ্রাম নেয়না,সে তার নিজের খেয়ালে চিন্তা করে যায়। নিজের করণীয় কাজগুলো সবসময় মনের ডায়েরির খোপে গুছিয়ে নেয় আগে থেকেই রবীন।
    যদিও দুই মেয়েই বকুনি দেয়," বাবা এতো কিছু মাথায় রেখোনা পরপর লিখে রাখো কি কি কাজ করবে। নাহলে ফোনে নোট করে নাও।"
      রবীন হেসেছে," ওরে মাথারও চর্চা করা জরুরী নাহলে ও বেটাও মজা পেয়ে যাবে আর কাজ করবেনা।" 
         মাঝে একটা দিন তারপরই মিষ্টির আশীর্বাদ, যদিও অনেক কাজ গুছোনো হয়ে গেছে তবুও বাকিটা সেরে ফেলতে হবে।এই কদিন দুষ্টু ছেলের মতই বাবাকে নিয়ে এদিক ওদিক করেছে কখনো গাড়িতে আবার কখনো বাইকে। দুষ্টু এখন দৃষ্টান্ত সবার কাছে,আর নানান অস্বস্তিকর প্রশ্নের ফাঁদে জড়াবে বলে বাইরে বেরোতে খারাপ লাগেনা দুষ্টুর।
              রবীনের মনে চিন্তার ভিড়ের মাঝে হঠাৎই আবার ভেসে আসে একটা মুখ, আর সেকথা ভেবেই বড় নিশ্চিন্ত লাগে। কাল ওদের পাশাপাশি হাঁটতে দেখে বারবারই মনে হয়েছে দীপ্তর পাশে, না না দুষ্টুর পাশে দীপ্তকে বেশ মানায়।ভেবেও আবার নিজেকে স্বার্থপর মনে হয়েছে,সত‍্যিই তো বারবার মেয়ের স্বপ্নকে নিজের মতো কেন সাজাতে চায়?
      দুষ্টু বড় হয়েছে,এত বড় একটা জায়গায় পৌঁচেছে,ওর কিছু মতামত থাকতেই পারে। আর দীপ্ত তো ওর ছাত্র,শেষে কি গুরুদক্ষিণা চেয়ে বসবে ওর কাছে? তাছাড়া পদ মর্যাদায় এখনো দীপ্ত...কিন্তু সত‍্যিই কি পদমর্যাদা ভালোবাসায় বাধা হয়ে দাঁড়ায়?
    আবার মনে হয় দুষ্টু কি দীপ্তকে ভালোবাসে না শুধুই এগিয়ে দিতে চায় সামনের দিকে? নিশ্চয় দুষ্টুর কোন অনুভূতি আছে নাহলে হঠাৎ দীপ্তই বা দুষ্টুর কাছে আসবে কেন?
     দীপ্ত একটু মনের দিক দিয়ে ভারী জোজোর মত হাল্কা নয় তাই কোন কারণ ছাড়া আসবেনা ছেলেটা।
        নানা কেনর চিন্তা করতে করতে সত‍্যিই পরিশ্রান্ত হয়ে যায় রবীন চোখটা বুজে আসে। রবীনকে নিশ্চিন্তে ঘুমোতে দেখে অনু আর জাগায়না।

************************
     নিজের ঘরে বিছানায় প্রথমে একবার গড়িয়ে নেয় দুষ্টু।ওর ছেলেমানুষী দেখে মিষ্টি হাসে," মায়ের কাছে অনেক আদর খেলি,এবার বল কলকাতায় কি করলি? তোর কাজ হলো কি না? পোস্টিং কবে হবে?"
        দুষ্টু গড়িয়ে হাই তোলে," সব ঠিক ঠাক আছে,কলকাতায় এই কদিন একা একা ঘুরলাম। তোরা না থাকায় বোর হলাম।তোর কৌটোতে রাখা সব খাবার ধ্বংস করলাম। আর পোস্টিং হবে খুব তাড়াতাড়ি। এই দাঁড়া তোর জন‍্য একটা জিনিস আছে..."
        লাফ দিয়ে উঠে ব‍্যাগ খোলে দুষ্টু...অবাক হয়ে তাকায় মিষ্টি," তুই আবার কি কিনলি? এতো কিছু তো কেনা হয়েছে। চাকরি পেয়ে তারপর দিবি।"

       মিষ্টির হাতে একটা বড় বাক্স দেয় দুষ্টু," তোর আর জোজোদার জন‍্য।সত‍্যিই দীপ্তদাও পারে একটা বুড়োমার্কা উপহার দিয়েছে তোকে।সত‍্যিই কি ভাগ‍্য তোর দিদি আশীর্বাদেও উপহার তাও আবার স্কুলের বন্ধুর কাছ থেকে।"

       মোড়ক খুলে হাসে মিষ্টি," কি ভালো একটা জিনিস এটা, বুড়ো মার্কা হবে কেন?কত গান আছে এর মধ‍্যে খুব ভালো উপহার আমি এখনি ফোন করছি দীপ্তকে।"
         দুষ্টু চলে যেতে যেতে বলে," তা কর তবে আমি যে বুড়োমার্কা বলেছি সেটা বলিসনা।খারাপ লাগবে ওর।"
      " এই একদম পালাবিনা,ওটা তো আগেই বলবো।এই বোন দাঁড়া বলছি।"
        অনু ঘরে এসে একটু আলতো বকুনি দেয়.." উঃ এই শুরু হলো, বাবা ঘুমোচ্ছে তো। দুষ্টু ওদিকে কিন্তু অনেক কাজ আছে।"
     " জানি মা, ভেবোনা সব হয়ে যাবে।"

         দিদি দীপ্তদার সাথে কথা বলছে,ওদের কথার মধ‍্যে দুষ্টু মাথা রাখে মিষ্টির কোলে। ওর ফোনটা বেজে ওঠে হঠাৎই.. জোজোদা ফোন করেছে।
      ও ফোন ধরতেই বলে," কি রে কখন এলি? সেদিন গেলাম তোকে নিয়ে একটু ঘুরবো মজা করবো বলে তো তুই নেই।"
    " তাতে কি হয়েছে দিদি তো ছিলো।তোর তো দিদির সাথেই দরকার।আমি কে? এখন ফোনে পাসনি দিদিকে তাই ফোন করেছিস।"
      ধরা পড়ে যায় জোজো, হাসে দুষ্টু.." দিদি দীপ্তদার সাথে কথা বলছে দাঁড়া তোকে অ্যাড করে নিচ্ছি ওর ফোনে।"

        দুষ্টু খুব এনজয় করে ওদের বন্ধুত্বের খুনশুটি, হয়ত অনেক খারাপেরও কিছু ভালো দিক আছে।দীপ্তদার ওপর আক্রমণ হয়েছিলো বলেই হয়ত আবার ওদের বন্ধুত্বের মাঝের গ‍্যাপটা ভালোবাসা নামক আর্টিকেলে ভর্তি হয়ে গেলো। এমন ভালো বন্ধুত্বের মধ‍্যে ও যে কখন ঢুকে গেছে বুঝতেই পারেনি। এখন বন্ধুত্বটা ত্রিকোণ থেকে চতুষ্কোণ হয়ে গেছে।যদিও দিদিটা বকা দেয়..ছোট ছোটর মতো থাক।
    তবুও দুষ্টু যোগ দিলো ওদের সাথে,মিষ্টি তার মধ‍্যেই গানটা চালিয়ে দেয়.." এই দেখ আমি শুনছি ওটা বাজতে থাকে নিজের আনন্দে...একদিন দল বেঁধে কজনে মিলে যাই ছুটে খুশির।"

         দীপ্তর মনটা ছুঁয়ে যায় ওর দেওয়া উপহারটা ওদের পছন্দ হয়েছে বলে। হঠাৎই জোজো বলে ওঠে," একটা আউটিং করবি এরমধ‍্যে, দুষ্টুর তো জয়েন করতে আরো কিছু দিন বাকি।"
      দুষ্টু অবাক হয়, " মানে আশীর্বাদ হয়ে যাচ্ছে দিদির এটা মনে রাখিস,এখন আবার কোথায় যাওয়া?"
    মিষ্টি বলে," না না এখন হবেনা,মা জানলে খুব বকবে তোর সবটাতেই বাড়াবাড়ি।"
     " ইশ্ ভাবলাম একটা ব‍্যাচেলর আউটিং করবো বন্ধুত্বটা থাকতে থাকতেই। এরপর তো সিঁদুরের ছাপ্পা লাগবে বন্ধুত্বে...তারপর তুমি,হ‍্যাঁ গো,ওগো শুনছো।"
      হা হা করে হাসে দুষ্টু.." বেশ হয়েছে,এবার বোঝ।এইজন্যই বলে বন্ধুকে বিয়ে করতে নেই।"
     মিষ্টি বলে, " জোজো একদম ভালো হবেনা বলছি,আমি কিন্তু বিয়ে ক‍্যানসেল করে দেবো।তুই আগে বলেছিস বিয়ের কথা।"
            দুষ্টু বলে ওঠে," দীপ্তদা দেখো,নারদ নারদ। ওরে বাবা এই বিয়ে টিয়ে না করাই ভালো।"
       দীপ্তর অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করে বলতে পারেনা.. শুধু মনে ভাবে হয়ত এই মিঠে ঝগড়াটা জীবনেরই অঙ্গ।  
      মনের কথা মনে রেখে বলে ওঠে.."কলকাতা থেকে পুরুলিয়া, খুব দূর নয়।আসবি নাকি ব‍্যাচেলর পার্টিতে আমার ওখানে,একটা দুটো দিন একটু রঙ লাগবে আমার ফ‍্যাকাশে মনটাতেও।"
       কেন যেন দীপ্তর কথাটা ওদের সবাইকে ছুঁয়ে যায়।বারবার মনে হয় মনের কোণে কোথাও একটা হেরে যাওয়ার কষ্ট আছে। তাই একটু হাল্কা হতে মিষ্টি বলে," সত‍্যিই তো ফ‍্যাকাশে মনে রঙ লাগেনি কেন এতদিন তোর? পুরুলিয়াতে এত রঙ! জোজো বন্ধুর মনের খবর নিতে হবে এবার।"
         দুষ্টু চুপ করে ওদের কথা শোনে,দীপ্ত ভেবেছিলো দুষ্টু কিছু বলবে। তার আগেই জোজো বলে ওঠে..." দেন ফ‍্যাকাশে মনে রঙের ছোঁয়া দিতে আমরা তিনমূর্তি চলে যাবো পুরুলিয়া। ব‍্যাচেলর পার্টি ওখানেই হবে।"
        " কিন্তু আমার যাওয়া হবেনা বোধহয়,তাছাড়া ওখানে পার্টি করলে দীপ্তদার তো বেড়ানো হবেনা,ও তো ওখানেই থাকে।তাছাড়া পুরুলিয়া আমার দেখা জায়গা। ওখানকার সব চিনি আমি।"
            ওদিক থেকে একটা ভেজা গলায় আওয়াজ আসে," প্লিজ দুষ্টু একবার আয় এখানে, সবাই মিলে একটু মজা করি।"
       দুষ্টু দম নেয় হাসিটা চেপে তারপর বলে," আচ্ছা ভেবে দেখি,এখন তো দেরি আছে অনেক। তোমরা গল্প করো আমি আসছি।"
         বাইরের হাওয়াতে এসে বাকি হাসিটা ভালো করে হেসে নেয় দুষ্টু। একমুঠো ভালোলাগার খুশি মেখে নেয় চোখেমুখে আদরে। সত‍্যিই দীপ্তদার করুণ আর্তি শুনে এত হাসি পাচ্ছিলো যে ওখানে আর থাকতে পারেনি নাহলে দিদি মজা করতো।

******************
      মায়ের আর বাবার সাথে হাত লাগিয়ে সব কাজ গুছিয়ে এনেছে দুষ্টু।রবীন বলে "ভাগ‍্যিস তুই ছিলি নাহলে যে কি করতাম।"
  অনু বলে," মিষ্টি দেখছিস তো এরপর ওর বিয়ের সময় কিন্তু তোকে সব করতে হবে। অবশ‍্য জোজো আছে তো।"
    মিষ্টি ঠোঁট ওল্টায়," আমি অত কাজ করতে পারবোনা মা,জোজো সব করে দেবে। তবে তোমাদের দুষ্টু ছানা তো বিয়ে করবেনা এত চিন্তা কিসের?"
     একটু হাসি মজার ছোঁয়াতে বোধহয় বড় কাজও সহজ হয়ে যায়।আনন্দ ভরিয়ে দিতে পারে অনেক কিছু আর বিষাদ শূন‍্য করে দিতে পারে সবটা।
*******************
  তেমনি খুশির ছোঁয়া আর গাড়ির মেলা জমলো রবীনের কোয়ার্টারের সামনে। রাণু,মধুমিতা, শুভ,জয় আর জোজোর বাবার সাথে নামলো আরো কয়েকজন।উত্তরবঙ্গের মানুষদের মধ‍্যে বোধহয় বিয়ের আগে আশীর্বাদ করার প্রথাটা বেশি।মানে বিয়ের আগে আত্মীয়তাকে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।তবে এতোটা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ভাবেনি ওরা...আশীর্বাদের ট্রে এগিয়ে নিয়ে যেতে যেতে দুষ্টু মাথায় হাত দিলো।উঃ বাবা বিয়েতে এত কিছু লাগে শুনেছি। এখন তো সবে আশীর্বাদ এতেই এতো কিছু!

           মধুমিতার খুব ভালো লাগে আজ,একটা অন‍্যরকম অনুভূতি নিয়ে আজ এখানে আসা।মনে পড়ে যায় প্রথম আসার দিনটা কত উৎকণ্ঠা ছিলো মনে আর আজ শুধুই আনন্দ। ভীষণ ভালো লাগছে মিষ্টিকে দেখতে। রাণু জড়িয়ে ধরেছে মিষ্টিকে.." কি সুন্দর দেখতে আমার দুই মেয়েকে।"
      মধুমিতা বলে," সত‍্যিই রাণু আমাদের বাড়িতে কোন মেয়ে নেই তাইতো ইচ্ছে করে মিষ্টিকে খুব সাজাই।"
     " সাজাও,সাজাও এমনিতেই দিদি সাজুনি এরপর আরো সাজবে আর আমি বেচারা খেটে মরি।"
        " দেখেছো রাণু আমাদের দুষ্টু সত‍্যিই এখনো কত ছেলেমানুষ। তোকেও তো সাজাবো আমি,তোকে না সাজিয়ে ছাড়বো নাকি?"
          রাণুর সত‍্যিই অবাক লাগে দিদিভাইকে দেখে...সেই কবে একটা ঘটনা হয়েছিলো তারপর কতটা বদলে গেছে দিদিভাই।

       সত‍্যিই তো আজ রবীনদা যতই আপ‍্যায়ন করুকনা কেন রান্নাঘরের সামনে টুলে বসে অনুর সাথে গল্প করতে করতে মাংসের গন্ধ নেওয়াতেই অভ‍্যস্ত মধুমিতা।তাই মিষ্টির ব্লাউজের ফিতে লাগানো থেকে দুষ্টুর শাড়ি পরানো সবটাই করলো মধুমিতা। দুষ্টু লজ্জা পেতেই বললো.." সেই কোন টুকুনি থেকে তোদের দুটোকে দেখেছি বলতো? মনেই হয়না জোজো আর জয়ের থেকে তোদের আলাদা।"

      দুষ্টু ভাবে শুধু কতগুলো ভালো কথা,বলতেও কোন খরচ হলোনা অথচ কেমন যেন একটা মিঠে স্বাদে মনটা ভরে গেলো।কথাতেই বোধহয় লুকিয়ে আছে জাদু,কখনো কথা কাঁদায় আবার কখনো হাসায়। কখনো ভাঙে আবার কখনো গড়ে।
       দুষ্টুও আদরে মুখ রাখে মধুমিতার ঘাড়ে সত‍্যিই তো কত ছোট থেকে দেখছে জেম্মাকে। ভালো থাকে যেন দিদিটা ওদের সবার মাঝে গিয়ে।

      রবীন আর অনু মধুমিতাকে ডাকতে এসে বোকা হয়ে যায় হয়ত দুজনেরই মনটা ভিজে যায় দুষ্টুর আদর খাওয়া দেখে।
        শুভ বলে," এ কি কার আজকে কি আছে বুঝতেই পারছিনা! দুষ্টুকেও তো খুব সুন্দর লাগছে।"
      মধুমিতা ঢাল ধরে এবার," আচ্ছা মেয়েটা সেই কবে থেকে খাটছে অনুর কাছে শুনছি।আজ একটু সাজবেনা?"
        সাজে আর নানান কাজের মাঝেই আশীর্বাদের সময় ধরেই হয়ে গেলো সবটা। মিষ্টির গালে লাগলো আরো লালচে আভা।জোজোটা সত‍্যিই ভীষণ পাজি দুষ্টুকে ভিডিও কল করেছিলো অনুষ্ঠান দেখার জন‍্য।দুষ্টু পাত্তা দেয়নি মোটেই বলেছে," বৌয়ের আশীর্বাদ বরকে দেখতে হয়না।ফোন কাট,এক্ষুণি কাট।"
     " তোকে তো দেখতে দে একটু,এমন সাজে তো এর আগে কখনো দেখিনি। কোথা থেকে সাজলি?"
         " জেম্মা সাজিয়ে দিয়েছে জোর করে।"
     " বুঝলাম আজ না গিয়ে অনেক কিছু মিস্ করলাম।"
       মধুমিতা আর মিষ্টি মুখ টিপে হাসে। তবে রাণু আর পারেনা বাধ‍্য হয়ে কিছুটা ভিডিও তুলে পাঠিয়ে দেয়।বেচারা ছেলেটা বারবার বলছে।

        মিষ্টির গলায় হারটা পরিয়ে দিতে দিতে মধুমিতা বললো.." আমার মায়ের গয়না তোকে দিলাম। আর এগুলো সব তোর জন‍্যই বানানো।"
                   মিষ্টির মুখের খুশির ছোঁয়া ছুঁয়ে যায় রবীনকে। একটা ছোট কাগজের বুকে লেখা কতগুলো কথা আরেকটু হলেই এলোমেলো করে দিচ্ছিলো সব কিছু।সত‍্যিই যদি মিষ্টি পড়তো ডায়েরিটা তাহলে কি হতো কেজানে? বিয়ে ভাঙার সিদ্ধান্ত রবীনও নিয়েছিলো। একটা বড় ঝড় এসে সব ভেঙে চুরমার করে দিতে এলেও পারলোনা শেষ পর্যন্ত।বাঁচিয়ে দিলো দুষ্টু, তবে শুধু কি দুষ্টু হয়ত দীপ্তও। কারণ ঐ ছেলেটা এত বছর বাদে রবীনের মনে একটু একটু করে স্বপ্নের জাল বুনতে সাহায্য করছে। তবে সত‍্যিই কি সব স্বপ্ন সফল হয়? জোজোর মত দুষ্টুর জন‍্যও কি আসবে এমন কেউ যে ওর সহযোদ্ধা হবে ওকে বুঝবে?

          হয়ত সময়ই দেবে একসময় এই প্রশ্নের উত্তর। "আজ থেকে দাদার বদলে বেয়াই বেয়ান সম্পর্কের শুরু বুঝলেন জামাইবাবু।"
       রবীন হাসে," সে যাই হোক শালী শালীই থাকবে নাহলে গালি দেবো কি করে?"

        মিষ্টির আশীর্বাদের সব শেষ হতে হতে চা বাগানে শেষ বেলার রোদ মাখিয়ে সূয্যি পাটে গেলো। অনু রান্নাঘরে ঢুকে গুছোলো খাবার দাবার..ছেলেটা খেতে ভালোবাসে সেদিন বলছিলো," আমিই বাদ পড়ে যাবো?" তাই ওর খাবার আগে থেকেই তোলা ছিলো।
             সারাদিনের সব কাজ সেরে বাড়ি ফেরা সবার।দুষ্টু বললো," আগেই ভালো ছিলো রাতে থেকে যেতে এখানে। এবার তো গল্পই হলোনা।"
     মধুমিতা বলে সত‍্যি,"জেম্মা সম্পর্কটাই বেশি সহজ ছিলো তাই বলছিস? আচ্ছা এরপর এলে রাত্রি থেকে যাবো।"
        ওদের গাড়িতে তুলে দিয়ে জানলার বাইরে থেকে হাত নাড়ে ওরা চারজন। রবীন ভাবে কে বলতে পারে কখন কে হবে আপনজন?
     
           *************
ঘরে এসে সব গুছিয়ে তোলার পালা,যদিও রবীন লোকের ব‍্যবস্থা করেছিলো যাতে অনুর চাপ না পড়ে। রাতে বারান্দায় বসে কিছুক্ষণ জোজোর সাথে কথা বলে মিষ্টি। আজ যেন কেমন অন‍্যরকম অনুভূতি হচ্ছে। দুএকটা কথা বলেই চুপ করে যায় মিষ্টি,শুধু বলে "কত জিনিস এনেছে জেম্মা।"
    " আমি ওসব জানিনা,তুই অন‍্য কথা বল।এতো চুপচাপ কেন? এখন থেকেই কি বৌ বৌ ফিলিংস হচ্ছে?"
      মিষ্টি বলে," মন খারাপ হচ্ছে,মা আজকে কাঁদছিলো। দুষ্টুর মুখটাও দেখলাম ভার,বাবা একটু চুপচাপ।"
         " তোকে প্রপোজ করবো শুনেই দুষ্টু যা কেঁদেছিলো, আমি তো ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। শেষে অনেক বুঝিয়ে চুপ করিয়েছি।"
     " তাই?কই দুষ্টু তো কোনদিন বলেনি!"

***********************
  রাতের অন্ধকার নেমেছে চারদিকে সারাদিন হইচই করে ক্লান্ত সবাই। দুষ্টু গা এলিয়েছে বিছানায়, মিষ্টি চোখ ডুবিয়েছে ফোনে।
       মিষ্টি ডাকে," বোন ঘুমোলি নাকি? এই বোন।"
   " ঘুমোইনি,বল। গান শুনছি একটু,খুব ক্লান্ত লাগছে।"
  " আজকে তোকে খুব সুন্দর লাগছিলো।তুই সাজিসনা কেন? "
  " আমার ভালো লাগেনা দিদি,আর আমাকে মানায়না।আমি তোর মত সুন্দর নাকি?"
     " তুই খুব সুন্দর, তোর কত সুন্দর একটা মন আছে। জোজোর মনটাও তোর মত খুব ভালো। ওর সাথে তোর অনেক মিল। আমার তো মাঝেমাঝে মনে হয় ওর সাথে তোর বিয়েটা হলেই ভালো হত?"
       দুষ্টুর বুকের ভেতরটা হঠাৎই কেঁপে ওঠে একটা ভাঙনের আতঙ্কে। দিদি কি তাহলে জেনেছে কিছু ঐ ডায়েরির পাতা থেকে? সাবধানী হতে শিখেছে দুষ্টু তাই বলে.." দিদি এসব কথা শুনতে আমার একটুও ভালো লাগছেনা। জোজোদা আমার দাদা,এসব আবার কি কথা?"
       "আচ্ছা বেশ,আর কখনো বলবোনা। আচ্ছা আমার বিয়ে হয়ে গেলে তোর মন খারাপ হবে?"
       একটু হেসে গড়ায় দুষ্টু," কেন মন খারাপ হবে? যাবি তো মণিমার বাড়ি।ইচ্ছে হলেই চলে যাবো আর সব আদর একলা খাবো।"
      মিষ্টি বালিশটা ছুঁড়ে দেয় ওর দিকে..." পাজি একটা। তাহলে জোজো যখন আমাকে প্রপোজ করার কথা বলেছিলো অত কেঁদেছিলি কেন শুনি?"
        একটু চমকে ওঠে দুষ্টু, ঘরের আবছা নীল আলোতে মিষ্টি দেখতে পায়না ওর মুখ।দুষ্টু ওর গলাটা জড়িয়ে ধরে বলে.." তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম দিদি,তোকে কেউ আলাদা করে দেবে শুনে মন খারাপ হয়েছিলো। এখন আমি বড় হয়ে গেছি তাই অনেক কিছু বুঝতে শিখেছি।"

                    দুষ্টু নিজের ডানাদুটোকে আরেকবার ভালোবাসলো কি সুন্দর ওর ডানাদুটো ওকে সব ঝড় ঝাপটার মধ‍্যেও মসৃণভাবে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে আকাশে।
           হঠাৎই দুষ্টুর ফোনের নীল আলোটা জ্বলে ওঠে মিষ্টি চোখ রাখে ফোনে..." এতো রাতে কে ফোন করেছে তোকে? নিশ্চয় জোজোটা? দেখি?"
      ফোনটা একটু আড়াল করার চেষ্টা করে দুষ্টু মিষ্টি বলে," দেখে ফেলেছি,তবে গাইডটা কে? খুব জটিল ব‍্যাপার মনে হচ্ছে,এতো রাতে গাইডের ফোন। দাঁড়া দাঁড়া আমি কথা বলবো তোর গাইডের সাথে। কে গাইড জানতেই হবে।"
               মিষ্টি ফোনটা ধরে কানে রাখে দুষ্টুর মুখে একটা ধরা পড়ে যাওয়ার হাসি...ওপার থেকে ভেসে আসে খুব পরিচিত একটা ভরাট গলা," সরি,জানি তুই খুব টায়ার্ড আজ, একটু হোয়াটস আ্যপ দেখ প্লিজ।"
      হো হো করে হেসে ওঠে মিষ্টি..." আমি মিষ্টি,এই নে বোনের সাথে কথা বল।"
      দুষ্টু ফোনটা নিয়ে বাইরে আসে,পাশে অমল কাকুদের বাড়িতে বাজছে গানটা কথাগুলো কেমন যেন মনে গেঁথে গেলো...
কিছুদিন মনে মনে ঘরের কোণে
শ্যামের পিরিত রাখ গোপনে
ইশারায় কইবি কথা গোঠে মাঠে
দেখিস যেন কেউ না জানে
কেউ না বোঝে কেউ না শোনে,
কিছুদিন মনে মনে......

***************
রাতের নীরবতা আর গানের সুর দুষ্টুকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় সুরেলা রাতে মনের খুশিতে। আজকের দিনটা সত‍্যিই ভালো কাটলো,ছোটবেলায় বাড়িতে লোকজন আসলে খুব খুশি হত। আর লোকজন যাবার সময় কান্না জুড়তো।ঠিক তেমনি হত মামাবাড়ি থেকে আসার সময়। শুধু কান্না পেতো অত লোকজন ছেড়ে আসতে।
     মা বলতো," তোকে এমন একটা বাড়ি দেখে বিয়ে দেবো যেখানে লোকজন একদম গিজগিজ করবে। দুবেলা পঞ্চাশ পঞ্চাশ একশোজন লোক খেতে বসবে।"
       সেসব সেই কবেকার কথা কিন্তু এখন তো ওর মন ছুটে গেছে সেই একলা জঙ্গলের বুকের কোন একটা কোয়ার্টারে যেখানে রাত জেগে আছে কেউ ওর সাথে কথার ছলে পড়াশোনা করার অপেক্ষায়।
          দুষ্টুর টুকরো হাসি আর ছোট ছোট কথা ভরে তোলে দীপ্তকে।
    " আর বোলোনা,দিদি ফোন নিয়ে টানাটানি শুরু করেছে।আমার পেছনে লাগছে যে কে আমাকে এত রাতে ফোন করেছে? তারপর তোমার গলা পেয়ে নিশ্চিন্ত হয়ে ফোনটা দিলো।"
      ওপার থেকে দীপ্তও হাসে," আমিও তো অবাক হয়ে গেছি মিষ্টি ফোন ধরাতে।ভাবলাম তোর আবার কি হলো? শরীর ঠিক আছে তো? আসলে কতগুলো প্রবলেম ছিলো সেগুলোর জন‍্যই ফোন না করে মেসেজ করেছিলাম।"
     " তুমি ভেবোনা আমি পাঠাবো আজই ওগুলো ঠিক করে দেখে নিয়ে।"
      দীপ্তর আরো কিছু বলতে ইচ্ছে করে,একটু চুপ করে যায় দুজনের নীরবতার মধ‍্যে দুষ্টু বলে.." খুব ভালো করে আজ সব হয়ে গেছে। দিদি সত‍্যিই লাকি আসলে ওরা তো আমাদের আত্মীয় তাই অনেকটা নিশ্চিন্ত আর খুশি সবাই।"
       দুষ্টুর কথার মাঝে দীপ্তর মন অতীতের সিঁড়ি ভাঙে হঠাৎই মনে হয়,এই লাকটা তোরই হতে পারতো যদি আমি সেদিন অতটা লজ্জা না পেয়ে সোজাসুজি চিঠিটা উত্তীয়কে দিতে পারতাম। 
         দুষ্টুর সাথে অনেক কথা বলতে ইচ্ছে করছে তবুও সব বলার মাঝে এই কথাটা বোধহয় না বলাই থেকে যাবে। দুষ্টু খুব রাগ করবে,ওর কথা শুনে আর হয়ত কথাই বলবেনা কোনদিন।
        ...." উত্তীয় সত্যিই খুব ভালো ছেলে, ওর কোন তুলনা হয়না। হঠাৎই মানুষের মন ভালো করে দিতে পারে,খুব আপন করে নিতে পারে।বায়না আর দাবী করতে পারে। আসলে আদরে মানুষ হয়েছে তো।"
       দুষ্টু সবটা বুঝতে পারে তাই মুড পাল্টাতে বলে," বায়না মানে এখনো এত্তো বড় একটা ছেলে যে এমন হ‍্যাংলা হয় জানোনা। আমাকে ভিডিও কল করে দেখলো,দিদিকে দেখার জন‍্য ভীষণ বায়না করলো।"
        ওর কথার মাঝে দীপ্ত হো হো করে হেসে ওঠে,নির্জন ঘরের দেওয়ালে সুর তোলে সেই হাসি। নিজেই অবাক হয়ে যায় দীপ্ত,এতোটা প্রাণখোলা হাসি ও হাসলো!
       অবাক হয়ে যায় দুষ্টুও মুখচোরা, লাজুক,পরিমার্জিত যে দীপ্তদাকে ও চেনে সে আজ এক প্রাণখোলা হাসিতে আর অনাবিল বন্ধুত্বে ওকে যেন অনেক আপন করে নিলো।
     দুষ্টু হঠাৎই হেসে ওঠে... সেই হাসির সুর ভেসে যায় কালচিনি থেকে পুরুলিয়ায়,বড় মিঠে সেই হাসি। যা দীপ্তকে আবার বলে গেলো আজকাল মন বলে যায় তোকেই ভালোবাসি।
        " হাসছিস কেন?"
" তুমি হাসলে তাই,আর জোজোদার বায়না আর ছেলেমানুষী ভরা মুখটা আবার মনে পড়ে গেলো।তুমি যদি দেখতে।"
         দীপ্ত বলে ওঠে নিজেরই অজান্তে," আমার তো দেখতে খুব ইচ্ছে করছে।"
      " জোজোদার মুখটা? এই রে সেটা তো নেই।"
 " না না তোদের সবাইকে,অনুষ্ঠানটা। মিষ্টিকে তোকে স‍্যারকে কেমন লাগছিলো? একটা ছবি পাঠাবি?"
          দুষ্টু অবাক হয়ে যায়.." দীপ্তদা এটা? তারমানে বায়না সবারই থাকে। হয়ত অনুষ্ঠান আর সাজগোজ সবারই প্রিয় তাই অনুষ্ঠানে লোকে মিলে যায় আর আনন্দ পায়।"
        দীপ্তদার একাকিত্বের মাঝে আনন্দের রঙ সাজাতে দুষ্টুর ফোন থেকে অনেকগুলো ছবি চলে গেলো দীপ্তর কাছে কোশ্চেন অ্যানসারের সাথে।
        কখনো কখনো কিছু মিঠে মুহূর্তের ছবি মন ভালো করে দেয়।দূরের মানুষকে এনে দেয় খুব খুব কাছে।দুষ্টু আঁধার রাতে মন ভালো করে দিলো দীপ্তর এভাবে কাছে এসে,স‍্যারের সাথে দুপাশে ওরা দুজন। সত‍্যিই বোধহয় স‍্যারের দুই রাজকন‍্যা,অনন‍্যা আর রাজন‍্যা। কিন্তু ছোট চুলের সাজতে না চাওয়া দুষ্টুকে আজ যে স্বপ্নের রাজকন‍্যা মনে হলো দীপ্তর।
         রাত বেশ কিছুটা হয়েছে,বাতাসে হিমের ছোঁয়া গায়ে হাল্কা ঢাকা নিয়ে আদুরে ওমে মুখ ডোবাতে চায় দুষ্টু।
         একটা ইমোজি আসে.."ভীষণ ভালো ছবিগুলো। আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে স‍্যারের সাথে তোদের ছবিটা। আমি নেবো ছবিটা?"
     দুষ্টু টাইপ করে...একটা হাসির ইমোজি দিয়ে," নেবে মানে?ওটা তো তোমাকে, মানে ছবিগুলো তো তোমাকেই পাঠালাম। নাও,মানে রাখো।ভালো হয়েছে ছবিগুলো?"
        কিছু ভালোলাগাকে শব্দে বন্দি করা খুব মুশকিল আর বিশেষ করে দীপ্তর পক্ষে তো বটেই।শুধু বললো,"ভীষণ ভালো,আজ এক অন‍্য দুষ্টুকে দেখলাম।"
         লজ্জা পায় দুষ্টু, মনে মনে ভাবে আজ বোধহয় এক অন‍্য দীপ্তদাকে ও খুঁজে পেলো। মনে মনে বললো," অন‍্য দুষ্টুকে খুঁজে পেতে তোমার এত সময় লাগলো? আমি তো সেই পরের বার দার্জিলিংয়ে গিয়ে তোমাকে না পেয়ে কত খুঁজেছি। মন খারাপ করে বসে থেকেছি পাহাড়ের পথের ধারে। ক‍্যাভেন্টার্সের কফি আর স‍্যান্ডউইচ খেতে খেতে নস্টালজিক হয়েছি,পাহাড়ের পথ ধরে  হাঁটতে হাঁটতে ভেবেছি যে কোন সময় দেখা হয়ে যাবে। কিন্তু নাহ্ হলোনা,মন খারাপের মেঘকুয়াশার আবছা অন্ধকার নিয়ে ফিরলাম। তারপর হঠাৎই ধরা দিলে কলকাতায়।তুমি গাইড না করলে হয়ত এই স্বপ্নপূরণের ধৈর্য্য ধরাই মুশকিল হতো। আমার বাবা আর তুমি পাশে ছিলে বলেই তো দুষ্টু জিতে গেলো হঠাৎই।"
        ক্লান্ত চোখদুটো ভারী হয়ে আসে দুষ্টুর, দিদিটা হয়ত ঘুমিয়ে কোন এক মিঠে স্বপ্নে মশগুল হয়ে আছে। দুষ্টুও চোখ বোজে কোনো নতুন স্বপ্নের খোঁজে।
             রাতের এই সময় টুকু সারাদিনের কাজের পর বড় আপনার দীপ্তর। আজ সেই আপনজন ফাঁকা সময়ে বারবার উঁকি দিলো দুষ্টুমি ভরা দুটো চোখ..চোখ আটকে গেলো বাবার গলা জড়িয়ে ধরা ছবিটাতে।আসলে ওরা সবাই বোধহয় খুব কাছের ওর তাই তো বারবার সময় মনে করিয়ে দেয়,কাছে এনে দেয়।গানটা চালিয়ে চোখ বোজে দীপ্ত সেই মুখটা খুঁজতে...

আমার ভিনদেশি তারা

একা রাতেরই আকাশে

তুমি বাজালে একতারা

আমার চিলে কোঠার পাশে

আমার চোখ বেঁধে দাও আলো

দাও শান্ত শীতল পাটি

তুমি মায়ের মতই ভালো

আমি একলাটি পথ হাঁটি।

**********************

      মা একগাদা ছবি তুলেছে,কাকান,কাম্মাও তুলেছে ছবি। দুষ্টু যদিও খুব একহাত নিয়েছে,ধমকালো প্রথমে..." সারাদিন তো কথা বলছিস,দেখছিস আর সেল্ফি চাইছিস। এতো দেখতে নেই,বৌ পুরোনো হয়ে যাবে।"

     " তাতে কি হয়েছে? শালী তো আছে তখন তোকে দেখবো যতখুশি। দিবিনা অফিসে ঢুকতে? নাকি অ্যাপো লাগবে? আমি কিছু শুনবোনা ঠিক চলে যাবো বলবো আমি রিপোর্টার।"

    " জোজোদাদা,ভালো হচ্ছেনা বলছি।"

" তাহলে ছবিগুলো পাঠা তাড়াতাড়ি।"

    কুর্তা,জিন্স আর স্কার্ট পরা মিষ্টিকে আজ বারবার দেখলো জোজো। সত্যিই খুব সুন্দর লাগছে আজ....অনেকটা আদর আজ তোলা রইলো মিষ্টির জন‍্য।

          কাকানের ঘর থেকে মান্নাদের গান ভেসে আসছে,কাকান সত‍্যিই খুব রোমান্টিক এখনো..

      জোজোর মন ঘুড়ি পাক খায় রাতের আকাশে গানের সুরে।

     ও চাঁদ সামলে রেখো জোছনাকে...কারো নজর লাগতে পারে,মেঘেদের উড়ো চিঠি উড়েও তো আসতে পারে। ও চাঁদ সামলে রেখো জোছনাকে।

              মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো দিন সামনের মাসেই হয়ত দুষ্টুর পোষ্টিং হয়ে যাবে।দীপ্তর পরীক্ষাও এসে গেলো প্রায়।

      দীপ্ত ফোন করলো.." সেই ব‍্যাচেলর পার্টিটা মনে আছে তো? আমার পরীক্ষার পরই হবে কারণ এরপর দুষ্টুও পারবেনা আসতে।"

    " আরে মনে আছে একদম ভাই,দুষ্টু তো ঝামেলা করলো,তোর পরীক্ষা নাহলে নাকি যাবেই না। আরে সত‍্যিই তো,খুব কঠিন ব‍্যাপার। আমার তো এত কিছু হলোনা।"

         দুই বন্ধুর কথার মাঝে কত কথা উঠে আসে,আসলে জীবন বোধহয় এক একজনের জন‍্য এক একরকম প্ল‍্যানিং করেই রাখে।তবে খুশি থাকাটাই আসল ভালো থাকার চাবিকাঠি। খারাপগুলোকে একপাশে সরিয়ে, ভালো থাকার জন‍্য ছোটছোট কারণ সাজিয়ে ভালো থাকা অথবা আরো বেশি খারাপ কারো দিকে তাকিয়ে ভালো থাকা।

     নিজেকে প্রশ্ন করে দীপ্ত,যে সময় লোকে চাকরি পায়না সেইসময় ওর ঝুলিতে একটা ভালো চাকরি তবুও ও ছুটছে।জীবন ওকে আরেকটু সুযোগ দিতে চায় এগিয়ে যেতে। একটা সময় হাল ছেড়ে দিলেও দুষ্টু বোধহয় নতুন করে শেখালো স্বপ্নজালের ছেঁড়া সুতোগুলো বুনতে।

********************

      পরীক্ষাটা বোধহয় তাই মনের মত হলো দীপ্তর তবে অনিশ্চিত লাগেনা খুব একটা। শিখরে তো পা রেখেছে তাই হয়ত জয় হবেই। আর সেই আনন্দে আবার একবার পা মেলানো যৌবনের রঙে রঙীন হয়ে জীবনকে চিনে নেবার দৌড়ে।

          বন্ধু মানেই মিঠে হাওয়া

           বয়েস ভুলে যাওয়া।

           বন্ধু মানেই আবার সেই

             ছেলেবেলাতে ফিরে যাওয়া।

     একা থাকতে থাকতে আর লড়াই করতে করতে কখন যেন মনের খুশি আর আনন্দগুলোকে চাপা দিয়ে দিয়েছিলো দীপ্ত।আজ বন্ধুদের সাথে পেয়ে তাই মন ছুটলো নিরুদ্দেশে।

     যদিও অনু খুবই আপত্তি করেছিলো," না না আশীর্বাদ হয়ে গেছে,এখন এদিক ওদিক কি যাবি?"

     " মা তুমি আমাকে আটকে রাখবে কি করে? আমাকে তো অফিস যেতে হবে। নাকি বাড়িতে রেখে দেবে সব কাজ ভুলিয়ে? প্লিজ মা ও অনেক করে বলেছে যেতে।"

       মিষ্টি আজকাল দুষ্টুকে একটু পড়তে চায় ওর মতো করে। গাইডের সাথে দুষ্টুর কি কিছু আছে? নাকি দীপ্ত শুধুই গাইড? দুষ্টুকে জিজ্ঞেস করতেই বলেছিলো," আরে সেই কবে সেভ করা ছিলো নম্বরটা গাইড বলে,তারপর রয়েই গেছে।"

      "হঠাৎই দীপ্তকে এতদিন গাইড বলে হাইড করে রেখেছিলি কেন শুনি? এবার জোজোকে ডুবুরি করে নামাতে হবে দেখছি তোর মন সাগরে।"

         তবে পুরুলিয়া এসে জোজো ডিটেকটিভ আর গোয়েন্দা দুই হলো মিষ্টিকে খুশি করতে আরে বেশি নয় একটাই শালী তার মনের দরিয়ায় কে খুশির জোয়ার আনছে তা দেখতেই হবে। আর তাই তো এখানে আসা।ব‍্যাচেলর পার্টি প্লাশ আরো দুজন ব‍্যাচেলরের কেমিক‍্যাল রিঅ্যাকশন যদি ঘটিয়ে দেওয়া যায়।

        যদিও রবীনের খুব ইচ্ছে ছিলো ওদের সাথে আসার।"কতদিন পুরুলিয়া যাওয়া হয়না বুঝলি,পুরোনো জায়গা তো।"

   অনু তাকিয়েছিলো পুরোনো অনুরাগে,দীপ্ত ফোনের ওপার থেকে বলেছিলো," চলে আসুন স‍্যার,খুব ভালো হবে।"

     অনু বকেছিলো," ছেলেমেয়েদের মাঝে তুমি কি করবে? সবাই বড় হয়েছে। আর তুমি ওদের স‍্যার না?"

     " তাইতো অনু খুব ইচ্ছে করে ওদের নিয়ে সেই স্কুলের মত আবার পিকনিকে যাই।"

*******************

  দীপ্ত দুষ্টু দুজনে বললেও জোজো মিষ্টিকে বলেছিলো," আমি কিন্তু খুব চাপে পড়ে যাবো স‍্যার মানে হবু স‍্যারশ্বশুর মশায় কাম জেঠু গেলে।"

      হাসিতে ফেটে পড়েছিলো ওরা।দুষ্টু বলেছিলো," দাঁড়া বাবাকে বলছি। কেমন ছাত্র কাম হবু জামাই তোমার।"

      তবে দীপ্তর রায়বাবু এবার স‍্যারের উত্তেজনা দেখে হাল ছাড়লেন পুরোপুরি। বাড়ি গিয়ে গিন্নীকে বললেন," শোনো আর কোন চান্স নেই।একজন নয় দুজন রাজকন‍্যা এসে গেছে দেখছি।তবে স‍্যারের মনে হয় সেই ছোট চুলের আইএএস অফিসারই প্রেমিকা।"

     রায়বাবুর স্ত্রী মাথায় হাত দেন," সে কি গো! একেবারে প্রেমিকা? এই তো বলছিলে মনে হয় কিছু নেই ওনার।"

     " ভুল বলেছি গিন্নী এখন তো দেখছি সব কিছুই আছে। দেখি বাড়ির সামনের মাঠে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলছে সবাই। মানুষ এমন ছটফটে হয়ে ওঠে কখন জানো? প্রেমে পড়লে।"

********************

পুরুলিয়ার রুক্ষ শুকনো লাল মাটির ভেতরের রঙ আগে অনেকবার দেখেছে দুষ্টু আর মিষ্টি তবে এবারে বন্ধুত্ব আর ভালোবাসাতে সেই রঙ আরো গাঢ় লাল।

   বন্ধুত্বের মজা আর গাঢ় রঙ দীপ্তও প্রাণভরে গায়ে মাখবে বলে এই দুদিন একদম ছুটি নিয়েছে শুধু রায়বাবুকে বলা আছে যদি বিশেষ কোন দরকার হয় তাহলে যেন কোয়ার্টারে এসে কাজ করিয়ে নিয়ে যান।

     যাক এইটুকু শান্তি যে স‍্যার বলে গেছেন যেতে দরকার হলেই তাই রায়বাবু ইতিমধ্যেই দুবার ঘুরে গেছেন উফ্ রান্নার গন্ধে বেশ মন কেমন ভাব। মাসিমা বেশ উঠে বসেছেন তাই ফুলিয়ার সাথে সাথে মাসিমাও লেগে পড়েছেন রান্নায়।হাট থেকে এসেছে জ‍্যান্ত মুরগী আর পাঁঠার মাংস। বাপরে কিছু খেতে পারে এরা,একসাথে মুরগী পাঁঠা সব খাচ্ছে! আর খাবেইনা বা কেন? স‍্যার তো সকালে উঠে বোধহয় এখনো পাঁচ কিলোমিটার দৌড়য়।ছুটে ছুটেই তো অমন লম্বা চেহারা খানা হয়েছে। আর সেই মেয়েটি বা কম কি? বাপরে কি লম্বা! 

      আগেই গিন্নীকে বলেছিলেন," শোনো এতো লম্বা ছেলে আর আমাদের ঊর্মি যা ছোটখাটো ওসব হবেনা।তুমি আশা ছাড়ো।"

     উরিবাবা বলতেই গিন্নী অমিতাভ আর জয়া ভাদুরীর উদাহরণ দিয়ে ছেড়ে দিলো। তবে ঠিক কথা তাই এতোদিন লেগে ছিলেন আশায় আশায়।তবে এবার বুঝলেন আর লাভ নেই। সকালে একবার সাইকেল নিয়ে ছুতোয় এসেছিলেন এদিকে দেখলেন মাঠে দৌড়চ্ছে দুজন একজন তো স‍্যার আর আরেকজন সেই হবু আইএএস। নাহ্ সব আশা বিসর্জন দিয়ে মাছ কিনে বাড়ি ফেরা। অবশ‍্য স‍্যারের চোখ এড়ায়নি,স‍্যার উচ্ছ্বাস মাখা গলায় বলেছেন.." গুডমর্ণিং রায়বাবু, বাজারে চললেন?"

      মনে মনে হা হুতাশ করতে করতে বললেন," হ‍্যাঁ স‍্যার একটু মাছ নিয়ে আসি।"

           যাবার সময় একটু সাইড করে তাকিয়ে বললেন," দৌড়ও সুন্দরী ট‍্যালেন্টেড মেয়ের পেছনে যখন ল‍্যাং মারবে বুঝবে একদম।"

      একটু হাঁফায় দুষ্টু," তুমি এখনো কি ভালো দৌড়তে পারো দীপ্তদা,নাহ্ আমি আর পারছিনা।কত মিটার হলো বলতো?"

         দীপ্ত হাসে," তুই তো প্রাকটিস করতিস,বুঝেছি হাতে চাকরির ছাড়পত্র এসে যাওয়াতে ছেড়ে দিয়েছিস। ওরা তো এখনো ঘুমোচ্ছে,যাবি ঐ দূরের টিলাটায় ওখান থেকে ঝরনা দেখা যায়।"

       ঘামে ভেজা দুষ্টুর মুখটা সূর্যের সদ‍্য ছড়ানো লাল আলো মাখছে ওর মুখ মুঠোভরে। খুব ভালো লাগে দীপ্তর,দুষ্টুকে যেন ছৌ নাচের মুখোশের সেই বড় বড় চোখের দুর্গার মত লাগছে। ওর ভাসা চোখে স্বপ্নের আল্পনা উঁকি মারছে।

    " ঐ টিলাটা তো অনেকটা দূরে,ওখানে আবার হাঁটিয়ে নিয়ে যাবে? ফিরে আসতে আসতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। দিদি আর জোজোদা উঠে যদি আমাদের না দেখে তাহলে ওদের ভালো লাগবেনা।"

      দীপ্ত বুঝতে পারে দুষ্টুর মনে এখনো একটু দোটানা আছে তাই বলে.." আচ্ছা চল,ওদেরকে ডেকে তুলি তারপর যাবো।"

          সুতরাং যেমন ভাবা তেমন কাজ,সবাই মিলে রওনা দেওয়া ঐ দূরের পাহাড়ের টিলার দিকে। মিষ্টি হাই তোলে," তোদের জন‍্য ঘুমটা হলোনা পুরো।উফ্ কি এনার্জি তোদের! এখানে না এলে আমার নতুন দীপ্তকে দেখা হতোনা। কতবছর বাদে দেখা বলতো তোর সাথে? কিন্তু তাহলে কি হবে,আমাদের বন্ধুকে সেই কবে যে দুষ্টু গাইড করে পেয়েছে কে জানে? জোজো তুই কিছু জানিস?"

         দুষ্টু সত‍্যিই লজ্জা পায় এবার, " দিদি তুই কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিলি বলবিনা।"

      গাড়ি চালাতে চালাতে মাথা ঘোরায় দীপ্ত ওর মুখে একটা হাল্কা হাসির ছোঁয়া। দুষ্টু ধমকায়," দীপ্তদা তুমি মাথা ঘোরাও সামনে,এক্ষুণি অ্যাক্সিডেন্ট করবে কিন্তু।"

        মজায় মেতে ওঠে জোজো," চিন্তা নেই আমার গাইডেন্সে গাইড গাড়ি চালাচ্ছে কিছু হবেনা। রাজকন‍্যাগণ পেছনে নিশ্চিন্তে বোসো।"

      হাল্কা শীতের চাদরের আয়েশ মেখেছে সকালের পুরুলিয়া। চারিদিকে রয়েছে তার আবেশ তার মাঝেই কর্মব‍্যস্ত আদিবাসী মহিলা আর পুরুষেরা ঘাড়ে কোদাল নিয়ে চলেছে কাজে। সুন্দর মাটির রঙ করা বাড়িগুলোর দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে নিষ্পাপ হাসিমাখানো শিশুমুখ।

        পুরুলিয়া সৌন্দর্য্য সাজিয়ে বসে আছে,বরষায়, শীতে আর বসন্তে এক এক সময় এক রকম সৌন্দর্য্য।

    প্রকৃতিতে চোখ রাখতে রাখতে ছুটে চলা আনন্দে।মিষ্টি ফ্লাক্স খাবার সব গুছিয়ে নিয়েছে চট জলদি। অবাক হয়েছে দুষ্টু," দিদি আমরা একটু বাদেই চলে আসবো।তুই পিকনিকের মত সব গুছিয়ে নিলি যে। সত‍্যিই সামনে তোর বিয়ে বোঝা যাচ্ছে।"

       " পিকনিক তো,তবে একদম সকালে উঠে এতোটা যাবো তাই চট করে একটু কফি করে নিলাম। মাসিমা বললেন কেক বিস্কুট নিয়ে নিতে সঙ্গে। তুইও পারবি এইসব দাঁড়া চাকরিতে যা তারপর তো বুঝবি।"

         দুইবোন যখন কথায় ব‍্যস্ত তখন জোজো বলে," সত‍্যিই তোর জন‍্য এত ভালো একটা ট্রিপ হলো।ভীষণ আনন্দ হচ্ছে কিন্তু।কতদিন বাদে আবার একসাথে।"

      গাড়ি চালাতে চালাতে সব কথাগুলো পরিস্কার কানে না এলেও লুকিং গ্লাসে দুষ্টুর মুখটা একদম দেখতে পায় পরিস্কার দীপ্ত। চোখেমুখে হাসি মেখে দুষ্টু বাইরে তাকিয়ে উপভোগ করছে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য, আবার কখনো ক‍্যামেরাবন্দি করছে নিজের খেয়ালে ছুটে যাওয়া প্রকৃতি কন‍্যাদের। সবুজ পাহাড়ী রাস্তায় জঙ্গলের পাশ দিয়ে লালমাটির পথ ধরে এগিয়ে যায় ওদের জিপটা।হঠাৎই দুষ্টুর চোখাচোখি হয় দীপ্তর সাথে,লজ্জা পেয়ে যায় দুষ্টু একটু কিন্তু চোখ সরায়না।ওর হাসিমুখ আর চোখের ভাষা ছুঁয়ে যায় দীপ্তকে..দুষ্টু ইশারায় বলে দেখে গাড়ি চালাতে। মুখে হাসি লেগে থাকে দীপ্তর।জোজো পাশ থেকে বলে ওঠে," সামলে ভাই,এক কাজ করি আমি বরং চালাই।তুই পেছনে বোস। সামনে আমার বিয়ে আছে,হানিমুন আছে।সুতরাং কোন অঘটন চাইনা।"

     দীপ্ত সত‍্যিই এবার হেসে ফেলে," কিছু হবেনা,প্রায় চলে এসেছি।আর একটু।"

    জোজো ঠোঁট ওল্টায়,"ফেরার পথে দুষ্টু সামনে বসিস,আমার মিষ্টির সাথে কথা আছে।"

        " ইশ্ আর কত কথা বলবি তোরা? নিজেদের অসুবিধা হচ্ছে তাই বল।"

      ওদের দুস্টুমি ভরা খুনশুটির মাঝে দীপ্ত সেই টিলাটার সামনে গাড়ি রাখে। ওটার ওপর দিয়ে একটু উঁচুতে উঠলেই চারিদিকে সবুজে সবুজ।

          বেশ কিছুটা ওপরে উঠে এসেছে ওরা,পাথরের শেষটায় উঠতে যায় জোজো দীপ্ত বারণ করে," কি দরকার অত সামনে যাবার? নিচে অনেক বড় খাদ।সামনেই তোর বিয়ে তারপর আরো সব কি আছে।"

         মিষ্টি আর দুষ্টুকে কাছে নিয়ে ছবি তোলে জোজো। তারপর শুধু মিষ্টির সাথে বেশ কয়েকটা ছবি। তার মাঝেই ফ্রেমবদল মানে কখনো ওরা তিন বন্ধু স্বাধীনতার আনন্দে হাত তুলে উপরে,আবার কখনো দীপ্তর সাথে দুষ্টু মিষ্টি।

    অনেক হয়েছে.." মিষ্টি এবার আয় এদিকে,দুষ্টুসোনা একটু দাঁড়াও আরেকটু ক্লোজ দীপ্ত স্মাইল ব‍্যাস হয়ে গেছে।"

        টিলায় গাছের তলায় বসে মিষ্টি ফ্লাক্স থেকে কফি ঢেলে দেয় সাথে বিস্কিট আর কেক। দুষ্টু আবার প্রশংসা করে দিদির..." সত্যি দিদি ভাগ‍্যিস কফিটা এনেছিলি! সত‍্যিই একদম জমে গেছে।"

       দীপ্ত একটু ইতস্ততঃ করে বলে.." একটা গান হলে ভালো হত বা যদি একটা কবিতা। উত্তীয় আর দুষ্টু একসাথে আবৃত্তি করতি একসময়।"

   জোজো হেসে বলে," এইরে এখন তো আর করাই হয়না,কি রে দুষ্টু কি করা যায় ভাব।আমাদের হোস্টের আব্দার। আমাদের দেদার আনন্দ দিচ্ছে বেচারা ছেলেটা।"

     দুষ্টু ওর কবিতার ঝুলিতে ডুব দিয়ে শুরু করে জানে জোজোদা মাঝখানে ধরবে।

আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি

            সেই আমাদের একটিমাত্র সুখ,

তাদের গাছে গায় যে দোয়েল পাখি

            তাহার গানে আমার নাচে বুক।

তাহার দুটি পালন-করা ভেড়া

            চরে বেড়ায় মোদের বটমূলে,

যদি ভাঙে আমার খেতের বেড়া

            কোলের 'পরে নিই তাহারে তুলে।

 

                  আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা,

                  আমাদের এই নদীর নাম অঞ্জনা,

                  আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচ জনে--

                  আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।

 

দুইটি পাড়ায় বড়োই কাছাকাছি,

            মাঝে শুধু একটি মাঠের ফাঁক--

তাদের বনের অনেক মধুমাছি

            মোদের বনে বাঁধে মধুর চাক।

তাদের ঘাটে পূজার জবামালা

            ভেসে আসে মোদের বাঁধা ঘাটে,

তাদের পাড়ার কুসুম-ফুলের ডালা

            বেচতে আসে মোদের পাড়ার হাটে।

 

                  আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা,

                  আমাদের এই নদীর নাম অঞ্জনা,

                  আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচ জনে--

                  আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।

.......................

অদ্ভুতভাবে রবিঠাকুরের কবিতার সঙ্গে সঙ্গে শান্ত শীতল প্রকৃতির সাথে আরো নিবিড় বন্ধনে আটকে পড়ে ওরা সবাই। মনে ছুঁয়ে যায় এক অপার শান্তি। একটা সময় চারজনই গলা মিলিয়েছিলো,সেই ছোটবেলায় পড়া কবিতায়।

      " আমি জানি তো এটা সবার জানা তাই এটাই করলাম তোমরা সবাই গলা মেলাবে বলে।"

          টিলার পথ বেয়ে নেমে এসে গাড়ির কাছে দাঁড়ায় ওরা।দীপ্ত বলে এবার চল বাড়ি ফিরি..নিশ্চয় এতক্ষণে আমার কুক এসে গেছে।ওকে একটু না দেখিয়ে দিলে ভালো হয়।অবশ‍্য মা আছে।"

      কিন্তু তক্ষুনি ফেরা হলোনা ফিরতে চাইলেও জোজোর বায়না.." শোন তোদের পুরুলিয়া জানাশোনা,আমার আসা হয়নি তেমন ঐ এক আধবার কাজে। আমি একটু যাবো বামনী ফলস দেখে যাবো। কাছে এসে গেছি,চলে গেলে আর আসা হবেনা।"

        " এখন তো তেমন জল নেই,শুধু শুধু অনেকটা নামবি।"দীপ্ত বলে।

" তা হোক,একটা দুটো ছবি তুলে যাবো।"

  " চলো দীপ্তদা,লাভ নেই বুঝিয়ে।সাংবাদিক মশাইয়ের মাথার পোকা নড়েছে।ছবি না তুলে যাবেনা আমি জানি।"

  মিষ্টি বলে," আমি কিন্তু নামবোনা,আমি এর আগে অনেকবার এসেছি। বোন তুই আমার সাথে থাকবি কিন্তু ওপরে।"

          কিছুক্ষণের মধ‍্যেই ওরা পৌঁছে যায় ওখানে।শীতের আমেজে,কয়েকজন এসেছে এরমধ‍্যে তবে ফাঁকাই বলা চলে। দুষ্টুর ইচ্ছে থাকলেও যাওয়া হলোনা দিদির বায়নায়।আর সত‍্যিই দিদিকে একা রেখে যাবেই বা কি করে। ওরা দুজন একটা হাসিভরা লুক দিয়ে চলে গেলো।জোজো বললো," দৌড়ে যাচ্ছি ছুটে আসবো।"

    দুষ্টু সাবধান করে," বেশি ছুটিসনা জোজোদা সামনে বিয়ে।"

     মিষ্টি বকা দেয় ওকে," যা পারে করুক ছাড় তো। নে আমার একটা ছবি তুলে দে এখানে দাঁড়িয়ে।"

*************************

      আসেপাশে দু একজন লোক,ওরা অনেকটা নিচে নেমে এসেছে জোজো ছবি তুলছে দীপ্ত ওকে সাবধান করে," আর এগোসনা,এরপর বর্ষাকালে আসিস তখন খুব ভালো লাগবে। অবশ‍্য জানিনা তখন আমি থাকবো কিনা এখানে। অবশ‍্য তোর তো মানে মিষ্টির দাদুরবাড়ি তো আসতেই হবে।"

          ওপরে কিছুটা উঠে একটা পাথরে দাঁড়িয়ে একটু হাঁফায় জোজো..." একটু দাঁড়া এখানে,রেস্ট নি আর ভিউটা নিয়ে নি।"

      দীপ্ত ঘড়িটা দেখে,জোজো ছবি তোলার ফাঁকে ওকে দেখে। অনেক পরিবর্তন হয়েছে দীপ্তর,সুঠাম সুন্দর চেহারা।নিয়মিত শরীর চর্চার ফলে শরীরে পৌরুষের খেলা।ক‍্যামেরা ঘোরায় ওর দিকে।দীপ্ত হাসে,ওর হাসিমুখটা বন্দি হয়।হঠাৎই জোজো বলে," দুষ্টুকে ভালোবাসিস?"

     অকস্মাৎ প্রশ্নবোমাতে একদম কুপোকাত হয়ে যায় দীপ্ত..." মানে?"

    " মানে ঝর্ণার সামনে মিথ‍্যে কথা বলতে নেই। ভালোবাসা আর মুগ্ধতার চোখের চাউনি আমি চিনি।"

      হঠাৎই দীপ্তর বাঁধ ভাঙে চারদিকে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই চারপাশে।মনের ভেতরে অনেক বছরের বন্দি অপরাধবোধটা আজ আবার মাথা চাড়া দেয়।হয়ত এইজন‍্য আজও দুষ্টুর কাছে স্বাভাবিক হতে পারেনা।দীপ্তর কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হয় পাহাড়ের পাথরের গায়ে তবে ও নিশ্চিন্ত দুষ্টু মিষ্টির কানে পৌঁছোবেনা কথাটা...

" সত‍্যিই তুই ভালোবাসা আর মুগ্ধতা ভরা চোখের চাউনি বুঝিস? তাহলে কালচিনিতে স্কুলে পড়তে বুঝিসনি কেন দুষ্টু তোকে ভালোবাসে?"

    অদ্ভুতভাবে ধাক্কা খায় জোজো.." আমি বুঝেছিলাম তবে পরে,তখন মিষ্টিকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।মিষ্টি আমার ওপর নির্ভর করতে শুরু করেছিলো।আমার ফেরার কোন পথ ছিলোনা। দুষ্টু তো আগে কখনো বলেনি আমাকে।আর ওকে আমি সবসময় আমার ছোটবোনই ভেবেছি বিশ্বাস কর।তাই ভালোবাসা এলেও তার রঙ অন‍্য ছিলো। তবে যেদিন মিষ্টিকে ভালো লাগে সেকথা বলাতে ওর কান্না দেখে অবাক হয়েছিলাম। পরে,বুঝেছিলাম ওটা ভালোবাসার নিঃশব্দ কান্না।সত‍্যিই ভীষণ ভীষণ কষ্ট হয়েছিলো এখনো হয় ভাবলেই। কিন্তু কি করবো আমি?"

          আজ দীপ্ত নিজেকে উজাড় করে দেয়,অনেক পুরোনো অপরাধবোধের কষ্টটা বলে ফেলে জোজোকে..অনিচ্ছাকৃত ভাবে চিঠিটা হঠাৎই ওর হাতে চলে এসেছিলো,ও পড়ে ফেলেছিলো কিন্তু আজকের মত তখন পরিণত না থাকায় বলতে পারেনি জোজোকে। যদি বলত তাহলে আজ প্রেমের গল্পটা অন‍্য মোড় নিতো।

    কথা বলতে বলতে দুষ্টুর কথা ভেবে কেন যেন চোখটা ভিজে ওঠে দীপ্তর হয়ত বা হাল্কা লাগে সব কথা বলতে পেরে। একথা তো কোনদিন দুষ্টুকে বলতে পারবেনা।

       জোজো ওকে জড়িয়ে ধরে,আলিঙ্গনে দুই বন্ধু অনেকদিন পরে আবার।

   " চিয়ার আপ ব্রো,ওপরে ওরা অনেকক্ষণ বসে আছে।এরপর মারধোর খেতে হবে। অনেক গল্প ভগবান লেখে তাই সব গল্পের রঙ আলাদা। সবটা আমাদের হাতে থাকেনা। হাল্কা করে নে নিজেকে।দুষ্টুর জন‍্য তুই একদম পারফেক্ট ফিট। আর ভালোবাসার মধ‍্যে গোপনীয়তা কিসের? ওকে বলে দিবি একদিন ঠিক এমনি ভাবে ভরা সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে কোন এক চাঁদনী রাতে....দুষ্টু তোর লেখা প্রথম প্রেমপত্র আমি পড়ে ফেলেছিলাম।"

       মনটা হাল্কা হলেও দীপ্ত ভাবে...সত্যিই কি এই কথাগুলো কোনদিন বলতে পারবে দুষ্টুকে?


            মনের চোরা কুঠুরিতে লুকোনো শব্দগুলো আজ এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে পড়লো,ঝর্ণার মাঝে আর পাথরের খাঁজে তবুও বুকের পাথরটা আজ অনেক হাল্কা দীপ্তর। 

       জোজোকে আর দীপ্তকে গলা ধরে আসতে দেখে দুষ্টু আর মিষ্টি। "দিদি মনে পড়ছে কিছু? ঐ দেখ আমাদের দুজনকে বোর করে এখন দুটোতে আসছে কেমন?তোর মনে পড়ছে কিছু?"

     মিষ্টি ডুব মারে অতীতে ওর মুখ হাসিমাখে স্মৃতির সিঁড়ি বেয়ে। সত‍্যিই তো ওদের স্কুল যাওয়ার আর আসার পথে এই মানিকজোড়কে দেখতো রোজই। এখন তো মনে হচ্ছে দুটো বোধহয় ইচ্ছে করেই দাঁড়িয়ে থাকতো।

     মিষ্টি হাসে," অনেক কিছু মনে পড়লো বোন। আচ্ছা বলতো ওরা দুটো কি  ইচ্ছে করেই আমাদের রাস্তা কাটতো বেড়ালের মতো?"

         " আমার তো তাই মনে হচ্ছে এবার।"

      ওরা এগিয়ে আসতেই দুজনে রাগ রাগ ভাব দেখায়।জোজো বলে," যা খুশি তোরা কর,উঃ কি যে মিস্ করলি। আমরা দারুণ আনন্দ করে এলাম ওখান থেকে।"

   দুষ্টু ঠোঁট ওল্টায়," জল এখন কোথায় যে আনন্দ করবে? আমাকে বলতে এসোনা তো। তুই নিচে গেছিস আর দিদি আমাকে খাটিয়ে মেরেছে ছবি তুলেই যাচ্ছি কিছুতেই পছন্দ হয়না মহারাণীর।"

          দীপ্ত দুষ্টুর দিকে তাকিয়ে হাসে..জোজো বলে," আচ্ছা আমি তোর ছবি তুলি তাহলে হবে তো?"

     " তোর বৌয়েরটা তোল দেখ খুশি করতে পারিস কিনা? আমি গাড়িতে গিয়ে বসি।"

     জোজোর ছবি তোলার ফাঁকে দুষ্টু এসে বসে সামনের সীটে। দীপ্তর মনে সুখের পায়রা ডানা ঝাপটালো।আর জোজো মুচকি হাসলো মিষ্টির দিকে তাকিয়ে," যাক এতক্ষণে আমি নিশ্চিন্ত হলাম বিয়ে হানিমুন ঠিকমতো হবে।"

     জোজোর মুখে চাপা দেয় মিষ্টি..আদরে ঘেঁষে আসে ওর খুব কাছে," আসার সময় অনেকবার কথাটা বললি। কেন যেন মনটা আমার যেন কেমন হয়ে গেলো।এত ভালোবাসিস আমাকে?"

        " সন্দেহ আছে নাকি? ইগারলি ওয়েটিং ফর হানিমুন।"

    " অসভ‍্য একটা,বন্ধুত্বটাই ভালো ছিলো। তুই আমার বর হবি ভাবতেই যেন কেমন লাগে।"মিষ্টি বলে।

   " তাহলে অন‍্য কাউকে বিয়ে করে নিই?" জোজো বলে।ওর কাঁধে মাথা রাখে মিষ্টি।

      দীপ্ত গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে মাঝে মাঝেই অন‍্যমনস্ক হয়ে যায়। দুষ্টুর হাওয়াতে উড়ে যাওয়া চুলের গোছা বাতাসকেও যেন বলছে থামতে আজ। মাঝে মাঝেই বারণ না শোনা চোখদুটো দুষ্টু কে দেখছে। জোজো পেছন থেকে সাবধান করে,"সোজা চল,আমি লক্ষ্য রেখেছি।"

      " আমিও পেছনে লক্ষ‍্য রেখেছি কিন্তু,কত সুযোগ করে দিলাম ভাব।নাহলে তো গালাগালি দিতিস মনে মনে।"

       হাসির ছলে শ্বাস ফেলে জোজো..." কেজানে কার কার কি সুবিধা অসুবিধা হচ্ছে?তবে দীপ্ত সবটাতেই নজর রেখেছে কিন্তু আর দুষ্টুও সুতরাং কোন চিন্তা নেই।"

*******************

  কোয়ার্টারে পৌঁছতে প্রায় জলখাবারের বেলা পার হয়ে গেছে তবুও গরম লুচি সুতরাং আর দেরি নয় একদম ঝাঁপিয়ে পড়া নিশ্চিন্তে। 

রায়বাবু যতই চিন্তায় থাকুননা কেন ওনাকে নিশ্চিন্ত করে দুপুরে পাঁঠাটা সবাই জমিয়ে খেলো। মাসিমা বললেন," কতদিন বাদে ছেলেটাকে হাসতে দেখছি এমন করে। আমার অসুখ,ওর কাজ আর পড়াশোনা নিয়ে হাসতেই ভুলে গেছিলো ছেলেটা।"

    " মাসিমা,মাংসটা কিন্তু দারুণ হয়েছে।যা খাওয়াচ্ছেন মাঝে মাঝেই চলে আসবো সময় পেলেই।"

    " খাও,ভালো করে।এখনই তো খাবে,আমারও খুব ভালো লাগছে।সব আমাদের ফুলিয়া রান্না করেছে।আমি দেখিয়ে দিয়েছি ওকে,আমি আজকাল রান্নাঘরে ঢুকি কোথায়?"

    মাকে এতো কথা বলতে দেখে দীপ্তরও খুব ভালো লাগছে।আজ সত‍্যিই মনটাও খুব ভালো।তাই রাতে একটা ক‍্যাম্পফায়ার আর বিকেলে একটু ঘোরাঘুরি হয়ে যাক।

       বিকেলের সূর্যাস্ত আর খোলা হাওয়ায় মন ভালো হয়ে যায় সবার।তবে সূর্যের পাটে যাওয়া দেখতে দেখতেই গাড়িতে স্টার্ট দেয় দীপ্ত।কারণ হাল্কা শীতের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে প্রকৃতিতে তাই সূর্য ডুবে যাবার পর নামবে অন্ধকার একদম ঝুপ করেই।ওর নিজের ওপর আক্রমণ হওয়ার পর আর কোন জায়গাই তেমন নিরাপদ মনে হয়না।

           গাড়ি রওনা দিয়েছে কোয়ার্টারের দিকে মনের সুখে দুষ্টু গান ধরেছে...." তোমার খোলা হাওয়া,লাগিয়ে পালে। তোমার খোলা হাওয়া।টুকরো করে কাছি আমি ডুবতে রাজি আছি।"

         গাড়ি চালাতে চালাতে দীপ্তর মনও ডুবে যায় এক অন‍্য সুরের মূর্ছনায়। হঠাৎই আনমনা হয়ে ব্রেক কষে দীপ্ত,স্টিয়ারিংয়ের ওপর ওর হাতে হাত রাখে দুষ্টু।যেন বলতে চায়," সামলে চলো,তাইতো আমি এখানে আছি।"

       জোজো আর মিষ্টিও বলে ওঠে," ইশ্ বাছুরটা একটু হলেই..যাক সাবধানে চালা। বেচারা বোধহয় দলছুট হয়ে গেছে তাই দৌড়চ্ছে ভয়ে।"

           একটা ব্রেক কষার মধ‍্যে হয়ত বাঁধনটা আরো শক্ত হলো ওদের অজান্তেই। সামনে একটা শালবনের জঙ্গল আর সেটা পার হওয়ার কিছুটা বাদেই দীপ্তর কোয়ার্টার। তাই স্পীড একটু বাড়ায় দীপ্ত,মনের মধ‍্যে আজ অদ্ভুত একটা গতি যেন নাড়া দিয়েছে হৃদপিন্ডকে।

       কিন্তু তবুও হঠাৎই আবার থামতে হয়,সত‍্যিই এবার একটু কেমন যেন লাগে দীপ্তর।মিষ্টিরও একটু অদ্ভুত লাগে।উল্টোদিক থেকে একটা গাড়ি একদম ওদের সামনে এসে কিছুটা আগে পথ আটকে দাঁড়িয়েছে। মিষ্টি জোজোর হাতটা চেপে ধরে," আমার কেমন যেন লাগছে,হঠাৎই গাড়িটা এভাবে এসে দাঁড়ালো কেন? দীপ্ত ঐ জন‍্য বোধহয় একটু তাড়া দিচ্ছিলো। তুই যাসনা কোথাও।"

      দুষ্টু গাড়ি থেকে নামতে যায়,"এ কি আমাদের গাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো যে? আমি নামছি দাঁড়াও।"

     মিষ্টি আর জোজো ওকে বকুনি দেয়।

     দীপ্ত ওকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে," আমি দেখছি। সবসময় জেদ করিসনা,সবকিছু সবসময় নিয়ম মেনে চলেনা।"

     তবে ওদের আর দেখতে হলোনা...উল্টোদিকের গাড়িটার আলো জ্বলে উঠলো,গাড়ি থেকে নামলো যারা তাদের দেখে আর থাকতে পারলোনা গাড়িতে দুষ্টু।মানে ওকে আর আটকানো গেলোনা।

     

      


 

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...