শ্যামের পিরিত রাখ গোপনে
ইশারায় কইবি কথা গোঠে মাঠে
দেখিস যেন কেউ না জানে
কেউ না বোঝে কেউ না শোনে,
আমার ভিনদেশি তারা
একা রাতেরই আকাশে
তুমি বাজালে একতারা
আমার চিলে কোঠার পাশে
আমার চোখ বেঁধে দাও আলো
দাও শান্ত শীতল পাটি
তুমি মায়ের মতই ভালো
আমি একলাটি পথ হাঁটি।
**********************
মা একগাদা ছবি তুলেছে,কাকান,কাম্মাও তুলেছে ছবি। দুষ্টু যদিও খুব একহাত নিয়েছে,ধমকালো প্রথমে..." সারাদিন তো কথা বলছিস,দেখছিস আর সেল্ফি চাইছিস। এতো দেখতে নেই,বৌ পুরোনো হয়ে যাবে।"
" তাতে কি হয়েছে? শালী তো আছে তখন তোকে দেখবো যতখুশি। দিবিনা অফিসে ঢুকতে? নাকি অ্যাপো লাগবে? আমি কিছু শুনবোনা ঠিক চলে যাবো বলবো আমি রিপোর্টার।"
" জোজোদাদা,ভালো হচ্ছেনা বলছি।"
" তাহলে ছবিগুলো পাঠা তাড়াতাড়ি।"
কুর্তা,জিন্স আর স্কার্ট পরা মিষ্টিকে আজ বারবার দেখলো জোজো। সত্যিই খুব সুন্দর লাগছে আজ....অনেকটা আদর আজ তোলা রইলো মিষ্টির জন্য।
কাকানের ঘর থেকে মান্নাদের গান ভেসে আসছে,কাকান সত্যিই খুব রোমান্টিক এখনো..
জোজোর মন ঘুড়ি পাক খায় রাতের আকাশে গানের সুরে।
ও চাঁদ সামলে রেখো জোছনাকে...কারো নজর লাগতে পারে,মেঘেদের উড়ো চিঠি উড়েও তো আসতে পারে। ও চাঁদ সামলে রেখো জোছনাকে।
মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো দিন সামনের মাসেই হয়ত দুষ্টুর পোষ্টিং হয়ে যাবে।দীপ্তর পরীক্ষাও এসে গেলো প্রায়।
দীপ্ত ফোন করলো.." সেই ব্যাচেলর পার্টিটা মনে আছে তো? আমার পরীক্ষার পরই হবে কারণ এরপর দুষ্টুও পারবেনা আসতে।"
" আরে মনে আছে একদম ভাই,দুষ্টু তো ঝামেলা করলো,তোর পরীক্ষা নাহলে নাকি যাবেই না। আরে সত্যিই তো,খুব কঠিন ব্যাপার। আমার তো এত কিছু হলোনা।"
দুই বন্ধুর কথার মাঝে কত কথা উঠে আসে,আসলে জীবন বোধহয় এক একজনের জন্য এক একরকম প্ল্যানিং করেই রাখে।তবে খুশি থাকাটাই আসল ভালো থাকার চাবিকাঠি। খারাপগুলোকে একপাশে সরিয়ে, ভালো থাকার জন্য ছোটছোট কারণ সাজিয়ে ভালো থাকা অথবা আরো বেশি খারাপ কারো দিকে তাকিয়ে ভালো থাকা।
নিজেকে প্রশ্ন করে দীপ্ত,যে সময় লোকে চাকরি পায়না সেইসময় ওর ঝুলিতে একটা ভালো চাকরি তবুও ও ছুটছে।জীবন ওকে আরেকটু সুযোগ দিতে চায় এগিয়ে যেতে। একটা সময় হাল ছেড়ে দিলেও দুষ্টু বোধহয় নতুন করে শেখালো স্বপ্নজালের ছেঁড়া সুতোগুলো বুনতে।
********************
পরীক্ষাটা বোধহয় তাই মনের মত হলো দীপ্তর তবে অনিশ্চিত লাগেনা খুব একটা। শিখরে তো পা রেখেছে তাই হয়ত জয় হবেই। আর সেই আনন্দে আবার একবার পা মেলানো যৌবনের রঙে রঙীন হয়ে জীবনকে চিনে নেবার দৌড়ে।
বন্ধু মানেই মিঠে হাওয়া
বয়েস ভুলে যাওয়া।
বন্ধু মানেই আবার সেই
ছেলেবেলাতে ফিরে যাওয়া।
একা থাকতে থাকতে আর লড়াই করতে করতে কখন যেন মনের খুশি আর আনন্দগুলোকে চাপা দিয়ে দিয়েছিলো দীপ্ত।আজ বন্ধুদের সাথে পেয়ে তাই মন ছুটলো নিরুদ্দেশে।
যদিও অনু খুবই আপত্তি করেছিলো," না না আশীর্বাদ হয়ে গেছে,এখন এদিক ওদিক কি যাবি?"
" মা তুমি আমাকে আটকে রাখবে কি করে? আমাকে তো অফিস যেতে হবে। নাকি বাড়িতে রেখে দেবে সব কাজ ভুলিয়ে? প্লিজ মা ও অনেক করে বলেছে যেতে।"
মিষ্টি আজকাল দুষ্টুকে একটু পড়তে চায় ওর মতো করে। গাইডের সাথে দুষ্টুর কি কিছু আছে? নাকি দীপ্ত শুধুই গাইড? দুষ্টুকে জিজ্ঞেস করতেই বলেছিলো," আরে সেই কবে সেভ করা ছিলো নম্বরটা গাইড বলে,তারপর রয়েই গেছে।"
"হঠাৎই দীপ্তকে এতদিন গাইড বলে হাইড করে রেখেছিলি কেন শুনি? এবার জোজোকে ডুবুরি করে নামাতে হবে দেখছি তোর মন সাগরে।"
তবে পুরুলিয়া এসে জোজো ডিটেকটিভ আর গোয়েন্দা দুই হলো মিষ্টিকে খুশি করতে আরে বেশি নয় একটাই শালী তার মনের দরিয়ায় কে খুশির জোয়ার আনছে তা দেখতেই হবে। আর তাই তো এখানে আসা।ব্যাচেলর পার্টি প্লাশ আরো দুজন ব্যাচেলরের কেমিক্যাল রিঅ্যাকশন যদি ঘটিয়ে দেওয়া যায়।
যদিও রবীনের খুব ইচ্ছে ছিলো ওদের সাথে আসার।"কতদিন পুরুলিয়া যাওয়া হয়না বুঝলি,পুরোনো জায়গা তো।"
অনু তাকিয়েছিলো পুরোনো অনুরাগে,দীপ্ত ফোনের ওপার থেকে বলেছিলো," চলে আসুন স্যার,খুব ভালো হবে।"
অনু বকেছিলো," ছেলেমেয়েদের মাঝে তুমি কি করবে? সবাই বড় হয়েছে। আর তুমি ওদের স্যার না?"
" তাইতো অনু খুব ইচ্ছে করে ওদের নিয়ে সেই স্কুলের মত আবার পিকনিকে যাই।"
*******************
দীপ্ত দুষ্টু দুজনে বললেও জোজো মিষ্টিকে বলেছিলো," আমি কিন্তু খুব চাপে পড়ে যাবো স্যার মানে হবু স্যারশ্বশুর মশায় কাম জেঠু গেলে।"
হাসিতে ফেটে পড়েছিলো ওরা।দুষ্টু বলেছিলো," দাঁড়া বাবাকে বলছি। কেমন ছাত্র কাম হবু জামাই তোমার।"
তবে দীপ্তর রায়বাবু এবার স্যারের উত্তেজনা দেখে হাল ছাড়লেন পুরোপুরি। বাড়ি গিয়ে গিন্নীকে বললেন," শোনো আর কোন চান্স নেই।একজন নয় দুজন রাজকন্যা এসে গেছে দেখছি।তবে স্যারের মনে হয় সেই ছোট চুলের আইএএস অফিসারই প্রেমিকা।"
রায়বাবুর স্ত্রী মাথায় হাত দেন," সে কি গো! একেবারে প্রেমিকা? এই তো বলছিলে মনে হয় কিছু নেই ওনার।"
" ভুল বলেছি গিন্নী এখন তো দেখছি সব কিছুই আছে। দেখি বাড়ির সামনের মাঠে চুটিয়ে ক্রিকেট খেলছে সবাই। মানুষ এমন ছটফটে হয়ে ওঠে কখন জানো? প্রেমে পড়লে।"
********************
পুরুলিয়ার রুক্ষ শুকনো লাল মাটির ভেতরের রঙ আগে অনেকবার দেখেছে দুষ্টু আর মিষ্টি তবে এবারে বন্ধুত্ব আর ভালোবাসাতে সেই রঙ আরো গাঢ় লাল।
বন্ধুত্বের মজা আর গাঢ় রঙ দীপ্তও প্রাণভরে গায়ে মাখবে বলে এই দুদিন একদম ছুটি নিয়েছে শুধু রায়বাবুকে বলা আছে যদি বিশেষ কোন দরকার হয় তাহলে যেন কোয়ার্টারে এসে কাজ করিয়ে নিয়ে যান।
যাক এইটুকু শান্তি যে স্যার বলে গেছেন যেতে দরকার হলেই তাই রায়বাবু ইতিমধ্যেই দুবার ঘুরে গেছেন উফ্ রান্নার গন্ধে বেশ মন কেমন ভাব। মাসিমা বেশ উঠে বসেছেন তাই ফুলিয়ার সাথে সাথে মাসিমাও লেগে পড়েছেন রান্নায়।হাট থেকে এসেছে জ্যান্ত মুরগী আর পাঁঠার মাংস। বাপরে কিছু খেতে পারে এরা,একসাথে মুরগী পাঁঠা সব খাচ্ছে! আর খাবেইনা বা কেন? স্যার তো সকালে উঠে বোধহয় এখনো পাঁচ কিলোমিটার দৌড়য়।ছুটে ছুটেই তো অমন লম্বা চেহারা খানা হয়েছে। আর সেই মেয়েটি বা কম কি? বাপরে কি লম্বা!
আগেই গিন্নীকে বলেছিলেন," শোনো এতো লম্বা ছেলে আর আমাদের ঊর্মি যা ছোটখাটো ওসব হবেনা।তুমি আশা ছাড়ো।"
উরিবাবা বলতেই গিন্নী অমিতাভ আর জয়া ভাদুরীর উদাহরণ দিয়ে ছেড়ে দিলো। তবে ঠিক কথা তাই এতোদিন লেগে ছিলেন আশায় আশায়।তবে এবার বুঝলেন আর লাভ নেই। সকালে একবার সাইকেল নিয়ে ছুতোয় এসেছিলেন এদিকে দেখলেন মাঠে দৌড়চ্ছে দুজন একজন তো স্যার আর আরেকজন সেই হবু আইএএস। নাহ্ সব আশা বিসর্জন দিয়ে মাছ কিনে বাড়ি ফেরা। অবশ্য স্যারের চোখ এড়ায়নি,স্যার উচ্ছ্বাস মাখা গলায় বলেছেন.." গুডমর্ণিং রায়বাবু, বাজারে চললেন?"
মনে মনে হা হুতাশ করতে করতে বললেন," হ্যাঁ স্যার একটু মাছ নিয়ে আসি।"
যাবার সময় একটু সাইড করে তাকিয়ে বললেন," দৌড়ও সুন্দরী ট্যালেন্টেড মেয়ের পেছনে যখন ল্যাং মারবে বুঝবে একদম।"
একটু হাঁফায় দুষ্টু," তুমি এখনো কি ভালো দৌড়তে পারো দীপ্তদা,নাহ্ আমি আর পারছিনা।কত মিটার হলো বলতো?"
দীপ্ত হাসে," তুই তো প্রাকটিস করতিস,বুঝেছি হাতে চাকরির ছাড়পত্র এসে যাওয়াতে ছেড়ে দিয়েছিস। ওরা তো এখনো ঘুমোচ্ছে,যাবি ঐ দূরের টিলাটায় ওখান থেকে ঝরনা দেখা যায়।"
ঘামে ভেজা দুষ্টুর মুখটা সূর্যের সদ্য ছড়ানো লাল আলো মাখছে ওর মুখ মুঠোভরে। খুব ভালো লাগে দীপ্তর,দুষ্টুকে যেন ছৌ নাচের মুখোশের সেই বড় বড় চোখের দুর্গার মত লাগছে। ওর ভাসা চোখে স্বপ্নের আল্পনা উঁকি মারছে।
" ঐ টিলাটা তো অনেকটা দূরে,ওখানে আবার হাঁটিয়ে নিয়ে যাবে? ফিরে আসতে আসতে অনেক দেরি হয়ে যাবে। দিদি আর জোজোদা উঠে যদি আমাদের না দেখে তাহলে ওদের ভালো লাগবেনা।"
দীপ্ত বুঝতে পারে দুষ্টুর মনে এখনো একটু দোটানা আছে তাই বলে.." আচ্ছা চল,ওদেরকে ডেকে তুলি তারপর যাবো।"
সুতরাং যেমন ভাবা তেমন কাজ,সবাই মিলে রওনা দেওয়া ঐ দূরের পাহাড়ের টিলার দিকে। মিষ্টি হাই তোলে," তোদের জন্য ঘুমটা হলোনা পুরো।উফ্ কি এনার্জি তোদের! এখানে না এলে আমার নতুন দীপ্তকে দেখা হতোনা। কতবছর বাদে দেখা বলতো তোর সাথে? কিন্তু তাহলে কি হবে,আমাদের বন্ধুকে সেই কবে যে দুষ্টু গাইড করে পেয়েছে কে জানে? জোজো তুই কিছু জানিস?"
দুষ্টু সত্যিই লজ্জা পায় এবার, " দিদি তুই কিন্তু আমাকে কথা দিয়েছিলি বলবিনা।"
গাড়ি চালাতে চালাতে মাথা ঘোরায় দীপ্ত ওর মুখে একটা হাল্কা হাসির ছোঁয়া। দুষ্টু ধমকায়," দীপ্তদা তুমি মাথা ঘোরাও সামনে,এক্ষুণি অ্যাক্সিডেন্ট করবে কিন্তু।"
মজায় মেতে ওঠে জোজো," চিন্তা নেই আমার গাইডেন্সে গাইড গাড়ি চালাচ্ছে কিছু হবেনা। রাজকন্যাগণ পেছনে নিশ্চিন্তে বোসো।"
হাল্কা শীতের চাদরের আয়েশ মেখেছে সকালের পুরুলিয়া। চারিদিকে রয়েছে তার আবেশ তার মাঝেই কর্মব্যস্ত আদিবাসী মহিলা আর পুরুষেরা ঘাড়ে কোদাল নিয়ে চলেছে কাজে। সুন্দর মাটির রঙ করা বাড়িগুলোর দরজার ফাঁক দিয়ে উঁকি দিচ্ছে নিষ্পাপ হাসিমাখানো শিশুমুখ।
পুরুলিয়া সৌন্দর্য্য সাজিয়ে বসে আছে,বরষায়, শীতে আর বসন্তে এক এক সময় এক রকম সৌন্দর্য্য।
প্রকৃতিতে চোখ রাখতে রাখতে ছুটে চলা আনন্দে।মিষ্টি ফ্লাক্স খাবার সব গুছিয়ে নিয়েছে চট জলদি। অবাক হয়েছে দুষ্টু," দিদি আমরা একটু বাদেই চলে আসবো।তুই পিকনিকের মত সব গুছিয়ে নিলি যে। সত্যিই সামনে তোর বিয়ে বোঝা যাচ্ছে।"
" পিকনিক তো,তবে একদম সকালে উঠে এতোটা যাবো তাই চট করে একটু কফি করে নিলাম। মাসিমা বললেন কেক বিস্কুট নিয়ে নিতে সঙ্গে। তুইও পারবি এইসব দাঁড়া চাকরিতে যা তারপর তো বুঝবি।"
দুইবোন যখন কথায় ব্যস্ত তখন জোজো বলে," সত্যিই তোর জন্য এত ভালো একটা ট্রিপ হলো।ভীষণ আনন্দ হচ্ছে কিন্তু।কতদিন বাদে আবার একসাথে।"
গাড়ি চালাতে চালাতে সব কথাগুলো পরিস্কার কানে না এলেও লুকিং গ্লাসে দুষ্টুর মুখটা একদম দেখতে পায় পরিস্কার দীপ্ত। চোখেমুখে হাসি মেখে দুষ্টু বাইরে তাকিয়ে উপভোগ করছে প্রকৃতির সৌন্দর্য্য, আবার কখনো ক্যামেরাবন্দি করছে নিজের খেয়ালে ছুটে যাওয়া প্রকৃতি কন্যাদের। সবুজ পাহাড়ী রাস্তায় জঙ্গলের পাশ দিয়ে লালমাটির পথ ধরে এগিয়ে যায় ওদের জিপটা।হঠাৎই দুষ্টুর চোখাচোখি হয় দীপ্তর সাথে,লজ্জা পেয়ে যায় দুষ্টু একটু কিন্তু চোখ সরায়না।ওর হাসিমুখ আর চোখের ভাষা ছুঁয়ে যায় দীপ্তকে..দুষ্টু ইশারায় বলে দেখে গাড়ি চালাতে। মুখে হাসি লেগে থাকে দীপ্তর।জোজো পাশ থেকে বলে ওঠে," সামলে ভাই,এক কাজ করি আমি বরং চালাই।তুই পেছনে বোস। সামনে আমার বিয়ে আছে,হানিমুন আছে।সুতরাং কোন অঘটন চাইনা।"
দীপ্ত সত্যিই এবার হেসে ফেলে," কিছু হবেনা,প্রায় চলে এসেছি।আর একটু।"
জোজো ঠোঁট ওল্টায়,"ফেরার পথে দুষ্টু সামনে বসিস,আমার মিষ্টির সাথে কথা আছে।"
" ইশ্ আর কত কথা বলবি তোরা? নিজেদের অসুবিধা হচ্ছে তাই বল।"
ওদের দুস্টুমি ভরা খুনশুটির মাঝে দীপ্ত সেই টিলাটার সামনে গাড়ি রাখে। ওটার ওপর দিয়ে একটু উঁচুতে উঠলেই চারিদিকে সবুজে সবুজ।
বেশ কিছুটা ওপরে উঠে এসেছে ওরা,পাথরের শেষটায় উঠতে যায় জোজো দীপ্ত বারণ করে," কি দরকার অত সামনে যাবার? নিচে অনেক বড় খাদ।সামনেই তোর বিয়ে তারপর আরো সব কি আছে।"
মিষ্টি আর দুষ্টুকে কাছে নিয়ে ছবি তোলে জোজো। তারপর শুধু মিষ্টির সাথে বেশ কয়েকটা ছবি। তার মাঝেই ফ্রেমবদল মানে কখনো ওরা তিন বন্ধু স্বাধীনতার আনন্দে হাত তুলে উপরে,আবার কখনো দীপ্তর সাথে দুষ্টু মিষ্টি।
অনেক হয়েছে.." মিষ্টি এবার আয় এদিকে,দুষ্টুসোনা একটু দাঁড়াও আরেকটু ক্লোজ দীপ্ত স্মাইল ব্যাস হয়ে গেছে।"
টিলায় গাছের তলায় বসে মিষ্টি ফ্লাক্স থেকে কফি ঢেলে দেয় সাথে বিস্কিট আর কেক। দুষ্টু আবার প্রশংসা করে দিদির..." সত্যি দিদি ভাগ্যিস কফিটা এনেছিলি! সত্যিই একদম জমে গেছে।"
দীপ্ত একটু ইতস্ততঃ করে বলে.." একটা গান হলে ভালো হত বা যদি একটা কবিতা। উত্তীয় আর দুষ্টু একসাথে আবৃত্তি করতি একসময়।"
জোজো হেসে বলে," এইরে এখন তো আর করাই হয়না,কি রে দুষ্টু কি করা যায় ভাব।আমাদের হোস্টের আব্দার। আমাদের দেদার আনন্দ দিচ্ছে বেচারা ছেলেটা।"
দুষ্টু ওর কবিতার ঝুলিতে ডুব দিয়ে শুরু করে জানে জোজোদা মাঝখানে ধরবে।
আমরা দুজন একটি গাঁয়ে থাকি
সেই আমাদের একটিমাত্র সুখ,
তাদের গাছে গায় যে দোয়েল পাখি
তাহার গানে আমার নাচে বুক।
তাহার দুটি পালন-করা ভেড়া
চরে বেড়ায় মোদের বটমূলে,
যদি ভাঙে আমার খেতের বেড়া
কোলের 'পরে নিই তাহারে তুলে।
আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা,
আমাদের এই নদীর নাম অঞ্জনা,
আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচ জনে--
আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।
দুইটি পাড়ায় বড়োই কাছাকাছি,
মাঝে শুধু একটি মাঠের ফাঁক--
তাদের বনের অনেক মধুমাছি
মোদের বনে বাঁধে মধুর চাক।
তাদের ঘাটে পূজার জবামালা
ভেসে আসে মোদের বাঁধা ঘাটে,
তাদের পাড়ার কুসুম-ফুলের ডালা
বেচতে আসে মোদের পাড়ার হাটে।
আমাদের এই গ্রামের নামটি খঞ্জনা,
আমাদের এই নদীর নাম অঞ্জনা,
আমার নাম তো জানে গাঁয়ের পাঁচ জনে--
আমাদের সেই তাহার নামটি রঞ্জনা।
.......................
অদ্ভুতভাবে রবিঠাকুরের কবিতার সঙ্গে সঙ্গে শান্ত শীতল প্রকৃতির সাথে আরো নিবিড় বন্ধনে আটকে পড়ে ওরা সবাই। মনে ছুঁয়ে যায় এক অপার শান্তি। একটা সময় চারজনই গলা মিলিয়েছিলো,সেই ছোটবেলায় পড়া কবিতায়।
" আমি জানি তো এটা সবার জানা তাই এটাই করলাম তোমরা সবাই গলা মেলাবে বলে।"
টিলার পথ বেয়ে নেমে এসে গাড়ির কাছে দাঁড়ায় ওরা।দীপ্ত বলে এবার চল বাড়ি ফিরি..নিশ্চয় এতক্ষণে আমার কুক এসে গেছে।ওকে একটু না দেখিয়ে দিলে ভালো হয়।অবশ্য মা আছে।"
কিন্তু তক্ষুনি ফেরা হলোনা ফিরতে চাইলেও জোজোর বায়না.." শোন তোদের পুরুলিয়া জানাশোনা,আমার আসা হয়নি তেমন ঐ এক আধবার কাজে। আমি একটু যাবো বামনী ফলস দেখে যাবো। কাছে এসে গেছি,চলে গেলে আর আসা হবেনা।"
" এখন তো তেমন জল নেই,শুধু শুধু অনেকটা নামবি।"দীপ্ত বলে।
" তা হোক,একটা দুটো ছবি তুলে যাবো।"
" চলো দীপ্তদা,লাভ নেই বুঝিয়ে।সাংবাদিক মশাইয়ের মাথার পোকা নড়েছে।ছবি না তুলে যাবেনা আমি জানি।"
মিষ্টি বলে," আমি কিন্তু নামবোনা,আমি এর আগে অনেকবার এসেছি। বোন তুই আমার সাথে থাকবি কিন্তু ওপরে।"
কিছুক্ষণের মধ্যেই ওরা পৌঁছে যায় ওখানে।শীতের আমেজে,কয়েকজন এসেছে এরমধ্যে তবে ফাঁকাই বলা চলে। দুষ্টুর ইচ্ছে থাকলেও যাওয়া হলোনা দিদির বায়নায়।আর সত্যিই দিদিকে একা রেখে যাবেই বা কি করে। ওরা দুজন একটা হাসিভরা লুক দিয়ে চলে গেলো।জোজো বললো," দৌড়ে যাচ্ছি ছুটে আসবো।"
দুষ্টু সাবধান করে," বেশি ছুটিসনা জোজোদা সামনে বিয়ে।"
মিষ্টি বকা দেয় ওকে," যা পারে করুক ছাড় তো। নে আমার একটা ছবি তুলে দে এখানে দাঁড়িয়ে।"
*************************
আসেপাশে দু একজন লোক,ওরা অনেকটা নিচে নেমে এসেছে জোজো ছবি তুলছে দীপ্ত ওকে সাবধান করে," আর এগোসনা,এরপর বর্ষাকালে আসিস তখন খুব ভালো লাগবে। অবশ্য জানিনা তখন আমি থাকবো কিনা এখানে। অবশ্য তোর তো মানে মিষ্টির দাদুরবাড়ি তো আসতেই হবে।"
ওপরে কিছুটা উঠে একটা পাথরে দাঁড়িয়ে একটু হাঁফায় জোজো..." একটু দাঁড়া এখানে,রেস্ট নি আর ভিউটা নিয়ে নি।"
দীপ্ত ঘড়িটা দেখে,জোজো ছবি তোলার ফাঁকে ওকে দেখে। অনেক পরিবর্তন হয়েছে দীপ্তর,সুঠাম সুন্দর চেহারা।নিয়মিত শরীর চর্চার ফলে শরীরে পৌরুষের খেলা।ক্যামেরা ঘোরায় ওর দিকে।দীপ্ত হাসে,ওর হাসিমুখটা বন্দি হয়।হঠাৎই জোজো বলে," দুষ্টুকে ভালোবাসিস?"
অকস্মাৎ প্রশ্নবোমাতে একদম কুপোকাত হয়ে যায় দীপ্ত..." মানে?"
" মানে ঝর্ণার সামনে মিথ্যে কথা বলতে নেই। ভালোবাসা আর মুগ্ধতার চোখের চাউনি আমি চিনি।"
হঠাৎই দীপ্তর বাঁধ ভাঙে চারদিকে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই চারপাশে।মনের ভেতরে অনেক বছরের বন্দি অপরাধবোধটা আজ আবার মাথা চাড়া দেয়।হয়ত এইজন্য আজও দুষ্টুর কাছে স্বাভাবিক হতে পারেনা।দীপ্তর কথাগুলো প্রতিধ্বনিত হয় পাহাড়ের পাথরের গায়ে তবে ও নিশ্চিন্ত দুষ্টু মিষ্টির কানে পৌঁছোবেনা কথাটা...
" সত্যিই তুই ভালোবাসা আর মুগ্ধতা ভরা চোখের চাউনি বুঝিস? তাহলে কালচিনিতে স্কুলে পড়তে বুঝিসনি কেন দুষ্টু তোকে ভালোবাসে?"
অদ্ভুতভাবে ধাক্কা খায় জোজো.." আমি বুঝেছিলাম তবে পরে,তখন মিষ্টিকে খুব ভালোবেসে ফেলেছি।মিষ্টি আমার ওপর নির্ভর করতে শুরু করেছিলো।আমার ফেরার কোন পথ ছিলোনা। দুষ্টু তো আগে কখনো বলেনি আমাকে।আর ওকে আমি সবসময় আমার ছোটবোনই ভেবেছি বিশ্বাস কর।তাই ভালোবাসা এলেও তার রঙ অন্য ছিলো। তবে যেদিন মিষ্টিকে ভালো লাগে সেকথা বলাতে ওর কান্না দেখে অবাক হয়েছিলাম। পরে,বুঝেছিলাম ওটা ভালোবাসার নিঃশব্দ কান্না।সত্যিই ভীষণ ভীষণ কষ্ট হয়েছিলো এখনো হয় ভাবলেই। কিন্তু কি করবো আমি?"
আজ দীপ্ত নিজেকে উজাড় করে দেয়,অনেক পুরোনো অপরাধবোধের কষ্টটা বলে ফেলে জোজোকে..অনিচ্ছাকৃত ভাবে চিঠিটা হঠাৎই ওর হাতে চলে এসেছিলো,ও পড়ে ফেলেছিলো কিন্তু আজকের মত তখন পরিণত না থাকায় বলতে পারেনি জোজোকে। যদি বলত তাহলে আজ প্রেমের গল্পটা অন্য মোড় নিতো।
কথা বলতে বলতে দুষ্টুর কথা ভেবে কেন যেন চোখটা ভিজে ওঠে দীপ্তর হয়ত বা হাল্কা লাগে সব কথা বলতে পেরে। একথা তো কোনদিন দুষ্টুকে বলতে পারবেনা।
জোজো ওকে জড়িয়ে ধরে,আলিঙ্গনে দুই বন্ধু অনেকদিন পরে আবার।
" চিয়ার আপ ব্রো,ওপরে ওরা অনেকক্ষণ বসে আছে।এরপর মারধোর খেতে হবে। অনেক গল্প ভগবান লেখে তাই সব গল্পের রঙ আলাদা। সবটা আমাদের হাতে থাকেনা। হাল্কা করে নে নিজেকে।দুষ্টুর জন্য তুই একদম পারফেক্ট ফিট। আর ভালোবাসার মধ্যে গোপনীয়তা কিসের? ওকে বলে দিবি একদিন ঠিক এমনি ভাবে ভরা সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে কোন এক চাঁদনী রাতে....দুষ্টু তোর লেখা প্রথম প্রেমপত্র আমি পড়ে ফেলেছিলাম।"
মনটা হাল্কা হলেও দীপ্ত ভাবে...সত্যিই কি এই কথাগুলো কোনদিন বলতে পারবে দুষ্টুকে?
মনের চোরা কুঠুরিতে লুকোনো শব্দগুলো আজ এলোমেলো হয়ে ছড়িয়ে পড়লো,ঝর্ণার মাঝে আর পাথরের খাঁজে তবুও বুকের পাথরটা আজ অনেক হাল্কা দীপ্তর।
জোজোকে আর দীপ্তকে গলা ধরে আসতে দেখে দুষ্টু আর মিষ্টি। "দিদি মনে পড়ছে কিছু? ঐ দেখ আমাদের দুজনকে বোর করে এখন দুটোতে আসছে কেমন?তোর মনে পড়ছে কিছু?"
মিষ্টি ডুব মারে অতীতে ওর মুখ হাসিমাখে স্মৃতির সিঁড়ি বেয়ে। সত্যিই তো ওদের স্কুল যাওয়ার আর আসার পথে এই মানিকজোড়কে দেখতো রোজই। এখন তো মনে হচ্ছে দুটো বোধহয় ইচ্ছে করেই দাঁড়িয়ে থাকতো।
মিষ্টি হাসে," অনেক কিছু মনে পড়লো বোন। আচ্ছা বলতো ওরা দুটো কি ইচ্ছে করেই আমাদের রাস্তা কাটতো বেড়ালের মতো?"
" আমার তো তাই মনে হচ্ছে এবার।"
ওরা এগিয়ে আসতেই দুজনে রাগ রাগ ভাব দেখায়।জোজো বলে," যা খুশি তোরা কর,উঃ কি যে মিস্ করলি। আমরা দারুণ আনন্দ করে এলাম ওখান থেকে।"
দুষ্টু ঠোঁট ওল্টায়," জল এখন কোথায় যে আনন্দ করবে? আমাকে বলতে এসোনা তো। তুই নিচে গেছিস আর দিদি আমাকে খাটিয়ে মেরেছে ছবি তুলেই যাচ্ছি কিছুতেই পছন্দ হয়না মহারাণীর।"
দীপ্ত দুষ্টুর দিকে তাকিয়ে হাসে..জোজো বলে," আচ্ছা আমি তোর ছবি তুলি তাহলে হবে তো?"
" তোর বৌয়েরটা তোল দেখ খুশি করতে পারিস কিনা? আমি গাড়িতে গিয়ে বসি।"
জোজোর ছবি তোলার ফাঁকে দুষ্টু এসে বসে সামনের সীটে। দীপ্তর মনে সুখের পায়রা ডানা ঝাপটালো।আর জোজো মুচকি হাসলো মিষ্টির দিকে তাকিয়ে," যাক এতক্ষণে আমি নিশ্চিন্ত হলাম বিয়ে হানিমুন ঠিকমতো হবে।"
জোজোর মুখে চাপা দেয় মিষ্টি..আদরে ঘেঁষে আসে ওর খুব কাছে," আসার সময় অনেকবার কথাটা বললি। কেন যেন মনটা আমার যেন কেমন হয়ে গেলো।এত ভালোবাসিস আমাকে?"
" সন্দেহ আছে নাকি? ইগারলি ওয়েটিং ফর হানিমুন।"
" অসভ্য একটা,বন্ধুত্বটাই ভালো ছিলো। তুই আমার বর হবি ভাবতেই যেন কেমন লাগে।"মিষ্টি বলে।
" তাহলে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিই?" জোজো বলে।ওর কাঁধে মাথা রাখে মিষ্টি।
দীপ্ত গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে মাঝে মাঝেই অন্যমনস্ক হয়ে যায়। দুষ্টুর হাওয়াতে উড়ে যাওয়া চুলের গোছা বাতাসকেও যেন বলছে থামতে আজ। মাঝে মাঝেই বারণ না শোনা চোখদুটো দুষ্টু কে দেখছে। জোজো পেছন থেকে সাবধান করে,"সোজা চল,আমি লক্ষ্য রেখেছি।"
" আমিও পেছনে লক্ষ্য রেখেছি কিন্তু,কত সুযোগ করে দিলাম ভাব।নাহলে তো গালাগালি দিতিস মনে মনে।"
হাসির ছলে শ্বাস ফেলে জোজো..." কেজানে কার কার কি সুবিধা অসুবিধা হচ্ছে?তবে দীপ্ত সবটাতেই নজর রেখেছে কিন্তু আর দুষ্টুও সুতরাং কোন চিন্তা নেই।"
*******************
কোয়ার্টারে পৌঁছতে প্রায় জলখাবারের বেলা পার হয়ে গেছে তবুও গরম লুচি সুতরাং আর দেরি নয় একদম ঝাঁপিয়ে পড়া নিশ্চিন্তে।
রায়বাবু যতই চিন্তায় থাকুননা কেন ওনাকে নিশ্চিন্ত করে দুপুরে পাঁঠাটা সবাই জমিয়ে খেলো। মাসিমা বললেন," কতদিন বাদে ছেলেটাকে হাসতে দেখছি এমন করে। আমার অসুখ,ওর কাজ আর পড়াশোনা নিয়ে হাসতেই ভুলে গেছিলো ছেলেটা।"
" মাসিমা,মাংসটা কিন্তু দারুণ হয়েছে।যা খাওয়াচ্ছেন মাঝে মাঝেই চলে আসবো সময় পেলেই।"
" খাও,ভালো করে।এখনই তো খাবে,আমারও খুব ভালো লাগছে।সব আমাদের ফুলিয়া রান্না করেছে।আমি দেখিয়ে দিয়েছি ওকে,আমি আজকাল রান্নাঘরে ঢুকি কোথায়?"
মাকে এতো কথা বলতে দেখে দীপ্তরও খুব ভালো লাগছে।আজ সত্যিই মনটাও খুব ভালো।তাই রাতে একটা ক্যাম্পফায়ার আর বিকেলে একটু ঘোরাঘুরি হয়ে যাক।
বিকেলের সূর্যাস্ত আর খোলা হাওয়ায় মন ভালো হয়ে যায় সবার।তবে সূর্যের পাটে যাওয়া দেখতে দেখতেই গাড়িতে স্টার্ট দেয় দীপ্ত।কারণ হাল্কা শীতের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে প্রকৃতিতে তাই সূর্য ডুবে যাবার পর নামবে অন্ধকার একদম ঝুপ করেই।ওর নিজের ওপর আক্রমণ হওয়ার পর আর কোন জায়গাই তেমন নিরাপদ মনে হয়না।
গাড়ি রওনা দিয়েছে কোয়ার্টারের দিকে মনের সুখে দুষ্টু গান ধরেছে...." তোমার খোলা হাওয়া,লাগিয়ে পালে। তোমার খোলা হাওয়া।টুকরো করে কাছি আমি ডুবতে রাজি আছি।"
গাড়ি চালাতে চালাতে দীপ্তর মনও ডুবে যায় এক অন্য সুরের মূর্ছনায়। হঠাৎই আনমনা হয়ে ব্রেক কষে দীপ্ত,স্টিয়ারিংয়ের ওপর ওর হাতে হাত রাখে দুষ্টু।যেন বলতে চায়," সামলে চলো,তাইতো আমি এখানে আছি।"
জোজো আর মিষ্টিও বলে ওঠে," ইশ্ বাছুরটা একটু হলেই..যাক সাবধানে চালা। বেচারা বোধহয় দলছুট হয়ে গেছে তাই দৌড়চ্ছে ভয়ে।"
একটা ব্রেক কষার মধ্যে হয়ত বাঁধনটা আরো শক্ত হলো ওদের অজান্তেই। সামনে একটা শালবনের জঙ্গল আর সেটা পার হওয়ার কিছুটা বাদেই দীপ্তর কোয়ার্টার। তাই স্পীড একটু বাড়ায় দীপ্ত,মনের মধ্যে আজ অদ্ভুত একটা গতি যেন নাড়া দিয়েছে হৃদপিন্ডকে।
কিন্তু তবুও হঠাৎই আবার থামতে হয়,সত্যিই এবার একটু কেমন যেন লাগে দীপ্তর।মিষ্টিরও একটু অদ্ভুত লাগে।উল্টোদিক থেকে একটা গাড়ি একদম ওদের সামনে এসে কিছুটা আগে পথ আটকে দাঁড়িয়েছে। মিষ্টি জোজোর হাতটা চেপে ধরে," আমার কেমন যেন লাগছে,হঠাৎই গাড়িটা এভাবে এসে দাঁড়ালো কেন? দীপ্ত ঐ জন্য বোধহয় একটু তাড়া দিচ্ছিলো। তুই যাসনা কোথাও।"
দুষ্টু গাড়ি থেকে নামতে যায়,"এ কি আমাদের গাড়ির সামনে এসে দাঁড়িয়ে পড়লো যে? আমি নামছি দাঁড়াও।"
মিষ্টি আর জোজো ওকে বকুনি দেয়।
দীপ্ত ওকে হাত দিয়ে ইশারা করে বলে," আমি দেখছি। সবসময় জেদ করিসনা,সবকিছু সবসময় নিয়ম মেনে চলেনা।"
তবে ওদের আর দেখতে হলোনা...উল্টোদিকের গাড়িটার আলো জ্বলে উঠলো,গাড়ি থেকে নামলো যারা তাদের দেখে আর থাকতে পারলোনা গাড়িতে দুষ্টু।মানে ওকে আর আটকানো গেলোনা।
Comments
Post a Comment