Skip to main content

ছোট মা

#ছোট_মা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

রিপোস্ট

চন্দন কাঠের বাক্সটা আলমারি থেকে বের করে নিয়ে বসেছে প্রতিমা অনেকদিন বাদে। এর আগেও মাঝে মাঝেই বের করে দেখেছে আবার যত্নে গুছিয়ে রেখে চাবির গোছা যত্নে বেঁধেছে আঁচলে। ও যখন এই বাড়িতে বিয়ের পর নতুন বৌ হয়ে এসেছিল তখন অলক আর অদিতি ছোট। প্রতিমা প্রমথেশের দ্বিতীয় স্ত্রী। যদিও অপরাজিতা চলে যাবার পর বিয়ের কোন ইচ্ছেই ছিল না ভেবেছিল ঐ দুই ছোট ছেলেমেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দেবে সারাটা জীবন। কি দরকার আবার কাউকে ঘরে এনে মায়া বাড়ানোর? যদি মা হিসেবে সে উপযুক্ত না হয়? অবহেলিত হয় মা হারা দুই সন্তান? একসাথে অনেকগুলো প্রশ্ন ভিড় করত মনে যখনই কেউ বিয়ের কথা বলত।

      কিন্তু একটা সময় নিজের ব‍্যবসার কাজ সামলে একা বাড়িতে কাজের লোকের ভরসায় ওদের মানুষ করা অসুখ বিসুখে দেখভাল করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছিল।

            হঠাৎই একদিন ছোটবোন ইভা এল। মনটা খারাপ হয়ে গেল দাদার সংসারের এলোমেলো ছবি দেখে তাই বলেই ফেলল," দাদা আমার দূর সম্পর্কের ননদ প্রতিমা আমাদের গ্ৰামেই থাকে। স্বামী ঘরে নেয় না কিছুদিন সংসার করার পর তাড়িয়েছিল কারণ বাচ্চাকাচ্চা হয়নি। এখন ভাইদের সংসারে গলগ্ৰহ হয়ে আছে। তুই যদি বিয়ে করে আনিস তাহলে হয়ত দুজনেরই ভালো হবে ও বেচারা একটা সংসার পাবে আর ছেলেমেয়ে দুটোও বাঁচবে অন্ততঃ কেউ একজন তো দেখবে। আর ভয় নেই দাদা নতুন কেউ আসবে না কোনভাবেই। বেচারা বড়ই কষ্টে আছে,কিন্তু খুব ভালো মেয়েটা। সত‍্যিই তো অদিতিটা কতটুকু,অলকও ছোট। ওরা ঠিক মেনে নেবে এই সময় কাউকে ঘরে আনলে।"
        যদিও সবটাই ইভা নিজেই দায়িত্ব নিয়ে কথা এগিয়েছিল তবুও বিয়ের আগে প্রতিমাকে দেখতে একবার বাজিতপুরে গেছিল প্রমথেশ। দেখার থেকেও  কথা বলাটা বেশি জরুরী ছিলো।

     প্রতিমার ভাইরা আর বিধবা মা যত্নের ত্রুটি করেনি, কাঁসার থালায় সাজিয়ে এনেছিলো লুচি,তরকারি পায়েস আর মিস্টি। প্রমথেশের মনে হয়েছিল অপরাজিতা চলে যাবার পর অনেকদিন এমন গুছিয়ে কেউ খেতে দেয়নি। একটা সময় মা আর বোনেরা থাকতে নিয়মিত এই যত্নেই অভ‍্যস্ত ছিল।আজকাল বাড়ি ফিরতে অনেক রাত হয়ে যায় তখন ঠাণ্ডা ভাত তরকারি ছাড়া আর কিছুই জোটে না।
                ওদের বাড়ির পেছনের বাগানে সিমেন্টের বেঞ্চে বসে ইভার সামনেই প্রতিমার সাথে কথা বলেছিল প্রমথেশ। প্রতিমার তেমন কোন সঙ্কোচ ছিল না কথা বলতে।
    " আপনি জানেন তো আমার দুই ছেলেমেয়ে আছে। হয়ত বলা উচিত নয় তবুও বলছি ওদের প্রয়োজনেই আমার আবার দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবতে হয়েছে। মানে আপনি কি পারবেন মানিয়ে নিতে?"
       প্রমথেশ কি বলতে চায় বুঝতে অসুবিধা হয়নি প্রতিমার.." আমি জানি,বৌদি আমাকে বলেছে। আমি ওদেরকে দেখেছি। ওরাও তো এসেছে আপনার সাথে। আমি মানিয়ে নিতে পারব,মানে চেষ্টা করব।"

        সেই যুগে বাপের বাড়িতে ভাইয়ের সংসারে বৌদের কালো মুখ দেখে থাকার চেয়ে প্রমথেশকেই কেন যেন ভালো লেগেছিল প্রতিমার। দুটো ছেলেমেয়েও হয়ত বাড়তি প্রাপ্তি। নাকি সন্তান সুখের জন‍্যই বোধহয় সবচেয়ে আগে মনটা ভরে গেছিল প্রতিমার? হয়ত মনে হয়েছিল চিরকাল বন্ধ‍্যা,স্বামী পরিত‍্যক্তা অপবাদ আর শুনতে হবে না ওরও নিজের ঘর হবে সন্তান হবে ওরা ওকে মা বলে ডাকবে।
          ভীষণ মায়ায় ভরা মুখ মেয়েটার,কেন যেন ছেলেটার চেয়েও মেয়েটাকে দেখে প্রতিমার মনটা আরো মায়ায় ভরে গেলো। অদিতির পাঁচ বছর বয়েস আর অলকের আট বছর বয়েস।

                     একমুঠো চাল ছড়িয়ে কণকাঞ্জলি দিয়ে বেশ কিছু বছর আগে বাপের বাড়ির ঋণ শোধ করে শ্বশুরবাড়িতে পা রেখেছিল প্রতিমা কিন্তু আবার ফিরে আসতে হয়েছিল বাপের বাড়িতেই দিনে দিনে আবার ঋণ বেড়েছিল তাই আবার দ্বিতীয় বার কণকাঞ্জলি দিয়ে শ্বশুরবাড়িতে পা বাড়ানো। নিয়ম কানুন সিঁদুর সবই খুব চেনা প্রতিমার। শুধু যে কৌটোটাকে বেশ কিছুদিন দরকার হয়নি আবার সেই কৌটোটা সিঁদুরের গাঢ় রঙ নিয়ে ফিরে এসেছে জীবনে।
                         বৌ হয়ে রাঙা পা প্রমথেশের ঘরের চৌকাঠে রাখলেও মা হওয়া যে সহজ নয় তা বুঝেছিল প্রতিমা। আগের বার বিয়েতে বাপের বাড়ি থেকে যে গয়না দিয়েছিল তার মধ‍্যে খুব সামান‍্যই ফিরিয়ে আনতে পেরেছিল প্রতিমা বাকিটা খাওয়া পরার খরচ হিসেবে দিয়ে আসতে হয়েছিল। মানে ও ফেরত চাইতে শাশুড়ি আর বর বলেছিল.." এতদিন এখানে খেলে পরলে মাগনা নাকি? বদলে তো কিছুই পেলাম না।"
      অবাক হয়ে গিয়েছিলো প্রতিমা ওর শ্রম আর যৌনতা? প্রতিরাতে অখিলের অত‍্যাচার নেশা করে এসে!
           যাক সে সব কথা ও ভুলতেই চায়,তাই যখন মা এসে বললো," গয়নাগাটি দেবার মত ক্ষমতা নেই রে মা, ঐ একটা দুল আর চারগাছা ব্রোঞ্জের চুড়ি দিয়েই আর হ‍্যাঁ তোর সবসময় পরার হারখানা তো আছেই। অবশ‍্য জামাইয়ের একখানা আঙটি তো দিতেই হবে।"
        প্রমথেশের অবশ‍্য কোন চাহিদা ছিলোনা,তার পক্ষেও প্রতিমাকে গা ভর্তি গয়না দিয়ে সাজিয়ে আনা সম্ভব ছিল না তবুও যেটুকু সম্ভব দিয়েছিল। বৌভাতের দিন ইভা বলেছিলো," দাদা খুব খালি খালি লাগছে গো। ঐ বাক্সটা দাওনা,ওখান থেকে যদি কিছু বের করে সাজিয়ে দেওয়া যায়।"
   প্রমথেশ কেন যেন একটু চমকে উঠেছিলো।
         অপরাজিতার বাপের বাড়ি থেকে অনেক গয়না দিয়েছিল,একমাত্র মেয়ে ছিলো বাপ মায়ের আদুরে। কি কুক্ষণে যে প্রমথেশের প্রেমে পড়েছিলো কে জানে? বাড়ি থেকে একটু আপত্তি করলেও মেনে নিয়েছিল ওঁরা। অবশ‍্য পরে প্রমথেশকে ভালোবাসতেন শ্বশুর শাশুড়িমা। তবে কেন যেন সব পর পর চলে গেল।
           অপরাজিতার গয়না পরার খুব শখ ছিলো,প্রতিমার চেয়ে অনেক কম বয়েসে সে এই বাড়িতে এসেছিলো। হাতে মণিপুরী বালা গলায় হাঁসুলি আর কপালে বড় সিঁদুরের টিপ পরা অপরাজিতার মুখ খানা ভোলা বড়ই কঠিন। তবুও সংসারের নিয়মে দিন এগিয়ে চলে সময়ের সাথে বন্ধুত্ব করে। শুধু অপরাজিতার সব গয়না রাখতে পারেনি প্রমথেশ কিছু বিক্রী করতে হয়েছিল চিকিৎসার জন‍্য।
      ইভা বলতেই প্রমথেশ বলে ওঠে," না না ও গয়না পরার দরকার নেই। অপু ঐ সব অদিতির জন‍্য রেখে গেছে। আমি হাত দিতে পারব না ওতে।"
      " ঠিক আছে আমাকেই দাওনা বাক্সটা,আমি সাজিয়ে দেব। ওকে বলে দেব এসব বড়বৌয়ের,অদিতির জন‍্য রাখা আছে।"

       প্রমথেশ আর কিছু বলতে পারেনি,গুনে গেঁথে ইভার হাতে দিয়েছিল বাক্সটা। অনেক পুরোনো চন্দন কাঠের বাক্স ওটা নাকি অপরাজিতার ঠাকুমার ছিল। অপু নাকি ছোটবেলায় আগলে বসে থাকত বাক্সখানা।
             ইভা মাথার সিঁথি,গলার হাঁসুলি হাতের মণিপুরী বালা পরাতে পরাতে বকবক করতে থাকে বড়বৌয়ের কথা.." জান তো খুব গয়না পরতে ভালোবাসত বড় ঘরের মেয়ে ছিল তো। কিছু নষ্ট হয়েছে,আর কিছু আছে অদিতির জন‍্য। তোমাকে যেটুকু দিয়েছে দাদা সবটাই নতুন করে দিয়েছে। আসলে দাদার অনেক খরচ হয়েছে বড়বৌয়ের জন‍্য। তবুও তো বাঁচল না।"
         হাতের মণিপুরী বালাটায় হাত বোলায় প্রতিমা,এত সুন্দর ডিজাইন কখনো দেখেনি ও। গলার হাঁসুলি খানাও খুব সুন্দর। তবে বালাজোড়া আরও সুন্দর... ওর এর আগে কখনও বালা পরা হয়নি। বিয়েতে ব্রোঞ্জের বাউটি দিয়েছিল মা তবে তাও গেছে কবেই।

          একদিন পার হয়ে গেছে প্রতিমা এসেছে এই বাড়িতে। অলক আর অদিতি তেমন ভাবে ওর কাছে আসেনি গত একবছরে ওরা বোধহয় একটা নিজস্ব জগত গড়েছে যেখানে ঢুকতে একটু সময় লাগবে সেটা প্রতিমা বুঝতে পারে।

       প্রতিমাকে সাজিয়ে ইভা বাইরে আনে...ওর জন‍্য নির্দিষ্ট চেয়ারে বসে প্রতিমা কয়েকজন খুব পরিচিত মানুষ নিমন্ত্রিত। প্রমথেশের কোলে চেপে আসে অদিতি। প্রতিমাকে আজ বেশ ভালো লাগছে দেখতে,হয়ত দ্বিতীয় সব কিছুর সাথেই প্রথম সব জিনিসের তুলনা হয় প্রথম কিছু পাওয়ার অনুভূতিই আলাদা।

        হঠাৎই অদিতি বাবার কোল থেকে নেমে আসে...প্রতিমার কাছে ছুটে যায়।প্রতিমা হাত বাড়িয়ে দেয় ওকে দেখে মনটা খুশিও হয় খুব।

   কিন্তু পরক্ষণেই চমকে ওঠে..." এগুলো মা পরতো,তুমি পরেছো কেন? খুলে দাও এখনি খুলে দাও। এটা আমার মায়ের মালা। মা আমার গলায় পরিয়ে দিয়ে আমাকে বৌ সাজাতো...এটা কেন পরেছ তুমি?"
         আসেপাশের অনেকেই অবাক হল,প্রতিমারও খুব লজ্জা লাগলো। গ্ৰামের বাড়িতে রটলো.. কে জানে মায়ের ভূত হয়তো মেয়েটার ঘাড়ে চেপেছে। না হলে ঐটুকু মেয়ে এত কথা বলতে পারে? বড় ভালোবাসত সংসারকে মেয়েটা,সবেই তো একটা বছর গেছে এখনো মায়া কাটাতে পারেনি।
         অদিতির সাথে অলকও বলে উঠেছিলো," মায়ের গয়না তুমি পরবে না ছোট মা। ওগুলো খুলে রাখ। বোন কাঁদছে,ও কাঁদলে ওর জ্বর আসে।"
             তখনকার মত ওদেরকে ওখান থেকে নিয়ে যাওয়া হলেও প্রতিমার মুখের হাসি মিলিয়ে গেল।মনে হলো গয়নাগুলো খুলে ফেলতে পারলেই বাঁচে।
           ফুলশয‍্যার ঘরে ঢুকে নিজেই প্রমথেশের কাছ থেকে বাক্সটা চাইলো..সব গয়না খুলে দিয়ে বললো," একটু মিলিয়ে রাখবেন।দিদির জিনিস তো। আমি একটু অদিতিকে দেখি ওর জ্বর এসেছে।"
          প্রমথেশ অবাক হয়েছিলো প্রতিমাকে দেখে কেন যেন এই প্রথম ভালোবাসতে ইচ্ছে করেছিল ওকে।

*********************
  তারপর কেটে গেছে অনেকদিন, প্রতিমা ওদের মা হতে চাইলেও ছোট মা নামটা মুছতে পারেনি।মনে মনে তাতেই খুশি হয়েছিলো মা তো ডাকেই ওরা বড় ছোটতে কি এসে যায়। সেই থেকে ঐ গয়নায় আর কখনো গায়ে দেয়নি প্রতিমা তবে অদিতির বায়নায় মাঝে মাঝেই খুলে বসতে হত সেই বাক্স। ওকে পরিয়ে দিতে হত গলার হার সিঁথি। অদ্ভুতভাবে বাক্সটা আর গয়নাগুলো নেড়ে দেখতো মেয়েটা কখনো গালে মুখে মাখিয়ে আদর করতো। একদিন প্রমথেশ দেখে অবাক হয়েছিল,ঠিক যেন অপু, কিছু বলেনি অবশ‍্য।
     প্রতিমার মনে হত ছোট্ট মেয়েটা মাকে খোঁজে শাড়িতে আর গয়নায়।
     একটু একটু করে প্রমথেশের অবস্থাও ফিরেছে এই এতগুলো বছরে।মোটামুটি অনেক গয়না বানিয়ে দিয়েছে প্রতিমাকে। দুই সন্তান আর স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার প্রতিমার। ওরাও বড় হয়েছে এখন অনেক। অদিতি আজকাল আর সময় পায় না চন্দনকাঠের বাক্স খুলে গয়না পরার,বায়নাও করেনা ছোটবেলার মত। আজকাল তো লকারেই থাকে বাক্সটা।
                  কদিন বাদে অদিতির বিয়ে তাই গয়নার বাক্সতে অনেকদিন বাদে হাত দিয়েছে প্রতিমা। যদিও প্রমথেশ অনেক গয়না গড়িয়েছে তবুও ওর মায়ের রেখে যাওয়া গয়নাগুলো আরেকবার দেখে নিক অদিতি।
     " ছোট মা,ডাকছিলে আমাকে?"
   চশমাটা চোখের ওপরে তুলে প্রতিমা ডাকে," আয় এদিকে দরকার আছে।দোরটা দিয়ে আসবি।"
     " ঘর যে অন্ধকার হয়ে যাবে তাহলে।"
   " লাইটগুলো কেন আছে শুনি?"
             ঘরের বাতি জ্বালিয়ে অদিতিকে গয়না পরাতে বসে প্রতিমা কোন বারণ শোনে না। নতুন গয়নার সাথে সাথে সিঁথি, হাঁসুলি,অনন্ত,মণিপুরী বালা সব বাক্স খুলে ছড়িয়ে বসে পরানোর জন‍্য।
                       হঠাৎই প্রতিমার হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় ধরে অদিতি," তোমার হাতটা এদিকে দাও দেখি,কি হল? বলছি তো আমি।"
     " কি আছে আমার হাতে?"প্রতিমা বলে।

     " আদর করব, হল তো এবার।"
   প্রতিমা হাতদুটো বাড়িয়ে দেয় মেয়ের দিকে অদিতি মণিপুরী বালাজোড়া প্রতিমার হাতে পরিয়ে দেয়।অবাক হয়ে যায় প্রতিমা...চোখের কোলে একবিন্দু জল চিকচিক করে।
      অদিতি জড়িয়ে ধরে প্রতিমাকে.." তোমার এই মায়ামাখানো হাতে আমাদের জড়িয়ে রেখেছিলে,আগলে রেখেছিলে বলেই তো এত বড় হতে পেরেছি। শুধু আমাদের কেন? এই গয়নার বাক্সটাকেও আগলে রেখেছ যত্নে। আর এই হাঁসুলি হারটা দাদার বৌয়ের জন‍্য রেখে দাও মা।"
                  " কিন্তু এইসব তো তোদের মায়ের গয়না।"
          তুমিও তো আমার মা,মায়ের হাতেই যে এই বালাজোড়া সুন্দর লাগতো দেখতে।তখন বুঝিনি আজ যে তোমার মাঝেই মাকে দেখি সবসময়।"
           প্রতিমা আর নিজেকে সামলাতে পারেনা ঝরঝর করে চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ে। কখনো বোঝেনি আগে মা ডাকে এত সুখ আছে তাই বোধহয় বলে মা হওয়া নয় মুখের কথা।
           প্রতিমা গ্ৰামের মেয়ে বেশি পড়াশোনা শেখেনি, বৌভাতের দিনের মত আজও মনে হলো দিদিই বোধহয় আজ অদিতির মুখ দিয়ে কথাগুলো বলে গেলো। সত‍্যিই কি মায়েরা কখনো সন্তানদের ছেড়ে যেতে পারেনা?@রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী।
স্বত্ত সংরক্ষিত। ভালো লাগলে লেখিকার নামসহ শেয়ার করবেন।
ছবি: সংগৃহীত গুগল থেকে

সমাপ্ত:-

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...