Skip to main content

জামাইষষ্ঠীর গিফ্ট

#জামাইষষ্ঠীর_গিফ্ট#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

-'ওগো শুনছ তাহলে পাঁঠা মুরগী দুটোই রাখব তো? মানে তুমি কি বলছ?'
-' রাখো গিন্নী তোমার যা খুশি রাখো। এই রিটায়ার্ড লোকটার পকেটের চিন্তা তো কোনদিনই করলে না যা খুশি তুমি তাই কর।
-' করবই তো জামাইষষ্ঠী বলে কথা। ঐ তো বছরে একটা দিন তারপর গতবারও ওরা আসতে পারেনি এই দিনে ঐ আপদ অসুখের জন‍্য। এবারও আসতে পারবে না।'
-' আসবে কি করে? আগে তো প্রাণের মায়া করবে। নাকি একবেলা ষষ্ঠীর খাওয়া খেতে ঝুঁকি নেবে? তারপর আবার এখন মিলি লকডাউনের খপ্পর আছে।'
-' মিলি লকডাউন কি গো?' সুলতা বলেন অখিলবন্ধুকে।
 -' ও তুমি বুঝবে না,ওসব অনেক কথা। তুমি মেনু ঠিক কর আমি সুন্দরী কিচেনে অর্ডার দেব ওরা বাড়িতে পৌঁছে দেবে খাবার অনলাইনে। গতবার তো হাফ বাঙালী থেকে নিয়েছিলাম তা ওদের খুব একটা ভালো লাগেনি।'
-' হাফ বাঙালী, কি নামের আদিখ‍্যেতা! তখনই বারণ করেছিলুম নিয়ো না ওখান থেকে। তা তুমি কিপ্টেমি করে ওখানেই অর্ডার দিলে বললে ডিসকাউন্ট চলছে।'
-' সব দিকেই তো দেখতে হয় গিন্নী। তুমি আর কি বুঝবে? তুমি তো অর্ডার দিয়েই খালাস, হ‍্যান মাঙতা ত‍্যান ম‍্যাঙতা। পয়সা যাকে খসাতে হয় সেই বোঝে। তা আবার একটা নয় দুটো জামাইকে খুশি রাখা।'

-' বালাই ষাট্,ছ‍্যা ছ‍্যা যত বুড়ো হচ্ছে তত ভীমরতি হচ্ছে দেখছি তোমার! বেঁচে থাক একশো বছর আমার জামাইরা।'
-' নিশ্চয় বাঁচুক বাবাজীবনরা আমার একশো বছর আর তুমিও বাঁচো দেড়শো বছর। নাহলে ষষ্ঠী করবে কে? তবে তোমার যা অবস্থা কদিন থাকবে কে জানে?'

    মাথাটা গরম হয়ে যায় সুলতার সারাক্ষণ শরীর নিয়ে খুঁড়ছে লোকটা। আচ্ছা শাশুড়ি হয়ে গেছেন এখন একটু ব‍্যথা বিষ তো থাকবেই। ওজন বেড়েছে ঠিকই, কিন্তু কি করবেন তার জন‍্য? এই কটা তো খান।
   আসলে তা নয় বুড়ো চায় বৌ লবঙ্গলতিকার মত ছিপছিপে কোমর নিয়ে বৌ ঘুরবে। মাঝে মাঝেই বলে ও লতা তুমি যে এখন একদম বটবৃক্ষ গো নড়ানোই মুশকিল। নড়াচড়া করানোই যে তোমাকে মুশকিল। কত ইচ্ছে করে নিয়ে একটু সিনেমা থিয়েটারে যাই। তা আর হয় না।

    হবে নাই বা কেন? সারাদিন মোবাইল নিয়ে খুটুর খুটর করছে বুড়োটা। একটুও ধম্মেকম্মে মতি নেই গো। এই বয়েসে বাবাকে দেখেছেন মালা জপ করতে। আর উনি মোবাইল জপ করেন। রাজ‍্যের বন্ধুবান্ধবের গ্ৰুপ হয়েছে,এর সঙ্গে কথা কইছে ওর সঙ্গে কথা কইছে। ওখানে সুন্দরীদের ছবি দেখে মাথা ঘুরে গেছে বুড়োটার। তবে একটা সুবিধা হয়েছে এই মোবাইল খুটুর খুটুর করাতে মোটামুটি সব কিছু বুক হয়ে যাচ্ছে অনলাইনে। তবে সুলতা শাড়ি কিনতে চাইলেই মুশকিল। চিমটি কেটে বলে,' বাক্স,প‍্যাটরা আলমারি সবই তো ঠাসা। শাড়ি আর শাড়ি যাওটা কোথায় শুনি? সারাক্ষণ তো ঐ ঝোলা ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছ। বুঝিই না কোথায় কি....'
  -' এই অসভ‍্য! মুখে কোন রাখঢাক নেই একদম চুপ। সত‍্যি ঐ ফেসবুক করে একদম গেছ তুমি।'

    যাক বেশ অনেকক্ষণ ধরে মাথা খাটিয়ে সুলতা মেনু ঠিক করেন...ঝুরঝুরে আলুভাজা,মুগডাল, পটলের দোরমা,চিংড়ির মালাইকারি,চিতল মুইঠ‍্যা,চিকেন গন্ধরাজ আর মাটন কষা সাথে অবশ‍্যই দই আর মিস্টি।
      বেশ কয়েকবার বুকে হাত বোলান অখিলবন্ধু তবুও উপায় নেই গিন্নীর হুকুম। তবুও একবার মৃদু সুরে বলেন,' বলছিলাম টাকা দিয়ে দিলেই তো হত। ওরা যা পারত খেত। কি দরকার এত হাঙ্গামা করার?'
  -' আহা রে আমার বাছারা ষষ্ঠীতে একটু জমিয়ে খাবে না? সময় ভালো হলে তো আমি করতুম।'
  স্বগতোক্তি করেন অখিলবন্ধু,' হুঁ করতুম,তারপর উরি বাবারে করে মরতুম। তাও আর্ধেক বোঝা আমি আর মালতী টানতুম।'

     যাক টানাটানি করেও মান রাখতে সবই মোটামুটি অর্ডার দিয়ে দেন অখিলবন্ধু। গিন্নীর ইচ্ছে বলে কথা।

   আদুরে সুরে লতা কাছে এসে বসে বলে,' হ‍্যাঁ গো,আমাদের জন‍্য কিছু আসবে না? মানে ইয়ে সেই কবে তো সব চুকে বুকে গেছে। আজকের দিন কি ডাঁটা চিবোবো নাকি?'
-' কেন আজকের দিনে তোমার জামাইরা কিছু পাঠাক। ওদেরও তো কিছু কর্তব‍্য আছে নাকি?'
-' কেমন শ্বশুর গো তুমি? ওরা তো শাড়ি ধুতি দেয় আবার কি? এলে ফল মিস্টিও আনে। এবারও নিশ্চয় পাঠাবে। আজকাল তো বাজারে ঘুরে কেনাকাটা গেছে ওদের দেওয়াগুলোই তো পরি।'

-' দিয়েছি গো। লতু আমার মুখ শুকিয়ে থাকবে তা হয়। দিয়ে যাবে সময় মত।'

     তাড়াতাড়ি স্নান সেরে পুজো করে মেয়েদের বাড়ির উদ্দেশ্যে পাখার হাওয়া করে দেন সুলতা উঃ আঃ করতে। আজকাল পুজো আচ্চা করতেও কষ্ট হয় খুব। মাটিতে থেবড়ে বসাই মুশকিল।
    প্রথমেই বড় মেয়ের ফোন আসে,' ও মা কি করেছ গো! কত কিছু পাঠিয়েছ! এত কি খাওয়া যায় নাকি? তবে এবার সুন্দরী কিচেন থেকে নিয়ে ভালো করেছে। ওদের খাবার দারুণ।'
-' হ‍্যাঁ রে জামাই খুশি তো? একটু সাজিয়ে গুছিয়ে দিস বুঝলি আর তোর বাবার ফোনে ছবি পাঠাস।'

-' হ‍্যাঁ দেব মা। আচ্ছা তোমার গিফ্ট পেয়েছ? পেলে ফোন করবে তোমাকে সুদীপ।
  
  খানিক বাদে ছোটমেয়েও ফোন করে,' মা তোমাকে নিয়ে আর পারা যায় না! এত কিছু পাঠিয়েছ! আজকাল এত কিছু খাই না আমরা। কি যে কর!'
-' তা বললে হয় নাকি? ষষ্ঠী বলে কথা। আমার হয়ে একটু গুছিয়ে খাস মা। কুশল কোথায়?'
-' ও একটু কাজ করছে মা। পরে কথা বলবে। আর তোমার গিফ্টটা এলে জানিয়ো।'

       খাবার দাবার একটু আগেই চলে এসেছে। কিন্তু কই নতুন শাড়ি তো এল না। অথচ এমন তো হয় না গতবার তো কত তাড়াতাড়ি শাড়ি এসে গেছে। মনটা উশখুশ করছে সুলতার।
  ' কি গো খেতে দাও। খাবারের গন্ধ শুকবো আর কতক্ষণ? নিজের গ‍্যাঁটের কড়ি খসিয়ে ষষ্ঠীর তুষ্টি করা আর কি।'

      খোঁড়াতে খোঁড়াতে হেঁসেলে গিয়ে বাটি করে পদগুলো ঢেলে সাজান সুলতা। টেবিলে বাটি রাখতেই অখিলবন্ধু বলেন,' দাঁড়াও আগে একটা ছবি তুলে নিই স্ট‍্যাটাসে দেব।'
 'কি বললে? সন্ত্রাস!'
  ' হ‍্যাঁ তাই বটে,দাও দাও বড্ড খিদে পেয়েছে। তোমারটাও নিয়ে বসে পড়। জামাইরা এবার মিস্টিও পাঠাল না। ভেবেছিলাম অন্ততপক্ষে একটু মিস্টি পাঠাবে।'
- ' দুজনেই তো গিফ্ট গিফ্ট করলে গো। তা এখনও তো এলো না। '
    খাওয়াতেও ভালো করে মন দিতে পারেন না সুলতা। মনে হয় ঐ বুঝি কলিংবেল বাজল।

         খাওয়া শেষ করেই মোটামুটি কান খাড়া করে আছেন বেল বাজলেই কর্তাকে বলবেন নিচে যেতে। 
-' ওগো শুনছ তোমার গিফ্ট এসে গেছে সাথে আমারও।'
   তাড়াতাড়ি করতে গিয়ে হোঁচট খান সুলতা। 
-' ফোন করেছিল বুঝি? যাও যাও নিচে।'
-' ফোন করেনি,ফোনেই এসেছে গিফ্ট।'
 -'সে আবার কেমন গিফ্ট ফোনেই আসে?'
-' এসেছে গিন্নী তোমার জন‍্য একবছরের ডায়েট প্ল‍্যানের গিফ্ট ভাউচার আর হেল্থ চেকআপ। আমার জন‍্য যোগা অ্যাডভাইস আর হেল্থ চেকআপ প্ল‍্যান।'

    মাথাটা হঠাৎই গরম হয়ে যায় সুলতার মনে হল কে যেন একটা গরম তাওয়া এনে বসিয়েছে মাথায়।
-' এ কেমন সৃষ্টিছাড়া গিফ্ট বাপু! আমাকে এরা স‍্যালাড খাইয়ে মারবে নাকি এই বয়েসে?'
-' আর বোল না,আমি নাকি সারাক্ষণ মোবাইল করি আর ঝগড়া করি তাই আমার মেডিটেশন দরকার। সাথে হেল্থ চেকআপ। কোথায় ভাবলাম নকুড়ের সন্দেশ পাঠাবে।'

     পরপর ফোন বাজতে থাকে টিং টিং করে রাগে গা পিত্তি জ্বলে সুলতার।
-' ধরো ফোন,ঐ বোধহয় ওরা।'
  ওপার থেকে কনফারেন্স কলে অনেকগুলো গলা শোনা যায়, 'হ‍্যাপি ষষ্ঠী মা বাবা। গিফ্ট পছন্দ হয়েছে তো? তোমরা ভালো না থাকলে আমাদের ভালো রাখবে কে? অনেক বছর ভালো থাকতে হবে তোমাদের।' 
     মনে মনে সুলতা বলেন ভালো থাকার নিকুচি করেছে।
  'কি গো মা একটু হাসো,ডায়েট করে ওয়েট লস করলে সামনেবার সেলিব্রেশন উইথ খাঁটি বাংলাদেশী ইলিশের সাথে পিওর বাংলাদেশী ঢাকাই।

    ওদিক থেকে সমবেত আওয়াজ আসে থ্রি চিয়ার্স ফর মা বাবা । জামাইরা সুর মেলায়...শ্বশুর বাবা শাশুড়ি মা যুগযুগ জিও।
     হেসে ফেলেন সুলতাও। বলে ফেলেন,'ধন‍্যি আমার জামাইরা মাথা খাটিয়ে গিফ্ট দিয়েছে বটে।'
সমাপ্ত:-


Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...