Skip to main content

#বিসর্জন থেকে বোধন#

  #বিসর্জন থেকে বোধন#
#রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী#

টাইমস স্কোয়ারের কফিশপে বসে আজ বড় আনমনা নীল ,কালকের ফোনটা কেমন যেন এলোমেলো করে দিয়েছে মনটা। বাবা আর নেই,যদিও গত পাঁচ বছর সে বাবার কাছে মৃত, তবুও নীলের ছোট বেলার হিরো আজ এই পৃথিবীর কোথাও আর নেই ভাবতেই মনটা ভারী লাগে এই সময় লুসিও নেই শিকাগো গেছে, পরের মাসে ফিরবে। যদিও বাবার জন‍্য তার কোন কর্তব‍্যই নেই, দেহদান করে গেছেন বাবা। তবুও মায়ের কাছে একবার যেতেই হবে নীলকে।
     সামনের সপ্তাহে বাবার স্মরণসভা মা জানিয়েছেন। এই একসপ্তাহের মধ‍্যে অনেক কাজ সেরে ফেলতে হবে। কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে ভাবছিলো কিভাবে যাবে তার ছোটবেলা আর যৌবনের শহরে যেখানে গত পাঁচবছরে যায়নি।
      প্রায় মাঝ রাত হয়ে যায় পৌঁছতে, জেগে বসেছিলেন মা। মায়ের চোখের জলের ছিটেয় ভিজে যায় নীলের শুকনো দুই চোখ। মনে মনে বলে,"আমায় ক্ষমা করো বাবা।"
   পরদিন সকালে বাবার স্মরণসভায় অনেকে অনেক কিছু বললেও নীল কিছু বলেনি। বাবার প্রিয় ছাত্র ছাত্রীরা সবাই প্রায় এসেছিলো শুধু একজন আসেনি। আজকের দিনে নীল মনেহয় তাকেই খুঁজছিলো, বাবার সবচেয়ে প্রিয় ছাত্রী দেবীকে। অথচ এই দেবীর জন‍্যই বাবার কাছে সে একসময় মৃত হয়ে গিয়েছিলো।
  দেবী মামা বাড়ীতে মানুষ, ছোটবেলায় মা মারা গেলে মামারা তাকে মানুষ করেছিলো, ওদের পাড়াতেই দুটো বাড়ি পরে দেবী থাকতো। দেবী ছিল বাবার ছাত্রী,হেল্পিং হ‍্যান্ড,কাগজপত্র গোছানোর লোক সবকিছুই। সব কাজেই দেবীকে দেখা যেত ওদের বাড়িতে। নীল হেসে বলতো বাবার পিএ। বাবা চাইতেন মা মরা দেবী নীলের বৌ হয়ে আসুক, মায়ের ও আপত্তি ছিলো না। কিন্তু মুখে কিছু না বললেও ওই রকম একটা আনস্মার্ট মেয়ে যে শুধু পড়াশোনা করে আর ঘর গোছায় তাকে বিয়ে! ভাবাই যায়না। বিয়ের কথা না ভাবা গেলেও বিদেশে যাবার আগের দিন যখন দেবী নীলের দোতলার ঘরে জিনিস গোছাতে ব‍্যস্ত তখন দেবীকে জড়িয়ে ধরে কাছে টেনে নিয়েছিল নীল, বাধা দেয়নি দেবী পুরোপুরি আত্মসমর্পণ করেছিল ভালবেসে। দেবী মন থেকেই নীলকে ভালবাসতো তাই বাধা দিতে পারেনি।
   বিদেশে গিয়ে নীল ভেসে গিয়েছিলো স্বাধীনতার আনন্দ। হাতে অগাধ টাকা, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট,গাড়ি,সুন্দরী গার্লফ্রেন্ড মনের আনাচে কানাচেও দেবী ছিলোনা। এমনকি মা বাবার সাথেও কথা বলার সময় পেতোনা নীল। মাস তিনেক বাদে খুব অসহায় গলা শোনা যায় বাবার,"নীল আমার দেবীকে বাঁচা দেবীর গায়ে কালি লাগতে দিস না, অনেক জিজ্ঞেস করেও আমি আর তোর মা কোন উত্তর পাইনি, কিন্তু তোর মা তুই চলে যাবার আগের দিন ওকে অদ্ভুতভাবে তোর ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে দেখেছিল। খুব ভালো মেয়ে আমার দেবী মা ওকে গ্ৰহণ করে নে।' নীল তখন বেডরুমে লুসির সাথে, খুব বিরক্ত হয়ে বলেছিলো অন‍্যের পাপ আমার ওপর কেন চাপাচ্ছো বাবা?ঐরকম একটা বোকা মেয়েকে বিয়ে? ইমপসিবল্। নেক্সট উইক এ লুসির সাথে আমার এনগেজমেন্ট আর তারপর নেক্সট মান্থে উই আর গেটিং ম‍্যারেড। লুসিকে বিয়ে করলে এই দেশের সিটিজেনশিপ পেতে আমার আর কোন বাধা থাকবেনা। বাকশক্তি হারান সুধাকর ,এই জানোয়ারটাকে এতদিন অপত‍্যস্নেহে মানুষ করেছেন? ছিঃ!
     বোকা মেয়ে দেবী নিজেকে শেষ করে দিতেই চেয়েছিলো কিন্তু সুধাকরবাবু তা হতে দেননি। কিছুতেই দেবীর বিসর্জন হতে দেননি। নার্সিং হোমে যমের সাথে লড়াই করে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া দেবীকে।  বেলতলা রোডের বাড়ি বিক্রী করে যাদবপুরের ফ্ল্যাটে চলে আসেন মামাবাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়া দেবীকে নিয়ে।
    নীল আর কোনদিন খোঁজ নেয়নি দেবীর, সুধাকর ও আর কোনদিন মুখদর্শন করেননি ছেলের এই পাঁচ বছরে। তবুও আজ স্মরণের দিনে কেন যেন দেবীকেই খুঁজছিল নীল।
      কলকাতায় পূজোর আমেজ শুরু হয়ে গেছে, আরতো কদিন বাদেই পূজো। একটু একটু করে এখানকার কাজ সেরে ফেলে নীল। কদিন মায়ের কাছেই থাকবে ঠিক করে, অনেক পুরনো স্মৃতি অনেক কথা তবুও নীল অনুভব করে কোথাও যেন একটা গন্ডী কাটা হয়ে গেছে মা আর ছেলের মধ‍্যে। তাহলে কি বাবা এক অদৃশ‍্য গন্ডী টেনে দিয়েছেন ওর আর মায়ের মাঝখানে?

আজ অষ্টমী, বন্ধুদের সাথে পুরনো পাড়ায় গেছে নীল,ওরাই জোর করে নিয়ে গেছে ওকে।একসময় সকাল বিকেল ম‍্যাডস্কোয়ারে আড্ডা না মারলে পূজো জমতোই না।  কিছু পুরনো বন্ধুর সাথে গোল করে বসে আছে প‍্যান্ডেলে। কেন যেন  আজ আড্ডা দিতেও ভালো লাগছেনা। প্রতিমার দিকে তাকিয়ে থাকে নীল,অনেক বছর বাদে আবার কলকাতার পূজো দেখা।সন্ধিপূজার আয়োজন হচ্ছে। দুজন মহিলা পুরোহিত মশাইকে সাহায‍্য করছে। কত কাজ একশো আটটা পদ্মফুল ফুটিয়ে সাজিয়ে রাখা, একশো আট খানা প্রদীপ জ্বালানো।
   এলোচুলে ঢাকাই শাড়ীতে কি অপূর্বই না লাগে বাঙালী মেয়েদের। প্রদীপ জ্বালানোর সময় হঠাৎই একটা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে মা মা করতে করতে যে প্রদীপ জ্বালাচ্ছিল তার আঁচল ধরতে যায়। ওর মা ঘুরে দাঁড়াতেই নীল চমকে ওঠে, দেবী! কি অপূর্ব সুন্দ‍রী আর ব‍্যক্তিত্বময়ী লাগছে দেবীকে ,সত‍্যি কি এই দেবী? সেই বোকা বোকা ভালো মানুষ মেয়েটা,যার বাইরের স্মার্টনেস কিছুই ছিলনা এক ভদ্রলোক ছুটে যান বাচ্চাটাকে মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে আনতে, ততক্ষণে মিষ্টি পুতুলটাকে কোলে নিয়েছে দেবী। ওর কোল থেকে বাচ্চাটাকে কোলে নিয়ে ভদ্রলোক ফিরে আসতেই আরো চমকে উঠলো নীল,আনন্দ বসু। বাবার হাতে গড়া সেরা ছাত্রদের মধ‍্যে একজন।
     দেবীর সাথে আনন্দদা কে মেলাতে পারেনা নীল। অনেকদিন অক্সফোর্ডে ছিলেন আনন্দদা। অস্থির হয়ে ওঠে নীল , একটিবার দেবীর সাথে কথা বলার জন‍্য। ক্ষমা ওকে চাইতেই হবে দেবীর কাছে। অপেক্ষা আজ শুধু অপেক্ষা, মন দিতে পারেনা আড্ডায়। বাবা চলে গেছেন ক্ষমা চাইবার কোন অবকাশ না দিয়ে কিন্তু দেবীর সাথে একবার কথা বলতেই হবে। এক্সকিউজ মি বলে প‍্যান্ডেলের বাইরে বেড়িয়ে আসে নীল,বড্ড দম আটকানো লাগছে আজ। মনের মাঝে আজ ভীড় করেছে অনেক না জানা উত্তর।
        কতক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়েছিলো বুঝতেই পারেনি এলোমেলো মন নিয়ে। হঠাৎ কাঁধে কারো হাতের ছোঁয়া পেয়ে চমকে ওঠে নীল। মুখটা ঘুরিয়ে দেখে আনন্দদা। " তোকে প‍্যান্ডেলে দেখেছিলাম, ভালোই হয়েছে তুই এসেছিস মাসিমা একটু সাহস পাবেন। আমরা তো কয়েকদিন ওখানেই ছিলাম মাসিমার কাছে।" আশ্চর্য হয় নীল,কই মা তো কিছুই বলেনি। কিছুটা বুঝেও পুরোটা বুঝতে পারছেনা নীল দেবীর সাথে আনন্দদার কি সম্পর্ক। একটু সহজ হয়ে নীল জিজ্ঞেস করে,"এই মিষ্টি বেবি টা কে তোমার কোলে?" "ও আমার মেয়ে নীলাশা রে,আমি ডাকি আনন্দী বলে।"
    নীলাশা নামটা কেমন যেন হঠাৎ খুব চেনা লাগে নীলের। আনন্দদা হেসে বলেন নামটা সুন্দর না? স‍্যারের দেওয়া,আমার আর দেবীরও খুব পছন্দ। অবাক হয়ে যায় নীল। হঠাৎই মুখ দিয়ে বেড়িয়ে যায় দেবীকে তুমি---?ওর মুখের কথা কেড়ে নিয়ে আনন্দ বলে , "হ‍্যা রে  দেবী আমার স্ত্রী। প্রায় বিসর্জন হয়ে যাওয়া দেবীকে আমি পাঁচবছর আগে মহাষষ্ঠীর দিন বোধন করে ঘরে তুলেছিলাম।

স‍্যার ছিলেন আমার পিতৃতুল‍্য ,আমার মত বাউন্ডুলে একটা ছেলের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পেছনে
স‍্যারের অবদান আর আশীর্বাদই ছিলো সবার ওপরে। তাই শ্রদ্ধার সাথে গ্ৰহণ করেছিলাম দেবীকে। আমরাই দেবীকে ফিরিয়ে এনেছিলাম মৃত‍্যুর মুখ থেকে। দেবী এখন কলেজে পড়ায় আর আমি বিশ্ববিদ‍্যালয়ে।এখন আমি কলকাতাতেই আছিরে।মাঝে সেমিনারে যাই বিদেশ।আমার আবার ওদেশে মন টেকেনারে।ঠিক যেন মাটির গন্ধ পাইনা।স‍্যার আর আমিই ওকে এগিয়ে দিয়েছিলাম উচ্চশিক্ষার দিকে। আমার মত বাউন্ডুলে ছেলের জীবনটা দেবীই গুছিয়ে দিয়েছেরে। কেনই বা হবেনা, স‍্যারের শিক্ষায় বড় হয়েছে দেবী। আর এখন আনন্দী সারাক্ষণ ভরিয়ে রেখেছে।
    স্তব্ধ হয়ে যায় নীল , ও কিছু বলার আগে হঠাৎই আনন্দদা বলেন। 'একমিনিট নীল, আনন্দীকে একটু কোলে নিবি, যা বিচ্ছু হয়েছে কোথায় যে ছুট লাগাবে।আমি একটু ভেতর থেকে আসছি। নীল হাত বাড়াতেই আনন্দী ঝাঁপিয়ে আসে তার কোলে , লুসি আর নীলের জীবনে এখনো আসেনি কোন ছোট্ট তৃতীয় সদস‍্য। আজকাল মাঝে মাঝে নীলেরও মনে হয় বন্ধুদের বাচ্চাদের দেখে ওদের মাঝে কেউ আসুক। গতবছর বেশ কিছু টেস্টের পর ডক্টর জানান লুসির বেশ কিছু সমস‍্যা আছে, তাই ট্রিটমেন্ট চলছে। আজ আনন্দী যখন তার গলা জড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো তুমি কে গো? বাপীর বন্ধু? তখন অদ্ভুত এক ভালোলাগায় ভরে গেলো মনটা। কেন এমন হয়?সত‍্যি কি শিশুরা শুধু অনাবিল আনন্দ দেয়,নাকি বিদেশ যাওয়ার আগে ভালবাসাহীন আবেগে শুধু শরীরের চাহিদায় যে ভুল সে করেছিলো তার সাথে কি আনন্দী জড়িয়ে?

  কিন্তু দেবী তো আনন্দদার স্ত্রী,আনন্দী ওদের সন্তান। তাহলে আনন্দদা বললেন কেন দেবীর  বিসর্জন হতে বসেছিলো?বাবাই বা কেন দেবীর সন্তানের দায়িত্ত্ব ওকে নিতে বলেছিলেন? পাঁচবছর আগে যা পাপ বলে মনে হয়েছিলো তার,সেই সন্তান কি এখনও আছে?
    আজ নীলের মনে শুধুই জমেছে প্রশ্ন,কে দেবে এর উত্তর ? খুব ইচ্ছে করছে আজ একবার দেবীর সাথে কথা বলতে কিন্তু কি মুখ নিয়ে দাঁড়াবে দেবীর সামনে? "বাপি বাপি কোলে নাওনা" আনন্দীর গলা শুনে সামনে তাকায় নীল, ঐ তো আনন্দদা। বিদেশে থাকা ঝরঝরে আমেরিকান ইংরেজী বলা নীলের গলাটা যেন শুকিয়ে যায় আনন্দদার পাশে দাড়িয়ে থাকা দেবীকে দেখে। অথচ এ কদিন মনে মনে দেবীকেই খুঁজছিলো নীল।
    হাসিমুখে নীলের চোখে চোখ রেখে এগিয়ে আসে দেবী, হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে , "নীলাশাকে আমায় দাও নীলদা"। অনেকদিন বাদে তোমায় দেখলাম কেমন আছো? "আমার কিছু বলার ছিলো দেবী'। দেবী আনন্দের দিকে তাকিয়ে হেসে বলে,'আমাদের কিছু শোনার নেই গো, স‍্যার তোমায় ক্ষমা করে দিয়েছেন। যে দেবীকে তুমি নিজের হাতে বিসর্জন দিয়েছিলে স‍্যার আর ও মিলে তাকেই নতুন করে গড়ে দিয়েছিলো এক অন‍্য রূপে। দেবীরা কখনও হার মানেনা নীল দা , তারা যুগে যুগে ফিরে আসে নানা রূপে। আমি খুব ভালো আছি তুমিও ভালো থেকো ওদেশে। মায়ের জন‍্য চিন্তা করবেনা। আমরা তো আছিই।"
কেমন যেন হাল্কা লাগে আজ নীলের, মনটা পাখনা মেলে নীলাশার স্বপ্নে। নীলের নীলাশা থাক আনন্দী হয়ে আনন্দের কোলে। কলকাতা শহরের কোথাও থাকবে ছোট্ট নীলাশা যাকে নীল পাপ মনে করে বাবা ডাকার অধিকার দেয়নি, থাক সে ভালো ওর বাবা মায়ের আদরে।

   দেবীর কাঁধে হাত রেখে নীলাশাকে কোলে নিয়ে এগিয়ে যায় আনন্দদা । সন্ধিপূজা শুরু হয়েছে, প্রতিমার সামনে হাতজোড় করে দাঁড়িয়ে দেবী, আজ নীলের মনে হলো মৃণ্ময়ী দেবী আর চিণ্ময়ী দেবী মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে।
সমাপ্ত:-
    

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...