#এক্সট্রা_ম্যারিটাল#
রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী
"কি গো আমায় ডেকে দাওনি কেন? ইশ্ কত বেলা হয়ে গেছে!" উজানকে ঠ্যালা মারে মিতা।
কাল রাতে ননদরা এসেছিলো,আড্ডা দিতে দিতে কখন যে সময় চলে গেছে খেয়াল নেই। তারপর সব গোছাতে বেশ রাত হয়ে গেছে।
আজ অন্য দিনের চেয়ে ঘুম ভাঙতেও একটু বেলা হয়ে গেছে। যাক বাড়ি থেকে বেড়িয়ে বাসটা পাওয়া গেছে কিন্তু মিন্টোপার্কে এসে সেই এক অবস্থা।মিতার মর্ণিং শিফ্টে অফিস।ইচ্ছে করেই ও সকালটা নিয়েছে।
উঃ আজ লাল কালি পরবেই, আর ভালো লাগেনা। সকালে এত তাড়াহুড়ো করেও পারা যায়না,কখন থেকে মিন্টোপার্কে দাঁড়িয়ে,বাসের পাত্তা নেই।
নিরুপায় হয়ে সামনের গাড়িটাকে হাত দেখিয়েই ফেলে মিতা,"লিফ্ট প্লিজ"। থেমে যায় গাড়িটা, দরজা খুলে দেন ভদ্রলোক। এই অল্প একটু রাস্তা তাই কিছু না ভেবে উঠে পড়ে মিতা। এমন লিফ্ট তো মাঝে মাঝে নেয় সে, আর এই মাঝবয়সে প্রকাশ্য সকালে অত ভয়ের কোন কারণ নেই।
পেছনের সীটে বসে হাঁপ ছাড়ে মিতা। ভদ্রলোক বলেন," রিল্যাক্সড্ , কোথায় যাবেন বলুন আমি ড্রপ করে দেবো।" মিতা বলে, "আমাকে শিশুমঙ্গলের সামনে নামিয়ে দিলেই হবে। "
মিতা থ্যাংক্স জানিয়ে নেমে পড়ে। যাক্ , সত্যিই ভদ্রলোক খুব ভালো এককথায় লিফ্ট দিলেন।
পরদিন মিন্টোপার্কে নেমে অবাক হয় মিতা, সেই গাড়িটা!ভদ্রলোক দরজা খুলে দেন ,"উঠে আসুন"। আপত্তি করতে পারেনা মিতা, উঠে পড়তে হয়। সেদিন আলাপের ছলে ভদ্রলোক জেনে নেন ওর অফিস কোথায়,তাই মিতাকে ড্রপ করে দেন একদম অফিসের সামনে। বাড়ী গিয়ে আজ মিতা উজানকে বলেই ফেলে ভদ্রলোকের কথা। উজান আর মিতার পঁচিশ বছরের বিবাহিত জীবন। তবে বিয়ের প্রায় আট বছর বাদে ওদের জীবনে সন্তান আসে।এখনও মিতা সুন্দরী ,উজান বৌ ভাগ্যে গর্বিত।
উজান হেসে বলে,"দেখো বাবা, ভদ্রলোক তোমার প্রেমে পড়েনি তো? আমাকে এই বয়সে ছেড়ে যেয়োনা সখী।" কপট অভিমানে মুখ ফোলায় মিতা,"হিংসুটে কোথাকার,আমার বয়েই গেছে।" পরের দিন, তারপর দিনও চলতে থাকে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। ধীরে ধীরে আলাপও বাড়ে।
মিতার একটু যেন অস্বস্তি হয় এবার, সত্যি তো ভদ্রলোক দিনের পর দিন ঠিক একই সময়ে গাড়ি নিয়ে এখানে অপেক্ষা করেন কেন?অথচ ভদ্রলোকের ব্যাবহার এত ভালো ও নিপাট ভদ্রলোক তাই খারাপ কিছু ভাবতেও মন চায়না। যদিও ভদ্রলোক অবাঙালি আর বয়স ও হয়েছে তবুও মিতার প্রতিদিন লিফ্ট নিতে খুব খারাপ লাগে।
নাঃ যাতায়াতের রাস্তাটা পাল্টে ফেললো মিতা, ছয়মাস ধরে বালিগঞ্জ ফাঁড়িতে নেমে ওখান থেকে অটো করেই আসছে মিতা, যদিও একটু ঘুরপথ তবুও তাই ভালো। উজানও খুশি, সত্যিই তো সুন্দরী বউকে প্রতিদিন কেউ লিফ্ট দিচ্ছে মানা যায় না।
বাধ্য হয়ে ড্রাইভিং এ হাত পাকায় উজান,বেশ কিছুটা পথ এগিয়ে দিয়ে যায় মিতাকে। পুরো রাস্তাটা আসতে পারেনা কারণ পূজা মানে ওদের একমাত্র মেয়েকে কোচিং এ ছাড়তে হয়,তারপর আবার নিজেকেও বেরোতে হয়।আজ প্রায় সাতমাস বাদে মিন্টোপার্কে মিতা।
আজ উজানও আসতে পারেনি। তাই এদিকের বাস পেয়ে আর ছাড়েনি মিতা। মিন্টোপার্কে নামতেই চমকে ওঠে মিতা ব্রাউন কালারের ডাস্টারের দরজা খুলে যায়, ভদ্রলোক মুখ বাড়িয়ে বলে উঠে আসুন।
কি আশ্চর্য এত দিন বাদেও! বাধ্য হয়ে শুকনো হাসি হেসে গাড়িতে উঠে বসে মিতা। ভদ্রলোক শুরু করেন,"এতদিন কোথায় ছিলেন? বাড়ীর সবাই ভালো তো? আপনাকে অনেকদিন না দেখে খুব চিন্তা হচ্ছিলো,আপনার কোন কন্ট্যাক্ট নম্বর ও নেই যে খবর নেবো। আজ কি অফিসে কোন প্রোগ্ৰাম আছে? আপনাকে আজ খুব সুন্দর লাগছে।" আড়ষ্ট হয়ে হ্যাঁ না তে জবাব দেয় মিতা। আজ মিতা অন্য দিনের চেয়ে একটু বেশি সেজে এসেছে কারণ আজ ওদের একটা ফাংশান আছে। মিতা পরিচালনা করবে।
গাড়ি থেকে নামার আগে ভদ্রলোক বলেন," আপনি ভয় পাবেননা আমার থেকে আপনার কোন লোকশান হবেনা।
আপনার ফোন নম্বরটা যদি আপত্তি না থাকে তবে দেবেন প্লিজ।"
মিতা না করতে পারেনা ফোন নম্বরটা দিয়েই ফেলে। পরে মনটা খারাপ হয় কেন যে দুম্ করে নম্বরটা দিয়ে ফেললো। সত্যি কাউকে না করতে পারেনা চট করে।
রাতে উজানকে পুরো ব্যাপারটাই বলে ফেলে মিতা।
উজান একটু অসন্তুষ্ট হয় ফোন নম্বর দিয়েছে শুনে,বিরক্ত হয়ে বলে "তুমি কিন্তু ঠিক করোনি মিতা, যা ভালো বোঝ করো, আমাকে কিছু বলতে এসোনা।"
মিতা ঠিক করে নেয় আর ও পথ মাড়াবেনা। দরকার হলে সিম পাল্টে নেবে। কিন্তু কোন সময় ইচ্ছের বাইরেও কিছু ঘটে যায়।
তেমনি হয়ত মিতার জীবনে ঘটলো। মাঝে মাঝেই অফিসের রাস্তায় দেখা হয়ে যেতো রাজীববাবুর সাথে।
হয়ত কিছুটা ইচ্ছে করেই ভদ্রলোক অপেক্ষা করতেন। মিতাও উজানের অগোচরে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, ভদ্রলোক বয়স্ক কিন্তু খুব পজিটিভ তাই মিতার ভালো লাগে।
সাবলীল ভাবেই এখন লিফ্ট নেয় মিতা, তবে পুরোটাই উজানের অগোচরে।
এইতো সেদিন ফেরার পথে ভদ্রলোক ওকে খুব ধরে বসলেন কফি খাওয়ার জন্য, না করতে পারেনা মিতা। সোজা গাড়ী নিয়ে উনি চলে আসেন তাজবেঙ্গলে। অবাক হয়ে যায় মিতা,বলেই ফেলে "এখানে কেন"----"চলুন না আমার নিজেকে আজ ভাগ্যবান মনে হচ্ছে আপনাকে কিছু খাওয়াতে পেরে।"
মাঝে মাঝে নিজেকে একটু অপরাধী মনে হয় মিতার, ওকি উজানকে ঠকাচ্ছে?
উজানের অন্ধ বিশ্বাসের সুযোগ নিচ্ছে? সত্যি তো মিতার পঁচিশ বছরের সুখী দাম্পত্যে তো কোন ফাঁক ছিলোনা তাহলে কেন অগ্ৰাহ্য করতে পারলো না বাইরের হাতছানি?
রাজীব বাবুর আর্থিক স্বচ্ছলতা অনেক বেশী, নাকি রাজীববাবু অনেক বেশি পজেটিভ আর দায়িত্বশীল মিতার প্রতি? নারীচরিত্র বোধহয় সত্যিই জটিল।
অবচেতন মনে লুকিয়ে থাকে কিছু বাসনা তাই মনেহয় এই মধ্যবয়সেও রাজীববাবুর মত একজন বিবাহিত বয়স্কপুরুষের সঙ্গ মিতার জীবনে একটু ভিন্ন স্বাদ এনে দেয়। হয়ত বা রাজীববাবুর ও একঘেঁয়ে জীবনে মিতা বসন্তের রঙের ছোঁয়া এনেছে। দুজনেরই বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক। কেন মিতা এই হাতছানিতে সাড়া দিলো কে জানে?
উজানের অগোচরে অনেক সময় এস এম এস এও কথা হয় দুজনের। মিতার তেমন কিছু খারাপ মনে হয়না। মানুষের তো কত বন্ধুই না থাকে। তেমনই রাজীববাবু ও তার বন্ধু।
ওতো আর ফেসবুক হোয়াটসএ্যপ করেনা অন্যদের মতো। ওদের অফিসের তো, অনেকেই কত চ্যাটে ব্যস্ত থাকে।মেসেজ করছে, ভিডিও দেখছে,ওই নিয়ে মশগুল হয়ে আছে।
মেয়ে আর উজান ছাড়া আর কোন দিকেই কোন দিন মন দেয়নি সে। একসময়ের অস্বস্তি এখন অভ্যাসে দাড়িয়ে গেছে।
সেদিন ও ফিরছিল মিতা বাড়ীর পথে রোজকার মত , ফেরার সময় বাসেই ফিরতে হয় কখনও বা শাটল ট্যাক্সিতে। কারণ রাজীববাবু বা উজান কাউকেই তখন পাওয়া যায়না। উজান তখন অফিসে আর রাজীববাবু ব্যস্ত থাকেন ব্যাবসার কাজে। আজ বাসে সিট পেয়ে বসতেই ফোনটা বেজে ওঠে, আননোন নাম্বার। ফোন ধরতেই কিছু কথা তার মাথায় ঢুকলো কিছুটা যেন মাথার ওপর দিয়ে বেড়িয়ে গেলো। উজান অফিসে যাবার পথে গাড়ী আ্যক্সিডেন্ট হয়েছে উজানের।চোট পেয়েছে স্পাইনাল কর্ডে , অফিসের লোকেরা নার্সিং হোমে ভর্তি করেছে। মিতা যেন এক্ষুনি চলে আসে।
মাথাটা ঘুরছে মিতার এক মূহুর্তে সারা পৃথিবী যেন অন্ধকার হয়ে যায়। বাস থেকে নেমে কোনরকমে একটা ট্যাক্সি ধরে মিতা পৌঁছয় নার্সিং হোমে। উজানের অফিস কলিগরা মিতাকে নিয়ে যায় উজানের কাছে। কথা বললো উজান,"ভেবোনা মিতা, আমি ভালো হয়ে যাবো শুধু কেন যে কোমর থেকে পা পর্যন্ত কোন সাড় পাচ্ছিনা,বুঝতে পারছিনা। তুমি যে কি করে সব সামলাবে, তোমার খুব কষ্ট হবে গো।" চোখ মুছে বাইরে বেরিয়ে আসে মিতা।
ডাক্তারের সাথে কথা বলে জানা যায় চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে যদি উজানের অপারেশন না হয় তাহলে ও চিরতরে পঙ্গু হয়ে যাবে। উজান এত দিন সমস্ত ভালবাসা আর যত্ন দিয়ে আগলে রেখেছিল মিতা, মেয়ে আর ওদের সংসার কে। কোনদিন কোন ব্যাপারে মিতাকে মাথা ঘামাতে হয়নি। কখনো রাগী গলায় বা আদুরে গলায় বায়না করলেই সব এসে হাজির হত আলাদিন এর আশ্চর্য প্রদীপের মতো। সুন্দরী ঘরণীকে রাজরাণী করে রেখেছিল উজান। কি করবে মিতা এখন? আজ একরাশ শূন্যতা গ্ৰাস করে মিতাকে।
বাপের বাড়ীর সবাই , ননদ নন্দাই,উজানের অফিসের কলিগরা এসে দাঁড়ালো মিতার পাশে। তবুও মেয়েকে বুকের কাছে আগলেও শান্তি পায়না সে। কার অভিশাপে তার সুখের সংসারে আগুন লাগলো, তবে কি সেই পাপ করেছে? সত্যি তো উজান বারণ করা সত্ত্বেও গোপনে প্রায় প্রতিদিন দেখা করেছে রাজীববাবুর সাথে। তাই কি এমন হলো? না না একি ভাবছে সে?বন্ধুত্ব পাপ নয়। উজান ঠিক ভালো হয়ে উঠবে।
উজানের অপারেশন হলো,কিন্তু দুদিন বাদে অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়াতে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হলো উজানকে। কখনো ভেন্টিলেশনের বাইরে কখনও ভেন্টিলেশনে এইভাবে চলছে। মিতার সামনে সব আশার প্রদীপগুলো যেন ধীরে ধীরে নিভে যাচ্ছে। আজকাল আর কিছুই ভালো লাগেনা মিতার, তার নিজের ফোনটাও সুইচড্ অফ। নিজের কাজের জায়গায় অনেকদিন যাওয়া হয়নি। বড় হতাশ লাগে,পরের বছর মেয়ের ফাইনাল পরীক্ষা। কি করবে সে?
প্রতিদিন মর্নিং ওয়াক করে মিন্টো পার্কের মুখে এসে অপেক্ষা করেন রাজীববাবু, মিতাকে দেখেন না। সত্যি বড্ড মায়া পড়ে গেছে মিতার ওপর মনে হয় যেন অনেক দিনের চেনা। অনেকবার ফোন করছেন কিন্তু ফোনটাও সুইচড্ অফ। কোন খবরই পাচ্ছেন না। কি যে হলো!
উজানের মুখে এখনও মিতা আর মেয়েকে দেখে হাসির ঝলক ফোটে। ইশারায় দেখায়, না ভাবতে, ভালো থাকতে ওদের। তবুও মিতা যেন কোন আশার আলো দেখতে পায়না। অনেকদিন অফিসে যায়নি মিতা, আর কতদিন ছুটি নিতে হবে বুঝতে পারছেনা। তাই আজ ওর ভাই জোর করেই মিতাকে নিয়ে আসে অফিসে। সবার মন খারাপ উজানের জন্য, এত হাসিখুশি প্রাণবন্ত একটা ছেলে। আর মিতারই বা কতটুকু বয়স ।
সবার সাথে কথা বলে নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা মিতা। সবাই বলে ভরসা রাখতে,উজান নিশ্চয় ভালো হয়ে যাবে। সত্যিই যেন তাই হয়।
মিন্টোপার্কের কাছে সিগন্যালে ওদের গাড়ীটা দাড়িয়ে। মিতার এলোমেলো কান্নাভেজা মনে হঠাৎ করে ভেসে ওঠে রাজীববাবুর মুখটা। সত্যিই তো অনেকদিন তার ফোনটা বন্ধ, কোন যোগাযোগই নেই। মানুষ যখন ডুবতে বসে তখন বোধহয় ছোটখাটো খড়কুটো কেও আঁকড়ে ধরতে চায়। নাহ্ আজ বাড়ী গিয়ে ফোনটা খুলতে হবে। সত্যিই তো জীবনের দিকে তাকে মুখ ফেরাতে হবে, কাজে ফিরতে হবে কিন্তু সে কি পারবে?
বাড়ী গিয়ে ফোনটা খুলে অবাক হলো মিতা বেশিরভাগ মিসড্ কল আর মেসেজ এসেছে রাজীববাবুর কাছ থেকে। সবই বোধহয় নিয়তি, বন্ধু হিসেবে অনেকের মাঝে যেন বেশি করে রাজীববাবুকেই পেলো মিতা। নিজেকে ফোনে ধরে রাখতে পারেনা মিতা, হাউহাউ করে বাঁধভাঙা কান্নায় ভেঙে পড়ে মিতা।
মিতা জানে বাইরের লোকের কাছে নিজের অসহায়তা প্রকাশ করতে নেই। তবুও কেন যে নিজের কষ্ট এভাবে প্রকাশ করলো কে জানে?
রাজীববাবু কিছু বলতে পারেননা শুধু বলেন , "নিজেকে সামলান আপনাকে বাঁচতে হবে বেটির জন্য। ওকে কে দেখবে? ওর মনটা বুঝুন।"
সত্যিই তো পূজা বড় চাপা, ওকে কে দেখবে? না না হার মানবে না মিতা। শেষ পর্যন্ত ও লড়াই করবে।
উজানকে আর ধরে রাখা গেলোনা, তিল তিল করে মৃত্যুর সাথে আঠাশ দিন লড়াই করে হারিয়ে গেলো উজান। শেষের দিকে মিতাও বুঝেছিল আর আশা নেই। তাই নার্সিং হোমে গেলেও ফুরিয়ে যাওয়া উজানের কাছে বসে থাকতে মিতার মন চাইত না। সবাই আশ্চর্য হত মিতাকে দেখে। মিতা যেন হাল ছেড়ে দিয়েছে আর পারছেনা। তাই বোধহয় মুক্তি দিয়ে গেলো উজান মিতাকে চিরদিনের মত।
আঠাশ দিনের লড়াইয়ে বোধহয় মিতাও ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলো। সত্যিই বোধহয় মানুষ অকেজো হয়ে গেলে তার আর কোন প্রয়োজনীয়তা থাকেনা সংসারে।
মিতা ফিরলো কাজে , উজানের মৃত্যু যেন তেমন কোন দাগ কাটলো না ওর জীবনে। বরং আজকাল মিতাকে অনেক হাল্কা লাগে। হাতে অগাধ টাকা,ঘরোয়া সুন্দরী মিতা এখন আধুনিকা। কয়েক মাসের মধ্যে নিজেকে পুরো পাল্টে ফেলেছে। কথায় কথায় হেসে গড়িয়ে পড়ে। সত্যি কি মিতা ভালো আছে? নাকি শুধুই ভালো থাকার অভিনয়,কষ্ট ভোলার জন্য।
কখনও গয়নার দোকানে গিয়ে গয়না কিনছে, কখনও বা শাড়ী।
মা কে দেখে আজকাল যেন অবাক হয়ে যায় পূজা। মা যেন আবার টিন এজে ফিরে গেছে। সবসময় যেন ঘোরের মধ্যে আছে।কখনও পার্লারে যাচ্ছে কখনও বা জিমে। আজকাল আবার সুইমিং এও যায় মিতা।
অবাক হলেও পূজা স্বস্তি পায়, হাসিখুসি মিতাকে দেখে। মনে মনে বলে ,"এমনি থেকো মা,তোমায় হাসলে বড় ভালো লাগে। বাবা তো আর ফিরবে না কোন দিন। তোমায় তো ভালো থাকতেই হবে মা, আমার জন্য"।
বাবা চলে যাওয়াতে পূজা যেন কয়েকদিনে বেশ বড় হয়ে গেছে। সামনেই বোর্ড এক্সাম,তাই কোচিং ক্লাশে যাওয়া,ব্রেকফাস্ট নিয়ে খাওয়া। ঘরের টুকটাক কাজ অনেক কিছুই করে। আজ স্কুল থেকে বেড়িয়ে কোচিং করে অনেকটা দেরী হয়ে যায় পূজার।
আজ দরজা খুলে মাকে দেখে একটু চমকে যায় পূজা, একি মায়ের সেই লক্ষ্মী লক্ষ্মী চেহারাটা যেন মিস্ করলো। যদিও বেশ অন্যরকম আর সুন্দর লাগছে মাকে।
মা কোঁকড়া চুলগুলো কে পার্লার থেকে স্ট্রেইট করে এসেছে। সত্যি কি হলো মায়ের? বাবা থাকতে যে মানুষ কখনও সালোয়ার কামিজ পরতো না। বাবা খুব সখ করতো মা একটু আধুনিকা হোক। এখন মা এই কয়েক মাসের মধ্যে যেন ভোল পাল্টে ফেলেছে।
ওদের পাড়াটা খুব অভিজাত কেউ কারো ব্যাপারে নাক গলায় না, তবুও মা যখন ওয়েস্টার্ন বা স্কার্ট পরে সুইমিং আর জিমে যায় তখন অবাক চোখে অনেকেই তাকায়।
" সোনা মা,আমায় কেমন লাগছে রে? দ্যাখ না আজ পার্লারের মেয়েটা জোর করে করে দিলো। বলছে একটা স্পা নিলে দারুণ সেট হয়ে যাবে চুলটা।"
"খুব ভালো লাগছে মা, তুমি তো এমনিতেই সুন্দর,আমার ফ্রেন্ড রা তো তোমার ফ্যান। আজ একদম স্মার্ট লাগছে। ইশ্ বাবাই থাকলে তোমায় দেখে কি খুশিই না হত!"
চোখের কোণটা ভিজে যায় মিতার। ও যে সবাই কে দেখাতে চায় জীবনে অনেক কিছু হারিয়ে ফেলেও খুব ভালো আছে।
পূজা হয়ত কিছুটা বোঝে তার চিরকালের আত্মাভিমানী মায়ের বুক ফাটলেও মুখ ফুটবে না।
মিতা এখন আর রাজীববাবুর গাড়ীর পেছনের সীটে বসেনা। গাড়ীর সামনের সিটে একদম ড্রাইভিং সিটের পাশে বসে কত গল্প হয় দুজনের। এখন আপনি সম্পর্কটা তুমিতে নেমে এসেছে।
বাড়ী থেকে সকালে বেড়িয়ে রিক্সা করে রাস্তার মুখে আসে মিতা ওখান থেকেই রাজীববাবু সোজা মিতাকে তুলে নিয়ে পৌঁছে দেন কাজের জায়গায়। প্রতিদিন মিতার জন্য ফল কেটে টিফিন প্যাক করে আনেন,কখনও বা মিষ্টির বাক্স। এত যত্ন সে কোনদিন উজানের কাছেও বোধহয় পায়নি।
কখনও বা বিকেলে জিম থেকে ফেরার পথেও দেখা করে ওরা। কোন ক্যাফেতে বেশ কিছুটা সময় গল্প করে ফেরে মিতা। এই সময় টা মেয়েও পড়তে যায়।
পূজা বাড়ী থাকলে মাঝে মাঝে বেরোনো হয়না মিতার, মেয়েকে সময় দেয়। তবুও পূজার মনে হয় মা যেন বড় তাড়াতাড়ি বদলে যাচ্ছে। আজকাল বাবাই এর কথা খুব মনে হয়। কত মজা করতো বাবাই এর সাথে। মায়ের কাছে বকুনি খেলে বাবাই আশ্রয় দিতো।
আর কোচিং থেকে ফেরার পথে কত আবদারই না ছিলো বাবাই এর কাছে, কখনো রোল,কখনও বা ফুচকা । আর প্রতিদিনের প্রাপ্তি একটা ক্যাডব্যেরি। এখন দোকানগুলোর পাশ দিয়ে গেলেও আর কিনতে ইচ্ছে করেনা। ছুটির দিনে কত কি রান্না বাবাই করতো। কতরকমের মাছ আসতো বাজার থেকে। এখন তেমন কিছু রান্নাও হয়না আর খেতেও ভালো লাগেনা। মা তো মাছের বাজারে গন্ধেই ঢুকতে পারেনা। কখনও পিসি মাছ কিনে দিয়ে যায়। কখনও বা দিদু।
তবুও দাদুর বাড়িতে গিয়ে দিদুর সাথে গল্প করে একটু মনটা ভালো হয়।" সত্যি ঠাকুর তুমি আমার বাবাই কে কেন এত কষ্ট দিলে?আমার যে খুব মন কেমন করে বাবাই কে না দেখে।"
স্যার আজ তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিলেন, দোলন জোর করে আজ পূজাকে রোলের দোকানে নিয়ে এসেছে। ওদের আইল্যান্ডের আগের আইল্যান্ডে দোকানটা। হঠাৎই নজর পরে যায় পূজার, ঝকঝকে নতুন একটা গাড়ীতে ওর মা একজন অপরিচিত ভদ্রলোকের সাথে হাসতে হাসতে যাচ্ছে। মুখটা ঘুরিয়ে নেয় পূজা, ভাগ্যিস দোলন লক্ষ্য করেনি। মনের সব আলো যেন নিভে যায় পূজার।
সত্যি মা তো? নাকি অন্য কাউকে দেখলো , না না আর ভালো লাগছে না। হঠাৎ হাত পা কেমন যেন কাঁপছে। না এক্ষুণি বাড়ী যেতে হবে, মা ফেরার আগেই। রোলটা হাতে নিয়ে বাড়ীর পথ ধরে পূজা, খাবারটা গলা দিয়ে নামছে না।
"নাহ্ যাক, মা এখনো ফেরেনি"। দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে। প্রায় ঘন্টাখানেক বাদে মিতা ফেরে, চমকে ওঠে পূজা । এই তো সেই আসমানী নীল কুর্তিটা , এটাই তো । পূজার ফ্যাকাশে মুখটা খুশিতে ঝলমলে মিতার নজর এড়ায় না।
"কি হয়েছে রে সোনা মা শরীর খারাপ? এতো তাড়াতাড়ি ফিরলি যে? মুখটা এতো কালো লাগছে কেন?" -
-----"এতো প্রশ্ন একসাথে কোরোনা মা , স্যার আজ তাড়াতাড়ি ছেড়েছেন তাই চলে এলাম। আমার মাথা ধরেছে, ভালো লাগছেনা। তুমি এত সেজে কোথায় গিয়েছিলে? মুভি দেখতে?
------রাগ হয়ে যায় মিতার, "তুই জানিস না এই সময় আমি জিমে যাই। অদ্ভুত প্রশ্ন করছিস তো?"
---"আচ্ছা বেশ, রেষ্ট নাও। আমাকে একটু ঘুমোতে দাও। ভালো লাগছে না।" শুয়ে শুয়ে চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে পূজার।
"---হে ভগবান বাবাই কে কেড়ে নিয়েছো। মা কেন এমন পাল্টে যাচ্ছে?আমি চাই মা ভালো থাকুক খুশি থাকুক। কিন্তু তবুও কেন কেন মা আমাকে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে পারছেনা? আমি কার কাছে থাকবো মা চলে গেলে? বাবাই তুমি কেন---কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পরে পূজা।
মিতা তখন পাশের ঘরে ফোনে চাপা স্বরে কথা বলতে ব্যাস্ত, হাসিতে গল্পে বিভোর মিতা। একটা সময় এমন গল্প বিয়ের আগে উজানের সাথেও হতো। ফোন রেখে খেয়াল হয় রাত হয়েছে, ডিনার করতে হবে।
---------কি যে হলো মেয়েটার আজ,এইসময় তো পড়াশোনাই করে আজ কেন যে ঘুমিয়ে পড়লো।
রাতে কিছুই খেলোনা পূজা। মেয়ের পাশে শুয়ে আজ মিতারও মনটা ভালো লাগছে না। মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরতেই দেখে জ্বরে গা পুড়ে যাচ্ছে। কোনরকমে জল দিয়ে প্যারাসিটামল খাইয়ে দেয় । ভোরের দিকে চোখটা জড়িয়ে আসে। এস এম এস করে জানিয়ে দেয় রাজীববাবুকে আজ বেরোবেনা।
রাতে জ্বরের ঘোরে মেয়েটা জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলো----"আমায় ছেড়ে যেয়োনা মা"। ----"এই তো মা আমি, তুমি ঘুমোও।"
বেশ কিছুদিন ছুটি নিলো মিতা,পূজার বোর্ডের পরীক্ষা ভালোই হলো। মা বেরোচ্ছেনা দেখে পূজাও খুব খুশি। সারাক্ষণ মায়ের আদর খাচ্ছে।
আবার শুরু হলো মিতার রোজনামচা, যদিও পূজাকে পরীক্ষার হলে দিয়ে কয়েকদিন দেখা করেছে রাজীবের সাথে। বাবু আর আপনি ওদের মাঝে আর নেই। জয়েন্টের পর পূজাও মায়ের সাথে জিমে যাচ্ছে। বিকেলটা বেশ কাটছে।
সেদিন পূজা একটু জেরক্স করতে বেরিয়েছিল, হঠাৎই নজর পড়ে যায় মা খুব হাসতে হাসতে আর বাই করতে করতে গাড়ী থেকে নামছে। একটু দূরে দাড়িয়ে সবটাই চোখে পড়ে। গাড়ীটা চলে যাবার পর কয়েক পা এগোতেই চোখে পড়ে মেয়েকে।
অপ্রস্তুত হলেও নিজেকে সামলে নেয় মিতা। " সোনা মা এখানে কেন? আজ তাড়াতাড়ি ছুটি হয়ে গেলো তাই চলে এলাম।"--" জেরক্স এর দোকানে এসেছিলাম।" রাস্তায় সিনক্রিয়েট করেনা পূজা। না আজ মায়ের মুখোমুখি দাড়াতেই হবে। আঠেরো বছর বয়স হয়ে গেছে এইটুকু সাহস রাখতেই হবে।
মায়ের জন্য জল এনে মুখোমুখি দাঁড়ায় পূজা, "আচ্ছা মা আজ একটা সত্যি কথা বলবে?"
চমকে ওঠে মিতা,এমন শোনাচ্ছে কেন আজ মেয়ের গলাটা। তবে কি? "হ্যাঁ সোনামা বল"।
তুমি আজকাল কার গাড়ীতে ঘুরে বেড়াও? আজও দেখলাম, আগেও দেখেছি। কই আমাদের চেনা কেউ না তো?
অবাক হলেও মনে মনে প্রস্তুত ছিলো মিতা একদিন সত্যের মুখোমুখি দাঁড়াবার জন্য। "উনি আমার বন্ধু,আমাদের অফিসের কাছাকাছি থাকেন।
--- তাছাড়া উনি বিবাহিত,বড় বড় ছেলেমেয়ে আছে, স্ত্রী আছে । আমরা শুধুই বন্ধু, তোর বাবাই চলে যাবার পর উনি আমাকে অনেক মেন্টাল সাপোর্ট দিয়েছেন।
"ওহ্ বাঃ এক্সট্রা ম্যারিটাল রিলেশন,চমৎকার!"
"--- কোথা থেকে এইসব কথা শিখছিস ছিঃ!"
ওমা এটা তো এখন লেটেস্ট ট্রেন্ড। বিবাহিত হয়েও বোরনেশ কাটানোর জন্য প্রেমিক বা প্রেমিকা। কখনও বা ওয়ান ওর মোর। শেষে তুমিও ওই ফাঁদে পড়লে মা?
এখনও ফিরে এসো মা , নাহলে বাবাই তো চলেই গেছে। একদিন তুমি সব হারাবে।
কই আগে তো কখনও দেখিনি,এমন কোন বন্ধু আছে তোমার ,যে তোমাকে বাড়ী পৌঁছে দেন, জিম থেকে নিয়ে আসেন। কই বাবাই ও তো এত কিছু করতো না?কি এমন বন্ধুত্ব তোমার?এখনো এক বছর হয়নি বাবাই চলে গেছে। আমি আর সবাই তোমার সাথে আছি মা তবুও কেন? কেঁদে ফেলে পূজা। আমি কি তোমার বন্ধু না মা? আমিও যে কত একা কখনও ভেবেছো মা?"
পূজার জেরায় রাগে দুঃখে মেজাজ ঠিক রাখতে পারেনা মিতা। "তোর বাবাই চলে যাওয়ার পর সবাই দূর থেকে শুকনো সহানুভূতি জানিয়েছে। রাজীব আমার জন্য যা করে তোর বাবাই ও কোনদিন করে নি আমার জন্য। স্বার্থপর সবাই স্বার্থপর আমার মনটা কেউ বুঝলো না। তুইও বুঝলিনা। আমি এবার নিজের কথা ভাববো, নিজেকে ভালো রাখবো। আমি ভালো না থাকলে তোকে কে দেখবে?"
ছিঃ মা তুমি বাবাই এর সাথে ঐ লোকটার তুলনা করছো? বাড়ী ,গাড়ি ,টাকা সবই তো বাবাই রেখে গেছে আমাদের জন্য। তোমার গাড়ী লাগলে ড্রাইভার নাও, তাই বলে একজন মানুষের কাছ থেকে তুমি সুযোগ নিচ্ছো? তার থেকে তুমি একটা বিয়ে করো মা।"
------ সপাটে মেয়ের গালে একটা চড় বসায় মিতা,"তুই এত বড় কথা বলতে পারলি? আমার নিজের ইচ্ছেমতো জীবনে চলতে পারবো না?"
"স্বাধীনতা মানে স্বেচ্ছাচারিতা নয় মা"। --"একদম চুপ আর কোন কথা বলবি না।"
চোখে জল নিয়ে পাশের ঘরে চলে যায় মিতা। ঘর অন্ধকার করে শুয়ে পরে পূজা।
রাজীবকে ছাড়তে পারেনা মিতা কিন্তু সাবধানী হয় অনেকটা। রাজীবের গাড়ীতে আর ফেরেনা। যেটুকু দেখা সাক্ষাত হয় অফিসেরপথেই। রাজীব ও বলে মেয়েকে বেশি সময় দিতে। কিন্তু কেন মিতা এভাবে জড়িয়ে পড়লো একজন বিবাহিত বয়স্ক মানুষের সঙ্গে। শুধুই কি নির্ভরশীলতা না অবলম্বন? নাকি ভালবাসা আর আর্থিক প্রাচুর্য। দামি দামি বিদেশী গিফ্ট, বি এম ডাব্লিউ চড়ে ঘুরে বেড়ানো। যা উজানের দেওয়ার ক্ষমতা ছিলোনা।
পূজার রেজাল্ট বেরোয় খুব ভালো নম্বর পেয়েছে এত বিপর্যয়ের মধ্যেও, তবে জয়েন্টের র্যাঙ্কটা ভালো হয়নি। মুম্বই এ একটা বেসরকারি কলেজে সুযোগ পেয়েছে যদিও পছন্দের বিষয় নয়। তাই নিয়ে ভাবনা চিন্তা চলছে । এখানেও কয়েকটা কলেজে পেয়েছে সুযোগ।
আজ সারাদিন বাড়ীতে নেই পূজা ,বন্ধুর জন্মদিনে গেছে ফিরতে রাত হবে। এটা ওদের একটা গেট টুগেদার।
মিতার আজ অনেকটা অবসর ,অনেকদিন বাদে মেয়ে বেরিয়েছে। রাতে ফিরে মাকে খুব খুশি দেখে পূজা , যেন আনন্দে ঝলমল করছে। অনেকগুলো শপিং ব্যাগ নিয়ে বসে মেয়ের পাশে।"আজ একটু শপিং এ গিয়েছিলাম তোকে সারপ্রাইজ দেবো বলে,দেখতো কেমন হয়েছে?"
"দেখি দেখি , তুমি একটু আয়নার সামনে ধরোনা মা"। "হ্যাঁ এই তো, এই দ্যাখ।"
ড্রেস আর জাঙ্ক ইয়ার রিং দেখতে গিয়ে পূজার নজর পরে মায়ের গলার পাশে লাল দাগ আর পিঠের আঁচড় গুলোতে। পূজা এখন বড় হয়েছে ওর কাছে অনেক কিছুই পরিস্কার হয়ে গেলো।
"আমার খুব টায়ার্ড লাগছে মা, আমি ঘুমোতে যাচ্ছি,গুড নাইট"।"সে কি রে সব ড্রেসগুলো তো দেখলিই না?"--"রেখে দাও"।
কি যে হয় মেয়েটার আজকাল কে জানে?হঠাৎ হঠাৎ মুড অফ্ হয়ে যায়!
ড্রেসগুলো জোর করে রাজীব কিনে দিলো। ওর ড্রেসগুলোও দারুণ হয়েছে। ট্রায়ালরুমের বাইরে মুগ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রাজীব দেখছিলো মিতাকে নতুনরূপে।
ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে ক্রীম মাখতে গিয়ে মিতারও চোখটা আটকে যায়।লজ্জায় মুখটা লাল হয়ে যায়। ইশ্ রাজীবটা না! লম্বা স্ট্রেইট চুলটা ঘাড়ের পাশ দিয়ে নামিয়ে দেয়। এতক্ষণ খেয়ালই হয়নি।
পাশের ঘরে লাইট নিভিয়ে শুয়ে আছে পূজা। দু চোখে জল গড়িয়ে পড়ে । সব সম্পর্কেই বোধহয় কোন স্বার্থ থাকে। ওর ফুলের মত সুন্দর মাকে লোকটা হাঙ্গরের মত গিলে ফেলেছে। দাঁত আর নখ বসিয়েছে মায়ের নরম শরীরটাতে ,ছিঃ! বালিশে মুখ ঢাকে পূজা।
পরদিন রোববার ব্রেকফাস্ট খেতে পূজা বলে "মা,তোমায় জানানো হয়নি আমার মুম্বই যাওয়াটা ফাইনাল। আমি সব পেপার ফ্যাক্স করে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর সাত দিন বাদেই আমায় যেতে হবে।"
"এতবড় সিদ্ধান্ত টা তুই নিলি? আমায় একটু ভাবতে দিলিনা? আমি বড্ড একা হয়ে যাবো রে"।
-----"তুমি তো স্বাধীনভাবে বাঁচতে চেয়েছিলে মা। বাবাই তোমায় অনেকটা স্বাধীনতা দিয়ে গেছে। আমি তোমায় পুরোপুরি স্বাধীন করে গেলাম মা। ভালো করে বাঁচো , জীবনকে উপভোগ করো।
-----জীবন তো একটাই মা !"
দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে পূজার।
স্তব্ধ হয়ে যায় মিতা।হয়ত ফিরে আসার আর কোন পথ নেই এই ভেবেই।
তবুও আজ যেন চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করলো মিতার," সমস্ত পৃথিবীর সুখএকদিকে, আর তুই একদিকে সোনামা। চলে যাসনা এভাবে আমায় একা ফেলে, ফিরে আয়।"
-সমাপ্ত-
Comments
Post a Comment