Skip to main content

ভালোবাসায় রেখো

#ভালোবাসায়_রেখো#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"আরে আমি অমুকের বউ ভাই এটাই তো মোদ্দা কথা তাইনা? কি করি না করি,কিসের মাথাব‍্যাথা ওনার বলতে পারো? আমি হাউস ওয়াইফ না ওয়ার্কিং অত খোঁজে ওনার কি দরকার?" গজগজ করতে থাকে রিঙ্কু। " হুঁ আরে ওয়াইফ হাউসেই থাকে আর সেখানেই ফুলটাইম সার্ভিস দেয়। বাইরে যখন যায় চাকরিতে তখনও বার বার ফোন করে জানতে থাকে ওর না থাকার সময়টা কারো কোন অসুবিধে হচ্ছে কিনা? তোমরা বাইরে গেলে বাড়ির কথা কত যেন মনে রাখো। এইজন‍্য অফিসের পার্টিতে যেতে ইচ্ছে করেনা।"
      এক নিঃশ্বাসে বলে যায় কথাগুলো রিঙ্কু ওর সাথে সবাই একমত মানে ওর ছেলের বন্ধুদের মায়েরাও। "আরে তুই না হয় চাকরি করিসনা,আমি তো করি। সারা সপ্তাহ তবুও যেন শান্তিতে থাকি একটা নিয়মের মধ‍্যে। রবিবার এলেই কান্না পায়। আমার বর আবার ভীষণ খাদ‍্যরসিক,শনিবার আমার জন‍্য হোমওয়ার্ক রেডি করে রাখে আর রবিবার এলেই ধরিয়ে দেয়। চলতে থাকে বেলা দুটো পর্যন্ত,হাতের জলই শুকোয়না। কোন সপ্তাহে পটলের দোরমা,তো কোন সপ্তাহে চিতলমাছের মুইঠ‍্যা আবার কোন সপ্তাহে ভেটকি পাতুরি,চিকেন কষা। নাহলে ফ্রায়েড রাইশ আর ফিশফ্রাই চিলিচিকেন,সব একলা হাতে করা। এখন তো আমার লোক নেই জানিস তো। তারপর সকালের ব্রেকফাস্ট আর বিকেলের টিফিন। এত ক্লান্ত লাগেনা কি বলবো।"..অভিযোগ করে তৃষা।
        "আরে এই সেদিনই তো বললো পিস পোলাও আর চিকেন কষা করো। আবার পরের দিনের রান্নাও করলাম,একটা মাছ ডাল আর তরকারি,সকালে অত সময় হয়না। মোটামুটি সব গুছিয়ে এনেছি উনি বাজার থেকে আনলেন মেটে আর কই মাছ। রাতে মেটেটা হবে,আর পরদিনের কই মাছটা আজই করে নাও নাহলে শক্ত হয়ে যাবে। বিশ্বাস করবিনা সেদিন বড় কান্না পেয়েছিলো আর মায়ের কথা খুব মনে পড়েছিলো,মনে হচ্ছিলো যেন আর পারছিনা। তবুও করলাম,খাবে বলে এনেছে।"..কথাগুলো বলতে বলতে চোখটা আজ ছলছল করে তৃণার।
         "আমার তো আরো ঝামেলা,আমিষ নিরামিষের এত ঝামেলা কোন কাজের লোক করবে বল। শাশুড়ির জন‍্য গুছিয়ে নিরামিষ আর আমাদের জন‍্য আমিষ। ভালো লাগেনারে,মাঝে মাঝে মনে হয় কেন যে বিয়েটা করেছিলাম। মাকে বললে বলে এত রান্না করবিনা। আরে না করে যাবো কোথায়?"...রাগে মুখটা লাল হয়ে যায় রূপার।
         মুনমুনকে চুপ করে থাকতে দেখে ওরা বলে,' তুই তো ভালো চাকরি করিস,বাড়িতে দুটো তিনটে লোক। কি সুন্দর রেখেছিস নিজেকে! কোন কাজের ঝামেলা তো নেই বাড়ি এসে।'.." হ‍্যাঁ রে তা ঠিক তবে ঝামেলা বোধহয় সবারই আছে কোন না কোন রকম,আমাদের মেয়েদের জীবনে মেয়েবেলাটাই ভালো। শোলার মুকুটটা খুব হাল্কা হলেও বিয়ের পরেই মাথায় বা ঘাড়ে চাপে অনেক দায়িত্ব। যদিও আমরা মেয়েরাই হয়ত পারি সব সামলে হাসিমুখে থাকতে তবুও এক এক সময় বড় ছটফট করে মনটা। সবাইকে খুশি করতে করতে কখন যে ভুলে গেছি আমি কি খেতে ভালোবাসতাম,কোনটা করতে ভালোবাসতাম।"কথাগুলো বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে মুনমুন,ওয়ার্কিং হয়েই বা কি লাভ সেখানেও আছে অপরাধবোধ মানে আমি না ঘরকা না ঘাটকা আর তার সাথে আছে ইগোর লড়াই। সন্তানের শৈশবটা একটা অন‍্য কারো ওপর ছেড়ে দিয়ে অপরাধবোধে ভোগা।
       "জানিস বিয়ের আগে কত কি করতাম আবৃত্তি,গান,ডিবেট সবতেই প্রাইজ আনতাম। কত সাধ ছিলো অন্তত গান বা আবৃত্তিটা থাকবে কিছুই থাকলোনা। বর বলতো মাঝে মাঝে ঠিক করে দেবে টিচার,আসলে আমি তো এখানকার মেয়ে না। তারপর ছেলে হলো সবই ধামা চাপা পড়ে গেলো। হারিয়ে গেলাম আমি সন্তান মানুষ করার টানাপোড়েনে। কোন শখই পূরণ হলোনা। তবে ছেলেটাকে টুকটাক শেখাই স্কুলে সবাই ভালো বল।"...নিঃশ্বাস ফেলে কণি।
    ...."আচ্ছা বলতো বাচ্চা মানুষ করার জন‍্য আমাদের মেয়েদেরই চাকরি ছাড়তে হয় কেন? ছেলেরা তো দিব‍্যি কাজ করে। আমি তো চাকরি করতাম,একটা সময় এত চাপ এলো দেখলাম হবেনা। তাই চাকরি ছাড়লাম,এখন দু পাঁচশো টাকা চেয়ে নিতে হয়। খুব খারাপ লাগেরে। এই দেখনা,আমার ননদাই বাইরে ট্রান্সফার হয়ে যাচ্ছে বলে ননদ চাকরি ছেড়ে বোধহয় চলে যাবে। আবার আমার বোনকেই দেখ এক জায়গায় ও আরেক জায়গায় ওর বর ছুটিছাটায় কখনো একখানে হয় দুজনে,তাও বেশিরভাগ ওকেই ছুটতে হয় ছেলে নিয়ে । ছেলেটাকে মানুষ করতে বেচারা একা হিমসিম খাচ্ছে তবুও চাকরি ছাড়বেনা। বলে," দিদি এত পড়াশোনা বাবা শেখালো কেন বলতে পারিস?"...বলে নীতা।
          "আসলে আমরা মেয়েরা সবসময়ই হোমমেকার জানিস। বিয়ের পর অন‍্যের বাড়িটাকে আমরাই সাজাই একদম নিজের ভেবে নিজের মত করে। বরদের প্রমোশনে খুশি হই,বিদেশে গেলে স্টেটাস দিই বড় করে। ভালো শাড়ি গয়না কিনে দিলেও সবার কাছে খুশি হয়ে বলি ও কিনে দিয়েছে। কিন্তু ওদের থেকে আমাদের এগিয়ে যাওয়া কি সব বরেরা মানতে পারে? এই তো আমি পি এইচ ডি করবো বলাতে আমার বর যা অশান্তি করলো। শেষে হাল ছাড়লাম,এখন আর সময় নেই। ছেলে বলে কিছু করতে,একটা বয়েসের পর খাঁচায় বন্দি জীবনেই অভ‍্যস্ত হয়ে যাই। ভয় পাই আকাশে উড়তে,স্বাধীন হতে। কণি তোরও তো গান বন্ধ তাইনা? এমন অনেকেই আছেরে,প্রত‍্যেকেই আমরা কিছু না কিছু ভালো করতাম একসময়। আবারও বলে মুনমুন।
       সবাই হেসে ওঠে,আর একসাথেই কজন বলে ফেলে একটা কাজ আমরা মোটামুটি সবাই ভালো পারি জানিস সেটা হচ্ছে রান্না। বিয়ের পর দেখেছি রান্নাটা ভালো করতে পারলে মোটামুটি খুশি রাখা যায় সবাইকে। হাসে তৃণা," আজকাল একটু ফেসবুক করি,ওরে বাবা বর অফিস থেকে এসে যদি দেখে মোবাইলে আছি,মুখটা কালো হয়ে যায়। আমরা কোথাও থেকে এলে কে আর আমাদের চা জল দেয় বল? কিন্তু আমাদের সব রেডি রাখতে হয়। না রাখলেই মুখ ভার অথবা তুমি সুগৃহিণী নও। তাছাড়া আমরা নিজেরাও পারিনা না করে।"
           আসলে সবার দিকে নজর রাখতে,সবাইকে ভালো রাখতে আমরা সবাই চাই,হয়ত সব মেয়েরাই চায়। বিনিময়ে একটু ভালোবাসা আর সহানুভূতি চাই বাড়ির অন‍্যদের কাছে। ছোটছোট টুকরো সহানুভূতিও আমাদের ছুঁয়ে যায় কিন্তু কজন পাই সেটা বল? আজকাল ছেলেমেয়েদের বললেও ওরা মুখ ঝামটা দেয়,বলে মা বড় ইমোশনাল হয়ে যাচ্ছো সব এই সিরিয়াল দেখার ফল। একসময় আমাদের পৃথিবীটা কত বড় ছিলো বল,কত কি ছিলো ওখানে। আজ পৃথিবীটা বড় ছোট,সেখানে শুধু স্বামী সন্তান আর শ্বশুরবাড়িকে খুশি রাখা। আজকাল মায়ের কাছেও যেতে পারিনা রে। কি খায় কি বাজার করে ওরা কে জানে?অথচ এখানে দরকারে বাজারেও ছুটছি"..বলে তৃষা।
           আসলে ওদের বন্ধুদের মত আমাদের সবারই হয়ত মনের কথাগুলো এমনিই কিছুটা। অনেক অভিযোগ আর না পাওয়ার মাঝেই আমরা মেয়েরা খুঁজি সুখীগৃহকোণ। একটু সুখ আর সহানুভূতির ছোঁয়া পেলেই দিতে পারি সবটাই হাসিমুখে। কিন্তু কজন পায় সেটা,সবাই ধরে নেয় এগুলো বৌদের,মায়েদের অথবা মেয়েদের কাজ। এই অভিযোগ কোন পুরুষের বিরুদ্ধে নয়,ওরা পেতে পেতে অভ‍্যস্ত হয় আর আমরা দিতে দিতে অভ‍্যস্ত হই। না দিতে পারলে আমাদের বদনাম হয় অথবা অপরাধবোধে ভুগি।
                  তবুও কণি আজ বাড়ি গিয়ে খুব খুশি হলো যখন অনেকদিন বাদে রাতে সোহম জড়িয়ে ধরে বললো,"আজ তোমায় খুব মিষ্টি লাগছিলো দেখতে, একদম পুরোনো প্রেমের দিনগুলোর মত। আজ একটুকু ছোঁয়া লাগে গানটা একটু গাইবে?"
           অনেক না পাওয়ার মাঝেও ছোট্ট একটু পাওয়ার সুখে মন ভরলো কণির নিজের ভালোবাসা উজাড় করে দিলো সোহমকে।
           এই রবিবার পীযূষ হঠাৎই বললো," তৃণা আজ কি খাবে বলো,তোমার আজ ছুটি আমি খাবার আনিয়ে নেবো আজ।".." না না আমি রান্না করবো,কি খাবে বলো।".." আচ্ছা আমি তাহলে আজ চাপটা ট্রাই করি,তুমি হেল্প কোরো প্লিজ। আর বিরিয়ানিটা আনিয়ে নিই।"..সেই রবিবারটা বাসনপত্র ঠুকঠাক করতে আর পেঁয়াজ কাটতে কাটতে কখন যে আবার প্রেমটা ঝালাই হয়ে গেলো বুঝতেই পারলোনা। হয়ত এই সাহায‍্যটুকুই গলিয়ে দেয় অনেকটা বরফ।
         মুনমুনের জন‍্যও সারপ্রাইজ ছিলো,রাজ এই উইকএন্ডে একদম লঙড্রাইভে নিয়ে গেলো ওদের মন্দারমণি। ছোট ছোট খুশি অথচ মনছোঁয়া আনন্দ। থ্রি কোয়ার্টার সাদা প‍্যান্ট আর লাল গেঞ্জি পরে অনেকদিন বাদে হাত রাখলো রাজের হাতে মুন। ছেলে ক‍্যামেরাবন্দী করলো একটা ছোট মুহূর্ত।
      রিঙ্কুর অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো একদিন ক‍্যান্ডেললাইট ডিনার করার। এই উইকএন্ডে হঠাৎই ভীষণ জোর করলো রূপম," না না আজ নো রান্নাবান্না,সকালে হোম ডেলিভারি আর রাতে বাইরে ডিনার। আজ সেই কালো লাল কাঁথাস্টিচের সাথে সুতোর মাল্টিকালারের গয়নাটা পরবে প্লিজ।".ছেলে তো লাফিয়ে উঠলো। গাড়িতে রূপমের হাতে আলগোছে হাত রেখেছিলো রিঙ্কু। অনেকদিন বাদে এক ভালোবাসা মেশানো নির্ভরতার স্পর্শ।
      ছোট ছোট ভালোলাগা ছুঁয়ে গেলো সবাইকে,রূপার হঠাৎই মনে হলো শাশুড়িমা আর বরের আদর যেন বেশ বেড়েছে। ভালো হলো আহত মনগুলো সবারই একটু একটু করে,হয়ত এর রেশই থেকে যাবে বেশ কিছুদিন।
    কিন্তু এই ম‍্যাজিকগুলো হলো কি করে,সত‍্যি সবার বরগুলো হঠাৎই এত কেয়ারিং হয়ে গেলো কি করে! মুনমুনই আবিস্কার করলো শেষে," আর বলিসনা,ছেলেগুলো হয়েছে মহা পাজি,কখন যে আমাদের আড্ডার ভিডিও করে, যে যার মায়েরটা বাবাদের কাছে পাঠিয়েছে। ইশ্ আমায় আদর করতে করতে রাজ বলে ফেলেছে,গালটা লাল হয়ে যায় মুনমুনের। একমুঠো ভালোলাগার ছোঁয়া ছড়িয়ে গেছে ততক্ষণে সবারই মনে,সত‍্যি ছেলেগুলো তাহলে বড় হয়ে গেছে। হাতের মুঠোয় ধরা ছোট্ট পৃথিবীর এক ঝলক মিঠে ভালোবাসার রঙ হয়ত ভুলিয়ে দেবে সব অভিমান আর রাগ।
  ছোট্ট ছোট্ট চাওয়াগুলো নিয়ে ভালো থাকি মুনমুন,রিঙ্কু,নীতা,তৃষা,তৃণা আর কণিদের মত আমরাও। কতটুকু আর চাহিদা আমাদের একটু নিখাদ ভালোবাসা পেলে সব দিতে পারি উজাড় করে।©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
সমাপ্ত:-
             

March

Basic-30470
D.A-30470
Medical-300
HRA-4571(nil)
Intern relief-2478
Total-63718
Deduction
PF-4000
Ptax-200
ITax-1500
Total recovery- 5700
Net amount payable.58018

April....do
May....do
June...do
July
Basic-31390.
D.A.31390
HRA-4709(nil)
Medical-300
Intern relief-2478
Total-65558
GPF-4000
PTax-200
ITax.1500
Total deduction..5700
Net amount..59858

August
Do
September
Do
October
Do
November
Do
December
Do

January
Basic-31390
D.A-39238
Gross-70928
P.F_4000
Ptax-200

February
Do

.আমার যে বিয়ে হবে কোনদিনই ভাবিনি।
    তবুও আমার বিয়ে হচ্ছে মা পঁয়ত্রিশ বছরে, শুধু তোমারই দেখা হলনা তোমার সৌরভী লাল বেনারসী পরে হাতে গাছকৌটো নিয়ে শ্বশুরবাড়ি এলো।...সৌরভী একমুঠো স্বপ্ন চোখে নিয়ে কনকাঞ্জলি দিয়ে এসেছিলো শ্বশুরবাড়িতে। কিন্তু মেয়েদের সুখী হওয়ার স্বপ্ন কি সত‍্যি হয় সবসময়?....জানতে হলে পড়ুন ইচ্ছেডানা সংকলন।

#শীতের_আমেজে_চা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
জমে যাওয়া শীতে জমিয়ে প্রেম করেছিলাম
শুধুই তোমার সাথে নিভৃতে,একান্তে।
শীতের সকালে তৃষ্ণার্ত দুই ঠোঁট ছুঁয়েছিলো তোমাকে আদর করে তোমার অজান্তে।
পরিতৃপ্ত হয়েছিলাম তোমার মধুর উষ্ণতায়,
আজও রোজ সকালে আমার ঠোঁটদুটো..
পেতে চায় শুধু তোমারই উষ্ণতা প্রাণভরে।
হিমেল শীতে, আর জমে যাওয়া রাতে;
শুধু তোমাকেই চাই...আমার প্রিয় "চা"।

#এক_কাপ_চায়ে_শুধু#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

চাবাগানের গাঢ় সবুজে চোখে স্বপ্ন মেখে লাল ওড়না উড়িয়ে নেচে বেড়াতো তিস্তা,ঠিক রঙিন প্রজাপতির মত। তবে বাস্তব বড় কঠিন,তাই আজও হাতের পোড়া দাগটাতে চোখ চলে যায়.." ইশ্ কি চা বানাও!এতো আনতে আনতেই ঠান্ডা করে ফেলেছো।"..শ্বশুরের বকুনির ভয়ে হাতে ঢেলে ফেলেছিলো গরম চা,আবার নতুন করে বানিয়েছিলো পোড়া হাত নিয়েই। যদিও আজ ভুলতে চায় সবটাই। মধুবনির গেষ্ট হাউসে বসে তিস্তা,কুয়াশায় মোড়া চাবাগানের ঘুম ভাঙছে। অভি চায়ের কাপটা এগিয়ে দেয়," ভয় পেয়োনা,ঠান্ডা করে এনেছি। চায়ে চুমুক দিতে দিতে দেখো ঐ যে টিয়াপাখির ঝাঁক।".. কুড়ি বছর বাদে অভিকে বলতে ইচ্ছে করলো," এক কাপ চায়ে শুধু তোমাকে চাই।"

#শেষ_স্পর্শ#
"কেমন আছো মা?".মা মুখটা ফিরিয়ে নেয়,"উঃ যম যন্ত্রণা পাচ্ছি।"..একদলা কান্না গলায় চেপে রেখে মায়ের হাতটা একহাতে শক্ত করে ধরে রুমি, আর একটা হাত মায়ের মাথায় আর শরীরে বুলিয়ে জপ করতে থাকে ওদের কুলদেবতা গোপালকে.."মাকে আর কষ্ট দিয়োনা ঠাকুর।".ঠিক যেমন ছোটবেলায় জ্বর হলে মা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিত। .." আমার তো ছুটি হবার কথা ছিলোরে।".." একটা দিন সময় দাও মা কালই তোমায় ছেড়ে দেবে।"..উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিলো মায়ের মুখ। পরদিন ভোরেই মা চিরতরে ছুটি পেয়েছিলো। মায়ের হাতের আঙ্গুলের স্পর্শ আজও পায় রুমি,খুব কষ্ট হয় কথা রাখতে পারেনি বলে।

হাল্কা শীতের আমেজ ছুঁয়ে যাচ্ছে,আর শীত মানেই মন বলে চলো বেড়াই,মেলায় ঘুরি,ভালোমন্দ খাই।মনটা বেশ ফুরফুরে সবার এখনো যে চলছে উৎসবের রেশ।প‍্যান্ডেল আলো করে এসেছেন জগদ্ধাত্রী আর কার্তিক।উৎসব রঙিন করে মন,আর আমরা মাতি ছবি আর সেল্ফিতে নিজেদের দেখতে।জীবনের চলার পথের ছোট ছোট স্মৃতি,টুকরো রঙিন মুহূর্তগুলো আমরা বন্দী করে রাখি ক‍্যামেরায়। নিজেদেরকে আবার ফিরে দেখতে সবারই খুব ভালো লাগে। ইচ্ছে করে জানতে কি বলছে ক‍্যামেরার চোখ?অথবা জানতে ইচ্ছে করে সেই গানটার মত,বলতো ক‍্যামেরা আমার মুখটা দেখে...সময় পাল্টায়,দিন চলে যায়,পাল্টে যাই আমরাও। তাই বন্ধুরা আজ ক‍্যামেরার চোখে একবার দেখি নিজেদের সেরা মুহূর্তকে উজান কথার আসরে। নিজেদের সুন্দর সুন্দর ছবি সাজিয়ে ভরে ফেলুন উজান কথার পাতা আজ সারাদিন,সময় রাত্রি দশটা পর্যন্ত। অনাবিল খুশি আর সুন্দর মুহূর্তগুলো আজ ভাগ হয়ে যাক সবার সাথে।

যতই আমায় বদলাতে চাও
তবুও আমি আমার মত।
মুখে বলি অল্প কথা
বাকিটা একান্ত ব‍্যক্তিগত😊

সুখের মুখোশে ঢাকা মানুষ।
ঢাকে মেকআপে মুখ।
তবুও মনের কোটরে গভীর ক্ষত,
হয়ত সেটাই গোপন অসুখ।
সুখের চাবিকাঠি খুঁজতে গিয়ে,
হারিয়ে যায় খুব আপনজন।
শপিংমলে আর ফুডপ্লাজায়
নকল সুখ খোঁজে সবার মন।
সেলফোনে মগ্ন চোখটা তুলে,
আপনজনকে একটু কাছে রেখো।
সাথে থেকো ভালোবাসা দিয়ো,
বিপদে আপদে আগলে রেখো।

শিশুদিবস

ফেসবুকের স্ট্যাটাসে থ্রি কে লাইক আর কমেন্টের বর্ষা আজ যে চিলড্রেনস ডে। বেশ কয়েকশো বাচ্চার মাঝে অপলাদেবীর ছবি। মূল‍্যবান বক্তৃতা রাখলেন শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে,"ওরা বাঁচুক মাথা তুলে।" বাড়ি এসে শাড়িটা খুলে খুশিকে দেন," ইশ্ সারাদিন যে কত নোংরা লেগেছে শাড়িতে,যত্ন করে কাচবি কিন্তু।"
....মাথা নিচু করে ছোট্ট খুশি চলে যায়,গতবার ওকে নিয়ে এসেছেন পড়াশোনা শেখাবেন বলে। হঠাৎই বোনের ফোন আসে," দিদি খুশির মত কাউকে পেলি এবার?"

ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী

হাসিমুখে থাক শিশুরা,
বাঁচুক যত্নে কচি শৈশব।
বন্ধ হোক শিশুদের শ্রম,
মানুষ হোক ওরা সব।
হয়না যেন ওরা কোন
অত‍্যাচারের শিকার।
আজকে শিশুদিবসে,
এটাই হোক অঙ্গীকার।

আজ সকালে বুচকিপিসির খুশি ভারি মনটা
আজ বাড়ীতে আসছে দাদা, নিতে ভাইফোঁটা।
সকাল থেকে রান্নাঘরে চলছে, খুন্তির লড়াই
গনগনিয়ে জ্বলছে উনুন ,বসেছে বড় কড়াই।
বোচকাকাকা পিসিমনির একমাত্র দাদা
হাসিখুশি দিলদরিয়া মনটা ভীষণ সাদা।
ভক্তিভরে বুচকিপিসি ভাইকে দিলেন ফোঁটা
পেন্নাম করে যমের দোরে ছড়িয়ে দিলেন কাঁটা।
জলখাবারে বেশি নয় আয়োজন সামান‍্য
দুডজন লুচি, তরকারী,দশটি মিষ্টি আর পরমান্ন।
ঢেঁকুর তুলে বলেন কাকা আর দিসনে বোন
ঘন্টা তিনেক পরেই তো করবো মধ‍্যাহ্নভোজন।
থাক তবে গো দাদাভাই জিরিয়ে নাও দিকি
দুপুরের খাওয়ার এখনো তো আছে ঢের বাকি।
দুপুরের আয়োজনে পিশি রাখেননি ত্রুটি
সব মিলিয়ে পদ অনেক, প্রায় পঁচিশটি।
পাঁচ রকমের ভাজা আর তিনরকমের ডাল
পাবদা শর্ষে,ইলিশভাপা,পার্সে মাছের ঝাল।
আরও আছে রুই কালিয়া, ভেটকিপাতুরি
সাথে আছে মুড়ি ঘন্ট,ছোট মাছের চচ্চড়ি।
আরও আছে কষা করে রাঁধা কচি পাঁঠা,
তার সাথে দাদার ফেবারিট কুচো চিংড়ি বাটা।
ভাতের সাথে পোলাও আছে, আর আছে চাটনি
তবুও পিসির মনে হয় রান্না বেশি হয়নি।
"ও দাদা গো আরেকটু খাও,কিছুই তো খেলেনা
না রে বোন এখন আর পেটে বেশি সয়না।
পরিপাটি খেয়ে দাদা হাত বোলান পেটে
আহা আহা এমন খাবার রোজই যদি জোটে!
আবার শুরু হবে গিন্নীর কড়া শাসন
এটা খেয়োনা ,সেটা খেয়োনা ডাক্তারের বারণ।
আজকে তাই লাগামছাড়া কোন বারণ নয়
এমন খাদ‍্য আহা যদি প্রতিদিন হয়😊😊।
ওরে বোন দে তো দেখি চারটে হজমোলা
দই আর সন্দেশগুলো খাবো বিকেলবেলা😊।

          ভাই ফোঁটা কাটুক সুখে
          পেটপূজো আর মিষ্টিমুখে।
              
                রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...