Skip to main content

সব পেলে নষ্ট জীবন

#সব_ পেলে_ নষ্ট_ জীবন#

#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

এই শুনছো কাল পার্টিতে ইরাদিকে দেখলে ?
অফিসে যাবার তাড়ায় তাড়াহুড়ো করছে অয়ন চট করে আফটার শেভ লোশন লাগিয়ে রিমঝিমকে কাছে টেনে নেয় আদর করে । ইশ্ ছাড়ো ,কাল রাতের রোমান্স কি এখনো কাটেনি?
এই বলছো অফিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে। হোক দেরি, হেসে ফেলে অয়ন,আদরের জন‍্য দেরি হলেও আমি রাজি। নাহয় আজ একটু দেরিই হলো,বসের বকুনিই খেলাম।
  সবেই ওদের বিয়ে হয়েছে মাত্র ছয়মাস। অয়ন গ্ৰামের ছেলে, রিমঝিম শহরে মানুষ। গ্ৰামের জীবনযাত্রা এখন অনেকটা এগিয়ে এলেও মানসিকতা হয়ত শহরের মত অতটা এগিয়ে নয়। তবুও অয়ন খুব সাবলীল আর আধুনিকমনস্ক। সবাইকে নিয়ে সুন্দরভাবে চলতে পারে।
  রিমঝিমকে জড়িয়ে ধরে স‍্যান্ডউইচটা খেতে খেতে অয়ন বলে, "ইরাদির কথা কি বলছিলে যেন?"
  ....." শুনলে আর কোথায়? বলছিলাম যে ভদ্রমহিলা এখনও কি সুন্দর ওয়েল মেইনটেন্ড আর পজিটিভ। দেখে তো মনেই হয়না বয়স হয়েছে,খুব সুন্দর কথাও বলেন। কিন্তু সবাইকে দেখলাম ওনাকে নিয়ে কানাকানি করছে ব‍্যাপারটা কি গো?"
অনেক ব‍্যাপার গো সখি, তুমি আর এসব মাথায় ঢুকিয়োনা। ওকে আমি আসি এখন সন্ধ‍্যেবেলায় কথা হবে। সারাদিন একা একা কাটে রিমঝিমের, কাজের ফাঁকে একবার মা আর দিদির সাথে একটু আড্ডা মেরে নেয়। কালকের পার্টিটা সত‍্যি খুব মজাদার ছিলো এই প্রথম অয়নের কোন অফিস পার্টিতে গেলো রিমঝিম,অনেককেই চেনেনা। তবুও ওর বয়সী অনেকের সাথে আলাপ হয়ে যায়। কিন্তু সবচেয়ে ভালো লেগেছে ইরাদিকে , বয়সে বড় হলেও মনের দিক থেকে রিমঝিমের থেকেও ইয়ঙ্গ।
  বসে বসে কালকের ফ্রেন্ডদের কে ফ্রেন্ডলিষ্টে আ্যড করলো রিমঝিম। ইশ ইরাদির আইডিটা নেওয়া হয়নি তাহলে একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠানো যেতো। সার্চ করলো কিন্তু না পাওয়া গেলোনা।
অয়ন ফিরতেই কফি নিয়ে ব‍্যালকনিতে বসে রিমঝিম । কফি খাওয়ার ফাঁকে মোবাইলে নোটিফিকেশন গুলো দেখে অয়ন, আজ সারাদিন নেট অন করতেই পারেনি। "এই যে মশাই তাকাও এদিকে।" ---হুঁ দেখছি, বুঝেছি তোমার কৌতূহল না মেটালে আমাকে জ্বালাবে। একদম কাছে এসে বসে হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকো সেই প্রেম করার সময়ের মতো তাহলেই বলবো। " দুষ্টুমির হাসি হেসে স্ন‍্যাক্সটা মুখে পুরে কফিতে একটা চুমুক দিয়ে বলে অয়ন। ইরা ম‍্যাডাম আমাদের অফিসে খুব দায়িত্বশীল পদে আছেন। আমরা কেউ ওনাকে ম‍্যাডাম বলিনা দিদি বলি,সবার সব আবদার ওর কাছে। কিন্তু খুব বুদ্ধিমতী উনি, কাকে দিয়ে কিভাবে কোন কাজ হয় সব ওনার জানা। প্রয়োজনে কঠোরও হন সময়ে তবে খুব অল্প সময়ের জন‍্য। ভগবানের দেওয়া সব কিছুই ছিলো ওনার কাছে শুধু একটা সন্তান ছাড়া। যেমন সুন্দরী,তেমনই সুন্দর গান করেন, আবার নাটক ,নাচ সব কিছুতেই অফিসে ইরাদি। ভীষণ ভালো লেখেন, সমাজসেবাও করেন, ইরাদি মানে একঝলক দুরন্ত বসন্তের হাওয়া। প্রচুর আ্যডমায়ারার ছিলো , এখনও আছে ইরাদির, এই যেমন তুমিও। হেসে ফেলে রিমঝিম, "সত‍্যি উনি জাদু জানেন, আমার বিয়ের সময় ওনাকে দেখিনি তবে এখন তো আমি একদম ফ‍্যান হয়ে গেছি।
   জানো আমাদের ছোটবেলায় মা সবসময় বলতেন সংসারকে লক্ষ্মী জ্ঞানে দেখতে হয়। বেশি বারমুখো মন আর স্বাধীনতা না থাকাই ভালো। খুব রাগ হত মায়ের কথা শুনে, এ আবার কি!বাইরে দেখবোনা, স্বাধীন হবোনা ঘরকুনো হয়ে থাকবো নাকি? আরেকটু বড় হয়ে দিদি একদিন প্রতিবাদ করেছিলো মা সবসময় এমন বোলোনা তো, কি আবার বারমুখো মন শুনি?
  তখন মা বললেন বারমুখো মানে বাহির মুখো মন। তাহলে শোন আমার বাপের বাড়ীর পাড়ায় ছিলো ঐ এলাকার বিডিওর বাড়ী তখনকার দিনে নামী মানুষ ওনারা ঐ পাড়ায়। ওনার ছেলে মেয়েরা তখন বড় হয়েছে। বৌকেও অনেক স্বাধীনতা দিয়েছিলেন ভদ্রলোক,ভদ্রমহিলাকেও খুব সুন্দর দেখতে ছিলো। তবুও মানুষের অবাধ‍্য মন অত সুখ সইলোনা কপালে, একদিন বৌ পালালো পাড়ার জোয়ান দর্জির সাথে। লজ্জায় অপমানে ট্রান্সফার নিয়ে বিডিও সাহেব এলাকা ছাড়লেন।
   মন বড় অবাধ‍্য,তাই মা বলতেন জীবনে অল্পে খুশি থাকতে হয় নিজেকে ব‍্যস্ত রাখতে হয় ভালো কাজে। আশা বড় থাক স্বপ্ন বড় থাক কিন্তু তবুও মনকে বাঁধতে হয় নিয়মের বাধনে। তারপর মায়ের কাছে ঐ ভদ্রমহিলা মানে বিডিওর স্ত্রীর পরের পরিণতি শুনে মনটা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। ভদ্রমহিলা একসময়ে এসে দারিদ্র্যের প্রকোপে বাজারে সব্জি বিক্রী করতেন নিরুপায় হয়ে। তখন তার আগের রূপ জৌলুস কিছুই নেই । মেলাতে পারো রিমঝিম,মানুষের সব চাওয়া পূরণ করতে গিয়ে অনেক সময় জীবনটাই নষ্ট হয়ে যায় তখন আর তার পাশে কেউ থাকেনা গো। মায়ের বলা গল্পটা আমি আজও ভুলতে পারিনা।
-----"তুমি কি গো! বলতে শুরু করলে ইরাদির কথা আর ট্র‍্যাক চেঞ্জ করে কোথায় এলে ধ‍্যাৎ কোন মান্ধাতা আমলের গল্প শোনাচ্ছো।"
   ------"না না এটা একটা ঘটনা এমন ঘটনা কিছুটা অন‍্যভাবে আমাদের ইরাদির জীবনে ঘটেছিলো"
    ......"কি যে বলো এতো সুন্দর মানুষ ইরাদি, কই দেখে তো মনে হয়না ওনার কোন কষ্ট আছে?এত পজেটিভ মানুষ আমি কখনো দেখিনি।"
   ..... একদম ঠিক বলেছো, ঐ জন‍্যই তো ইরাদি সব নেগেটিভ চিন্তা, সমস্ত খারাপকে ছু মন্তরে বদলে ভালো থাকেন।"
.....কি হয়েছিলো গো?
ওদের সন্তান না থাকলেও বেশ সুখি দম্পতি ছিলেন ইরাদি আর চন্দনদা। চন্দনদা মুম্বই এর নামী হোটেলে ম‍্যানেজমেন্ট গ্ৰুপে ছিলেন আর ইরাদি কলকাতায়। চন্দনদাও মাঝে মধ‍্যেই আসতেন আবার ইরাদিও চলে যেতেন ছুটি পেলেই। এই সবই শুনেছি মধুর কাছে ,সম্পর্কে মধু ইরাদির বোন আর আমাদের বন্ধু।
কিন্তু সেই এক পুরনো কথা যেখানে সুখের শেষ থাকেনা সেখানেই অসুখ শুরু হয়। ইরাদির সৌন্দর্য ,গুণ,ব‍্যক্তিত্ব সবই খুব বেশি আর সেখানেই চন্দনদার ইগো কমপ্লেক্স, হয়ত বা কিছুটা ইনফিরিওরিটি কমপ্লেক্স।ওদের মাঝে একটা সন্তান থাকলে হয়তো এতটা হোতনা।

সমস‍্যা বাড়লো চন্দনদা যখন কলকাতায় ওবেরয় গ্ৰুপে জয়েন করলেন। যখন দুজনে দূরে দূরে থাকতেন সব ঠিক ঠাক ছিলো। ইরাদির বহুমুখী প্রতিভা,সমাজসেবা ,সবজায়গায় জনপ্রিয়তা অসহ‍্য লাগতো চন্দনদার। ফেসবুক, ট‍্যুইটারে অসংখ‍্য ফলোয়ার্স এই নিয়ে খুব অশান্তি করতো চন্দনদা । প্রায়দিনই মাঝরাতে প্রচুর ড্রিঙ্ক করে বাড়ী ফিরতো। ঘর বাঁচাতে ইরাদি সব ছেড়ে দিয়েছিলো ,স‍্যোশাল ওয়ার্ক,স‍্যোশাল নেটওয়ার্ক সব কিছুই থেকে সরে এলেন। এসব করে যদি চন্দনদাকে শান্ত করা যায় ,সংসারটা বাঁচে। কিন্তু হলোনা কিছু লাভ, চন্দনদাও ইতিমধ‍্যে ইরাদিকে টেক্কা দেবার জন‍্য ফেসবুকে ফলোয়ার্স বাড়িয়েছেন। ইরাদি চন্দনদার অপেক্ষায় সব কাজকর্ম ছেড়ে বাড়ীতে বসে থাকলেও চন্দনদার প্রায়ই দেরী হত বাড়ী আসতে। আর ফিরলেও স্বাভাবিক ভাবে ফিরতেন না।
     ইরাদি চন্দনদাকে জোর করলেন না স্পেশ দিলেন। নিজেও ফিরলেন আবার পুরনো জগতে, তার ভালো থাকার জগতে। কিন্তু যেদিন চন্দনদাকে আবিষ্কার করলেন একটা কমবয়সী মেয়ের সাথে বাড়ীর বেডরুমে নিজেকে সামলাতে পারেননি ইরাদি সেদিনই বাড়ী ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। কয়েকদিন অফিসের রেষ্ট হাউসে থেকে চলে এলেন একটা ওয়ান রুম ফ্ল্যাটে। নিজেকে ভালো রাখতে আরও বেশি ব‍্যস্ত থাকলেন কাজে। মনের ভাঙন বাইরের কেউ বুঝলোনা। বরং আরও বেশি পজেটিভ ইরাদিকে দেখে মহিলা মহলে সমালোচনার ঝড় উঠলো। নিশ্চয় ইরাদির কোন এক্সট্রা ম‍্যারিটাল রিলেশন আছে নাহলে কিছুতেই এতো ফুলপরী হয়ে ঘুরে বেড়াতে পারেনা। ....."দেখেছো দিন দিন যেন আরও সুন্দরী হচ্ছে, সব লেটেস্ট ডিজাইনার পোশাক পরে। কথায় কথায় হাজবেন্ডরা ওনার কথা বলেন। ঘর জ্বালানি পর ভোলানি মেয়েমানুষ, অসহ‍্য লাগে। সারাদিন বোধহয় শুধু রূপচর্চাই করে।"....."তা আর দেখছিনা,নিজের বরের মাথা চিবিয়ে খেয়ে এখন অন‍্যদের মাথা খাচ্ছে।"এমন আলোচনায় সরগরম হয়ে থাকতো মহিলামহল।
      এর মাঝেই ডিভোর্স হয়ে যায় ওদের,চন্দনদা কলকাতার সমস্ত পাট চুকিয়ে, এমন কি বাড়ীটাও বিক্রী করে মুম্বাই চলে যান। এত বড় ভাঙনের একটুও শব্দ হতে দেননি মিসেস দত্ত মানে ইরাদি।
    কিন্তু জানো রিমঝিম ইরাদির মত মানুষ কখনও কারো হাত ছেড়ে দেয়না বিপদে। তাই বোধহয় চন্দনদার অবস্থা ওই বিডিও সাহেবের বৌ এর মত হয়নি।।
   চন্দনদার সাথে আর কোন যোগাযোগ রাখেনি ইরাদি। নিজে ভালো থাকার মন্ত্রটা যে খুব ভালো করে আয়ত্ত করেছিলো দিদি। নির্ভরশীলতা জীবনে অনেক দুঃখ আনে,বেশিরভাগ মানুষ অতীত নিয়ে বাঁচে। অতীতে তার সাথে কি খারাপ হয়েছে এই ভেবেই কেটে যায় জীবন,বর্তমানের সুখগুলো ভোগ করা হয়না। প্রতি মূহুর্ত সুন্দর করে বাঁচতে চাইতেন দিদি। তাই হয়তো আর পেছনের দিকে তাকাননি আর ভবিষ‍্যত নিয়েও বেশি ভাবেননি।
    মাঝে কেটে গেছে তিনটে বছর ,একদিন হঠাৎ মাঝরাতে একটা ফোন আসে ইরাদির কাছে চন্দনদার সেরিব্র‍্যাল স্ট্রোক হয়েছে। ইরাদি কিছুতেই থাকতে পারেননা, চরম বিপদের দিনে দাঁড়ান গিয়ে চন্দনদার পাশে। জানতে পারেন চন্দনদার নতুন বৌ চন্দনদাকে সর্বস্বান্ত করে, এমনকি মুম্বইএর ফ্ল্যাটটাও নিজের নামে করে গলাধাক্কা দিয়েছে। মেয়েটির অনেক পুরুষসঙ্গী ছিলো,চন্দনদা ছিলো ওর তুরুপের তাস। বন্ধুদের নিয়ে মজলিশ বসাতো ফ্ল্যাটে। চন্দনদা এইভাবেই কুকর্মের প্রতিদান পেলো। অফিসের পরিচিত কোলিগদের কাছেই সব খবর পেলেন ইরাদি। ওরাই খবর দিয়েছিলো।
প্রাণে বেঁচে গেলেও প‍্যারালাইজড হয়ে গেলো চন্দনদা। ইরাদি চন্দনদাকে নিয়ে কলকাতায় এসেছেন। অদৃশ‍্য প্রাচীরটাকে কিন্তু মুছে দেয়নি ইরাদি, চন্দনদার পাশে দাঁড়ালেন সাহায‍্যের হাত বাড়িয়ে দিলেন বন্ধু হয়ে। একই কমপ্লেক্সে আলাদা ফ্ল্যাটে ওরা থাকে। কিন্তু কোনরকম যত্নের যাতে ত্রুটি না হয় সেদিকে সবসময় নজর রাখে দিদি। এইটুকু হয়তো চন্দনদার প্রাপ‍্য ছিলো। চন্দনদা ভালো করে কথাও বলতে পারেনা জিভটা জড়িয়ে যায়। শুধু অসহায় দুচোখে কৃতজ্ঞতা ছড়িয়ে পড়ে।এখনও এত কিছু সামলেও দিদি তেমনই সুন্দর আর পজেটিভ।
   আমি সেদিন বলছিলাম তুমি কি ভালো গো দিদি! ইরাদি কি বললো জানো," তোমরা ভালো না মন্দ কি ভাবো জানিনা তবে আমি খুব স্বার্থপর জানো তো , নিজের ভালো থাকার স্পেশে কাউকে আ্যলাউ করিনা।  মানে...'আমাকে আমার মত থাকতে দাও,আমি নিজেকে নিজের মত গুছিয়ে নিয়েছি,' "বলেই হেসে ফেললেন একটা সুন্দর মিষ্টি হাসি।
  তাই রিমঝিম সুন্দরী জীবনের ছোট ভালোলাগা গুলো নিয়ে প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্ব করে খোশমেজাজে বাঁচো। কে তোমাকে আনফ্রেন্ড করলো, কে তোমার ছবি লাইক করলোনা। কে তোমার মেসেজের রিপ্লাই দিলোনা। জীবন এইটুকুই নয় সোনা। ভালো থাকো, নিজেকে গুছিয়ে রাখো নিজের মত করে। নিজের ভালোলাগা গুলোকে বাঁচিয়ে রেখো।
  অবাক হয়ে অয়নকে দেখে রিমঝিম। কি সুন্দর কথা বলে অয়ন! হেসে ফেলে অয়ন রিমঝিমকে কাছে টেনে বলে,"সব পেলে নষ্ট জীবন বুঝেছো সখি, একটু ছোট্ট ছোট্ট না পাওয়া জীবনের পাওয়া গুলোকে অনেক বেশি সুন্দর করে তোলে । জীবনে যদি দুঃখ , অভাব আর না পাওয়া নাই থাকলো তাহলে পাওয়ার আনন্দটা কি করে উপভোগ করবে শুনি?

সমাপ্ত-
     

 

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...