Skip to main content

ছোট্ট প্রতিবাদ

#ছোট্ট_প্রতিবাদ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

এই কিট্টু শিগ্গিরি হাতটা ধর, দে দে ওয়াটার বট্ল টা আমায়। এই তোরাও আয়,ট্রেন আসছে। আগের ট্রেনটা আসেনি, এটাতে বেশ ভীড় হবে মনে হচ্ছে। যেই গেটটা ফাঁকা পাবি উঠে পড়িস।

রবীন্দ্রসদন থেকে হৈ হৈ করে বাচ্ছাগুলোর হাত ধরে তাড়াহুড়ো করে মেট্রোতে উঠে পরে তনুকা, নন্দিতা , ঝিমলি, মলি আর রিনি। বাচ্ছাগুলোকে টেনে তুলে নেয় ট্রেনে।
    ...."কি ব‍্যাপার বলুনতো ভেতরটা তো বেশ ফাঁকা গেটের মুখটা এইভাবে আটকে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?.…একটু সরে দাঁড়ান ভেতরে যেতে দিন"। এভাবেই প্রতিদিন বাচ্ছাগুলোকে নিয়ে যাওয়া আসা করতে হয় ওদের। কখনো ধাক্বা মেরে, কখনো বা মুখঝামটা দিয়ে ওঠে ওরা ট্রেনে।
      গেটের কাছে ওরা দাঁড়িয়ে আছে বাচ্ছাগুলোকে আগলে, এত ভীড় খুব একটা ভেতরে ঢুকতে পারেনা। পেছন থেকে নানারকম গুঁতো খেয়েও সোজা হয়ে দাড়ানোর চেষ্টা করে ঝিমলি আগলে রাখে টিনটিনকে। নিজেতো প্রতিদিনই গুডটাচ আর ব‍্যাডটাচ কতরকম যে টাচ্ পাচ্ছে ঠিক নেই।কখনো বা রুখে দাঁড়ায়, কখনো ভীড়ের মধ‍্যে কে যে অসভ‍্যতা করে তাকে আইডেন্টিফাই করতেই পারেনা। কিন্তু মেয়েটাকে তো আগলে রাখতে হবে।
      হঠাৎ করে একটা কমবয়সী মেয়ের চিৎকারে চমকে ওঠে ওরা। অনেকক্ষণ ধরেই মনে হচ্ছিল ভীড়ের মধ‍্যে কে যেন ঠেলাঠেলি করছে। বারবার পেছন ফিরে দেখছিলো ঝিমলি, দেখছে এক বোরখা পড়া মহিলাকে। ভদ্রমহিলার উদ্দেশ‍্য কি শুধুই ঠ‍্যালা মারা না অন‍্য কিছু। ওই মেয়েটির চিৎকারে পরিস্কার হয় ব‍্যাপারটা, উনি নাকি পকেটমার প্রতিদিনের কাজ মেট্রোতে হাতসাফাই। মেয়েটি ওনাকে চিনতে পেরে চ‍্যাঁচাচ্ছে। সত‍্যি কি যে যুগ পড়লো! কোথাও এক ফোটা শান্তি নেই। মেট্রোতেও পিকপকেট।
       অন‍্যদিন বেশ গল্প করতে করতে আসে ওরা সবাই। কখনো বেড়ানোর গল্প, কখনো বা শপিংয়ের। ভালোই লাগে, তার মধ‍্যে পি এন পিসি ও থাকে অনেকটাই,কখনো বা শাশুড়ির অথবা ননদের।
       ধ‍্যাৎ christmas এর আগে এটাই লাস্ট মিট একটুও কথা হলোনা। ভীড় সামলাবে না গল্প করবে। হঠাৎই কিট্টুর একটা তীক্ষ্ম চিৎকার শোনা গেলো। মায়েরা ব‍্যস্ত হয়ে ওঠে ,"কি হয়েছে মাম্মা?"..."কি হয়েছে কিট্টু"?।
.....কিট্টুর জোড়ালো গলা ছড়িয়ে পরে চারিদিকে "ওই লোকটা দুষ্টু, আমি দেখেছি ভীড়ের মধ‍্যে মা কে ব‍্যাড টাচ্ করছে। আমি শু দিয়ে ওর পা মাড়িয়ে দিয়েছি। বাজে লোক, ওরা ভালোনা।"
.......তনিমা বুঝতে পারছিলো পেছন থেকে কে যেন একটা ঠেলছে কিন্তু মেয়েকে সামলাতে গিয়ে নজর করতে পারছিলোনা। ভীড়ে ঘাড় ঘোরানোই মুস্কিল। একসাথে অনেকেই দেখতে চায় লোকটাকে। কিন্তু ততক্ষণে বেপাত্তা হয়ে গেছে লোকটা।
.....ফিসফিস করে অনেকেই বলে বাচ্ছাগুলোও কি তৈরি হয়েছে দেখেছো। না হয়েই বা যাবে কোথায়। যা দিনকাল পরেছে!
...নিশ্চিন্ত হয় তনিমা, কিট্টুরা এখন অনেক সচেতন ওরা নিজেদের সাথে সাথে মাকেও পাহাড়া দিতে শিখেছে। হয়ত সমাজই শিখিয়েছে।
           বন্ধুদের সাথে রোজকার মত ট্রেনে উঠেছিল সবুজ ওর বন্ধুদের সাথে। ফুলের মত বাচ্ছাগুলোর হৈচৈ শুনলে ওর ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায়। পুরো ঘটনাটাই আজ ঘটলো ওদের চোখের সামনে। এগিয়ে আসে তনিমাদের কাছে," এক্সকিউজ মি, দিদি ওখানে অনেকগুলো জায়গা আছে আমার বন্ধুরা বসে আছে, তোমরা ওদের নিয়ে এসো ওদেরকে বসিয়ে দাও।"
       সবুজের নিষ্পাপ মুখখানা দেখে খুব ভরসা করতে ইচ্ছে করে তনিমাদের। সত‍্যিই তো বাচ্ছাগুলোকে বোঝাতে হবে সব আঙ্কেলই দুষ্টু আঙ্কেল নয়, আর সব টাচই ব‍্যাড টাচ্ নয়। আর তো কোন ভয় নেই ওদের, কখন যে বাচ্ছাগুলো  ছোট্ট ছোট্ট প্রতিবাদী দুর্গা হয়ে গেছে বুঝতে পারেনি ওরা। সমাজকে সংশোধন করবে ওরাই। সবুজের মত মানুষের সংখ‍্যাই হয়তো পৃথিবীতে বেশি।তাই বোধহয় পৃথিবীটা এখনো এত সুন্দর।

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...