Skip to main content

#পোড়ানো_ভালবাসা#

#পোড়ানো_ভালবাসা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"দেখ দেখ মেয়েটা কিভাবে দৌড়োচ্ছে, আশ্চর্য তো! দেখছেনা ট্রেনটা ছেড়ে দিয়েছে। কি এমন তাড়া থাকে এই পাবলিকদের বুঝিনা!"
           বলতে বলতে দেখে ওদের কামরার হ‍্যান্ডেলটা ধরার চেষ্টা করছে মেয়েটা। অনেকটা ঝুঁকে হাতটা বাড়িয়ে দেয় আখতার, মুঠোতে ধরে ফেলে হাতটা। প্রাণপণ শক্তি দিয়ে একঝটকায় তুলে নেয় মেয়েটাকে।
       হৈ হৈ করে ওঠে ওর বন্ধুরা,হাঁপাতে থাকে মেয়েটা। যারা এতক্ষণ দেখছিলো তারা অনেকেই বকুনি দিলো মেয়েটাকে।
     ওকে হাঁপাতে দেখে জলের বোতলটা এগিয়ে দেয় আখতার। একটু জল খেয়ে যেন নিশ্বাস ফেলে। ভাগ‍্যিস আজ ভীড়টা একটু কম ছিলো।
          মেয়েটার মুখটার প্রায় অনেকটাই ওড়না দিয়ে ঢাকা। চোখে ক‍্যাটস আই ফ্রেমের চশমা, চশমার আড়ালে ঢাকা চোখদুটো যেন এক গভীর আত্মবিশ্বাসে উজ্জ্বল।
               "অনেক ধন‍্যবাদ আপনাকে, আপনি না সাহায‍্য করলে হয়ত ট্রেনটা পেতামনা। আপনিও অনেকটা ঝুঁকি নিয়েছিলেন। বিপদ হতে পারতো।"
......"আপনাদের এত তাড়া কিসের বলুন তো? যদি তাড়াই থাকে তাহলে একটু আগে বেরোতে তো পারেন।"
          চুপ করে যায় সীমা, অফিসের চাকরিটা একদম নতুন। যদিও একটু দূরে তবুও চাকরিটা নিয়েছে। সব মেয়েদেরই দরকার নিজের পায়ে দাঁড়ানো আর ওকে তো দাঁড়াতেই হবে। শুধু বলে," আজ রাস্তা জ‍্যামের জন‍্য স্টেশনে পৌঁছতে একটু দেরী হয়ে গেছে।"
                 একটা জায়গা পেয়ে বসে পড়ে সীমা, বুকটা টিপটিপ করতে থাকে। আজ সত‍্যিই একটা বিপদ হতে পারতো।
       আখতারের মনে একটা ঝাকুনি লেগেছে। মেয়েটার নরম হাতটা এখনো যেন মুঠোয় লেগে আছে। আর বুকের কাছে টেনে তোলা শরীরের নরম মিষ্টি স্পর্শটা যেন এখনো ছুঁয়ে আছে মন।

বন্ধুরা হাসাহাসি করে," কিরে একদম সিনেমার শ‍্যুটিং দেখলাম যেন। সাবাশ রিয়েল হিরো।"
লজ্জা পায় আখতার, মেয়েটির নরম শরীরের মাদকতা মনকে ভরিয়ে রাখে ওকে। থরথর করে কাঁপছিলো মেয়েটা। এত কাছে থেকে কারো নির্ভরতার আত্মসমর্পণ জড়িয়ে থাকে ওকে।

   আখতার একটা বেসরকারী অফিসে কাজ করে। ওরা একদল বন্ধু মিলে ট্রেনে ওঠে। হৈ হৈ করতে করতে পৌঁছে যায় গন্তব‍্যে।
         স্টেশন আসতেই তাড়াতাড়ি নেমে পড়ে ছুট লাগায়,ভীড়ে মিশে যায়। সীমাদের প্রত‍্যেকদিনের লড়াই এভাবেই চলতে থাকে।
       আখতারের মন ছুঁয়ে চলে যায় সীমা। মা বাবা মরা চালচুলোহীন আখতার,ফুফুর কাছে মানুষ। পড়াশোনায় ভালো ছিলো কিন্তু আর্থিক স্বচ্ছলতার অভাবে ইচ্ছেমত এগিয়ে যেতে পারেনি। তবুও চাকরিটা মোটামুটি ভালোই করে।
     হাতে লেগে থাকে একটা মিষ্টি গন্ধ। খুব মিঠে গন্ধটা! এতক্ষণে বুঝতে পারে ওটা আতর না চন্দনের গন্ধ। আজ হাতটা যেন ধুতেও ইচ্ছে করেনা ওর। ভালোলাগে মনে মনে কাউকে সাহায‍্য করতে পেরছে বলে।
      আজকাল সকাল আটটার ট্রেনটা নৈহাটি স্টেশনে পৌঁছলেই আখতারের মুগ্ধ চোখ কাউকে যেন খুঁজে বেড়ায়। কোনদিন ভীড়ের জন‍্য কিছুই দেখতে পায়না। আজকাল বন্ধুরাও হাসাহাসি করে," কি মজনু লায়লাকে দেখার জন‍্য প্রতিদিন দরজা দিয়ে মুখ বাড়াস? আর আসবেনা চান্স গুরু আ্যক্সিডেন্ট রেয়ার হয়। বসে পড় খালি হয়েছে।"
       একবারটি খুব দেখতে ইচ্ছে করে মেয়েটাকে। ওর ঢাকামুখের সুন্দর গভীর আত্মবিশ্বাসী চোখদুটো হাতছানি দেয় আখতারকে। কিন্তু বৃথা চেষ্টা।
         তবুও দুর্ঘটনা আবার ঘটলো, সেদিন অপ্রত‍্যাশিত ভাবেই সীমা আবার উঠে এলো আখতারের কামরায়। যখন প্রায় হাল ছেড়ে দিয়েছিলো ও তখনই আবার দেখা। দূরে দাঁড়িয়েছিলো সীমা, আখতার ছিলো গল্পে মগ্ন বন্ধুদের সাথে হঠাৎই চোখ পরে যায়। পাশে বসে থাকা মাণিককে বলে , " আবার দেখা হয়ে গেলো রে। মন থেকে কিছু চাইলেই বোধহয় পাওয়া যায়। তোরা যায়গাটা রাখ আমি আসছি।"
             এগিয়ে যায় আখতার ভীড় সরিয়ে একদম সীমার সামনে, আজ বড় সুন্দর লাগছে মেয়েটাকে গোলাপী ওড়নায় মুখটা ঢাকা। আকর্ষণীয় লাগে চশমার আড়ালে কাজল কালো চোখদুটো।
........"চিনতে পারছেন?"
....."কেন চিনতে পারবোনা, সেদিন আপনিই তো আমাকে সাহায‍্য করেছিলেন।"
ভীড়ে একটু অস্বস্তি হয় সীমার, আশ্চর্য লোক তো!
  ...."ওখানে একটা জায়গা আছে। বসতে পারেন।"
......" আমি এখানেই ঠিক আছি, আপনি বসুন ওখানে। আমার মত অনেকেই দাঁড়িয়ে আছে, শুধু শুধু আপনার সীটে বসে আনডিউ আ্যডভান্টেজ নেবো কেন?" একটু কড়া হয়েই কথাগুলো বলে সীমা।
   নিজের সীটে এসে বসে পড়ে আখতার। বন্ধুরা খোঁচা মারে, হাসে। মুখটা ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে সীমা। অপমানিত লাগে আখতারের, ভীষণ অসভ‍্য মেয়ে তো। একটু ভদ্রতাও জানেনা। যেচে উপকার করতে গেলে এমনি হয়। মাণিক বলে," এই যে মজনু হলো তো। এখনকার মেয়েগুলো এমনিই।"
             তবুও যেন মেয়েটাকে খুব খারাপ ভাবতে মন চায়না। সত‍্যিই তো একজন অপরিচিত ছেলের সাথে কেনই বা যেচে এত কথা বলবে? না মেয়েটা সত‍্যিই ভদ্র।

              তবুও ট্রেনের যাতায়াতের পথে আজকাল প্রায়ই দেখা হয়ে যায় আখতার আর সীমার। হয়ত অনুসন্ধানী চোখদুটো প্রায়ই খুঁজে বার করে সীমাকে।আখতার ওঠে কাঁচড়াপাড়া থেকে সীমা ওঠে নৈহাটি থেকে, দুজনেই উল্টোডাঙায় নামে।
       যদিও একদিন উল্টোডাঙায় সীমার সাথে পরিচয় করতে গিয়ে সীমা বেশ খারাপ ভাবেই কথা বলেছিলো...."আচ্ছা আপনি কি আমায় ফলো করেন? এত কথায় কি দরকার আপনার?"
       সীমা যেন অদ্ভুত উন্নাসিক, বেশি কথাই বলতে চায়না।  এড়িয়ে যেতে চায় আখতারকে
বেশি কিছু জানতে চাইলে বলে,"আপনি আমার উপকার করেছেন ঠিকই কিন্তু তাই বলে বেশি কৌতূহল আমার ভালো লাগেনা। সব ছেলেরা যে কেন এমন গায়ে পরা হয় বুঝিনা,অসহ‍্য লাগে।"
         ধাক্কা খেয়েছিলো আখতার তবুও এর মাঝেই নাম আর টুকরো কিছু কথা জেনেছিলো সীমার। বিশেষ কিছু বলেনি সীমা,আর বলার মত কিই বা আছে?
          বিধবা মায়ের একমাত্র মেয়ে সীমা। নিজেদের একটা বাড়ী ছাড়া ওদের তেমন কিছুই নেই। অনেক কষ্ট করে ওকে বড় করেছেন মা। খুব সাহসী আর স্পষ্টবক্তা ওরা মা মেয়ে দুজনেই। ছোট থেকে অনেক প্রতিকূলতার মধ‍্যে বড় হয়েছে, কারো সাহায‍্য পায়নি। পড়াশুনাতে যথেষ্ট ভালো ছিলো তার সাথে ভালো আবৃত্তিও করতো জোড়ালো গলায়। অনেকেই সহ‍্য করতে পারতো না। প্রতিবাদী আর প্রতিভাসম্পন্ন সীমাকে অনেকেই সহ‍্য করতে পারতো না। তবু ওরা মা আর মেয়ে বেঁচে থাকে প্রতিনিয়ত লড়াই করে। নিজের অস্তিত্ব রক্ষা যে করতেই হবে ওকে , মা কে দেখতে হবে।তাই প্রতিদিন জীবিকার প্রয়োজনে আসতে হয় রোজ কলকাতায়।
             আশ্চর্য লাগে আখতারের, মেয়েটা এক অদ্ভুত বেড়াজাল তৈরি করে রেখেছে নিজের চারপাশে। ইচ্ছে থাকলেও কিছুতেই পৌঁছনো যায়না ওর কাছাকাছি, কিন্তু যেদিন দেখা হয় মনটা যেন ভালো হয়ে যায়। ওই মিষ্টি গন্ধটা মনকে ছুঁয়ে থাকে, চন্দনের গন্ধ। ওকি সত‍্যি প্রেমে পড়ে গেছে মেয়েটার?
          বিরক্ত লাগে সীমার, ছেলেটাকে খারাপ লাগেনা কিন্তু প্রায়দিনই যেন সীমার অপেক্ষায় থাকে। গায়ে পরে কথা বলে, মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে ওর চোখের দিকে। ছেলেদের কি মেয়ে দেখলেই প্রেম প্রেম পায়। ঘেন্না ধরে গেছে।
            কেটে গেছে এভাবেই কয়েকটা মাস। সেদিন অনেকটা সাহস নিয়ে আখতার বলে,"এই স্টেশনে একদম ভালো করে কথা হয়না। একটু আলাদা করে কথা বলার ইচ্ছে আপনার সাথে, যদি একদিন একটু সময় দিতে পারেন।"
            সীমা নিরাশ করেনা আখতারকে শনিবার ঠিক বিকেল চারটেয় আখতারকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের বাগানে আসতে বলে। খুব প্রিয় যায়গা এটা সীমার, একসময় রাহুলের সাথে মাঝে মাঝেই আসতো। উজাড় করে বলতো মনের ভালবাসার কথা। কখনো কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকা রাহুলকে কবিতা শোনাতো। সবার অলক্ষ‍্যে ছুঁয়ে যেতো দুটো তৃষ্ণার্ত ঠোঁট,হারিয়ে যেতো ভালবাসায়। কত কি স্মৃতি ভীড় করে আসে মনে কিন্তু সবটাই অতীত।
                শনিবার আখতার ভিক্টোরিয়ায় আসে ঠিক সেই যায়গাটাই যেখানে সীমা আসতে বলেছিলো। হাল্কা একটা খুশি ছুঁয়ে আছে মনকে, একটু টেনশনেও আছে,সব কথা গুছিয়ে বলতে পারবে তো।
         সীমা পেছন ফিরে বসে আছে আজ ওর পরনে একটা লাল চুড়িদার। চুলটা লম্বা বিনুনী করে ঝুলছে। মুগ্ধ হয় আখতার, চারিদিকে সবুজের সমারোহে সীমাকে দেখে।
       সীমার টুকরো কথায় মন ছুঁয়ে যায় আখতারের। বড্ড আনমনা লাগে আজ সীমাকে, তবে আজ আর কাটা কাটা কথাগুলো বলছেনা সীমা। একটু সাহস করে আখতার বলে," আচ্ছা আমাদের দুজনের ষ্টেশনটা যদি এক হত , দুজনে যদি একসাথে প্রতিদিন ট্রেন ধরতাম তাহলে খুব ভালো হত। আমি উত্তরের অপেক্ষায় থাকবো। কোন তাড়া নেই। আমি জানি আমাদের মধ‍্যে একটা ধর্মীয় প্রাচীর আছে, তবুও যদি একবার----" বলতে বলতে আবেগে ভেসে যায় আখতার, হয়ত আরও কিছু বলতো কিন্তু আর বলতে পারেনা......
      মুখের ওপর থেকে লাল ওড়নাটা সরিয়ে দিয়েছে সীমা চোখ বন্ধ করে ফেলে আখতার....উঃ কি বিভৎস! সীমার মুখের নীচের অংশ থেকে গলা  অবধি ঝলসানো। সহ‍্য করতে পারেনা আখতার। চিৎকার করে ওঠে,"মুখটা ঢাকুন আপনি, আমি আর সহ‍্য করতে পারছিনা।"

     মুখটা ঢেকে একটু হাসে সীমা, দুঃখের নয়, আত্মতৃপ্তির হাসি। আখতারের নিভে যাওয়া নীচু করা মুখটার দিকে তাকিয়ে বলে," আপনি আজ আসুন। বাড়ীর পথটুকু আমি একাই চলে যেতে পারবো। আজকাল আর ভয় লাগেনা। কেউ আমার শরীরটা দেখে বিরক্ত করলে ওড়নাটা সরিয়ে দিই একবার, আর কিছু লাগেনা। আমাদের বাড়ীটা দখল করতে চেয়েছিলো কিছু লোক। আমরা রুখে দাঁড়ানোতে অনেক চেষ্টা করেও কিছু না করতে পেরে কাপুরুষ গুলো চিরতরে পুড়িয়ে বিভৎস করে দিয়েছিলো আমার কুড়ি বছরের তরতাজা প্রতিবাদী মুখটা আজ থেকে পাঁচবছর আগে। বিচার তেমন কিছু হয়নি, আসলে আমি তো কাউকে চিনতেই পারিনি। দেখার মত অবস্থাতেই ছিলাম না,অসহ‍্য যন্ত্রণায়। অনেকদিন ভালো করে কথা বলতে পারিনি। একটার পর একটা প্লাস্টিক সার্জারি করেও কিছু হয়নি। সামর্থ ছিলোনা আরও বেশি কিছু করার।
          মুখটা আমি ঢাকিনা ,প্রকাশ‍্যে খুলে বেড়াই, সমাজকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চাই ওই নপুংশক কাপুরুষদের মহান কীর্তির সাক্ষী আমি। সমাজ যাদের এখনো প্রশ্রয় দিচ্ছে। শুধু কলকাতা আসার সময় মুখটা ঢেকে আসি। ট্রেনের বাচ্চাগুলোকে কাঁদতে দেখে ভালো লাগেনা।
      কি হলো আপনি এখনো যাননি, যান আপনি চলে যান। আমরা মা আর মেয়ে বেশ আছি। প্রতিদিন চন্দনের সুগন্ধের চিতায় নিজেকে পুড়িয়ে আমি খাঁটি সোনা করে ফেলেছি।"
            মাথা নীচু করে চলে যায় আখতার। সীমার খুব মনে হয় এমনভাবেই একদিন রাহুল ওর পোড়া মুখটা দেখে শিউড়ে উঠে চিরদিনের মত চলে গিয়েছিলো ওর জীবন থেকে। হাসি পায় সীমার, আজকাল বড় করুণা হয় সমাজের এই কলঙ্কগুলোর জন‍্য।
             মাথাটা ঝিমঝিম করে আখতারের,সেদিন কোনরকমে টলতে টলতে বাড়ী ফিরে আসে। সীমার মুখটা মেলাতে পারেনা, ওড়নায় ঢাকা মুখটার সাথে। কত স্বপ্নের ছোঁয়া ছিলো ওই চোখদুটোতে। আখতারের মন হারিয়ে গিয়েছিলো ওই চোখদুটোতে। কি নিষ্ঠুর সমাজ! কি বিকৃত মানসিকতা! ছিঃ ছিঃ একটা ফুলের মত মেয়েকে পুড়িয়ে এরা কি প্রমাণ করতে চায়? প্রতিবাদকে কি এইভাবে গলা টিপে মারা যায়? হায় আল্লা এ কেমন বিচার!

   সীমার খারাপ লাগেনা একটুও, আজ আরো একবার নিজেকে ভীষণ ভালবাসতে ইচ্ছে করে। বাঁচতে ইচ্ছে করে নিজের মত করে। ওকে যে বাঁচতেই হবে মাথা উঁচু করে, মাকে দেখতে হবে। মা ওর বন্ধুর মত, মাকে সব কথাই বলে। এই কথাটাও বললো। মা শুধু বললেন,"তোর পোড়ানো মুখের আগুনে পরখ করে নিস ভালোবাসাটা সত‍্যি কিনা। তোর সুখেই আমার সুখ,সমাজকে পরোয়া করিনা।"
              সপ্তাহ কেটে যায় সীমার সাথে আখতারের আর দেখা হয়না। লাল, নীল,গোলাপী ওড়নার সাথে ভাব করে বেশ আছে সীমা। সেদিন একটু অফিস থেকে বেরোতে দেরী হয়ে যায় সীমার। ইশ চোখের সামনে দিয়ে ট্রেনটা বেড়িয়ে যায়। সন্ধ‍্যে নেমেছে,হঠাৎই পেছন থেকে একটা ডাকে ঘুরে তাকায় সীমা, স্টেশনের আলোয় দেখে আখতারকে। মুখটা ফিরিয়ে এগিয়ে যায় সীমা।
......."একটু দাঁড়ান প্লিজ চলে যাবেন না। আমার কিছু বলার আছে।"
....."প্লিজ সস্তার সহানুভূতি জানাতে আসবেন না। আমার দেরী হয়ে যাচ্ছে।"
......." যদি বলি ওই পোড়ানো মুখের সুগন্ধী ভালবাসায় চন্দনের গন্ধ মেখে সারা জীবন আপনার পাশে থাকতে চাই। কোন সহানুভূতি নেই শুধু আছে শ্রদ্ধা, এক প্রতিবাদী মেয়ের প্রতি।"
......"সাময়িক আবেগে সারাজীবনের সিদ্ধান্ত নেবেন না। ট্রেন আসছে আমি আসি।"
      একই কামরায় উঠেছিলো ওরা, সীমা কোন কথা বলেনি। আখতার ভেসে যাচ্ছিলো সীমার পোড়ানো চন্দনের সুবাসে।
       সীমা সময় নিয়েছিলো কিন্তু পারেনি ভালবাসার জোয়ারকে আটকে রাখতে। কাছাকাছি এসেছিলো ওরা ,ভালবাসা বেঁধেছিলো ওদের। সীমার শরীরের সৌরভে ভেসে গিয়েছিলো আখতার, চন্দনের সুগন্ধে মাখানো সীমার পোড়ানো মুখটা তৃপ্ত হয়েছিলো আখতারের আদর ভালবাসায় আর যত্নে। বেঁচে থাক ভালবাসারা এমনই আদরে যত্নে,শরীরে মনে।
©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী

সমাপ্ত:-
    
      

         
    
       

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...