Skip to main content

টিনএজ_ক্রাইসিসে_ম‍্যাজিসিয়ান

#টিনএজ_ক্রাইসিসে_ম‍্যাজিসিয়ান#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"হ‍্যালো মাম্মা কাল কখন আসছো?"
....."ওরে বাবা ঠিক পৌঁছে যাবো,ডোন্ট ওরি ডিয়ার।"
খুব এক্সাইটেড লাগে সুমেধার ,কাল ওর কনভোকেশন, অনেকদিন ড‍্যাড আর মাম্মার সাথে দেখা হয়না। আরেকজনকেও খুব খুব মিস করেছে। এবার ইউনিভার্সিটি টপার হয়েছে ও, তাই হয়তো আরো একটু অন‍্যরকম ভালোলাগা। মাম্মা,ড‍্যাডকে ছেড়ে যখন এখানে পড়তে এসেছিলো খুব খারাপ লেগেছিলো। কিন্তু আজ অনেকটা ভালো লাগছে এই ভেবে একসময় অন্ধকারে হারিয়ে যাওয়া সুমেধার ছোট্ট স্বপ্নগুলো আজ আকাশ ছোঁয়ার পথে।
        ভাবতে ভাবতে সুমেধা হারিয়ে যায় ছয় বছর আগে যখন শুধুই টিনএজার ও,সবসময় মনের মধ‍্যে নিয়ম ভাঙার ইচ্ছে। খুব নামী স্কুলে পড়তো বন্ধু বান্ধবের মধ‍্যমণি সুমেধা। ছেলেদের হার্টথ্রব ছিলো ওর ডিম্পল আর লঙ বোহেমিয়ান হেয়ার। আর সেটা নিয়ে অহঙ্কারের অন্ত ছিলোনা ওর।
             মম্ আর ড‍্যাড এর কাছেও আবদারের শেষ ছিলোনা। সব জেদের কাছেই হার মানতে হোত ওদের, একমাত্র মেয়ে বলে কথা। কিন্তু সব কিছু পেতে পেতে অসম্ভব জেদী আর রুড হয়ে গিয়েছিলো ও। প্রায়দিনই অফিস থেকে মম্ আর ড‍্যাড ফিরে এলেই নানা কারণে ঝামেলা বাঁধতো। বেশি স্বাধীনতা আর প্রশ্রয় স্বেচ্ছাচারিতার দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো ওকে। ওর মম্ মৌ কিছু বললেই বলতো কতটুকু সময় দাও তোমরা আমাকে? আমার পারফরমেন্স লেভেল কি কমেছে তোমাদের প্রবলেম কি?
    মম্ ও সারাদিন কাজের পর অনেকটা রেষ্টলেশ থাকতো তাই সবসময় এককথাই বলতো,"পারফরমেন্স তো কমছেই, দেখছিস না র‍্যাঙ্ক কিভাবে পিছোচ্ছে। সারাদিন স্মার্টফোনে আছিস। আর গান শুনছিস। আর কি কোন কাজ নেই? আগে স্টোরি বুকস পড়তিস,গিটার বাজাতিস এখন সব গেছে। দিনরাত শুধু বন্ধুদের ফোন আর আড্ডা। এতো কি যে গল্প থাকে কিছু বুঝিনা।'
....."তাই তো আমিই শুধু ফোন করি, তোমাদের আর ফোন আসেনা। দিব‍্যি তো ফেসবুক আর হোআ্যপে চ‍্যাট করো। আচ্ছা মম্ তোমরা কি সব সময় টপার ছিলে? কি চাও বলতো তোমরা। যদি পাষ্টে টাইমমেশিনে যেতে পারতাম তো দেখে আসতাম কত ভালো ছিলে তোমরা। নিজেদের যত নেগেটিভিটি সব আমার ওপর হাসিল করো তাইনা? প্লিজ লিভ মি এলোন ফর গডস শেক।"
      
                মা আর মেয়ের মাঝে পড়তেন ওর ড‍্যাড শীর্ষ মাঝে মাঝে,"সত‍্যি মেধা,এতো পাল্টে গেলি কি করে তুই। এমন তো ছিলিনা বেবি? এতো আরগুমেন্ট আর লাউড ভয়েস কোথা থেকে শিখলি। আমার তো সুগার লেভেল হাই হয়ে যাচ্ছে তোর জন‍্য। সামনের বছরেই তো আই এস সি। একটু তো নিজেকে দেখ। এরপর তো একটা লাইন সিলেক্ট করতে হবে।"
          ঝাঁঝিয়ে উঠতো মেধা,"ওহ্ লাইন,ক‍্যারিয়ার,র‍্যাঙ্ক জীবনটা হেল হয়ে গেলো। এতো ডিপ্রেসড লাগেনা! তোমাদের কি আর কোন কথা নেই। যদি না থাকে আমারটা আমাকে বুঝতে দাও।"
       সব বচশার শেষে হঠাৎই দড়াম করে দরজা বন্ধ করে দিতো ও। বিছানায় শুয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতো জোরে মিউজিক চালিয়ে। এদিকে বাইরে ওর মা বাবার চাপা টেনশন। মায়ের কান্না, বাবার দরজায় নক করা এগুলো ছিলো নিত‍্য নৈমিত্তিক ঘটনা।
    স্কুলে গিয়ে বন্ধুদের গ্ৰুপে কথা বলতে বলতে ক্ষোভে ফেটে পড়তো,"জানিনা পেরেন্টসরা কি এক্সপেক্ট করে আমাদের কাছে। এটা কোরোনা, ওটা কেন করছো ডিসগাস্টিং লাগে। সারাদিন শুধু পড়াশোনা আর কেরিয়ার, কি ভাবে বলতো আমাদের মেশিন? আমার তো আর কিছুই করতে ইচ্ছে করেনা মনে হয় সব ছেড়ে দিই যা হবে হবে।"
     বন্ধুরাও সাপোর্ট করে ওকে, সবার নাকি এক অবস্থা। মা বাবারা এমনিই হয় আজকাল। ওদের দুঃখ বোঝার কেউ নেই শুধু নিজেদের পজিশন নিয়ে আছে। এমন সময় রাহুল বললো,"শোন না আজ একটু মলে গিয়ে,খেয়ে দেয়ে যাবো। এই তো পাশের মলটাতেই।" সবার বেশ পছন্দ হলো প্রপোজালটা। বাড়ী ফিরতে বেশ কিছুটা দেরী হয়ে গেলো। রাহুল আর রিয়া জোর করে সিগারেট খেতে বললো। মাথাটা কেমন যেন ঝিমঝিম করছিলো।
যথারীতি মমের জেরা," এতো দেরী কেন হলো? কিছু জানাসনি কেন? কোথায় গিয়েছিলি। কারা সঙ্গে ছিলো?"
মাকে বলে দিলো একটু খেতে গিয়েছিলো আর মেট্রোর গন্ডগোল ছিলো। তারপর যথারীতি আবার ফ্রেস হয়ে কানে হেডফোনটা গুজে মোবাইল ফোনটাতে চোখ দেয়। এইভাবেই দিন চলে নানা অশান্তি আর ডিপ্রেশনে।
         
              এখনো খুব মনে পড়ে সেই দিনটার কথা। সেদিনো একটু দেরীই হয়েছিলো বাড়ী ফিরতে,মম্ খুলেছিলো দরজাটা। কিন্তু মমের মুডটা বেশ ভালো মনে হয়েছিলো। ভেতর থেকে ড‍্যাডের গলাও পেলো,কে আবার এলো বাড়ীতে। আর ভালোলাগেনা। মুখে মেকি হাসি এনে হাই হ‍্যালো করতে হবে,শান্তি নেই।
                ডাইনিংয়ে দেখেছিলো ড‍্যাড খুব কাছে বসে গল্প করছে একজন বয়স্ক ভদ্রমহিলার। সুমেধার ঠাম্মা অনেকদিন মারা গেছেন। আর দিদুনকে তো ও চোখেই দেখেনি। তাহলে উনি কে?
......"মেধা এদিকে আয়। আমার মাসিমা,প্রণাম কর।"
      প্রণাম করে সুমেধা। "ভালো থাকিস দিদিন , মানুষের মত মানুষ হ।"
....."ডিসগাস্টিং ইনিও তো দেখছি ফ্রি তে জ্ঞান দেন। জাস্ট বোরিং।"
              নিজের ঘরে ঢুকে যায়। কিন্তু রাতে ডিনার টেবিলে ওনাকে দেখে একটু আশ্চর্য হয়। উনি কি এখানে থাকবেন নাকি? কতদিন থাকবে কে জানে,গেলো প্রাইভেসিটা। নিজের মত খেয়ালখুশিতে আর থাকা হলোনা।
              মম্ আর ড‍্যাড তো গল্পে মশগুল হয়ে আছে। কত সব গল্প হচ্ছে ছেলেবেলার গল্প,দেশের বাড়ীর গল্প। বোর লাগে সুমেধার।
               হঠাৎই উনি ডাকেন," দিদিন আয় আমার পাশে বোস, বৌমা আমি কিন্তু দিদিনের পাশে বসেই খাবো। আচ্ছা দিদিন তুই আমাকে কি বলে ডাকবি বলতো?
        ...কি আর বলবে ভাবে মনে মনে মেধা,বলবে গ্ৰানি ট‍্যানি একটা কিছু।
...."একটা কথা বলি, তুই বরং আমাকে নানিমা বলিস। কিরে পছন্দ তো?
     মুখে হাসি এনে মেধা বলে আচ্ছা, মনে মনে বলে যত্তসব পিকুলিয়ার ডাক।
         ...."একি দিদিন তুই মাছ খাবিনা কেন,কাঁটা বলে? আচ্ছা এই আমি বেছে দিচ্ছি। দাও তো বৌমা। আগে ওকে বেছে দিই তারপর আমি খাবো।"
     "সত‍্যি মাসিমা তুমি এখনো একরকম আছো। তোমার চোখটা আমি খুব তাড়াতাড়ি দেখানোর ব‍্যবস্থা করবো। ভাগ‍্যিস আমি খবর পেয়েছিলাম,মেসোমশায় মারা যাবার পর এতদিন সুযোগ দাওনি কখনো তোমার জন‍্য কিছু করার। অবশ‍্য আমিও এদিকে কাজ নিয়ে ব‍্যাস্ত হয়ে পড়েছিলাম।এখন কিছুদিন এখানেই থাকবে,আমি কিন্তু যেতে দেবোনা।"
        বাবার কথা শুনে সব প্রশ্নের উত্তর জানা হয়ে গেলো। তার মানে উনি এখন এখানেই থাকবেন। উফফ্ প্রাইভেসির বারোটা বাজলো সারাক্ষণ এই নানিমার সাথে থাকা! মনে মনে গজগজ করলো মেধা। কিন্তু নানিমা যখন সুন্দর করে কাঁটা বেঁছে দিলো তখন বেশ ভালো লাগলো কিন্তু। কবে কোন ছোটবেলায় ঠাম্মার আদর খেয়েছে।
               একটু একটু করে নানিমা যেন ঢুকে পড়ছেন ওর জীবনে মনে হলো মেধার তবে ওর মম্ আর ড‍্যাড বেশ শান্তি পেয়েছেন মনে হলো। সারাদিন চাকরি করে মৌ, তেমন সময় হয়না সংসারে সময় দেবার। নানিমার অপারেশন কিছুদিন বাদে হবে প্রেসার না কমলে করা যাবেনা। আজকাল বিকেলে বাড়ী এসে মেধাকে আর বোরিং ম‍্যাগি আর দুধ খেতে হয়না।
......"দিদিন আজ লুচি করে রেখেছি তোর জন‍্য।"
...."ওহ নানিমা আই লাভ লুচি,কিন্তু খুব হাই ক‍্যালোরি। এমনিতেই ওয়েট গেন করছি।"
....."ওরে তোদের বার্গার আর পিৎজার থেকে কম ক‍্যালোরি এতে।"
......"তুমি কত জানো। তবে আমার আর ড‍্যাডের কিন্তু লোভ বাড়িয়ে দিচ্ছো।" তবে মাঝে মাঝে নানিমা এতো খবরদারি করে একটু বাড়াবাড়ি লাগে মেধার। তবে নানিমা বেশ এডুকেটেড, দাদু ল ইয়ার ছিলেন। তাই উনিও বেশ বুদ্ধিমতী। কিন্তু কিছুই গোপন করা যায়না মমের থেকেও বেশি বুদ্ধি নানিমার এটা না স্বীকার করে পারেনা।
            এইতো সেদিন দেরি করে ফিরেছিলো বাড়ীতে নানিমা জিজ্ঞেস করলেন কারণ,এলোমেলো কিছু কারণ দেখালো মেধা। তবে নানির হাসি দেখে মনে হলো ওর ব্রেনটা এক্স-রে করে নিয়েছেন।
           স্কুলের কিছু খবরও যে কিভাবে ফাঁস হয়ে যায় বোঝেনা মেধা। এর মাঝেই ওদের আইএস সির রেজাল্ট বেরোলো। যে ছেলেটি টপার হলো,সে নতুন ভর্তি হয়েছিলো,কেউ ভাবেইনি এমন একটা আউটস্ট‍্যান্ডিং রেজাল্ট করতে পারে। মেধাও কোনদিন দেখেনি তাকে।
              মম আর ড‍্যাডের শুরু হয়ে গেছে,"ভালো করে পড়,দেখেছিস তো কেমন ব্রিলিয়ান্ট রেজাল্ট করেছে ছেলেটা এখানে নতুন আ্যডমিশন নিয়ে। চিনতিস ওকে?
     ...."কোথাকার কোন গাইয়া ছেলে তার কথা আমাকে দিনরাত বোলোনা তো। আমি চিনতে চাইনা। ওসব ছেলেকে আমি পাত্তা দিইনি কোনদিন।"
....."অমন করে বলেনা দিদিন,এই তো আমি তোর বাবা সবাই তো গ্ৰামে মানুষ। তোরা ভাবিসনা, আমার দিদিনও খুব ভালো করবে।"
         বিরক্ত লাগে সারাক্ষণ পড়া পড়া,মাথাটা গরম লাগে মেধার। এর মাঝেই ফেসবুক মিউচুয়‍্যাল ফ্রেন্ডের মাধ‍্যমে আলাপ হয়ে যায় রনির সাথে। ঠিক যেমন পছন্দ সুমেধার ঠিক তেমনি বোল্ড আর স্মার্ট একদম ফ্লুয়েন্টলি ইংলিশ বলে আর খুব মড আর ওয়েল এস্টাব্লিস্ড ওদের ফ‍্যামেলি। কিন্তু জ্বালা হয়েছে,ভালো করে কথা বলতে পারেনা। নানিমা মনেহয় রাতেও ভালো করে ঘুমোয়না। একবার মা এসে বলে তো আরেকবার নানিমা,"ও দিদিন ঘুমিয়ে পড়ো এবার কাল তো তোমার স্কুল আছে"।
....."ওহ তুমি ঘুমোওনি কেন এখনো? আমি ঠিক ঘুমিয়ে পড়বো।"
....."আমার রাতে ভালো করে ঘুম হয়নারে সোনা। আচ্ছা আয় আমি একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দিই।"
       সত‍্যি নানিমার হাতে যেন ম‍্যাজিক আছে চোখটা বুজে যায় আরামে মেধার। কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ে। একটু একটু করে নানিমাকে ভালো লাগে মেধার। মাঝে মাঝে বেশ মজার কথা আর গল্পও শোনান। সারাক্ষণ ট‍্যাব আর মোবাইলের মাঝে মেধার নতুন বন্ধু নানিমা।
         তবুও মেধা জড়িয়ে পড়েছিলো সম্পর্কের মোহে। রনির প্রেমে ভেসে গিয়েছিলো মেধার কিশোরী মন, অদ্ভুত এক আকর্ষণ। নানিমা কি বুঝেছিলেন ও জানেনা। তবে আরও যেন বেশি করে কাছে টেনে নিয়েছিলেন মেধাকে। কখনো তাড়াহুড়োর সময় খাইয়ে দেওয়া,কখনো বা ওর বোহেমিয়ান চুলগুলোকে যত্ন করে আঁচড়ে দেওয়া। আবার কখনো বা বলতেন," আয় দেখি তোর হেডফোনটা আমাকে দে তো আমিও একটু গান শুনি।"
       আশ্চর্য লাগে মেধার যে মানুষটা বাড়ীতে কিছুদিন থাকবেন জেনে ও আঁতকে উঠেছিলো আজ কিন্তু একটু হলেও  মিস করে নানিমা কে। তাই বোধহয় ওর ক্লাসের শ্রীজা,কলি আর পায়েল এতো ঠাম্মা আর দিদুনের গল্প করে। ও তো জানতেই পারেনি কোনদিন এতো কাছের হয় এই সম্পর্কগুলো। ওর মা বাবাও কেমন হাসিখুশি আছে। নানিমা কি ম‍্যাজিক জানে?
        তবুও এর মাঝেও রনির হাতছানি বার বার অস্থির করে তুললো মেধাকে। একদিন রাত তিনটের সময় ভিডিও কলিং করছিলো মেধা, দরজাটা বন্ধ করে দিয়েছিলো, রনি বার বার বলছিলো," তোমায় ভীষণ সেক্সি আর হট লাগছে বেবি, তোমার পিঙ্ক লিপসে কিস করতে খুব খুব ইচ্ছে করছে। যেদিন মিট করবো আমি তো কিস না করে থাকতেই পারবোনা। একদম আউট অফ ব্রেথ কিস। ছাড়বোই না তোমাকে একদম টাইট করে ধরে রাখবো।"
        ভীষণ রোমান্টিক আর ইমপ্রেসিভ লাগছিল রনির কথাগুলো। মেধার বুকে যেন উত্তেজনার ঝলকানি। ভেসে যেতে ইচ্ছে করছিলো ওর প্রেমে।
....." বেবি তোমাকে খুব ক্লোজ দেখতে চাই। খুব কাছের থেকে। "
কি করবে ভেবে পাচ্ছিলোনা এক মুহূর্তে যেন হারিয়ে ফেলছিলো নিজেকে। ওদিকে উৎসুক হয়ে তাকিয়ে রনি। হঠাৎই দরজায় নক, ছন্দ কেটে গেলো। তাড়াতাড়ি ল‍্যাপটপটা বন্ধ করতে যায়,খুব বিরক্ত লাগে। কে এত রাতে, নিশ্চয় নানিমা। যা ভেবেছিলো ঠিক তাই,খুব নাকি মাথা যন্ত্রণা করছে তাই বাম আছে কিনা,জিজ্ঞেস করতে এসেছেন। অসহ‍্য,আর সময় পেলোনা। তবুও বামটা দিতে দিতে দেখে সত‍্যি চোখটা লাল হয়েছে।
             ...." এতো রাতেও ঘুমোসনি দিদিন আয় মাথায় হাত বুলিয়ে দিই।"
         "তুমি যাও, আমি ঘুমিয়ে পড়বো।"
....."আমারো ঘুম আসছেনা রে, আয় তো দেখি।"
রণির সাথে চ‍্যাটটাই হলোনা। কি আর করে শুয়ে পড়তেই হলো। কি ভাবলো কে জানে? তবুও ভাবলো ঠিক আছে, রনি যেভাবে পোজেসিভ হয়ে উঠেছিলো নিজেকে সামলানোই হয়ত মুশকিল হোত।
     কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো বুঝতেই পারেনি। পরদিন আর চ‍্যাটে আসতে পারেনি সকালে। রাতে দেখলো রনি খুব রাগ করেছো অনেক কষ্টে ওকে মোল্ড করলো,তবে রনি একটা কন্ডিশন দিলো নেক্সট উইকে মিট করতে হবে ওর সাথে, নাহলে হয়ত ব্রেক আপই হয়ে যাবে। স্কুলে গিয়ে রিয়াকে বলে কথাটা। কি বলবে বাড়ীতে মোটামুটি ঠিক করে নেয়। তবে রিয়া আর রাহুল বার বার বলছিলো একটু ভাবতে,কারণ রনিতো আননোন ওদের কাছে। তাই যেন পুরো ব‍্যাপারটাই একটু সাবধানে এগোয়। রাহুলের একটু ডিপ্রেসড লাগে,মেধাকে ওর খুব ভালো লাগতো,ভেবেছিলো প্রোপোজ করবে। সবটাই বানচাল হয়ে গেলো।
             নানিমাকে স্কুল যাবার আগে বলে গিয়েছিলো,একটু বন্ধুদের সাথে খাবে, মমকে একটু ম‍্যানেজ করে নিতে। তবুও নানিমা বলেছিলেন মা বাবাকে একবার স্কুল থেকে বেড়িয়ে ফোন করে নিতে।..."ওকে আমি দেখছি,আসলে প্ল‍্যানটা হঠাৎ হয়ে গেলো। একজনের বার্থডে তো ও ট্রিট দেবে।"
       ....."তাড়াতাড়ি এসো দিদিন মা বাবা ভাববে আর আমিও।"
     কিন্তু সেদিন ব‍্যাপারটা ঘটেছিলো অন‍্যরকম। সেদিন ছিলো প্রপোজ ডে,তাই কিছুক্ষণ ক‍্যাফেতে বসার পর রনি বলে এতো লোকের মাঝে যেমন ভাবে রোমান্টিক ভাবে প্রপোজ করা যায়না। একটু গেলেই ওদের ফ্ল্যাট সেখানেই নিয়ে গিয়েছিলো মেধাকে, বলেছিলো মা বাবার সাথে আলাপ করিয়ে দেবে। কিন্তু মেধা গিয়ে দেখে কেউ নেই ফাঁকা ফ্ল্যাট। রনি বলে একটু বাদেই ফিরবেন ওরা।একগোছা গোলাপ নিয়ে মেধাকে প্রপোজ করে জড়িয়ে ধরে রনি। জোর করে কিস করে চেপে ধরে। অনেক কষ্টে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় মেধা। চোখমুখ লাল হয়ে যায়,লজ্জায় আর ভয়ে। এতোটা বাড়াবাড়ি না করলেও পারতো। একটু ভয়ও করলো এবার, সত‍্যিই তো বাড়ীতে কেউ নেই রনি যা পজেসিভ হয়ে উঠেছে আরো যদি...ভাবতে পারেনা মেধা , বাড়ী যেতে চায়। রনি ওর ঠোঁটদুটো মুছিয়ে দিয়ে বললো," এখনি কি যাবে? একটু কোল্ডড্রিংক্স খাও, ঘামছো তো। রিল‍্যাক্স করো তারপরে যাবে। আমি এক্ষুণি আনছি।"
        রনি গ্লাসটা ওর হাতে দেয় নিজেও আনে ওর জন‍্য। এক চুমুক দিতেই কেমন যেন স্বাদটা অন‍্যরকম লাগে। মুখটা ভালো লাগেনা, ও গ্লাসটা রেখে দেয়। রণি খুব কাছে ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে," তুমি খাচ্ছোনা কেন? প্লিজ খাও, আচ্ছা আমি খাইয়ে দিচ্ছি।" মুখটা সরিয়ে নিতে যায় মেধা,ওকে চেপে ধরে কিছুটা ড্রিংক্স ঢেলে দেয় ওর মুখে। গা গুলিয়ে ওঠে আর মাথাটা ঝিমঝিম করতে থাকে মেধার। রনির হাতটা তখন ওর শরীরে। একঝটকায় উঠে দাঁড়াতে যায় কিন্তু রনি দেয়না।
            এমন সময় হঠাৎই কলিংবেল বাজে, চমকে ওঠে রনি। আবারও বাজে বেল। বাধ‍্য হয়ে দরজাটা খোলে রনি। ওদের পাশের ফ্ল্যাটের আনকেল আর কেয়ারটেকার। খুব বিরক্ত হলেও কিছু বলতে পারেনা। " হ‍্যাঁ বলুন আনকেল, ড‍্যাড আর মামনি তো এখন নেই,কিছু বলতে হবে?
                 " আমি একটু তোমাদের ফ্ল্যাটের ভেতরে যাবো,রবিকে নিয়ে। তোমাদের ফ্ল্যাট থেকে একটা শর্ট শার্কিট হচ্ছে। একটু দেখতে হবে। আমার গিজার অন করলেই কারেন্ট মারছে।"
        বাধা দিতে পারেনা রনি,ওনাদের ভেতরে আসতে দিতেই হয়। দুজন অপরিচিত ভদ্রলোকের সামনে অস্বস্তি তে পড়ে যায় মেধা,হয়ত বা হাঁপ ছেড়ে বাঁচেও। ওনারা বলেন,আমাদের একটু সময় লাগবে। সেই সুযোগে তাড়াতাড়ি মেধা উঠে দাঁড়ায়," আমি এখন আসছি।" কিছু বলতে পারেনি রনি শুধু হাত থেকে শিকার ফস্কে যাওয়াতে মনে মনে প্রচন্ড ক্ষেপে গিয়েছিলো, যত্তসব উল্টোপাল্টা সময়ে এদের আসতে হলো। পুরো মুডটাই খিঁচড়ে গেলো।
         হাঁপাতে হাঁপাতে অস্থির হয়ে লিফ্টে ওঠে মেধা। বোধহয় ভগবানই বাঁচিয়ে দিয়েছেন ওকে। কি যে হোত ভাবলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। প্রথম দেখাতেই ওর শরীরটাকে নিয়ে খেলা করতে চেয়েছিলো রনি। হয়ত কোন ভিডিও তুলে রাখতো। ছি ছি কি করতে যাচ্ছিলো ও? আজ আবার বাড়ীটাকেই বড্ড বেশি আপন মনে হলো। না জানি ওর মত কত মেয়ে এইরকম মিথ‍্যে প্রেমের জালে আটকে সব হারাচ্ছে।
                 ওদের হাউসিং কমপ্লেক্স থেকে বেরোতেই হঠাৎ ড‍্যাডকে দেখে গাড়ীতে,ওকে দেখেই হাতটা ধরে গাড়ীতে তোলে। একটা কথাও বলেনি সারাটা রাস্তা। আতঙ্কে আর লজ্জায় মাথা নীচু করে বসেছিলো সুমেধা। বাড়ীতে ঢোকার পর মম চিৎকার করে ওঠে কিন্তু পুরো পরিস্থিতিটাই অদ্ভুতভাবে সামলান নানিমা আর ড‍্যাড। হয়ত এমনভাবে বন্ধুর মত কেউ কোনদিন বোঝায়নি আগে মেধাকে।
        মম,ড‍্যাডকে প্রমিস করে মেধা ও নিজেকে পাল্টাবার চেষ্টা করবে। আর কখনো এমন করবেনা। ভালো মেয়ে হওয়ার চেষ্টা করবে। সেদিন রাতে খুব জোর করে ওকে খাইয়ে দিয়েছিলেন নানিমা। রাতে মমের পাশে শুয়েছিলো মেধা, একদম কোলের কাছে ছোটবেলার মত। জেনেছিলো নানিমার এক আত্মীয় রনিদের ফ্ল‍্যাটে থাকেন,ওনার ছেলেটি সুমেধার স্কুলেই পড়েছে ইলেভেন টুয়েলভ। রনির চরিত্রের সম্বন্ধে অনেকেই জানতো। ঐ ছেলেটেই স্কুলড্রেসে মেধাকে দেখে এইভাবে প্ল‍্যান করে বাঁচায়। ছেলেটি এবার টপ করেছে ওদের স্কুল থেকে। মন ছুঁয়ে যায় মেধার, যাকে গাইয়া বলে একদিন মনে করেছিলো। তারজন‍্যই বেঁচে গেলো হয়ত আজ। খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো আর থ‍্যাংকস বলতে ইচ্ছে করছিলো ছেলেটাকে একবার। কিন্তু লজ্জায় আর ইগোতে বলতে পারেনি‌।
       তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি মেধাকে। মাস ছয়েকেই পাল্টে গিয়েছিলো মেধা, নানিমার ম‍্যাজিক টাচে। সত‍্যিই বোধহয় এমনি হয় ঠাম্মা আর দাদুদের আদর। মা বাবাদের শাসনের মাঝে হয়ত একটু খোলা আকাশ ঠাম্মাদের প্রশ্রয়,ভালোবাসা যেটা হয়তো একটু মুক্তি আর স্বস্তির স্বাদ এনে দেয় জীবনে।
         হঠাৎ একদিন নানিমাকে জিজ্ঞেস করেছিলো মেধা, "আচ্ছা নানিমা,তোমার ঐ আত্মীয় ছেলেটি কোথায় গো এখন"? মুখ টিপে হেসে বলে নানিমা," হঠাৎ ঐ গাইয়াটার খোঁজ কেন রে দিদিন? ও তো এখন বাইরে কোথায় যেন একটা পড়ে।"
               খুব ভালো রেজাল্ট করে মেধা। আর তারপর এগিয়ে গেছে একটার পর একটা বাধা পার হয়ে কৃতিত্বের সাথে। নানিমা চোখ অপারেশনের পর চলে গিয়েছিলেন শুধু তার আগে পাল্টে দিয়ে গিয়েছিলেন ওদের সম্পর্কগুলোকে। সত‍্যি নানিমাকে ম‍্যাজিসিয়ান বলে মনে হয়েছিলো ওদের সবার।
           মাঝে কেটে গেছে পাঁচটা বছর, মেধা এবার ইউনিভার্সিটি টপার ওর প্রিয় বিষয় সোসিওলজি নিয়েই দিল্লীতে জে. এন. ইউ তে পড়েছে মেধা। জোর করেনি ওর মম আর ড‍্যাড ডাক্তার বা ইঞ্জিনীয়ার হওয়ার জন‍্য তবে সবটাই হয়ত ম‍্যাজিসিয়ানের জন‍্য।
      কনভোকেশন হলে ওরা সবাই, কি সুন্দ‍র লাগছে মেধাকে আর ওর বন্ধুদের। সবাই মাস্টার্স কমপ্লিট করলো। এরমধ‍্যে ওর মম আর ড‍্যাড ও এসে গেছেন। জড়িয়ে ধরলো মেধা ওনাদের একদম আহ্লাদে।
          ..."কিন্তু আমার ম‍্যাজিসিয়ান কই শুনি,আমায় যে প্রমিস করেছিলো আসবে।"
......"আসবেন রে,মাসিমা তো বাড়ী থেকে আসছেন ট্রেনটা একটু লেট করেছে। তোর প্রোগ্ৰামের আগেই চলে আসবেন।"
    ওদের কনভোকেশন শুরু হয়ে গেছে। নানিমা এসে গেছেন যার জন‍্য এতক্ষণ অধীর আগ্ৰহে অপেক্ষা করছিলো মেধা। কিন্তু ততক্ষণে মেধা চলে গেছে ডায়াসে ওখান থেকেই দেখতে পেলো,সবাই বসেছে একদম সামনের চেয়ারগুলোতে।সুমেধার লেখা একটা আর্টিকেল খুব প্রশংসা পেয়েছে দেশে বিদেশে। স‍্যারেরা সার্টিফিকেট দিয়ে একটু অনুরোধ করলেন সংক্ষেপে আর্টিকেলটা পড়ার জন‍্য।
         ইংরেজীতে বলতে শুরু করলো মেধা,বিষয়বস্তুটা কিছুটা এইরকম,একসময় বাচ্ছারা বড় হতো যৌথ পরিবারে,সবার মধ‍্যে। তারা নিজেরা বাড়ীর অন‍্য ভাইবোনদের সাথে আর দাদু ঠাকুমা,কাকু,জেঠু,পিসি এদের মাঝেই বড় হত। হয়ত ওদের মা বাবারাও তেমনটাই হয়েছেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবার ছোট আর জীবনযাত্রা আরো ব‍্যস্ত হয়েছে। অনেকেরই আজ একটা দুটো সন্তান যারা একা বড় হচ্ছে একদম ঠাকুমা দিদিমাদের আদর ছাড়া। কোন ক্ষেত্রে চাকরির প্রয়োজনে বাবা মা দূরে থাকছেন। কোনক্ষেত্রে নিজেদের স্বাধীনতা বা মতবৈষম‍্যের জন‍্য আলাদা থাকছেন। কিন্তু একটা বাচ্ছা বা একটা আ্যডোলেসেন্স চাইল্ড অনেক বেশি ভালো বড় হোত যদি তারাও তাদের বাবা মায়ের মতো এইরকম একটা জগৎ পেতো। অনেকেই বাচ্ছা বা ছেলেমেয়ে দেখাশোনার জন‍্য কাজের লোক রাখেন,তারাও ভালোবাসেন বাচ্ছাদের। কিন্তু ঠাকুমা, দিদুনদের মতো ওটা নিরাপদ আশ্রয় নয়।
এক্ষেত্রে একটা বড় খরচাও আছে। তবে দায় দায়িত্ব এড়িয়ে থাকা যায় এই আর কি। বার বার আবেদন করলো বাচ্ছাদের ভালো করে বড় করার জন‍্য শুধু দামী খেলনা নয় দরকার একটু সহানুভূতি,ভালোবাসা যা কেবল নিজের কেউ দিতে পারে। বন্ধ হোক,কার্টুন আর মোবাইল সর্বস্ব  শিশুজীবন। বাবা মায়েরা থাকুন গৃহাশ্রমে,বৃদ্ধাশ্রমে নয়।
            হাততালিতে মুখর হলো হলঘর। তারপর একসময় অনুষ্ঠান শেষ হলো। নানিমা মেধাকে জড়িয়ে ধরে বললেন," দিদিন তুই কত্ত বড় হয়ে গেছিস। এত্ত বুদ্ধি হয়েছে তোর! মানুষ হ সোনা।"
        হঠাৎ ই সুমেধার চোখ পড়ে যায় ড‍্যাড আর মম কথা বলছে একটা খুব ঝকঝকে স্মার্ট ছেলের সাথে। কে ও আশ্চর্য লাগে মেধার।
      " ও কে নানিমা?"
......."ওমা তোকে তো বলাই হয়নি, এটাই তো সেই গাইয়া ছেলেটা, ওইতো আমার আরেকটা নাতি স্বাগত,যাকে তুই দেখতে চেয়েছিলি। ওই গাইয়াটাকে একদম মানুষ করে দিলাম দিদিন।"
         মুগ্ধ চোখে সুমেধার দিকে তাকায় স্বাগত,মাথা নীচু করে মেধা।

সমাপ্ত
      

           

     
       
       

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...