Skip to main content

আবীরের রঙে রাঙা

#আবীরের_রঙে_রাঙা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

স্কাইপটা অন করে দেয় রক্তিমা, একটু আগেই মেসেঞ্জারে মেসেজ করেছিলো আবীর,"আজ একটু অন হ প্লিজ। তোকে তো দেখাই হলোনা।সেই কবে স্কুলে দেখেছিলাম। লাষ্ট দেখা হয়েছিলো ক্লাশ টুয়েলভের ফেয়ারওয়েলে। তখন তো ছোটচুলের একটা মোটু গোলু বেবি ছিলি। বাপরে সারাক্ষণই তো দেখতাম স্কুল থেকে বেড়িয়ে আলুকাবলি খেয়ে শালপাতা চাটছিস। বাব্বা কি নোলা ছিলো রে তোর! কখনও আইসক্রীম,তো কখনো আচার আবার কখনো ভেলপুরী। তোর জন‍্যই বোধহয় ওখানকার হকারগুলো বেঁচেছিলো। তুই যেদিন আসতিসনা সেদিন ওদের বিক্রীই তো হোতনা।"
               লজ্জা পেয়ে যায় রক্তিমা,"ইস্ তুই এতো কিছু খেয়াল করতিস। তুই তো তখন একদম স্কুলের হিরো, সবসময় বন্ধুদের গ্ৰুপের মধ‍্যমণি হয়ে ঘুরে বেড়াতিস। আমাকে তো আর কেউ পাত্তা দিতোনা তাই খেয়ে বেড়াতাম। তুই কি রে, এতোদিন আগের সব পুরোনো কথাগুলো বলে আমাকে লজ্জা দিচ্ছিস! এখন আর আমি ওগুলো খাইনা। একদম ছুঁইনা,ওইসময় যা খুশি তাই খেতাম। পড়াশোনার চাপে ফাষ্টু হয়ে যা খুশি খেয়ে বেড়াতাম।"
                
        ....হুম সেটা আর বলতে,এখন বুঝি তুই আর ওগুলো খাসনা। বাপরে আমি তো ডিপি দেখে পুরো চমকে গেছি। মাঝে পড়াশোনা নিয়ে খুব ব‍্যস্ত ছিলাম,সেভাবে ফেসবুকে আসতে পারতামনা। তারপর সৌম‍্যর ফ্রেন্ডলিষ্টে দেখি সবকটা আছে আমাদের ব‍্যাচের। কিন্তু চোখটা আটকে গেলো হঠাৎ,আরে নামটা তো চেনা,স্কুলের নামটাও তো আমাদের। তাহলে কি এটা ওই গোলু রক্তিমা। বাপরে একদম পাল্টে গেছিস।
.....আমি তো এখন ক‍্যালিফোর্ণিয়ায় ওখানে পোষ্ট ডক্টরেট করছি। তুই কি করছিস এখন? "
        ...." সবেই কলেজে চাকরি পেয়েছি। তোর মতো অত ভালো কিছু করতে পারিনি। বাবাও পড়াতেন,তাই আমিও চলে এলাম বাবার দেখানো পথে।"
.......উচ্ছ্বসিত হয় আবীর," ওহ্ ঐ জন‍্যই এত পরিবর্তন,তোকে দেখে তো তোর ছাত্ররাও প্রেমে পড়ে যাবে। ভাগ‍্যিস এখনো শালপাতা চাটিসনা,তাহলে ওরা আওয়াজ মারতো।'
           ধমকায় রক্তিমা,"এবার নিজের কাজ করতো তোর রাত্রি,আমার তো দিন। এই এবার কলেজে যাবো। মা এসে ঘুরে গেলো একবার। তাড়া দিয়ে গেলো।"
               মাঝে মাঝে এমন কত কথাই হোত ওদের। কখনো আবার হয়ত একসপ্তাহও কথা হোতনা। অনেকদিন ধরেই আবীরের আব্দার ছিলো একবার চাক্ষুষ দেখে কথা বলা। একটু লাল হয়ে রক্তিমা বলেছিলো,"কেনো রে আমার ছবি দেখে বিশ্বাস হচ্ছেনা,আমি রোগা হয়েছি।"
         ...."নারে মোটু সত‍্যিই বিশ্বাস হচ্ছেনা। কলকাতা হলে তোকে একবার ওজন করে দেখতাম।"
            সেদিন ছিলো দোলের দিন, কয়েকজন বন্ধু এসেছিলো বাড়ীতে ,আবীরের লাল ছোঁওয়ায় আজ রক্তিমা আরো রঙীন। কপাল আর গালে পরপর অনেক রঙের মিশেলে মনেও হাল্কা রঙের ছোঁয়া। তারমাঝেই স্ক্রীন অন করে ওরা সবাই কথা বলেছিলো আবীরের সাথে,"ইশ্ তোরা কি মজা করছিস,আর কি প্ল‍্যান আছে শুনি তোদের। বাপরে তোরা এখন জলসা বসাবি। হোলির হুল্লোর,কে গান গাইবে শুনি? মুটি? আজ কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে তোদের। মিস ইউ অল ডিয়ার,মিস ইউউউউ।"
             আবীরের মন কেড়েছিলো বসন্তের সৌরভে রাঙা রক্তিমা,কিন্তু কোনদিনই বলতে পারেনি এই একমাসে যে ওকে ভালো লাগে। সত‍্যিই তো ,ওর তো আরো একটু সময় লাগবে। রক্তিমার বাড়ী থেকে যদি আপত্তি করে। ও একমাত্র মেয়ে,তাছাড়া চাকরিও পেয়েছে। সব ভালোলাগাটুকু মনের কোণে যত্নে রেখে দেয় আবীর। ঠিক আছে আর তো বছর দুয়েক বাদেই ফিরবে। দেখা যাক, এরমাঝে হয়তো একদিন বলবে । শুধু  মাকেই দেখায় রক্তিমার ছবিটা,ওর মা বাবাও তখন মুম্বাইয়ে বাবার পরের বছর রিটায়ারমেন্ট হলেই কলকাতা ফিরবে।
      মা হেসে বলেন," বাবা এতো পুরো মেমসাহেবের মত ফরসা,একেবারে শিমূল রাঙা।হুঁ মন্দ নয়,তবে একদম তোর ক্লাশমেট একটু ছোট কাউকে মনে ধরলো না। তোকে আমার বিশ্বাস নেই কদিন আগেই,কি যেন একটা এলিনা এলিনা করছিলি। কাকে যে দুম করে বিয়ে করে বসবি কে জানে?"
......"ওহ্ মা তোমাকে জিজ্ঞেস করলাম কেমন, ব‍্যাস শুরু হয়ে গেলো। তুমি ওকে মনে করতে পারছো না। অনেকদিন হয়ে গেলো অবশ‍্য আর আমিতো পুল কারেই আসতাম তাই হয়ত দেখোনি। তুমি তো জানো আমার আরো দুবছর লাগবে।"
                      বেশ কয়েকদিন আর অনলাইনে দেখেনি রক্তিমাকে। মনটা অস্থির করেছিলো আবীরের। আসলে কথা বলাটাও একটা অভ‍্যেসে দাঁড়িয়ে যায়। সৌম‍্যর কাছ থেকে জানতে পারে ওর মায়ের হঠাৎ গলব্লাডারে স্টোন ধরা পড়েছে। ওরা একটু টেনশনে আছে এরমাঝেই অপারেশন। অনেকগুলো মেসেজ পাঠায় কিন্তু কোন উত্তর পায়না।
              কি আশ্চর্য মেয়ে! ফেসবুক হোয়াটসআ্যপ কোথাও নেই। একদম বেপাত্তা,মাঝে মাঝে সৌম‍্যর কাছে টুকটাক খবর পেয়েছে। বার বার জিজ্ঞেস করতেও যেন কেমন লাগতো। শুধু মনের মধ‍্যে একটা ফাঁকা অনুভূতি,অথচ অত দূর থেকে কিছু করারও নেই।
                 গলব্লাডারের স্টোন অপারেশনের সময় ধরা পড়ে ওখানে ক‍্যানসার,আর বেশ ছড়িয়ে গেছে। দিশাহারা হয়ে যায় ওরা বাবা আর মেয়ে। আসলে মা ছিলেন সংসারের সব। রক্তিমার তখন অনেক দায়িত্ব,মাকে সামলানো,বাবাকে সামলানো। মাঝে মাঝে কলেজ কামাই হয়ে যেতো। একসময়ের গোলগাল মোটাসোটা আদুরে রক্তিমা তখন প্রাণপণে জীবনযুদ্ধ লড়ছে। কিন্তু তবুও শেষরক্ষা হোলনা। মাকে বাঁচাতে পারলোনা। সেইসময় ওর বাবার ছাত্ররা দিনরাত এক করে ওদের পাশে থেকেছে। বিশেষ করে জয়দীপদা,এমন কি ওর মা বাবাও। আসলে ওনারা ওদের বাড়ীর কাছেই থাকতেন।  প্রণতি মাসীমা কিছুদিন ওদের বাড়ীটাকেই নিজের বাড়ী করে সবটা সামলেছিলেন।
           মায়ের আঘাতটা বড়ো বুকে বেজেছিলো ওর, কিছুতেই যেন সামলাতে পারছিলোনা নিজেকে, সবসময় কানের কাছে বাজতো মায়ের 'রাঙা' ডাকটা। রক্তিমার গায়ের রঙ শিমূল পলাশ রাঙানো তাই ওর বাড়ীর ডাক নাম ছিলো রাঙা।বাবা যেন কেমন হয়ে গিয়েছিলেন। মাঝে একটা মাইল্ড স্ট্রোক হয়ে যায়। হঠাৎই প্রস্তাব আসে প্রণতিমাসীমার কাছ থেকে ওরা রক্তিমাকে ছেলের বৌ করতে চান। সত‍্যি ওর মায়ের জন‍্য ওরা যা করেছেন ভাবা যায়না। বাবাকে বলেন ভেবে দেখার জন‍্য।
          নিজের অসুস্থতার কথা ভেবে আর না করেননি ওর বাবা,মেয়ের সাথে কথা বলেন। চোখের জল বুকে লুকিয়ে রাজি হয়ে যায় রক্তিমা। ওর বড্ড মায়ের কথা মনে পড়ছে। আবীরের সাথে ওর ভালো বন্ধুত্ব হয়েছিলো। কিন্তু কোনদিনই ভালোবাসার কথা কেউ বলেনি। এইসময় ওর পাশে সত‍্যিই কারো থাকা উচিৎ। বাবাও অন্তত নিশ্চিন্ত হবেন।
                 রক্তিমার মায়ের খবরটা জানতে পেরে একদিন ফোন করেছিলো আবীর। তারপর মাঝে ওর রিসার্চের কাজে নিউইয়র্কে এসে অনেকটা ব‍্যস্ত হয়ে পড়েছিলো।
               মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো দিন, পুরোহিতের সাথে কথা বলে মা মারা যাবার প্রায় ছয়মাস বাদে নিয়ম কানুন মেনে জয়দীপের সাথে বিয়ে হয়ে গেলো রক্তিমার। নতুন করে মা পেলো রক্তিমা। সারাক্ষণ রাঙা,রাঙা আর রাঙা,বৌকে যেন চোখে হারান প্রণতি। ওর বাবাকেও নিয়ে এলেন নিজেদের একতলাতে জোর করে। " মেয়ে শান্তি পাবে নাকি আপনি একা থাকলে,আমাদের সংসারে মন দিতেই পারবেনা। আমি কিছু শুনবোনা। আপনাকে আপনার ছেলের কাছেই থাকতে হবে। ওরা দুটোই তো আপনার হাতে গড়া।"
          সৌম‍্যর কাছ থেকে সবটাই জেনেছিলো আবীর,এত দূর থেকে শুধু শুভেচ্ছা বিনিময় ছাড়া ওর আর কিছুই করার ছিলোনা। রক্তিমা একটু অন‍্য মেয়েদের চেয়ে আলাদা। তাই কলেজ, সংসার আর বাবার দেখাশোনা এইসব নিয়েই কোথা দিয়ে যে সময় কেটে যেতো বুঝতেই পারতোনা। জয়দীপের আদর ভালবাসা ভরিয়ে দিয়েছিলো রক্তিমাকে। নিজের মাকে খুঁজে পেয়েছিলো প্রণতিদেবীর মাঝে। শাসনে আদরে চোখে হারাতেন রাঙাকে। সব সময় বলতেন আমার রাঙার জন‍্যই বোধহয় এতো রঙ। সেবার দোলে লাল টুকটুকে শাড়ীতে রক্তিমাকে দেখে সবটুকু লাল সুগন্ধী আবীর দিয়ে রক্তিমাকে স্নান করিয়ে জয়দীপ বলেছিলো,"আজ সবটুকু লাল তোমারই থাক,আমি আদর করে একটু গাল থেকে চুরি করে মেখে নেবো।" লজ্জায় আরো লাল হয়ে গিয়েছিলো রক্তিমা।
                                প্রথম বিবাহবার্যিকীতে আন্দামান বেড়াতে গেছিলো ওরা। কিছু ছবি ফেসবুকেও দেখেছিলো আবীর। মজা করে কিছু কমেন্টও করেছিলো। খুব কমই ফেসবুকে দেখা যেতো রক্তিমাকে। এরমাঝেই একদিন আবীরের মা জিজ্ঞেস করেছিলেন,"কি রে তোর শিমূলরাঙা মেমসাহেবের খবর কি?"
        .....ওহ্ মা তোমার মনে আছে! ওর তো বিয়ে হয়ে গেছে কবেই।"
......"ছেলেটা আমার বোকাই রয়ে গেলো। আরে প্রেমে,যুদ্ধে কোন নীতি নেই আবার বেশি বিরতিও ভালো না। আচ্ছা তুই আয় আমি একটা রাঙা বউ দেখে বিয়ে দেবো।"
          ...."আমার যাওয়াটা হয়ত আরো একবছর পিছোবে মা।"
                    সময় নিজের খেয়ালে এগোলেও রক্তিমা বুঝতেই পারেনি কিভাবে জয়দীপ চলে গেলো হঠাৎ। বাইপাশে গাড়ীর সামনে দৌড়ে এসেছিলো একটা বাচ্ছা ওকে বাঁচাতে গিয়ে হঠাৎ ব্রেক কষে আ্যক্সিডেন্ট করেছে জয়দীপের গাড়ী এই পর্যন্তই বোধহয় শুনেছিলো,তারপর আর তিনদিন কোন জ্ঞান ছিলোনা ওর। সব শেষ হয়ে গিয়েছিলো,রাঙাকে ভালো রাখবে বলেছিলো জয়দীপ কিন্তু কথা রাখতে পারেনি।
            কি করে যে সেই দিনগুলো সামলে তিনজন বয়স্ক মানুষ রক্তিমাকে সুস্থ করে তুলেছিলেন ভাবা যায়না। আঁচলে চোখ মুছে প্রণতিদেবী বলতেন," যে গেছে তাকে তো আর ফেরানো যাবেনা। আমার রাঙা ভালো থাক,জয় ওর দায়িত্ব নিয়েছিলো,ও আমার মেয়ে।"
            প্রায় তিনমাস আয়নার সামনে দাঁড়ায়নি,কলেজেও যাওয়া হয়নি। প্রণতিদেবী জোর করে কলেজে পাঠিয়েছেন রক্তিমাকে।মাঝে কেটে গেছে আরো ছয়মাস। রাঙা কলেজে যাবার পর ওকে ছেড়ে দিয়ে প্রণতিদেবী একটু ভারতসেবাশ্রমে যান মনটা একটু শান্ত হয়। ফেরার সময় একসাথে ফেরেন।
                 সেদিন হঠাৎই ওখানে দেখা হয়ে গেলো সুতপার সাথে। ওনার স্কুলের বন্ধু,বাপের বাড়ীর পাড়ার মেয়ে। মাঝে অনেকদিন যোগাযোগ ছিলোনা। দুজনে দুজনকে জড়িয়ে কত সুখ দুঃখ বিনিময় হলো। সুতপার মনটা ভারী হয়ে গেলো বন্ধুর দুঃখে। সুতপাকে বললেন," তুই কি যাবি আমার সাথে,তাহলে আমি রাঙাকে কলেজ থেকে নিয়ে তোকে ড্রপ করে দেবো।"
                 রাঙাকে দেখে সুতপা বলেন," যার নাম রাঙা,তার এমন ম‍্যাড়মেড়ে শাড়ীর রঙ কেন? রাঙাকে লালেই ভালো লাগে। কি রে প্রণতি তাইনা?"
          "আর বলিসনা আমি কত বুঝিয়েছি এই রঙচটা পোশাক আর পরিসনা। জয়টা একদম পছন্দ করতোনা।"
               মনে মনে রক্তিমা ভাবে,তাইতো রঙিন কিছুর দিকে তাকাতেও আর ভালো লাগেনা।
                প্রণতির সাথে মাঝে মাঝেই আশ্রমে দেখা হয় সুতপার আর ওর স্বামীর। কখনো ওদের বাড়ীতেও আসে ওরা। বাড়ীর তিনটে বুড়োবুড়ির মাঝে আরও দুজন। একটু পরিবেশটা হাল্কা হয়। সুতপা রক্তিমার ফ‍্যাকাশে মুখটার দিকে তাকিয়ে বলে," আমাদের মাঝে রাঙাটা বোর হচ্ছে। একদিন আমার ছোটকুটাকে নিয়ে আসবো বকে বকে তোর মাথা খাবে।" একটু হাসে রক্তিমা। কোনদিনই বিশেষ কথা বলেনা ও। যেন কোন বিষয়েই আর কৌতূহল নেই,বন্ধুরা বাড়ীতে এলেও ওর ভালো লাগেনা। নিজের বৃত্তে থাকতেই ভালোবাসে।
           সেদিন আবার একটা বসন্তে রাঙা দিন। চারিদিকে কতো হৈচৈ। পাড়ার ছেলেরা রঙের বালতি নিয়ে দৌড়োদৌড়ি করছে। শুধু ওদের বাড়ীটা বড্ড চুপচাপ। প্রণতি রান্নাঘরে কাজ সারলেন। রাঙাটার আজ কলেজও নেই তাই বড্ড চুপচাপ। সবটাই বুঝতে পারেন তাই আজ ওকে ওর মতোই থাকতে দেন। গতবার মন ভরে যেন রাধাকৃষ্ণ দর্শন করেছিলেন নিজের বাড়ীতেই। আবীরে রাঙানো রক্তিমা আর জয় কি আনন্দই না করেছিলো ওরা, শুধু বলেছিলেন এমনই থাক ওদের জোড়, কারো নজর যেন না লাগে। সত‍্যিই বোধহয় নজর লেগেছিলো মায়েরই। চোখ মোছেন প্রণতি।
                   ভালো করে খায়নি আজ মেয়েটা, বন্ধ ঘরে কি করছে কে জানে? দুএকবার ডেকেছিলেন, বলেছে," মা আজ একটু একা থাকতে দাও প্লিজ।"
                বিছানায় জয়ের দেওয়া প্রিয় লাল শাড়ী আর ওদের পুরনো ছবিগুলো নাড়া চাড়া করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো বুঝতেই পারেনি।
                হঠাৎই দরজায় হাল্কা ধাক্বা দেন প্রণতি প্রথমে,তারপর একটু জোরে। চমকে উঠে বসে রক্তিমা।...."রাঙা একটু বেরোনা মা,সুতপা এসেছে। তোকে একটু ডাকছে,প্লিজ আয় মা।"
             আস্তে আস্তে দরজাটা খোলে রক্তিমা, যেন একটা ঘোরের মধ‍্যে আছে। বিছানায় পড়ে থাকা লাল শাড়ীটার দিকে নজর পরে প্রণতির,মনটা খারাপ হয়ে যায়।
               হাত ধরে নিয়ে আসেন প্রণতি,মাথা নীচু করে এসে দাঁড়ায় রক্তিমা। চোখদুটো তখনো লাল। সুতপা কাছেই ছিলেন রক্তিমার হাতটা ধরে বললেন,"আজ দোলের দিনে এমন মনখারাপ করে কেউ বসে থাকে,চলো বসার ঘরে একটু গল্প করি।"
             বসার ঘরে এসে রক্তিমাকে ছেলের সামনে দাঁড় করিয়ে বলেন," তোর মুটি মেমসাহেব রক্তিমাকে একদিন হঠাৎই খুঁজে পেয়েছিলাম। তোর ফ‍্যাকাশে বন্ধুটার জীবনটাকে একটু রাঙিয়ে দিতে পারবিনা আবীর? আর আমার ছোট ছেলে বকবকিয়া ছোটকু তো আছেই।"
                  আবীর ভাবতেই পারেনি আজ দোলের দিন মা এমন একটা সারপ্রাইজ দিতে পারে। প্রথমটায় খুব অস্বস্তি হয়েছিলো মায়ের বন্ধুর বাড়ী যেতে হবে শুনে।
                     চোখের জল তখনও টপটপ করে পড়ছিলো রক্তিমার গাল বেয়ে। প্রণতির দুহাতে রাখা সুতপার দুই হাত।
                       হঠাৎই নীরবতা ভাঙে আবীর, "রাস্তার মুখে দেখলাম আলুকাবলিওয়ালাটা বসে আছে, ডাকতো ছোটকু,কিরে গোলু আজ হয়ে যাক আলুকাবলি অনেকদিন বাদে। শালপাতাটা চাটলেই তোর মুডটা পাল্টে যাবে,আই আ্যম সিওর।"
           একটু হাল্কা হাসির ঝলক দেখা যায় রক্তিমার ম্লান মুখে। ওর মাথায় চাঁপাফুলের রঙের আবীর ছুঁইয়ে আশীর্বাদ করেন সুতপা। ছেলেকে বলেন," আজ গোলাপের গোলাপী রঙটাই থাক রক্তিমার জন‍্য। ও যেদিন মন থেকে মেনে নেবে সেদিন আবীরের লাল রঙে রাঙিয়ে দিস ওকে।"
           
          সমাপ্ত:-
                   
                            
            

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...