Skip to main content

জীবন অমৃত

#জীবন_অমৃত#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

আদর করে মৌমিতার গালে একটা আলতো চুমু দেয় কুশল, "আর কি ছুটি শেষ, আবার অফিস শুরু। আর জ্বালাবো না,ভালো করে ঘুমিয়ে নিয়ো দুপুরে। রাতে ঘুম পাচ্ছে বললে শুনবো না কিন্তু।"
               বাথরুমে যায় কুশল স্নান করতে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে মৌমিতা,প্রায় নটা বাজে তার মানে একটু বাদেই তো কুশল খেতে বসবে। বিয়ের পর এই প্রথম আজ অফিস যাচ্ছে কুশল। এই কদিন বিয়ে,বৌভাত নানা ঝামেলায় কেটে গেছে। মাঝে শুধু একদিনের জন‍্য একটু দীঘা গিয়েছিলো বেড়াতে ,তবুও যেন কেমন ভয়ে ভয়ে। বলেছিলো, "বাড়িতে বাবা আর নমিতা আছে, বাবার বয়েস হয়েছে এভাবে যাওয়াটা ঠিক নয়। তাছাড়া নমিতাও একটু ঝামেলা করছে। বলছে একা সবটা সামলাতে পারবেনা। তাই আজ বিকেলে চলো কাল রাতের মধ‍্যে ফিরে যাবো। পরে একটা বড়ো ট‍্যুরে যাবো।"
             তাতেই খুশি হয়ে গিয়েছিলো মৌমিতা। মা,বাবা হারানো মামা বাড়িতে মানুষ মৌমিতার এটাই অনেক প্রাপ্তি। মামারাই দেখেশুনে বিয়ে দিয়েছিলেন,কুশলের সাথে তেমন মেশার সুযোগ হয়নি বিয়ের আগে দুএকবার ফোনে কথা ছাড়া। মামা বলেছিলেন," ওদের অবস্থা ভালোই তাছাড়া ছোট পরিবার,বাড়িতে শুধু বাবা আর ছেলে, মা তো কবেই মারা গেছেন। তাছাড়া একটা পুরোনো কাজের মেয়ে আছে। ওর মা মারা যাবার সময় থেকেই আছে। শুনেছি মেয়েটি বিধবা কোন পিছুটান নেই। ওই তো সামলায় সংসার,তোকে তেমন কোন কাজও করতে হবেনা। সুখেই থাকবি ওখানে।"
        মাথা নিচু করে শুনেছিলো মৌমিতা। মৌমিতা বর্ধমানের গ্ৰামের মেয়ে,খুব ছোটবেলায় বাবা আর তার চার বছর পর মা মারা যাওয়াতে পড়াশোনার সুযোগ খুব একটা পায়নি। তবুও নিজের চেষ্টায় বি.এ পাশ করেছিলো। বিয়ে ঠিক হয়েছিলো কলকাতায়। হয়ত মনে মনে অনেকটা স্বপ্ন দেখেছিলো নিজের সংসার হবে। ইচ্ছেমত সাজাবে,শ্বশুর আর বরকে যত্ন করবে।
        শুধু মামীমা বলেছিলেন," ভালোমন্দ যাই হোক ওখানেই মানিয়ে গুছিয়ে থাকবি। আমাদের অবস্থা তো জানিস। এখনো আমার দুই মেয়ের বিয়ে বাকি।" মৌমিতার বুঝতে অসুবিধে হয়নি কি বলতে চাইছেন মামীমা।
            তাড়াতাড়ি রান্নাঘরের দিকে যায় মৌমিতা,সকালে উঠে নমিতাকে বলেছিলো যদি রান্নাঘরে কিছু করতে হয় ওকে যেন বলে। ওর সব কাজই করার অভ‍্যাস আছে।
           একটু বাঁকা হাসি হেসে নমিতা বলেছিলো," আমার হাতের রান্না ছাড়া দাদা খেতেই পারেনা। তোমরা তো শুনেছি ঘটি,কি রাঁধতে কি রাঁধবে তখন আমাকেই কথা শুনতে হবে। কাল বরং আনাজ কেটে দিয়ো।"
          রান্নাঘরে এসে দেখে ততক্ষণে নমিতা খাবারের থালা আর বাটি করে তরকারি, মাছ সব বেড়ে ফেলেছে। মৌমিতা হাত বাড়াতেই ওকে পাত্তা না দিয়ে এগিয়ে যায় নমিতা ডাইনিং টেবিলের দিকে। ডাক দেয় ," দাদাবাবু চলে এসো তোমার ভাত দিয়েছি।"
   ওদিক থেকে হাঁক মারে কুশল," আরে আমার গেঞ্জি,রুমাল সব কোথায় রেখেছিস দিয়ে যা আগে।"
         একটু ব‍্যস্ত হয়ে ঘরের দিকে যায় মৌমিতা,কুশলের কি লাগবে দেখার জন‍্য। তখনই দেখে নমিতা হাজির গেঞ্জি,রুমাল নিয়ে। যাবার সময় বলে যায় ," সবসময় শুধু নমিতা আর নমিতা,তাহলে আর বিয়ে করলে কেন। এবার বৌদিকে বুঝিয়ে দাও তোমার কি লাগে কখন।"
              কুশলের সব ব‍্যাপারে নমিতার খবরদারি আর তুমি বলে ডাকাটা কেমন যেন কানে লেগেছিলো মৌমিতার। দীঘা গিয়ে ঘনিষ্ঠতার মুহূর্তে একটু অনুযোগ করেছিলো,"তোমাদের তো এতো ভালো সংসার সামলাবার লোক ছিলো তাহলে আমাকে আনলে কেন শুনি?"
             মৌমিতাকে কাছে টেনে কুশল বলেছিলো,"ইশ্ তোমরা মেয়েরা পারো বটে, এইজন‍্যই কথায় বলে মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু,আরে ও কত বছর হলো এখানে আছে। মা যখন অসুস্থ তখন থেকেই। হয়ত আমার কাছাকাছি বয়সই হবে,কিন্তু খুব কম বয়সে বিধবা হয়েছে। স্বামীর সাথে ঘরই করা হয়নি।
হায় ভগবান! বাড়ী থেকে একটা দিন ম‍্যানেজ করে এখানে এলাম। এখানে এসেও সেই নমিতা! তোমাকে তো ওখানে ঠিকমত কাছেই পাইনি এই কদিন। বাড়িতে সবসময় সাবধানে থাকতে হয়,বাবা আছেন,নমিতা আছে।"
                 মনে মনে মৌমিতা ভাবে আবার সেই নমিতা। মৌমিতাকে আদর করতে করতে কুশল বারবারই বলে," উঃ তোমাকে যতটা ইমোশনাল মনে হয়েছিলো,এখন সেভাবে পাচ্ছিনা কেন?আমার চাহিদা কিন্তু একটু বেশিই। এমনটা ঠান্ডা হলে চলবে কেন?"
                মৌমিতা আপ্রাণ চেষ্টায় নিজেকে সঁপে দেয় কুশলের পৌরুষের কাছে। বাড়ির কুশল আর দীঘার কুশল যেন সম্পূর্ণ আলাদা দুই মানুষ। একটু বেশিই চাহিদা কুশলের। মৌমিতা সেই তুলনায় কুশলের মতে একদম মিয়োনো।
               সংসারে প্রতি মুহূর্তেই যেন মৌমিতা অনুভব করে এই সংসারে সে একটা অপ্রয়োজনীয় সাজানো পুতুল। যাকে শোকেসে সাজিয়ে রেখে দেওয়া যায় দিনের পর দিন, খেলা করা যায়না। কোন কাজেও লাগেনা,যেন শ্রীবৃদ্ধি করার জন‍্য রাখা।
             মৌমিতা অপেক্ষায় থাকে কখন নমিতা ডাকবে,যদি কোন কাজে ওকে লাগে। যদিও শ্বশুরমশাই ওকে ভালোবাসেন। কুশল প্রয়োজনীয় জিনিস সবই এনে দেয়। কখনো আবার বকুনিও খায় কোন কাজ জানেনা বলে। নমিতাই বলে," তোমার হাতে সংসারের দায়িত্ব দিলে আর দেখতে হবেনা। দুদিনেই সংসার লাটে উঠবে। যেদিকে আমি দেখিনা সেদিকই অন্ধকার।"
                 ওর ঘরগোছানো, রান্না, জামাকাপড় কাচা কিছুই পছন্দ হয়না ওদের। নমিতা যেন ওকে অযোগ‍্য আর অকর্মণ‍্য প্রমাণ করে খুব আনন্দ উপভোগ করে। কুশল তো প্রায়ই বলে," তোমরা মেয়েরা কিছুতেই খুশি হওনা,কাজের লোক না থাকলেও সমস‍্যা আবার থাকলেও সমস‍্যা। এত কাজ তোমাকে কে করতে বলেছে শুনি? কাজ দেখিয়ে আমাকে খুশি করতে হবেনা।"
            মৌমিতা যেন শাঁখের করাত দুদিকেই কাটে। কাজ না করলেও মুশকিল,আবার কাজ করলেও সমস‍্যা। নমিতা আত্মীয়স্বজন বাড়ীতে এলেই বলে," বৌদিমণি তো এতদিনেও কোন কাজই শিখলোনা,আমিই খেটে মরি।"
            আজকাল সব কথার উত্তর দিতেও ইচ্ছে করেনা মৌমিতার,খুব অবসন্ন লাগে। কারণ নমিতার পর্যায়ে নেমে ঝগড়া করতে রুচিতে বাধে। শুধু মনে মনে অনুভব করে একটা কথা ও নামেই সংসারের গিন্নী কিন্তু সংসারের চাবিকাঠি অন‍্য কারো হাতে। নমিতাও পদে পদে বুঝিয়ে দেয় ওকে ছাড়া সংসার অচল,নমিতার পারমিশন ছাড়া এই সংসারে একটা পাতাও নড়েনা। কুশলও ওর কথায় ওঠে বসে।
               এর মাঝেই একদিন চমকে ওঠে মৌমিতা কুশল ওকে কন্ট্রাসেপটিভ পিল খেতে বলে," এই শোন আমি আর কিছু ব‍্যবহার করতে পারছিনা,তুমি এই ট‍্যাবলেটগুলো খেয়ো। আমি চাইনা এখনই তোমার বাচ্চাকাচ্চা হোক। আমার প্রমোশনটা না হলে কিছুই ভাবতে পারছিনা।"
           অবাক হয়ে যায় মৌমিতা,ওদের যথেষ্ট স্বচ্ছল সংসার একটা বাচ্চা হলে কি এমন হবে? ওর কথা শুনেই প্রচন্ড রেগে যায় কুশল," এখানে থাকতে হলে আমার কথা শুনে চলতে হবে। নাহলে আ্যবরশন করবে কিন্তু কেউ জানবেনা। নাহলে তোমার মামাবাড়িতে দিয়ে আসবো তোমায়। "
            সত‍্যিই তো ওর যাবার কোন জায়গা নেই। তাই চুপ করে যায় মৌমিতা। জীবনটা যেন অসহ‍্য লাগে,রাতে কুশলের জান্তব ভালবাসা যেন অত‍্যাচার বলে মনে হয় আজকাল। ট‍্যাবলেট গুলো প্রতিদিন নিজের হাতে খাওয়ায়। মাঝে মাঝে মাথা ঘোরে,গা গোলায়।
                 এরই মধ‍্যে একদিন শ্বশুরমশাইকে চোখ দেখাতে নিয়ে যেতে হবে। কুশলকে নাকি অফিসে যেতেই হবে। তাই দায়িত্ব পড়লো মৌমিতার ওপর। মৌমিতা খুশিই হলো,যাক একটা কাজে তো লাগবে ও।
               দুপুরের দিকেই বেরোতে হলো,নমিতা তখন ঘুমোচ্ছে। মৌমিতা ডুপ্লিকেট চাবিটা দিয়ে দরজা বন্ধ করে বেরিয়ে যায়। কারণ ওকে ডাকলেই রেগে যাবে,সারাদিন খাটে এই বিশ্রামটা না করতে পারলে ওর মাথা ধরে যায়।
                             চেম্বারে গিয়ে দেখে প্রচন্ড ভিড়, প্রায় তিরিশজনের পরে ওদের নাম। অগত‍্যা বসে থাকা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। এর মাঝেই কুশল ফোন করেছিলো মৌমিতা জানিয়েছে প্রায় তিনঘন্টা লাগবে। ঘন্টা দেড়েক বাদে ওরা আগের প্রেসক্রিপশনগুলো জমা দিতে বলে। মৌমিতা শ্বশুরমশাইকে বলে কাগজগুলো দিতে। উনি প‍্যাকেটটা খুঁজতে থাকেন দেখেন আগের প্রেসক্রিপশনটাই ছাড়া পরেছে। ওরা বলে ওটা না হলে হবেনা। ওটা লাগবে," আপনি এককাজ করুন,এখনো তো দেরি আছে নিয়ে আসুন চট করে।" না করতে পারেনা ও,কোথায় আছে জেনে একটা ট‍্যাক্সি নিয়ে ট‍্যাক্সিটাকে দাঁড় করিয়ে বাড়িতে ঢোকে।
              তখন প্রায় সন্ধ‍্যে হয়ে আসছে, কিন্তু বাড়িটা বড় অন্ধকার লাগে মৌমিতার।একতলায় শ্বশুরমশাইয়ের ঘর থেকে কাগজটা নিয়ে নেয়, নমিতাকে দেখেনা কোথাও। ও তো একতলায় থাকে,আলোও জ্বালায়নি,তাহলে কি বেরোলো?
দোতলার আলোটা জ্বালানোর জন‍্য তাড়াতাড়ি সিঁড়ি দিয়ে ওঠে। বন্ধ দরজার ভেতর থেকে কানে আসে আদরে জড়ানো দুজনের গলার আওয়াজ," কতদিন ধরে অপেক্ষায় আছি তোকে একটু কাছে পাবো বলে। আর ভালোলাগেনা,ও তো একটা মিয়োনো মেয়ে। তোর মতো এতো জোয়ার নেই ওর শরীরে। রাগ করিসনা,কাছে আয়।"
....."হুঁ তোমরা পুরুষমানুষরা এমনি,গাছেরও খাচ্ছো আবার তলারও কুড়োচ্ছো। আমার কত কষ্ট হয় বোঝোনা।"
....."আরে বাবার জন‍্যই তো বিয়েটা করতে হোলো,ওর সঙ্গে থাকি একঘরে কিন্তু সম্পর্ক নেই রে। আমার তো তুইই সব।"
              কান মাথা গরম হয়ে টলে পড়ে যেতেও নিজেকে সামলে নেয় মৌমিতা। ব্লাউজের ভেতরে শরীরের আঁচড়গুলো জ্বালা করতে থাকে। সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসে,বাইরে ট‍্যাক্সি অপেক্ষা করছে। আলোটা আর জ্বালানো হয়না ওর। আজ যে শুধুই অন্ধকার চারিদিকে।
                      স্থবিরের মত বসে থাকা মৌমিতা কিভাবে যে ডাক্তার দেখালো কোন কিছুই ওর মাথায় ঢুকলোনা। না না অনেক হয়েছে,আজ ওকে কুশলের মুখোমুখি দাঁড়াতেই হবে। আগুন ঝরতে থাকে ওর দুই চোখে।
                     রাতে কুশল অন্ধকারে ওর শরীরে ঝাঁপিয়ে আসে ধাক্বা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় মৌমিতা," আমার সাথে তোমার যখন শুধু একঘরে থাকার সম্পর্ক তাহলে কেন আমার শরীরটাকে নোংরা করেছো দিনের পর দিন,নমিতার কাছে যাও। ঐ জন‍্যই ঐ পিলগুলো খাইয়েছো,এখন সবটাই বুঝতে পারছি আমি। ছিঃ আমার ভাবতেও ঘেন্না করছে।"
            বেপরোয়া হয়ে ওঠে কুশল চেপে ধরে মৌমিতার মুখ," একদম চোপ্, বেশ করেছি। কি আছে তোমার? দেখোনি আজকাল সিরিয়ালে লোকের দুটো তিনটে করে বৌ। দিব‍্যি এক বাড়ীতে সুখে সংসার করছে। দিনরাত তো সিরিয়াল গিলছো। কোন কাজ নেই কম্ম নেই,কোন কিছু দেবার মুরোদ নেই। সাজগোজ করে বসে অন্ন ধ্বংস করা।"
            বেপরোয়া হয়ে ওঠে মৌমিতা,"বেশ করি,বিয়ে করে এনেছিলে কেন আমায়। নমিতাকে নিয়েই তো থাকতে পারতে। একটা অমানুষ,অসভ‍্য,চরিত্রহীন কোথাকার।"
               মৌমিতার মুখটা চেপে ধরে গায়ে হাত তোলে কুশল। ধাক্কা দেয় মৌমিতা,ছিটকে পরে কুশল। চাপা গলায় চ‍্যাঁচাতে থাকে," তোমার ব‍্যবস্থা হচ্ছে দেখো তোমার কি করি?" 
              ঝুল বারান্দার এককোণে অন্ধকারে বসে রাতটা কেটে যায় মৌমিতার। ঘেন্না হয় নিজের শরীরের ওপর। কুশলের জান্তব ভালোবাসার কুৎসিত চিহ্নগুলো আঁকা ওর শরীরে।সকাল থেকে আরো অত‍্যাচার শুরু হয়,বেপরোয়া হয়ে ওঠে নমিতাও। বলতে থাকে,"বেশি বাড়াবাড়ি শুরু করেছে ও দাদাবাবু, তুমি অফিসে যাও আমি এবার দেখছি।"ওর খাওয়াদাওয়া বন্ধ হয়ে যায়। বাড়ি থেকে যাতে একদম না বেরোতে পারে,বলে অফিসে বেরোয় কুশল। শ্বশুরমশায়কে তেমন কিছুই বলতে পারেনা মৌমিতা। কে ওকে বিশ্বাস করবে? সেদিনের ডুপ্লিকেট চাবিটা দিয়ে দুপুরে দরজা খুলে এককাপড়ে বেরিয়ে যায় মৌমিতা। লজ্জা,ঘেন্নায় অপমানে দিশাহারা হয়ে যায়। কোথায় যাবে ঠিক করতে পারেনা। মনে হয় দমদমে মাসির বাড়ি যাবে। এই ভেবেই মেট্রো স্টেশনে আসে।
                একটা মেট্রো চলে যায়,ঠিক বুঝতে পারেনা মাসির বাড়ি যাওয়াটা ঠিক হবে কিনা? কি বলবে ওদের,মামাবাড়িতে ফিরে যাবারও পথ বন্ধ। ওরা সবাই হয়ত বুঝিয়ে আবার ওই জানোয়ারটার কাছেই ওকে পাঠিয়ে দেবে। গলার পাশটা জ্বালা করে মৌমিতার।
                পরের মেট্রোটা এগিয়ে আসছে, হঠাৎ মৌমিতার মাথায় অদ্ভুত এক ভূত চেপে বসে,সাদা লাইনটা ডিঙিয়ে প্লাটফর্মের শেষপ্রান্তে গিয়ে লাফিয়ে পড়তে যায়। চোখে অন্ধকার দেখে এক মুহূর্তের জন‍্য,শুধু ট্রেনের হেডলাইটটা একবার চোখে ঝলসে ওঠে।
              কিন্তু কি হলো হঠাৎ? কে যেন ওকে জড়িয়ে ধরে ,দুহাত টেনে ধরে। বোজা চোখটা খুলতে পারেনা মৌমিতা। অসাঢ় লাগে শরীরটা,এলিয়ে পড়ে। চারিদিকে তখন হৈ হৈ,চোখ খুলে দেখে মৌমিতা,ওকে ধরে রেখেছে একজন অপরিচিত ভদ্রলোক চারিদিকে উৎসুক ভীড়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন ভদ্রলোক,ততক্ষণে পুলিশও এসে পড়েছে। ওদের সাথে কথা বলে উনি কিভাবে সামলালেন ব‍্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারলোনা মৌমিতা।
ওকে বসিয়ে রাখা হয় একটা চেয়ারে। কিছুক্ষণ বাদেই ভদ্রলোক বলেন,"চলুন অনেক হয়েছে,এবার বাইরে যাওয়া যাক,নাকি এই স্টেশনেই থাকবেন বলে এসেছেন? এখানে কিন্তু হাওড়া বা শিয়ালদা স্টেশনের মতো খাবার দাবারের স্টল নেই। আর শোয়ার ব‍্যবস্থাও নেই।"
              দাঁড়িয়ে থাকে মৌমিতা,আর কাউকে সে বিশ্বাস করেনা। তাছাড়া একটা অচেনা লোকের সাথে যাবেই বা কেন? কি মতলবে আছে কে জানে?
        "আচ্ছা ঠিক আছে,আমার সাথে কোথাও যেতে হবেনা। আপনাকে দেখে অসুস্থ মনে হচ্ছে। কিছু খাওয়াও হয়নি মনে হয়। বাইরে আসুন,যেখানে পৌঁছে দিতে বলবেন আমি পৌঁছে দেবো।"
            বাইরে বেরিয়ে আসে মৌমিতা,কোথাও যেতে চায়না ও শুধু বলে," আপনাকে অনেক ধন‍্যবাদ,আপনার অনেকটা সময় নষ্ট হলো। আপনি এবার আসুন। আমি যেতে পারবো।"
......."উহুঁ সেটি হচ্ছেনা। আমি চলে যাই তারপর আপনি হয়ত কোন এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে ঝাঁপিয়ে পড়বেন। ঘুমের ওষুধ তো পাবেন না তাহলে হয়ত ইঁদুর মারার বিষ খাবেন। আর সময় নষ্টের কথা বলছেন,এটাই তো আমার কাজ। চলুন একটু চা খেয়ে নেওয়া যাক।গরম কিছু খেলে আপনার ভালো লাগবে। তারপর ঠিকানা বলবেন।"
        মৌমিতা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে ভদ্রলোকের দিকে। মাথায় কিছু ঢুকলোনা। কি বলছে লোকটা? এটাই ওনার কাজ মানে স্টেশনে ঘুরে বেড়ানো।
          এদিকে অফিস থেকে এসে প্রচন্ড মাথা গরম হয়ে যায় কুশলের। নমিতার ওপর চোটপাট চলে, কি করে চলে গেলো বাড়ি থেকে মৌমিতা। এখন যদি কোনভাবে ওর কুকীর্তির কথা বলে ফাঁসিয়ে দেয় ওকে। মনে মনে একটু ভয়ও পেলো। তবুও হুমকি দিয়ে ওর মামার বাড়িতে ফোন করলো দুশ্চরিত্রা মৌমিতা বাড়ি থেকে কারো সাথে পালিয়ে গেছে। জেনেশুনে একটা খারাপ মেয়েকে চাপিয়েছিলেন ওর ঘাড়ে। মামীর চাপে,মামাও তেমন কিছু করলেন না। টুকটাক আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে খোঁজ নেওয়া ছাড়া।
             চা খাইয়েছিলেন ভদ্রলোক ওকে। ওনার ধমকে মৌমিতা খাবারও খেয়েছিলো। "দিন এবার ঠিকানাটা,আমায় এবার ফিরতে হবে,অন‍্য একটা কাজ আছে।"
        ...."আমার কোথাও যাওয়ার নেই,আপনি যান। আমি একটা কিছু ব‍্যবস্থা করে নেবো।"
          কিছু কিছু টুকরো কথা বলতে বাধ‍্য হয় মৌমিতা। ভদ্রলোকের চোখ এড়ায়না ওর হাতের রক্ত জমে যাওয়া কালশিটে দাগটা।
                ......"আচ্ছা বুঝলাম,সংসার আপনার কাছে অন্তসারশূন‍্য। কিন্তু রাত হয়ে যাচ্ছে,এখন কি এভাবে একা ঘুরবেন। বিপদ হতে কতক্ষণ?"
                 একটা কার্ড বার করে দেখান ভদ্রলোক," আমি অমৃত, হাসবেন না নামটা শুনে,কাউকে অমর করার ক্ষমতা আমার নেই তবুও স্বপ্ন দেখানোর শুধু চেষ্টা করি। আমার একটা সংসার আছে,বেশ কিছু ভবঘুরে সদস‍্য আছে সেখানে। যাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই আপনার মতো। বলতে পারেন যাদের কেউ চায়না,বা আমার আপনার মতো যারা অপ্রয়োজনীয় বস্তু সংসারে। ওটা তাদের ভালোবাসার সংসার, নাম " আমার মন"।
তবে বেশ কষ্ট আছে সেখানে,অনেক কাজ করতে হয়,রান্নাবান্না, সেলাই,কখনো পাপড় বানানো বা বড়ি দেওয়া বা ধূপকাঠি বানানো কত কি। আসলে কাজ না করলে অত বড় সংসারটা চলবে কি করে বলুন?
         সবার মন জুগিয়ে তো চললেন অনেকদিন,একবার ট্রাই করে দেখবেন নাকি আপনার মন কি চায়? অবশ‍্য অন‍্যদের মনের খবরও রাখতে হবে,এই যেমন আমি এখন নিচ্ছি আপনার মনের খবর। চলুন,আরো একবার বিশ্বাস করে নাহয় বাঁচার জন‍্য বাজী ধরলেন। মরলে তো সবই শেষ। আরে লড়াই করার আগেই হেরে যাবেন। একবার দেখুন না কত সমস‍্যায় আছে মানুষ। আপনিও মনের যত্ন নেবেন তখন।"

                  অদ্ভুত কথা বলেন ভদ্রলোক হয়ত অনেক কঠিন কথাকে খুব সহজ করে বলেন। মেলাতে পারেনা কুশলের সাথে অমৃতকে। অথচ দুজনেই পুরুষ,একজন মৃত‍্যুর দিকে ঠেলে দেয় আর আরেকজন নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখায়। সত‍্যি কি বিচিত্র এই সংসার! প্রতিটি কথা বাঁচার স্বপ্ন দেখায়। মৌমিতারও ইচ্ছে করলো বিশ্বাস করতে,জীবনটাকে দেখতে,লড়াই করতে।
            অমৃত নিয়ে এলো মৌমিতাকে ওর নতুন জীবনে,"আমার মনে"। যেখানে মানুষ বাঁচে,বাঁচায় আর বাঁচার স্বপ্ন দেখায়। অবাক হয়ে যায় মৌমিতা কতগুলো বিভিন্ন বয়সের মানুষ যাদের মধ‍্যে কোন রক্তের সম্পর্ক নেই অথচ কি সুন্দর বাঁধা পড়ে আছে একটা সংসারে। এদের কাউকে ট্রেনের সামনে থেকে,কাউকে বা নদী থেকে আবার কাউকে বা মেট্রো স্টেশন থেকে বাঁচিয়ে এনেছে একসময়ের জীবন থেকে মুখ ফেরানো কিছু মানুষ। অবশ‍্য অনেকেই ফিরে যায় মা বাবা,আত্মীয়স্বজনের কাছে।ওদের এটাই কাজ,আত্মশুদ্ধি করা আর আত্মহত‍্যা বন্ধ করা।
              জানতে পারে অমৃতও একদিন গেছিলো আত্মহত‍্যা করতে,যখন কাশ্মীর বেড়াতে গিয়ে হোটেলে অগ্নিকান্ডে হারিয়েছিলো স্ত্রী আর সন্তানকে। কিন্তু শেষমুহূর্তে মনে হয়েছিলো ওর ছোটমেয়েটা সামনে এসে দাঁড়িয়েছিলো। তাই তারপর থেকেই চলছে আত্মশুদ্ধি,আত্মহত‍্যা নয়। বাঁচুক মানুষ,ভালো থাক মন আর শুদ্ধ হোক জীবন। আর তারজন‍্য দরকার পরিশ্রম,কাজই মানুষকে ভালো রাখে। তাই আমার মনের সবাই কাজ করে সারাদিন,নিজেকে আর অন‍্যদের ভালো রাখার জন‍্য।
          জীবন বাঁচানো আর জীবনে অমৃতের ছোঁয়া দেওয়াই ওদের কাজ। প্রতিদিন অনেক প্রাণ বাঁচায় ওরা বিভিন্ন জায়গায়। আর বাকী সময়টা নিজেদের বাঁচানোর কাজে লাগায়। দেখতে দেখতে এই পরিবারের একজন হয়ে কোথা দিয়ে যে একটা বছর কেটে গেছে মৌমিতা বুঝতেই পারেনি। অনেককিছু শিখতে হয়েছে বাঁচার আর বাঁচানোর জন‍্য। হয়ত পুরোনো সাদামাটা গৃহবধু মৌমিতা এখন অনেক বেশি পজেটিভ আর জীবন্ত। প্রতিমুহূর্তে শোনে জীবনের পদধ্বনি,উপভোগ করে, প্রাণভরে বাঁচে।
                   ওদের পরিবারের সদস‍্যদের মত মৌমিতাও বাঁচায় অনেককে,ফেরায় জীবনে। সেদিন হঠাৎই সেন্ট্রাল স্টেশনে ঠিক সন্ধ‍্যের মুখে মৌমিতা পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বাঁচায় একজনকে ও ভাবতেই পারেনি মাথায় ঘোমটা দেওয়া বৌটি এমন করতে পারে। কিন্তু ভদ্রমহিলাকে আটকাতে প্রায় হিমশিম খেয়ে গেছিলো ও। মৌমিতাকে প্রায় ধাক্বা দিয়ে এগিয়ে যায়,কিন্তু ট্রেনটা ব্রেক কষাতে হয়ত শেষরক্ষা হয়। উল্টো হয়ে পড়ে যাওয়া ভদ্রমহিলাকে টেনে তোলে মৌমিতা দুএকজনের সাহায‍্যে।
                 ভদ্রমহিলার মুখটা দেখে চমকে ওঠে মৌমিতা। কাকে দেখছে ও! এ যে নমিতা! হাল্কা জল ছিটোয় ওর চোখেমুখে। এক দেখায় বদলে যাওয়া মৌমিতাকে একটু চেনা মুশকিল। তবুও নমিতা চিনতে পারলো ওকে।একদিন যাকে ঘাড়ধাক্বা দিয়ে বিদায় করেছিলো বাড়ি থেকে। অতিষ্ঠ করে তুলেছিলো যার জীবন, সেই তাকে বাঁচিয়েছে।
               অতীতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া মৌমিতার সত‍্যি করুণা হলো নমিতাকে দেখে। বলে ফেলে "যে সংসারে তোমার ইচ্ছে ছাড়া একটা পাতাও নড়তো না, সেই তুমি এখানে কেন?"
         নিজের আত্মগ্লানিতে কথা বেরোয়না নমিতার। ততক্ষণে ওকে স্টেশন থেকে নিয়ে বেরোয় ও, আজকাল পুলিশ ওদের সংস্থাকে সহায়তা করে। জানতে পারে বহুদিন ধরে শারীরিক সম্পর্ক আছে ওর কুশলের সাথে। সেইজন‍্য ওকে নিয়মিত পিল খেতে হত। কিন্তু এর আগেও একবার আ্যবরশন করতে হয়েছে ওকে। মৌমিতা চলে যাবার পর ইচ্ছে করেই কিছুদিন ওষুধ খায়নি নমিতা। তাই আবার ও তিনমাসের প্রেগন‍্যান্ট। আর সেটা জানার পর কুশলের অত‍্যাচার চরমে উঠেছে,কারণ কিছুতেই আ্যবরশনে রাজি হয়নি নমিতা। ওকে খারাপ চরিত্রের মেয়েমানুষ বলে কুশল বলেছে অন‍্য কারোর দায় এনে কুশলকে ফাঁসাচ্ছে ও।
          হয়ত সেই আত্মগ্লানিতে নিয়তি ওকে এখানে এনেছে। কারণ কোথায় যাবে ও? ওর তো কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।
               হাতের মুঠোটা শক্ত হয়ে যায় মৌমিতার। ওর সাথে করা নমিতার সেই দুর্ব‍্যবহার ভুলতে চায়। নমিতাকে নিয়ে যায় 'আমার মনে' কথা বলে অমৃতর সাথে। মৌমিতাকে বোধহয় নতুন করে শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে করলো অমৃতর। মনে হলো সেদিনের মরতে যাওয়া একটা দুর্বল মেয়ে এতো মনের জোর পেলো কোথা থেকে?
            ওর কি করণীয় ঠিক করে ফেলেছিলো মৌমিতা,শুধু একটু সমর্থন চাইছিলো অমৃতর। অমৃত বললো," শুধু আমি কেন,আমার মনের পুরো টিম তোমার সাথে আছে। এতো ভাবছো কেন?"
                কুশলকে আর কিছুতেই ছাড়বেনা মৌমিতা। সমাজের বুকে যারা এমন কুকর্ম করে মাথা উঁচু করে ঘুরে বেড়ায় সত‍্যিই তাদের শাস্তি হওয়া উচিত। আর হয়ত এমন কয়েকজনের জন‍্য আঙ্গুল ওঠে পুরো পুরুষ সমাজের দিকেই। আজ আর ও ভয় পায়না।
                অমৃত একটু সাহায‍্য নেয় এবার আইনের। কুশলের বাড়ীতে হঠাৎই উপস্থিত হয় ওরা বেশ কয়েকজন মিলে, তবে মৌমিতা আসেনি তখন। কিছুতেই ওদের সাথে কথা বলতে চায়না কুশল কিন্তু পরে বাধ‍্য হয় চাপ দেওয়াতে। অমৃত বলে কি অবস্থায় নমিতাকে পাওয়া গেছে। নমিতার সমস্ত দায় ওকে নিতে হবে আর ওকে বিয়ে করতে হবে। প্রচন্ড ক্ষেপে ওঠে কুশল যথারীতি বলে ওর বৌ আছে,বৌয়ের সাথে কোন ডিভোর্স হয়নি এখনো। আর নমিতার এই বাচ্চা ওর নয় সুতরাং ও কিছুতেই একটা দুশ্চরিত্র কাজের লোকের দায়িত্ব নেবেনা।
          এবার কুশলকে চাপ দেওয়া হয় যে দরকার হলে বাচ্চাটার ডিএন এ টেষ্ট হবে। মুখটা শুকিয়ে যায় কুশলের। তবে এবার আর ওর বাবা সবটা শোনার পর চুপ করে থাকেননি,ছেলের বিপক্ষেই গেলেন উনি।
         অমৃত বলে,"নমিতাদেবীকে স্ত্রীর স্বীকৃতি দিতেই হবে আপনাকে। মেয়েরা শুধু ভোগের বস্তু নয়। ডিভোর্সের ব‍্যবস্থা হয়ে যাবে,আমরা করবো।" আশ্চর্য হয়ে যায় কুশল এরা এতো জোর পেলো কোথায়? অথচ আইনের আশ্রয় নিয়ে এসেছে,আর সাথে নমিতা। বাড়ীতে বাবা বিপক্ষে। পাড়ায় এর মধ‍্যেই জানাজানি হয়ে গেছে। ওরা অফিসেও জানাবে বলছে,একদম চাপে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা তাই আর বেশি গলা বাজি করতে পারেনা কুশল।
              ওরা নমিতাকে সাথে নিয়ে চলে যায় বলে যায় ডিভোর্সটা হলে বিয়েটা হবে।শুধু একটা কথাই কুশলের মাথায় ঘুরতে থাকে মৌমিতার তো একবছরে কোন পাত্তাই পাওয়া যায়নি, কে ডিভোর্সটা দেবে?
                    অমৃত নিজে দায়িত্ব নিয়ে ব‍্যবস্থা করলো সব। মৌমিতাকে যে খুব শ্রদ্ধা করতে ইচ্ছে করে ,হয়ত ভালোবাসতেও ইচ্ছে করে। ও ইচ্ছে করলে অনেকটা নাস্তানাবুদ করতে পারতো কুশলকে, নিতে পারতো নমিতার সমস্ত খারাপ ব‍্যবহারের প্রতিশোধ কিন্তু মৌমিতারা বোধহয় এমনই হয়।
               মৌমিতা অনুভব করে কুশল নমিতাকে ব‍্যবহার করেছিলো ভোগ করেছিলো ওকে বা নমিতা হয়ত কুশলকে দিয়েছিলো স্বেচ্ছায় ওর শরীর কোন কিছু পাবার আশায়। আজ আর সে প্রশ্নের উত্তর কারো কাছেই চাইতেই প্রবৃত্তি হয়না ওর। কুশল ওকে দেখে হয়ত চমকে উঠেছিলো কোর্টে কিন্তু মৌমিতার আর তাকাতে ইচ্ছে করেনি ওর অভিশপ্ত অতীতের দিকে। হয়ত বা মনে হয়েছে ঐ অন্ধকারের পরই এতোটা আলোর ঝলকানি এসেছে জীবনে। যে আলো অকৃপণ ভাবে ছড়িয়ে দেওয়া যায় হাজার মানুষের জীবনে।
                অমৃতরাই ব‍্যবস্থা করে বিয়েটা দিয়ে দিয়েছিলো কুশলের আর নমিতার। বাধ‍্য হয়েছিলো কুশল বিয়ে করতে। নমিতার সন্তান পিতৃত্বের পরিচয়ে জন্মাবে এই ভেবেই আত্মতৃপ্তি পায় মৌমিতা। হয়ত এটা কুশল আর নমিতার জন‍্য অন‍্য আরেক রকম প্রায়শ্চিত্তের আয়োজন।

              চলে যাবার আগে আত্মগ্লানিতে অনুতপ্ত নমিতা বলেছিলো,"বৌদিমণি,তুমি কেন আমার মতো একটা বাজে মেয়ের জন‍্য এতো কিছু করলে? তুমি তো কিছুই পেলেনা জীবনে।"
               চকচকে উজ্জ্বল স্বপ্ন দেখানো দুই চোখ মেলে মৌমিতা বলেছিলো," বৌদিমণি বলে তুমি আর আমায় কখনো ডেকোনা,ওই পরিচয়টা আমি অনেকদিন আগেই মুছে ফেলেছি। আমি হয়ত জীবনে যা পেয়েছি অনেক তপস‍্যাতেও লোকে পায়না।'
              মৌমিতা এক স্বাধীন , উজ্জ্বল ব‍্যক্তিত্ব যে জানে হাত বাড়ালেই সে নিতে পারে অমৃতের স্বাদ। তবুও একা সেই অমৃত ভোগ করতে চায়না সে। অমৃত মৃতসঞ্জীবনী সুধা হয়ে বাঁচাক হাজার মানুষের জীবন, শুদ্ধ করুক তাদের আত্মা,বাঁচিয়ে রাখুক বাঁচার ইচ্ছেগুলোকে।

সমাপ্ত:-

            

            
                   
                                
            
                  

             

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...