Chaddi na Chaddi#ভালোলাগার_এপ্রিলফুল#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
গল্প ১-
সারা সপ্তাহে এই রবিবারটাই ল্যাদদিবস,ওহ্ বেশ অনেকটা বেলা হয়ে গেছে চমকে উঠে পড়ে অর্ক,তৃণাটাও উঠে পড়েছে। সময় দেখার জন্য মোবাইলটা নিতে যায় হাত বাড়িয়ে। হঠাৎই মোবাইল চাপা খামটা নজরে পড়ে যায়,এটা আবার কি? ভেরি আর্জেন্ট লেখা। ওহ্ আজ তো এপ্রিলের এক,নিশ্চয় তৃণার কান্ড। নাহ্ কিছুতেই খামটা খুলবেনা। তবুও মনটা উশখুশ করতে থাকে,এদিক ওদিক তাকিয়ে খুলেই ফেলে খামটা,যাক্ পাজিটা নেই কাছাকাছি। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনা,তৃণার প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্ট,পজেটিভ। প্রায় পাঁচবছর ধরে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু এটা কি সত্যি না এপ্রিলফুল? ছুটে যায় বাইরে,পর্দার আড়ালে তৃণা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে দুষ্টুমি ভরা মিষ্টি হাসি মাখিয়ে বললো, " ইশ্ আজ আর এপ্রিলফুল করা হোলনা।"
...." আমি তো এমনিতেই ফুল মানে বুদ্ধু বনে গেছি।"
-------------------------------------------------------------------
গল্প ২:
শান্তিধাম বৃদ্ধাশ্রমে প্রায় পাঁচবছর এসেছেন সুষমাদেবী,বয়েস এখন পঁচাত্তর। সব কিছু ঠিকঠাক আছে শুধু একটু কানে কম শোনেন।
এখানে আসার পর তেমন কেউ উঁকি মারেনা। এটাই এখন ওনার বাড়িঘর। এখানেই এখন বন্ধুবান্ধবী সব। রবিবার সকালেই দুএকবার বোকা বনেছেন এখানকার বন্ধুদের কাছে। ওহ্ এইবয়সেও এরা বেশ আছে। আসলে এটাই জীবন। হঠাৎই কেয়ারটেকার জীবন ডাক দেয়," ও মাসিমা একবার গেষ্টরুমে আসুন,নাতি এসেছে।"
....." সাতসকালে মশকরা, পাজি,বদমায়েশ
বলে কিনা হাতি এসেছে। যা আপদ,সকাল থেকে শুরু হয়েছে এপ্রিলফুলের ঘটা।"
......" একটু কাছে এগিয়ে এসে,কানের কাছে এসে বলে আপনার নাতি এসেছে, বসে আছে।"
বিশ্বাস করতে পারেননা সুষমা,যখন এখানে আসেন সে তো অনেক ছোট। বদমায়েশটা নিশ্চয় ঠকাচ্ছে, তবুও এগিয়ে যান সুষমা। একটা কমবয়েসি ছেলে এসে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে একদম মিলনের ছোটবেলার মুখটা বসানো। চোখটা ঝাপসা হয়ে যায় সুষমার এপ্রিল ফুলে সত্যি বোকা হয়ে জড়িয়ে ধরেন নাতিকে।©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
------------------------------------------------------------------
গল্প ৩:
"ঐ দিভাই আরে শোননা, কাল ক্যুরিয়ার সার্ভিসের লোক এসে ফিরে গেছে ওরা আর আসবেনা,লেটার বক্সে দেখলাম একটা নোটিফিকেশন রেখে গেছে। ইশ্ আমরা মুভি দেখতে গিয়েছিলাম না। তুই আজকে গিয়ে ওটা কালেক্ট করে নে।"
....." তোর্সা,আমাকে কত বোকা বানাবি বলতো? সারাজীবন বোকাই বানালো সবাই।"
...." বিলিভ মি ডিয়ার দিভাই, একদম সত্যি বলছি সোনা।"
...."এই আজ তো এপ্রিলফুল, তাহলে তো আরো যাবোনা। আগে দেখা দেখি নোটিফিকেশন।" সত্যিই নোটিফিকেশনটা দেখালো তোর্সা তিস্তাকে। অগত্যা ঠকবে জেনেও রওনা দিলো। চিঠিটা হাতে পেয়ে খোলে তিস্তা,আড়চোখে তাকায় তোর্সার দিকে।
খামটা খুলে চোখটা কচলে নেয় আবার,বেশ কিছুদিন আছে সেপারেশনে উত্তীয়র সাথে। সমস্যা শুধুই ইগোর লড়াই আর কিছুনা।
ছোট্ট কয়েকটা লাইন," হার মানা হারটা আমারই থাক, তোমাকে ছাড়া দিনগুলো বড় রঙচটা। একটুকরো রঙ ছড়িয়ে দাওনা আবার নতুন করে আমার ফ্যাকাশে জীবনে। অপেক্ষায় আছি যদি ডাকো,আসবোই।"
"কি রে কার চিঠি? চোখে জল কেন? এবার বিশ্বাস হলোতো? আমি লিখিনি।"
সত্যি হয়ত চিঠিটা না আনতে এলে আজকে পুরো ফুল হয়ে যেতো।
ফ্রুট আ্যন্ড নাটটা চিবোতে চিবোতে তোর্সা বললো," চিঠি খুলে হলি ফুল, এখন কেঁদে পাসনা কুল।"©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
-------------------------------------------------------------------
গল্প৪:
রবিবার সকালে কোচিং ক্লাশে বেশ গম্ভীর হয়ে বসে আছেন রাজেন স্যার। আজ তো এপ্রিলফুল,ছেলেগুলো যা এক একটা রামবিচ্ছু কি মতলব আঁটছে কে জানে। প্রথমেই কয়েকটা কঠিন অঙ্ক দিয়ে বসিয়ে দিলেন সবকটাকে। এইবার জব্দ হবে আর বিশেষ কিছু করতে পারবেনা। একজনের কাছে বোকা হলেই পুরো ক্লাশ মিষ্টি খেয়ে ছাড়বে যেমন গতবার করেছে।
খাতাগুলো ওদের খুলে দিতে বলে এক এক করে চেক করছেন সাবধানে। শুধু বিট্টুটা কিছুতেই খাতাটা খুলে দিলোনা। " স্যার একটু খাতাটা খুলুননা।"
"ওটা রেখে যা,পরের সপ্তাহে ফেরত পাবি।"
খুব মিস করলেন কিন্তু স্যার ,সারপ্রাইজ ছিলো একটা।"
মনটা একটু গলেও গেলো,এতো করে বলছে ছেলেটা। দেখাই যাকনা খুলে। সত্যিই খুলে চোখটা ছানাবড়া হয়ে যায় রাজেনস্যারের সত্যিই তো বোকা বানিয়েছে ছেলেটা। এতোদিন ধরে যাকে মনে হয়েছে কিছুই হবেনা সে কিনা পুরো খাতা জুড়ে এঁকেছে স্যারের গোমড়ামুখের হুবহু একখানা ছবি। সত্যিই চমকে দিয়েছে বিচ্ছুটা। এও একরকমের বোকা হওয়া, আর এমন বোকা হতে আজ এপ্রিলফুলের দিন বেশ লাগলো। ওরে তার সাথে একটা মজার ছড়াও লিখেছে,এতো গুণ ছেলেটার!
হাসতে স্যার করবেননা ভুল
আজ কিন্তু এপ্রিলফুল।
আমরা সবাই খাবো মিষ্টি
নইলে হবে অনাসৃষ্টি।
মুগ্ধ রাজেন স্যার আর পারলেন না দুএক লাইন না লিখে।
"বেশ হয়েছে
হয়েছি ফুল।
ছবি আঁকিস তুই
ওয়ান্ডারফুল।"
"এই নান্টু আর জগু যা তো নগেনের দোকান থেকে,গরম ছানার জিলিপি আর রসগোল্লা নিয়ে আয়।"©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
-------------------------------------------------------------------
অন্য এপ্রিলফুল
"দেখি একটু,হ্যাঁ বেশ। এবার এই হাঁটুটা। সব ঠিক হয়ে যাবে,শুধু যেমন ভাবে বলবো সেগুলো ফলো করুন,এক্সারসাইজ ,ডায়েট,মেডিসিন সবটা।"
"খুব কষ্ট পাচ্ছি ব্যাথায় ডাক্তারবাবু প্রায় শয্যাশায়ী হয়ে গেছি। অনেকটা নিশ্চিন্ত হলাম। আপনার ফি টা।
" চিনতে পারছেননা স্যার,আমি ইন্দ্র। সেই যে কবিতামুখস্থ করতে পারিনি বলে...."
মনে পড়ে যায় একদিন একশোবার কানধরে উঠবোস করিয়েছিলেন ছেলেটিকে। হাঁটুব্যাথায় আর লজ্জায় কয়েকদিন আসেনি। তার কিছুদিন বাদে স্কুল ছেড়েছিলো।
ওটা রেখে দিন স্যার আর ফিজিওর জন্য আমি লোক পাঠিয়ে দেবো।" এই বলে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে। মাথায় হাত রাখেন স্যার," পুরোনো কথা মনে রেখোনা।"
...." না স্যার,ওইদিনগুলো আমার আশীর্বাদ। হয়ত সেইজন্যই বড় হতে পেরেছি।"
এও একরকমের এপ্রিলফুল,আজ স্যারের জীবনে
#ঝাণুমাসির_বৌমা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
ব্যাঙ্কের লকারের সামনে দাঁড়িয়ে বুকের ভেতরটা হু হু করে উঠলো ঝাণুমাসিমার মানে আমাদের ঝর্ণা মাসিমার। হায় হায় শেষে এতোদিন ধরে আগলে রাখা চন্দ্রহারটা ঝুলবে গিয়ে সেই আ্যংলো বউমার গলায়! শাশুড়ি দিয়েছিলেন তার শাশুড়ির আশীর্বাদের হারখানা,তাকে বলেছিলেন ,"যত্ন কইর্যা রাইখ্যো আমাগো বংশের জিনিস।" হায় হায় বাবু আর মাইয়া পাইলোনা। একেবারে শেষে মেমসাহেব। একটু কথা বলেও সুখ পাইবেন না। বাঙাল নাইবা জানতো বাংলা জানলেই হইতো। হতচ্ছাড়া পোলা,এয়ারপোর্টে আইয়্যা ফোন করত্যাসে কাল আইবো এক্কেবারে নতুন বৌ লইয়া। হায় ভগবান শ্যাষে এই কামটা করলো বাবু, সবই কপাল। আত্মীয়রা মুখ টিপে হাসেন,একদম ঝামা ঘষেছে ছেলে মুখে,বড্ড ফটর ফটর করে ঝাণুটা,বেশ হয়েছে। ভালোই হবে বোঝ এবার কেমন বৌমার সাথে ইংরেজীতে কথা বলিস! সারাক্ষণ তো বাঙালভাষায় করুম,খামু চলছে। আহা আহা তাও আবার এপ্রিলফুলের দিন বৌ আসছে। আচ্ছা জব্দ করেছে ছেলে।
একমাত্র ছেলে বলে কথা, সব ব্যবস্থাই করেছেন বধূবরণের ঝর্ণা মাসিমা। কাগজ কলমে বিয়ে করেছে তবুও তো নিয়ম কিছু করতেই হবে। সব আয়োজন করতে করতেই মাঝে মাঝেই মেসোকে বলেন," আমার বুকের ভেতর কেমন যেন করত্যাসে গো,কিস্যু ভালো লাগত্যাসে না।'
স্বান্তনা দেন মেসো," মাইন্যা লও ঝাণু,পোলাটা তো আমাদের আর ওর বৌ সুতরাং তারেও আপন কইর্যা লও।"
ছেলে ফোন করে পয়লা এপ্রিলের সকালে," মা আমরা এসে গেছি, তুমি তো সন্ধ্যের আগে লিলিকে নিয়ে ঢুকতে নিষেধ করেছো। তাই আপাতত এয়ারপোর্টের কাছেই একটা হোটেলে আছি।"
" তাই আয় বাবা,আমাগো তাই নিয়ম।"
সন্ধ্যেবেলা বাড়ী ভর্তি আত্মীয়স্বজন,যাকে যাকে পেরেছেন ফোনেই খবর দিয়েছেন। অনেকেই এসেছেন ঝাণুমাসির মিইয়ে যাওয়া মুখটা অবলোকন করতে আর বাঙাল বনাম ইংরেজীর যুদ্ধ দেখতে। অনেকে তো বেশ একটা মিষ্টি নামও দিয়ে ফেলেছে এই নাটকের," বাঙাল শাশুড়ির আ্যংলো বউ।"
ওই আ্যংলো ইন্ডিয়ান কথাটার মাঝেই একটু শান্তি খুঁজে পেয়েছেন মাসিমা, "যাক্ এক্কেবারে পুরা সাহেব না। একটু নিশ্চয় ইন্ডিয়ার গন্ধ থাকবোনে।"
আরে ওই তো গাড়ীটা আসছে, "কই গো ঝাণুদি, কোথায় গেলা,আরে বরণডালাটা লইয়্যা আইসো।"
বেজার মুখে একটু হাসি ফুটিয়ে গরদের শাড়ী পরে এগিয়ে আসেন ঝাণুমাসিমা। ছেলে আর বৌ এগিয়ে আসে, জড়িয়ে ধরে মাকে বাবু," রাগ কোরোনা মা,এবার থেকে একটু ইংরেজী শিখে নাও,তোমার কাজে লাগবে। লিলিই শিখিয়ে নেবে তোমায়।'
মনে মনে মুন্ডুপাত করেন বৌমার, এর মধ্যেই কেমন বৌভক্ত করসে পোলাটারে। মগজধোলাই হইয়া গেসে এরমাঝেই,কক্ষণো পাল্টামুনা আমার ভাষা। তবে মাইয়্যাটারে দেখতে কিন্তু বেশ,রঙখান মেমেদের মতো অত ফর্সা না,মুখখানাও বেশ মিষ্টি। তারপরে বাবু বুদ্ধি করে বোধহয় পুরো বাঙালি সাজে একদম বেনারসী পরিয়েই নিয়ে এসেছে। বৌকে দেখে মুগ্ধ অনেকেই তবুও অপেক্ষায় আছে আরে খেলা তো অনেক বাকি ,সবে তো সন্ধ্যে।
বরণপর্ব ভালোভাবেই মিটে যায়। ওরে বাবা বৌ তো মুখ হা করে পুরো রসোগোল্লাটাই খেয়ে ফেললো। ঝাণুমাসিমা তাড়াতাড়ি করে জলের গ্লাসটা এগিয়ে দিলেন।
ছেলে বৌকে কোলের কাছে বসিয়ে হাতে লোহা পরাতে গিয়ে মুগ্ধ হলেন ঝাণুমাসিমা আরে এতোক্ষণ তো লক্ষই করেননি হাতে শাঁখাপলা পরে এসেছে বৌ। এবার চন্দ্রহার পরাতে গিয়ে বুকটা বড্ড হু হু করে উঠলো মুখ দিয়ে বেড়িয়ে এলো," এই হারটারে যত্ন কইর্যা রাইখ্যো,আমার দিদিশাশুড়ির হার। আমাগো বংশের জিনিস।"
বলেই মনে মনে ভাবেন,কাকে কি বলছেন,একবর্ণ বুঝলো না কিছুই। ছেলেকে বলেন," বাবু ওরে একটু বুঝাইয়্যা দে...."
ঝাণুমাসিমার কথা শেষ না হতেই যা উত্তর পেলেন,তাতে বোধহয় একটা ভূমিকম্প হলেও সবাই এতো চমকাতো না। " রাখুম মা,আপনার আশীর্বাদ আমি যত্ন কইর্যা রাখুম।" শাশুড়িমায়ের পায়ে ভক্তিভরে প্রণাম করে উত্তর দেয় লিলি।
নিজের কানের ফুটোগুলো একবার আঙুল দিয়ে চেক করে নেন ঝাণু মাসিমা,ঠিক শুনছেন তো?
কি মা বৌমা পছন্দ তো? কেমন বোকা বানালাম বলতো আজ এপ্রিল ফুলের দিন। শুধু ঝাণুমাসিমা কেনো আজ যে বোকা হয়েছে সবাই। ইশ্ বাবুটার পেটে পেটে এতো বুদ্ধি,সবাইকে বোকা বানালো! ওদেশে গিয়েও খুঁজে খুঁজে সেই বাঙালভাষী আ্যংলো,আরে জোটালো কি করে? আসলে ওর বাবা ইন্ডিয়ান সিটিজেন কিন্তু পূর্ববঙ্গের মানুষ,আর মা বিদেশিনী। বাবাকে ব্যবসার জন্য প্রায়ই ঢাকা যেতে হয়। তাই একটু একটু বাঙালভাষা লিলিও জানে।
......" বিদেশে তো ওরাই বাঁচিয়ে রেখেছিলো মা, প্রথম যেদিন লিলি লাঞ্চে ইলিশভাপা খাইয়েছিলো সেদিনই পুরো ফিদা হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর যখন দেখলাম বাঙাল ভাষাও জানে একদম ফাইনাল করে ফেললাম।"
মুগ্ধ ঝাণুমাসিমা ততক্ষণে ছেলে আর বউমাকে জড়িয়ে ধরেছেন। ধমক দেন ছেলেকে, " লজ্জাশরম সবই গেছে দেহি। চুপ যা অসভ্য পোলা। কইগো, অন্য বাক্সগুলান দাও না এদিকে।"
সানাইয়ের সুরটা আরো মিঠে লাগলো , বুক ধড়ফড়ানিটাও একদম নেই ঝাণু মাসিমার। শুধু অনেকেই নাটকটা ঠিক জমলোনা তাই বেজার মুখে বাড়ি ফিরলেন তবে খাওয়াটা কিন্তু চব্যচোষ্য হলো।
সমাপ্ত:-
#চ্যাটের_ফাঁদে#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
কয়েকদিন ধরে অনেকগুলো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট জমে ছিলো,দেখেশুনে কয়েকটা আ্যকসেপ্ট করলো সুজাতা, একটু বাদেই মেসেঞ্জারে পিং। নতুন বন্ধুর প্রশ্নে একটু চমকে ওঠে।
...." হাইইই! তোমার বয়েস কত?"
মেজাজটা একটু খারাপ হয়ে যায় সুজাতার,ইচ্ছে করলো এক্ষুণি খচাৎ করে আনফ্রেন্ড করতে। অসভ্য একটা কোন ম্যানার্স জানেনা মেয়েদের বয়েস এইভাবে কেউ জিজ্ঞেস করে। তারপর ওর মতো একজন মধ্যবয়সী ভদ্রমহিলার।
গজগজ করতে শুনে মেয়েও টিপ্পনি কাটলো, তোমার যা ছবি আসে মা,লোকটার আর দোষ কি? আরে সাসপেন্সে থাকনা কি দরকার ঘাটিয়ে,চুপ থাকোনা , থাক চাপে।
চুপ থাকার কি উপায় আছে আবার এক প্রশ্ন," কি উত্তর দিচ্ছোনা কেন?
মহা নাছোড়বান্দা তো,বার বার জ্বালাচ্ছে এমনও লোকজন আছে,ভাবা যায়না। এরমাঝেই টুক করে ছেলেটির প্রোফাইলে একবার ভালো করে ঘুরে আসে সুজাতা। মনে তো হচ্ছে একটা ইয়ং ছেলে।
ছোটবেলায় দুষ্টুমি অনেক করেছে, তাই আবার করতে ইচ্ছে করলো, দেখাই যাক না কথা বলে।
দাঁড়া একটু মজা করা যাক তাই ও পাল্টা জিজ্ঞেস করে ," আগে তোমার বয়স কতো একটু বলোনা প্লিজ?"
"হঠাৎ তুমি আমার বয়েস জিজ্ঞেস করছো কেন?"
" কিছু না ঐ একটু কৌতূহল আরকি? এই যেমন তোমার হঠাৎই জেগে উঠলো আমাকে দেখে।"
" নাহ আসলে তোমার ডিপিটা না জাষ্ট ফাটাফাটি, আমি তো দেখে মুগ্ধ হয়েই রিকোয়েস্ট পাঠালাম।"
ওহ্ তাই নাকি? কিন্তু ওই ছবিটা যদি আমার না হয়? আজকাল তো অনেকেই এমনভাবে অন্য কারো ছবি দিয়ে ডিপি করে। মানে, ইয়ে নায়িকার ছবি বা অন্য কারো ছবি।"
" না না আমি তো দেখলাম তোমার প্রোফাইলের অন্য ছবিগুলোও।"
মনে মনে হাসে সুজাতা,ও বাবা এর মধ্যেই প্রোফাইল চিরুণী তল্লাসী করে ফেলেছে!
আহা আহা একেবারে রত্ন! প্রোফাইল ঘেঁটে একবারে প্রথমেই হাড়ির খবর নিতে এসেছে। মনে মনে হাসে মেয়েদের আবার বয়স হয় নাকি এটা অবশ্য ওর কথা নয় কোন এক গুণীজন বলেছেন।তাছাড়া এমনভাবে এটা জিজ্ঞেস করাও তো ব্যাড ম্যানার্স,তুমি কে হে বাছাধন? পাত্রী দেখতে এসেছো নাকি যে প্রথমেই বয়েস নিয়ে টানাটানি। ফেসবুকেও বয়েসের খবর রাখা! তাছাড়া ওদের ফ্যামিলি পিকচার্স গুলো দেখলেই তো সবটা বোঝা যায়।অতিরিক্ত কৌতূহল তো ভালো না।
ওপার থেকে ছেলেটা জিজ্ঞেস করে," হাইই! বললেনা তো বয়েস কতো?
সুজাতা বলে," কি করে বলি তুমিও তো কিছু বলছো না,আমিও তো তোমাকে একই প্রশ্ন করলাম।"
...." আরে ডিয়ার আবার আমার বয়স কেন জানতে চাইছো?"
সুজাতা একটু হেসে বলে, না মানে ইয়ে আজকাল তো প্রায়ই শুনি মেয়েদের ময়দামাখা এডিট করা মুখগুলো দেখলে বয়েসের গাছ পাথর হিসেব করা যায়না। আর তুমিও নিশ্চয় জানো সেটা, তাই আমার বয়েস জিজ্ঞেস করছো।
তোমার বয়সটা তাই আগে বলো,তারপর আমি বলছি। "
ছেলেটার ততক্ষণে প্রায় বেহাল অবস্থা, আরে ভদ্রমহিলা পাগল নাকি? ভেবেছিলো,একটু বাজিয়ে দেখবে, মহা বিপদ তো! টোকা মেরে দেখতে গিয়ে মহা ঝামেলায় পড়েছে মাইরি। এখন তো এইসব মহিলার সাথেই চ্যাটে মজা কোন ঝামেলা নেই অথচ বেশ মজা করে ফ্লার্ট করা যায়।
না না হেরে গেলে চলবে কেন? তাই আবার পিং, মেসেজ করে," অন আছো? হ্যাঁ আমি একদম ইয়ং চ্যাম্প ,আমার বয়েস পঁচিশ। এবার তোমারটা বলো।"
"ওহ্ তাই বলো"...এই বলে একটা লাভ ইমোজি পাঠায় সুজাতা।
"কত সহজ হয়ে গেলো ব্যাপারটা,আচ্ছা তোমার কি কোন বড় দাদা দিদি আছে?"
....."কি কেস রে বাবা ভদ্রমহিলা হঠাৎ আবার ফ্যামিলি হিষ্ট্রি জানতে চায় কেন। আচ্ছা দেখাই যাক।"
......" আমিই বড় , আমার একটা ছোট বোন আছে। কেনো গো?"
.......যাক এতক্ষণে নিশ্চিন্ত হলাম। "আচ্ছা তোমার মায়ের কি খুব কম বয়সে বিয়ে হয়েছিলো?"
এবার সত্যি সত্যি ঘাবড়ে যায় ছেলেটি ওহ্ কি মরতে যে বয়েস জানতে চেয়েছিলো, এতো মহা ঝামেলায় পড়েছে। নাহ্ হাল ছাড়বেনা, দেখা যাক বয়েস না বলে যায় কোথায়? ফেসবুকে কচি কচি ডিপি দেওয়া সব এবার হবে।
..... "হ্যাঁ খুব কমবয়েসেই হয়েছে তো শুনেছি। আমাকে তো অনেকেই দেখে বলে মায়ের ভাই। বন্ধুরা মজা করে বলে মাকে আমার বড় দিদির মতো দেখতে লাগে।"
....." বাহ দারুণ ব্যাপার!" 😁😀
......"কি দারুণ ব্যাপার?"
"মানে এবার আমার বয়সের হিসেব করে ফেললাম। আমি তোমার মায়ের বয়সীই হবো।"
......"আ্য"
....."হ্যাঁ,আসলে আমার ছেলের বয়সও চব্বিশ। বাইরে চাকরি করে। তুমি আমাকে মাসিমা,কাকিমা, পিসিমা যা খুশি বলতে পারো। আমার কোন আপত্তি নেই। আশাকরি আর তোমার কোন সংশয় নেই আমার বয়স নিয়ে।"
....."মানে ইয়ে,এই ছবিটা তবে কি পুরোনো?"
....." না না পুরোনো কেনো হবে,গতমাসে তোলা, ছেলে একটা নতুন মোবাইল গিফ্ট করেছে,ফাটাফাটি সেল্ফি আসে কিন্তু। আর বাকিটা এডিটিং এর কামাল। বলবো নাকি ফোনের নামটা? মাকে একটা গিফ্ট করে দিয়ো। "
ওদিকে ছেলেটির তখন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। কি কুক্ষণে যে ফ্লার্ট করতে গিয়েছিলো মহিলাকে। ওরে বাবা, ওনাকে ব্লক করে ফোনটা সুইচড্ অফ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে কিছুক্ষণ।
সুজাতা কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে পিং করতে গিয়ে দেখে স্ক্রীনে লেখা,' দিস কনটেন্ট ইস নট এভেলেবল।'
নিজের মনেই হা হা হা করে হেসে ওঠে সুজাতা। আর তারপরেই ডিপিটা চেঞ্জ করে একটা বাঁদরের ছবি লাগিয়ে দেয়।
সমাপ্ত:-
#বাঘা_তেঁতুল#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
" আচ্ছা মা আর কতদিন জোকার সেজে আমাকে বসতে হবে বলতো পাত্রপক্ষের সামনে? এবার ছেড়ে দাও মা,আরে ছোড় দো মুঝে ঐসব চুলা চৌকি মুঝসে নেহি হোগা।"
হাঁ করে তাকিয়ে থাকেন মা কৃষ্ণার দিকে, কি ধিঙ্গি মেয়েরে বাপু। আমাদের গ্ৰামের দিকে এমন হলে কি চলে!" পড়াশোনা শিখেছিস সব ভালো, তবুও বিয়ে করতে এতো আপত্তি কেনো? কাউকে ভালো লাগে তো বল।"
"আরে মা দেখছো তো,কেউ বলে আমি কালো,কেউ বলে মুটকি আবার কেউ বলে বেটে। আমি নিজেও জানতাম না আমার এতো এতো অসাধারণ গুণ আছে। আহা মনটা জুড়িয়ে যায়।
"তুইও তো কম যাস না বাপু এই তো এর আগের পাত্রের মা তোর মাথায় চুল কম বলছিলো,সপাটে উত্তর দিলি সেই জন্যই তো আপনাদের টাকলু ছেলের জন্য ইন্টারভিউ দিতে বসেছি। তার পরের ছেলের বাবার সাথে হাতের লেখা নিয়ে কি কান্ড,ওমা ঠিকানা লিখতে বলতেই শুনিয়ে দিলি, এই বাড়ির ঠিকানাটা আর মনে রেখে কি করবেন,আর তো এবাড়ির মুখো হতে হবেনা আপনাকে। রেগেমেগে ছেলের বাবা কেন বলতেই সোজা বলে দিলি মানে আমার পছন্দ হয়নি আপনার ছেলেকে। ইশ্ লজ্জায় মাথা কাটা যায় আমাদের।"
"আজ আবার কি বিশেষণ পাবো কে জানে? তবে এটাই শেষ, আর বোলোনা কিন্তু। এরপর আমি বাড়ি থেকে একদম ধা হয়ে যাবো।"
মেয়ের কথা শুনে হেসে ফেলেন রমা,সত্যি কি যে সমস্যা মেয়ের মা হয়ে। এতোদিন আদর করে বড় করে তাকে তুলে দিতে হবে কার না কার হাতে।
বিকেল হতে না হতেই মায়ের তাড়াহুড়োতে হলুদ শাড়ি পরে ফেলতেই হলো। মায়ের এক কথা,হলুদ শাড়িতে শ্যামলা মেয়েদের খুব ভালো লাগে দেখতে। আয়নার সামনে নিজেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে কৃষ্ণা, নাহ্ খুব একটা মন্দ লাগছেনা। অনেকদিন বাদে শাড়িতে বেশ একটু অন্য লুক। বাহ চুলটাও তো দিব্যি বড় হয়েছে,নাহ্ এবার এটাকে কাটতে হবে আবার।
মা এসে জোর করে কপালে ছোট্ট টিপটা বসিয়ে দিয়ে যান,"দিন রাত ঐ কুর্তি আর টপ। দেখতো শাড়িতে কি মিষ্টি লাগছে।" মাকে জড়িয়ে ধরে কৃষ্ণা। সত্যি মা তোমার সাজানোর সেন্স কিন্তু দারুণ। তবে তোমার এই মিষ্টি মেয়েটাকে কেন পরের ঘরে পাঠানোর জন্য ক্ষেপে উঠেছো? বেশ তো আছি।".." তাই তো মা খেটে মরছেন আর উনি ভালোমন্দ অর্ডার মারছেন। একটুও কাজকম্ম শিখলিনা,শুধু হয়েছে এক মুখ,এটা দিয়েই ময়দানে জিতে নিবি যুদ্ধ তাইনা?"
"আরে মা তুমি, শেফালিদি কি করতে আছো,এতো মিঠে মিঠে রান্না যদি বসে বসে পাই তাহলে কোন পাগলা যায় রান্নাঘরে? আর আমি পারিতো চা আর ম্যাগি। ওতেই দিন কেটে যাবে। বেশি খেতে নেই।"
"হাসেন মা,হুঁ খাবার সময় তো ভালোমন্দ লাগে নিত্য। "
"প্লিজ মা ওটায় নজর দিয়োনা,যা রান্না করোনা তুমি,আহা আহা। আর ঐজন্যই তো আমি যাবোনা এই বাড়ি ছেড়ে।"
যথাসময়ে পাত্রপক্ষ আসেন, কৃষ্ণাকে একবার মা বলে যান," চুলটা আর শাড়িটা একটু ঠিক করে নে ওনারা এসে গেছেন। আর সাবধানে কথা বলিস কিন্তু।"
কিছুক্ষণ বাদেই কৃষ্ণাকে ডাকেন মা । "ওহ বাবা কতক্ষণ ভোগাবে কে জানে আবার কি প্রশ্ন করবে কে জানে?"
মায়ের সাথে যায় কৃষ্ণা,ওহ্ মাত্র দুজন এসেছে ! যাক্ তাও বেশ ভালো একগাদা লোক দেখলে আরো অস্বস্তি হয়। মাকেও বেশি খাবার বানাতে হয়নি। বুঝতে পারে ছেলে আর বাবা এসেছে,পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে কৃষ্ণা এইসব কখনো শেখাতে হয়না ওকে। ভদ্রলোক বেশ খুশি হন। উনিই শুরু করেন বলতে," থাক থাক বোসো,আমরা বরং একটু গল্প করি। আমার ছেলে তো একটু চুপচাপ ওর মায়ের মতো তবে আমি একটু বেশি কথা বলতে ভালোবাসি। এই আমার ছেলে সুশান্ত,কি আর বলবো,কাজকম্ম কি করে সবই শুনেছো নিশ্চয়। ওর মায়ের হঠাৎ শরীরটা খারাপ করায় আসতে পারলোনা।"
ভদ্রলোক একেবারে কথার সাগর, বাপরে কতরকম কথা!ছেলেটা একেবারে শান্তশিষ্ট মনে হচ্ছে। মাঝে মাঝে দুএকটা কথা বলছে। কথার ছলে ভদ্রলোক ওর পছন্দ,ভালোলাগা অনেক কিছুই জেনে নিচ্ছেন। খারাপ লাগছেনা খুব একটা কৃষ্ণার।
এর মাঝেই জিজ্ঞেস করলেন কৃষ্ণা কি কি খেতে ভালোবাসে,বেড়ানোর জায়গা হিসেবে কি পছন্দ? পাহাড় না সমুদ্র? বাপরে কখন যে ছাড়া পাবে কে জানে? কৃষ্ণা বললো ও কি খেতে ভালোবাসে, হঠাৎই ভদ্রলোক জিজ্ঞেস করলেন," আচ্ছা তুমি রান্না করতে পারো তো? শেফালিদি তখন ওর মায়ের সাথেই খাবার দিচ্ছিলো। হঠাৎই কৃষ্ণার মাথায় জেগে উঠলো দুষ্টুবুদ্ধি.....
"একমিনিট,ইশ্ আগে বলবেন তো আপনার রান্নার লোকের দরকার। খুব ভালো একজন আপনার সামনেই আছে ,মোটামুটি ইন্ডিয়ান,চাইনিজ মোগলাই সব পারে।শুধু কনটিনেন্টালটা পারেনা,তবে আপনাদের ওখানে গেলে মাইনেটা হয়ত একটু বেশি নেবে। আলাপ করিয়ে দিই এই যে আমাদের শেফালিদি।"
ততক্ষণে ওর বাবার মুখটা রাগে লাল হয়েছে, মাও খুব অস্বস্তিতে পড়েছেন,ইশ্ মেয়েটা সত্যি মহা অসভ্য হয়েছে,ছি ছি।
এতক্ষণ যাকে শান্ত বলে মনে হয়েছিলো সেই সুশান্ত এবার রাগে অশান্ত হয়ে ওঠে," চলে এসো বাবা,তুমি কার সাথে গল্প করতে বসেছো। বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলে যার বোধ নেই!"
ছেলেকে ইশারা করে বসতে বলেন ভদ্রলোক একটু হেসে বলেন," আসলে মা খেতে ভালোবাসলে তো একটু রান্নাও শিখতে হবে তাইনা? শুধু খাবে আর রাঁধবেনা তা কি হয়? তাছাড়া এটাতো একটা আর্ট। এরমধ্যে তো কোন ছোটো হওয়া নেই। আমাদের বাড়িতে কিন্তু আমি আর সুশান্তর মা সবটাই নিজেরা করে নিই মিলেমিশে। আমরাও খুব খেতে ভালোবাসি।"
কৃষ্ণা বুঝেছে এমনিতেই কেচে গেছে ব্যাপারটা,ভালোই হয়েছে। আর মিষ্টি কথা বলে লাভ নেই,এল এল বি তে চান্স পেয়েছে ওটা করাই ভালো, বিয়েটা পরে ভাবা যাবে। খেতে ভালোবাসেন বেশ রান্না করুন আর খান। তবুও ইচ্ছে করলো আরেকটু মজা করার,যদিও একটু ভয় ভয় করলো বাবার দিকে তাকিয়ে।
গলাটা যথাসম্ভব মিঠে করে বললো," খারাপ ভাববেননা, আমি চা,ম্যাগি আর দরকার হলে সেদ্ধভাত কুকারে করতে পারি। গরম গরম খাওয়া যায় মাখন বা ঘি দিয়ে। অন্যকিছু রাঁধার দরকার হয়নি,তবে হয়ত পারবো ইউটিউব দেখে। একটা কথা একটু জানতে ইচ্ছে করছে মানে ইয়ে বলবো?"
দমেন না ভদ্রলোক," হ্যাঁ বলো এত সঙ্কোচ কেন?" সুশান্ত চরম বিরক্ত হয়। মেয়েটা তো রীতিমতো বুনোওল একটা,কেন যে বাবা ওকে নিয়ে পরে আছে কে জানে? অথচ কিছু বলতেও পারেনা।
মানে ইয়ে এতোক্ষণ তো আপনারা আমার ব্যাপারে তো অনেককিছুই জানলেন। আমি কিন্তু কিছু গোপন করিনি। আচ্ছা সুশান্তবাবু রান্না করতে জানেন তো? আপনি তো বললেন আপনি আর মাসিমা মিলেমিশেই কাজ করেন সুশান্তবাবুও নিশ্চয় আপনাদের সাহায্য করেন। মানে উনি নিশ্চয়ই আমার মতো উনি নিষ্কর্মা নন, যে বসে বসেই খান ভালোমন্দ।"
বাবা আর ছেলে দুজনেই একটু হতবাক হয়ে যান। রাগে গা জ্বালা করে সুশান্তর,একমাত্র ছেলে বলে মা কত যত্ন করে ওকে খাওয়ায়। ও করবে রান্না! বলে কি মেয়েটা?
ভদ্রলোক হাসেন, বলেন," একদম সত্যিই আমাদের ছেলেটা একটা অকর্মা ঘরের কাজ তেমন কিছুই পারেনা। শুধু পড়াশোনাই শিখেছে। আচ্ছা আজ আমরা আসি,পরে ফোনে কথা হবে।"
মনে মনে হাসে কৃষ্ণা,পালাতে পথ পাবেনা এমন মোক্ষম কথা বলেছি। সব প্রশ্ন শুধু মেয়েদের জন্য তাইনা? মেয়েরা গৃহকর্মেনিপুণা,গৌরবর্ণা,চাকুরিরতা সব হবে। আর ছেলেদের বেলায় সব মাফ।
ওরা চলে যাবার পর আচ্ছা করে বকুনি খায় মা আর বাবার কাছে। বাবা বলে দেন আর উনি নেই ওর বিয়ের ব্যাপারে।যাক্ ভালোই হয়েছে কিছু দিনের জন্য নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো। ওরাও আর কোনো খবর দেয়না। কৃষ্ণা ভালো করেই জানতো খবর দেবেনা।
ল তে ভর্তি হয় কৃষ্ণা,এটাই বোধহয় ওর উপযুক্ত জায়গা। মা বললেন মুখের ঠ্যালায় তো ভূতও ভাগবে। দেখতে দেখতে প্রায় একবছরের বেশি কেটে গেছে। সেদিন রবিবার,কৃষ্ণা বাড়িতেই বেশ মজা করে বসে লুচি খাচ্ছে। হঠাৎই বাইরে একটা ট্যাক্সির আওয়াজ,ধুস্স কে এলো আবার এই সকালে?
হঠাৎই যেন বাড়িতে একটা সাড়া পরে গেলো,শেফালিদি ছুটে এলো," দিদিমণি গায়ে একটা ওড়না দাও,মা তোমারে ডাকতেছেন। কারা যেন এসেছে।"
কে আবার এলো যে হঠাৎ ওকে তলব! চুলটা গুটিয়ে ওড়না গায়ে চটি ফটফটিয়ে আসে কৃষ্ণা তবে এসে যা দেখলো তাতে একটু যেন বেশিই বিষম খায়। সুশান্তবাবু,ওনার বাবা এবার বোধহয় সাথে মাও এসেছেন। কি আর করে,পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে কৃষ্ণা।" থাক থাক মা, শোভা এই হচ্ছে কৃষ্ণা,বেশ মিষ্টি না দেখতে? না সাজলেও বেশ ভালো লাগে। আমরা আবার চলেই এলাম,আসলে সেদিন তোমার কথাটা আমার খুব মনে ধরেছিলো। ছেলেরাই বা কাজকম্ম পারবেনা কেন? সত্যিই তো সব পরীক্ষা শুধু মেয়েদেরই কেন? আজ তাই পরীক্ষা দিতে চলেই এলাম সপরিবারে। কৃষ্ণার ততক্ষণে একটু ঘাম দিতে শুরু করেছে,এতো মহা নেই আকড়ে লোক।
"তোমার মা বাবার সাথে কথা হয়ে গেছে আমার আজ দুপুরের রান্নাটা তোমরা দুজনে মিলেই করবে,সুশান্ত কিন্তু দারুণ রাঁধে এখন, কার ছেলে দেখতে হবে তো?" ওরে বাবা ভদ্রলোকের তলায় তলায় এতো বুদ্ধি, কান্না পায় এবার কৃষ্ণার,ও তো সেই ম্যাগি আর চা ছাড়া কিছুই তেমন পারেনা। হঠাৎই চোখ চলে যায় সুশান্তর দিকে,মুচকি হাসি দেখে ওর মুখে। গা জ্বালা করে কৃষ্ণার,ইশ্ একদম কেস খেয়ে গেছে এবার।
" কি হলো মা,চিন্তা কোরোনা, ঐ মাখন ভাত আর সেদ্ধ হলেই চলবে। তাহলে হয়ে যাক আজ মিলিত রান্না। আমরা চারজন কিন্তু আজ জাজ্। আচ্ছা তোমার শেফালিদিকে রাখতে পারো সাথে।
প্রতিবাদ করে সুশান্ত একটু মুচকি হেসে " না না বাবা, ওসব হবেনা। একা একা করতে হবে যা করার।"
মনে মনে গালাগাল দেয় কৃষ্ণা, মিচকে পোড়া একটা। একেবারে পাজি ছেলে একটা। হাতি কাদায় পড়লে ব্যাঙও লাথি মারে। কি করবে এখন ও? একদম ল্যাজে গোবরে হয়ে যায় কৃষ্ণা,যাইহোক খুব কষ্টে মাংসটা রাঁধে,সুশান্ত অবশ্য একটু ছাড় দিয়েছিলো শেফালিদিকে হেল্প করতে দিয়ে।
দুপুরের খাওয়াটা সুশান্তর নতুন রান্না ইচ্ছাপূরণ পোলাও আর কৃষ্ণার রান্না করা মাংস দিয়ে বেশ জমলো। খেয়ে পরিতৃপ্ত হয়ে সুশান্তর বাবা প্রশান্তবাবু বললেন," কৃষ্ণা বেশ রেঁধেছে কিন্তু,আর বাকিটা আমি ম্যানেজ করে নেবো,কি বলিস? আমার বাড়ির অকর্মাটা যখন কাজ শিখেছে কৃষ্ণাও শিখে যাবে কি বলুন? কি আপনাদের কোন আপত্তি নেই তো? কৃষ্ণামা কি বলো,আমি কিন্তু চ্যালেঞ্জ নিয়েছি,পিছু হটিনি। "
কৃষ্ণার মুখখানা দেখে সত্যিই হাসি পায় সুশান্তর । বুনো ওল কৃষ্ণা এবার ওর বাঘা তেঁতুল বাবার কাছে সত্যিই জব্দ, হা হা হা একেবারে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা।
"আসলে আমার মা এমনি ছিলেন,মায়ের শাসনে বাড়িতে কাক চিল বসতে পারতোনা। মা মারা যাবার পর বড্ড ফাঁকা হয়ে গেছে বাড়িটা। কি কৃষ্ণা থাকবে তো আমার মা হয়ে আর এমনই ঝাঁঝালো হয়ে। অনেকদিন তো কেউ শাসন করেনা তাই মনটা বড় হু হু করছে।"
সুশান্ত আর ওর মায়ের চোখের কোলটাও একটু ভিজে আসে। হয়ত কৃষ্ণারও মনটা ভিজে যায় সত্যিই তো এমনভাবে কেউ কখনো বলেনি।পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে কৃষ্ণা প্রশান্তবাবুকে আর সবাইকে,মাথায় হাত রাখেন উনি। শুধু একবার তার আগে কটমট করে তাকায় সুশান্তর দিকে। মনটা চৈতী হাওয়ায় তোলপাড় হয়ে যায় সুশান্তর।
সমাপ্ত:-
বছর শেষের বৃষ্টিতে আজ
ভিজিয়ে দিলাম মন।
মনের মাঝে হয়ত আছে
আমার আপনজন।
রিমিঝিমি সুরের মাঝে
আজ শুধুই ডুবে যাওয়া।
মনের দ্বারে আজ সন্ধ্যেয়
পাগল করা হাওয়া।
হয়ত কাজল মুছলো
কোন দস্যি ঠোঁটের ছোঁয়ায়।
নিভলো ঘরের আলো শুধু
তোমার অপেক্ষায়।
Comments
Post a Comment