Skip to main content

বুমেরাং

#বুমেরাং#

#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"বাবিন,ওহ্ আর কতবার ডাকবো! তুই কি শুনতে পাচ্ছিস না কখন থেকে ডাকছি। চলে আয় খাবার দিয়েছি তো। কি যে করে না ছেলেটা,আর ভালো লাগেনা।"
     ডেকে ডেকে বিরক্ত হয়ে ছেলের ঘরে উঁকি মারে পিউ। কান থেকে ইয়ারপ্লাগটা টেনে এক বকুনি লাগায় জোরে," ও আচ্ছা এই তোর ম‍্যাথস প্র‍্যাকটিস হচ্ছে? সারাদিন গান শোনা। ইন্টারনেট কানেকশন অফ করেও শান্তি নেই,ডাউনলোড করা গান শুনে যাচ্ছে। ইশ্ এই ছেলেকে নিয়ে যে কি করি।"
       সব সময় এতো চেঁচাও কেনো মা,ওহ্ একটু গান শুনেছি তো কি হয়েছে? আমি তো ম‍্যাথসের প্রবলেমগুলো সলভ করতে করতেই গান শুনেছি। দেখো তুমি এই কতগুলো অঙ্ক করেছি,এই যে। শুধু শুধু এতো ইরিটেটেড হয়ে থাকো। ভালো লাগেনা একটুও। একা একা পড়তে কত ভালো লাগে মা? বাবা যখন এখানে থাকতো তখন বাবা আমাকে একটু ম‍্যাথসগুলো দেখিয়েও দিতো আর আমার পাশে বসে পেপার পড়তো অফিস থেকে এসে। তোমার তো সারাক্ষণ শুধু কাজ আর নাহলে ফোনে থাকো। আমি কি করবো বলো?"
        সত‍্যি ছেলেটা অনেকগুলো অঙ্ক করে ফেলেছে, কিন্তু এইরকম অভ‍্যেস হলে তো কানটা একদম যাবে। হঠাৎই অরিত্রর ট্রান্সফার হয়ে গেলো গৌহাটিতে ছয়মাস আগে, এবার যখন এলো তখন পিউকে একটা নতুন স্মার্টফোন দিয়ে গেছে। ওর পুরোনো ফোনে এতো স্পেশ কম ছিলো যে তেমন কিছুই হোতোনা। খুব কষ্টে হোয়াটস আ্যপটা করতো,ছবিও ডাউনলোড হোতোনা। তাই এবার এসেই হাতে ফোনটা দিয়ে বলেছিলো," এই যে ম‍্যাডাম,এটা রাখো। একটু ভিডিও কল করা যাবে। মা ছেলেকে একটু দেখতে তো পারবো ইচ্ছে হোলে। আর রান্নার রেসিপিগুলোও হাতে কলমে দেখবো। তুমিও বুঝবে তোমার এই বর বেচারার কি জীবন একা একা। তবে খুব সাবধান, বাবানের হাতে বেশি দিয়োনা। যা পাকা এখনকার ছেলেগুলো, কি করবে আর কি দেখবে তার ঠিক নেই। রাজ‍্যের গেম ডাউনলোড করে মেমরি ফুল করে ছেড়ে দেবে। বাড়ীর ওয়াইফাই টা তো নেই তুমি পরে একটা নতুন সিম নিয়ে নিয়ো,আনলিমিটেড ইউস করতে পারবে।"
        ....." ও কি আর ঘাঁটাঘাঁটি না করে ছাড়বে,সবই তো ওর দরকার। আচ্ছা দেখবো।'
   নতুন ফোনটা পেয়ে ভালোই লাগলো পিউর। ফেসবুক হোয়াপ সবই আছে কিন্তু এতোদিন ভালো করে কিছুই চালাতে পারতোনা। যাক ভালোই হবে,ওর স্কুলে সব কলিগদেরই আর বন্ধুদেরও আছে আ্যকাউন্ট ওরাই অভিযোগ করতো," কি করতে আ্যকাউন্ট রেখেছিস, কিছুই তো করিস না। এই তো সেদিন একটা সারকুলার মিস করে গেলো কিছুতেই ডাউনলোড করতে পারলোনা। "
          ছেলেটা পড়েছে তাই একটু খুশি হয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে বললো," গুডু গুডু বাবাটা আমার কিন্তু সারাক্ষণ গান শুনলে তো কানটা যাবে আর এরপর কানে মেশিন নিতে হবে।"
......" ভালোই তো হবে মা তুমি তো যতক্ষণ পারো ফোন থেকে চোখ সরাও না। তাই দুজনেই অন্ধ আর কালা হয়ে থাকবো পাশাপাশি,গুড আইডিয়া তাইনা হা হা।"
            ছেলের হা হা হাসির মাঝের খোঁচাটা একটু যেন বিঁধলো পিউর মনে।
...." খুব পাকা হয়েছিস না! এখন থেকেই মায়ের ব‍্যাপারে কথা বলা। সংসারে কোন কাজটাতে ফাঁক পরে শুনি। বাজার ,দোকান, রান্না, চাকরি সব একহাতে সামলাতে হয়। আরেকজন তো বেশ ব‍্যাচেলার লাইফ লিড করছে ওখানে কোন চিন্তা ভাবনা নেই। যত জ্বালা হয়েছে আমার! গ‍্যাসবুক করো আজ প্লাম্বার ডাকো কাল ইলেক্ট্রিসিয়ান ডাকো সব সামলাও একা বসে। তারপর তোর এতো রকম উপদ্রব আমি আর পারিনা।"
       চোখটা একটু ছলছল করে ওঠে পিউর। চুপ করে যায় বাবান। সত‍্যি কেন যে বাবার ট্রান্সফারটা হলো! মা একবার রাগলে রক্ষা নেই এরপর শুরু হবে আরো বকাবকি এরপর বাবাও বকুনি খাবে। সত‍্যিই তো অনেক কাজ করতে হয় মাকে। আর ওদের এই শহরতলিতে এখনো অনলাইনের সব সুবিধে আসেনি। তাই মায়ের গলাটা জড়িয়ে বলে," আচ্ছা আমাকে বোলো আমি কাজ করে দেবো।"
....." অনেক হয়েছে, তুমি একটু মন দিয়ে পড়াশোনা করো তাহলেই হবে। ভালো করে তৈরী হবি বলে তোকে কতটা দূরে সি বি এস সি বোর্ডের স্কুলটাতে দিলাম। কিভাবে যে সকালে তৈরী হয়ে আমি তাড়াতাড়ি করে বেরোই তা বুঝবি কি করে?কিন্তু পারফরমেন্স আগের থেকে কমছে। পুরোনো ফোনটা হস্তগত করে সারাদিন গান শোনা আর গেম খেলা। "
             মাথা নীচু করে বাবান, সত‍্যি মা আগে স্কুটি চালিয়ে ওকে পৌ়ছে দিয়ে তারপর নিজে স্কুলে যায়।  সব পাকা ছেলেরা স্কুলবাসে যায় বলে ওকে দেয়নি,সত‍্যি মা যে কি। ঐ ছেলেগুলো কি স্কুলে থাকেনা? অবশ‍্য অনেকদিন বাস ঠিক সময়ে না এলে ওর আ্যবসেন্টও হতে পারে এইসব অনেক চিন্তা মায়ের।
           আর কথা বাড়ায় না পিউ। সত‍্যি ছেলেটা পাল্টাচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি অবশ‍্য বন্ধুদের সাথে কথা বলে দেখে সবারই এক সমস‍্যা। শুধু সুমনাদিই বলেন," একটু নজরে রাখিস পিউ আ্যডোলেসেন্স পিরিয়ড তো। বন্ধুর মতোই মেশার চেষ্টা করিস। এই সময় ওর বাবা থাকলে খুব ভালো হোত।"
        অরিত্র থাকতে বাবান আলাদাই শুতো,ওর বাবা চলে যাবার পর যদিও পিউ বলেছিলো," তুই আমার সাথেই থাকনা বাবু।" রাজী হয়নি ছেলে বলেছিলো পড়াশোনার জন‍্য রাত্রি জাগতে হয়,পিউ সারাদিন পরিশ্রম করে ওর ভালো করে ঘুম হবেনা। ওর বাবার কাছে অভিযোগ করাতে অরিত্রও বলেছিলো," বড় হচ্ছে,তাছাড়া সত‍্যিই তো ওর পড়াশোনার জন‍্য রাত জাগতে হয়। একটু নজর রেখো রাতে মাঝে মাঝে উঠে তাহলেই হবে।"
            হাঁপিয়ে ওঠা জীবনে স্মার্টফোনটা যেন পিউকে দেয় একঝলক মুক্তি। ফোনটা খুললেই কত কি দেখা যায়। কিছুনা হলে শুধু স্ক্রলিং করেই কেটে যায় অনেকটা সময়। সত‍্যি বলতে কি খুব নেশাও হয়ে গেছে এখন আনলিমিটেড নেটের কল‍্যাণে সবসময় প্রায় অনলাইনে থাকে পিউ, সেদিনই স্কুলে নন্দিতা মজা করলো," নেটের ফাঁদে তুইও ধরা পড়লি শেষে,অরিত্রদাটা যে কি উপকার করলো তোর! আগে সারাক্ষণ জপ করতিস অরিত্র অরিত্র আর এখন হয়েছে স্মার্টফোন ধর্ম,আর ফোনই কর্ম,ফোন পরম মোক্ষ। চরিত্র খারাপ হোলো শেষে হা হা।"
           সত‍্যিই মনটা উশখুশ করে মনে হয় কখন নেটটা খুলবে। বন্ধুবান্ধবও বেড়েছে নেটের কল‍্যাণে, কোথা দিয়ে সময় কেটে যায় বোঝা যায়না। সুযোগ পেলেই ফোনটা নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে। সবচেয়ে বেশি রাতেই অনলাইন থাকে পিউ,আসলে ছেলের জন‍্য একটু রাত জাগতেই হয়। আর অরিত্র চলে যাবার পর ঘুমটাও খুব কমে গেছে তাই ঐ সময়টা নেটেই অন থাকে। অরিত্রর সাথেও কথা হয়,তবে কিছুক্ষণ বাদেই ঘুমিয়ে পরে আর নাহলে বলে নেটওয়ার্কের প্রবলেম। তখন হয় সৌনকের সাথে নাহলে অভির সাথে কথা বলে কেটে যায়। সৌনক ওর পুরোনো বন্ধু হয়ত একটু ক্রাশও ছিলো একসময় ওর ওপর। ফেসবুকের কল‍্যাণে আবার নতুন করে ভাব,হয়ত দুজনেরই একাকীত্বের আদানপ্রদান। গল্প হয়,খুব ভালো কথা বলে সৌনক।কখনো বা বায়না করে একটা সেলফি পাঠানোর জন‍্য।
      মায়ের ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎই থমকে যায় বাবান,এতো রাত্রি হয়ে গেছে আলো জ্বালিয়ে মা কি করছে? একটু পর্দাটা ফাঁক করে উঁকি মারে ঘরে,ছেলেকে দেখে একটু অপ্রস্তুত হয়ে যায় পিউ। সৌনকটা এতো বলছিলো সেলফি পাঠানোর জন‍্য,তাই আলোটা জ্বালিয়ে তুলছিলো। "কি রে বাবু এখনো ঘুমোসনি?...." তুমিও তো ঘুমোওনি মা,মোবাইলটা বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়।"
         ঘরে গিয়ে শুয়ে বাবানের মনে হয় শুধু বোধহয় ওই পাল্টাচ্ছেনা,মাও যেনো খুব তাড়াতাড়ি পাল্টে যাচ্ছে। কি করে মা এতো রাত অবধি মোবাইলে? দুএকদিন চেষ্টা করেছে,মায়ের ফেসবুকে উঁকি মারার কিন্তু নাহ, মা পাসওয়ার্ড দিয়ে বন্ধ করে রাখে। মা তো বলে ফেসবুক করেনা তাহলে কি করে এতো রাত পর্যন্ত হোয়াটসআ্যপ না গান শোনে?কৌতূহলটা কিছুতেই মেটাতে পারেনা বাবান। শুধু ওর বেলায় মায়ের যত কড়াকড়ি,রাতের বেলা পুরোনো ফোনটাও রাখতে দেয়না কাছে। সত‍্যি আর ভালো লাগেনা।
        অভি পিউর ফেসবুকে পরিচিত, ওর থেকে বয়সে ছোট। কিন্তু বলে ও নাকি খুব লোনলি,পিউকে প্রতিদিন খুব রোমান্টিক কবিতা পাঠায়। মনটা ছুঁয়ে যায় পিউর এড়িয়ে চলতে চাইলেও চলতে পারেনা। যখনই সুযোগ পায় টুক করে কথা বলে নেয়। স্কুলে অফ পিরিয়ডগুলোতে চোখটা থাকে মোবাইলে,ছেলের সামনে নিজেকে চেষ্টা করে একটু সামলাতে তবে ও আলাদা ঘরে শোওয়ার জন‍্য রাত্রে কেটে যায় ইনবক্সে অনেকটা সময় শুধু মাঝে দুএকবার উঠে দেখে আসে ছেলে কি করছে। আজকাল বাবানও হয়ত লক্ষ করে মাকে আড়াল থেকে।
              হঠাৎই বাবানের স্কুল থেকে ফোন আসে জানতে পারে বাবান আজকাল স্কুলে কয়েকটা সিনিয়র ছেলের সঙ্গে মিশছে। টিফিন পিরিয়ডে মোবাইলে খারাপ ভিডিও দেখছিলো ওরা। বেশ কয়েকদিন ধরেই ব‍্যাপারটা চলছে খবর পেয়ে আজ হাতেনাতে ধরেছেন ওদের ক্লাশটিচার। তাই পিউ যেন অবশ‍্যই স্কুলে আসে। ছেলের নিষ্পাপ মুখটার সাথে ব‍্যাপারটা মেলাতে পারেনা পিউ সবেই টিনএজে পা দিয়েছে বাবান মানে অরিন্দম ওর এখন ক্লাশ এইট। এইসব কি শুনছে? মাথাটা ঝিমঝিম করে পিউর। ছেলেকে কাছে টেনে অনেক আদর করে বোঝায় তবুও মুখ দিয়ে খুব একটা কথা বার করতে পারেনা। মেজাজ হারিয়ে ফেলে পিউ এবার কড়া করে বারণ করে আর যদি কোনদিন ঐ ছেলেগুলোর সাথে মিশছে খবর পায় তাহলে পিউর চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা। অরিত্রকে কিছু বলেনা পিউ,অযথা টেনশন করবে। দেখা যাক কি করে?
                    .....কয়েকদিন ঐ ছেলেগুলোর ধার মারায় না বাবান। মনে মনে রাগ হয় ছেলেগুলোর একজন বলে," আরে ঐ স্কুলে আমার বোন পড়ে
  ঐ দিদিমণির কথা শুনেছি। আমাদের বাজে ছেলে বলেছে ম‍্যামের কাছে। আর বোনের কাছে শুনেছি স্কুলে সারাক্ষণ ফেসবুক করে। আরে আমার আ্যকাউন্ট থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েষ্ট পাঠিয়েছিলাম নিয়ে নিয়েছে দেখলাম। রাজ‍্যের ছেলের সাথে বন্ধুত্ব। সারাদিন অনলাইনে বসে থাকে। কি সব কমেন্ট করে ছবিতে ওনার দুএকজন। ওনাকেও দেখেছি বেশ অন‍্যরকম কমেন্ট করতে একজনের ছবিতে। নিজে কি করে তার ঠিক নেই।"
  .....হঠাৎই বাবানকে যেতে দেখে ডাকে," এই যে গুডবয় আমাদেরকে যেন দেখতেই পাচ্ছিসনা। এদিকে শুনে যা কথা আছে।"
......বাবান এগিয়ে যাচ্ছে দেখে হাত ধরে টানে," ও আমাদের ফাঁসিয়ে দিয়ে এখন সাধু সাজা হচ্ছে। এমন মজা দেখাবো না বুঝবি। "
......" মা বলেছে তোমাদের সাথে আর না মিশতে,তাহলে বাড়ী থেকে বার করে দেবে। "
......" দরকার নেই মেশার তাহলে আমাদের নামে দোষ দিলি কেন বল,তোর মায়ের বুদ্ধিতে নাকি?"
       ...একটু ভয় পায় বাবান ওরা সবাই সিনিয়র দাদা ইলেভেন টুয়েলভে পড়ে একদিন ওরা মোবাইল এনেছে দেখে ও নিজেই গিয়েছিলো কি দেখে দেখতে।
........."এই ওকে দেখাতো"
   ...." তোমরা আবার মোবাইল এনেছো? না না আমি দেখবোনা। "
...." এই দেখ তোর মাকে ফেসবুকে,চিনতে পারছিস? আরে কমেন্টগুলো দেখ। আর এই যে লোকটা এর ছবিতে দেখ মা কি লিখেছে। তোর মা তো এটা না কি রে? এই লোকটার সব ছবিতেই তো তোর মায়ের ওহ্ কি সব কমেন্ট। চিনিস না কি এটাকে?"
            প্রোফাইল পিকচারটা মা বাবার একসাথেই তবে এছাড়াও অনেক ছবি। কখন তোলে ছবিগুলো মা? বাবা কি কিছুই দেখেনা, না কি বাবাকে হাইড করে রেখেছে মা? প্রায় প্রতিদিনই নানা ভঙ্গীমায় নানা ছবি।
....." তবে তোর মাকে কিন্তু হেব্বি দেখতে। আমিও তো ছবি দেখেই রিকোয়েষ্ট পাঠিয়েছিলাম। পরে শুনলাম বোন বললো ওর আন্টি।"
          মাথাটা কেমন যেন একটু গুলিয়ে গেলো বাবানের, সত‍্যিই তো মা অনেক রাত জেগে কাটায় মোবাইল নিয়ে। না না আজ মাকে বলবে,শুধু কড়াকড়ি ওর বেলাতেই কেনো। ছেলেগুলো কিভাবে বলছিলো! মাথাটা গরম হয়ে যায় শুনলেই।
           মুখটা গোমড়া করেই মায়ের সাথে ফেরে বাবান। রাস্তায় রোল খেতে বলে পিউ রাজী হয়না। "কি হয়েছে রে বাবু? আবার স্কুলে কিছু করেছিস নাকি?"
         ....." কিছু হয়নি। ভালো লাগছেনা।"
    বেশি কিছু না বলে নিজের কাজে হাত লাগায় পিউ। এক এক করে সব কাজ সারে। মাঝে অরিত্রর সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলে ছেলেকে দেয় ফোনটা। ...." বাবা তুমি এখানে চলে এসোনা, আমার ভালো লাগছেনা তোমাকে ছাড়া।"
......অরিত্ররও মনটা খারাপ হয়ে যায় ছেলের জন‍্য পিউকে বলে," ছেলেটার একটু খেয়াল রাখো মনে হচ্ছে ওর মনটা ভালো নেই।"
         ......গজগজ করে পিউ,"আর কত দিকে খেয়াল রাখবো আমি? তোমরা যে কি চাও আমার কাছে বুঝিনা। নিজে তো আমার ঘাড়ে সব চাপিয়ে আরামে ওখানে আছো। এবার আমি চলে যাবো যেদিকে খুশি।"
             মনটা খারাপ হয়ে যায় দুজনেরই। আজ বাবানটাও সকাল সকাল শুয়ে পড়েছে। পিউ শুতে চেয়েছিলো ওর কাছে বলেছে না দরকার নেই।
      বিছানায় শুয়ে ঘুম আসতে চায়না পিউর অস্থির লাগে মনটা। আজ বিকেলের পর নেটটাও খোলা হয়নি। ছেলের ঘরে ঘুরে আসে একবার,দেখে ঘুমোচ্ছে। নেটটা অন করে পিউ, অভি আর সৌনকের অনেকগুলো মেসেজ। ওকে অন দেখেই ওরা মেসেজ করলো,একটু ভালো লাগছে কথা বলে। হঠাৎই একটু চমকে ওঠে পিউ উঠে এসেছে বাবান,"মা এতো রাতে কি করছো তুমি? এই তো সেদিন আমায় বলেছিলে তুমি ফেসবুক করোনা। এতো রাতেও চ‍্যাটে আছো তুমি? কার সাথে কথা বলছো? বাবাও তো ঘুমিয়ে পড়েছে নিশ্চয়।"
          কোন জবাব দিতে পারেনা পিউ, মেসেঞ্জারটা খোলা ওর।
   "আমরা ছোটোরা কিছু করলে তোমরা কত কি বলো অথচ আমাদের কে কি সব জানাও তোমরা কি করছো? আজকে স্কুলের দাদাগুলো তোমায় নিয়ে আমায় কত কি বললো।"
           " এতো রাতে কি আমার ওপর নজরদারি করতে এসেছিস? আমার কাজের জবাব তোকে দেবোনা। "
           অনেকটা রাত হয়ে গেছে,তাই বাবানের সব বলতে যাওয়া কথাগুলো আর বলতে ইচ্ছে করলোনা। আর পিউর গলায় যেন কিছু একটা আটকে গেলো। হয়ত বলতে পারলোনা,নিজের ছায়ার কাছে নিজে ধরা পরে গেছে বলে।
            এসব কথা কাউকে বলা যায়না,সুমনাদিকে একটু বললো যদি কিছু ভালো পরামর্শ দিতে পারে। সুমনাদি সত‍্যিই আইডিয়াল মম কি ভালো ছেলেমেয়ে দুটো।
......" পিউ জীবনটাকে পরিষ্কার আয়নার মতো ছেলেমেয়েদের সামনে রাখাই ভালো,তোর পাসওয়ার্ডটা ও নাহয় জানলোই তাতে ক্ষতি কি? আসলে আমাদের দেখেই ওরা বড় হয়। বাইরের লোকের সাথে যে সময়টা গল্প করে কাটাস সেই সময়টা একটু ছেলেকে দে। ফেসবুকটা ওর সামনেই বসে কর,লুকিয়ে করিস কেন? যদি ওর সামনে সবটা করতিস তাহলে ওকে অন‍্যের কাছ থেকে জানতে হোত না তোর কথা।
        আসলে আমরা অনেক কিছু গোপন করে যাই ওদের কাছ থেকে, মায়ের একটা আলাদা জীবন আছে,হয়ত মাও পাক একটু মুক্তির আশ্বাস এটা ওরাও বুঝুক। এমন কোন কাজ করবি কেন যা বাচ্ছাদের কাছ থেকে লুকিয়ে করতে হয়। আমরা তো ওদের আদর্শ হয়ত বা ওদের আশ্রয়ও। সেই ছাদটা যদি ফুটো হয় তবে সমাজটা হয়ত একসময় নানা অরাজকতায় পূর্ণ হয়ে যাবে। মা বাবা এমনি হওয়া যায়না। অনেকটা দায়বদ্ধতা থেকে যায় সন্তানের প্রতি। ওর বন্ধু হয়ে দুজনে দুজনের ভালোমন্দ শেয়ার কর। দুজনে এভাবে একা হয়ে যাসনা।"
        পিউ বদলেছে নিজেকে, যত্নে আর আদরে রেখেছে বাবানের টিনএজ মনের ভালোমন্দ আর কৌতূহলগুলোকেও। তবে ফেসবুকটা ছাড়েনি,মানে বাবান আর অরিত্রই ছাড়তে দেয়নি। বাবানের পাশে শুয়েই ফেসবুকটা অন করে পিউ,দুজনে মজা করে ভিডিও আর ফ্রেন্ডদের পোষ্টগুলোও দেখে । ওর ফেসবুকটা খোলা রেখেই চিকেনটা নেড়ে দিয়ে আসে রান্নাঘরে। বাবানের উঁকি দিতে ইচ্ছে করেনা ও জানে ওর আর মায়ের মধ‍্যে আজ আর কোন গোপনীয়তা নেই পুরোটাই জলছবির মতো সুন্দর আর পরিষ্কার। মায়ের পাশে শুয়ে নিশ্চিন্তে ম‍্যাথসের প্রবলেমগুলো সলভ করে বাবান, পিউ ওর ইংলিশ গ্ৰামারের হোমওয়ার্কটা দেখে নেয়। হঠাৎই বাবান বলে," মা তোমার মেসেঞ্জারে মনে হচ্ছে একটা কল আসছে। দেখোনা একবার।"
    ....." এই পাজী শুধু অন‍্যদিকে মন না? আমি কাজ করছি দেখছিস না। দেখতো কে,কলটা ডিসকানেক্ট করে দে।"
         থাকনা ক্লোজ কানেকশনে ক্লোজ রিলেশনেগুলো একটু যত্নে আর আদরে। হয়ত একটু সহানুভূতি আর সময় দিয়ে যত্ন করলে বন্ধনগুলো আরো দৃঢ় হবে।

      সমাপ্ত:-

          
   

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...