#প্রতিদ্বন্দ্বী#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
টিভিতে খবরটা দেখে একটু হতচকিত লাগে উমার, চেষ্টা করলো ভালো করে দেখার,বয়স্ক একজন মানুষ আর তার সাথে আরো অনেকে চড়াও দুইটি কমবয়সী ছেলেমেয়ের ওপর। আর ওনার সাথে অনেকে মিলে গণপিটুনি দিচ্ছে ছেলেমেয়েদুটোকে। আচ্ছা ওখানে কি কোন কমবয়েসী লোক ছিলোনা?একটু আশ্চর্য লাগলো। মেট্রোতে প্রচুর কমবয়েসী ছেলেমেয়েও থাকে, কিন্তু টিভিতে তেমন কাউকে বাধা দিতে দেখা যাচ্ছেনা। সত্যি,তাহলে অন্যরা কি করছিলো কে জানে?ওরা নাকি দুজনে দুজনকে জড়িয়ে ধরেছিলো মানে এখনকার দিনে যাকে হাগ বলে। এমন ঘটনা প্রায়ই দেখে আজকাল,ভদ্রলোক এতটা উত্তেজিত হলো কেনো বুঝতে পারেনা। পেশার খাতিরে নিত্য মেট্রোতে যাতায়াতের পথে কোন কোন দিন চোখে পড়ে,কথার ফাঁকে মাঝে মাঝেই সঙ্গিনীর গাল মুছিয়ে দিচ্ছে,কখনো বা বুলিয়ে দিচ্ছে পিঠে হাত। দুজনে দুজনের নিবিড় বন্ধনে আছে হাত ধরাধরি করে অথবা ভীড়ের মাঝে আলতো চাপ দিচ্ছে বুকে,কখনো প্রেমিকা ইচ্ছে করেই মুখোমুখি দাঁড়িয়ে শরীরের উত্তাপে আরো কিছুটা না বলা কথা বলতে চায়। কখনো দেখা যায় ঘাড়ে মুখ ঘষে দেওয়া। আসলে চোখটা চলে যায়, দৃশ্যটা একটু অন্যরকম বলে। তবে সবাই একরকম নয়,অনেকেই পাশে বা মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গল্প করে। উমার মনে হয় শরীর ছুঁয়ে ছুঁয়ে বার বার বলতে হয়না বোধহয় তোমায় খুব ভালোবাসি। ওদের উত্তেজক ভালোবাসা দেখে হয়ত উত্তেজিত হয় কামরার কিছু লোকজন। এ যেন তেমন অনুভূতি," আমার কাছে,পেটভরানোর খাবার আছে তোর কাছে নেই। বা এই দ্যাখ আমার খেলনাটা কি সুন্দর! বা আমার ট্যাবটা খুব দামি,তোর আছে এমন?" ওই আদর দেখে অনেকেরই হয়ত যৌনক্ষুধাও জাগে। অস্বস্তি হলেও কিছু বলতে ইচ্ছে করেনা। আদর করা,আদর করতে দেওয়াটা এখন কোর্ট স্বীকৃত। সুপ্রিম কোর্টও মেনে নিয়েছে এবং রায় দিয়েছে পাবলিকলি হাগ আর কিস করাটা অপরাধ নয়। এগুলো দেখে উমার আজকাল খুব একটা খারাপ লাগেনা,চোখে সয়ে গেছে। তবে হঠাৎ ভদ্রলোক কেনো এতো ক্ষেপে উঠলেন কে জানে? তবে কি এক জেনারেশন আরেক জেনারেশেনের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠলো? ভাবতেই শিউড়ে ওঠে উমা,যাদের কোন রিটায়ারমেন্ট নেই সেই কোন যুগ থেকে বাজারের ঘানি টানছে অথচ বাড়ির উপযুক্ত ছেলে সারারাত নেটে চ্যাট করে বা ফোনে কথা বলে দশটা অবধি ঘুমোচ্ছে অথবা সেই মহিলারা যারা রান্নাবাটি খেলতে খেলতেই মাকে সাহায্য করতে রান্নাঘরে ঢুকে আর বেরোতে পারেনি তারা কি নতুন করে পেশির লড়াইয়ে নামলো বদলে যাওয়া সমাজের সঙ্গে! আজ হয়ত তাই ওল্ডফুল বা ভীড়ে মহিলাদের গায়ে হাত দেওয়া বাবাদের সাথে পার্কে বা রাস্তায় দাঁড়িয়ে চুমু খাওয়া,বা প্রকাশ্যে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে প্রাইভেট টাইমপাস করা ছেলের লড়াই। আবার রান্নাঘরে মসলার কৌটো না চেনা,বা ঝিঙের সাথে পটল গুলিয়ে ফেলা মেয়ের স্মার্টলি কন্ডোম বা আইপিল কিনে বয়ফ্রেন্ডের সাথে চেতলার বা পার্কস্ট্রীটের কোথাও দামি বা কমদামি ঘরে উত্তেজনার উপসম করে বাড়ি ফিরে ব্যাকডেটেড খিঁটখিঁটে লেংচে চলা মায়ের সাথে মুখোমুখি হওয়ার লড়াই। সাধারণ মানুষ আমরা,পথে চলি হোঁচট খাই। কখনো বয়স্ক লোক পেছনে হাত দিয়ে যায় প্রতিবাদ করি। কখনো বা বাজারে সব্জি কেনার সময় ঘাড়ে ট্যাটু করা কম বয়সী ছেলে পেছনে হাত দিয়ে নির্বিকার হয়ে চলে যায়। প্রতিবাদ করলে না শোনার ভান করে চলে যায়। আবার হয়ত বাসে কনুইয়ের গুঁতো খাওয়ার ভয়ে ব্যাগটাকে ঢাল করে বসি। বয়স্ক লোকেরা সাধু আর কমবয়েসিরা খারাপ তেমন কোন কথা নয়। আবার উল্টোটাও নয় তাহলে বাবা কাকা দাদু সবাইকে খারাপ বলতে হয়। খারাপ ভালো দুই জেনারেশনেই আছে,বুড়োদের মধ্যেও আছে আবার কমবয়েসীদের মধ্যেও আছে হয়ত এটাকেই সেক্সুয়াল পারভারসন বলে। তাই প্রতিদ্বন্দ্বীতা নয়,অপমান নয় আবার মারধোরও নয়। বড়দের থাক ছোটদের প্রতি ভালোবাসা আর সহানুভূতি। তেমন ছোটদেরও থাক মূল্যবোধ,শ্রদ্ধা আর সহানুভূতি। কোথায় কোনটা করছি,কাজটা ঠিক হচ্ছে কিনা এই চেতনা ছোটো বড় সবার থাকলেই হয়ত পৃথিবীটা সুন্দর হবে। তাই বাড়ুক ভালোবাসা,শ্রদ্ধা আর মূল্যবোধ। বড়রা যেমন ভাববেন ছোটদের কথা তেমন ছোটরাও ভাবুক কতটা শোভনীয় কতটা নয়। সবটাই অধিকার,সবটাই আইন তবুও পথে চলা যেমন আমার অধিকার তেমন চলতে দেওয়া আমার দায়িত্ব। বাঁচাটা যেমন আমার অধিকার বাঁচানোটা দায়িত্ব। স্মার্টনেশ ভালো,ওভার স্মার্টনেশের কি দরকার! বন্ধ হোক মারামারি,অপমান আর অসম্মান। বড়রা আর ছোটোরা হয়ে উঠুক একে অপরের পরিপূরক একটু স্নেহ,ভালোবাসা আর মূল্যবোধের বন্ধনে। গড়ে উঠুক এক সুস্থ সমাজ।©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment