Skip to main content

মাই প্রিন্সেস

#মাই_প্রিন্সেস#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"শোনো এবার কিন্তু আমার মেয়ে চাই।"
সুমির পেটে হালকা করে কান রেখে দুজন অপেক্ষা করছে ,একজন অনুভব করছে আগত সন্তানের হৃদস্পন্দন বা নড়াচড়া আর তা দেখে আরেকটা ছোট পাকু ঋক ও কান রেখেছে মায়ের পেটে বনুর আওয়াজ শুনবে বলে।
        ওদের বাবা ছেলের কান্ড দেখে সুমির হাসি পায়,এমন সময় হঠাৎই ঋক বলে ওঠে,"লাথ মারা।" একদম সিনেমার ঢঙে। সত‍্যি বাচ্চাগুলো টিভি দেখে যা পাকা হয়েছে না!
....." বাবা, এটা মনে হচ্ছে ভাইয়া,কি জোরে লাথি মেরে ফুটবল খেলছে। ও বেরোলেই আমি বকে দেবো।"
...." নারে এবার আমাদের বনুই চাই ঋকের জন‍্য। নাহলে আমি ...."
      আমির পরে আর বলতে দেয়না সুমি,মেয়ে মেয়ে করে একের পরে দুই তাহলে কি আবার? তাই থামায় রণিকে।
     মেয়ের ভীষণ শখ রণির প্রথম থেকেই,তাই হয়ত আবার সুমির মা হওয়া। আশ্চর্য লাগে,লোকে ছেলে ছেলে করে আর এই লোকটার শুধু মেয়ে আর মেয়ে। বলেছে এবার যদি মেয়ে না হয় তাহলে কিন্তু আমি অনাথ আশ্রম থেকে একটা নিয়ে আসবো। হাসে সুমি ভালোই হবে," তবুও তো একটা শিশু মা বাবা পাবে,এই কথাটা আগে বললে আমি আর কষ্ট করতাম না। "
              অনেক কল্পনা রণির মেয়েকে নিয়ে,আশায় দিন গুণছে। ওর মাও হাসেন বলেন," ছোট থেকেই বোনের শখ ছিলো,তো আমার তো আর হলোই না। তাই এখন আবার পুতুল খেলার শখ মেয়েকে নিয়ে। পাগল ছেলে একটা। বৌমা চুপ করো তো অত টেনশন কোরোনা এই সময় মন ভালো রাখতে হয়। ছেলে মেয়ে যা হয় হবে। আমাদের দাদুভাইয়ের একটা সঙ্গী এলেই হোলো।"
              নার্সিং হোমে ভর্তি হতে হবে সুমিকে যাবার সময় কানে কানে বলে দেয় রণি," মনে আছে তো"?......ইশ্ সব যেন আমার হাতে,ভালো লাগেনা খুব মন খারাপ করছে ঋক সোনাটার জন‍্য। আমায় ছেড়ে কোনদিন থাকেনি।"
          মনটা খারাপ হলেও যেতেই হলো ভর্তি হতে। পরের দিন সিজার হবে,সকাল সকাল ওরা এসে গেছে নার্সিং হোমে। ও.টি তে যাওয়ার আগে হালকা করে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সুমির রণি,"একদম স্টেডি থেকো সব ঠিকমত হয়ে যাবে।" সত‍্যিই এটা বোধহয় মেয়েদের জীবনের একটা বড় পরীক্ষা।
               বেশ অনেক্ষণ সুমিকে ভেতরে নিয়ে গেছে,অনেকটা দেরি হলো এখনও কোন খবর পাওয়া যাচ্ছেনা। রণির আর সুমির মা বাবার বেশ টেনশন হয়। অনেক পরে বাইরে এসে সিস্টার বলে যায় বেবি গার্ল হয়েছে। তবে বেবির অবস্থা একটু কমপ্লিকেটেড তাই ওকে এখনই মায়ের কাছে দেবেনা ওরা। বেবি গার্ল শুনেই একরাশ খুশির ঝলক খেলে গেলো রণির চোখে মুখে। যাক্ ওহ্ যা চেয়েছিলো তাই হয়েছে একটা মেয়ের শখ কতদিনের! কিন্তু সুমি আর বেবিকে না দেখে স্বস্তি হচ্ছেনা।
                সুমিকে বেশ খানিকটা বাদে ওরা বাইরে আনে,তখনও একটু ঘোরের মধ‍্যেই আছে। বেবিকে দেখে রণি,অদ্ভুত এক অনুভূতি হয়। যদিও এর আগেও একবার বাবা হয়েছে রণি তবুও কেনো যেন সন্তানের মুখ দেখে অদ্ভুত এক একাত্মবোধ হয় নিজের সৃষ্টির সাথে। আত্মজাকে দেখে এক অদ্ভুত আত্মসুখ হয় রণির। কিন্তু কেন যে বেবিটা এতোটা অসুস্থ হলো বুঝতে পারেনা। সুমিকে রেগুলার চেক আপেই রাখা হত।
                 বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর সুমির সাথে দুএকটা কথা হয়,সুমির মুখে বিজয়িনীর হাসি। রণির জন‍্য ছোট্ট প্রিন্সেস এনেছে,খুশি রণিও খুব। তবুও একটুকরো দুশ্চিন্তার রেখা মা আর বাবা দুজনেরই মুখে। ওদের বেবি ভালো থাকবে তো,একদম সুস্থ হয়ে যাবে তো?
             নানা কমপ্লিকেশন একের পর এক ধরা পরে ওদের বেবির। ওকে কাছে না পেয়ে অস্থির লাগে সুমির,তবুও ব্রেষ্ট ফিড করাতে গিয়ে ওকে একটু কাছে পায়। ঋক আর রণি তো ব‍্যস্ত হয়ে পড়েছে কবে ছোট ডলটাকে নিয়ে নাড়াচাড়া করতে পারবে বাড়ি গিয়ে।
                    একটু দেরি হলেও সুমি সব বিপদ বাধা পেরিয়ে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফেরে। শাশুড়িমা আদর করে ওদের ঘরে নিয়ে যান। ঋক তো মহা খুশি,মা এসেছে বোনকে সাথে নিয়ে।
          খুব যত্ন করে ডাক্তার রাখতে বলেছেন ওকে যাতে কিছুতেই কোনরকম ইনফেকশন না হয়। তবুও দিন সাতেক পর আবার নার্সিং হোমে দিতে হলো মেয়েকে। সাথে সুমিকেও যেতে হলো। জন্ডিস হয়েছে মেয়েটার। বেশ কয়েকদিন থাকার পর নার্সিং হোম থেকে বাড়ি আসে সুমি আর মেয়ে। সত‍্যি কেনো যে মেয়েটা সুস্থ হলোনা,একটা না একটা লেগে আছে। রণি যদিও এরমধ‍্যেই ওর নাম রেখে দিয়েছে প্রিন্সেস,আর ভালো নাম অপরাজিতা।
          একটু একটু করে বড় হচ্ছে রণির প্রিন্সেস। ঋক মাঝে মাঝে অভিযোগ করে বাবা শুধু বোনকেই ভালোবাসে,আমাকে ভালোবাসেনা। সুমি বোঝায় বাবা আর মা ওদের দুজনকেই ভালোবাসে একদম খুব খুব এত্তোটা আদর করে। রণি প্রিন্সেস বলে ডাক দিলেই কেমন যেন ছটফট করে ওঠে মেয়েটা,ঠিক বুঝতে পারে ওর বাবা ওকে ডাকছে। সবই একটু দেরিতে শিখছে মেয়েটা,অন‍্যদের থেকে বেশ দেরিতে।
             প্রায় একবছর দুমাস বয়স হয়ে গেলো দেখতে দেখতে অপরাজিতার মানে রণির প্রিন্সেসের তবুও কেন যে হাঁটতে শিখছেনা। ওর পাগুলোও যেন একটু সরু দেহ অনুপাতে। অন‍্যরা যেখানে দাঁড়ায় ধরে ধরে ওর পাদুটো যেন শরীরের ব‍্যালান্স নিতেই যেন পারছেনা। আর দেরি না করে ওরা অপরাজিতাকে নিয়ে কলকাতায় আর কলকাতার বাইরে দেখিয়ে নিয়ে আসে। অনেক পরীক্ষা হয়,দেখা যায় সত‍্যিই ওর পায়ের সমস‍্যা,হয়ত কোনদিন স্বাভাবিক ভাবে হাঁটতে পারবেনা। যা বলছেন ডাক্তাররা সেভাবেই চিকিৎসা চলতে থাকে। ধীরে ধীরে অপরাজিতা বড় হতে থাকে। একটা ছোট অপারেশনও হয়,চলে ফিজিওথেরাপি,কিছুটা ইমপ্রুভ করে কিন্তু স্বাভাবিক হয়না।
       মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে সুমি,খুব খারাপ লাগে যখন পার্কে অন‍্য ছেলে মেয়েরা কত দৌড়োদৌড়ি করে,স্লিপে ওঠে। তখন ওর মেয়েটা হয় কোলে আর নাহয় ওর হুইলচেয়ারে বসে থাকে। ও খুব চেষ্টা করে ওকে ধরে ধরে হাঁটাতে,একটু এঁকে বেকে হেঁটেই মেয়েটা আর পারেনা। প্রায়ই পরে যায়,তবে ওর ইচ্ছার কোন শেষ নেই তাই আবার বলে," মা আমাকে ধরে নিয়ে চলো না গো,আমি ঐ স্লিপটাতে বসি। ওই তো দাদাভাই উঠেছে ওখানে।"
      ওর ইচ্ছেকে পাখনা মেলতে দিয়ে অনেক সময়ই একটু ঝুঁকি নিয়ে ফেলে সুমি,এই সেদিনই তো মুখ থুবড়ে পড়লো মেয়েটা। পাশের থেকে দুজন মহিলা বলে উঠলেন," ইশ্ কি ব‍্যাথা পেলো আহা রে,খোড়া মেয়েকে এইভাবে কেউ ওঠায় স্লিপে,ভাগ‍্যিস নাকটা থেঁতলে যায়নি।" মায়ের ছলছল করা চোখদুটোর দিকে তাকিয়ে বলে অপরাজিতা," আমার লাগেনি মা,একটুও লাগেনি। আমি পারবো,আমাকে আবার বসিয়ে দাওনা।"....হাতের মুঠোটা শক্ত করে আবার বসিয়ে দেয় মেয়েকে,কাছে দাঁড়িয়ে থাকে ওরা মা আর ছেলে।
              হয়তো এই সাপোর্টটারই দরকার ছিলো অপরাজিতার। এক দুবার হোঁচট খেয়ে এবার ধাতস্থ হয়ে গেলো মেয়েটা। মেয়েটার মুখে হাসি দেখে মনটা ভরে যায় সুমির। এ যেন আমি সব পেরেছির হাসি। মেয়েটাকে নিয়ে এলো বাড়িতে মনটাও বেশ ভরে গেলো। বাবা বাড়িতে আসার সাথে সাথেই মেয়ে বলে," বাবা আমি পেরেছি গো,স্লিপে চড়তে কি মজা!"....." এই তো আমার প্রিন্সেস সব পারে। একদিন আমার প্রিন্সেস পাহাড় জয় করবে।" দীর্ঘশ্বাস ফেলে সুমি,মেয়েটা তো ভালো করে হাঁটতেই পারেনা।
       বাড়িতে আত্মীয়স্বজন এলেও সেই একই সমস‍্যা,ইশ্ এতো সুন্দর মেয়েটা দেখতে কিন্তু হাঁটতে পারেনা ভালো করে,কি যে হলো! আমাদের বংশে তো এমনটা নেই কেউ,হয়ত পরোক্ষভাবে সুমির বংশেই ইশারা করে ওরা।
....তবে রণির কথা শুনে অনেকেই চোখ ওল্টায়," আসলে মাসিমণি,ও তো প্রিন্সেস। তাই ওর পা পরে না মাটিতে। আমি থাকতে আমার প্রিন্সেস কেনো মাটিতে পা দেবে শুনি। ওর স্বপ্নগুলোকে আমরাই উড়িয়ে দেবো আকাশে। "
        চোখের কোণটা ভিজে যায় সুমির হয়ত ওর অনেক ভাগ‍্য তাই এমন সঙ্গী পেয়েছে।
          দেখতে দেখতে মেয়েকে স্কুলে দেওয়ার সময় হয়ে যায়,একটু দেরি ওরাই করছিলো যদিও ভালো স্কুলেই ভর্তি করার চেষ্টা করলো ওকে।ওর হাঁটার সমস‍্যার জন‍্য একটু কিন্তু করছিলেন প্রিন্সিপাল। রণি একটু বেশিই জোর দেয়," ম‍্যাম যদি বলেন ও প্রতিবন্ধী,ঠিক আছে তাহলেও ওকে নেওয়া উচিত। যদিও আমি জানি হাজার হাজার মানসিক প্রতিবন্ধী মানুষের চেয়ে ও অনেক এগিয়ে। "
      অপরাজিতা ভর্তি হয়ে যায়,মন জয় করে নেয় সবার। পড়াশোনাতে কি যে ভালো মেয়েটা! ওকে না নিলে ভুলই হত। রণিকে স্কুল থেকে ডেকে পাঠায় একদিন,একটু টেনশনেই যায় স্কুলে কে জানে আবার কি বলবে।
.....ওদের ক্লাশটিচারই এগিয়ে আসে," সত‍্যি অপরাজিতাকে ভর্তি না করলে কিছুতেই বুঝতে পারতামনা মেয়েটা এতো ভালো! সত‍্যিই বোধহয় ওর কোন তুলনা হয়না। এতো শেখার আগ্ৰহ আর কি সুন্দর মনে রাখতে পারে। ওর কাছে শুনেছি ওর দাদা আছে,একটা কথা বলবো।
...." বলুননা ম‍্যাম,আমি চেষ্টা করবো সাধ‍্যমত"।...."ওকে একটু বেশি সময় দিন,সবসময় বোঝাবেন ওর পাশে আপনারা আছেন।".....চোখদুটো হাল্কা ভিজে যায় রণির," ওকে আমরা জড়িয়ে থাকি।"
....." ও ভীষণ ভালো ছবি আঁকে আর আবৃত্তি করে জানেন আপনারা।"
...." ছবি আঁকতে আমরা দেখেছি,তবে ওর ওপর বেশি চাপ পরবে বলে আর শেখাইনি। তবে আবৃত্তি!
......" ওর অন‍্য কোয়ালিটিগুলো একটু বেশি করে ডেভলাপ করুন। ওর অনেক বেশি কনফিডেন্স বাড়বে,যে অন‍্যদের চেয়ে ও এগিয়ে আছে।"
      ...." নিশ্চয় চেষ্টা করবো ম‍্যাম। সো মেনি থ‍্যাঙ্কস এইভাবে বলার জন‍্য।"
....." আসলে আপনাকে বলা এই কথাগুলো অনেকটাই সংহিতার। একদম নতুন এসেছে আমাদের স্কুলে ভীষণ ভালো মেয়ে। ওই বলেছে এই কথাগুলো। আসলে অপরাজিতার হাঁটা চলার কষ্টর জন‍্য আমরাও একটু সাবধানে থাকি। সংহিতা একটু বেশিই খেয়াল রাখে ওর।"
          রণির ফেরার পথে মনটা ছুঁয়ে যায় সত‍্যিই বোধহয় দ‍্য বেষ্ট স্কুলেই ভর্তি হয়েছে প্রিন্সেস। এতো ভালো করে ওনারা বললেন যে মনটা ছুঁয়ে গেলো। সংহিতা ম‍্যামের সাথে দেখা হলে খুব ভালো হত। অনেককিছু জানতে পারতো।
              বাড়িতে এসে জড়িয়ে ধরে প্রিন্সেসকে, আজ আরেকটু বেশি করে আদর খেলো বাবার।সুমি এগিয়ে এসে বলে," কি হয়েছে গো?কি বললো ওরা,কোন সমস‍্যা?"
      "আমার সোনা প্রিন্সেস এর আবার কি সমস‍্যা?ও শুধু বড় হোক নিজের খেয়ালে। তুমি দেখো ওকে।"
...." সবসময় দেখি গো। "...." আচ্ছা ও এতো ভালো আবৃত্তি কি করে শিখলো বলতো?"
কারণটা ওদের কারো জানা নেই। তবে ওকে জিজ্ঞেস করে জানলো দাদার কাছ থেকে শিখেছে। সত‍্যিই তো ঋক আবৃত্তি শেখে,ওর বলা কবিতাগুলো কখন যে মুখস্থ করে ফেলেছে মেয়েটা।..." প্রিন্সেস তুই সংহিতা ম‍্যামকে চিনিস?"..." নতুন ড্রয়িং ম‍্যাম বাবা,আমাকে খুব ভালোবাসে।"
            অনেকটা নিশ্চিন্ত লাগে ওদের,একটু আলাদা করে যত্ন নেয় রণি ওকে আঁকা আর আবৃত্তি শেখানোর জন‍্য। বাড়িতেই রেখে দেয় ভালো টিচার।
               সংহিতা নামটা আজকাল প্রায়ই শোনে মেয়ের মুখে। ওকে খুব ভালোবাসে,আদর করে আর ম‍্যামের মুখে হাসিটা খুব সুন্দর। সবসময় বলে আমাদের নিজেকে ছোট ভাবা পাপ। তুমি সবচেয়ে সেরা।
         এই সেরা কথাগুলো যে শেখায় তাকে দেখতে বড় ইচ্ছে করে ওদের। সুমি জিজ্ঞেস করে,"ম‍্যাম কেমন দেখতে রে?"...." খুব সুন্দর মা, একদম তোমার মত।"
         প্রিন্সেস যতটা শিখতে চায় শিখুক,নিশ্চয় পারবে ও,হোকনা একটা দিক একটু কম। শান দিতে হবে ওর ভালো লাগাতে আর জাগিয়ে তুলতে হবে ওর আত্মবিশ্বাস। সত‍্যিই বোধহয় এই মানসিকতাটাই খুব জরুরী। এর মাঝেই একদিন ঋক খুব রেগে বাড়ি ফিরে আসে,মায়ের কাছে বলে," ওরা কেন আমার বনুকে খোঁড়া বলেছে।"..অনেক বুঝিয়ে ছেলেকে শান্ত করে সুমি একবুক কষ্ট যে ওরও হয় সবসময়।
         বেশ কিছুদিন বাদে হঠাৎই ওদের দুজনকে ডেকে পাঠায় স্কুল থেকে। সত‍্যিই খুব টেনশন হয় ওদের হঠাৎ কি হলো আবার?
.....ক্লাশটিচারই ওদেরকে নিয়ে যান প্রিন্সিপ‍্যালের রুমে। একটু টেনশন হলেও ওনার হাসিমুখটা দেখে অনেকটা রিল‍্যাক্সড লাগে।
...." আসুন বসুন,আচ্ছা এটা চিনতে পারেন?"
  ওরা দুজনেই তাকিয়ে দেখে ডেট ক‍্যালেন্ডার কিন্তু অদ্ভুত সুন্দর ছবি আঁকা সেখানে। মনে হচ্ছে কোন বাচ্ছার আঁকা ছবিকে প্রিন্ট করা হয়েছে।
...." এটা অপরাজিতার আঁকা ছবি,বোর্ড থেকে একটা ড্রয়িং কম্পিটিশন হয়েছিলো আর তাতে দ‍্য বেষ্ট পিকচার আ্যওয়ার্ডটা আমাদের স্কুলকে এনে দিয়েছে ও এই দেখুন।"
          মা বাবার কাছে বোধহয় এক অন‍্যরকম পাওয়া,যে সন্তানকে নিয়ে এতোদিন কত কথা শুনে এসেছে আর কষ্ট পেয়েছে তার মেধার উজ্জ্বল দিকটা একমুঠো সূর্যের আলো ছড়িয়ে দেয় ওদের মনের প্রকোষ্ঠে।
       ...." অপরাজিতা ভালো তবে ওকে আত্মবিশ্বাসের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে নিয়ে গেছে সংহিতা। ওকে ভালোবাসতে শিখিয়েছে নিজের ভালোলাগা গুলোকে। শুধু ও কেনো আমাদের স্কুলের বাচ্ছারা যে এতো কিছু জানে আমরা বুঝতেই পারতামনা ও না এলে এখানে।"
      ...." আমরা তো ভাবতেই পারছিনা,সত‍্যি অনেক ধন‍্যবাদ ম‍্যাম। একটা রিকোয়েষ্ট ছিলো একবার যদি সংহিতা ম‍্যাডামের সাথে দেখা হত। "
           হাসেন উনি," ও খুব একটা কারো সাথে মিট করতে চায়না,আমরাই বলে দিই ওর কথাগুলো। আসলে বাচ্চারাই মোটামুটি ওর সবটা। ওদের নিয়েই থাকতেই ভালোবাসে ও।"
       উনিই ইশারায় বলে দিলেন ওদের নিয়ে যেতে সংহিতা ম‍্যামের কাছে। হল ঘরে এসে ঢোকে সুমি আর রণি,ওহ্ এখানে তো চাঁদের হাট বসেছে। যে যার মতো তাদের আ্যক্টিভিটি নিয়ে ব‍্যস্ত। প্রিন্সেস কেও দেখে একমনে উজ্জ্বলমুখে একচিলতে হাসি মাখিয়ে কি যেন করছে মাথা নিচু করে। কিন্তু ম‍্যাম কোথায় ,একটু অন‍্যমনস্ক হয়ে পড়েছিলো ওরা একমুহূর্তের জন‍্য। হঠাৎই পেছন ফেরে ওরা," আমিই সংহিতাম‍্যাম।"....কয়েক সেকেন্ডের জন‍্য কথা বলতে পারেনা ওরা। হুইলচেয়ারে বসে থাকা এক আত্মবিশ্বাসী উজ্জ্বল মুখের সৌন্দর্য আর ব‍্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয় ওরা। কিন্তু কখনো স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি এমন কিছু দেখতে হতে পারে!
           এক হুইলচেয়ারে বসে থাকা অসামান‍্য মেয়ে নিজের স্বপ্নগুলো ছড়িয়ে দিয়েছে হাজারো প্রিন্সেসের মধ‍্যে। চোখ ফেরাতে পারেনা সুমি,কি সুন্দর দেখতে ওনাকে আর কতই বা বয়স হবে। কিন্তু মেয়ে তো কখনো বলেনি সংহিতা এমন।
  কি কথা বলবে,কচিকাচারা ওকে দেখেই ঘিরে ধরে চারপাশ থেকে। "অপরাজিতার মধ‍্যে আগুন আছে,শুধু একটু নজর দেবেন কোনমতেই যেন নিভে না যায় আগুনটা। নাইবা পড়লো ওর মাটিতে পা, ভালো করে স্বপ্নগুলো পাখা মেলুক যেমন খুশি। যার কাছে স্বপ্ন আছে সে সত‍্যিই ধনী। দেখতে দিন ওকে স্বপ্ন আর শুধু বাড়িয়ে দিন আপনাদের হাতটা।"....কথাগুলোতে কি ছিলো ওরা জানেনা সুমির চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরে দুফোঁটা জল। " কাঁদবেন না প্লিজ,কান্না ব‍্যাপারটা ঠিক আমার ভালো লাগেনা। লড়াই করতে শেখান ওকে,এই যেমন আমরা সবাই করছি। স্বপ্ন বাঁচানোর লড়াই।"
....আর বিশেষ কিছু বলেনা সংহিতা হাতটা বাড়িয়ে দেয় যেখানে ধরা দেয় অনেকে,চায় ওর একটু স্পর্শ। সংহিতার একটু ভালোবাসা মাখানো ছোঁয়া যে ম‍্যাজিক টাচ ওদের কাছে।
          পাহাড়ে চড়া আর আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্ন ছিলো সংহিতার,সুদক্ষ ছিলো মাউন্টেনিয়ারিংয়ে কিন্তু একটা সাঙ্ঘাতিক আ্যক্সিডেন্ট বদলে দিয়েছিলো জীবন। সরে গিয়েছিলো ভালোবাসার মানুষ,আর কৃপার পাত্র হয়ে গিয়েছিলো সবার। বুঝেছিলো হাঁটতে না পারার যন্ত্রণা তিলতিল করে।
       তবুও থেমে থাকেনি স্বপ্ন,তাই এখনো নিজের দুচোখের স্বপ্ন ছড়িয়ে দিয়েছে হাজার চোখে। খুঁজে নিয়েছে বেঁচে থাকার আনন্দ।
                সুমি আর রণি ফিরে আসে ওরাও যে স্বপ্ন দেখছে আর ওদের স্বপ্ন দেখিয়েছে সংহিতা। আজ শুধু মনে একরাশ খুশি। প্রিন্সেস কে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করলোনা সংহিতা যে হুইলচেয়ারে আসে তা বলেনি কখনো কেন। আসলে হাজার একটা মানসিক প্রতিবন্ধকতায় জর্জরিত সমাজে সংহিতা আর অপরাজিতারাই বোধহয় পুরোপুরি সুস্থ, ওরা যে দুচোখে স্বপ্ন সাজায়।

    সমাপ্ত:-

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...