Skip to main content

ব‍্যালেন্স ইন সম্পর্ক

#ব‍্যালেন্স_ইন_সম্পর্ক#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

ব‍্যাগটা খুলেই ইলিশ মাছটা দেখে মনটা একটু উড়ে গেলো এক নিমেষে বাবার কাছে শর্মির। কে জানে আজ কি রান্না করতে পেরেছে? প্রায়ই তো শোনে রান্না করেনা। আজ পেটটা ভালো নেই তাই দই চিঁড়ে খেয়ে নেবে অথবা কালকের অনেক কিছু আছে আজ আর কিছু করতে হবেনা।
           শর্মির মা নেই,বেশ কয়েকবছর আগে হঠাৎই চলে যান ওর বিয়ের পর পরই। তাই বাবা একদম একা,যদিও ওর ফ্ল্যাট থেকে বাবার ফ্ল্যাট খুব একটা দূর নয়। আসলে ওরা যে ফ্ল্যাটটাতে থাকে ওটা ওর বাবার ফ্ল্যাট। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে কিছুদিন ছিলো তখন ওখান থেকেই অফিসে যাতায়াত করতো,কিন্তু মেয়ে একটু বড় হবার পর একদম ওদিকের পাট চুকিয়ে এখানে চলে আসে। যদিও আসাটা খুব সহজ ছিলোনা,বেশ আপত্তি করেছিলো ওর কর্তা। হঠাৎ করে শ্বশুরের ফ্ল্যাটে উঠে আসা নিজের বাড়ি ছেড়ে,প্রথমে মানতেই পারেনি কিছুতেই।
         শুধু দূরত্বই হয়তো ছিলোনা,সমস‍্যা কিছুটা ছিলো আ্যডজাস্টমেন্টেরও যেমনটা সব মেয়েদেরই হয়ত একটা সমস‍্যা নতুন বাড়ি আর নতুন সংসারে মানিয়ে নেওয়া। মা বাবার আদরে মানুষ হওয়া শর্মি শাশুড়ির কিপ্টেমি দেখতে দেখতে বিরক্ত হয়ে উঠেছিলো। কোনকিছুই যেন হাত দিয়ে গলেনা সবই অল্প অল্প মানে রুটি আছে তো তরকারী কম। মাছ আছে তো ঝোল নেই আবার কখনো বা মাংসের আলু আছে তো মাংস নেই।
......বিকেলে অফিস থেকে ফিরে দেখতো সবার
জলখাবার হয়ে গেছে মুড়িমাখা দিয়ে অথচ ওরটাই নেই। শাশুড়ি বলতেন," ওহ্ আজ তুমি এতো তাড়াতাড়ি এসে পড়লে,মুড়িটা এইমাত্র খেয়ে উঠলাম। এই যাহ্ মুড়িও তো প্রায় শেষ।"
.....খিদের পেটে গা টা জ্বলে উঠতো শর্মির তারপর রান্নাঘরে গিয়ে যা পড়ে আছে তাই নিয়ে ঘরে ঢুকে যেতো। ওর কর্তার তখন কিছুদিন বাইরে পোষ্টিং,এলে অভিযোগ করতো," দেখেছো তো এই বাড়িতে কিছুই থাকেনা আমার জন‍্য?"
...." একটু মানিয়ে নিতে শেখো,কি আবার থাকবে,সংসারটা তো তোমার যা মনে হয় নিয়ে খাবে। অথবা বানিয়ে নেবে,মায়ের বয়েস হয়েছে বোনের বিয়ে হয়ে গেছে কে তোমাকে হাতে করে দেবে শুনি।"....এই নিয়েই একচোট ঝগড়া আর মনকষাকষি দুজনের মধ‍্যে..." হুঁ তুমিও যেমন,বানিয়ে নিয়ো,করে নিয়ো বলেই খালাস। আরে ঘরে জিনিস থাকবে তবে তো করে নেবো।"
....." এতোদিন তো অনেক করলে,এখনো তো দিব‍্যি বাড়া ভাত খেয়ে অফিসে যাচ্ছো। সংসার কি করে চলে কিছুই তো দেখলেনা।"
        ওর বর রজতের চিমটি কাটা কথায় মাথায় আগুন জ্বলে যায় শর্মির," শোন,উনি যা কিপ্টে আর খুঁতখুতে মহিলা আমি পারবোনা। রান্না করতে গেলে বলে তেল বেশি খরচ করছি। বেশি ফোটাই তরকারি তাই গ‍্যাস খরচ হচ্ছে।"....." অপচয় হলে তো বলবেই,সত‍্যিই তো মা একটা সময় সাশ্রয় করে চলেছিলো বলে এখন এই মার্বেলের মেঝেতে হাঁটছি। "...." ঐ মেঝেতেই হেঁটে বেড়াও,ঐ জন‍্যই মা বলেছিলো বরিশালের লোক এরা,আসতে শাল আর যেতে শাল দিয়ে ছেড়ে দেবে।"
......" তোমার মায়ের কথা আর বোলোনা,নিজে তো কখনো শ্বশুর শাশুড়ি নিয়ে ঘর করেনি আর তেমনি শিক্ষা দিয়েছে মেয়েকে। আমার সব জানা আছে। "
....চেঁচিয়ে ওঠে শর্মি," কি জানা আছে শুনি? বলে যাও যা মনে আসে বলো।"....." বলবোই তো তোমাদের সাথে তো কোন আত্মীয়স্বজনেরই সম্পর্ক নেই। আর আমার মাকে সবাই ভালোবাসে।"
      ......." তা তো বাসবেই,মুখে যে মধু ঝরে। একেবারে মিছরির ছুরি,আরে যে সাথে থাকে সেই তো বোঝে। সব ব‍্যাপারে কিপ্টেমি।"
......." এই বাজে বোকোনা,তুমিও তো কম না,নিজের টাকাটা ভালোই চেনো। এক আধদিন একটু ভালো কিছু তো হাতে করে আনতে পারো। নিজেও খেতে পারো,অন‍্যদেরও খাওয়াতে পারো।"
.....একটু ঢোক গেলে শর্মি,ওর বয়েই গেছে কষ্টের টাকা এভাবে খরচ করতে আর কেনোই বা খরচ করবে। তবুও গলায় জোর এনে বলে," শোনো ওনাকে কেউ খুশি করতে পারবেনা। যা আনি মুখটা বেজার দেখি,কখনো প্রশংসা শুনিনা। আর মেয়ে আনলে খুব খুশি। "
....." আচ্ছা,বাদ দাও তাহলে মাকে একটু কাজে হেল্প তো করো। রান্নাঘরটা তো একটু সামলাতে পারো।"
......" শোনো চাকরির লোভে তো তখন বেশ বিয়েটা করেছিলে,জানতেনা আমায় অফিস করতে হয়,বিয়ের আগে বাড়ির কাছে অফিস করেছি এখন ট্রেন জার্নি করে আমার শরীর আর দেয়না।"
......" তাহলে আর কথা নয়। যা পাচ্ছো,যতটুকু পাচ্ছো তাই নিয়ে খুশি থাকো। অভিযোগ করতে এসোনা। বাড়ি এসেও শান্তি নেই একদম যা তা ধ‍্যাৎ।"
......" আমি কাজ করতে পারবোনা বলে তো রান্নার লোক রেখে দিতে চেয়েছিলাম,উনিই তো রাজি হলেননা। বাতিকগ্ৰস্ত মহিলা,বামুন ছাড়া হাড়িতে হাত দিতে দেবেননা।"
....." তুমি কিন্তু এবার লিমিট ক্রস করছো,মাইন্ড ইয়োর ল‍্যাঙ্গুয়েজ শর্মি। ভালোই করেছে,তারপর তুমিই শোনাবে তোমার পয়সা দিয়ে রাখা লোকের রান্না সবাই খাচ্ছে। কৃতার্থ করছো টাকা দিয়ে লোক রেখে সবাইকে। তুমিও বা কম কিপ্টে কিসে? মুখেই যত কথা,নিজের টাকাটা ভালোই চেনো।"....." কে চেনেনা শুনি,তুমি চেনোনা? আমি চাকরি করি বলে তো আর একটা পয়সাও ঠেকাও না।"
......ক্লাইম‍্যাক্সটা প্রায়ই হতো কান্না দিয়ে। মানে শর্মির বালিশে মুখ দিয়ে কান্না,আর রজতের পাশ ফিরে শোওয়া। এক একদিন চিৎকারে শ্বশুর শাশুড়িও চলে আসতো। শ্বশুর মশায় ছেলেকে একটু দুচার কথা বললেও শাশুড়ি মুখ খুলতোনা। গা টা চিড়বিড় করে উঠতো শর্মির,সেয়ানা মহিলা কি সুন্দর ছেলে বৌয়ের ঝামেলা এনজয় করছে একটা মুখে কথা নেই,একটু তো শাসন করতে পারে ছেলেকে। নিশ্চয় ও যখন বাড়ি থাকেনা তখন সব লাগায় ছেলেকে। বাবু বাবু,যতসব আদিখ‍্যেতা গা জ্বলে যায় একেবারে এখনো কেমন হাতের মুঠোয় করে রেখেছে ছেলেকে। একেবারে মাতৃভক্ত হনুমান একটা। জাস্ট গালাগাল বেড়িয়ে যায়।
                মাঝে সময় গড়িয়েছে বেশ অনেকটা,ঝগড়ায় আদরে আর দাম্পত‍্যের সহাবস্থানে দুজনে এখনো আছে পাশাপাশি। না থেকে উপায়ই বা কি, সেতু বন্ধন যে হয়ে গেছে এর মধ‍্যেই,ওরাও যে সন্তানের মা বাবা।
             উইকএন্ডে বা কখনো ছুটিছাটা থাকলে শ্বশুরবাড়ি যায় শর্মি,না গেলে রজত খুব অশান্তি করে। ওর শ্বশুর শাশুড়ির চিমটি কাটা কথা তো আছেই। কিছুটা একঘেয়েমি থেকে মুক্তি পেলেও মাঝে মাঝে অসহ‍্য লাগে। ও ওখানে গেলেই ননদ এসে হাজির হবে তারপর যত হেল্পারের কাজ সব করো। গাদা গাদা ময়দা মাখো,পাজা পাজা রুটি করো। আসল ক্রেডিট কিন্তু শাশুড়ির,কোনদিন দয়া করে কিছু করতে দিলে যদি ভালো হয়,কোনদিন প্রশংসা করেনা। অন‍্যরা প্রশংসা করলেও ওনার মুখে শোনাটা ভাগ‍্যের ব‍্যাপার কিছুনা কিছু ভুল ধরবেই। ওর ননদটা কাজে অষ্টরম্ভা হলেও এমনিতে খারাপ না। ওই মাঝে মাঝে বলে মাকে," বৌদি কিন্তু ফাটাফাটি করেছে মাংসটা মা,তুমি একটু কমপ্লিমেন্ট দাও।" মুখ বেঁকিয়ে একটু কাষ্ঠহাসি দিয়ে বলেন," খারাপ হয়নি,তবে তেলে ঝালেই তো স্বাদ খুলেছে। আমি তো চিরকালই তোর বাবার কথা ভেবে কম তেলেই রান্না করেছি।"
              বাবার ফ্ল্যাটে চলে এলেও অশান্তি মাঝে মাঝেই হয় দুজনের মধ‍্যে। রজতের মধ‍্যে এক অদ্ভুত অপরাধবোধ কাজ করে বয়স্ক বাবা মায়ের জন‍্য তেমন কিছু করতে পারছেনা,বৌয়ের কথা ভেবে আলাদা থাকতে হচ্ছে। সত‍্যিই তো ছেলে হিসেবে কি কর্তব‍্যই আর করছে? এখনো বুড়ো বাবাকে বাজার করতে হয়। আর সেই রাগটা পড়ে শর্মির ওপর,ভালো ব‍্যবহার করতে চাইলেও মাঝে মাঝেই মনের অন্তরালে থাকা অনুভূতিগুলো বেরিয়ে আসে ঝগড়া হয়ে।
         অদ্ভুত একটা দোটানায় থাকে রজত,কখনো ভালো কখনো মন্দ। শর্মির বাবাকে খুব একটা পছন্দ করেনা। ও বাবার জন‍্য কিছু করতে গেলেই কেমন যেন বা‍ঁকা চোখে দেখে।খুব খারাপ লাগে শর্মির,সত‍্যিই মা চলে যাবার পর বাবা একা হয়ে গেছে,এখন নিজেই রান্না করে খায়। একা ফ্ল্যাটে বিশ্বাস করে কোন লোকও রাখতে পারেনি। বাবার প্রতি সহানুভূতি দেখাতে গেলেই রজত বলে," বাবা বাবা করো আর আমার বাবা মায়ের প্রতি তোমার কোন কর্তব‍্য নেই না? যেমন দেখাবে তেমন দেখবে।"
                বাবাকে কোন কিছু করলেই মোটামুটি লুকিয়েই করতে হয়,অনেক সময়ই এদিক ওদিক করে রান্না করে সরিয়ে রাখে কিছু পদ তারপর অফিস যাওয়ার সময় চুপ করে দিয়ে আসে,বা বাবাকে কোথাও দাঁড়াতে বলে টিফিন কৌটোটা ধরিয়ে দেয় হাতে। সত‍্যি চাকরি করা মেয়েরাও অনেকসময় কতটা পরাধীন হয়ে যায়। অথচ সংসারটা এই করে ভাঙবে এমন সাহসও শর্মির নেই। তাই ছুটির দিনে ইলিশ মাছ দেখে বাবার জন‍্য মন খারাপ করে লাভ নেই আজ আর কোনভাবেই পাঠানো যাবেনা মাছ। শাশুড়ির ট্রেনিংয়ে থাকতে থাকতে আজকাল ওরা দুজনেই ভালো হিসেবি হয়ে গেছে। খুব ভালো করেই জানে একদম গুনে মাছ নিয়ে এসেছে রজত।
            মনে মনে ভাবে একদিন নিজেই বাজার থেকে মাছ এনে রান্না করে দিয়ে আসবে বাবাকে। এই বাড়িতে এনে দুচারদিন রাখতেও পারেনা বাবাকে। তাহলেই প্রশ্ন উঠবে," আমার বাবা মাকে দেখতে পারোনা। আর তোমার বাবাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি।"...." আমি কি বারণ করেছি আসতে!ওদেরকে বলো এখানে এসে থাকতে,আমার মেয়েটাও তো চায় ওদেরকে।"
....." কেন এসে থাকবে তোমার বাবার দেওয়া ফ্ল্যাটে,ওদের নিজের বাড়ি কি নেই?"...এরপর কথা বললে অনেক কথা হয়,কিন্তু আজকাল আর মুখ খুলতে ইচ্ছে করেনা,মেয়েটাও ঘাবড়ে যায় ওদের ঝামেলা দেখে। কে যে নিয়ম বানিয়েছিলো বিয়ের পর মেয়েদেরকেই বরের বাড়িতে থাকতে যেতে হবে মনে মনে গজগজ করে শর্মি।
           আর এসে কাজ নেই ওনাদের খাটতে খাটতে ওর প্রাণ যাবে,অফিস মাথায় উঠবে। এমনিতেই ননদ হাজির হয় মাঝে মাঝে।
             অফিসে মাঝে মাঝেই শাশুড়িদের নিন্দাসভায় নিজের বাড়ির আর শাশুড়ির কথাও বলে শর্মি,ও যখন বলতে থাকে অন‍্যেরা শোনে। পরে কানাকানি করে,যা কিপ্টে আর হিসেবি ও ঠিকই হয়েছে। সবসময় নিজের স্বার্থ নিয়ে আছে,আমি কারো জন‍্য কিছু করবোনা আর সবাই আমাকে মাথায় তুলে নাচবে তা কি হয়? তাও ওর বাড়ির লোকজন অনেক ভালো তাই ছেলেকে মত দিয়েছে আলাদা হয়ে থাকতে শ্বশুরবাড়ির ফ্ল্যাটে। পড়তো আমাদের শ্বাশুড়ির খপ্পরে আর বরের পাল্লায় তাহলে বুঝতো।
                মিতালি চুপ করে শোনে সবার কথা,মোবাইলে চোখ রাখলেও কানে আসে অনেক কিছু। না বলে পারেনা," তোদের এই গিভ আ্যন্ড টেক পলিশিটা একটু ছেড়ে,কিছুটা বেশি দুএকবার দিয়েই দ‍্যাখ না ভালো ফল পাবি।".."কি বলছো গো,দিয়েই তো গেলাম সারাজীবন। পেলাম আর কি?"...." ঐ তো মুশকিল,আবার পাওয়ার চিন্তা!"....." তুমি আর কি বুঝবে,এখন তো একদম ঝাড়া হাত পা।"....." সেটা বুঝি,কিন্তু একটা সময় আমারও তো অনেক ঝামেলা ছিলো। মানিয়ে নিতেও অসুবিধে হয়েছিলো,তবে এখন বড় মিস করি রে জয়েন্ট ফ‍্যামেলি। আসলে হাজবেন্ড ওয়াইফের মধ‍্যে সবসময় একটা অভিভাবক থাকলে ভালো হয় জানিস তো।"
        ....শর্মি এসে বলে," আর বোলোনা মিতালিদি,থার্ড পার্সন থাকার মজা আমি বুঝেছি। আমাদের মাঝের ঝগড়াটা বেশ ভালো এনজয় করতেন। ছেলের কান ভাঙিয়ে আমার সাথে ঝামেলা লাগাতো। আমার বাবাকে তো একদমই দেখতে পারেনা,কি যে খারাপ লাগে!"
....." তুই একটু ভালোবাসনা ওর বাবা মাকে দেখবি ও আর কিছু বলবেনা। দেখনা একটু আ্যডজাস্ট করে।"....মুখে কিছু না বললেও শর্মি ভাবে ফ্রি আ্যডভাইস তো সবাই দিতে পারে। ওর যে কি অশান্তি সেটা আর কে বুঝবে। ঐ ভদ্রমহিলা কি করেনি ওর সাথে,ওর যা খেতে ভালো লাগে সেটাই ওনার পছন্দ। আর বেশিরভাগ দিনই তো ভাত কম পরতো,নাও এবার আধপেটা খেয়ে থাকো। যে মাছের ল‍্যাজা ভালো সেটা ওনার ভালো লাগে আবার মাথাও ভালো লাগে। আসলে খাওয়ার কষ্টটা শ্বশুরবাড়িতে পেলে ঠিক ভোলা যায়না।
                বেশ কিছুদিন পার হয়ে গেছে পাল্টায়নি শর্মির জীবন, মাঝে মাঝেই নানান অশান্তি,ভালো লাগেনা আর। আজকাল সত‍্যিই ডিপ্রেসড লাগে শর্মির। ওর বাবার প্রতি একটুও সফ্ট কর্ণার নেই রজতের আর ওর শাশুড়িও কখনো অনুভব করেনা সেটা।
             .....ওদের অফিসে শাড়ি নিয়ে আসে একটি মেয়ে সবাই সেখান থেকে শাড়ি কেনে ইনস্টলমেন্টে। পূজোর আগে সবাই শাড়ি দেখছে,শর্মিও শাড়ি কিনছে," ঐ শাড়িটা একটু দেখাও না,আর এটাও দাও। কত দাম গো এটার,না না থাক অত দামের দরকার নেই এটাই থাক।"....." তোর ননদের জন‍্য নিলিনা শাড়ি?"
...."না গো নিলাম না,দেখি আমাকে কি শাড়ি দেয় তারপর কিনবো। গতবার ও দামি দিয়েছে আমারটা কমদামের এই নিয়ে মুখ কালো করেছিলো।"
......" একটা কথা বলবো শর্মি,অত ছোটখাটো ব‍্যাপারে মাথা ঘামাসনা। শাশুড়িমায়ের জন‍্য দামি শাড়িটাই নে এবার,খুশি হবেন।"
....." হুঁ তাহলেই হয়েছে,আজ পর্যন্ত কিছু দিয়ে খুশি করতে পারলামনা।"
......" দিয়েই দ‍্যাখ না একটু ভালোবাসা আর ভালোকথা, ঠিক ভালোবাসাই ফেরত পাবি একদম ১০০% গ‍্যারেন্টি। আসলে আমরা একটু হাসিমুখ আর ভালোকথা বলতেও কিপ্টেমি করি। এগুলো একদম ম‍্যাজিকের মত কাজ করে। উনি নাইবা আ্যপ্রিসিয়েট করলেন তুই একটু করে দেখনা। যদি ফল পাস এট লিষ্ট তোর মানসিক শান্তিটা আসবে।"
         একটু নারাজ হলেও মিতালিদির পছন্দের শাড়িটাই কিনলো শর্মি। আর ননদের জন‍্য একটা কুর্তি আর দামি শাড়ি যদিও গা টা একটু চড়চড় করলো মনে হলো যেন ভস্মে ঘি ঢালছে। তবুও একটা চক্ষুলজ্জা বলেতো কিছু আছে,মিতালিদি যখন বলছে দেখাই যাক।
              তবে একদম ঠিক পূজোর আগে দেবে ঠিক করলো। পূজোর পর একটু বেশিই ফ্রেস লাগলো শর্মিকে,রজত নাকি এবার সবাইকে নিয়ে দীঘা গিয়েছিলো যদিও একদিনের জন‍্য। শর্মির বাবাও বাদ যায়নি,পূজোটা সত‍্যি এবার খুব আলাদা কেটেছে।...." তোর শাশুড়িমায়ের পছন্দ হয়েছে শাড়িটা।"...." জানোই তো ওনার এক্সপ্রেসন কম,তবুও মুখে হাল্কা হাসি হেসে বললেন ইশ্ এতো দাম দিয়ে কেউ কেনে!"...যদিও একটু বেশিই তেল মারা হয়ে গেলো তবুও তোমার টিপসে বলেই ফেললাম," আপনার চেয়ে দামি কি আছে মা?"
.....মিতালি একটু খুশি হয়ে বললো," আমার শুনে সত‍্যিই ভালো লাগছে,আর রজত কি বললো?"
....." আর বোলোনা,ও কি আর কম কিপ্টে এই পূজোতে আর নিজেকে কিছু খসাতে হলোনা পুরোটাই তো আমার ওপর দিয়ে হয়ে গেলো।"
...." তা যাক,অতো হিসেব করিসনা,আসলে বেশি হিসেবে সম্পর্কগুলো নষ্ট হয়ে যায়। এই বয়েসে অনুভব করি সম্পর্ক হয়না হিসেব করে বরং  ভাঙে।"
      আসলে জানিস তো মেয়েরা সংসারে যতই করুকনা কেনো টাকার খোঁটাটা কোন পুরুষমানুষই সহ‍্য করতে পারেনা। দ‍্যাটস কল্ড ইগো প্রবলেম।" আরে কি যে বলোনা,টাকা দেবো আর বলবোনা,নিয়েই তো ভুলে যাবে,আর তারপর বলবে তুমি কি করো।"...." বুঝলাম,এগুলো কমন কথা,সংসারটা তো তোদের দুজনেরই,করলিই না হয় একটু খরচ। একটু আগ বাড়িয়েই না হয় দিলিই টাকা। আনলি সংসারে কিছু ভালোমন্দ ,খেলি সবাই মিলে। রান্না করে বাবাকেও দিলি আবার শ্বশুরবাড়িতেও নিয়ে গেলি।"......." ওরে বাবা আসলে তোমরা তো সবটা জানোনা,তাহলে আর ও কোন খরচই করবেনা,সবটাই আমার ঘাড়ে চাপবে।"
               মিতালিরও একটু বিরক্ত লাগলো,সারাক্ষণ দুঃখ করছে অথচ নিজের দিকটা একটুও ছাড়বেনা। ব‍্যালেন্স অফ রিলেশন শেখাটা খুব জরুরী।
        বাড়ি গিয়ে মেয়েকে হোমওয়ার্ক করতে দিয়ে মিতালিদির কথাগুলো খুব মনে পড়লো শর্মির। আসলে তো ওর মা নেই তাই এমন করে বুঝিয়ে বলার হয়ত কেউ নেই। ও তো চায় একটা সুস্থ সম্পর্ক তাই একটু ঘুরে দাঁড়ালে কেমন হয়? দেখাই যাক কথাগুলো একটু একটু করে মেনে চলে।
       পরের উইকএন্ডে নিজেই ল‍্যান্সডাউন মার্কেটে গিয়ে একটা বড় ইলিশমাছ কেনে। ভালো করে সরষে দিয়ে ভাপা ইলিশ রান্না করে এয়ারটাইট কৌটো করে ভরে, কিছুটা নিয়ে যাবে শ্বশুরবাড়ির জন‍্য আর কিছুটা বাবাকে দেবে।
            রজত জিজ্ঞেস করে," হঠাৎ বাজারে গেলে,আমাকে বললেই তো হোত। ও বুঝেছি বাবাকে খাওয়াবে বলে এতো আয়োজন।"
          মাথাটা গরম হয়ে গেলেও চুপ করে যায় শর্মি,নাহ্ মাথা গরম করবেনা," না না মিতালিদি গেলো,তাই আমিও গেলাম। মনে হলো মাছটা খুব ভালো। ওবাড়ির জন‍্যও গুছিয়ে রেখেছি রান্না করে। বিকেলে নিয়ে যাবো। মা তো খুব ভালোবাসে ইলিশ খেতে।"
         কিছু একটা মুখের গোড়ায় এসে গেলেও চুপ করে যায় রজত,কোন দিকে সূর্য উঠেছে কে জানে, বাব্বা একেবারে ইলিশ রান্না করে শ্বশুরবাড়িতে! যাক আর কিছু শুনতে হোলোনা। বাবাকে টিফিনকৌটোটা দিয়ে এসে শ্বশুরবাড়ি যাবার উদ‍্যোগ নেয় শর্মি,উইকএন্ডটা ওখানেই কাটাবে। তবে সেদিন ও বাড়িতে বেশ হৈ চৈ ব‍্যাপার। শাশুড়িমায়ের মুখে বেশ একটা অল আউট হাসি দেখে মনটা হাসির বৃষ্টিতে ভিজে গেলো ইলিশের দামটা ভুলে গেলো শর্মি। মুখে মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে বললো,"মা আজ একটু চালটা বেশি করে নেবেন আজ,ভাত যেন কম না পড়ে।এই যে মাথা আর ল‍্যাজাগুলোও এনেছি,কি খাবেন ওগুলো দিয়ে,আমি আর করে উঠতে পারিনি।"
            ছোটখাটো ইলিশ উৎসবটা ভালোই জমলো সেদিন,নাহ্ ভাত আর কম পড়েনি। সবাই পরিপাটি করে খেলো,ইলিশ মাথা দেওয়া ডাল,চচ্চড়ি,ভাপা ইলিশ সবটাই। শ্বশুরমশাইও বললেন," আজ রান্নাগুলো কিন্তু খুব ভালো করেছো বৌমা,কি গো তাইনা?"
         আজ শাশুড়িমায়ের চওড়া মুখের মিষ্টি হাসি নজর কাড়লো সবার,আসলে মুখের পরিতৃপ্তিই অনেক না বলা কথা বলে যায়।
         মিতালিদিকে সত‍্যিই থ‍্যাংকস দেওয়া উচিত। মেয়েদের জীবনে ছাড়ার পার্টটাই বোধহয় বেশি,এক বাড়িতে মানুষ হয়ে আরেক বাড়িতে খাপ খাওয়ানো। মিতালিদিই বলেছিলো," আচ্ছা বলতো আগের দিনে কটা ডিভোর্স হোত,আর এখন ঘরে ঘরে ডিভোর্স। সমস‍্যা একটাই ইগো আর আ্যডজাষ্টমেন্ট। আমাদের মা ঠাকুমারা অনেক কম বুঝতো,আসলে ওদের বিয়েও হয়েছে অনেক কম বয়সে। কিছু বোঝার আগেই।"
           মিতালিদির কথায় মনটা চলে যায় মা ঠাকুমার স্মৃতিতে সমস‍্যা হয়ত ওদেরও ছিলো বহিঃপ্রকাশ কম। ওর দিদানের তো সারাদিনই কেটে যেতো রান্নাঘরে হয়ত ওটাই প‍্যাসন হয়ে গিয়েছিলো,ওটাই রিক্রিয়েশন জীবনের। তাতেও কি অনাবিল খুশির হাসি দেখতো মুখগুলোতে। আজ হয়ত দুহাজার টাকা খরচ করেও বেশ আনন্দ হলো এই প্রথমবার শর্মির। যাক তাহলে ও সুখ কিনতে শিখেছে,হয়ত বা ছাড়তেও শিখেছে।
                          রাতে রজতের বুকে অনেকদিন বাদে মাথা রাখে শর্মি,রজতই উজাড় করে দিয়েছে ভালোবাসা। অথচ একসময় কথার কচকচানি করে কত রাতই কেটে যেতো। অকথা,কুকথা আর ঝগড়াতে কেটে যেতো প্রেমের সুতো। আলগা হয়ে গেছে ভালোবাসার বাঁধন মনে হয়েছে এই বোধহয় ছিড়ে যাবে। ছেলেরা সাধারণত বৌয়ের কথায় ওঠাবসা করে,অন্ততপক্ষে নিন্দুকেরা তাই বলে। রজত একদম উল্টোটা তাই দেরিতে হলেও শর্মি বুঝলো এবার চালটা উল্টোই দিতে হবে। আগে বাধ‍্য বউমা মানে ভালো বৌমা আর দেন বল সুড়সুড় করে ওর কোর্টে এসে যাবে। সত‍্যিই কেনো এতোদিন ভেবে দেখেনি এইগুলো,অনেকগুলো দিন বোধহয় মাঝে গেলো মনান্তর আর কথান্তরে।
              মিতালিদিকে সবটা না বললেও বেশ কিছুটা বললো শর্মি,ওর হাসিমুখটা বলে গেলো অনেক কিছু। আসলে মিতালিও তো ভুক্তভোগী,তাই চায়না কোন সংসারে আর ফাটল ধরুক।
             ঐ বাড়িতে অনুষ্ঠান বলতে ওর মেয়ের জন্মদিনটাই হয়। রজত আর ননদ কখনো শ্বশুরমশাইয়ের জন্মদিনে জিনিসপত্র কিনে বাড়াবাড়ি করলে গা চিড়বিড় করতো। ওর বাবা জামাইষষ্ঠী,পূজো সবটাতে কর্তব‍্য করে যাচ্ছে সেদিকে কোন ডিউটি নেই আর নিজেদের বেলায় আছে।"
          শ্বশুরমশাই বেড়াতে ভালোবাসেন কিন্তু  শাশুড়িমায়ের শরীর আর সংসারের জন‍্য খুব একটা কোথাও যাওয়া হয়না। সেদিন রজতের সাথে কথা বলতে বলতে শুনেছিলো ওর মা বাবার চল্লিশতম বিবাহবার্ষিকী নাকি এবার। খুব ইচ্ছে করলো শর্মির একবার ভালো বৌ হতে,আসলে জীবনে অনেকসময় এই আ্যচিভমেন্টগুলোও প্রেসাস হয়ে যায়।
               মিতালিদিকেই বলতে হবে,আইডিয়ার জন‍্য। প্ল‍্যানটা শর্মির,ওরে বাবা সবাই তো কনট্রিবিউট করতে চায়! রজত তো বটেই এমন কি ওর ননদও। শ্বশুরমশাইকে বলতেই উনি খুশি হলেন খুব," মামনি ভালো বলেছো,সত‍্যি অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়না। তোমাদের মাকে একটা সারপ্রাইজও দেওয়া হবে। বেচারা কলুর বলদের মত টানছে সংসারটা চল্লিশবছর ধরে।
        হাসি পেলেও হাসিটা চাপে,মনে মনে বলে উরিঃ তারা,এখনো কি মাখো মাখো প্রেম। আর তার ছেলে একটা খচু পাবলিক।" হ‍্যাঁ বাবা পুরীটাই কিন্তু ফাইনাল,এই উপলক্ষ‍্যে পূজো দেওয়া দারুণ ব‍্যাপার।"
...." খুব ভালো লাগছে সবাই যাচ্ছি বলে,বেশ লাগছে তবে সাথে কিন্তু বেয়াইমশাইকেও নিয়ো।"
....আশ্চর্য হয়ে যায় শর্মি ভাবতেই পারেনা,যে মানুষটাকে নেমতন্ন করে খাওয়াতে ওদের দম ফাটে তাকে নিয়ে যেতে বলছে। যাক মুখোশের আড়ালে লুকনো মুখ অথবা মুখোশটাই সুন্দর হয়ত মুখের চেয়ে।
        মিতালিদিকে কথাটা বলতেই বললো," আসলে জানিস অধিকার ছাড়ার লড়াই আর পাওয়ার বা দখলের লড়াইয়ে ভাঙে সম্পর্কগুলো। আর তোর খুব একটা অসুবিধে হবেনা একটু টেকনিকাল ফল্ট ছিলো,রিপেয়ার করে দিয়েছি। "....." তুমি পারোও বটে।"
...." নেক্সট উইকেই তো তোদের যাওয়া,হোয়াপে ছবি পাঠাস কিন্তু। আর এরমধ‍্যে শাশুমা আর শ্বশুরজীর জন‍্য একটা মেড ফর ইচ আদার ড্রেস কিনে ফেল। লালপাড় ঢাকাই আর অলওভার  চিকনের কাজের সুন্দর পাঞ্জাবী। ব্লাউজটা ভালো কিনিস,কিপ্টেমি করিসনা। আর সাথে আলতা সিঁদুর আর মিষ্টির বাক্স।"
          থ‍্যাঙ্ক ইউ মিতালিদি,"ইউ আর জাষ্ট ইউনিক।"
           জগন্নাথ মন্দিরে পূজো দিয়ে পা দিলেন চল্লিশের পর একচল্লিশে শ্বশুর শাশুড়ি। ড্রেসটা কিন্তু দুর্দান্ত হয়েছে। সবাই ছবি তুললো মনের আনন্দে। সোনালি হোটেলের রুফ টপে সাজানো একচিলতে বারান্দায় হৈ হৈ করে কাটা হলো কেক। স্মৃতির প্রকোষ্ঠে উজ্জ্বল হয়ে রইলো মিষ্টি মুহূর্তগুলো। মনে মনে শর্মি বললো ভালো থাক সবাই,ভালো থাক আমার আপনজন। সুখের ছটায় উজ্জ্বল হোক নির্জন ঘরের কোণ। হঠাৎই চোখ পড়লো বেয়াই বেয়ানের মধ‍্যে গালে কেক মাখানোর দৃশ‍্য। রজত একটুকরো কেক খাইয়ে দিলো ওর বাবার মুখে। সূর্যের লালচে আভা একটুকরো অনুরাগের রঙ মাখিয়ে দিলো শাশুড়িমায়ের গালে।
           পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে শর্মি বড়দের,আজ যে একটা বিশেষ দিন। শাশুড়িমা মাথায় হাত রেখে বলেন," সুখী হও মা।"...." "আপনারাও ভালো থাকুন মা,তবেই তো আমরা ভালো থাকবো।"
       সুখের চাবিকাঠিটার সন্ধান আজ যে শর্মির জানা তাই শাশুড়িমায়ের আশীর্বাদটা যত্ন করে বেঁধে রাখলো আঁচলে সুখের চাবির সাথে। ©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী

সমাপ্ত:-

          
           
      

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...