Skip to main content

এসেন্স অফ সংসার

#এসেন্স_অফ_সংসার#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"ফলটা খেয়ে নাও মুনাই,কখন থেকে বলছি।
এই এক হয়েছে মোবাইল,সারাদিন শুধু টুংটাং আওয়াজ আর তোমরাও বসে আছো শব্দ শুনবে বলে।"
          মুনাই এর বিয়ে হয়েছে মাস ছয়েক এখনো শাঁখায় লাল নেলপলিশের রঙ লাগানো। মানে হিন্দীতে যাকে বলে মেহেন্দীর রঙ ফিকে হয়নি এখনো। এতক্ষণ যিনি ওকে ফল খাওয়ার জন‍্য খুব ডাকাডাকি করছেন উনি ওর শাশুড়িমা কুমকুম। একদম নির্ভেজাল হাউস ওয়াইফ। সংসার,রান্না আর ঘর গোছানো এই নিয়েই আছেন। যদিও মুনাই চেষ্টা চালিয়েছে শাশুড়িমাকেও নিজের দলে টানতে হোয়াটস আ্যপে আ্যকাউন্ট খুলে । কিন্তু ফোনে তার খুব একটা উৎসাহ নেই। আসলে বেশ কম বয়েসেই ওনার বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো কলেজে পড়তে পড়তেই তাই তেমন একটা যোগাযোগ নেই বন্ধুদের সাথে। আর পাড়াতেই তো কত বন্ধু আছে আবার ফেসবুকে কি হবে। মুখোমুখি গল্প করা আর একটু পি এন পিসি করার সুখই আলাদা।
                মুনাইয়ের কর্তার সরকারী চাকরী পেয়ে বিয়ে করতে একটু বয়স বেশিই হয়ে গেছে। ওর শাশুড়ি মায়ের বিয়ের বেশ অনেক বছর বাদে সন্তান হয়েছে তাই ছেলে খুব আদরের আর তার সাথে বৌমাও। তাই মুনাইকে চোখে হারান শাশুড়িমা আর শ্বশুরমশাই। আর ওর বরই বা কম কি,যদিও ওদের সম্বন্ধ করে বিয়ে। আসলে মানুষ বোধহয় কিছুতেই সুখী হতে পারেনা। মুনাইয়েরও তেমন অবস্থা যখন দেখে বিকেলে শ্বশুরমশাই পেয়ারা আর জামরুল কেটে ধুয়ে রেডি করে রেখেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় ইশ্ এরা এতো ঘড়ি ধরে চলে কেন রে বাবা! নিজের বোহেমিয়ান লাইফটা খুব মিস্ করে এ বাড়িতে এসে।
          তাই মাঝে মাঝে সত‍্যিই অতিষ্ঠ লাগে। উফ্ সারাক্ষণ যেন ওর দিকে চোখ দিয়ে সবাই বসে আছে। কখন খাবে,কি করবে,বেলা হয়ে যাচ্ছে এখনো স্নান হলো না কেন। এরপর স্নান করলে ঠান্ডা লাগবে, চুল ভিজে থাকবে। বাপরে বাপ,কাহাতক আর ভালো লাগে! ও বাড়িতে ছিলো মায়ের তান্ডব," মুনাই ওঠ,মুনাই জল খা,মুনাই খাবার খা,চুল কাটলি কেন,আজ বৃষ্টি পড়ছে শ‍্যাম্পু করিসনা। এতো রাত পর্যন্ত জেগে কি করছিস শুনি? কার ফোন এসেছে,এতো গুজগুজ করছিস। তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবি। জামাকাপড় গুছিয়ে রাখ,বিছানা ঠিক কর।"
         .....উঃ সত‍্যি অসহ‍্য লাগতো,আর এ বাড়িতে শাশুড়ির আবার উল্টোটা। ছাদে জামাকাপড় মেলেছে স্নান করে,ও ওঠার আগেই ওনার সব এনে ভাজ করে ঘরে রাখা হয়ে গেলো।
সকালে চা হয়ে গেলো,খাওয়া হয়ে গেলো। রান্না বসে গেলো। ওর বরের টিফিন ও উঠে দেখে প্রায় হয়ে গেছে। মাঝে মাঝে মনে হয় এভাবেই বোধহয় সংসারটাকে হাতের মুঠোয় রাখতে চান উনি। নাহলে ওর ভাবনার আগেই ওনার কাজ শেষ হয়ে যায় অদ্ভুতভাবে। এসব আসলে কিছুই না ওকে অযোগ‍্য প্রমাণ করার চেষ্টা। ওর বরের কাছে বলতে গিয়ে বকা খেলো," মা করছে তো করছে,এতো মাথা ব‍্যাথা কেন বলতো তোমার। চিরকালই তো মা সংসার সামলে এসেছে। তুমি নতুন, সব বুঝে নাও তারপর তো একদিন সবই করতে হবে।"
......" উনি তো সবসময়ই রান্নাঘর আগলে থাকেন। আমি ভাবলাম ইউ টিউব দেখে রান্না করে তোমায় খাওয়াবো। ওই বাড়িতেও মা তেমন কিছু করতে দিতোনা। বলতো সব এঁঠোকাটা করে ছাড়বো,আর এই বাড়িতেও আমার কোন স্বাধীনতা নেই।''
   মাকে খুব ভালো করে চেনে সুমিত,ওর মা খারাপ কথা কখনো বলবেনা মুনাইকে এটাও জানে। তবে মা বোধহয় একটু বেশি ওভার আ্যক্টিভ,আসলে নিজেই সবটা সামলেছে এতোদিন। তাই হয়ত চট করে কাউকে দায়িত্ব দিয়ে ভরসা করতে পারেনা। " আচ্ছা আমি মাকে বলে দেবো,রান্নাঘরের রাজত্বটা এবার নতুন রানীকে দিতে। নিজে এবার একটু রেস্ট নিক অনেক তো হলো। কোথায় একটু সেজেগুজে থাকবে,মন ভরে দেখবো। তা না এটা হচ্ছেনা কেনো ওটা কেন হলো এই সব অভিযোগ।"এই বলে মুনাইকে কাছে টেনে নেয় সুমিত। সুমিতের বুকের কাছে মাথা রেখে মুনাই বলে," তুমি মাকে কিছু বোলোনা প্লিজ,উনি খারাপ ভাববেন। আসলে এতো আগলে রাখেন সবটা যে আমার মাঝে মাঝে দম আটকে আসে। নিজেকে অকেজো মনে হয়।"
......" যাহ বাবা কোন দিকে যাই,এদিকে মাকেও বলতে দেবেনা। মহা মুশকিল তো। আচ্ছা এখন তো একটা ছোট্ট কাজ করো,একদম মিষ্টি করে একটা....."
         এর মাঝেই হঠাৎ একদিন খবর এলো,মায়ের পা ভেঙেছে, সিড়ি দিয়ে নামতে গিয়ে। অপারেশন করতে হবে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায় মুনাইয়ের সত‍্যি তো মাকে কে দেখবে?শাশুড়িমা তাই ওকে জোর করে পাঠিয়ে দিলেন। একমাস গিয়ে থাকতে বললেন। বলে দিলেন সুমিত মাঝে মাঝে যাতায়াত করবে,এমন তো কিছু দূর নয় ওদের বাড়ি, এই বাড়ি থেকে ঘন্টাখানেক লাগে।
        বাপের বাড়িতে কাজের লোক থাকলেও রান্নার লোক ছিলোনা,মা সবটা সামলাতো। বাবা খুব চেষ্টা করছেন লোকের,একজন খবর দিয়েছে দিন পাঁচেক দেরি হবে। এই পাঁচদিনে মুনাই বুঝতে পারলো সত‍্যি মায়েরা হাসিমুখে কত কি সামলায়। হয়ত অনেক সময় বিরক্ত লাগে,শরীর খারাপ লাগে কিন্তু তবুও এক অতন্দ্র প্রহরীর মতো সংসারটা আগলে রাখে। ঘড়ি ধরে সব কিছু সামলাতে গিয়ে কখনো ঘেমেছে,কখনো বা টেনশন করেছে আবার তেলের ছিটে আর গরম ছ‍্যাঁকাও খেয়েছে। সব্জি কাটতে গিয়ে সাধের ফাইল করা নখগুলোও গেছে। মা হসপিটাল থেকে ফেরার পর তবুও কিছুটা স্বস্তি পেলো ততদিনে অবশ‍্য রান্নার লোকটাও এসে গেছে।
            মায়ের অসুস্থতার অবকাশে মায়ের কাছে শুয়ে শুয়ে শুনলো কত কথা। মা হেসে বলছে," অনেক কাজ করে ফেলেছি বল,তাই ভগবান ল‍্যাং মেরে শুইয়ে দিয়েছেন বলেছেন এবার বিশ্রাম কর।"....." সত‍্যি মা,তুমি যে কি করে সব সামলাও। আমি তো একদম হিমশিম খেয়েছি এই কয়দিনে।"
....." আর কি দিয়েছিস সব কৌটো নাড়াঘাটা করে। "
....." কি যে বলো মা,আমি কি বড় হইনি নাকি। এখনো কি বিয়ের আগের মতো বলবে!"
...." তা সত‍্যিই বড় হয়েছিস। তাই তো আমি বিছানায় নিশ্চিন্ত হয়ে বসে গরম গরম ফুলকো লুচি খাচ্ছি। সবাইকে গরম খাওয়াতে গিয়ে নিজের যে কি থাকতো তা আর দেখা হতনা। বেশিরভাগই ঠান্ডা লুচি জুটতো কপালে। এই কদিন ঠিক যেন আমার মেয়েবেলার মত আবার সামনে সব পাচ্ছি যেমন মা দিতেন এগিয়ে। এতো গিন্নীপনা কোথা থেকে শিখলি রে? কি সুন্দর গুছিয়ে ফল কেটে দিচ্ছিস আবার আমার মাথায় ছোটবেলায় মা যেমন তেল দিয়ে চুল বেঁধে দিতেন তেমন দিচ্ছিস। এই জন‍্যই বোধহয় সবার একটা করে মেয়ে দরকার।"
......" তুমি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো মা,তোমাকে রান্নাঘরেই দেখতে বেশি ভালো লাগে। ঠিক আগের মত ছটফটে,খিচখিচে,বকবকানি মা আমার।"
          মায়ের সাথে মুনাইয়েরও চোখদুটো একটু ছলছল করে ওঠে। এই কদিনে ও চেষ্টা করেছে মায়ের ভালোলাগা গুলো একটু একটু করে ফিরিয়ে দিতে। আসলে অসুস্থ হওয়াতে মায়ের মন খারাপের মেঘগুলোকে একটু করে সরিয়ে দিতে  চেয়েছে  ওর ছেলেমানুষী আর আদর দিয়ে। মায়ের মন ভালো করা ছেলেবেলায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছে মাকে। নিজে মোবাইলে বেশি না থেকে চেষ্টা করেছে মাকে একটু সময় দিতে। কখনো বলেছে আজ কি গান শোনা যায় বলতো? আবার কখনো গল্প করেছে মায়ের ছেলেবেলার ভয় পাওয়া বেলগাছটাকে নিয়ে। "বাবা আজ একটু বেলেমাছ আর কাকচি মাছ এনো তো,মায়ের কাছ থেকে জেনে নিয়ে দিদার মত রান্না করে খাওয়ানোর চেষ্টা করবো।"
           আসলে মনের আনন্দ আর পাশে থাকা আপনজনই বোধহয় তাড়াতাড়ি সুস্থ করে মানুষকে। তাই ওর মাও সেরে উঠছে তাড়াতাড়ি। ওর মায়ের জন‍্য একটানা বেশিদিন থাকা হয়না মুনাইয়ের এই বাড়িতে। " তোর নতুন বিয়ে হয়েছে। ওনারা ভালো আমি মানছি,তবুও একটানা এতোদিন থাকিসনা। দুএকদিন ওখানে থেকে আয়।" মায়ের ছোট কথাগুলো অনেক না বলা কথা বলে যায়।
             সুমিতের সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি এলেও মনটা পড়ে থাকে ও বাড়িতেই তাই মাঝে মাঝেই চলে যায় মায়ের কাছে।
এই কদিনে মুনাই বেশ চটপটে হয়েছে শাশুড়ির হাতে হাতেও টুকটাক কাজ করে উনি যা বলেন। " সব শিখে নেবে আস্তে আস্তে আসলে মেয়েদের আলাদা করে তেমন কিছু শেখাতে হয়না।"
       সেদিন আম কাটলেন ওর শাশুড়িমা। আশ্চর্য হয়ে গেলো ওদের সবাইকে পরিপাটি করে খাইয়ে উনি আঁটিটা বসে খাচ্ছেন। " একি মা তোমার আম কই?শুধু আঁটি পড়ে আছে তো!"...." আর ভালো লাগেনা বেশি খেতে। আম খেয়েছি কত বাপের বাড়িতে একসময় হিসেব ছিলোনা। ঠাকুমা আমের ঝুড়ি আর বালতিতে করে জল নিয়ে বসতেন। কাটতে হোতনা,হাত দিয়ে ছাড়িয়ে সোজা বাটিতে,যত খুশি খাও। শুধু আম কেন,পায়েশ,ক্ষীর,পিঠে,পুলি,নাড়ু,মোয়া সবই ছিলো ঠাকুমার হাতে বানানো অমৃত। আর ক্ষীরের মালপোয়া আহা সে স্বাদ এখনো জিভে লেগে। নিজে বানিয়েছি,কিন্তু তেমনটা হয়নি কখনো।" শুনতে শুনতে মুনাইও হারিয়ে গিয়েছিলো,সত‍্যিই বোধহয় এমনই মিষ্টি হয় শৈশব অথচ কালের নিয়মে সব কোথায় হারিয়ে যায়।
             ওর মা এর মাঝে সুস্থ হয়েছেন একদম,মোটামুটি স্বাভাবিক হাঁটাচলা করছেন। অনেকটা নিশ্চিন্ত লাগে মুনাইয়ের। এর মাঝেই হঠাৎ একদিন শাশুড়িমা বললেন বোনের সাথে হরিদ্বার মথুরা বৃন্দাবন যেতে চান। " তোমাকে বলতে খারাপ লাগছে,ওরা যেতে বলছে খুব। তোমার শ্বশুরমশাই তো শ্বাসকষ্টের জন‍্য খুব একটা কোথাও যেতে চাননা। তাই আমারও বেরোনো হয়না সংসার সামলে। যদি তুমি সব পারো,তাহলেই যাবো।"......" তুমি ঘুরে এসো মা,আমি সামলে নেবো,আর প্রমিলাদি তো আছেই।"
     সত‍্যিই তো ওনার কোথাও যাওয়া হয়না। তাই এখন ও আছে তাই হয়ত ওনার পক্ষে যাওয়া সম্ভব। শাশুড়িমা চলে যাওয়াতে সংসারের হাল ধরলো মুনাই। ট্রাই করলো কিছু নতুন রান্নাও তবে নিজে ভাত বেড়ে খেতে বসে বড্ড খারাপ লাগতো মুনাইয়ের। তখন খুব মিস করতো শাশুড়িমাকে। আর্ধেকদিন ভালো করে খাওয়াই হোতনা। তবুও রান্নাবান্না করে রান্নাঘর মোটামুটি ঠিকঠাক করে গুছিয়ে রেখে এই কটা দিন ম‍্যানেজ করলো। তবে মুনাইয়ের হাতে রান্না খেয়ে ওর শ্বশুরমশাই যখন ধন‍্য ধন‍্য করলো তখন সুমিত একটু মুচকি হেসে বললো," ভালোই হয়েছে তবে মা আরো ভালো বানায়।"
       চোখ পাকালো মুনাই, ঘরে এসে আদরে ভুলিয়ে দিলো সুমিত। অমন একটু নাকি বলতে হয়। " নিন্দুক কোথাকার! আর খাওয়াবোনা ভালোমন্দ।বাবা তোমার মত নয়,মাকে ফোন করে কত প্রশংসা করছেন আমার।"....." ও বাবা দলবদল করতে ওস্তাদ,এরপরেই মায়ের দলে চলে যাবে।"......সুমিতের দিকে বালিশটা ছোড়ে মুনাই," এই আমি কি এখানে দলবাজি করতে এসেছি নাকি,সবটাই মায়ের দল আর আমরা মায়ের সাপোর্টার।".......মনটা ভালো হয়ে যায় সুমিতের ওই তো বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে তাই অটুট থাক এমন বন্ধন। মতান্তর আর মনান্তরে সম্পর্ক যেন কখনোই না ভাঙে।
     এই কয়দিনে মুনাই বুঝতে পেরেছে মা আর শাশুড়িমা কত কি সামলায়। এখনো সেই দক্ষতা ওর আসেনি,আসলে ওনারা মাথার ওপর ছাতার মতো যাদের অবস্থানটাই সংসারে অনেকটা। শাশুড়িমা ফিরে এলেন ভালোভাবে ঝুলি থেকে বেরোলো অনেক জিনিস, বেশিরভাগই মুনাইয়ের জন‍্য।....." এতো কিছু এনেছো মা! এটা তো খুব সুন্দর,এতো কিছু কিনলে কখন!"
           কেউ কোন উপহার দিলে ভালো বললে তার ভালো লাগে এ কথা জানে মুনাই। আসলে কাউকে কিছু দেওয়ার পেছনে চিন্তাভাবনা, পরিশ্রম,অর্থ সবটাই আছে। তাই এটা একধরনের ভালোলাগাকে একটু ভালো বলা। সত‍্যি খুব ভালো লাগলো ওর শাশুড়িমায়ের।
          কয়েকদিন বাদে ওর মা জামাইষষ্ঠীর নিমন্ত্রণ করলেন,ওর শ্বশুর শাশুড়িকেও যেতে বললেন।" আপনি আর দাদাও আসবেন কিন্তু দিদি। আর মুনাই যদি দুএকদিন আগে আসে,আসলে আমি একা তো।"
......" জামাইষষ্ঠীতে মেয়ে জামাই নিয়ে আনন্দ করুন। আমরা পরে যাবো একদিন।"
         মায়ের সাথে অনেক কথা হয় মুনাইয়ের তারপর আবার ওর মায়ের ফোন আসে," দিদি,মেয়ে আপনাকে কিছু বলেছে। ও তো আগে আসতে চাইছেনা। সেদিন সকালেই সেজেগুজে আসবে বলছে। আপনাকে কিছু বলেছে? আর আমি দাদাকেও ফোন করছি,আপনাদের কিন্তু ষষ্ঠীর পরের দিন আমাদের এখানে খেতেই হবে। না বললে আমি শুনবোনা। "
....." আচ্ছা দেখছি আমি,আসলে ওনার তো শরীরটা বিশেষ ভালো থাকেনা। ঠিক আছে দিদি নিশ্চয় চেষ্টা করবো।"
       ফোন রেখে দিয়ে কুমকুমের মনে হলো মুনাই কেন যেতে চাইছেনা আগে থেকে,উনি তো বলেছেন যেতে।" মা এতো করে বলছে কেনো যাবেনা দুএক দিন আগে,আমি তো বললাম যেতে।"
...." না মা সেদিন সকালে না গেলে ব‍্যাপারটা ঠিক জমেনা। বেশ সেল্ফি তুলে পোষ্ট করবো সাজুগুজু করে। "
....." এই হয়েছে এক সেল্ফি,সারাক্ষণ মুখ বেকিয়ে ছবি তোলা,বাপরে বাপ।"
....শাশুড়ির গজগজানিকে পাত্তা না দিয়ে মুনাই বলে," মা,আমি কিন্তু পরে দুএকদিন থেকে আসবো। তোমরা আসছো তো মা পরেরদিন?"
....." দেখছি,কথা বলে তোমার বাবার সাথে।"
...."ব‍্যাপারটা ঠিক ঝুলিয়ে রাখলো ঝেড়ে কাশলোনা ধ‍্যাৎ,বিরক্ত লাগে একদম।"
       অবশেষে অনেক বলার পর রাজি হলেন উনি,দারুণ আনন্দ হলো মুনাইয়ের।
        মা বাবার জন‍্য জামাকাপড় আর একগাদা মিষ্টি নিয়ে,সেজেগুজে রওনা দিলো ও আর সুমিত,আর তার সাথে ফ্রী সেল্ফি তো আছেই। আজ একদম লাভ বার্ডস,দুজনের ম‍্যাচিং ম‍্যাচিং। সবুজ টিয়ে পাড় লাল হ‍্যান্ডলুমের শাড়িতে খুব সুন্দর লাগছে মুনাইকে। সুমিতেরও লাল পাঞ্জাবীতে সবুজ বর্ডার দেওয়া,সত‍্যি বেশ লাগছে।
          সারাটা দিন যে কি ভাবে কেটে গেলো বুঝতেই পারলোনা,ওর দুই মাসতুতো বোনও এসেছিলো। পুরো আড্ডা আর পেটপূজো তার মাঝেই মুনাই ডাকলো," মা হজমোলার শিশিটা কই গো। বিকেলের স্ন‍্যাক্সে ফ্রাইগুলো তো খেতে হবে। এই তুমিও খেয়ে নেবে দুটো।"....." আরে আমায় হজমোলা খেয়ে হজম করতে হয়না। এমনিতেই হজম হয়ে যায়।"...." পেটুক জামাই মায়ের। কাল ও খাওয়া আর খাওয়া সেটা মনে আছে তো? তবে কালকের স্পেশাল গেষ্ট আলাদা।"
         পরদিন শাশুড়িমা আর শ্বশুরমশাইকে আসতেই হলো। খুব খুশি ওর মা বাবা। ...." আপনার মেয়ের জন‍্যই চলে আসতে হলো,বাবা যা মুখ ফুলিয়ে ছিলো। তা সে কই,দেখছি না তো,বাথরুমে নাকি?"।
...." বৌমাকে তো সারাক্ষণ দেখবেন দিদি আসুন তো একটু গল্প করি। "
....খেতে বসে বড্ড মন কেমন করলো কুমকুমের,ছেলেরা নাকি আজ পরে খাবে। মানে আগে ওদের শুরু করতে হবে। কড়া আদেশ মুনাইয়ের। দুই মাকে আজ পাশাপাশি বসিয়েছে মুনাই খেতে। সবসময়ই আজকাল একটা কথা শুনে আসে মেয়েরাই ভালো মা বাবাকে খেয়াল করে,দেখে ভবিষ‍্যতে। ছেলের থেকে মেয়ে হওয়াই ভালো তবুও তো মা বাবাকে দেখবে। অনেক ভেবেও ঠিক হিসেব মেলাতে পারেনি মুনাই,যে মেয়েটি কারো মেয়ে সেই আবার এক বাড়ির বৌ। তাহলে একজন মানুষ কোথাও ভালো আবার কোথাও খারাপ কি ভাবে? কয়েকমাস সংসার করে মুনাই বুঝেছে কিছু ছোট জিনিসই হয়তো একটু একটু করে মতান্তর আর মনান্তর বাড়িয়ে মলিন করে দেয় অন্তর। তাই হয়ত মেয়ে আর বৌমাকে দেখা হয় দুভাবে। খুব বেশি ভাবতে ইচ্ছে করেনা ওর কারণ আজ হচ্ছে "শাশুড়ি পার্বণ"....তাই আজ রান্নাঘরের দায়িত্বে শুধুই মুনাই আর বাজারে সুমিত। সবটাই ছিলো সারপ্রাইজ কুমকুমের জন‍্য। ছোটবেলায় খাওয়া খুচখাচ অনেক পদ আজ খেলেন মুনাইয়ের মা আর শাশুড়িমা। যেগুলো হয়ত ভুলতেই বসেছিলেন। মুনাই একটু একটু করে গল্পের ছলে জেনে নিয়েছিলো।...." মা দেখতো ক্ষীরের মালপোয়াটা কেমন হয়েছে? জানি তোমার ঠাকুমার মতো হবেনা। "....চোখটা ছলছল করে ওঠে কুমকুমের," এটা একদম আমার ছোট মায়ের মত মিষ্টি হয়েছে।" খুঁতখুঁতে শাশুড়ি হতে আর ইচ্ছে হলোনা কুমকুমের এমন করে কজন ভাবে মায়েদের কথা? মায়েরা কি খেতো,কি তাদের ভালোবাসা কজন জানতে চায়? হয়ত নিজের সন্তানও নয়। তাই এ যেন পরম প্রাপ্তি।
......." সুমিত এদিকে মোবাইলটা নিয়ে আয় তো,ওই যে কি যেন বলেনা ডি পি এই ছবিটা সেখানে দেবো,ভালো করে তুলবি কিন্তু। "
         শাশুড়ি পার্বণের পিকচার অফ দ‍্য ডে,মুনাই আমের ঝুড়ি আর বালতি নিয়ে বসে। শাশুড়িমা পরম তৃপ্তিতে আম খাচ্ছেন। দুজনের মুখেই এক অদ্ভুত তৃপ্তির হাসি।©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী

   সমাপ্ত:-

          

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...