#দেবী_প্রতিস্থাপন#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
মা আজ মাংসটা দারুণ হয়েছে,আর এক পিস হবে গো মা?"..."দাদাকে সবসময় বেশি দেবে কেনো?আমাকেও এক পিস দাও তাহলে।" রান্নাঘরে গিয়ে মাংসের বাটিটার দিকে তাকায় শ্রীময়ী,দুপিস মাংসই পড়ে আছে একটু ঝোল আর একটুকরো আলু। তাতে কি হয়েছে মেয়েমানুষের আবার খাওয়া কি,সবাইকে খাইয়ে পরিতৃপ্ত করাতেই আনন্দ। ইশ্ আরেকটা পিস থাকলে ভালো হত। মেয়েটাও তো ছেলেদুটোর সঙ্গেই খেতে বসেছে ওকে দেওয়া যেতো একটা টুকরো। তবুও মনে মনে ভাবলেন ও হয়ত মাকে দেখেই শিখে যাবে বাড়ির সবাইকে খাইয়ে যা থাকে তাই মেয়েদের
খেতে হয়। করুণ চোখে একটু তাকালেন স্বাগতার দিকে,ওর বাটিতে তখনো একটুকরো মাংস পড়ে।
...." মা সত্যিই আজ মাংসটা দারুণ হয়েছে আমি তো অনেকটা ভাত খেয়ে ফেললাম।"..." খেয়ে অমন বলতে নেই গায়ে লাগেনা।" মেয়েকে ধমকান শ্রীময়ী।..." উঃ মা আমি আর খেতে পারছিনা,এই টুকরোটা তুমি খেয়ে নিয়ো।"...দিদিকে মাংসটা রাখতে দেখেই বাটিতে হাত বাড়াতে যায় সঞ্জয়। " এই ভাই একদম হাত দিবিনা,এটা মা খাবে। আমি জানি মায়ের বাটিতে কিছুই নেই শুধু ঝোল আর আলুটা পড়ে আছে। তাই না মা?"...একটু হাসেন শ্রীময়ী," পাকা মেয়ে হয়েছে একটা সবদিকে নজর।"
দিদির কাছে বকুনি খেয়ে মাংসটা টুক করে আর মুখে দিতে পারেনা সঞ্জু,ওর পাশে বসে হাসে ওদের দাদা রঞ্জন। ছেলেদের চেটেপুটে খেতে দেখে বড় ভালো লাগে শ্রীময়ীর। স্বামীর এমন কিছু ইনকাম নয় তবুও শ্রীময়ীর বুদ্ধি আর ধৈর্য দিয়ে সুন্দর সাজানো ছিলো ওদের সংসার। ছোট সংসার বলা যায়না পাঁচজনের সংসার অনেক না পাওয়ার মাঝেও একঝাঁপি সুখের ছোঁয়া সবসময় ভরিয়ে রাখতো।
স্বামীর কাজের চাপ ছিলো তাই চারদিক তাকেই সামলাতে হোত যদিও তখন বাজারে মেয়েদের যাওয়ার রেওয়াজ খুব একটা ছিলোনা।
তাই বাজারটা কর্তাই আনতেন। যখন যা পাওয়া যেতো একটু কমদামে বাজারে, আর তা দিয়েই অসাধারণ সব পদ রাঁধতেন নিজের মনের খেয়ালে। স্বাগতা বলতো,"মা তোমার মাথায় কি বুদ্ধি গো,কখনো কাঁচকলার দম আবার কখনো কোপ্তা আবার মোচার ধোকা কত কিছু রান্না করো। আমার বন্ধুদের গল্প করলে ওরা তো হাঁ হয়ে যায়। তোমার নিরামিষ পদগুলো দিয়ে একদম চেটে ভাত খাওয়া যায়।"..."কি করি বল সোনা,সবসময় তো মাছ মাংসের জোগাড় হয়না তাই একটু বুদ্ধি খাটিয়ে করে ফেলি। বাচ্চারা খাবে কি করে?"
.....তিন ছেলে মেয়েকে কাছে নিয়ে কত গল্পই হতো শ্রীময়ীর কাজের অবসরে। দিদির কথা থামিয়ে সঞ্জু বলতো," মা তোমার রান্না করা মাংসটাই আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে,ঐ যে হাড়িতে করে যখন করোনা কি মিষ্টি গন্ধ ছাড়ে।"...রঞ্জু একটা গুঁতো মারে,"পেটুক কোথাকার,ঐ জন্যই তো মাংস কষা থেকে একেবারে বাটি নিয়ে ঘুরঘুর করতে থাকিস রান্নাঘরে।"
অতীতের কথা ভাবতে ভাবতে চোখটা ঝাপসা হয়ে ওঠে শ্রীময়ীর এটাই হয়ত জগতের নিয়ম আজ তোমার যা কাল তা হবে অন্য কারো। শ্রীময়ীও এখন অন্য কারো সংসারে তা প্রতিমুহূর্তেই বুঝতে পারেন। তাই মনের অবকাশে একলা নিভৃতে মনে পড়ে যায় অতীতের কথা। মনে হয় এই তো সেদিনের কথা। আসলে তখন মাংস হবে বাড়িতে মানে বেশ একটা খিদে খিদে ভাব অনেক আগে থেকেই। এখনকার মত নয় সবসময় ফ্রিজে মাছ,মাংস আর ডিম মজুত চাইলেই প্রেসারকুকারে দুটো সিটি আর তৈরি মাংস। তবুও এখন যেন আর খাওয়ার ওপর কোন রুচিই নেই,একটা কিছু মুখে তুললেই হয়।আর্ধেকদিন তো রাতে খেতেই ইচ্ছে করেনা।
অথচ একসময় শুধু ডিমের ঝোল দিয়েই গরম গরম ভাত খেতে অমৃতের মত লাগতো।স্বাগতা বলতো," মা,ডিমগুলো একটু হাফবয়েল রেখো,কুসুমটা বেশ লাল লাগে দেখতে দারুণ আর খেতে বেশ নরম নরম।"
ছেলেমেয়েদের সাথে ওদের বাবা খেতে বসলে ডিমের কুসুম মাখানো তিনদলা ভাত ওদের প্রাপ্য ছিলো। বেলেমাছের সরষেবাটা,কাকচিমাছের চচ্চড়ি আর মৌরলা মাছের টক কতদিন খাওয়া হয়না। অথচ একসময় এই রান্নাগুলোতে শ্রীময়ীর জুড়ি মেলা ভার ছিলো।
আজ কেন যেন স্বাগতার কথা বড় মনে হচ্ছে শ্রীময়ীর নিজে পড়াশোনা তেমন না জানলেও তিনছেলেমেয়েকে নিয়ে পড়াতে বসতেন,ওরা মুখস্থ করে বলতো উনি শুনতেন। সংসারের কাজ সামলেও কখনো ক্রশ বোনা আর আসন সেলাই করে সময় কাটাতেন। হরেক ডিজাইন ছিলো,কখনো ময়ূর আবার কখনো টিয়াপাখির নক্সা রকমারী সুতো দিয়ে পাখনা মেলতো টুকরো চটে। সেলাইগুলো ট্রাঙ্কে ভরা ছিলো,কোথায় গেছে কে জানে? একসময় স্বাগতাই ওগুলো গুছিয়ে রাখতো। ছেলেদুটোর পড়াশোনার পেছনে বেশি খরচ করতে গিয়ে মেয়েটাকে তেমন পড়াশোনা শেখাতে পারেননি ওরা,নিজের চেষ্টায় বি.এ পাশ করেছিলো। ছেলেরা পাশ করে ভালো চাকরি পেয়ে গিয়েছিলো,প্রথমে খুব ভালো লাগতো শ্রীময়ীর এ যেন এক সৃষ্টির আনন্দ। ওরা এলেই বাড়িতে বসতো চাঁদের হাট একচিলতে সুখের মুখ দেখেছিলেন ওরা। ছেলেদের আনা মাংস নিভু আঁচে কষা করে রেঁধে বলতেন," খেয়ে নে,দেখতো সব ঠিক আছে কিনা?"..আঙুল চেটে সঞ্জুটা বলতো,"মা তুমি না যে কোন ফাইভ স্টার হোটেলের শেফ হতে পারো,দুর্দান্ত হয়েছে মাংসটা কি রে দাদা?"...রঞ্জু তখন অনুর প্রেমে ভাসছে,বড়লোকের সুন্দরী মেয়ে। মাঝে মাঝেই বাইরে ডিনার লাঞ্চ করেই দিন কাটে। এখন হয়ত মায়ের রান্নার চেয়ে হোটেলের খাবারে ভ্যারাইটি খুঁজে পায়। তবুও বললো," খুব ভালো,তবে মা একটু কম তেল দিয়ো। এতো ওয়েলি খাবার এখন কেউ খায়না।"...শ্রীময়ী বলতে গিয়েও চুপ করে গেলেন,মাত্র দুপলা তেলেই রান্না হয়ত টকদই মাখিয়েছেন তাই।
রঞ্জুর বিয়েটা হঠাৎ করেই হয়ে গেলো তবে পুরোটাই শহর থেকে,ওরা গ্ৰামের বাড়িতে আসবেননা বৌভাতে। নতুন বৌমা বেশ সুন্দরী শুধু শ্রীময়ী বুঝলেন ওরা কেমন যেন বেমানান বেয়াই বাড়িতে। স্বাগতাই একমাত্র কাছে থাকতো,ওর বিয়ের চেষ্টাও চলছিলো,কিন্তু মেয়েটা যে এমন কান্ড করে বসবে ভাবাই যায়নি। হঠাৎই বিয়ে করে বসলো একটা খ্রীষ্টান ছেলেকে। শ্রীময়ীর স্বামী কিছুতেই মানতে পারেননা বামুনের মেয়ের খ্রীষ্টানকে বিয়ে। স্বাগতাটা একদিনেই পর হয়ে গেলো কেমন। মেয়েটাকে কাছে পাওয়ার জন্য বুকটা উথাল পাথাল করলেও কিছু বলতে পারেননা। একটা সময় মানুষের জীবনে শুধু পাওয়া থাকে,আর একটা সময় বোধহয় শুধুই হারানোর সময়।
শ্রীময়ীর লক্ষ্মীর সংসারও ভাঙলো একটু একটু করে। স্বাগতাটা নাকি কোথায় দূরে চলে গিয়েছে বরের চাকরির জায়গায়,শুনেছেন শ্রীময়ী মিলিটারিতে আছে ছেলেটা। তবুও
সবই ঠিকঠাক চলছিলো নিজের নিয়মে হঠাৎই মারা গেলেন স্বামী। নাহ্ বাবার নির্দেশ অমান্য করে স্বাগতা আসেনি বাপের বাড়িতে। শুধু মাকে একটা ঠিকানা দিয়ে চিঠি দিয়েছিলো অনেক কষ্টের কথা বলে,মা বাবাকে কাছে না পাওয়ার কষ্ট। তবে নাকি সুখেই আছে মেয়েটা,শ্রীময়ীর বড় দেখতে ইচ্ছে করে মেয়েটাকে কিন্তু হলোনা। ছেলেদের কথা মেনে নিয়েই গ্ৰামের বাড়ি বিক্রি করে চলে আসতে হলো ছেলেদের সংসারে। এক আকাশ আলো,হাওয়া,হাতে গড়া সংসার আর তুলসীমঞ্চ পেছনে ফেলে জীবনের এক অন্য অধ্যায়ে পা রাখলেন শ্রীময়ী। মাঝে মাঝে মনে হয় কেমন আছে ক্ষুদি টগরের গাছটা,যার ঘুম ভাঙতো শ্রীময়ীর হাতের ছোঁয়ায়। সাজি ভর্তি করে ফুল তুলে ঠাকুর সাজাতেন। কখনো মনে হয় শিউলি গাছটার কথা ,দুর্গাঠাকুর আসার গন্ধ ছড়িয়ে দিতো কত আগে থেকে। খোলা জানালা দিয়ে ফুলের সুবাস নিতে নিতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তেন। আচ্ছা পেয়ারাগাছটাতে কি এখনো পেয়ারা হয়? একসময় ছেলেমেয়েগুলো কি পেয়ারাই না পাড়তো গাছ থেকে।
শহরের পূজোর আলোর মাঝে শ্রীময়ী খোঁজেন তাদের গ্ৰামের ডাকের সাজের একচালার মাকে। অষ্টমীর দিন নিজে সুন্দর করে শিউলিফুলের মালা গেঁথে দিয়ে আসতেন। বেশি না একটা নতুন পাটভাঙা শাড়ী পরেই মনটা ভরে যেতো। স্বামী মুগ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে বলতেন,শ্রী তোমায় দেখবো বলে পূজোর চারটে দিন বাড়ি আসি।"..লজ্জায় মুখটা রাঙা করে ঘোমটা তুলতেন মাথায়।
.বাড়ি বিক্রির টাকা ভাগ হলো তার সাথে শ্রীময়ীও ভাগ হলেন...." সঞ্জু শোন, মা এখন তোর কাছেই থাক। তোর তো এখনো সংসার হয়নি একদম ব্যাচেলর লাইফ তাই মা সাথে থাকলে তোর ভালোই লাগবে। আর মায়ের হাতের রান্না তো তোর দারুণ পছন্দের!"
...." ঠিক আছে দাদা,কিন্তু আমাকে তো মাঝে মাঝেই ট্যুরে বাইরে যেতে হয়। তখন মা কি একা থাকবে?"
....." না না একা কেনো,আমরা তো আছিই,তুই একটা ফোন করে দিস। আমি গিয়ে নিয়ে আসবো কোন ব্যাপার না। তখন আমার বাড়িতে কয়েকদিন থেকে যাবে মা। তোকে সবসময় রাখতে হবেনা মাকে,ভাগাভাগি করে থাকবে।"
....যাকে নিয়ে এতো পরিকল্পনা তাকে কেউ জিজ্ঞেস করলো না মা তুমি কি চাও। শ্রীময়ী তো চেয়েছিলেন গ্ৰামেই থাকতে,কিন্তু সবাই বললো,"তুমি যে একা এখানে থাকবে তোমায় দেখবে কে। একা একা রেঁধে বেড়ে কতদিন খাবে?" আসলে সত্যি বোধহয় সবাইকে খুশি করতে করতেই কখন যে মেয়েরা বাচ্চা থেকে বুড়ি হয়ে যায় কে জানে! সঞ্জুর দুকামরার ফ্ল্যাট থেকে ভালো করে আকাশ দেখতে পাননা শ্রীময়ী,সকালে ভোরের ঠান্ডা বাতাসটা গায়ে লাগাতে একচিলতে বারান্দায় এসে দাঁড়ান,তুলসীগাছটার সামনে হাত জোড় করেন। গ্ৰাম থেকে আসার সময় নিয়ে এসেছিলেন বেশ বড় হয়েছে। তবে সঞ্জুর একটু ভালো হয়েছে,মা আসাতে প্রায়ই ভালোমন্দ খাওয়াটা হয়। তবুও মাঝে মাঝে অভিযোগ করে," মা তোমার রান্নায় সেই ছোটবেলার স্বাদ যেন পাইনা। " এখন যে তোর মুখের স্বাদও পাল্টেছে বাবা, কত বড় হোটেলে খাস। মায়ের রান্না কি আর ভালো লাগে। তাছাড়া এখন সব গুড়োমশলা আমারও সেই ধৈর্য নেই।"...." না মা এখনো তুমি ভালো রান্না করো।" এই ছোট ছেলে আর মেয়েটাই খুব ন্যাওটা ছিলো মেয়েটাকে তো কতদিন দেখেন না আর ছেলেটাও বদলেছে অনেক। দেখতে দেখতে কেটে গেছে বেশ কয়েক বছর।
সঞ্জু এর মধ্যে বেশ কয়েকবার বাইরে গেছে অফিসের ট্যুরে,তাই শ্রীময়ীকে রঞ্জুর কাছে থাকতে হয়েছে। বড়বৌমা শ্রীময়ীকে ওখানে গেলে কোন কিছুতেই হাত দিতে দেয়না। একদম অতিথির মত এক কোণে রাখে,ভালো করে কথাও বলেনা হাবে ভাবে বুঝিয়ে দেয় উনি অবাঞ্ছিত। নাতিটা একটু কাছে আসলে টেনে নিয়ে যায় মনে হয় শ্রীময়ীর কোন ছোঁয়াচে রোগ আছে।..." জানো মা ভীষণ কম তেলে রান্না করে মায়ের হাতের হাড়িতে বানানো মাটন খেতে ইচ্ছে করছে।"...." হাড়িতে মাটন করবেন তাহলেই হয়েছে পরদিনই গ্যাস বুক করতে হবে। আর অমন আধসেদ্ধ মাংস আমি কিছুতেই ছেলেকে খেতে দেবোনা। ছেলের কথা বলাতেই চুপ করে যায় রঞ্জু। শ্রীময়ী বোঝেন এখানে তার একটা গন্ডী আছে তার বাইরে যাওয়া তার বারণ,এই সংসারটা তার নয় এমনকি ছেলেটাও আর তার নয়,অদ্ভুত এক দূরত্ব যা পার করার সাহস তার নেই।
বড় মন কেমন করে গ্ৰামের বাড়িটার জন্য,পাশের বাড়ির ঠাকুরপোরা কিনে নিয়েছে বাড়িটা। পুরোনো জিনিসগুলো সবই হয়ত ফেলে দিয়েছে এতোদিনে। সঞ্জু তো কিছুই আনতে দেয়নি। ওর ফ্ল্যাটে নাকি জায়গা হবেনা, তাই অনেক জিনিসই বিক্রি হয়ে গেলো। শুধু সেলাইয়ের বাক্সটাই খুঁজে পেলেননা। কত যত্নে করা কিছু আসন ছিলো। আসলে ওগুলো স্বাগতাই যত্নে রাখতো,অগোছালো মনের শ্রীময়ীর সংসারও হয়েছে ধীরে ধীরে অগোছালো,আর কিই বা এমন ছিলো?
অথচ একসময় কত ছোটখাটো জিনিস কিনেছেন একটু একটু করে সংসারের জন্য, মনের আনন্দে সাজিয়েছেন সংসার। আসলে মানুষের সব প্রয়োজনীয় জিনিস বোধহয় এক জীবনে ভোগ করা যায়না। কতজিনিসই পড়ে থেকে থেকে অকেজোর লিষ্টে চলে যায়। অথচ সবটাই ছিলো কেনা একদিন দরকার হবে বলে।
সঞ্জুর ফ্ল্যাটে সারাদিন বড় একা লাগে শ্রীময়ীর তাই ছেলেকে বলেন,"এবার একটা বিয়ে কর বাবা, সারাদিন একা আর ভালো লাগেনা।".." মা ঐ কুবুদ্ধিটা আর দিয়োনা,এরপর হয়ত তোমাকেই বাড়ি ছাড়া করবে। তখন তোমার কি হবে?"...." আমার যা হয় হবে,তবুও তুই বিয়েটা করে নে। আমি আর কদিন বাঁচবো।"
আসলে সঞ্জুর সামনেই একটা প্রোজেক্ট আছে হয়ত দেশের বাইরে গিয়ে দুতিন বছর থাকতে হবে। তাই এখন একটু চাপেই আছে। আর বর্ষার সাথে ব্রেক আপ হবার পর কাউকে নিয়ে ভাবতেও ইচ্ছে করেনা। আগে প্রোজেক্ট কমপ্লিট হোক তারপর ভাবা যাবে। কিন্তু একটাই চিন্তা মাকে নিয়ে,মাকে কার কাছে রাখবে। যদিও দাদা বলেছিলো প্রয়োজনে ও রাখবে। আর সত্যি তো ওরা থাকতে মা হোমেই বা থাকবে কেনো, তাছাড়া সব দায়িত্ব কি ওর একার? শ্রীময়ীর এমন কোন টাকা নেই যা দিয়ে খরচ চলতে পারে। আর সঞ্জু ভালোই জানে ওর বৌদিকে,কোন টাকাই বার করতে দেবেনা দাদাকে। আর যদি শোনে ওর বিদেশে যাবার খবর তাহলে তো হয়েছে। সব ঠিক হোক আগে যাওয়ার দিন পনেরো আগে বলবে না হয়।
মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকমাস এভাবেই। শ্রীময়ীও ভাগের সুতোয় ব্যালেন্স করে হেঁটে কখনো পৌঁছন বড় ছেলে আবার কখনো ছোটছেলের কাছে। স্বাগতাটা কেমন আছে কে জানে। হয়ত দেশের বাড়িতে কোন চিঠি পাঠিয়েছে,পাননি উনি। কেজানে মেয়েটার এতোদিনে ছেলেপুলে হলো কিনা? বেশ অনেকগুলো বছর কেটে গেলো তো মাঝে। কোন চিঠিও এলোনা,হয়ত সঞ্জুর এই ফ্ল্যাটের ঠিকানাটা ও জানেনা,তাই এমন করছে। তার মাঝেই একদিন খবর পেলেন পাশের বাড়ির ঠাকুরপোর সাথে দেখা হয়েছিলো সঞ্জুর,ও খুব আসতে বলেছিলো কিন্তু ওনাকে আজই বর্ধমানে ওদের দেশের বাড়িতে চলে যেতে হবে তাই পরে একদিন আসবেন বলেছেন,ঠিকানাটা নিয়ে নিয়েছেন।
গ্ৰামের মানুষের কথা শুনেই মনটা একরাশ খুশির ঝলকে ভরে উঠলো শ্রীময়ীর আজকাল জানালায় বসে থাকা পাখিটাকেও দেখলে মনে হয় হয়ত এটাও উড়ে যায় ওনার গ্ৰামের বাড়িতে।দিন পনেরো বাদে হঠাৎই একটা চিঠি আসে,সঞ্জু মুখটা গম্ভীর করে মায়ের হাতে দিয়ে দেয়।স্বাগতার চিঠি,কাকুর কাছে ঠিকানা পেয়েছে। মনটা জুড়িয়ে যায় শ্রীময়ীর নিজের মনখারাপের মেঘলা আকাশে একমুঠো রোদ্দুর স্বাগতা। ওরা এখন ওদের গ্ৰামের পাশেই শ্বশুরবাড়িতে আছে,ঠিকানা দিয়েছে মেয়েটা ওখানে একটা চাকরিও পেয়েছে।" মা শোন ওর সাথে আর নতুন করে যোগাযোগ করার দরকার নেই,দাদা শুনলে খুব রাগ করবে।"
শ্রীময়ী এখন আশ্রিতা,তাই প্রথমেই আশ্রয়দাতার কথা শুনতে হবে। তাই যত্নে চিঠিটা নিজের কাছে রাখলেন। এরমধ্যেই সঞ্জুর ভিসাটা এসে গেলো,যাওয়ার আর দিন পনেরো বাকি। দিনদশেক আগে দাদাকে ফোন করে পুরোটা জানায়," তুই বলেছিলি,দরকারে মাকে রাখবি। মায়ের প্রতি তোরও কিছু দায়িত্ব আছে। এটা চাকরির ব্যাপার আমি কি করবো?"..." বলেছিলাম,তাই বলে টানা দুতিন বছর। আর কে বলতে পারে তুই যদি আর ফিরে না আসিস। এতো খরচ আমি একা নেবো?"..."টাকা আমি পাঠাবো দাদা,তবে হাফ তুই দিবি। আর নাহলে হোমে রাখবো,তবে তোকে কিছু খরচ দিতে হবে।"
শ্রীময়ী বোঝেন ওনাকে নিয়ে ভাগাভাগি চলছে ছেলেদের মধ্যে,একসময় এদেরকেই হাতে করে মানুষ করেছেন। ভালোমন্দ নিজে মুখে তোলেননি ছেলেরা ভালোবাসে বলে। আজ তাদের কাছেই বোঝা তিনি। একা মানুষ,কতটুকুই বা খেতে পারেন আজকাল। দুটো কাপড় হলেই চলে যায়। কথা হলো,সঞ্জু যাওয়ার আগের দিন রঞ্জু এসে নিয়ে যাবে। এদিকে বড়ছেলের বাড়িতে তখন বৌমা তুমুল অশান্তি করছে,"এই শোন সারাক্ষণ উনি ঘরে ঘুরঘুর করবেন,আর আমার ছেলেটাকে বিগড়োবেন এটা ওটা খাওয়াবেন তা কিছুতেই হবেনা। আমি কিছুই করতে পারবোনা।"
...." কিছুদিনের ব্যাপার তো। তারপর নাহয় অন্যকিছু ভাববো।"..."কিছুদিন..তোমার ভাই আর ফিরবে ভেবেছো। কিছুই বললোনা আমাদের পেটে পেটে কত বুদ্ধি। উনি এখানে এলে আমি বাবানকে নিয়ে বাবার কাছে চলে যাবো।"
....শ্রীময়ীকে নিতে আসা রঞ্জুর হলোনা, পরদিন পর্যন্তও দাদাকে আসতে না দেখে বারবার ফোন করে সঞ্জু কিন্তু সুইচড অফ ফোন। এদিকে ওর এয়ারপোর্টে যাওয়ার সময় হয়ে আসছে। বাধ্য হয়ে মাকে সঙ্গে এনে দাদার বাড়িতে বেল বাজায়। কিন্তু কেউ দরজা খোলেনা। বেশকয়েকবার বাজানোর পরেও না। এদিকে সময় এগোচ্ছে,তাই মাকে ওদের বাড়ির সামনে সিঁড়িতেই বসিয়ে রেখে বেড়িয়ে যায়।"মা এখানে বোসো,ওরা ঠিক দরজা খুলবে কখনো না কখনো,তখন ভেতরে চলে যাবে,আমি আর অপেক্ষা করতে পারছিনা,দেরী হয়ে যাচ্ছে।"চোখের জল সামলে আলতো হাতে ছেলের মাথায় হাত দিয়ে বলেন শ্রীময়ী দুর্গা,দুর্গা....ট্যাক্সি নিয়ে বেড়িয়ে যায় সঞ্জু। এদিকে শ্রীময়ী বেল বাজিয়ে বাজিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়েন,কেউ দরজা খোলেনা। তার বড় সংসারটা আজ একটা হাতব্যাগে বন্দী,রাত হয়েছে ততক্ষণে বেশ। আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামেন ব্যাগটা টেনে। পাড়ার কয়েকটা ছেলেকে দেখতে পান। " বাবা আমাকে একটু এই ঠিকানায় পৌঁছে দেবে।"...কাপড়ের ছোট্ট বটুয়ায় যত্নে রাখা স্বাগতার ঠিকানা ওদের দেখান। "মাসিমা,আপনি এখানে কোথায় এসেছিলেন,নতুন নাকি?" ছেলেকে আর ছোট করতে ইচ্ছে করলোনা,আকাশে থুতু ছিটিয়ে কি লাভ!"হ্যাঁ বাবা আমি ঐদিকে এক আত্মীয়ের বাড়ি এসেছিলাম তা ওরা নেই বাড়িতে।"..."কিন্তু এই জায়গা তো অনেকটা দূরে,কলকাতা থেকে প্রায় দু আড়াই ঘন্টা লাগবে। দীর্ঘশ্বাস ফেলেন শ্রীময়ী,আজ ভিটেমাটি ছেড়ে তিনি পথে নেমেছেন সম্বল শুধু ঐ ব্যাগটা। " একটু সাহায্য করোনা বাবা,ওরাই গাড়িভাড়া দিয়ে দেবে।"
একটা গাড়ি জোগাড় করতে বেশ কিছুটা সময় লেগে গেলো। গাড়ির জানালায় বসে চোখের জলে ভেজা শ্রীময়ী পেলেন সোঁদা মাটির গন্ধ আর ফুলের সুবাস একরাশ ঠান্ডা হাওয়া জুড়িয়ে দিলো অভিমানী মনটা। রাত্রি বারোটায় শ্রীময়ী পৌঁছলেন স্বাগতার ঠিকানায়,দরজা খুলেছিলো জামাই কিন্তু কেন যেন চিনতে কোন ভুল হয়নি। "স্বাগতা বাইরে এসো,মা এসেছেন।"..মা ডাকটা কেমন যেন সব দুঃখ ভুলিয়ে দিলো শ্রীময়ীর। "মা....তুমি এতো রাতে কি হয়েছে!কতদিন বাদে তোমায় দেখছি।"...মা মেয়ের চোখের জলে মিলে যাওয়ার দৃশ্য দেখে সবাই একটু চুপ করে গিয়েছিলো কিছুক্ষণের জন্য। অনেক ধন্যবাদ জানিয়ে ছেলেগুলোকে একটু খাইয়ে বিদায় দেয় ওরা।
....."কয়েকটা দিন এখানে থাকি,তারপর দিয়ে আসিস রঞ্জুর ওখানে। জামাইবাড়ি কতদিন থাকবো?"...." মা তোমাকে আর আমি কোথ্থাও যেতে দেবোনা,কক্ষণো না।"....শ্রীময়ীর ভেসে বেড়ানো বোধহয় শেষ হলো এবার,ছেলেদের কাছ থেকে একটু একটু করে মুছে গেলেন মাঝে মাঝে মনে পড়ে সঞ্জুর কথা,কে জানে ছেলেটা কেমন আছে। হয়ত বা মাকে খুঁজেছে দাদার কাছে ফোন করে। তারপরেই মনে হয়েছে না না এখন শ্রীময়ী সংসারের পুরোনো জিনিসগুলোর চেয়েও কমদামি ওগুলো বেচলে তবু কিছু পয়সা তো অন্তত আসে। থাক ওরা ভালো থাক,সুখে থাক এখনো শ্রীময়ী ঠাকুরকে একটা কথাই বলেন," আমার সন্তানদের ভালো রেখো,ওরা যেন দুধেভাতে থাকে।"
এই বাড়িতে এসে ভালোই সময় কাটে ওনার স্বাগতার দুই যমজ ছেলেমেয়ের সাথে। জামাই যে এতো ভালো তা কোনদিনই বুঝলেন না তার স্বামী এটাই খুব আক্ষেপ হয় ভাবলে। জাতের ধ্বজা উড়িয়ে অবহেলায় সরিয়ে রাখলেন হীরের টুকরো ছেলেটাকে। রান্নাবান্না খুব একটা করতে দেয়না স্বাগতা তবুও মাঝে মাঝে আবদার করে,"ও মা,একদিন ওই মাংসটা কোরোনা যেটা ভাই কষানো থেকে খেতে চাইতো। আর একদিন হাঁসের ডিমের ঝোল সেই লাল কুসুমের। ভাত দিয়ে মেখে খাবো বাবার মত।"
শিউলি কুড়িয়ে সাজি সাজাতে সাজাতে বলেন," তোর মনে পড়ে আমাদের গ্ৰামের পূজোর কথা,কি আনন্দই না হত সবাই মিলে। দশমীর মেলার পুতুল আর জিলিপি না কিনলে তো তোদের চলতোই না।"...."সত্যি মা,কত কিছুই তখন কম কম ছিলো শুধু সুখটা আর হাসিটা ছিলো একদম হাড়িভরা।"...."আচ্ছা আমার আসনগুলোর কথা তোর মনে পড়ে? ওগুলো যে কোথায় কিছুতেই পেলাম না। "....হাসে স্বাগতা,"তোমার হস্তশিল্পের প্রেমে পরে হয়ত কেউ নিয়েছে ওগুলো। কিছুই তো গুছিয়ে রাখতেনা।"
দেখতে দেখতে পূজো এলো,কাল ষষ্ঠী। জামাই খ্রীষ্টান তাই ওদের পূজোর যোগাড় একটু কম। তবুও বাচ্চাগুলোর আনন্দের সীমা নেই,ছুটে ছুটে যাচ্ছে প্যান্ডেলে।"ও মা কতদিন মুড়কি,মোয়া আর নারকেল নাড়ু খাইনি একটু বানাবে গো?আমি সব জোগাড় করে দেব। নাড়ু,মোয়া বোঁদের গন্ধে খুব মনে হয় ছেলেমেয়েদের ছোটবেলার কথা। আসলে ওরা বড় হয়ে গেলেও মা বাবাদের
মনটা পড়ে থাকে সেই শৈশবের মিষ্টি টলটলে স্মৃতিতে। আধো আধো বোল আর মিঠে মিঠে ছেলেবেলা মনজুড়ে থাকে। সময়গুলো যেন বড় তাড়াতাড়ি চলে গেলো।
" মা কাল তো ষষ্ঠী,কাল সবাই আমরা সকালে একটু বেরোবো।"..."তোরা ঘুরে আয় মা,আমার আর কোথাও যেতে ভালো লাগেনা।"..."খুব ভালো লাগবে দেখো,আমার ছেলেমেয়েদুটোর খুব মনখারাপ হবে তুমি না গেলে।"
........পরের দিন অন্ধকার থাকতেই মেয়ের তাড়াহুড়োতে তৈরী হন। ফিকে অন্ধকার থেকে একটু একটু করে আলো ফুটছে,তার মধ্যেই মা মেয়ে স্নান সেরে তৈরী। জামাই গাড়িতে স্টার্ট দিলো,টানা পিচের রাস্তার দুপাশে গাছ প্রাণ ভরে যায় সবুজ দেখলে। আকাশে নীল শাড়িতে তখন সবে লাগছে একটু সোনালী রঙ। আবেশে চোখটা বুজে গিয়েছিলো হঠাৎই মনে হলো রাস্তাটা বড় চেনা লাগছে,সেই চেনা মিষ্টি গন্ধমাখা শিউলি ধোয়ানো পথ। "আমরা কোথায় যাচ্ছি রে?"
...." তুমি চোখ বোজোনা মা আরেকটু, একটু বাদেই এসে যাবে তখনই দেখতে পাবে।"..মিষ্টি হাসে স্বাগতা। শ্রীময়ীর মনে তখন অনুভূতির অনুরণন। কিছুক্ষণ বাদেই গাড়িটা ঢুকছে তাদের গ্ৰামের রাস্তায় মনে পরে যায় পাল্কিতে চেপে নতুন বৌ হয়ে আসার দিনটার কথা। চোখ ফেরাতে পারেননা,মায়ের উজ্জ্বল মুখটা বড় ভালো লাগে স্বাগতার। ঐ তো শোনা যাচ্ছে ঢাকের বাদ্যি,দুর্গামন্ডপ চোখে পড়ছে, মা এসে গেছেন, আজ তো বোধন।দুর্গামন্ডপের সামনে এসে দুহাত মাথায় ঠেকান শ্রীময়ী,প্রণাম করে স্বাগতাও আজ যে ওদেরও মাতৃ বোধন তাই মনে মনে বলে, ভালো থেকো মা অনেক করেছো তুমি আমাদের জন্য।
কথা বলতে পারেননা শ্রীময়ী,গাড়িটা এসে দাঁড়ায় ওদের বাড়ির সামনে কিন্তু বাড়িটা তো বিক্রি হয়ে গেছে,তবুও একবার দেখে যাবেন। ঠাকুরপো সম্মান করতো খুব। গাড়ি থেকে নেমে দাঁড়াতেই বাগানে পা রাখেন শ্রীময়ী,ওমা সবই তো বেশ বেঁচে আছে। শিউলিগাছটা অনেক বড় হয়েছে,ক্ষুদি টগরের গাছটাও ফুলে ফুলে সাদা। পাতাগুলোতে হাত বোলান শ্রীময়ী।"মা শুধু গাছগুলোতে হাত বোলালেই হবে? আমার মাথাতেও একটু হাত বুলিয়ে দাও। কতদিন তোমার আদর খাইনি।"...."সঞ্জু....তুই কোথা থেকে?"...." কয়েকদিনের জন্য পালিয়ে এলাম মা,খুব অপরাধী লাগছিলো নিজেকে।" ঝাপসা চোখদুটো আজ আনন্দে পূর্ণ, দুহাতে জড়িয়ে ধরেছেন দুই ছেলেমেয়েকে শ্রীময়ী।
মায়ের কোন খবর না পেয়ে সঞ্জু গ্ৰামের বাড়িতে কাকাকে ফোন করে জানতে পারে মা দিদির কাছে। বারবারই মনে হয়েছিলো সন্তান হিসেবে মাকে কিছু না দিয়ে ওরা উল্টে মায়ের ছোট পৃথিবীটা কেড়ে নিয়েছে। তাই বাড়িটা কাকার কাছ থেকে আবার কেনার জন্য অনুরোধ করে দিদির সাথে কথা বলে ওরা দুজনে মিলে, উনি ভালোমানুষ এককথায় রাজি হয়ে যান।"রাজি না হয়ে উপায় আছে বৌঠানের হাতে বানানো চা না খেয়ে কতদিন যে আয়ু কমলো কে জানে।"...."অমন কথা বলতে নেই ঠাকুরপো ভালো থাকো।"
....." মা এসোনা গো,আবার পা রাখো তোমার সংসারে। স্বাগতা মাঝে মাঝে এসে সুন্দর করে সাজিয়েছে বাড়িটা। ঠাকুরের সিংহাসনের সামনে জোড়া ময়ূরের আসনটা পাতা।"এটা কোথায় পেলি?"..."তোমার হাতের ছোঁয়াটা আমিই নিয়েছিলাম মা চলে যাবার আগে।"। দেবীবোধনের সুন্দর মুহূর্তে শ্রী আবার লক্ষ্মীশ্রী পরিপূর্ণ ঘরে ফিরে এলেন। কতদিন বাদে আবার নিজের বাড়িতে,কিন্তু একা থাকবেন কি করে এখানে?...মায়ের গলাটা জড়িয়ে ধরে স্বাগতা,"আমি আছি তো মা,তোমাকে বলাই হয়নি আমার একটা ভালো স্কুলে হেডমিস্ট্রেসের চাকরি হয়ে গেছে,এই তো পাশের গ্ৰামেই।"
আমরা আছি তোমার সাথে,এই একটা আলতো স্পর্শ আর আমরা গুরুত্ব দিই তোমার ভালোলাগা মন্দলাগাগুলোকে এই ছোট্ট দুটো কথা বোধহয় অনেকখানি পাওয়া শ্রীময়ীর মত আরো অনেক মায়ের কাছেই।
একসময় সংসারের খুব দামী মা শ্রীময়ীর মনে হয়েছিলো তাকেও হয়ত হাতব্যাগটা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে হবে রাস্তায় আস্তানা হবে কোন ফুটপাথে, কিন্তু আজ ছেলেমেয়েরা আবার তাকে ফিরিয়ে দিয়েছে তার মুড়ির টিন,চালের কুনকি আর তেলের পলা,হাতের সেলাইগুলো। " মা আজ কিন্তু তোমার হাতের রান্না খাবো কতদিন খাইনা।"...."কাল খাস,আজ তোরা আমার কাছে খাবি। আর কাল তো আমিও এখানেই খাবো।"....কাকা,কাকিমা,মায়ের হাসিমুখগুলো বড্ড ভালো লাগে সঞ্জু আর স্বাগতার। মন্ডপে ঢাকের আওয়াজ স্বাগতার স্বামী তখন ছেলেমেয়েদের সামলাচ্ছে,থাকনা ওরা একটু নিজের মত করে। খুব মিস্ করেছে বাবা মাকে মেয়েটা।
"মা এই দেখো,কত শিউলিফুল কাকিমা দিলো,এবার সেই লম্বা মালাটা গাঁথবে তো।"...চোখটা ছলছল করে শ্রীময়ীর। মেয়েরা ভালো,ছেলেরা খারাপ এমন কোন কথা নেই আসলে পুরোটাই হয়ত বিবেক,বুদ্ধি আর মনুষ্যত্বের ওপর নির্ভর করে। কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রতিদিনের মত প্রার্থনা করেন ওদের সবাইকে ভালো রেখো ঠাকুর।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment