Skip to main content

গুন্ডী গুড়িয়া

#গুন্ডি_গুড়িয়া#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"একদম চোপ একটুও আওয়াজ নয়। ভীতুর ডিম একটা। সামান‍্য একটা ইঞ্জেকশন নিতে ভয় পায়!"
      পরমার হাতটা চেপে ধরে দুর্গা,ভয়ে চোখ বন্ধ করেন পরমা। "উরিব্বাবা কি লাগলো।"..."তাই খুব লাগলো না? কিছুতেই হতে পারেনা দিনে এমন পটাস পটাস করে কতগুলো ইঞ্জেকশন ঠুকতে হয় তার ঠিক নেই।"...."ওরে বুকাই,আর মেয়ে পেলিনা এই গুন্ডিটাকে কোথা থেকে জোগাড় করলি? এতো আমাকেই গিনিপিগ বানিয়ে ছাড়বে।"

"তুমি যে বলতে ছোটবেলায় মায়ের ধমকে তুমি কাঁপতে এটা তবে কে অন‍্য কেউ নাকি? এতো একদম একটা গুড়িয়া মানে ঐ আর কি পুতুল।আর দেখতেও ঠিক তেমন একদম কিউট কিউট। তখনো হাতটা চেপে আছেন পরমা তবুও হেসে ফেলেন,"হ‍্যাঁ আর কি, এই মেয়ে আমার ঘরে এলে আমাকে হাতের পুতুলই বানিয়ে রাখবে। ওরে বাবা স্বার্থক নামকরণ দুর্গা তবে গুন্ডি হলে আরো ভালো হত।"
         " হ‍্যাঁ আমার দাদু রেখেছিলেন,মায়ের নাম রেখেছিলেন দূর্বা,মাকে চিরকাল লোকে জব্দই করে গেছে। তাই আমার নাম দাদু দিলেন দুর্গা।"
       ...."হুঁ একদম রণচন্ডী দুর্গা।"...হঠাৎই সুগারটা ফল করেছে পরমার। মাথাটা ঘুরে গিয়েছিলো কখন বুঝতেই পারেননি। ব‍্যাস ছেলের তলবে এসে হাজির তার ডাক্তার প্রেমিকা।কয়েকমাস ধরেই ছেলে যে কারো প্রেমে পড়েছে সেটা বুঝেছেন,জেরা করতেই বেড়িয়ে পরে মেয়েটি হবু সার্জেন।তখনই একটু ভয়ে কেঁপে ওঠেন পরমা ওরে বাবা এতো সারাদিনই অপারেশন করবে। তবুও ছেলে পছন্দ করেছে কিছু বলার নেই। বাপরে প্রথম সাক্ষাৎ যে এভাবে হবে বুঝতেই পারেননি। বাড়িতে হাতাখুন্তি আর বেলুনি সাঁড়াশি নিয়ে যতই যুদ্ধ করেন ইঞ্জেকশন আর অপারেশনে খুব ভয় ছোটবেলা থেকেই,তাই রোহন হওয়ার পর আর দ্বিতীয়বার হসপিটাল মুখো হননি।
           "আন্টি.. ও না গুড়িয়া,তোমার কি খুব লেগেছে? সরি দেখি একটু হাত বুলিয়ে দিই। আসলে ঐসব আদরটাদর আমার ঠিক আসেনা।"....এতোক্ষণে একটু হাসি ফুটেছে পরমার মুখে,"আদর আর আসবে কি করে,সারাক্ষণ ঐ মানুষ কাটলে কি আর হবে?"
....." খুব যত্ন করে মানুষ কাটি গো,আসলে ওটা আমার প‍্যাসন হয়ে গেছে,ভালোবেসে করি। তবে আদর আসেনা কেন তোমায় আরেকদিন বলবো। আজ আসি গো আমার রাউন্ডের সময় হয়ে আসছে।"...ততক্ষণে প্লেটে মিষ্টি নিয়ে এসেছেন প্রতীম," প্রথমদিন এলে একটু মুখে দিয়ে যাও।"
            মিষ্টি দেখেই আবার বকা দিলো দুর্গা," ও এবার বুঝেছি,অসুখের কারণ। এগুলো আর বেশি খেয়োনা। আচ্ছা আমি একটা তুলে নিচ্ছি।"
       জলটা খেয়েই তাড়াতাড়ি পা বাড়ায় দুর্গা,রোহন বেড়োয় ওকে এগিয়ে দিতে। বিছানায় শুয়ে আছেন পরমা,পাশে প্রতীম বসে। " এই মেয়ে যদি সত‍্যিই বৌমা হয়ে আসে তাহলে তুমি বেশ জব্দ হবে। ওরে বাবা হাত মুখ সব একসাথে চলে তেমনি পেটানো লম্বা চেহারা।"
       মিষ্টি হাসেন পরমা,কানে বাজলো একটা নাম গুড়িয়া,খুব মনে পড়লো মায়ের কথা ওকে পুতুল বলে ডাকতেন আদর করে। আজ অনেকদিন বাদে কেউ এসে এমন মিষ্টি করে শাসন করলো। সত‍্যি মেয়ে গুন্ডা একটা!
           বন্ধুর সাথে মেডিক‍্যাল কলেজে গিয়ে বন্ধুর মাসতুতো বোনকে ভালো লেগে যায় রোহনের। রোহন ইঞ্জিনিয়র,ভালো চাকরি করছে এখন। তবে দুর্গার আশ্চর্য লাগে এই ভেবে যে ওর প্রেমে কেউ পড়তে পারে। ওর মতো একটা কাঠখোট্টা স্বভাবের মেয়ের মধ‍্যে কি দেখলো রোহন,দিনের কুড়িঘন্টা প্রায় যার হাতে রক্ত মেখে কেটে যায়। ফ‍্যাট আর রক্তের গন্ধটা এখন কেমন অভ‍্যেস হয়ে গেছে। তাই ঐ হাতে গোলাপফুল ধরবে ভাবতেই পারেনা। অনেকদিন ঘ‍্যান ঘ‍্যান করে দুর্গার মন গলাতে পেরেছে রোহন। তবুও মাঝে মাঝে সন্দেহ হয় ওর মন বলে সত‍্যিই কিছু আছে তো?
            "তোমার মা একদম সফ্ট সফ্ট, ইশ্ এই মানুষটা আমার সাথে থাকবে কি করে?"...."কে ?মা,সফ্ট! বাপরে তুমি তাহলে কিছু চেনোই না,আজ তো অসুস্থ তাই মিউ মিউ করছিলো অন‍্য সময় পুরো মা কালী। " জয় মা তারা,জয় মা কালী আর জয় মা দুর্গা তোমার তো লাইফটাই হেল হয়ে যাবে।" মজা করতে থাকে দুর্গা।..." ইশ্ বৌকে মা বলতে আমার বয়েই গেছে।" এমনি সব মজার মজার কথা বলতো সময় পেলেই দুর্গা। সত‍্যিই মেয়েটা খুব মজার কিন্তু ভেতরে একটা চাপা দুঃখ আছে আর সেটাই জেদে পরিণত হয়েছে ধীরে ধীরে।
          রোহন ওর মাসতুতো দাদার কাছ থেকে যা জেনেছে,বর আর শ্বশুরবাড়ির অত‍্যাচারে টিকতে না পেরে বাপের বাড়িতেই চলে এসেছিলো ওর মা ছোট্ট দুর্গাকে নিয়ে। তারপর থেকে শুরু হয় একার লড়াই কিন্তু যা হয়, মানসিক অশান্তিতে শরীরের যত্ন না নিয়ে অকালেই গলব্লাডারের ক‍্যান্সারে চলে গেলো মা। দুর্গার তখন সবে এগারো ক্লাশ,একটু একটু করে অশান্ত মনটাকে আগল দিতে শুরু করে দুর্গা,দাদুকে সামলে নিজেকে সামলে হয়ত কয়েক মাসেই বুঝে গিয়েছিলো এই জীবনের লড়াইটা ওকে একাই লড়তে হবে। সার্থক নাম দিয়েছিলেন দাদু তাই বোধহয় একের পর এক লড়াইয়ে ভয় না পেয়ে এগিয়ে গেছে দুর্গা একটু একটু করে নিজেকে তৈরি করেছে লড়াইয়ের জন‍্য,ভাবেনি কখনো প্রেম করবে কিন্তু রোহনটা এতো ন‍্যাগিং মাস্টার যার জন‍্য একদম না বলতে পারেনি। তবে বিয়ে করবেনা বলে দিয়েছে,যতদিন খুশি প্রেম করো ঠিক আছে কিন্তু বিয়ের কথা এখনো ভাবতেই পারিনি, "ওহ্ ঐসব শাঁখা পলা মেহেন্দী আমার দ্বারা হবেনা বড্ড বোরিং লাগে। আর আমার সময় কোথায়?আমাকে আরো এগিয়ে যেতে হবে অনেক স্বপ্ন দাদুর,মায়েরও ছিলো সবসময় বলতো,"দুর্গা তোকে অনেক এগোতে হবে,কোন কিছুর জন‍্যই আপোশ করিসনা স্বপ্নের সাথে। আমি তো সাধ করে সংসার পেতেছিলাম কিন্তু সংসারে যত দিবি সংসার আরো চাইবে। নিজের আগুনটাকে নিভতে দিসনা কখনো।"
                 "আচ্ছা ঠিক আছে আমি অপেক্ষা করবো সেই বুড়ো বয়েস পর্যন্ত দেখি কতদিনে দেবীর মন গলে।"
          পরমার আবদারে মাঝে মাঝেই আসতে হত দুর্গাকে। মেয়েটা মা মরা শুনে অদ্ভুত এক মায়া হয়ে গিয়েছিলো। হোষ্টেলে থাকে,সারাদিন ছুটোছুটি আর পরিশ্রম,কি খায় কে জানে,তাই সময় পেলেই ছেলের হাতে কিছু না কিছু রান্না করে পাঠাতেন। মেয়েটাকে নিজের হাতে রান্না করে খাওয়াতে কি যে ভালো লাগতো! "নাহ্ গুড়িয়া বেশ জমিয়ে রান্না করো একদম আমার মায়ের মত।" একদিন তো রান্নায় মিষ্টি দিয়েছেন বলে খুব আচ্ছা করে বকুনি দিলো পুরো ধমকালো তাহলে এই বাড়িতে খেতেই আসবেনা।
                পরমা আর দুর্গা দুই অসমবয়সী নারী তবুও অদ্ভুত বন্ডিং হয়ে গেলো দুজনের মধ‍্যে,দেখানো ভালোবাসা নয়। ঝগড়া,মান অভিমান,আবদার শাসন আবার ভালোবাসা। রোহনের জন‍্য নয় আজকাল দুর্গা ফ্রী থাকলে ওর গুড়িয়ার জন‍্যই চলে আসে। প্রতীমের হাসি পায় যখন ওরা ছোটখাটো ব‍্যাপার নিয়ে ঝগড়া করে। পরমাটা যে এত ছেলেমানুষ আগে বুঝতে পারেননি। এইজন‍্যই বোধহয় একটা মেয়ে থাকা জরুরী,আর ঐ পাঁচফুট সাত ইঞ্চি লম্বা মেয়েটা যে এতোটাই বাচ্চা আর আদুরে তাও বুঝতে পারেননি। গুন্ডি আর গুড়িয়া ভালো নামকরণ হয়েছে।"সাঙ্ঘাতিক মেয়ে দেখেছো!কোন ভয়ডর নেই কোথায় আন্টি বলবে তা নয় বলে গুড়িয়া।"..."বেশ করি,তুমিও তো আমাকে দুর্গা না বলে গুন্ডি বলো। আরে দুর্গা দুর্গা করো সব বিপদ কেটে যাবে।"...." যার মেয়ে দুর্গা তার আবার ভয় কি শুনি?"
        ডাকাবুকো দুর্গা বেশিদিন পারলোনা বিয়েটা এড়াতে যত নষ্টের গোড়া ঐ গুড়িয়াটা ওকে ছাদনাতলায় এনেই ছাড়লো তাই সার্জারী ফাইনালের পরই গাঁটছড়া বাঁধতে হোলো রোহনের সাথে। রাজি না থাকলেও গুড়িয়ার জন‍্য না করতে পারলোনা।"তোমার ছেলেকে বলো,আমি কিন্তু পড়াশোনা করবো যতদূর খুশি। আমার স্বপ্ন নিউরোসার্জেন হওয়া। ও যেন আপত্তি না করে। তোমার সামনেই বলুক আগে।"...আরো পড়াশোনা করবে! একটু ঢোক গেলে রোহন,মনে মনে ভাবে আগে তো বিয়েটা হয়ে যাক তারপর দেখা যাবে তাই প্রমিস করেই ফেলে। হাতে হাত রেখে সারাজীবন একসাথে চলার শপথ নিয়ে কোন এক পলাশ রাঙা বসন্তে রোহনের ঘরে এলো দুর্গা। নাহ্ গুড়িয়ার অত‍্যাচারে শাঁখাপলা মেহেন্দী আর লাল বেনারসী পরে ফাটাফাটি লাগছিলো কিন্তু ছয় ফিট রোহনের পাশে দুর্গাকে।
             ...."খুশিতে মুখটা উজ্জ্বল হয়েছিলো পরমার। সবাই বলছে ,"খুব ভালো বৌ হয়েছে,আমাদেরও সুবিধে হলো দরকারে দেখিয়ে নিতে পারবো।"
        হানিমুনের টিকিট আগে থেকে কেটেই রেখেছিলো রোহন,মালদ্বীপের নীল জলের ঢেউরা যেখানে খেলা করে আছড়ে পরে বালুকারাশির মধ‍্যে সেখানে একটা ছোট কটেজে কানাকানি হলো কখনো বা চ‍্যাঁচামেচি হলো দুজনের। "বেশ হয়েছে,আর এখানে পেশেন্টরা বিরক্ত করতে পারবেনা। সারাদিন শুধু কাজ আর কাজ ,কোথায় একটু চুটিয়ে প্রেম করবো তার উপায় নেই। একদম যাতা।"
   "এই যে মিঃ প্রেমিক,এতোই যখন প্রেমের শখ তাহলে ডাক্তারের পেছনে পরেছিলে কেনো শুনি? তুমি জানোনা বুঝি আমাদের কি লাইফ! একটা পচা হাবি আমার। ভাগ‍্যিস গুড়িয়াকে দেখে মায়ের কথা মনে হয়ে গিয়েছিলো বড্ড মা মা গন্ধ তাই তো রাজি হলাম নাহলে হত কচুকলা। আর বেশি কথা বলতে দেয়না রোহন,ওর আদরে চুপ করিয়ে দেয় দুর্গাকে।
       হোয়াটস আ্যপে ছবি দেখে খুশি হয়ে উঠলেন পরমা, ইশ্ কি সুন্দর জায়গা গো! এখনকার ছেলেমেয়েদের ব‍্যাপারটাই আলাদা। আর আমাদের বেলায় তো বড় জোর পুরী না হয় দার্জিলিঙ।"...."ছেলেকে বললেই পারতে আমাকেও নিয়ে চল সাথে।"...মুখ ব‍্যাকায় পরমা,"ইশ্ আমি বললেই যেন নিয়ে যেত। খেয়েদেয়ে কাজ নেই যাবো ছেলেবৌয়ের সাথে হানিমুনে।"....."তাহলে আর আপশোষ করোনা তোমার কেরানী বর যেখানে নেবে সেখানেই যেয়ো।"....তবুও যখন গুন্ডি বললো,"এই যে মনের সুখে মিষ্টি খেয়োনা। তোমাকে সাথে আনলেই ভালো হত তোমার বোরিং ছেলেটার সাথে এই টোয়েন্টি ফোর আওয়ার্স কাটানো।"..."কেন রে কি হলো আবার?"..."সে অনেক কিছু তোমাকে বলা যাবেনা।" হেসে ফেলেন পরমা সত‍্যিই মেয়েটা ছেলেমানুষ।
              পরমার সংসার এখন জমজমাট তবে একটাই আপশোষ সেই সারাদিন একাই কাটে কর্তা গিন্নীতে বকবকুম করে। ছেলে বৌ দুটোই ব‍্যাস্ত সকালে উঠে আগে ছেলেকে খাইয়ে পাঠানো কাজ ছিলো এখন ঐ গুন্ডিটার সাথে হৈ চৈ চ‍্যাঁচামেচি শুরু হয় সকাল হলেই। আর রাতেও যে একটু গল্প করবেন তার জো নেই,ফেরার ঠিক ঠিকানা নেই। আর যদিও বা তাড়াতাড়ি আসে তো শুধু ফোনের পর ফোন। কিছু করার নেই,তার মাঝেই যেদিন সময় পায় দুর্গা চেষ্টা করে সবার অভিযোগ মিটিয়ে দিতে।"মা পেঁয়াজটা দাওনা আমি কুচিয়ে দিয়ে।"..."থাক অনেক হয়েছে,শেষে নাকের জলে চোখের জলে এক হবে।"..."হোক তবুও তুমি দাও,আর যাও তো আজ আমি মাংসটা করি দেখোই না খেয়ে।"...হাসি পায় পরমার পাশে মোবাইল খুলে রান্না করবে। তবুও প্রতীম ইশারা করেন ওকে ছেড়ে দিতে। অনেকদিনই এভাবে রান্নাঘরে নো এন্ট্রি হয়ে যায় পরমার এক একসময় নিজেই বলে ওঠেন,"তোর এতো চাপ কি দরকার মিঠু তো আছেই সামলে নেবো আমি।"...."ওসব তুমি বুঝবেনা,তাইতো তোমায় গুড়িয়া বলি। আসলে তোমার ছেলের অনেক অভিযোগ আমি ওকে সময় দিইনা, টিফিন গুছিয়ে দিইনা,বাড়িতে এলে চা করে খাওয়াই না। কি করবো বলো,তাই সময় পেলেই চেষ্টা করি যতটা পারি।"...."আমিই তো এতোদিন করে খাওয়ালাম,দিব‍্যি তো ছিলো। বিয়ে হলেই বৌয়ের হাতেই খেতে হবে! কে জানে বাপু,তা খুঁজে খুঁজে সার্জেন আনলি কেনো রে?"...পরমার কথা শুনে দুজনেই হাসলো প্রাণ খুলে। দুই নারী দুজনের জগত অন‍্য তবুও বোধহয় অদ্ভুত মিশেল,দুজনেই ছেলেমানুষ,ঝগড়ুটে আর খোলামেলা। "আসলে বাপ কা বেটা,ওর বাবাও এমন ছিলো। অফিস থেকে ফিরে আমাকে না দেখলেই রেগে অস্থির হত। এই করে আর সেলাই ক্লাশ,গানের ক্লাশ সবই বন্ধ হলো। এমনকি এম.এ পড়তেও পারলামনা। অথচ প্রথমে শুনেছিলাম খুব পড়াশোনা ভালোবাসে। ছেড়ে দিলাম রে সব কিছু মন দিয়ে সংসার করলাম এখন এখানেই আমার মুক্তি। শুক্তো,বিউলির ডাল,বাটি চচ্চড়ি সবের মাঝে কখন যে স্বপ্নগুলো একে একে হারিয়ে গিয়েছিলো বুঝিইনি।"
   .....মনটা ভারী হয়ে যায় দুর্গার বড্ড মনে পড়ে মায়ের কথা,সবার মন জয় করতে চেয়েছিলো অথচ পারেনি হার মেনেছিলো। " এই যে গুড়িয়া,তুমি ছেড়েছো আমি কিন্তু ছাড়বোনা। তাহলে এই দশবছর ধরে ডাক্তারী পড়লাম কেন শুনি? সবার আগে আমার প্রফেশন তারপর অন‍্য কিছু,অন‍্য কোন শাশুড়ি হলে কি হত জানিনা তবে পরমার ভালো লাগলো সত‍্যিই তো এতো বছর কষ্ট করলো কেনো মেয়েটা তাহলে। তার সাথে একটু চিন্তাও হলো সব মানিয়ে যেন এগিয়ে যেতে পারে মেয়েটা। মা মরা মেয়েটা,ভারী মায়া হয়।
        হাসি ঝগড়া খুনশুটিতে বেশ চলছিলো। তবে রোহন মাঝে মাঝে খুব বিরক্ত হত বুঝতেন পরমা কেনো দেরী করে ঢুকছে বৌ বাড়িতে,তারপর আবার পড়াশুনা তাকে নাকি আরো ডিগ্ৰী বাড়াতে হবে। "আমি তো মাঝে মাঝে ভাবি তোমার লাইফে বিলঙ্গই করিনা। সারাক্ষণ হসপিটাল,পেশেন্ট আর নাহলে মোটামোটা বইয়ের পাতা ওল্টানো। অফিসের পার্টি বন্ধুদের গেট টুগেদার সবটাতেই আমাকে একা যেতে হয়।"...."কি করবো বলো,তোমার সাথে টাইম স্পেন্ড করতে আমারও তো ভালো লাগে। সান ডে ইভনিংটা রেখো গেটটুগেদার আমি ম‍্যানেজ করে নেবো।"..."তোমার ইচ্ছেমতো তো সব হবেনা। আমার নাহয় এখনো বেবি হয়নি। ওদের অনেকের বাচ্চাদের পরদিন স্কুল থাকে।"
      এই কথাগুলো আজকাল প্রায়ই বলে রোহন এতো ক্লান্ত থাকে দুর্গা যে সবসময় উত্তর দিতেও ভালো লাগেনা। তাতে রোহনের রাগ আরো বাড়ে।দুর্গা ঠিকই করেছে নিজের গোল থেকে একটুও নড়বেনা। এখন মাঝে মাঝে মনে হয় শুধু শুধুই বিয়েটা করেছিলো সত‍্যিই তো বৌ হওয়ার মত কিছুই যোগ‍্যতা ওর নেই। যাক তবুও দেখা যাক চেষ্টা করে।
    ...."কি রে আজ দুপুরবেলা হঠাৎ চলে এলি?"..
"একটু পড়তে বসবো গো,পরীক্ষা চলে আসছে।"
..."রোহন কে বলেছিস,একটু বিকেলে বেরোতে পারতিস তো।"..."না গো আজ হবেনা,তাই ওকে কিছু বলিনি। বাড়ি ফিরে একটু অবাকই হয় রোহন,তার মানে ইচ্ছে হলেই আসতে পারে তাড়াতাড়ি। সারাদিন কাজ কাজ করে হয়ত নিজেকে বেশি জাহির করে।
              মাঝে কয়েকটা মাস বেশ চাপে কাটিয়েছে দুর্গা,পরীক্ষার প্রিপারেশন,জব সব নিয়ে জেরবার অবস্থা। কোনদিকেই তেমনভাবে তাকায়নি। শুধু মুডটা ভালো করতো গুড়িয়ার সাথে কখনো ফুচকা খেয়ে,কখনো বা আবদার করে। আবার কখনো ঝগড়াও হতো শরীরের অযত্ন করছে বলে। নাহ্,পরীক্ষাটা হলেই একদম সাতদিন দশদিন ছুটি রাখবে ভেবেই নেয়। এবার একটা ফ‍্যামিলি ট্রিপ একদম মা বাবাকে নিয়ে।
         রোহন একটু আপত্তি তুললেও খুব একটা কান না দিয়ে এম সি এইচের পরীক্ষাটা দিয়েছিলো দুর্গা। ঠিক করেই নিয়েছিলো যদি বাইরে মানে ইউ.কে তে পায় তাহলেও চলে যাবে। ওকে এগোতেই হবে থামলে চলবেনা,কিছুতেই ছাড়বেনা স্বপ্ন দেখা। অনেকেই বলে মেয়েদের দ্বারা বেশিদূর যাওয়া হয়না।ঐ তো একটা সময়ের পর সংসারের জন‍্য একটু একটু করে স্বপ্ন দেখাগুলো ছেড়ে দিয়ে রান্নাঘর আর ন‍্যাপির ভাজে স্বপ্নগুলোকে লুকিয়ে রেখে সুখী গৃহিণীর মোড়কে কখন যে আস্তে আস্তে চাপা দেয় ইচ্ছেগুলো মনেই থাকেনা।
        ...."আচ্ছা গুড়িয়া,কোথায় বেড়াতে যাওয়া যায় বলতো আমার পরীক্ষার পর? তোমার পছন্দই শেষ কথা।"...হাসি পায় পরমার এতোদিন প্রতীম আর ছেলে জায়গা ঠিক করেছে ও গেছে সাথে পুটলির মতো। আজ কেউ ওকে জিজ্ঞেস করছে বেড়াতে যাবে কোথায়। কত ছবি দেখায় দুর্গা,সুন্দর সুন্দর ছবি মনটা ছুঁয়ে যায়। "এই শোন আমি অত ছুটে ছুটে ঘুরতে পারবোনা,আমি বেশ এক যায়গায় যাবো,আর বরফের পাহাড় দেখবো বসে নিরালায়। "আচ্ছা দেখছি তোমার মনটা কি করে ভরানো যায়।"...পরীক্ষার পর সবাই মিলে নৈনিতাল আর কৌশানি ঘোরার প্ল‍্যান হলো। রোহন একটু আপত্তি করছিলো অফিসের কথা ভেবে। কিন্তু গুড়িয়া আর গুন্ডি মিলে মানিয়ে নিলো অনেক ঝামেলা করে।"সবার কাজ ইমপর্টেন্ট আর আমার কোন কাজ নেই।"...একটু খারাপ লাগলো দুর্গার শেষে ইগোর লড়াইয়ে ওর সম্পর্কটাও যেন অদ্ভুত টানাপোড়েনে,মাঝে মাঝে অজানা লাগে রোহনকে।
     কদিন এক ঝোড়ো হাওয়ায় মিলিয়ে দিলো পাহাড় আর নদীকে আবার। পরমার হাসিমুখটাও খুব ভালো লাগলো সবার,একসাথে হৈ হৈ মজা আর পাহাড় দেখা। অদ্ভুত এক নির্মল আনন্দ, সবাই যেন একদৌড়ে পৌঁছে গেলেন সবার মনের কাছাকাছি। বাড়ি ফেরার আগে মন কেমন করলো সবারই। ইশ্ আবার সেই কাজ আবার যান্ত্রিক জীবন!তবুও ফিরতে হবেই। কিছু করার নেই,হয়ত বা এই ভালোলাগার ছোট মুহূর্তগুলোই থেকে যাবে উজ্জ্বল রঙিন ছবিগুলোতে।
                       ছোটছোট অভিযোগ,মান অভিমান ভালোবাসায় জীবন কাটতে কাটতে হঠাৎই এক ঝোড়ো হাওয়ার আভাস পেলেন পরমা।"মা ভীষণ গুড নিউজ আমাকে হয়ত ইউ কে তে চলে যেতে হবে যখন বেটার চান্স পেয়েছি তখন আর ছাড়বোনা।"...মুখটা শুকিয়ে যায় পরমার,"রোহনকে বলেছিস,কিছু বলেছে,ও রাজী? আমি কি করে থাকবো রে তোকে ছেড়ে?"
...."এই শুরু হয়ে গেলো তো?তোমরা চলে আসবে,কখনো আমিও চলে আসবো। কয়েকটা তো বছর দেখতে দেখতে কেটে যাবে।".." এখানে করা যায়না? দেখনা।"..."সাতকোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী, রেখেছো বাঙালি করে মানুষ করোনি।"..."গুন্ডি,মজা করিসনা,আমার ছেলেটার কথা একটু ভাব।"....সত‍্যিই বোধহয় মজাটা আর মজা থাকলোনা,একটু একটু করে মনে জমে থাকা মেঘ বৃষ্টি হয়ে আছড়ে পড়লো দুর্গার জীবনে। এলোমেলো হয়ে গেলো সব,রোহনের বারবারই মনে হয়েছিলো ক‍্যারিয়ার নিয়ে বড় বেশি বাড়াবাড়ি করছে দুর্গা। ওর মত একটা বি ই ইঞ্জিনিয়ারের বৌয়ের নামের পাশে ডিগ্ৰীর মেলা। এতোদিন তবুও একরকম ছিলো তাতেই ভালো করে পেতোনা বৌকে। এখন চলে যেতে চায় দেশের বাইরে। ওর মা বাবার মধ‍্যেও অনেকসময় দেখেছে এই পড়াশোনা নিয়ে মন কষাকষি। মা তো মেনে নিয়েছিলো,তবে দুর্গার এতো জেদ কেন? তবুও রোহনের সমস্ত অভিমান আর রাগ পড়লো মায়ের ওপর। এতো তোল্লাই কেউ দেয় বৌকে? যেমন মা,সংসার করেও সংসারী নয় ঠিক তেমন আস্কারা দিলো বাউন্ডুলে বৌমাকে।
        গুড়িয়া আর গুন্ডির কেমেষ্ট্রী ম‍্যাচ করলেও,গুন্ডি মেনে নিলোনা,কোন কিছুর সাথেই আপোশ করলোনা স্বপ্নের। পেছনে অনেক স্মৃতি আর মনকেমন ফেলে গুন্ডি চলে গেলো লন্ডনে, প্লেন হাওয়ায় ভাসার আগে মনে পড়ে গেলো গুড়িয়ার মুখটা, যার অকৃপণ মাতৃস্নেহ পেয়েছিলো ওর অতৃপ্ত জীবনে। তবে একটু একটু করে সরে গিয়েছিলো রোহনের জীবন থেকে,কেন যেন রোহনের মনে হয়েছিলো দুর্গা অনেক জোরে হাঁটছে ও চায় পাহাড়ে উঠতে,সূর্যের কিরণ চোখে মাখতে, ও সেখানে পৌঁছতে পারবেনা। পরমা খুব কষ্ট পেলো তবুও গলাতে পারলোনা সম্পর্কের বরফ। কারো জেদ কম নয়,ছেলের সাথে পারলেননা পরমা,দুর্গাকে বললেন,"গুন্ডি,তুই গুড়িয়াকে ছেড়ে থাকতে পারবি,একবার আমার কথা ভাবলি না? মেয়েমানুষের এতো জেদ কিন্তু ভালোনা।"..." মেয়েমানুষের এতো গুড়িয়া হওয়াও ভালোনা,একটু জেদ থাকা ভালো।"..."আমাকে ভুলে গেলি এভাবে?"...ফোনের ওপারে ফায়ারপ্লেসের পাশে বসা দুর্গার চোখটা ছলছল করে ওঠে তবুও একটু জোরে হেসে বলে," বিপদে পড়লে দুর্গা দুর্গা বোলো ঠিক পৌঁছে যাবো।"
     ......মাঝে কেটে গেছে কয়েকটা বছর,রোহন আর বেশি দেরি করেনি ডিভোর্সের পর,আবার বিয়ে করেছে তবে এবার আর ওর থেকে বেশি শিক্ষিত কাউকে নির্বাচন করেনি। তবে দুর্গার চেয়ে হয়ত একটু বেশিই সুন্দরী কুন্তলা। তবে সবার সাথে সবার ঠিক মেলেনা তাই কেন যেন পরমাকে কুন্তলার ভালো লাগলোনা। কিভাবে ও জেনে ফেলেছিলো দুর্গাকে খুব ভালোবাসতেন পরমা। তাছাড়া রোহনের মনের মধ‍্যেও পরমাকে নিয়ে একটু সংশয় ছিলোই। তাই পৈতৃক বাড়ি ছেড়ে প্রথমে আলিপুরে তারপর গতবছর অষ্ট্রেলিয়ায় চলে গেছে ওরা। দুর্গা একটু একটু করে মিলিয়ে গেছে পরমার কাছ থেকে,রোহনের বিয়ের পর ইচ্ছে করেই যোগাযোগ করেনি। হারিয়ে গিয়েছিলো হাজার মানুষের ভীড়ে। পরমার কাছে থেকে গিয়েছিলো পাহাড়ে তোলা কিছু রঙিন ছবি,আর গোপনে তুলে রাখা পুরনো আ্যলবাম।
       ...."এটাতো জানা ছিলোই পরমা,শেষকালে আমাদেরই থাকতে হবে। কে তোমার জন‍্য এইদেশে পড়ে থাকবে। প্রথমে তো দুর্গাই বাইরে যাওয়ার রাস্তা দেখিয়েছিলো। আমার ছেলেই বা কম কি?"...এখন পরমার বড্ড মনে হয় যদি একটা মেয়ে থাকতো হয়ত তাহলে হয়ত একটু কাছে পেতেন!
           আজকাল খেতে বসে প্রতীম বিরক্ত হন বাড়ি থেকে ভালোমন্দ রান্না খাওয়া যেন উঠে গেছে। অথচ একসময় এই পরমা কত অভিযোগ করতেন বাজার নিয়ে। আজকাল প্রায় এক বায়না রাতে খাবোনা,পেট ভর্তি। "এরকম করলে শরীর টিকবে তোমার!"..."ভালো লাগেনা গো,কার জন‍্য করবো?"..." এই বুড়োটার জন‍্যই নাহয় করলে। এইসব করে সুগারটাও কিন্তু বাড়ছে।"
                  সবাইকে নিয়ে থেকেছেন পরমা,স্বভাব ছিলো হাসিখুশি,মনটা একদম ছেলেমানুষীতে ভরা হয়ত সেই মনের হদিস একজনই পেয়েছিলো। দেখতে দেখতে প্রায় তিনবছর হলো রোহনরা অষ্ট্রেলিয়া গেছে,কুন্তলা মা হতে চলেছে,মনটা ছুঁয়ে যায় ওদের। তাই সামনে বছরও ওদের আসা হবেনা হয়ত।
                       হঠাৎই এর মাঝে ভোরবেলা উঠে কলে জল নেই দেখে পাম্প চালাতে গিয়ে মাথাটা ঘুরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় পরমা। দেওয়ালে মাথাটা ঠুকে যায় অসহ‍্য যন্ত্রণায় শরীর অসাড় হয়ে যায়। প্রতীম বেশ কিছুটা বাদে ঘুম থেকে উঠে দেখেন পরমাকে,আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে যান রক্ত দেখে। ফোন করে খবর দেন পাশের বাড়িতে,ছুটে আসে ওরা। পরমাকে নার্সিং হোমে নিয়ে যাওয়া হয় সঙ্গে সঙ্গে আই সি ইউ,অনেকটা রক্ত বেড়িয়ে গেছে তার সাথে হাই সুগার। তখনো জ্ঞান ফেরেনি পরমার,তবে প্রতীমকে জানানো হয় পরমার অপারেশনটা জরুরী খুব বেশি দেরি করা যাবেনা। কাঁপা হাতে বন্ডটা সই করে দেন প্রতীম। ঠাকুরকে বলেন ওকে ফিরিয়ে দিতে,থাকুক ওর ঘর আলো করে।
                   আবছা আলো আঁধারিতে অনেকগুলো আলোর স্ফুলিঙ্গ ভাসতে থাকে পরমার চোখের সামনে মনে হয় কোথায় যেন হারিয়ে যাচ্ছেন। কারা যেন ডাকছে কথা বলছে,অথচ চোখ খুলতে পারছেননা।
....." কেমন আছেন এখন? ভাগ‍্যিস কাল ঠিক সময়ে আপনার অপারেশন হয়েছিলো। আপনার গুডলাক ওনাকে পাওয়া গেছে,ওনাকে তো পাওয়াই যায়না বেশিরভাগই বাইরে থাকেন।চোখ খুলুন আর ভয় নেই ডঃ এসেছেন।".....আস্তে আস্তে চোখ খোলে পরমা,মাথাটা এখনো খুব ভারী। একটু আবছা লাগছে চারদিক তবুও আবছা চোখেই যেন স্বপ্ন দেখলো ওর হাতের মুঠোটা সযত্নে নিজের হাতে রেখেছে এক আত্মপ্রত‍্যয়ী হাত যে হাত শুধুই বলে যায় আমি তো আছি চিন্তা কি?...জড়ানো গলায় পরমা বলেন..." গুন্ডি"
          পরমার মাথায় হাত রেখে দুর্গা বলে," নিশ্চয় দুর্গা নাম জপ করেছিলে গুড়িয়া তাই তো আমায় আসতে হলো।"
সমাপ্ত:-

          
          

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...