Skip to main content

মায়ের ইচ্ছে


মায়ের মুখে আজ করুণ হাসি,
কৈলাশেতে ফিরতে হবে,
দিন যে আর নেই বেশি।
আজ মহানবমী পূজার ক্ষণে,
আনন্দধারা সবার মনে,
তবুও বিষাদ মনের কোণে।
শারদোৎসবের সুখস্মৃতি,
অনেক মধুর অনুভূতি।
ঠাকুর দেখা ঘুরে ঘুরে
নতুন জামা কাপড় পরে।
জমিয়ে আড্ডা,সাজাগোজা
সঙ্গে থাকে পেটপূজা।
মাগো তুমি থাকো কদিন
এই তো সেদিন এলে।
এরই মাঝে কেন তাড়া
চলে যাবে বলে?
আজ নবমী পূজোর দিনে,
শান্তি দিয়ো সবার মনে।
বিশ্ববাসীর মঙ্গল করো
ধনে ধান‍্যে জগৎ ভরো।
প্রণাম তব শ্রীচরণে
সন্তানেরে রেখো মনে।

    #মহা_নবমীর প্রীতি ও শুভেচ্ছা#

#মায়ের_ইচ্ছে#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

'সবসময় ফোন করলেই নাকে কেঁদোনা তো মা। সম্পত্তি দেবার সময় তো ছেলেদেরকে সব লিখে দিলে। আমরা দিতে চাইনি তবুও বললে তোদের ভাল বিয়ে দিয়েছি। কি হবে তোদের এইটুকুতে ভাগ বসিয়ে? ভাগ‍্যিস তখন কিছু টাকা নিয়েছিলাম আমরা নাহলে তো কিছুই পেতামনা।'
        এক নিশ্বাসে কথাগুলো বলে যায় আরতি ফোনের ওপারে চুপ করে শুনতে থাকেন মনোরমা। সত‍্যিই তো দোষ হয়ত তারই,তাই এখন কষ্ট পাচ্ছেন। স্বামী যেটুকু রেখে গিয়েছিলেন তাতে তো বেশ চলে যেত। কিন্তু তখন ভেবেছিলেন বুড়ো বয়সে দেখবে কে? ওরাই তো দেখবে। এই বলে নিজের জিনিসগুলো লিখে দিলেন।তাই মৃদু স্বরে বলেন,' আসলে মনের দুঃখের কথা কার কাছে বলি বল,তাই একটু তোদেরই বলি।'
  ....' আমাদের তো সংসার আছে,নিজেদেরই ঝামেলার শেষ নেই। আমার শরীরও ভাল থাকেনা। কোনটা সামলাবো বল? ছেলেরা যখন সব নিয়েছে ওরাই দায়িত্ব নিক। এই কথাগুলো আমার শুনে কি লাভ! এরপর থেকে ভাল কিছু বলতে পারলে বলবে। আর নাহলে বলোনা। ধুপ করে ফোনটা কেটে দেয় আরতি।
     চোখের কোলটা ছলছল করে ওঠে মনোরমার একসময় ওদের খুঁটিনাটি সব কথা সারাদিন শুনতে হত। বিয়ের আগে মেয়েবেলার কথা,বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ির সমস‍্যার কথা সবটাই। আজ হয়ত আর তার জন‍্য ওদের সময় নেই। এর মধ‍্যে বৌমা শুকনো মুড়ির বাটি রেখে চলে গেল। 'শুকনো মুড়িটা আজকাল চিবোতে খুব কষ্ট হয়‌। একটু দুধ বা দই হবে?'...' আপনার আর সারাদিন কি কাজ মা,ঐ তো শুয়ে বসে থাকা। মেয়েরা পড়াশোনা করে ওদের লাগে খেতে।' কিছুই বলার নেই শুধু মুড়িটা আজকাল আর গলা দিয়ে নামতে চায়না। নিজের হাতে যখন সংসার ছিল তখন ভালোবাসতেন মুখরোচক কিছু খেতে। দুধ,দই তো থাকতোই সবসময়। কখনো পায়েশ বা ঘুঘনিও করতেন। এছাড়া কিছু না থাকলে একটু ছোলাসেদ্ধ,মুগডাল সেদ্ধ করে আয়েশ করে শশাকুচি দিয়ে খেতেন রোদে পিঠ দিয়ে। স্বামীর মৃত‍্যুর কিছুদিন বাদেই ভাগ হয়ে গেছেন মনোরমা একমাস বড় ছেলের কাছে আরেক মাস ছোটছেলের কাছে। কারো ভাগে একদিন বেশি পড়লেই শুরু হয় রেষারেষি। আর কেউ কোথাও গেলে তখন হাত পুড়িয়ে খেতে হয়,তবে তখন যা হোক নিজের মত একটু মুখরোচক করে রাঁধতেন। বৌয়েরা মোটেই রান্নাঘরে ঢুকতে দিতে চায়না মনে হয় যেন কিছু চুরি করে পালাবেন। আজ ভাবলেও খারাপ লাগে একদিন এই সংসার তারই ছিল। এখন তো ভুলতে বসেছেন একসময় হাসতে হাসতে কুড়িজনের রান্না করেছেন যৌথ পরিবারে।
       মায়ের ফোনটা পাবার পরই গজগজ করতে থাকে আরতি,নিজের মেয়েদের নিয়ে ঝামেলার শেষ নেই ওদের বাচ্চাকাচ্চা সংসারেরই কত ঝামেলা তারপর আবার মায়ের নানা সমস‍্যা। ভুলেই গেল সবার আগে ও মায়ের সন্তান মানে মা না থাকলে হয়ত আজ পৃথিবীটাই দেখা হতনা।
বুড়ো মানুষ ছেলেরা যেমন রেখেছে থাকো,এই তো ছেলে ছেলে ছিল। এবার বোঝ কেমন লাগে এই আরকি। পাশের থেকে মনতোষ আর না বলে পারেনা,'মাকে অমন করে না বললেই পারতে। সংসারে বাতিল হয়ে যাওয়ার যে কি দুঃখ তা যার হয় সে জানে। আমাদেরও আসবে এমন দিন। একসময় তোমার বাচ্চা হওয়ার পর মা তো কম যত্ন করেননি। অনেকদিন বাপের বাড়িতে ছিলে।
  মুখ ঝামটা দেয় আরতি,' মেয়ের বাচ্চা হলে কে দেখবে শুনি? নাতি নাতনিদের জন‍্য করবেনা? আমিও তো করছি মেয়েদের জন‍্য।'
           সংসারের অকেজো মনোরমার শরীরটা একটু একটু করে খারাপ হয় হয়ত মনটাই এর জন‍্য দায়ী। আজকাল আর নিজের দুঃখের কথা কাউকে বলতে ইচ্ছে করেনা। এর মাঝেই ছোটছেলে বাড়ি ছাড়লো। সবাই বড় বৌমাকে অনেক বোঝালেও রিম্পা কিছুতেই রাজী হলনা শ্বাশুড়ির পুরো দায়িত্ব নিতে তাই ছোটছেলের পালার একটা মাস স্টোভে ফুটিয়েই খেতে হত মনোরমাকে। কোনদিন রান্না করতেন কোনদিন বা মুড়ি খেয়ে কাটাতেন। অথচ একসময় কত রমরমা ছিল এই বাড়িটা আজ যেন ধূ ধূ করে।
              মাঝে খুব পেটখারাপ হল একদিন বাথরুমে যেতে গিয়ে পড়ে গেলেন পা পিছলে।
ছোটছেলে খবর পেয়ে এলো,' মা তোমার এখানে খুব কষ্ট,বৌদিও তোমায় তেমন যত্ন নেয়না। একা একা পড়ে থাকো। চলো আমার কাছে গিয়ে থাকবে কদিন।'...মনোরমা ভাবতে পারেননি কদিন বলতে ওখানেই থেকে যেতে হবে তাকে। অবশ‍্য বিনিময়ে শেষ সম্বলের জমানো টাকা আর গয়নাগুলো ওরা নিয়ে নিয়েছে। নিজের ঘরের খাট বিছানা সবই এখন ছোটছেলের বাড়িতে চলে এসেছে বড় মনটা হু হু করে নিজের ফেলে আসা সংসারটার জন‍্য। এমন অবস্থা করলো ওখানে ফেরার রাস্তাই ওরা বন্ধ করে দিলো। মেয়েদের বিরক্ত হওয়াটাই স্বাভাবিক। হে ভগবান মানুষ কেন যে বৃদ্ধ হয়! এ কেমন অসহায় মাতৃত্ব একসময় ছেলেমেয়ে মানুষ করেছেন একা হাতে, আজ তাকে বোঝা বলে ভাবছে ওরা। একবেলা খাওয়ানোর হিসেব কষে।
        বড় ইচ্ছে করে একবার শ্বশুরের ভিটেয় যেতে,ওখানে গিয়ে ঠাকুর দর্শন করতে। কিন্তু কে নিয়ে যাবে,নিজেই যে একসময় চলে এসেছেন ঐ বাড়ি ছেড়ে। মেয়েরা বিরক্ত হয় ওদের কিছু বললে।
            সেদিন মায়ের সাথে রাগ করে কথা বলে পরে খারাপ লাগে আরতির,তবুও ভাবে কি আর করবে নিজেরই ঝামেলার শেষ নেই। তারপর থেকে মাঝে মাঝে টুকটাক কথা বলেই ছেড়ে দেয়। তবুও মনোরমা একদিন বলেই ফেললেন একদিন ইলিশমাছ আর ধোকার ডালনা খুব খেতে ইচ্ছে করে। কতদিন খাইনি,অথচ একসময় ইচ্ছে হলেই ডাল ভিজিয়ে শিলে বেটে নিতাম করে ফেলতাম রান্না। আসলে এখন রান্নাঘরটাও অচেনা হয়ে গেছে। ওটা তো বৌমাদের রান্নাঘর,তার নিজের তো কিছু নেই। হয়ত বৌমারা বলেই বসবে এত বয়স হয়ে গেল তবুও নোলা দেখো। তাই মেয়েকেই বললেন।
          আরতিও শুনে ভাবলো,মায়ের যেমন আব্দার যখন তখন এমন কথা বলেনা! এখন কি সম্ভব ঐসব রান্না করে অতদূরে দিয়ে আসা! তবুও ভাবলো না না দেখা যাক কবে যেতে পারে মায়ের কাছে,পূজোর আগে একদিন গেলে ঠিক রান্না করে নিয়ে যাবে মায়ের জন‍্য। সবসময় নিজের শরীর ঠিক থাকেনা তাই মাঝে মাঝে রাগ হলেও মা তো..একসময় হাসিমুখে কত কি রান্না করে খাইয়েছে ওদের অক্লান্ত পরিশ্রম করে উনুনের ধারে বসে। সত‍্যি একদিন যেতে হবে। মনোরমারও খাওয়ার কথা বলে খারাপ লাগে সত‍্যিই তো মায়েদের কি সন্তানের কাছে চাইতে আছে? মায়েরা যে অন্নপূর্ণা,তার আবার কি চাহিদা থাকতে পারে আর সত‍্যিই তো বয়েস কম হলোনা।
           জীবনের দুইপ্রান্তে দুই নারী,একজন মা আর আরেকজন মেয়ে। আরতি এখনোও সংসারে মূল‍্যবান আর মনোরমা মূল‍্যহীন। তার থাকা না থাকায় আর কি এসে যায়। এই সংসার বড় নিষ্ঠুর,আজ যে রাজা কাল সে ফকির। আজ যে সংসারের গিন্নী কাল হয়ত সে ভিখারিনী। হাত পেতে বসে থাকতে হবে কখন পাতে একটু ভাত পড়বে।
           আরতি দিদা হয়েছে বেশ কিছুদিন,সারাদিন নানা কাজে কেটে যায়। তবুও সবসময় ছেলে,মেয়ে আর শ্বশুরবাড়ির লোকের মন পায়না। সারাদিনে নিজের কথা ভাবার সময় কই। মাকে দেখতে যাবারও সময় হয়না,চোখের আড়ালে থাকলেই মনে হয় শান্তি। কি বা করতে পারবে দুঃখের কথা শুনে?
              সামনেই পূজো অনেক কাজ, প্রচুর কেনাকাটা ঘর পরিস্কার করা সবই একহাতে করা। ছেলেমেয়ে সবাইকে জিজ্ঞেস করে নেয় পূজোতে তাদের কি চাই,নাতনিদের জন‍্য কি কিনবে? এক এক জনের এক এক রকম চাহিদা। ' মা একটু ব্র‍্যান্ডেড দোকান থেকে জিনিস কিনো,গতবার তোমার দেওয়া শার্টটা তো ও পরতেই পারলোনা। আর আমার মেয়ের জামাটা একটু নরম দেখে কিনো। '...সবার কতরকম চাহিদা,এর থেকে টাকা দেওয়াই ভালো। তাতেও তাদের আপত্তি,নেবেও আবার খুঁতও ধরবে।
....হঠাৎই মনে হল মাকে তো জিজ্ঞেস করা হলনা এবার কি কিনবে বেডকভার না ছাপাশাড়ি,তাঁতগুলো তো সব তুলেই রাখে। যদিও ওর বর রাগ করে মাকে একটু ভালো শাড়িই দিয়ো,বেডকভার অন‍্যসময় দেওয়া যাবে,এ আবার কি। মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে আরতির কাউকে কোন কিছু দিয়েই সন্তুষ্ট করা যায়না। মেয়েদের জীবনটা বড় অদ্ভুত সবার কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে নিজের ইচ্ছেগুলো মরে যায় কে জানে। হয়ত বা নিজের জন‍্য বাঁচা হয়না কখনোই।
           দুপুরে খাওয়ার পর মাকে ফোন করে,একি অনেকক্ষণ ধরে রিং হয়ে যাচ্ছে ফোনটা ধরছেনা কেন,এখনো তো ঘুমোয়না। না পেয়ে ভাইকে ফোন করে,কি বলে শোনার জন‍্য। জানতে পারে মায়ের খুব শরীর খারাপ,বমি পেটব‍্যাথাতে বিছানা থেকে উঠতে পারেনি। আরতি রাগ করাতে ভাই বললো মা বারণ করেছিল খবর দিতে সামান‍্য কারনে বলেছে ওর নিজেরই কত ঝামেলা।
         গলার কাছে একদলা মনখারাপ ধাক্কা মারে আরতির সত‍্যিই বোধহয় ভীষণ স্বার্থপর হয়ে গেছে নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে ভাবতে। আজ মনে হলো মাকে নতুন শাড়ি পরানোর চেয়ে ইলিশমাছ আর ধোকার ডালনা খাওয়ানোটা বেশি দরকার। কে জানে যে মা কখনো মুখ ফুটে কিছু বলেনা তার কতটা মনের ভেতরের কথা বেড়িয়েছে ঐ ইচ্ছেগুলোতে। ঘন্টা মিনিটের হিসেবগুলো বড় দীর্ঘ লাগে আরতির সবাইকে খুশি করতে গিয়ে মায়ের খুব ছোট ইচ্ছেটাকে দাম দিতে পারেনি।
           বড় আনচান করে কখন যাবে মায়ের কাছে। না না ধোকার ডালনা আর রাঁধতে ইচ্ছে করলোনা শুধু মনে হল এক্ষুনি ছুটে চলে যায় মায়ের কাছে দুহাতে গলা জড়িয়ে বলে,' অভিমান কোরোনা মা,আমি পূরণ করবো তোমার ছোট ছোট ভালোলাগা গুলো। কতটুকুই বা চাহিদা তোমার,আমরা তোমার অপদার্থ ছেলেমেয়ে যারা এটুকু পূরণ করতে পারিনা!
                এবারের পূজোটা শুধু মায়ের ইচ্ছেপূরণের পূজো। ভাইয়ের বাড়ি থেকে মাকে আনার সময় মায়ের দূর্বল জরাজীর্ণ হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় যত্নে ধরে আরতি। একসময় ঐ হাতদুটো কত বিপদে আর মনখারাপে আগলে রেখেছে ওদের। একচিলতে হাসি ফুটে ওঠে মনোরমার মুখে,হয়ত ভরসা পান তার পাশে অন্তত কেউ আছে। কোনদিন বোধহয় ঐ মিঠে হাসির আস্বাদ আরতি এত কাছ থেকে অনুভব করেনি।আসলে ওই তো মায়ের সবচেয়ে বড় সন্তান,ভাইবোন ছোট তাই আজ যেন মনে হল মায়ের আদরের পুরোটাই গায়ে মাখতে। ছোটবেলার মত মায়ের আঁচলের ওমটা বড় মিঠে লাগলো আজ। একমুঠো সাদা শিউলির মত মায়ের সাদা আঁচলখানা মুঠো করে ধরে রাখতে ইচ্ছে করলো আরতির। এই বয়সে এসে আজ যেন আরতির কাছে মাতৃত্বের এক নতুন আস্বাদ মন ছুঁয়ে যায়।
                    ভোরের মিষ্টি আলোয় চোখে পড়লো বাঁশের খুঁটির প‍্যান্ডেলগুলো। মায়ের আসার আয়োজন হচ্ছে আনন্দে সাজছে প্রকৃতি। আরতির ঘরেও আজ মায়ের পায়ের ছোঁয়া পড়লো,কে জানে আসছে বছর পূজোয় আর মাকে পাবে কিনা! চোখটা ভরে আসে,ইশ্ কেন যে এমন সব কথা মনে আসে। কালকের কথা নাই বা ভাবলো আজ,হঠাৎই কানে আসে এফ,এমের গান জিন্দেগি এক সফর হ‍্যায় সুহানা, ইয়হা কল ক‍্যায়া হো কিসনে জানা।
          .....'মা ধোকার ডালনাটা কেমন হয়েছে গো? তোমার মত হয়না কিছুতেই। কি যে মিষ্টি গন্ধ হত ঝোলটাতে। আর ইলিশ ভাপাটা?'
....আচ্ছা মা তোমার মনে পড়ে বাবা গঙ্গার তাজা ইলিশ আনলে তুমি কি সুন্দর যেমন তেমন করে টিফিন কৌটোতে সরষে মাখিয়ে,কাঁচা লঙ্কা আর সরষের তেল দিয়ে বসিয়ে দিতে। কি অপূর্ব সেই স্বাদ!এখনো মুখে লেগে আছে।'
....'তোর রান্নাও ভীষণ ভালো হয়েছে মা,কতদিন বাদে ইলিশ মাছ খাচ্ছি। তোর বাবাও খুব ভালোবাসত ইলিশ মাছ খেতে।' মা মেয়ে দুজনের চোখটা ছলছল করে ওঠে বাবার কথা মনে করে। আজ আরতির বড় মনে পড়লো সদা হাসিমাখানো বাবার মুখটা। মনটা একটু হলেও ছুঁয়ে গেল সবার জন‍্য ব্র‍্যান্ডেড পোশাক আর দামী শাড়ি কেনার সাথে সাথে মায়ের একচিলতে ছোট ইচ্ছেটুকু পূরণ করতে পারলো।
             শরতের নীল আকাশের মিঠে আলোয় আজ মায়ের মিষ্টিমুখের হাসিটা বড় উজ্জ্বল,আজ যে ওরা গ্ৰামের বাড়িতে যাচ্ছে মাকে ঠাকুর দেখাতে আর পুরোনো স্মৃতি ফিরিয়ে দিতে। গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে গ্ৰামের ধূলোমাখা পথের গন্ধটা আজ বড় মিঠে লাগে মনোরমার। একসময় পাল্কিতে করে এই পথেই বৌ হয়ে গিয়েছিলেন,মনটা চলে যায় অতীতে। রেডিওতে বাজে মধুর আমার মায়ের হাসি চাঁদের মুখে ঝরে...মা আছে ওর সাথে এটাই হয়ত এবার পূজোর পরম পাওয়া।

সমাপ্ত:-
      
          

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...