#বৌমারূপী_বোমা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
'মা'...
'এই শুরু হল ডাকাডাকি,ডাকুক আজ আর সাড়া দেবোনা।' কানটা চাপা দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়েন কমলা। গায়ে একটা হাল্কা ধাক্বা দেয় অমল,' এই যে হয়ে গেল ঘুমের বারোটা এবার উঠে পড়।'....'উঃ আর জ্বালিয়োনা তো,তুমিও ঘুমোও।'..' তাহলেই হয়েছে,প্রথম আ্যলার্ম বেজেছে। আবার দশমিনিট বাদে বাজবে। তাতেও কাজ না হলে দরজা ঠক্ ঠক্ করবে।'
.....' করুক বলে দিয়ো আমার আজ খুব হাঁটু ব্যাথা উঠতে পারবোনা।....' ওরে বাবা আমি! এই আমিও শুয়ে পড়লাম আমার খুব কোমরে ব্যাথা।'
দুজনেরই হাল্কা ঝিমুনি এসেছে তারমধ্যে প্রায় কুড়ি মিনিট পার হয়ে গেছে। রিমঝিম কোন সাড়া না পেয়ে আবার ডাকে 'বাবু...উঠে পড়ো। অনেকক্ষণ ওয়েট করছি। মাকে ডেকে দাও।'
কোন উপায় না দেখে অমলকেই বেরোতে হয়,' মানে বৌমা তোমার শাশুড়ি বলছিলো আজ হাঁটুতে খুব ব্যাথা। আমারও কোমরটা...
মুচকি হাসে রিমঝিম,' ও বুঝেছি,টনটন করছে। কিচ্ছু হবেনা মা না গেলে না যাক। তুমি যাও হেঁটে একেবারে দুধ নিয়ে ফিরবে। তোমার সুগারটা বেড়েছে কিন্তু। সামনেই অনেকগুলো নেমন্তন্ন আছে।'....আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই তাই বিছানার মোহ কাটিয়ে তৈরি হন। কি সাঙ্ঘাতিক মেয়ের খপ্পরে পড়েছেন। প্রথমটা এমন ছিলোনা,রিটায়ারমেন্টের পর একদম পেছনে লেগে রয়েছে একটার পর একটা কাজ রেডি করে রেখেছে। একটু বসতে দেয়না ওদিকে নবাবপুত্তুর নাকি অনেক পরিশ্রম করে তাই ঘুমোচ্ছে। নাহ্ দেরি নয় আজ কমলার ভাগ্য ভালো একঘন্টা এখন ঘুমোবে।
দুধের প্যাকেট ঝুলিয়ে ফেরার সময় চমকে ওঠেন কমলা রাস্তার মোড়ে এসেছে ফুল বেলপাতা কিনতে। ' এ কি তুমি যে বললে তোমার হাঁটু ব্যাথা?'..' কার পাল্লায় পড়েছি জানোনা তো,আমাকে ব্যাথার মলম দিয়ে গেছে। বলেছে এ বেলা ভালো না লাগলে সন্ধ্যেবেলা ওর সাথে ইভিনিং ওয়াকে যেতে। বাবা দরকার নেই,সিরিয়াল বন্ধ করে কে যাবে হাঁটতে। আর আজতো বৃহস্পতিবার আমাকে বেরোতেই হত। চল দুপাক হেঁটেই ফিরি।'
কমলা আর অমলের একমাত্র ছেলের বৌ রিমঝিম। বলা নেই কওয়া নেই একদিন দুম করে বললো রিমঝিমকে বিয়ে করবে। যাক নিজে পছন্দ করে যা পারে করুক তবে দেখতে ভালোই মেয়েটাকে তবে একটু বেশি রোগা। ছেলে বললো মেনটেন করে নিজেকে। আসলে ওর মা বাবা খুব মোটা তো তাই। বিয়ের কিছুদিন বাদেই শুরু হল ঠোকাঠুকি,কমলা রান্না করলে বৌয়ের পছন্দ হয়না আর বৌমা রাঁধলে ওদের ভালো লাগেনা। অমল তো একদিন বলেই ফেললেন এই জেলখানার খাবার গলা দিয়ে নামছেনা। ' তোমাদের বাড়ি যখন গেছি তখন তো এমন রান্না খাইনি,বেয়ান তো বেশ ভাল রাঁধেন।'...' ঐ খেয়ে খেয়ে তো এমন মুটিয়েছেন। আমি ওগুলো খেতামনা। আলাদা করে নিতাম।'...কমলা বলে ফেলেন,' তাহলে এখানেও তোমার মত আলাদা করে নিয়ো।'..' বেশ তাই করে নেব,তবে লোক এলে বোলোনা যেন বৌমা আলাদা রান্না করে খায়। বৌমা মানেই তো খারাপ।'...কমলা বেশি কথা বলেননা। কি দরকার অযথা ঝামেলায় গিয়ে। শুধু বললেন,' আমার একটা কিছু হলেই হল,তোমার শ্বশুরমশাই একদম খেতে পারছেননা কি করি বলো।'
মাঝে ঝামেলায় পড়লো ওদের ছেলে মায়ের রান্না খাবে, না বৌয়ের রান্না খাবে? একদিন মিনমিন করে বললো মাঝামাঝি থাকলে হতনা,মানে মা একটু হাল্কা রান্না করলে তুমিও একটু রিচ।'...' উত্তর পেলো তা হয়না।'
ওপরে ওপরে ভাব দেখালেও দুজনেই চলতে লাগলেন দুজনের মত। রিমঝিম বলতো এত চব্যচোষ্য করে খাচ্ছেন তো মেডিক্লেমের প্রিমিয়ামটা বাড়িয়ে দিন। ওর শ্বশুরমশাই বলতেন জীবনে ভালো করে খেলামনা তো কি করলাম।...' মা বলে দাও,বিছানায় পরে থাকলে কে দেখবে,আমি পারবোনা।'...' তা আর জানিনা বাপু,আমার আয়া রাখার সামর্থ্য আছে বলে দাও।'...সত্যি এখনকার মেয়েরা বটে একদম মুখের ওপর না বলে দেয়। এদিকে নিজের খাওয়ার বেলায় ঠিক আছে ডিমের সাদা অংশ খাচ্ছে চিকেন মাছ সবই খাচ্ছে রুগীর পথ্য করে।
সত্যি বোধহয় বৌমারা কখনো মেয়ে হয়না। এদিকে রিমঝিম ভাবে শ্বশুরবাড়ি কখনো নিজের বাড়ি হয়না। একদম সমালোচনার আখড়া একটা। আর ওর বর ভাবে,ছেলেদের যে কি কপাল! মা আর বৌয়ের খপ্পরে পড়ে একেবারে স্যান্ডউইচ। মায়ের চিকেনকষা খাবে না বৌয়ের স্টু খাবে। মায়েরটা না খেলে ছলছল চোখে বলবে,' এতোটা বদলে গেলি বাবু। '...'আর বাড়াও কোলেস্টরেল বলে বৌ পাশ ফিরে শোবে।'
সন্ধ্যেবেলাও রেহাই নেই,অফিস থেকে ফিরে এসে হাঁটতে নিয়ে যাবে, নিজেও বেরোবে। এর মাঝে এসেছে ছোট সদস্য ওদের সংসারে। যদিও কমলাকে ওর দিদি বলেছিল,' শোন বেশি ঘাড় পাতিসনা,তোর ওপরেই সবটা ফেলে চাকরিতে চলে যাবে।'কিন্তু এড়াবো বললেই তো এড়ানো যায়না কিছু দায়িত্ব নিতেই হয়। বৌমা শুনিয়ে গেল এমনিতেই ঠাম্মু,দাদু হবে তোমরা একটু জ্বালা নেবেনা। আর ছেলেটাও হয়েছে তেমনি একদম দাদু ঠাম্মাকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছে। নতুন দায়িত্ব পেয়েছে ওরা অমলের কাজ ওকে পড়তে বসানো আর কমলার কাজ আঁকিবুকি কাটানো রং পেন্সিল দিয়ে। অমল একটু আপত্তি করেছিলেন। উত্তর পেয়েছিলেন,'নিজের ছেলেকে তো প্রথমে ঠাকুরদার কাছে লেখাপড়া শিখিয়েছো। আর আমার ছেলেটা কি অমানুষ হবে? এমন করলে আমার আর এখানে থাকা হবেনা।'....কমলার দিদি বলেন,' চালাকের ডিম তোর বৌ,সব দায়িত্ব তোদের ঘাড়ে দিয়ে মজায় আছে। '
রিমঝিমের দাদা ওর চেয়ে অনেকটা বড় তাই অমলের চেয়ে ওর বাবার বয়সটা অনেক বেশি। হঠাৎই মারা গেলেন স্ট্রোকে,সবাই ভালো মৃত্যু বললেও মানতে পারলোনা ও। আসলে বাবার অনিয়মই এইজন্য দায়ী। বাবার মত কি কোনদিন কেউ হবে। অত দাপুটে মেয়ে যাকে ওরা একটু ভয় করেই চলেন তার ফোলাফোলা চোখদুটো দেখে খুব মায়া হল অমলের বললেন,' জানি আমি তোমার বাবার মত অত আদর দিতে পারবোনা। তবুও চেষ্টা করবো।'...হঠাৎই মনে হয়েছিল এরা খুব একটা খারাপ নয়। একটু সহানুভূতি আছে ওর জন্য।
বাবা চলে যাওয়ার কিছুদিন পর থেকেই ওদের পেছনে লেগেছে মেয়েটা। নিত্য হাঁটতে পাঠাবে কোন ছাড় নেই। বাজার রান্নায় শ্যেন দৃষ্টি খাওয়া দাওয়া সবটাতেই থাবা বসিয়েছে। আজকাল কমলাও বেশি রান্না করতে পারেননা তাই মধ্যপন্থার রান্না হয় রিমঝিমের ব্যবস্থায়। অবশ্য কমলা বেশ তন্বী হয়েছেন আর অমলও বেশ ঝরঝরে। কমলার দিদি এসে বললেন,' না খেয়ে আর রাজ্যের পরিশ্রম করে কি হাল করেছিস রে। একটা গয়নাও তো হবেনা আর কি সবই ঐ বৌয়ের হবে,কি সুন্দর গোলগাল ছিলি।'...' কি করি বল,অশান্তি ভালো লাগেনা তাই ও যা বলে চেষ্টা করি করতে। ডাক্তারও তাই বলছে রে মানে ওজন কমাতে।'...' সবার বড় ডাক্তার তো তোর বাড়িতেই আছে সবজান্তা বৌমা।'
চা দিতে এসে কথাগুলোর কিছুটা কানে যায় ভাল লাগেনা রিমঝিমের। বৌমারা বোধহয় এদের জন্মশত্রু যা করে তাই খারাপ। ইচ্ছে করেই বিকেলে মাসিমণিকে প্রস্তাব দেয়,' চলোনা, ছাদে বাবা আর মা কত গাছ লাগিয়েছে দেখবে।'...' ওরে বাবা,আবার ছাদে! আমার খুব হাঁটু ব্যাথা,থাক বাপু।'..'কেন গো,মা আর তুমি তো বেশি ছোট বড় নও। একসময় কত পেয়ারা গাছে উঠেছো। চলতো না গেলে মিস্ করবে। আমি হেল্প করবো"..কমলা বেশ চটপট করে ছাদে উঠে গেলেন,না উঠে উপায় কি? দিনে কতবার উঠতে হচ্ছে ছাদে। এমন ভাগ্য তো নেই যে বসে আরাম নেবেন। দিদির তো নাজেহাল অবস্থা,একটু মুখ টিপে হাসে রিমঝিম,' মাসিমণি তুমিও একটু হাঁটো,তাহলে ব্যাথা কমে যাবে।' মনে মনে চিড়বিড় করেন কমলার দিদি এই বৌ তো মহা পাজি কেমন ঘুরিয়ে নাক দেখাচ্ছে ভাগ্যিস ওনার ছেলে নেই। মুচকি হাসে রিমঝিম আমার পেছনে পি এন পিসি করা হচ্ছে মজা। তাই হেসে বলে,' মা কিন্তু দারুণ হাঁটে এখনো দিব্যি সিঁড়ি ওঠানামা করে।'
মনে মনে যতই অভিযোগ থাক দুই পক্ষের কমলা এতদিনে একটু বোঝে রিমঝিম কটকট করে কথা বললেও খারাপ নয় খুব একটা। তবুও তো উনি ছেলে বৌ নাতি নিয়ে ঘর করছেন। আর কাজ করা তো খারাপ নয় বরং শরীর সচল থাকে। তবে বেশি কিছু কাজের চাপ হলে একদম করেন না ঠিক এড়িয়ে যান। আরে বাপু সামর্থ্য তো আছে। অত চালাকি নয়,শাশুড়িকে ভালো রাখতে গিয়ে খাটিয়ে মারা।
দেখতে দেখতে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে।
কয়েকদিন রিমঝিমের মায়ের শরীরটাও ভাল যাচ্ছেনা। ওর দাদাবৌদি খুব একটা যত্ন নেয়না মায়ের। বললে বৌদি বলে,' তুমি কি বুঝবে এখনও তোমার শ্বশুর শাশুড়ি যা করছে সংসারে।'...' আমাকে তো পুরোটাই করতে হয়,কোন সাহায্য পেলামনা কোনদিন।'....' আমি ওদের আ্যকটিভ রেখেছি বৌদি,সবদিকে নজর রাখি।'...' তোমার মত তো সবার এত দাপট নেই,আমি বয়স্ক লোকের পেছনে এত টিক টিক করতে পারিনা। তখন তুমিই বলবে আমার মায়ের সাথে খারাপ ব্যাবহার কর।'
রিমঝিমের খুব দুঃখ যখন ফেসবুকে দেখে বন্ধুদের মা বাবার পঞ্চাশ বছরের বিবাহ বার্ষিকী হচ্ছে । শুধু ওর মা বাবারটাই হলোনা,কত প্ল্যান ছিল,মাও যেন কেমন হয়ে গেছে। সব স্বপ্ন বোধহয় সত্যিই পূরণ হয়না। একদিন দুঃখ করে ওর বর সোহমকে বলছিলো। আর একটা বছর ওয়েট কর এই তো সামনে বছরই মা বাবার পঞ্চাশ বছর হবে,আমি তো মায়ের বিয়ের আটবছর বাদে হয়েছি। তাই তোমার স্বপ্নপূরণ হল বলে।' হুঁ আমি যা করতে যাই তাই খারাপ,আর বৌমারা যা করুক না কেন কিস্যু দাম নেই।'...' তাহলে ওদের হাঁটতে পাঠাও কেন শুনি? ওরাও তো বাধ্য হয়ে শোনে।'...' শোনে,সে তো ওদের সুগার কমাবার জন্য। তুমি জানোনা সিঁড়ি ওঠানামা আর হাঁটা হার্টের জন্য ভাল।'..মুখে কিছু না বললেও সোহম বুঝলো মুখে ক্যাটক্যাটে হলেও এত বছরে এক ছাদের তলায় থেকে সত্যিই একটা বন্ডিং হয়ে গেছে রিমঝিমের।
কাজ করতে করতে সোহমের কথাটা মনে হল ওর,ইশ্ বয়েই গেছে ওর শ্বশুরবাড়িতে বৌরা খারাপ তকমা নিয়েই আসে যতই করোনা কেন তবুও সমালোচনার আঙ্গুল উঠবেই। আসলে ওর স্বভাবটাই এমন যত ভাবে নাক গলাবোনা কোন ব্যাপারে তবুও পারেনা। আসলে একমাত্র ছেলের বৌ হলে যা হয়। আর তারপর ওর ছেলেটা হয়েছে কিছু একটা ন্যাওটা দাদান ঠাম্মির। অবশ্য ওর শাশুড়িমাও খুব চালাক বুদ্ধি করে চলেন। যাক এভাবে যতদিন চলে।
সামনেই পূজো সোহমটা খুব চালাক,বিয়ের পর থেকেই মোটামুটি টাকা ফেলে দেয় আর সব মার্কেটিং ওর ঘাড় দিয়ে করায়। আগে শাশুড়িমাকে টেনে নিয়ে যেত এখন উনিও খুব একটা ভিড়ে বেরোতে চাননা। তাই এবার অনেক খুঁজে ওকেই আনতে হল ওনার শাড়ি। কে জানে মুখটা কেমন হবে পছন্দ হলে হয়। অবশ্য উনিও ওকে টাকা দিয়ে দেন সবার জন্য জামাকাপড় কিনতে। নিজেকে মাঝে মাঝে কলুর বলদ মনে হয় ওর। ' মা দেখোতো এই শাড়িদুটো তোমার পছন্দ হয়েছে তো?'...'একটু হাল্কা রঙ হলে হতনা',যেই বলতে গেছেন অমনি রিমঝিম বলে, 'কাল তাহলে যেতে হবে তোমায়'। না না থাক্ এটাই চলবে।'.. মনে মনে বলে,' এবার পথে এসো,বাড়িতে বসে মতামত খাটানো।' পূজোর কটা দিন ডায়েটের তোয়াক্কা করেননা অমল। কমলাও এসে ঢোকেন রান্নাঘরে জমিয়ে খাওয়াদাওয়া চলে। হঠাৎই লক্ষ্মীপূজোর পর অমল অসুস্থ হয়ে পড়লেন,শুরু হল নার্সিংহোম বাড়ি ছোটাছুটি। সবার কাজের গন্ডগোল,মনখারাপ। রিমঝিমের খুব মনখারাপ হল বুঝতে পারলো সংসারের কত কাজ অমল করত। সোহম খুব ভেঙ্গে পড়লো,' জানো তো আমার বাবা মায়ের পঞ্চাশবছরও বোধহয় আর হবেনা।'...খারাপ লাগে রিমঝিমের কমলাকে দেখেও। মানুষটা কেমন যেন বুড়িয়ে গেছে কদিনে। সবার অনেক চেষ্টায় অমল ফিরলেন। একটু সুস্থ হওয়ার পর অনেক বকুনি খেলেন দুজনেই রিমঝিমের কাছে অনিয়ম করার জন্য।
...' বৌমারা তো শত্রু হয়,তোমাদের খেতে দেয়না ভালো করে,খাটায়,হাঁটিয়ে মারে। এখন বুঝেছো তো কি জন্য করি? যেই অনিয়ম করেছো ব্যাস।'..অভিমান করে অমল বলেন,'তোমাদের অনেক কষ্ট দিলাম।'...' কথায় কথায় রাগ,মা বলে দাও তো উনি যে কষ্ট পেলেন সেটার কি হবে?'
......ভালো আছেন কমলা আর অমল কড়া গার্জেনের তত্ত্বাবধানে। আমার বয়েই গেছে বললেও রিমঝিম প্ল্যান করতে থাকে শ্বশুরশাশুড়ির পঞ্চাশ বছরের বিবাহবার্ষিকীর জন্য। অনেক মনকষাকষির মধ্যেও কখন যে সোহমের সাথে ওর বাড়িটাও আপন হয়ে গিয়েছিল ভাবতেই পারেনি। আসলে সব মেয়েই তো চায় শ্বশুরবাড়িটা আপন করে নিতে কিন্তু হয়ত অনেক সময়েই তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয় এ বাড়ি তোমার নয়। রিমঝিম নাম কেনার জন্য কিছু করেনা,ওর মনে হয় ওর বাবা মায়েরটাও তো করত। সোহম খুশি হল,ব্যবস্থা করলো সব। শপিংয়েও গেল ওর সাথে।
সংসারে সবাইকে নিয়ে ভাল থাকার সুখটা কমলাও বোঝেন,মা মেয়ে পাশাপাশি থাকলেও তো ঠোকাঠুকি হয়। মেয়েটা কথা শোনালেও ওদের মন থেকেই ভালোবাসে। সেদিন ঘিয়ে লাল বেনারসীতে খুব সুন্দর লাগছিল কমলাকে,অমলকেও বেশ মানিয়েছে তসরের পাঞ্জাবী আর ধুতিতে। রিমঝিম কমলার খোঁপায় জড়িয়ে দিয়েছে মালা,কোন কিছুর ত্রুটিই রাখেনি। মালাবদলের পর রিমঝিমকে কাছে টেনে নেন কমলা। ' প্রথমে মনে হত এটা বৌমা না বোমা! তবে পরে দেখেছি রিমঝিম আমাদের ক্ষমারূপেণ সংস্থিতা। আসলে দোষগুণ মিলিয়েই মানুষ ভালোবেসে ক্ষমা করে যে কাছে টেনে নিতে পারে সেই তো খাঁটি মানুষ।'....আজ সত্যিই সবার খুশির দিন,মাসিশাশুড়িও আজ খুশি। সবার হাসিখুশি মুখগুলোই বোধহয় বৌমাদের সেরা প্রাপ্তি। একটু প্রশংসা আর ভালো কথা শুনতে যে সবারই ভালো লাগে। কিন্তু কজনের ভাগ্যে জোটে?হয়ত বা নিজেকে প্রমান করতে সারাজীবনই কেটে যায়। চোখটা একটু ছলছল করে ওঠে বাবার কথা খুব মনে পড়ে। সোহম মজা করে বলে,'আমার মিঠে ঝুনো নারকেল একদম মিঠে জলে ভর্তি'। ...'ছেলে দাঁড়িয়ে দেখছে,অসভ্য একটা!'
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment