Skip to main content

মায়ের মাঝে দশভুজা

#মায়ের_মাঝে_দশভুজা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

হাতে সন্ধ‍্যাপ্রদীপ নিয়ে প্রদীপ দেখাতে দেখাতে আসি সদর দরজার সামনে,মা দুর্গার পেপার পাল্পের অপূর্ব মুখটার সামনে। কখনো হস্তশিল্পমেলা থেকে কিনেছিলাম শখ করে। প্রদীপের শিখায় ঝকঝক করে ওঠে মায়ের মুখটা। প্রতিদিনই দিনে দুবার মায়ের মূর্তির সামনে এসে দাঁড়াই,কখনো মনখারাপ থাকলে আরো বেশিবার। চোখ মেলে বলি মা শক্তি দাও,সাহস দাও,সহ‍্যশক্তি দাও,ক্ষমাশক্তি দাও। ইচ্ছেমত চেয়ে ফেলি আরো কিছু যখন যা মনে হয়। মা দুর্গা দুর্গতিনাশিনী সব বিপদ থেকে রক্ষা করেন,বছরে একবার আসেন মা এই ধরাধামে। আর বাকি সময়টা আমাদের সাহস জোগান আমাদের সাথে থেকে। হয়ত বা আমাদের এই পোড়া দেশের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে আছে এমন অনেক উমা,দুর্গা আর জয়ার গল্প। আমার চোখে প্রতিটা মেয়েই দুর্গা,আমরা আমাদের লুকোনো ভোঁতা ত্রিশূলগুলোকে সবসময় শান দিতে থাকি আত্মরক্ষার তাগিদে। ছোটবেলা থেকে আমার চোখের সামনে জীবন্ত দুর্গা দেখে এসেছি আমার মাকে। সকাল থেকেই দশহাতে ধরতো হাতা খুন্তি,বঁটি,শিলনোড়া,হাতুড়ি,সাঁড়াশি,চাকিবেলনি। মাকে বলতাম আচ্ছা মা প্রত‍্যেকদিন একঘেঁয়ে রান্নার কথা ভাবা,মেনু ঠিক করা তোমার ভালো লাগে? এত কিছু মাথায় রাখো কি করে গো?আমার মাও স্কুলে পড়াতেন,নিজেই রান্নাবান্না করে আমাদের খাইয়ে নিজে খেয়ে তৈরি হয়ে স্কুলে যেতেন। অত‍্যন্ত স্পষ্টবক্তা,সাহসী আর কর্তব‍্যপরায়ণ আমার মা। নিজের থেকে সবসময় অন‍্যকে ভালো রাখাকেই জীবনে গুরুত্ব দিয়েছেন। অন‍্যদের ভালো রাখতে রাখতে কখন যে এতগুলো বছর কেটে গেছে আমরা কেউ ভাবতেই পারিনি। আজও আমার অসুস্থ মা তার জরাজীর্ণ হাতটা বাড়িয়ে আমি স্কুল থেকে আসার পর জলের বোতলটা এগিয়ে দেয়। আমি রাগ করি তুমি বিশ্রাম নাও মা,এত ব‍্যস্ত হয়োনা। আজ যে তোমার ছোট্ট দুর্গাও মা হয়েছে গো। আমার হাতেও আজ বঁটি,হাতাখুন্তি,শিলনোড়ার বদলে মিক্সার গ্ৰাইন্ডার,রোটিমেকার,মাইক্রোওভেন আরো কত কি? আরেকটাও আছে মা আমার জপের মালা স্মার্টফোন। সারাদিন ওতেই আমার বিশ্বদর্শন হয়ে যায় মা। তোমার শরীরটা ভালো নেই,প্রতিদিন এখন মা দুর্গার বদলে আমার জগৎজননী মায়ের দিকেই চোখটা আটকে থাকে মন ভরে দুচোখ মেলে দেখি তোমায়। রাতে তোমার পাশে শুয়ে সেই ছেলেবেলার মত বলি তুমি পাশে থাকলে এখনো সাহস পাই মা। এখনো কোন কাজ করতে গেলে তোমার কাছে জিজ্ঞেস করি মা গো এটা ঠিক তো। বাবার ফটোর সামনে গিয়ে বলি আগলে রেখো বাবা আমাদের,মাঝে মাঝে খুব অসহায় লাগে। তোমাদের ছোট দুর্গাটা সত‍্যিই আর বড় হলোনা, যে আজও একা থাকলে মন খারাপ করে তোমাদের জন‍্য। অনেক বড় হয়েছি মা একরাশ দায়িত্বে দমবন্ধ হওয়া জীবন আমার। তার মাঝেও বুঝি তুমি আছো সাথে সবসময়,এখনো আমি ছোট তোমার কাছে,শৈশব ফিরে পেতে কি ভালো লাগে বলতো? এবারের পূজোয় আমিও তোমায় দিতে চাই সেরা আস্বাদ,ভালো থাকার ফ্লেভারগুলো। চলো না মাগো আবার যাই তোমার হাত ধরে আমাদের ছেলেবেলার গ্ৰামে,একমুঠো শিউলির গন্ধমাখা ভোরে তোমার কাঁধে মাথা রেখে মা দুগ্গার মুখের দিকে তাকিয়ে বলবো,ভালো রেখো আমার মাকে তুমি। আমার জননীই যে আমার চোখে বিশ্বজননী।

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...