Skip to main content

সুখ খুঁজতে পারি

সুখ খুঁজতে পারি
রুমাশ্রী সাহা চৌধুরী

''কাকিমা কি করছো গো?
ও মা তোমাকে কি সুন্দর লাগছে গো দেখতে। কত বড় সিঁদুরের টিপ পরেছো কপালে।''..রুনাকে দেখে এমনি বলতো মাম ওর পিসতুতো ভাসুরের মেয়ে। যদিও ওদের বাড়ি বেশ কিছুটা দূরে তবুও মাঝে মাঝেই চলে আসতো রুনার কাছে। বক বক করতো ইচ্ছেমত। মামের মনটা ছিলো একদম বাচ্চাদের মত সরল আর বাচ্চাই তো,রুনার বিয়ের সময় সবে ক্লাস ইলেভেনে পড়তো। সবাই আদর করে মাম বলতো,ভালো নাম কিছু একটা ছিলো,মনে হয় অজন্তা। মিষ্টি হেসে বলত রুনা,''তোর যখন বিয়ে হবে তখন তোকে আরো মিষ্টি লাগবে দেখতে। আমিই সাজিয়ে দেবো।''
        একটা সময়ের পর মামের আসা যাওয়া কমলো,মাঝে মাঝে আসতো ওর মায়ের সাথে। এসেই নতুন কাকি মানে রুনার ঘরে ঢুকতো। আবার কোনদিন রুনার স্কুল থেকে ফেরার পথে দেখা হয়ে যেত ওর সাথে কলেজ থেকে ফিরছে। একদিন রুনাকে বললো,''নতুন কাকি দেখেছো আমার মাথার চুলটা কেমন পাতলা হয়ে যাচ্ছে।''...''তাইতো তুই একটু ট্রিটমেন্ট করা মাম। আর একটু যত্ন নে,ভালো তেল মাখ। খাবার দিকেও যত্ন নিস।''...''সবই করছি গো,ডাক্তারও দেখিয়েছি। থাইরয়েড টেস্ট করতে বলেছে। দেখি গো কি হয়। চুল না থাকলে হয় বলতো?''
     .....''তাতে কি হয়েছে,আমাদের মেয়ে পড়াশোনা করছে। কম্পিউটার শিখছে, সব ঠিক হয়ে যাবে।'' রুনা ওকে কাছে টেনে আদর করলেও মামের মুখে হাসি দেখেনা। মনে হয় ও যেন বেশি ভাবছে ব‍্যাপারটা নিয়ে।'আচ্ছা ঠিক আছে বাবা তেমন হলে উইগ পরে নিবি কত উইগ পাওয়া যায়।'' আমার দিকে ছেলেরা তাকিয়ে দেখেনা গো।'..হাসে রুনা,''ও বুঝেছি মামের আমাদের প্রেম করার শখ হয়েছে,না না একদম নয়,আগে পড়াশোনা তারপর প্রেম। নিজেকে ভালো করে তৈরি করতো তারপর এমনিতেই বিয়ে হয়ে যাবে।''
          মাঝে বেশ কিছুদিন ওদের খবর রাখতে পারেনি রুনা,ওরাও ফ্ল্যাট কিনে অন‍্য পাড়ায় চলে আসে। শুনেছিলো মাম গ্ৰ‍্যাজুয়েশন করে কম্পিউটারের কোর্স করছে। হঠাৎই একদিন রুনার পিসতুতো ভাসুর আসে বিয়ের কার্ড নিয়ে জানতে পারে মামের বিয়ে। রুনা জাকে বলে,''এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দিচ্ছো দিদি, একটা চাকরি বাকরি করার পর দিলে হতনা। আসলে মেয়েদের নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে করাটা ঠিক...''
...''তোমারও তো চাকরি পরে বিয়ে আগে,ও ঠিক একটা পেয়ে যাবে যদি ইচ্ছে থাকে। ভালো ছেলে পেলাম তো। তাছাড়া মামকে দেখেছো তো চুলটা একদম পাতলা হয়ে গেছে। এরপর হয়ত আর কেউ বিয়েই করতে চাইবেনা।''...বিয়েতে সেজেগুজে বেশ দেখাচ্ছিলো মামকে। ওকে দেখেই একগাল হেসে বললো,''নতুন কাকি আমার বরকে দেখেছো?''..''দেখলাম রে বেশ দেখতে হয়েছে। এখন থেকেই বর বর এতো। বড্ড তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ফেললি।''...রুনা বুঝলো মামের কথাটা খুব একটা ভালো লাগলোনা। মেয়েটা বোধহয় নিজেই ব‍্যস্ত হয়ে গিয়েছিলো বিয়ের জন‍্য।
      যাক ওর ঝলমলে মুখটা দেখে খুব ভালো লেগেছিলো রুনার,যদিও ওর বরের সাথে পরিচয় করা হয়নি চোখে দেখে ভালোই লেগেছিলো। শুনেছিলো ভুবনেশ্বরে চাকরি করে। মামকে নিয়ে যাবে ওখানে। তখন অত মোবাইল ফোনের চল ছিলোনা তাই মামের সাথে আর তেমন যোগাযোগ হয়নি। বেশ অনেকদিন বাদে একদিন জায়ের সাথে দেখা হওয়াতে শুনেছিলো মামের বাচ্চা হবে,ওরা আনতে যাবে। ওখানে একা থাকে কি করে সামলাবে সবটা,জামাই বলেছে নিয়ে যেতে।
রুনা ভাবে এই সেদিনের মামও মা হবে। কে জানে কেমন আছে মেয়েটা,কি করে সব সামলাচ্ছে। বড় ছেলেমানুষ ছিলো মেয়েটা। সত‍্যি বিয়ের পর আর মেয়েরা ছোট থাকেনা।
     রুনার বর শ্বশুর খুব একটা পছন্দ করতনা ওর ভাসুরকে,তাই ওরা চাইতনা রুনা ওদের সাথে বেশি সম্পর্ক রাখুক। ওর বর তো একদিন বলেই ফেললো,''আর বোলোনা,বাচ্চুদার সাথে দেখা হলেই টাকা ধার চায়। অনেকবার দিয়েছি,ফেরত দেবার নামও করেনা। শুনেছি ড্রিঙ্কও করে,ভাগ‍্যিস বৌদি ভালো তাই সবটা সামলে আছে।''...''কি বলছো? এইসব তো জানতাম না। তাই বোধহয় দিদির এত সুগার।''
         তবুও মামের মেয়ে হয়েছে জেনে পুচকু পুচকু কয়েকটা জামা কিনে ওদের বাড়িতে গিয়েছিলো ওরা। আশ্চর্য হয়েছিলো মামকে দেখে,এ যেন এক নতুন মাম। কেমন অন‍্যমনস্ক সবসময় একটা ঘোরের মধ‍্যে আছে। বাচ্চাটাকেও কোলে নেয়না তেমন,মাথার চুলগুলো আরো উঠে গেছে হাড়গিলে চেহারা।
..''কেমন আছিস মাম?তোর মেয়ে তো একদম বাবার মত হয়েছে। এত রোগা হয়ে গেলি কি করে?''..কত কথা বলত মেয়েটা কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে। পাশের ঘরে উঠে চলে গেলো।
      ...দিদি আস্তে আস্তে বললো,''অদ্ভুত হয়ে গেছে গো মেয়েটা, সারাদিন জল ঘাটে আর কতবার যে স্নান করে। বাচ্চাটাকে তেমন করে কাছেও নেয়না। আমাকেই দেখতে হয় বাচ্চাটাকে,কি করি বলো তো। একটু বোঝাও না।''...''দিদি ওর বর আসেনি,বাচ্চা হবার পর?'' মুখটা ফ‍্যাকাসে হয়ে যায় দিদির,''ঐ নামমাত্র আসা আরকি,একদিনের জন‍্য এসেছিলো। বললো কাজ আছে অফিসের।''
        পাশের ঘরে যায় রুনা মামের সাথে একটু কথা বলার জন‍্য।''শোন একটু নিজের খেয়াল রাখিস। এতো স্নান করিস কেন বাচ্চাটার ঠান্ডা লেগে যাবে। ওকে কোলে নিবি তাহলে তো বন্ডিং ভালো হবে।''..'' কি হবে গো,আমাকে কেউ ভালোবাসবেনা। আমাকে তাড়িয়ে দিয়েছে জানো তো। আমি নাকি পাগল,আমার মাথায় চুল নেই।'' রুনা কিছু বলার আগেই ওর জা চলে আসে। তাই ও শুধু বলে,'' দিদি মেয়েকে বেশিদিন এখানে রেখোনা,পাঠিয়ে দিয়ো জামাইয়ের কাজের জায়গায়।''..চিন্তার রেখা খেলে যায় ওর জায়ের মুখে,''দেখি গো ওর শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা। একটু ডাক্তার দেখিয়ে পাঠাতে হবে। নাহলে একা একা সামলাবে কি করে।''
        তারপর রুনার অনেকদিন যাওয়া হয়নি ওদের বাড়িতে,ওর বর শ্বশুর কেউ চাইতনা। ভাসুর মাঝে মাঝেই টাকা চাইত শুনতো ওদের কাছেই। অনেকদিন বাদে শুনেছিলো মামকে আর শ্বশুর বাড়িতে নেবেনা,ওর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ ওদের। সারাদিন বাথরুমেই কাটায়,রান্না বসালে কখন নামায় ঠিক থাকেনা। তারপর মাথায় চুল নেই। ওদের নাকি ঠকানো হয়েছে। মামের ঠিকানা হয়ে যায় বাপের বাড়িতে,কিছুতেই ফেরানো যায়না ওকে। দিদিকে বললে বলত,''কি করবো বলো,মামের দোষ অনেক। অদ্ভুত বাতিকগ্ৰস্ত হয়ে গেছে,বাচ্চাটাকেও দেখেনা। কি যে ভাবে ঐ জানে। আমিই তো সামলাই বাচ্চাটাকে। অথচ ঐ বিয়ে করার জন‍্য ক্ষেপে উঠেছিলো।''...''তোমরা ছেড়ে দিলে জামাইকে? আমি হলে কখনো ছাড়তামনা।''..''বুঝতেই পারছো তোমার দাদার আর্থিক অবস্থা কে ঝামেলা করবে বলো।''...বুঝতে পারলো রুনা কিছু একটা বোঝাপড়া করে নিয়েছে ওরা। কিছুই বলার নেই।
          
        বেশ কিছুদিন বাদে হঠাৎই জানতে পারলো ওর জা দুদিনের ডায়েরিয়ায় মারা গেছে। অবাক হয়ে গেলো রুনা এভাবে একটা ভালো মানুষ চলে গেলো ওদের সংসারটার কি হবে? মাম তো বাচ্চাটাকে দেখেইনা। পুরোটাই তো দিদি দেখতো। মামকে বুঝিয়ে আসে রুনা যেন ভালো করে সবটা দেখাশোনা করে। খুব খারাপ লাগছিলো ওর বাচ্চাটাকে দেখে জন্ম থেকেই বাবার আদর পেলোনা,মা ঐরকম,আর দিদাও চলে গেলো। বাচ্চাটা একদম চুপ করে ওর দাদুর কোলে বসে। দাদা বললেন,''আর কি তোমার দিদি তো আমার ঘাড়ে সব দায়িত্ব দিয়ে ড‍্যাং ড‍্যাং করে স্বর্গে গেলো। এই নাতনি তো আমাকে ছাড়ছেনা ,আসলে ওর কাছে আমি আর ওর দিদাই তো সব। মা তো ফিরেও দেখেনা।ওর বাবার শোধ তোলে বাচ্চাটার ওপর।'' অবাক লাগে রুনার সত‍্যি বোধহয় মামের মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে,তবুও বলে,'ওকে কাছে টেনে নে মাম,ভালো করে মানুষ কর।'..'কোন লাভ হবেনা,ও আমাকে ঘেন্না করবে টেকো মাথা পাগলি বলবে ওর বাবার মত।'...শিউরে ওঠে রুনা হায় ভগবান যে মেয়েটার শরীর রাতের অন্ধকারে নিত‍্য ভোগ করেছিস কামনা মিটিয়েছিস,তার প্রতি একটুও মায়া নেই।পেটে একটা বাচ্চা ঢুকিয়ে দিয়ে দিব‍্যি টাকা দিয়ে দায়িত্ব সেরে ফেললো। এরা কেমন মানুষ হায়রে,নারীদেহ শুধুই কি বস্তু। মেয়েদের কি কোন মন নেই? কত অত‍্যাচারিত হয়েছে ওর নরম দেহটার সাথে সাথে সুন্দর মনটাও। তাই বোধহয় অনুভূতিগুলো এত আহত হয়েছে।
     ওদের বাড়ি থেকে বেড়িয়ে বড় মন ভিজে যায় রুনার,একদলা কান্না গলার কাছে আটকে আসে। ওর বর বলে,'কি করবে বলো,হয়ত মেয়েটার ভাগ‍্য এমনি পোড়া। আমরা কি সব দায় নিতে পারি?'..'আচ্ছা মাম তো পড়াশোনা শিখেছে ও কেন এমন হয়ে গেল বলতো?'...'মাম বোধহয় শুধু পুতুলের সংসার সাজানোর স্বপ্নটাই দেখেছে ছোটবেলা থেকে। নিজেকে বাঁচাতে শেখেনি।'..'সবাই কি আমার বৌয়ের মত রণচন্ডী!'
চোখ পাকালো রুনা তবে আজ আর ঝগড়া করতে ইচ্ছে হলোনা। রণচন্ডী হওয়াই তো উচিত।
মাম যদি ওর মেয়ে হত তাহলে মামের হাতে একটা ত্রিশূলই ধরিয়ে দিত।
         'শোন তুমি বাড়ির দিকে ছেলের দিকে তাকাও। অন‍্যের সংসারে নাক গলাতে যেয়োনা। ওদেরটা ওরা ম‍্যানেজ করে নেবে ঠিক। সত‍্যি ঘরের মানুষের মন রক্ষা করতে আর পারেনি রুনা এই ব‍্যাপারে জড়াতে। তারপর মাঝে মাঝেই শুনতো ভাসুরের নানা কান্ড,তাই এড়িয়েই চলত। সত‍্যি মা চলে গেলে সংসারটা ভেসে যায়। হঠাৎই একদিন ওর বর বললো,' আজ না মামের সাথে দেখা হলো কি রকম যে হয়ে গেছে,একটা নোংরা শালোয়ার পরা বললো কাকু কিছু টাকা দাও একটু চিনি আর সুজি কিনবো। আমি বললাম কেন তোর যা যা লাগে আমি টাকা দিয়ে দেবো।ওর কেনা হলে চলে গেলো অদ্ভুতভাবে।'
          খুব মনটা খারাপ হল রুনার একদিন একাই গেলো ওদের বাড়ি,বাড়িতে তালা। পাশের বাড়ির ওরা বললো মা মারা যাবার পর ছন্নছাড়া সংসার। মেয়েকে নিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়ায় আর বাবাটাও তেমন মদখোর। চলে আসে রুনা। হঠাৎই একদিন রাস্তায় দেখা হয়ে গিয়েছিলো বেশ কিছুদিন বাদে মামের সাথে। চেনাই যায়না হাড় জিরজিরে চেহারা। 'মাম একি করেছিস?খাসনা নাকি ভালো করে? মেয়েটা তোর খুব মিষ্টি হয়েছে।'..'অন‍্যমনস্ক চাউনি দিয়ে বলেছিলো হ‍্যাঁ ওকে ওর বাবার কাছে পাঠিয়ে দেবো গো কাকিমা। আমার একার চলে যাবে কোনরকমে।"....আশ্চর্য হয়েছিলো রুনা,"সে কি ওর বাবাকে দিবি কেন! সে নাকি বিয়ে করেছে আবার। এই মেয়ে তো তোর, ছাড়বি কেন?"..
....চেঁচিয়ে ওঠে মাম,"পেটের শত্রু এটা,ও হওয়ার পর থেকেই তো আমার পোড়া কপাল শুরু হয়েছে। বাচ্চার দায় কি শুধু আমার?ফূর্তি করার বেলা সবাই আছে। বাবার কোন দায়িত্ব নাই?"
       ওর বাচ্চাটা চুপ করে তাকিয়ে থাকে ফ‍্যালফ‍্যাল করে মায়ের দিকে। রুনা ওকে কোলে তুলে নেয়,সত‍্যি কি কপাল বাচ্চাটার। এখনো তেমন কথা বলতে পারেনা বাচ্চাটা।
      ...."হার মানিসনা মাম,তোর তো অনেক গুণ ছিলো,সেগুলো নষ্ট করিসনা। একটু ঘুরে দাঁড়া।"
...চোখে আগুন জ্বলে ওঠে ওর,"কি দিয়ে ঘুরে দাঁড়াবো গো,আমার কি আছে বলতো,আজকাল আয়নাতে নিজের চেহারা দেখলেই ভয় পাই। সত‍্যি বোধহয় আমার মত মেয়ের সাথে সংসার করা যায়না।"
...মনটা ভার হয়ে যায় রুনার, তবুও এগিয়ে যায় বাড়ির দিকে। কতটুকুই বা ওর ক্ষমতা,কিই বা করতে পারে?
          দিন কেটে যায় আপন ছন্দে,হঠাৎই ওর বর এসে একদিন বলে,"শোন আজ মামকে দেখলাম কেমন যেন মাথাটা খারাপ হয়ে গিয়েছে মেয়েটার,আর হবেই না কেন বলো অদ্ভুত এক ব‍্যাপার শুনলাম বাচ্চুদা নাকি এই বয়সে বিয়ে করেছে,শুধু তাই নয়...."
   রুনা আর থাকতে পারেনা,"কি বলছো তুমি! ছিঃ ছিঃ,মেয়েটার এই অবস্থা এই সময়ে বাবা বিয়ে করে বসলো!সত‍্যি তোমরা পুরুষমানুষরা পারো! তোমাদের বেলায় সমাজ বলে আহা রে সংসারটা ভেসে গেলো,বিয়ে না করলে চলবে কেন?আর মেয়েদের বেলায় ছি ছি বিধবার আবার বিয়ে হলো!"..."একজনের জন‍্য সবাইকে
  দোষ দিয়োনা এভাবে।"
         মনটা বড় খারাপ হয়ে যায় রুনার,মেয়েটা বাবার এই বয়েসের দাম্পত‍্য কিভাবে মানবে কে জানে,ভেবে বড় কষ্ট হয়। একেই তো বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে নানা সমস‍্যায়।
          রুনার জন‍্য আরো কিছু হয়ত অপেক্ষা করছিলো,হঠাৎ একদিন আবার দেখা হয়ে যায় নোংরা জামাকাপড় পরা মামের সাথে। যদিও ওর শ্বশুরবাড়ির কেউ চায়না ওদের সাথে সম্পর্ক রাখ রুনা। তবুও ওর নতুনকাকিমা ডাকটা যে এখনো কানে লেগে আছে,তাই দেখা হলেই রুনা যতটুকু পারত সাহায‍্য করত। মাম যেন ওকে দেখেও দেখেনা অদ্ভুত এক ঘোরের মধ‍্যে আছে। "এই মাম,কোথায় যাচ্ছিস?চিনতে পারছিস না? আমি নতুনকাকিমা।"...হঠাৎই কেঁদে উঠলো মেয়েটা,"জানো কাকি বাবা পালিয়ে গেছে,আমার সঙ্গে নাকি থাকা যায়না তাই। ঐ যে সৎ মা ওটাকে নিয়ে,আর আমার মেয়েটাকেও নিয়ে গেছে সাথে।"...আশ্চর্য হয়ে যায় রুনা যে মেয়েটার একটু চিকিৎসা দরকার তাকে না দেখে,ওর মেয়েটাকে পর্যন্ত নিয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে গেছে ওর বাবা! ইশ্ এমনও হয়।"তোর কি করে চলছে রে?আচ্ছা আমি দেখছি যদি কিছু করা যায়।"....রুনা জানে মামকে বাড়িতে নিয়ে গেলে চরম অশান্তি হবে,হয়ত ওর ওখানে টিকে থাকাই মুশকিল হবে। সত‍্যি কখনো ইচ্ছে থাকলেও সবটা করা যায়না।...."আমি কোথাও যাবোনা,আমি গেলেই ঐ ঘরটা বাবা বিক্রি করে দেবে। ওরা আমার মায়ের সব জিনিস নিয়ে নিয়েছে।"....মামের হাতে কিছু টাকা দিয়ে রুনা চলে যায়,ওর কোটরে ঢোকা চোখ আর ন‍্যাড়া মাথাটা দেখে কেমন যেন সব গোলমাল হয়ে যায় রুনার। ভাবতে ভাবতে যায় রুনা বড় অসহায় লাগে ওর। সত‍্যি পৃথিবীতে মা না থাকলে বোধহয় সব অন্ধকার হয়ে যায়।
        ......." সুমনা দি.. আমি রুনা বলছি,আমাকে একটু সাহায‍্য করবে। আমার এক ভাসুরঝি আছে গো,খুব খারাপ অবস্থায়। মানসিক অবসাদে প্রায় পাগল হয়ে গেছে। যদি তোমরা কোন ব‍্যবস্থা করতে পারো। আমাকে একটু জানিয়ো।"...."আচ্ছা আমাকে একটু সময় দে,দেখছি।"..."একটু তাড়াতাড়ি দেখো।"
......সুমনা জানাতে জানাতেই ঘটে যায় এক চরম বিপদ,জানতে পারে মাম ঘুমের ওষুধ খেয়েছে হসপিটালে ভর্তি,আত্মহত‍্যার চেষ্টা। আজ আর কোন বাধা মানেনা রুনা,ছুটে যায় বাধ‍্য হয়ে যায় ওর স্বামীও। প্রায় সাতদিন যমে মানুষে টানাটানি করে বাঁচাতে পারে মামকে। ততক্ষণে ও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে জীবন থেকে,বাঁচতে চায়না কিছুতেই। খারাপ ব‍্যাবহার করে রুনার সঙ্গেও,চ‍্যাঁচামেচি করতে থাকে। রুনা তবুও গায়ে মাখেনা,শুরু হয় মামের পরবর্তী চিকিৎসা আ্যসাইলামে,ওর বাবা একবারও উঁকি মারতে এলোনা। হদিসই পাওয়া গেলোনা বাবার। দায়িত্ব পড়লো রুনার ওপরেই।
                একটু একটু করে প্রায় দুবছর সময় লাগলো মামের সুস্থ হতে। মাম পুরোপুরি সুস্থ হয়েছে,চেহারাও কিছুটা ফিরেছে। আজকাল মাথায় উইগ পরা মামকে বেশ অন‍্যরকম লাগে। নিজের ঘরেই থাকে মাম,একাই সব কাজকর্ম করে। ফিরে পেয়েছে অনেকটা আত্মবিশ্বাস। সুমনাদি একটা কাজের ব‍্যবস্থা করে দিয়েছেন,সারাটা দিন প্রায় কাজের মধ‍্যেই কেটে যায় ওর। তবুও এখনও মাম বিশ্বাস করতে পারেনা পুরুষকে, নিজের বাবা যখন সন্তানকে ঠকায় তখন তা বোধহয় ভোলা যায়না সারাজীবন। আজ বড় আগলে রাখতে ইচ্ছে করে ওর মেয়েকে,ওকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে খুব। কেমন আছে মেয়েটা কে জানে? তবুও মামকে স্বপ্ন দেখায় রুনা। হয়ত এই স্বপ্নটুকু আগেও দেখাতে চেয়েছিলো,আসলে কথাটা খুব ছোট কিন্তু দামি,"সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস,তোর মেয়ে একদিন ঠিক আসবে তোর কাছে,কেউ আটকাতে পারবেনা.. মাকে ঠিক খুঁজে বের করবে ও।"...হতাশার অন্ধকারে ডুবে যাওয়া মাম আবার বাঁচতে চায় শুধু নিজের জন‍্য আর নিজেকে ভালোবেসে। সুন্দর পৃথিবীতে অত‍্যাচারিত অনেক মাম,সমাজ সংসার কেউই হয়ত চায়না এদের। তবুও বাঁচুক এরা নিজের মত করে,তাই শপথ হোক হার মানবোনা। জীবন অমূল‍্য তাকে শেষ করবোনা কোন কারনেই।
( হয়ত রুনা বাঁচাতে পারেনি মামকে জ্বলে পুড়ে শেষ হয়ে গিয়েছিলো ও। তবুও থাক মামেরা ভালো,ফিরে দাঁড়াক ওরা। যোগ‍্য জবাব দিক সমাজকে।)©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী

সমাপ্ত

     

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...