#শুভ_বিবাহ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
"আয় মা,এখানে বোস,শুনছো চায়ের ট্রেটা ওর হাত থেকে নিয়ে নাও। আপনাদের বলেছিলাম না,এই আমার মেয়ে।"
...."নমস্কার আমি সুলক্ষণা। আগে কিছু করতামনা এখন একটা চাকরি করি। বয়েস ত্রিশ,একদম জেনুইন বয়েস। কোন কারচুপি নেই,দরকার হলে নার্সিংহোমের কাগজটাও দেখিয়ে দিতে পারি। মেকআপ করিনা বিশেষ,শুধু একটু ময়েশ্চারাইজিং লোশন আর পাউডার দিয়েছি। চুল যতটা আছে পুরোটাই নিজের,দরকার হলে খুলে দেখাতে পারি।
....." থামো মা আমাদের সবটা জানা হয়ে গেছে,আমাদের অত কিছু জানার দরকার নেই। যতটুকু তুমি বলেছো পুরোটা শুনলাম। আমি জিজ্ঞেস করলে হয়ত অতটা করতামও না।"
... একটু হাসেন সুবিমলবাবু পাত্রের বাবা। ওরে বাবা এই মেয়ের মুখে তো খই ফোটে। সেইজন্যই বোধহয় আগের বর ছেড়ে দিয়ে বেঁচেছে।
সুবিমল বাবুকে চুপ করে থাকতে দেখে শুরু করেন ওনার স্ত্রী," তুমি বোধহয় খুব টিভি সিরিয়াল দেখো,এমন কথা আজকাল খুব সিরিয়ালে চলে। নাকি ফেসবুক খুব করো? শুনেছি ফেসবুকে এখন শাশুড়ি নির্যাতন নিয়ে খুব লেখালেখি হয়,আবার বৌমা নির্যাতন নিয়েও।"...সুলক্ষণা কি বলতো জানিনা সবে মুখটা হাঁ করছিলো তার আগেই সুবিমলবাবু বললেন," শোনো ফেসবুক আর টিভি সিরিয়াল দুটোই আমাদের বাড়িতে খুব চলে। আমার গিন্নীর দৌড় মোটামুটি সিরিয়াল পর্যন্ত তবে ফেসবুকের খবর ও সব রাখে। মানে আমার হেল্পার টুনি খুব ফেসবুক করে। মোটামুটি সবার আ্যকাউন্ট খুলে কারেন্ট খোঁজখবর দেয় আমার গিন্নীকে। এই তো সেদিন ওর বরের সাথে কোন মেয়ের ছবি ফেসবুকে দেখে বরকে শাসিয়ে এলো,আর দুমাসের হাতখরচ বন্ধ করে দিলো।"
....সুলক্ষণা মাথাতে হাত রাখে ওরে বাবা ও ভেবেছিলো ওর কথাতে এরা আর মুখ খুলতে পারবেনা। তো এরা শুধু নয় এদের কাজের লোকও তো মার্কামারা। ওর ফেসবুকের আ্যকাউন্টটার ছবি পাল্টে ফেলতে হবে তো। একটা হনুমানের ছবি লাগিয়ে দিতে হবে।
আসলে সুলক্ষণা এমন ছিলোনা,আর ওর ভালোমানুষীর সুযোগই নিয়েছিলো ওর আগের শ্বশুরবাড়ি। কথা শুনে শুনে ওর মনটা জর্জরিত হয়ে গিয়েছিলো। আচ্ছা বিয়ের পর কি সব স্বাধীনতাই চলে যায়? নাকি ওকে ভালো মানুষ পেয়ে এত বাড়াবাড়ি শুরু করেছিলো ওরা।
কথায় কথায় উঠে আসতো ওর বাপের বাড়ির শিক্ষার কথা। সকালে উঠতে দেরী হলেও বাপের বাড়ির শিক্ষার অভাব,কাজ না জানলেও তাই,এমন কি শাড়ির রঙও ঠিক করে দেবে অন্য কেউ। তাই ইচ্ছে করেই আজ কালো শাড়ি আর কপালে কালো টিপ পরে এসেছে। সবার মন রাখতে রাখতে একেবারে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
মেয়েদের মন রাখাটা বোধহয় চলতেই থাকে সারাজীবন ধরে। খুবই বেঁকে বসেছিলো বিয়ে করবেনা বলে আর তবুও বাবার কথা ফেলতে পারলোনা। কি অদ্ভুত ওর বিয়ে নাহলে নাকি বাবা মরেও শান্তি পাবেনা। যদিও অনেক শর্তে রাজি হয়েছে এই প্রথম আর এই শেষ।
"আচ্ছা তুই দেখ যদি ভালো লাগে তাহলেই করবি নাহলে আমি জোর করবোনা।"
বেশ কথা বলে ছেলের মা আর বাবা,ওর মতই অনেকটা। তবে ওর বাবাই জিজ্ঞেস করলো," ছেলেকে আনেননি কেন?".." আসলে ওর ঠিক এই ব্যাপারগুলো ভালো লাগেনা। একটা শনিবার দেখে তোমার সাথে দেখা করে নেবে বলেছে। সুলক্ষণার খুব ইচ্ছে করলো জিজ্ঞেস করতে আগের ডিভোর্সটা হয়েছিলো কেন? ওরা এত উদারমনস্ক মানুষ, বৌয়ের সব ব্যাপারেই ওরা রাজি আছেন,মানে নাহলে ও যেভাবে কথা শুরু করেছিলো তাতে মুখ কালো করে উঠে যাবার কথা ছিলো এতক্ষণে। তারপরেও ওনারা ছেলেকে পাঠানোর কথা বলছে। তাহলে কি আগের বৌ ওর থেকেও মুখরা? কে জানে?"..প্রশ্নটা মুখের কাছে এলেও আবার গিলে নেয় সুলক্ষণা,সত্যিই তো কোথায় থামতে হয় জানা দরকার আবার আমার রাগ হয়েছে মুখ আছে বলে যা খুশি বলে গেলাম তা ঠিক নয়। হঠাৎই মনে হয় সুলক্ষণার,কেন যে একজনের খারাপ ব্যবহারের দায় ও সবাইকে দেয়। এদের কি দোষ? ওরা যদি ওকে জিজ্ঞেস করে তোমার ডিভোর্স কেন হলো কি বলবে ও... সবার কথার মাঝে বড় চুপচাপ হয়ে যায় সুলক্ষণা মনের মাঝে ভীড় করে আসে কিছু তেতো স্মৃতি।
...." কি হলো সুলক্ষণা মা,এত চুপচাপ তো তোমায় মানায় না।"..চমকে ওঠে ও আগের শ্বশুরবাড়িতে ওকে শাশুড়ি ডাকতেন সুলেখা বলে। " শোন অত বড় নাম ধরে আমি ডাকতে পারবোনা,সুলেখাই ডাকবো। দেখি আবার আমাদের কপালে কি লেখা আছে?"..সুলক্ষণা প্রতিবাদ করেনি তবে ওর হঠাৎই সুলেখা কালির কথা মনে পড়ে গিয়েছিলো।
...." হ্যাঁ বলুন,কিছু বলবেন?"..." আসলে এমন কাটাকাটা কথা বলতো একজন বড় বেশি,কথায় কথায় আমাকে শাসন করত ঝগড়া করত। ওর জন্য আমার বাড়িতে কাক চিল বসতে পারতনা। তোমার সাথে ওর বড় মিল,আমার মেয়ে কলি।"..গলাটা বুজে আসে সুবিমলবাবুর চোখ মোছেন ওর স্ত্রীও। পরিবেশটা একটু থমথমে হয়ে যায়। কিছুক্ষণ ওরা কিছু বলতে পারেনা। " হঠাৎ চলে গেলো মা আমার,আসলে আপনাদের তেমন বলা হয়নি। বলেছি একমাত্র ছেলে আমার।"...
...." আজ থাক কাকু,ঝগড়ুটে মেয়েরা কখনো বাবাদের ছেড়ে যায়না। ও আছে আপনাদের সাথে তাইতো ওর কথা আপনার মনে হলো আমায় দেখে। এই যেমন আমি জ্বালাই আমার বাবাকে।" বাবার ঘাড়ে মাথাটা রাখে সুলক্ষণা।
বড় বড় করে হলুদ কার্ডে প্রজাপতির ছবির ওপর লাল দিয়ে গোটা গোটা করে ছাপানো হয় '#শুভ বিবাহ#' আচ্ছা সব বিবাহ কি সত্যিই শুভ হয়? তবুও বোধহয় এটা ঐ শুভ হোক সবের মত একটা কথা।
এভাবেই সুলক্ষণার বিয়েটাও হয়েই যায় সিদ্ধার্থর সাথে,কথা বলে মনে হয়েছিলো সিদ্ধার্থ নামটা সত্যিই স্বার্থক। বাপরে কি কম কথা বলে,এমন মানুষের সাথে তো ঝগড়াও করা যাবেনা। একটু মোটা ফ্রেমের কালো চশমার তলায় গভীর চোখদুটো খুব মন ছুঁয়ে গেছিলো ওর,কোথায় যেন একটুকরো বিষাদ লেগে। খুবই মার্জিত আর ভদ্র। তবুও বলেছিলো," আমরা দুই ভাইবোন দুইরকম হয়েছি। বোন খুব কথা বলত। আপনার সাথে ভালো ভাব হত।" সুলক্ষণার আগের শ্বশুরবাড়িতে ননদ ছিলোনা অমিত একমাত্র ছেলে ছিলো।
শ্বশুরবাড়িতে পা রাখে ও,সাদা কাপড়ে ওর দুধে আলতায় ডোবানো পায়ের ছাপ রেখে পা দেয় আবার এক অন্য শ্বশুরবাড়িতে। ঘরছাড়া হয়ত বা লক্ষ্মীছাড়া সুলক্ষণা আবার বেড়িয়েছে ওর স্বপ্নের ঘর খুঁজতে,লক্ষ্মীছাড়া কথাটা মনে হতেই চোখটা ভিজে যায় ওর। না না চোখের জল তো কবেই মুছে ফেলেছে ও,আর কাঁদলে চলবে কেন? মেয়েদের চোখের জলের মর্ম কজন বোঝে? এই দুবছরে তো ও শুধু ধার দিয়েছে ওর স্বভাবে। হঠাৎই চমকে ওঠে..."বৌমা এই দেখো,সব ভরা ভরা দেখছো তো। বলো সব ভরা দেখছি। ঐ দেখো দুধ উথলাচ্ছে। আর এই যে আমি চিতই পিঠে ভেজেছি তোমার জন্য। আমাদের মধ্যে বলে মন চিতই। যেটা খাওয়ালে নতুন বৌমার মন পাওয়া যায়।"
.... ওদের দুজনকে পাশাপাশি বসানো হয়,শুরু হয় আরো কিছু নিয়ম। কিছু কিছু ও দেখেছে। কিছুটা নতুন দেখছে। এর মধ্যেই হঠাৎ একজন একটা বাচ্চা ছেলেকে ওর কোলে বসিয়ে দেয়। " এই নাও তোমার ছেলেকে কোলে নাও। আর আমরা কিন্তু খবর শুনতে চাই তাড়াতাড়ি একদম।"...কানটা লাল হয়ে যায় সুলক্ষণার,হঠাৎই বাচ্চাটাকে একদম জড়িয়ে বুকের কাছে টেনে নেয়।.." কিন্তু কে এই বাচ্চাটা? কি নিশ্চিন্তে ওর আঙ্গুলটা ধরে আছে। ওরা তো আগে বলেনি সিদ্ধার্থর কোন বাচ্চা আছে। তাহলে ওর ছেলে বলছে কেন?"
ততক্ষণে ওর শাশুড়িমা ওকে কোলে তুলে নিয়েছেন,হেসে ফেলেন উনি," আরে বৌমার আঁচলটা ছাড়,দেখেছো কান্ড।"
আলতো হাতে ওর মুঠো থেকে আঁচলটা ছাড়িয়ে নেয় ও,কি নরম মিষ্টি আঙ্গুলগুলো!
ওকে কিছু বলতে হয়নি,সবটাই কানে এলো আস্তে আস্তে। " এই নাও বৌমণি,তোমার কাপড়টা ছেড়ে নাও। আজ দিদি থাকলে ঐ এসব করত। কি করবে এখন এই টুনিই ভরসা। আমি একটু বেশি কথা বলি গো। আচ্ছা যাই গোপালঠাকুরের দুধটা গরম করে দিয়ে আসি।".." ঠাকুরের দুধ গরম করবে?"..হেসে ফেলে টুনি," আরে ঠাকুর না গো নাড়ুগোপাল,ঐ তো কলিদিদির ছেলে,সেবার ওকে নিয়েই তো এখানে আসার পথে দিদি জামাইবাবু দুজনেই একসাথে আ্যক্সিডেন্টে," চোখ মোছে টুনি,ওর বোধহয় পরমায়ু ছিলো তাই ওকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিলো দিদি,একটুও চোট লাগেনি।
ফুলশয্যার রাতটা আজ অন্যরকম সুলক্ষণার জন্য,মন উজাড় করে কথা বলছে সিদ্ধার্থ। সুলক্ষণা আজ বড় চুপচাপ। আগে থেকেই অশান্তি চলছিলো ওদের মধ্যে কিছুটা কারণ খুবই বড়লোকের মেয়ে ছিলো রত্না সে মানিয়ে নিতে পারেনি এ বাড়িতে ,সেটাই চূড়ান্ত রূপ নেয় যখন ওরা কলির ছোট্ট বাচ্চাটাকে এখানে রাখবে বলে ঠিক করে। কিছুতেই মানতে পারেনা ও,যেন মনে হয়েছিলো ওর প্রাধান্য কমে যাবে। সব শোনার পর সুলক্ষণা বলে," আমাকেও তো তোমরা কিছু বলোনি,যদি আমিও ওকে মেনে না নিই।"...মুখটা অসহায় লাগে সিদ্ধার্থের," জানি সেই জন্যই তো আমি বিয়ে করতেই চাইনি আর,বাবা বড় কষ্ট পাচ্ছিলেন শুধুই বলতেন বাড়িটার লক্ষ্মীশ্রীই চলে গেছে। আর তোমার কথা শুনে বাবার কেন যেন খুব পছন্দ হয়ে গেলো। তবে বাবা পাশেই একটা ছোট ফ্ল্যাট কিনে রেখেছে আমাদের জন্য। যদি তুমি..." সবসময় শুনে এসেছি আমি অলক্ষ্মী,অপয়া। আমি কি লক্ষ্মীশ্রী ফেরাবো এখানে?" সত্যিই মেয়েটা বড় কাটখোট্টা তাই হাসে সিদ্ধার্থ,"আসলে চ্যালেঞ্জটা নিয়েই ফেললাম বলা যায়না যদি নীলা আমার ভাগ্য বদলে ফেলতে পারে।"..এবার সত্যি লজ্জা পায় সুলক্ষণা। ওর গাঢ় নীল বেনারসীর জরির ফুলগুলো স্বপ্ন জড়ায় সিদ্ধার্থর চোখে। ঘরের নিভু নিভু হাল্কা নীল আলোয় আস্তে আস্তে বলে," অত বড় নাম আমি বলতে পারবোনা 'নীলা'।
আলাদা ফ্ল্যাটে যাওয়া হয়না সুলক্ষণার গোপালঠাকুরের মায়ায় পড়ে যায় ও। সন্তানসুখ দিতে পারেনি তাই আগের ঘর ছাড়তে হয়েছিলো। সবে কনসিভ করেছিলো প্রায় মাসতিনেক তখন হঠাৎই রক্তের বাঁধভাঙা স্রোত। ছোট অপারেশন হলো,ডাক্তার গম্ভীর মুখে জানালেন মা হওয়ার সম্ভাবনা কমলো। শুরু হল বাক্যযন্ত্রণা,একমাত্র ছেলের বৌ বাচ্চা হবেনা,তাহলে তো বংশরক্ষাই হবেনা। প্রথম থেকেই অলক্ষ্মী,তাই কোন উন্নতি নেই সংসারে। পেটে বাচ্চা আর উনি কালো শাড়ি পরেন,চুল খুলে স্টাইল মারেন এমন অনেক কথাই উঠলো। শুধু চাপা পরে গেলো এই কথাগুলো যে প্রতিদিনই বরের জামাকাপড় কাচতে হত। আয়রন করতে হত এগুলো। একদিন বলাতে উত্তর পেয়েছিলো," নিজের দোষগুলো না দেখে আমাদের দোষ দেওয়া। আমরা কত কাজ করেছি এইসময় একা হাতে। তোলা কাপড়ের মত রাখা হয় তোমায়।"..সমর্থন করেনি অমিতও,মানসিক অত্যাচারে জর্জরিত সুলক্ষণা চলে এসেছিলো বাপের বাড়িতে।
শুধু রাগ আর রাগ করে কাটিয়েছে বেশ কিছুদিন,সবসময় অশান্ত হয়ে থাকতো মনটা। সিদ্ধার্থকেই শুধু বলেছিলো সবটা,মানে যদি ও মা না হতে পারে সেই কথাটা। হেসে সিদ্ধার্থ বলেছিলো," কি আছে তাতে? দুজন দুজনকে চিনে,জেনে আর আলাপ করেই কাটিয়ে দেবো না হয়।"..জীবনে চলার পথে বিধ্বস্ত দুটো মানুষ হয়ত চেয়েছিলো একটু ভালোবাসা আর সহানুভূতি। আশ্চর্য হয়েছিলো সুলক্ষণা,এমন মানুষও হয়! কে জানে যার শেষ ভালো তার সব ভালো,দেখা যাক।
নাড়ুগোপাল একদম ন্যাওটা হয়ে গেছে ওর,কিন্তু ইশারায় সব দেখালেও এখনো ছেলেটা কথা বলতে পারেনা। বেশি চিন্তা করে সুলক্ষণাই,একটু একটু করে ওর সব দায়িত্বই ও নিয়ে নিয়েছে। অফিসের সময়টুকু টুনি আর শাশুড়িমা দেখে। তার মধ্যেও বেশ কয়েকবার ফোন করে ফেলে। " মা ওকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো নাকি?".." এত ভেবোনা বৌমা,ও ওর মামার মত হয়েছে। সিধুটা অনেক দেরীতে কথা শিখেছে।"..সত্যিই কথা বললো পুচকেটা,প্রথমেই মা বলে ডাকলো সুলক্ষণাকে। একবার নয়,বেশ কয়েকবার। মা ডাকটা কি এত মিষ্টি তাই বোধহয় লোকে অনেক কষ্ট সহ্য করেও মা হতে চায়। প্রথম মাতৃত্বের স্বাদ পেলো সুলক্ষণা,প্রাণভরে আর মন ভরে নিলো সে স্বাদ। সত্যিই সুলক্ষণা লক্ষ্মীশ্রী ফিরিয়ে আনলো শ্বশুরবাড়ির। শাশুড়ি কথায় কথায় বলেন," এই বৌমা আমার খুব লক্ষ্মীমন্ত।"...হেসে বলেন সুবিমল," এবার আমি আর ভুল করিনি কি বলো?"...রাতে সিদ্ধার্থ আদরে আদরে ভাসিয়ে দিয়ে কানে কানে বলতো," নীলা.. এইই নীলা, এই যে কি হলো?আমার কপালে নীলাটা সহ্যই হয়ে গেলো শেষপর্যন্ত তাইনা?"..দুহাতে ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধে সিদ্ধার্থকে স্বপ্ন দেখে সুলক্ষণা,ভুলতে চায় অতীতকে।
কেটে গেছে মাঝে তিনবছর,সুলক্ষণার ছেলে এখন স্কুলে যায়। কদিন ধরে শরীরটা ভালো যাচ্ছেনা ওর,সিদ্ধার্থ জোর করেই ডাক্তারের কাছে নিয়ে যায়। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারেনা সুলক্ষণা কি করে হলো এমন?ও নাকি মা হতে চলেছে! খুশি হয়েও পুরোটা খুশি হতে পারেনা,গোপালের অযত্ন হবেনা তো? এক ধমক লাগায় ওর শাশুড়িমা। অনাদরে থাকা অলক্ষ্মী সুলক্ষণা ওর নাম স্বার্থক করে ছোট্ট ফুটফুটে লক্ষ্মী নিয়ে বাড়িতে ঢুকলো। মেঝেতে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে দিলেন শাশুড়িমা আর ছোট সাদা তোয়ালে,দুধ আলতায় চোবানো ছোট্ট লক্ষ্মীর পায়ের ছাপ তোয়ালেতে দিয়ে ঘরে ঢুকলো ওরা। হৈ হৈ করে উঠলো নাড়ুগোপাল," বোনু এসেছে,বোনু এসেছে। মা ওকে আমার কোলে দাও।"..." এই তো বাবা,আমি বসি আমার কোলে বসে তুমি নেবে। আচ্ছা মা এই গোলাপের পাপড়ি,দুধে আলতা এই আইডিয়াটা কার?"..." আর বলিসনা টুনি ফেসবুকে কোন ভিডিও দেখেছে।"..." আবার টুনিদির ফেসবুক!"...খুশির হাসিতে ভরে ওঠে ঘরটা।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment