Skip to main content

এমন স‍্যান্টা চাইনা

#এমন_স‍্যান্টা_চাইনা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"ইশ্ তুমি এই জামা আনলে মেয়ের জন‍্য? জানোনা ও কি রকম জামা পরে? সত‍্যি তোমাকে বলাই আমার উচিত হয়নি।"...মুখটা কাচুমাচু হয়ে যায় সুগতর। " তুমি তো জানোই আমার কতটুকু সামর্থ‍্য আর তেমন টাকাও ছিলোনা আজ তাই যা পেলাম সেটাই আনলাম,আমার তো এটা বেশ ভালো লাগলো।"...মুখটা ভেংচে দেয় শর্মি," হুঁ ভালো লাগলো ব‍্যাস উনি কিনে ফেললেন,এই জামা পরিয়ে আমি ওকে নিয়ে যাবো ইলার বিয়েতে সবাই কি বলবে। এই লোকটাকে নিয়ে যে আমি কি করি,ভগবান সারা জীবন জ্বালিয়ে মারলো।"...মায়ের কথা শুনে মৌ ও বায়না করে," এই জামাটা ভালোনা মা আমি পরবোনা এই জামা। সুমির কি সুন্দর জামা হয়েছে আর আমারটা পচা।"
      মেয়েকে কাছে টেনে আদর করে সুগত," আচ্ছা মামনি,এবার এটা পরে নে পুজোর সময় একদম সুন্দর একটা জামা কিনে দেবো।"
..." হুঁ আর কত ভোলাবে মেয়েকে,আবার আনবে ফুটপাথ থেকে কিনে কিছু।"..আশ্চর্য হয়ে যায় সুগত এতগুলো বছরে শর্মি কি একটুও বুঝবেনা ওকে। এক সময় তো কম দেয়নি ওকে,এখন কোম্পানির অবস্থা ভালোনা,কোনমতে টেনেটুনে চলে যায়। চেষ্টা করে মেয়ের পড়াশোনাটা যেন ঠিকঠাক হয়।
   " ওহ বাড়িতে আসতে না আসতেই শুরু হয়ে গেলো। কি হয়েছে আমার মৌ বিটিয়া,এদিকে আয় তো দেখি।".." কাকান মা বলছে বাবা একটা পচা জামা এনেছে আমার জন‍্য,খুব বিচ্ছিরি। আমি এটা পরবোনা একদম।"
" আচ্ছা বুঝেছি,আমার মৌ বিটিয়া পরবে কেন এই জামা,আরে তোর স‍্যান্টা আছেনা? গিলি গিলি ছুঃ মন্তর,এই দেখ তো এটা কেমন দেখতে। তোর পছন্দ হয়েছে কি না?"
     জামাটা গায়ে নিয়ে একগাল হাসি ফুটে ওঠে মৌয়ের মুখে,মনটা খুশি হয়ে যায় শর্মিরও। সবার খুশির মাঝে হঠাৎই সুগতর মুখটাই ম্লান হয়ে যায়। কোথা থেকে যেন এক ঝলক ঝোড়ো হাওয়া নিয়ে এলো অয়ন হয়ত বা এক নিমেষে উড়ে গেলো শর্মি আর মৌ সেই ঝোড়ো হাওয়ায়।
         অয়ন সুগতর খুড়তুতো ভাই,খুব হৈচৈ করতে ভালোবাসে। একদম ওর মত চুপচাপ আর শান্ত নয়। বরং একটু বেশিই আড্ডাবাজ আর হাসিখুশি,মৌ কে খুব ভালোবাসে। শর্মির সাথেও ওর খুব দোস্তি। আসলে শর্মি যখন এই বাড়িতে বৌ হয়ে আসে তখন ওর বয়েসটা বেশ কম কলেজে পড়ছে। সুগত তখন বেশ ভালো ইনকাম করে তবে ওদের বয়েসের ফারাক ছিলো বেশ অনেকটা। সুগত সুন্দরী বৌয়ের আদর যত্নের কোন ত্রুটিই রাখেনি। শর্মি তখন বি.এ পড়ছে তাই ওর পড়াশোনাটা বন্ধ হোক সেটা কখনোই চায়নি সুগত অথচ নতুন বৌ একা একা কলেজে যাবে তা কি করে হয়? অথচ সুগতরও সময় নেই,তাই অয়নই তখন শর্মিকে কলেজে পৌঁছে ইউনিভার্সিটি চলে যেত। শর্মিকে দেখে বিদ্রোহ করেছিলো বৌদি বলবেনা বলে," আরে ও তো কলেজে পড়ে আমার জুনিয়ার বৌদি বলবো কেন শুনি?"..তবে বকা খেয়েছিল সবার কাছে তাই বাধ‍্য হয়ে বৌদিই ডাকে। ওর অবাধ যাতায়াত সবসময় ওদের বাড়িতে। এর মাঝেই হয়েছে অনেক ওঠা পড়া সুগত আর শর্মির জীবনে,আজকাল সুগতকে একটা অকর্মণ‍্য বলে মনে হয় মাঝে মাঝে শর্মির,কথায় কথায় এসে পড়ে যে ওর সাথে বিয়ে হয়ে জীবনটা শেষ হয়ে গেছে ওর।
        আজকাল মৌ এসে মাঝে মাঝে বাবার গলাটা জড়িয়ে ধরলেও বেশি খুশি হয় কাকান এলেই,আসলে কাকানের মত তো বাবা বড় বড় টেডি আর চকোলেট দিতে পারেনা।ও তো বাচ্চা তাই হয়ত ওর পছন্দের জিনিস পেলেই খুশি হয়ে ভুলে যায় সব কিছু।
        ওদের আনন্দের মাঝেই চায়ের কাপটা নিয়ে পাশের ঘরে গিয়ে পেপারটায় চোখ বোলাতে থাকে সুগত,সারাদিন কাজের চাপে পেপারে চোখ রাখা হয়নি। কানে আসে শর্মির হাসির আওয়াজ, এর মাঝেই অয়ন এসে এগরোলটা দিয়ে যায়। "কি রে তুই এই ঘরে চলে এলি কেন? মুড অফ? রোলটা খা ভালো লাগবে।".." আমার খিদে নেই রে।".." আরে খা তো, খিদে পেয়ে যাবে।"অফিস ফেরত প্রতিদিনই মোটামুটি অয়ন চলে আসে ওর ম‍্যাজিক ঝোলায় খুশি নিয়ে। উজ্জ্বল হয়ে ওঠে শর্মি আর মৌয়ের মুখটা,কেন যেন আজকাল অয়নকে সহ‍্য হয়না সুগতর,মনে হয় ও যেন মৌকে কেড়ে নিচ্ছে ওর বাবার কাছ থেকে। তবুও ওদের হাসি মুখের ছটাগুলো নিভিয়ে দিতে ইচ্ছে করেনা সুগতর। মাঝে মাঝে ভাবে একদিন বলবে শর্মিকে কিছু তারপর আবার গুটিয়ে নেয় নিজেকে আজকাল নিজেকে একটা নপুংসক বলে মনে হয় ওর। দিব‍্যি যেন চোখ বুজে ভাইয়ের টাকায় আয়েস করছে।
         এভাবে যখন পুড়তে দেখছে একটু একটু করে ভালোবাসাকে চোখের সামনে তখন কি বলবে মনকে? নিজের ঘরে পরকে ভাগ বসাতে দেখেও চুপ করে বসে দেখবে,নাকি মনকে বলবে"মন তুই বুঝতে শেখ,সাবালক হয়ে যা এবার,তোর আর প্রয়োজন নেই সংসারে।"চোখটা একটু জ্বালা করে সুগতর,মাথাটা ধরেছে। শর্মি যদি একটু বসতো কাছে হয়ত ভালো লাগত। কফির পোড়া গন্ধ পায় পাশের ঘর থেকে,কেমন যেন নেশা লাগে ওর আলোটা নিভিয়ে চোখ বন্ধ করে।
            মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা বছর। সব অনুষ্ঠানেই মৌ একদম পরীর মত সাজে ওর কাকানের দেওয়া জামা পরে। সুগতর আয় কম হলেও শর্মিকে খুব একটা কষ্ট করতে হয়না। এই তো সেদিন অয়ন এসে বাড়িতে এসি লাগিয়ে গেলো। একটা গাড়িও কিনেছে অয়ন,শর্মি আর মৌয়ের যাতে কষ্ট না হয়। ওদের দরকার হলেই পাঠিয়ে দেয় গাড়ি,আবার কখনো বা গাড়ি ড্রাইভ করে ওদের নিয়ে চলে যায় মন্দারমণি বা দীঘা। অবশ‍্য সুগতকেও সাথে নিয়ে যায় ওরা। কখনো সুগতই কাজের অজুহাতে যায়না মৌ চলো বাবা করলেও শর্মি হয়ত খুশিই হয়। বালির ওপরে বসে মৌ যখন বাবার পাশে বসে ঘর বানায় তখন শর্মি ওড়নাটা খুলে জল ছিটোয় অয়নের গায়ে,আবার কখনো ঢেউয়ের ধাক্কায় এসে পড়ে অয়নের গায়ে। অয়ন বলিষ্ঠ হাত দিয়ে ধরে ওকে,একটু বকেও দেয় কখনো। কিন্তু সুগতর মনে হয় সবটাই অভিনয়,হয়ত এই অছিলায় শর্মির ভেজা শরীরটা আরো কাছে আসতে চায় অয়নের। সত‍্যি অয়ন হিরো,সুগত তো একটা জাষ্ট হেরে যাওয়া জিরো। আজকাল শর্মির মুখের কাছে দাঁড়াতে ভয় পায়। শর্মি বলে ওকে কাপুরুষ,মেরুদন্ডহীন,সন্দেহরোগে দুষ্ট। কি সুন্দর হজম করে সুগত। আসলে সংসারটাকে যে ও বড় ভালোবাসে,হয়ত ভালোবাসে শর্মিও সংসারকে। তাই কি সংসারটাকে স্বচ্ছল রাখার জন‍্য অয়নের মন রেখে চলে? নাকি এও একরকম নেশা,যার নাম পরকীয়া।
        অয়ন বিয়ে করেনি,যদিও বিয়ের বয়েস অনেকদিন পার হয়ে গেছে। আত্মীয় স্বজন আড়ালে কানাকানি করে যে শর্মিই বিয়ে করতে দেয়নি অয়নকে। যদিও সুগত কেন যেন দুজনকেই ভালোবাসে। অয়নকে ভালোবাসে নিজের ছোট ভাইয়ের মত আর শর্মিকে ভালোবাসে,হয়ত বা গর্বও করে সুন্দরী শর্মির জন‍্য। তাই শর্মিই হয়ত ঠিক বলে, সুগতর মেরুদন্ডটা সত‍্যিই বোধহয় সোজা নয়। নাকি সব জেনেও চোখে আর মুখে কুলুপ দিয়ে থাকে। এ নিয়েও কানাকানি হয়,সবাই বলে," আরে সুগতটা একটা ভেড়া,বলদ একটা। বৌ যা বলে তাই করে যাচ্ছে। সুন্দরী বৌ হাতে পেয়ে তার কোন দোষই দেখেনা।"
        অয়নকে সুগতও দু একবার বলেছে বিয়ে করতে। " নাহ দাদা,ও বৌয়ের কথায় ওঠাবসা করা আমার চলবেনা দাদা। এই বেশ আছি একদম স্বাধীন। তোমাকে তো দেখছি,সংসারের চাপে আধবুড়ো হয়ে গেলে।"...শর্মির মুখটা রাগে লাল হয়ে যায় বিয়ের কথা শুনলে," নিজের বৌ মেয়েকে সামলাতে পারেনা। আবার অন‍্যকে পরামর্শ দিচ্ছে। তোমার কিসের মাথাব‍্যাথা?"..
সুগত বোঝাতে পারেনা ওর কিসের মাথাব‍্যাথা। শর্মির রাগ কমাতে অয়নই বলে," বাবা আমার মৌ বিটিয়াকে না দেখে আমি থাকতেই পারবোনা। বৌ আমার লাগবেনা।"...মৌ এসে একদম কাকানের কাছে এসে বসে। দমবন্ধ লাগে সুগতর,পাশের ঘরে গিয়ে পাখাটা চালিয়ে দেয়।
            সুখে আছে শর্মি অনেক অসুখের মাঝেও,যদিও অনেকেই মুখ টিপে হাসে বলে," গাছেরও খাচ্ছে আর তলারও কুড়োচ্ছে। দম আছে সত‍্যি। বরটা অমন ভেড়া তাই আমাদের গুলো হলে বুঝত।"..সুগত মনে মনে ভাবে শর্মি কি এতেই আনন্দ পায়,যে দুজন পুরুষ ওর ভালোমন্দ নিয়ে প্রতিনিয়ত ভাবে। কে জানে?
             প্রতিবছর মৌ মোজা নিয়ে পাশে শোয় সেই ছোট্ট থেকে পঁচিশে ডিসেম্বরের রাতে। একসময় সুগতই এটা শুরু করেছিলো,আজও আনে মৌয়ের জন‍্য গিফ্ট,ওর সামর্থ‍্যমত। তবে প্রতিবারই শর্মির যথারীতি পছন্দ হয়না।" ইশ্ এই কটা চকলেট আর পেন মাত্র! মৌটা কত কি আব্দার করে রেখেছে আগে থেকে।"..সুগত কিছু বলেনা,ও জানে মৌয়ের বালিশের পাশটা ভরে যাবে ওর স‍্যান্টার দেওয়া উপহারে। সুগত এখন একটা অক্ষম আর বাতিল স‍্যান্টা।
              এবার অয়নের উদ‍্যোগেই ওদের দার্জিলিং আসা। যদিও সুগত আপত্তি তুলেছিলো," তোরা যা মা কাকান তো আছেই।" তবুও শর্মি আর মৌয়ের কাছে টেকেনি কোন অজুহাত। প্রজাপতির মত পাখা মেলেছে মৌ আর শর্মি খুব আনন্দ করছে ওরা,কালই তো পঁচিশে ডিসেম্বর তাই মৌয়ের খুব মজা। ও এখন ক্লাশ সেভেনে উঠেছে তবুও সেদিন মোজা নিয়ে শোবেই। ম‍্যালে বসে সুগতই বলছিলো," জানিস মৌ স‍্যান্টা কিন্তু সত‍্যি আসেনা। মা বাবাই স‍্যান্টা হয়। তোর বাবাটা তো এখন আর ভালো কিছু দিতেও পারেনা।"..অভিমান করে কাকানের কাছে দরবার করে মৌ। সুগতই বকুনি খায় অয়নের কাছে। " এবার তো স‍্যান্টা আসবেই এখানে,আর আনবে কত গিফ্ট। বাবা কিছুই জানেনা।"
             অয়ন তিনটে ঘর নিয়েছে, পাশাপাশি দুটো ঘরের একটায় সুগত,আর আরেকটায় মৌ আর শর্মি মাঝে দরজা। অয়নের ঘরটা একটা ঘর বাদে। মা ঘুমিয়ে পড়েছে,তবুও আজ ঘুম আসেনা মৌয়ের,বাবার কথা মনে হয়,সত‍্যিই কি স‍্যান্টা আসেনা। আজ দেখতেই হবে সত‍্যি সান্টা আসে কিনা। জেগে থাকতে থাকতে কখন যে চোখটা জড়িয়ে এসেছিলো বুঝতেই পারেনি,হঠাৎ ঘুমটা ভেঙে যায় ওর," ইশ্ স‍্যান্টা চলে গেছে এসে যাহ্।" বালিশের পাশে হাত দিয়ে গিফ্ট পায়না,অন্ধকারে মাকে ধরতে যায়। মাকে পায়না,বেশ ভয় লাগে। বিছানা থেকে আস্তে আস্তে উঠে বাইরে উঁকি দেয়,বারান্দায় হাতে গিফ্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে কাকান মাকে জড়িয়ে আদর করছে,মা চুমু খাচ্ছে কাকানকে। শুনতে পায় মা বলছে," আমার স‍্যান্টা।"...একদলা কান্না ওঠে মৌয়ের গলা দিয়ে,ভয় পায় ও। ঘরে এসে শুয়ে পড়ে চুপ করে।
          দরজা খুলে প্রথমে ঢোকে শর্মি,একটু বাদে অয়ন। গিফ্টগুলো সাজিয়ে দেয় মৌয়ের বালিশের পাশে। হঠাৎই আলোটা জ্বলে ওঠে," তোমার দেওয়া গিফ্ট আমার চাইনা কাকান,এমন স‍্যান্টা আমার চাইনা। বাবা ঠিকই বলেছিলো স‍্যান্টা আসেনা,মা বাবারাই স‍্যান্টা হয়। তুমি মায়ের স‍্যান্টা,আমার নও। তাই তো মা তোমায় আদর করে বলছিলো স‍্যান্টা।"..বিছানা থেকে উঠে পর্দাটা সরিয়ে পাশের ঘরে বাবার কোলের কাছে বসে মুখ ঢাকে মৌ। পাশের ঘরে হতবাক তখন দুটো মুখ শর্মির আর অয়নের। আজ নিজের সন্তানের কাছে ধরা পড়ে গেছে শর্মি,তার থেকে লজ্জার বোধহয় আর কিছুই হয়না। খারাপ লাগে অয়নেরও,নিজে বিয়ে না করে এদের মাঝেই হয়ত খুঁজতে চেয়েছিলো... উত্তর পায়না কি খুঁজতে চেয়েছিলো। আর কোনদিনই হয়ত মৌ আর ওর স‍্যান্টাকে ক্ষমা করবেনা।
                সুগত কখন যে এসে দাঁড়িয়েছে ঘরে বুঝতেই পারেনি ওরা। আজ সুগতর না বলা কথাগুলো হয়ত মৌ বলে দিয়েছে। ধরা পরে গেছে শর্মি আজ নিজের ছায়ার কাছে। তবুও সুগত মনে মনে ভাবে,যীশু বলেছেন 'ওরা কি করছে তা ওরা জানেনা'..আজ খুশির দিন তাই আমরাও আজ সব ভুলে যাবো।"মাথা নিচু করে বেড়িয়ে আসে অয়ন,কান্নায় মুখ ঢাকে শর্মি,ওর মাথায় হাত রাখে সুগত। হয়ত শর্মিকে অয়নের থেকে অনেক অনেক বেশি ভালোবাসে সুগত তাই ওকে আর মৌকে নিয়েই হাসিমুখে থাকতে চায়।
সমাপ্ত:-
          
                    

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...