Skip to main content

মন্দবাসার ঘর

#মন্দবাসার_ঘর#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

সবুজ লেহেঙ্গার সাথে লাল সবুজ কাঁচের চুড়ি রিনরিন করে বাজছে টিকলির। লাল ওড়নাটা উড়ছে পাখার হাওয়ায়," ইশ্ সাজলে যে কি গরম লাগে! এর থেকে ক‍্যাজুয়াল ওয়‍্যারই ভালো। মা যে কেন এই ড্রেসটা কিনে দিলো।"..টিকলির মাসতুতো দাদার বিয়ে আজ ওরা বরযাত্রী এসেছে। বিয়ে বাড়ি মানেই হাহা হিহি আর ফ‍্যাশন শো আর জমিয়ে খাওয়া। সবাই সেজেগুজে জমিয়ে মজা করছে। হঠাৎই শুনতে পায়," তোমার নাম কি? অনেকক্ষণ থেকে তোমায় দেখছি খুব মিষ্টি তুমি।"
  অপরিচিত গলার আওয়াজে মুখ ফেরায়," আমি টিকলি,কেন বলুন তো?"..."কেন আবার,তোমায় খুব ভালো লাগলো তাই আলাপ করলাম। আমি কনের মাসি।"..এবার হেসে ফেলে টিকলি,বরের মাসি আর কনের মাসি‌,তবে ভদ্রমহিলা বেশ ভালো সুন্দর ব‍্যাবহার ওর সাথে মিষ্টি হেসে গল্প করলেন। তারমধ‍্যে এসে পড়লো ওর মাও তাই দোস্তি হয়ে গেলো দুই মাসির মধ‍্যে।
       বেশ মজায় কেটে গেলো দিনগুলো মানে টিকলির রাঙাদার বিয়েতে খুব মজা করলো ওরা। বৌভাতের দিন জরির কাজ করা গোলাপী মেখলা পরেছে টিকলি তার সাথে মা পরিয়ে দিয়েছেন হাল্কা সোনার গয়না সত‍্যি চোখ ফেরানো যাচ্ছেনা। "ও দিদিভাই কি সুইইট লাগছেরে তোকে!".." মা তো তোকেও বললো রাজি হলিনা।".." ধুসস্ আমার ঐসব ভালো লাগেনা। আমার টপ স্কার্টই ভালো।"..ওরা দুই বোন টিয়া আর টিকলি। টিয়া ছোট আর টিকলি বড়। ওর মা বলেন," আমার ছেলে আর মেয়ে,ছোটটা একদম ছেলেদের মত,আর বড়টা একটু বেশিই মেয়ে।"
           বৌভাতের দিনও ঐ মাসিমণির সাথে দেখা হয়ে গেলো,উনি টিকলিকে তাই বলতেই বলেছেন। কথাও হলো ওদের দুই বোনের সাথেই। উনি আবার ছবিও তুললেন ওদের সাথে।" আমার তো মেয়ে নেই,তাই খুব ভালো লাগে মেয়ে,সুন্দর করে সাজানো যায়। একটাই ছেলে পড়ে আছে কোন বিদেশে,তার সাথে দেখাই হয়না বেশি।"
                টিকলির রাঙাদার বিয়ের পর ওদের বাড়িতে খেতে বলেছে মা। নতুন বৌদিভাইয়ের সাথে ওদের বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে।" এই যে আমার সুইট রায়বাঘিনী তোমার তো বিয়ের সম্বন্ধ এসে গেছে গো। তুমি বললেই হয়ে যায়।".." ধ‍্যাৎ বৌদিভাই কি যে বলো,এক্ষুণি বিয়ে। এখনো তো আমার পড়াশোনাই হলোনা।".." আমি মাসিমণিকে বলেছি,এবার তোমরা দেখো কি করবে।"..জানতে পারে বৌদিভাইয়ের মাসির খুব পছন্দ হয়েছে টিকলিকে ওনার ছেলের জন‍্য যে বিদেশে থাকে।
             টিকলির সাথে একটু বয়সের ফারাক থাকলেও ওর মা লুফে নিলেন সম্বন্ধটা। এন আর আই ছেলে,একমাত্র সন্তান বাবামায়ের। ওদের তুলনায় অবস্থাও ভালো। কথা আর আলাপ ভিডিও কলিং আর হোয়াটসআ্যপেই হয়ে গেলো। তবুও সামনাসামনি দেখা না হলে হয়,তাই শুনলো ছেলে আসছে এই সামারে। ওর বন্ধুবান্ধব আত্মীয়স্বজন সবাই মোটামুটি জেনে ফেলেছে ব‍্যাপারটা। সত‍্যি টিকলিটার ভাগ‍্য এক দেখাতেই একেবারে এন আর আই বর,ওহ্ ভাবা যায়না। সদ‍্য যৌবনে পা রাখা টিকলিও বুনতে শুরু করলো ভালোবাসার গল্প জরির সুতোয়,স্বপ্ন সাজালো চোখের পাতায়,পরলো গাঢ় কাজল কালো দুইচোখে। আলাপ হলো প্রতীকের সাথে,একটু যেন দাদা দাদা মত গুরুগম্ভীর তবে দেখতে বেশ হ‍্যান্ডসাম খুব ফর্সা,একটু বেশিই ওয়েল ম‍্যানারড। টিকলি কিছু না বললেও টিয়া বললো," আচ্ছা দি,ছেলেটা কেমন কাকু মার্কা দেখেছিস,আমার তো একটুও ভালো লাগেনি। কেমন যেন গোমড়ামুখো। বিদেশে থাকে তো তাই বেশি ঘ‍্যাম।"..বোনের কথায় একটু কিন্তু লাগলেও তখন যেন একটা ঘোরে ছিলো টিকলি আর ওর মা। তাছাড়া ওর হবু শাশুড়ির তো কোন তুলনাই নেই যেন পারলে আজই বৌ করে নিয়ে যায় টিকলিকে। একগাদা বিদেশী চকোলেট পারফিউম ড্রেস সব দিয়ে গেলেন ওদের দুইবোনের জন‍্য বললেন ছেলে এনেছে। ততক্ষণে টিকলির মন উড়ে গেছে সুইজারল‍্যান্ডে হানিমুন করার জন‍্য। বন্ধুরাও খুব মজা করছে কেউ বা বলছে," টিকলি আমাদের জন‍্যও দেখিস এমন একটা ছেলে ওদেশে, নিশ্চয় প্রতীকদার বন্ধু থাকবে কেউ। বায়োডেটাটা পাঠিয়ে দেবো।"
          টিকলির সাথে প্রতীকের বিয়ে হয়ে গেলো। ওকে দোকানে নিয়ে গিয়ে পছন্দমত শাড়ি গয়না, ড্রেস সব কিনে দিয়েছেন শাশুড়িমা। টিয়াকেও কিনে দিয়েছেন ওর পছন্দমত ড্রেস,সবটাই নাকি ছেলের অর্ডার। ওদের তত্ত্ব দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় সবার। তবে প্রতীক বিয়ের সাতদিনের মধ‍্যেই চলে গেলো,হঠাৎই কি একটা জরুরী কাজ পরে গেছে। কথা হলো মাসছয়েক বাদেই টিকলির পরীক্ষা তারপর ও টিকলিকে সাথে নিয়ে যাবে। ফুলশয‍্যার রাতে খুব লজ্জা পায় টিকলি,আসলে তেমন করে প্রতীকের সাথে আলাপ করার সুযোগ হয়নি। ফুলের গন্ধ মেখে বসেছিলো ও হলুদ আর রানী পাড় বেনারসী আগুন জ্বেলেছিলো গায়ে। প্রতীক জিজ্ঞেস করে," তোমার বয়ফ্রেন্ড ছিলো? ডেটে গেছো কখনো? আর ইউ ভারজিন?"..লজ্জায় মাথা নীচু করে টিকলি,টিয়া হলে দিতো কথা শুনিয়ে ও পারলোনা। ডেটে গেছে,কি বলছে এসব প্রতীক? মাথা নাড়ে ও। জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করলো প্রতীককে একই কথা,হয়ত একটু সংকোচ আর ভয়ও পেলো। ততক্ষণে প্রতীকের গরম নিশ্বাস পড়ে ওর ঘাড়ে চোখ বন্ধ করে টিকলি। অনভিজ্ঞ ভারজিন টিকলি ভারজিনিটি হারায় আত্মসমর্পণ করে প্রতীকের কাছে পুরোপুরি। ফুলের গন্ধে হারিয়ে যায় ওদের বেডরুমের নিভু নিভু আলোয় স্বপ্নের দেশে। ওর গাঢ় গোলাপী ঠোঁটদুটো ভিজিয়ে দিতে দিতে প্রতীক বলেছিলো," টিকলি তোমার বয়েস কম,এখনো পড়াশোনা করছো তাই আমাদের একটু সাবধানে থাকতে হবে। হানিমুনটাই তো হলোনা আমাদের এবার তাই কেউ যেন এর মাঝে আমাদের মাঝখানে না আসে।"..আবারও লজ্জা পায় টিকলি।
              প্রতীক চলে যায়,বাপের বাড়িতে এখন টিকলি। রাতে ভালো করে ঘুম আসেনা ওর ,প্রতীকের সঙ্গে মাঝে মাঝে ভিডিও কল হয় তবে খুব কম। ওর নাকি ভীষণ কাজের চাপ তাই সবসময় চ‍্যাটে থাকাও সম্ভব নয়। শ্বশুরবাড়ি আর বাপেরবাড়ি করে কেটে গেলো বেশ কিছুদিন, টিকলির পরীক্ষাও হয়ে গেলো। দেখতে দেখতে প্রায় বছর ঘুরে আসছে,সামনের মাসেই ওর ম‍্যারেজ আ্যনিভার্সারী,তবুও প্রতীকের যেন কোন তাপ উত্তাপ নেই। বললেই বলে ভিসার ব‍্যবস্থা হচ্ছেনা। খুব রাগ করে টিয়া," মা তোমরা আর কতদিন চুপ করে থাকবে বলতো? ওর শাশুড়ির সাথে কথা বলো। আমি দেখছি ভিসার ব‍্যবস্থা করা যায় কিনা। ওরা যা বলছে তাই তোমরা বিশ্বাস করো,অদ্ভুত একেবারে। দিদির দিকে তো আর তাকানো যায়না। টাকাটাই কি সব জীবনে?"
           শেষপর্যন্ত টিয়াই ব‍্যবস্থা করলো সব,যদিও খরচ পুরোটাই দিলেন টিকলির শাশুড়িমা ওনারও আশ্চর্য লাগছে ছেলের কান্ডকারখানা। প্রতীককে জানানো হলো,খুবই বিরক্ত হলো," মা তোমাদের কি একটু সবুর হলোনা,আমি শিফ্ট করছি জাষ্ট,একটা বড় ফ্ল্যাটে এলাম। সব এলোমেলো। সব আ্যরেঞ্জ করে আমিই নিয়ে আসতাম ওকে। "...." ঠিক আছে,টিকলি গিয়ে সব গুছিয়ে নেবে,এখন তো বেশিদিনের ভিসা পায়নি। কদিন থেকে আসুক,ওকে একটু ঘুরিয়ে দিস কাছাকাছি যতটা সম্ভব।"
                    সবটাই নতুন টিকলির কাছে,তবে সঙ্গী একজন পাওয়া গেছিলো টিয়ার বন্ধু পরমের দাদা। তেমনভাবেই টিকিট কাটা হয়েছিলো স্বপ্নিলদার ফ্লাইটেই যাতে টিকলি থাকতে পারে। ওহ্ সত‍্যি কিছু বকবকিয়া বটে ছেলেটা,কানে ইয়ারপ্লাগ আর কটন ঢুকিয়ে বসে টিকলি। তবে খুব কেয়ারিং,সবসময় ওর দিকে নজর রাখছে। কখন কি খাবে,ওর শরীর খারাপ লাগছে কিনা সবটাই। এমন কি ওখানে কি কি ঘোরার জায়গা আছে পুরোটাই। দুবাই এয়ারপোর্টে অনেকক্ষণ থাকতে হলো,ওই বাড়িতে আর প্রতীকের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিলো। প্রতীকের মত গম্ভীর নয় একেবারে মিস্টার বক্তিয়ার ওহ্ কিছু কথা বলতে পারে,আর তেমনি খাদক,কিছু খেতে পারে। নিজেও খাচ্ছে আর টিকলিকেও বলছে," আরে আপনি তো দেখছি কিছুই খাননা,আরে লজ্জা পাবেননা,খান ভালো করে। নাহলে আপনার হাবি বলবে আমি আপনাকে একদম দেখভাল করিনি। আর পরম টিয়া তো আছেই।"...হাসে টিকলি মনে মনে বলে আপনার যত্নের ঠ‍্যালায় আমার প্রাণ যায় যায়।
                এয়ারপোর্টে এসেছে প্রতীক। " ওহ্ আপনি কিন্তু খুব হ‍্যান্ডসাম,এই নিন আপনার গিন্নী সামলান। সারা ফ্লাইটে মোটামুটি উপোশ করে এসেছে। আমি তো পারিনি, দেখুন আপনি পারেন কিনা। একটু হাসে প্রতীক,হাত নাড়ে টিকলি," আসবেন কিন্তু একদিন। "..." না না একদম না কাবাবে হাড্ডি হওয়ার মধ‍্যে আমি নেই। তাছাড়া আমার আস্তানাটা অনেক দূরে। এনজয় আ লট,বাই..টেক কেয়ার।"
                   প্রতীকের সাথে ওর স্বপ্নের সংসারে আসে টিকলি। আজ আনন্দে টিকলি একটু বেশিই কথা বলছে,তাড়াতাড়ি ফোন করলো বাড়িতে আর শ্বশুরবাড়িতে। প্রতীক বলে," তুমি আজ খুব বেশি কথা বলছো যেন,একটু আস্তে বলো। ঐ ভদ্রলোকও দেখলাম খুব বেশি কথা বলেন।"..চুপ করে যায় টিকলি হয়ত বা একটু ধাক্কা খায়। রাতে তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ে ওরা,কিন্তু প্রতীক পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো কেন। আজ বড় কাছে পেতে ইচ্ছে করে প্রতীককে টিকলির কিন্তু আত্মসম্মানে লাগলো খুব। কেন যেন প্রতীকের সবই কেমন যেন অচেনা লাগলো টিকলির। মনে হলো এই সংসারটা যেন ওর নিজের নয়,সবটাই অন‍্যের কেমন যেন পর পর। একটু বকুনিও খেলো প্রতীকের কাছে ওয়াশিং মেশিন চালাতে গিয়ে। " শোন,এটা বেশ অন‍্যরকম গ‍্যাজেট,ওখানকার মত নয়। একটু বুঝে চালিয়ো। আর এখানে তোমার জামাকাপড় রেখো,এত গুচ্ছের জিনিস এনেছো কেন? এই ওয়ার্ডোবটাতে হাত দিয়োনা। এখানে আমার অনেক জরুরী জিনিস আছে।"..অবাক লাগে টিকলির হয়ত কান্নাও পায়। " এ কোন সংসারে ও এলো? এতো ওর স্বপ্নের সংসার নয়। কই প্রতীক তো ওকে একবারও ভালোবাসলোনা কাল থেকে।প্রায় দিনদশেক এসেছে টিকলি এর মধ‍্যে দুদিন উইকএন্ডে প্রতীক ওকে ঘুরিয়ে নিয়ে এসেছে। সত‍্যি কি সুন্দর জায়গা,চোখ মন জুড়িয়ে যায়। সেদিন রাতে টিকলিকে কাছে টেনে নিয়েছিলো প্রতীক আদর করেছিলো অনেক রাত পর্যন্ত। মনের অভিমান মুছে গিয়েছিলো টিকলির পরিতৃপ্ত হয়েছিলো স্বামীসোহাগে। পরদিন খুব খুশি হয়ে বাড়িতে ফোন করেছিলো,নিশ্চিন্ত হয়েছিলো সবাই। টিয়া বলেছিলো," দি তুই কবে আসবি? তোর ভিসা যে কবে শেষ হবে একদম বোর হচ্ছি। এর পর যখন যাবি তখন তো তোর পাত্তাই পাবোনা।" তবে টিকলির মনটা খারাপ হয়েছিলো প্রতীককে ছেড়ে যেতে হবে বলে।
                  পরদিন প্রতীক তখন অফিসে,টুকটাক কিছু রান্না করছিলো টিকলি রাতের জন‍্য হঠাৎই বেল বাজে। দরজা খোলে ও,দেখে একজন বিদেশী মহিলা,প্রতীকের খোঁজ করছে। জানতে চায় ও কে? টিকলি বলে ও প্রতীকের স্ত্রী,খুব রেগে যায় মেয়েটি। জানতে পারে মেয়েটি প্রতীকের সাথে লিভ ইন রিলেশনে থাকতো,হঠাৎই কিছুদিনের জন‍্য ওর ট্রান্সফার হয়ে যায় ইতালিতে। কিন্তু ও প্রেগন‍্যান্ট তাই এখানে থাকবে বলে চলে এসেছে। প্রতীক ফোনে পাচ্ছেনা বেশ কিছুদিন তাই নিজেই চলে এসেছে। কারণ এই সময় ওর বাচ্চার বাবার কাছে থাকা জরুরী। টিকলির পায়ের তলার মাটি সরে যায়,টিকলিকে তোয়াক্কা না করে মেয়েটা ঢুকে যায় ওদের ফ্ল‍্যাটে। ওদের বেডরুমে ঢুকে ওয়ার্ডোব খুলে ড্রেস বের করে চেঞ্জ করতে যায়। সবটাই জলের মত পরিষ্কার হয়ে যায় ওর কাছে। মাংসটা পুড়ছে গন্ধ পায় টিকলি,কিছু ভালো লাগেনা অন‍্য ঘরে গিয়ে অঝোরে কাঁদে। হায় ভগবান এত বড় প্রতারণা! তাই হয়ত ওকে এখানে আনার ব‍্যাপারে কোন উৎসাহ ছিলোনা প্রতীকের। এখন কি করবে ও,কোথায় যাবে?
                    প্রতীক বাড়ি ফেরে,সবটাই বুঝতে পারে কিন্তু কিছু করার নেই লিজা প্রেগন‍্যান্ট তাই ওকে আ্যভয়েড করা যাবেনা,ইচ্ছে করেই মেয়েটা এমন করলো। প্রতীকের জামার কলারটা আঁকড়ে ওর বুকে অঝোরে কাঁদে টিকলি চিৎকার করে," আমি সবাইকে সব বলে দেবো,চরিত্রহীন অসভ‍্য একটা ছেলে। আমি ভারজিন কিনা জিজ্ঞেস করেছিলেনা তুমি? তুমি কি? কেন ও আমার বেডরুমে শুয়ে আছে। তুমি কিছুতেই ওর কাছে যাবেনা,আমি যেতে দেবোনা তোমাকে।"..প্রতীক শান্ত করতে চায় টিকলিকে কিন্তু পারেনা,নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে টিকলির আর তার সাথে প্রতীককেও। লিজা এসে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় প্রতীককে। ওকে বাইরে রেখে ও দরজা বন্ধ করে দেয়। ডাইনিং টেবিলের সোফায় বসে সারারাত কাঁদে টিকলি,ঘেন্না করে নিজের ওপর। না জেনেশুনে কি যে ভুল করেছে তাই মনে হলো,কিন্তু প্রতীক তো বৌদিভাইয়ের দাদা ওরা কি কিছুই জানতোনা এই ব‍্যাপারে। নাকি জেনেশুনে ওকে ঠকিয়েছে ওরা, আজ ওর মনের আনাচে কানাচে হাজার প্রশ্ন। কয়েকঘন্টায় ওর ভালোবাসার ঘর মন্দবাসার ঘর হয়ে গেছে। এ যেন এক নরক,যেখানে ওর ভালোবাসার মানুষ ওর সামনেই অন‍্য কারো সাথে রাত কাটাচ্ছে হয়ত বা লিজা ওকে জড়িয়ে চুমু খাচ্ছে। আর ভাবতে পারেনা। চারিদিক নিস্তব্ধ,টিয়ার কথা খুব মনে হলো কেন যেন প্রতীককে ওর পছন্দ হয়নি। একটা ফোন করবে টিয়াকে,বলবে সব কথা,হাতটা বাড়ায় ফোনের দিকে। না না ওরা ভীষণ চিন্তা করবে।
                             "আমি এখানে থাকবোনা,তুমি আমাকে পাঠিয়ে দাও,এক্ষুনি"..চিৎকার করতে থাকে টিকলি। " তুমি এখানে নিজের ইচ্ছেতে এসেছিলে,আমি তো বলিনি আসতে। আমার মানসিক চাপটা বোঝার চেষ্টা করো।".." আমি কিছু জানিনা,তুমি একটা হিপোক্রিট। নীচ একটা লোক।"...এক ধাক্কায় সরিয়ে দেয় প্রতীককে টিকলি,কি করবে এই অচেনা জায়গায় ও?
               প্রতীক বাধ‍্য হয় টিকলিকে পাঠিয়ে দিতে। চাপা মেয়ে টিকলি,অসহ‍্য যন্ত্রণা ভোগ করেছে একা কাউকে বলেনি। তবে ফিরে সব কথা টিয়াকে বলে,টিয়া ছাড়েনা ওদের,যথেষ্ট ঝামেলা হয় দুই পরিবারের মধ‍্যে। শাশুড়িমাকে দেখে সত‍্যি কষ্ট হয় টিকলির হাতজোড় করেন ওদের কাছে," বিশ্বাস করুন,আমরা কিছু জানতাম না। আমি নাহলে কখনো এত সুন্দর একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতাম না।" কান্নাকাটি করে ওর বৌদিভাইও। ওদের বিয়ের একবছরের মধ‍্যেই সবটা শেষ হয়ে গেলো।
                 টিকলিকে জীবনের মূলস্রোতে ফেরাতে ওরা হিমসিম খেয়েছে। তার উপর আত্মীয়স্বজনের কৌতূহল টিটকিরি এসব তো ছিলোই। মাঝে কেটে গেছে চারটে বছর,টিকলি এখন একটা চাকরি করে, একটু একটু করে মুছতে চেষ্টা করেছে শরীর আর মনের ক্ষত আর দুঃস্বপ্নের রাতগুলো। বাঁচতে চায় খুশি রাখতে চায় নিজেকে। স্ট্রেইট হেয়ার পিঠে ট‍্যাটু আর ওয়েষ্টার্ন আউটফিটে একদম অন‍্য রকম লুক টিকলির। " দি কি হট আর সেক্সি লুক হয়েছে রে তোর। ওহ্ জাষ্ট ফিদা হয়ে যাবে লোকজন।"..."বোন ভালো হবেনা বলছি।"
                      টিয়ার বিয়ের কথা হচ্ছে পরমের সাথে। অনেকদিনের বন্ধুত্ব ওদের,যাক্ তবুও ভালো টিয়াকে ঠকতে হবেনা ওর মত। ওদের মায়ের খুব মন খারাপ বড় মেয়েকে রেখে ছোটমেয়ের বিয়ে দিতে হবে। সামনে রবিবার পরমের বাড়ির লোকজন আসবে একেবারে টিয়াকে দেখে কথা পাকা করে যাবে। তাই বেশ তোড়জোড় চলছে।
            টিয়াকে নিজের হাতে সাজিয়ে দিয়েছে টিকলি মনের মত করে। নিজে সরে যায় বন্ধ ঘরে, কি দরকার,ওকে দেখলেই হয়ত কথা হবে আবার। তবুও টিয়া এসে ডাকে," দি চল প্লিজ আমার জন‍্য,নিচে সবাই তোর খোঁজ করছে।"
         পরমের মায়ের কথায় ওরা ধাক্কা খায়,উনি বলেন বড় মেয়েকে রেখে ছোটমেয়ের বিয়ে হবে এতে ওনার খুব আপত্তি আছে। ওনাদের অনেক আত্মীয়স্বজন সবাই কথা বলবে। তাই টিকলির বিয়েটা আগে হলেই ভালো। রাগ করে উঠে দাঁড়ায় টিয়া ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে টিকলিও অপমানে রাগে লাল হয়ে যায় মুখটা। " আন্টি তুমি তো সব জানো,তাও? পরমকে বলে দিয়ো বিয়েটা আমাদের হবেনা। আমি ভাবতেই পারছিনা..."। হেসে ফেলেন পরমের মা," তোর তো খুব মেজাজ টিয়া,বাপরে বাপ। এদিকে আয় তো। মানে আমি বলছিলাম আমার বড় ছেলের টিকলিকে খুব পছন্দ তাই বড় ছেলেকে রেখে কি করে ছোটর বিয়ে দি? দরকার হলে একসাথেই দেবো। যদি আপনাদের সবার মত থাকে।"....
                 কিছুক্ষণের জন‍্য চুপ করে যায় সবাই বুঝতে পারেনা টিয়াও এর মধ‍্যেই পরম আর স্বপ্নিল ঢোকে। " এই আমার বড় ছেলে, মানে আমার এই দিদির ছেলে। যদি আপনাদের কোন আপত্তি না থাকে।"....চোখ বড় বড় করে টিয়া বলে," আবার মাসতুতো ভাই?....পরমের দিকে তাকিয়ে মুখ ভ‍্যাঙায়। " চোরে চোরে মাসতুতো ভাই না রে,আমরা দুজনেই খুব শান্তশিষ্ট, এরপর পত্নীনিষ্ঠ হয়ে যাবো।"..বলে পরম।
                  টিকলিকে হাত ধরে নিয়ে আসে টিয়া,গালদুটো এখনো লাল ওর তবে হয়ত তাতে নতুন স্বপ্নের রঙ ধরেছে, ইশ্ সেই খাদক আর বকবকিয়া ছেলেটা! তবে খুব কেয়ারিং ও জানে সেটা। টিয়ার মাসিশাশুড়ি হীরের টিকলি আর টানা নথ পরিয়ে আশীর্বাদ করেন টিকলিকে। " আমাদের বংশের নিয়ম,সাথে করেই নিয়ে এসেছিলাম। দিভাইকে ভালোবাসার ঘরটা বোধহয় শেষপর্যন্ত গড়ে দিতে পারবে টিয়া তাই ও আশীর্বাদের বালাজোড়া হাতে পরে নেয়। আজ খুব টাইট একটা হাগ দিতে হচ্ছে দিদিভাইকে। স্বপ্নিলকে জড়িয়ে ধরে একমুঠো মিষ্টি ভালোবাসার হাসি টিয়ার দিকে ছড়িয়ে দেয় পরমও।
              স্বপ্নিলের চোখে চোখ রেখে আবার স্বপ্ন দেখলো টিকলি। ওর কপালের হীরের টিকলিটা সরিয়ে ভালোবাসার গাঢ় লাল রঙে সিঁথিটা লাল করে রাঙিয়ে দিলো স্বপ্নিল। লজ্জাবস্ত্র দিয়ে বন্দী করে রাখলো ওর হৃদয়বন্দী ভালোবাসাকে সারাজীবনের মত।

সমাপ্ত:-
            
                 

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...