Skip to main content

রান্না

#রসেবশে_রেসিপি#
#একচামচ_তেলে_চিকেরুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

মা করতো এই রান্নাটা। মা মাংস খেতোনা কখনোই,এমনকি হাত দিয়ে নাড়তোনাও। কিন্তু আমাদের রান্না করে খাওয়াতো খুব যত্ন করে,কখনোই বিরক্ত হতনা। তাই আমার ছোটবেলায় বাবা,বড় হওয়ার পর আমি মায়ের নির্দেশমত চিকেনটা ম‍্যারিনেট করতাম মানে হাত দিয়ে মাখাতাম রান্নাটা কি আজ শেয়ার করবো আপনাদের সাথে।
উপকরণ..
চিকেন-এক কেজি
পেয়াজ কুঁচি-পাঁচটা পেঁয়াজের
আদাবাটা- দু চামচ।
রসুনবাটা-একচামচ
রসুনের কোয়া-দশ বারোটা গোটা
লবণ হলুদ পরিমাণমত
টকদই এক কাপ
তেল বড় চামচের এক চামচ,প্রয়োজনে দুচামচও দিতে পারো।
লঙ্কার গুড়ো- একচামচ,অথবা কাঁচালঙ্কা বাটা বা গোটা কাঁচালঙ্কাও দেওয়া যায়।
জিরেরগুড়ো,আর ধনেরগুড়ো বা বাটা দুচামচ থেকে তিনচামচ।
টম‍্যাটো দিতে চাইলে একটা টম‍্যাটো।
গোটা তেজপাতা দুতিনটে।

প্রণালী:- মাংস ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে একে একে লবণ হলুদ,পেঁয়াজকুচি,আদা,রসুন,টকদই,টম‍্যাটোকুচি,কাঁচালঙ্কা,সরষেরতেল সবদিয়ে মাখিয়ে নিতে হবে ভালো করে। ওতে তেজপাতা আর গোটা রসুনও দিয়ে দিতে হবে।
ধনে জিরের গুড়ো আর শুকনো লঙ্কাগুড়ো একসাথে একটু জল দিয়ে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
       ঘন্টা দুয়েক মাখিয়ে রাখতে হবে বাইরে,ফ্রিজে নয়। তারপর মুখ ছড়ানো প‍্যানে বা কড়াইয়ে মাংসের মিশ্রণ ঢেলে প্রথমে গ‍্যাস কমিয়ে ঢাকা দিয়ে তারপরে গ‍্যাস বাড়িয়ে কষতে হবে। টকদই দেওয়াতে বেশ তেল বেড়িয়ে আসবে  কষানো হলে,জিড়ে ধনে লঙ্কার মিশ্রণ দিয়ে একটু জলের ছিটে দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিতে হবে নিভু আঁচে ঢাকা দিয়ে। মাংসটা কষাও খেতে পারেন,অথবা সামান‍্য গরম জল দিয়ে ঝোল রাখতে পারেন।

পনেরো তারিখ থেকে আমি গৃহবন্দি,আমারও তো সংসারের বাইরে একটা খোলা জানলা ছিলো। ছিলো কিছু কচিকাচা সদ‍্য যৌবনে পা দেওয়া কচিমুখের দল যারা অনেক সময় মাথা খেতো কখনো পড়ানোর জন‍্য আবার কখনো গল্প শোনানোর জন‍্য।ভোরের বাতাসের মিষ্টি সুবাস কত দিন মাখিনি মুখে কতদিন ভিক্টোরিয়ার আসেপাশের সবুজগুলো চোখকে ছুঁয়ে যায়নি।
    আজ সত‍্যিই আর কেন যেন লিখতে ইচ্ছে করলোনা তাই সকাল থেকে কাজেই ডুবিয়ে রেখেছিলাম নিজেকে আসলে অকেজো হতে কেন যেন খুব ভয় পাই।মনে হয় কাজই আমাদের বাঁচিয়ে রাখে কাজেই খুঁজি দেহের আর মনের মুক্তি। রান্না জলখাবার বানানো প্রতিদিনই থাকে তাই সেগুলো সেরে আজ বিকেলে একটু অন‍্য কাজ নিয়ে বসলাম। আজ ঘি বানাবো মানে একদম ঘরে তৈরি বিশুদ্ধ ঘি যা কোন দোকানেই পাবেননা অনেক দাম দিয়েও।
     অনেকেই যারা স্বাস্থ‍্য সচেতন তারা হয়ত আঁতকে উঠবেন ঘি খাওয়া! সর্বনাশ! তবে আমি শুনেছি একদম ঘরে বানানো খাঁটি ঘি তেলের চেয়ে ভালো।আরে আমার কথা নয়,ডায়েটেসিয়ানের কথা। অবশ‍্য আমার বানানো খাঁটি ঘি আমি অকৃপণ হয়ে আপনজনকে দিই যারা ভালোবাসেন।যেমন আমার পিসি নিরামিষ খান তাকে দিলাম।বড়মামি একাদশী করেন তাকে দিলাম।আবার ছোট ননদাই ঘি প্রেমিক তাকে কখনো দিই। কখনো ভালোবেসে কোন বান্ধবীকেও। যদিও ঘি বানানো বেশ ঝামেলার তবুও আমার কষ্টে বানানো জিনিস কাউকে আনন্দ দেয় তার ভাগ তো আমিও পাই।এছাড়া বাড়ির সুজি,পোলাও আর বিরিয়ানি আমার বানানো ঘিতেই হয়।
         ছোট থেকে খাঁটি ঘি মানে মায়ের হাতে বানানো ঘি খেয়েই বড় হয়েছি।অবশ‍্য নিজে বানাইনি কোনদিনই।মা চলে যাওয়ার আগে হাতে কলমে একদিন শিখিয়ে দিয়েছিলো। আমি বলেছিলাম,মা তুমি উঠলে কেন আবার? মা বলেছিলো," এই তো আমি টেবিলে বসে আছি তোকে বলবো তুই বানা"।
     তখন বুঝিনি আমাকে শেষ সময়ে দিয়ে গিয়েছিলো রেসিপিটা বা প্রশেসটা।
            দুধ এখানে বেশ ভালো পাওয়া যায়,বেশ মালাইওয়ালা মানে সুন্দর মোটা সর পড়ে। দুধ জ্বাল দিয়ে ঠান্ডা হলে যদি ঢাকা না দিয়ে ফ্রীজে রাখা হয় তাহলে সরটা বেশ মোটা হয়ে পড়ে যদি তা খাঁটি গরুর দুধ হয়। আমি এইভাবে প্রতিদিন সরটা তুলে ফ্রীজে একটা কনটেইনারে রেখে দিই।এভাবে জমাই সর বা মালাই। বেশ অনেকটা হলে কয়েক ঘন্টার জন‍্য বাইরে রেখে দিই বাক্সটা।বেশ ফারমেন্টেড হয় মানে ফুলে ওঠে। তখন ওটাকে মিক্সিতে বেটে নিই তারপর ঠান্ডা জলে ধুয়ে নিই।
      একদম খাঁটি সাদা ফটফটে ক্রীম বা মাখন পেয়ে যাই।তারপর ওটাকে সসপ‍্যানে করে জ্বাল দিতে থাকি।তবে এটা খুবই ধৈর্যের কাজ মানে একটু অসতর্ক হলে ফুলে পড়ে যেতে পারে।প্রথমে আঁচ বড় রেখে পরে ধিমে আঁচে জ্বাল দিতে হয় মাখন। শেষের দিকটা নাড়তে থাকতেই হয় খুব ঘনঘন। তলার চাছিটা বেশ ব্রাউন বা হাল্কা কালচে হয়ে এলে বুঝতে হবে ঘি হয়ে এসেছে।এখানেই একটু দক্ষতার প্রয়োজন যাতে মা খুবই দক্ষ ছিলো। আমি ততটা নয় ভুলচুক মাঝে মাঝেই করি কখনো পাক কম বা বেশি হয়।তবুও হাল ছাড়িনা কারণ মা যে শুদ্ধতা আর ভালোবাসার পরশ দিয়েছেন আমাকে সেই মমতায় আগলে রাখি পরিবারকে তা ভালোবাসাতেই হোক বা খাবারের শুদ্ধতাতেই হোক।
    কি ভাবছেন? নেই কাজ তো খই ভাজ। হ‍্যাঁ কাজের ফাঁকে মাঝে মাঝে খই ভাজার কাজটাও নিই কারণ আমিও যে আজ মায়ের মতই হতে চাই।

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...