#লক্ষ্মীশ্রী#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়তে পড়তে কানটা উঁচু করে বললেন হৈম," ওহ্ আমাকে আসতে দাও। ঘটককে এখনি যেতে বারণ করো,আমি কথা বলবো।"
তারপরেই আবার পড়তে শুরু করলেন সুর করে,
এই ব্রত যেই জনে করে এক মনে।
লক্ষ্মীর কৃপায় সেই বাড়ে ধনে জনে।।
করজোড় করি সবে ভক্তিযুক্ত মনে।
লক্ষ্মীরে প্রণাম কর যে থাক যেখানে।।
ভক্তিভরে লক্ষ্মীকে প্রণাম করে মাথায় পাঁচালী ঠেকিয়ে বাইরে আসেন। "শুনুন আমার যৌতুক চাইনা,শুধু মেয়ে লক্ষ্মীমন্ত তো?তাহলে আপনি দেখুন। আসলে আমরা বনেদী পরিবার আপনি তো সবই জানেন,যদিও ছেলে আমার খুবই ভালো তাই মেয়ে ভালো হলেই যোগাযোগ করুন।".."একটা মেয়ে আছে খুবই ভালো সেই কথাই আমি বলছিলাম কর্তাবাবুকে,কিন্তু ওদের অবস্থা তেমন ভালো নয়। তাই আমি এগোইনি। আপনি যদি বলেন ছবি আনবো।"
" অবস্থা নিয়ে কি করবো,পরিবার কেমন বলুন? শিক্ষিত কিনা,ভদ্র কিনা এগুলো খোঁজ নেবেন। বাড়ির লোকজনের সম্বন্ধে একটু জেনে এগোবেন। আসলে আমি পরিবারকে একটু বেশি গুরুত্ব দিই।"
ঘটকের আনা অনেকগুলো ছবি দেখে ভালো লেগে যায় বসুধাকে হৈমর। বাহ্ বেশ তো এই মেয়েটি,আমার কিন্তু এই ছবিটাই বেশ ভালো লাগলো। আগে একেই দেখবো,যদি ভালো লেগে যায় অযথা কি দরকার লোকের বাড়ি গিয়ে মিষ্টি খেয়ে বেড়ানোর? নিজের বিয়ের সময় যথেষ্ট দেখেছি বাপু,পালে পালে লোক আসছে,খাচ্ছে চলে যাচ্ছে একটা করে খুঁত ধরে।"...হাসেন সৌমেন্দ্র," তা তো যাবেই,যার যেখানে চাল মাপা। তবুও একটাই মেয়ে দেখবে এ কেমন হলো?"...হৈম তাকাতেই সৌমেন্দ্র আর কিছু বলেননা,এই মানুষটাই এতদিন ধরে সংসার চালিয়ে যাচ্ছে সুন্দর করে,বাবাও ভালোবাসতেন ভরসা করতেন হৈমর বুদ্ধির ওপর।
বসুধাকে দেখে পছন্দ হয়ে যায় ওদের সবার,ছেলেকে সঙ্গে নিয়েই গিয়েছিলেন ওরা। সোনা রোদ্দুর মাখা বিকেলে পানপাতার মত মুখ নিয়ে যখন শ্যামলা বসুধা,ওর গভীর উজ্জ্বল কালো দুটো চোখ তুলে তাকিয়েছিলো তখনই মুগ্ধ হয়েছিলেন হৈম। মনে মনে বলেছিলেন না না শ্যামলা নয় উজ্জ্বল শ্যামবর্ণ,আর বিয়ের পর ঠিক হয়ে যাবে ওদের বাড়ি গিয়ে যত্নে। মেয়েটা তেমন যত্ন পায়না,মা রুগ্ন অবস্থা বিশেষ ভালো নয়। তবে একসময় এরা বনেদী পরিবারই ছিলো, কালে কালে এখন আর তেমন কিছুই নেই। বাবা অত্যন্ত বিনয়ী,মায়েরও চোখে জল।
হৈম ছেলেকে বললেন যদি সে কথা বলতে চায়। আশ্চর্য হয়েছিলো বসুধা হৈমকে দেখে। হয়ত মনে মনে একটু ভয়ও পেয়েছিলো তার ব্যক্তিময়ী হবু শাশুড়িমাকে দেখে। বুঝতে পেরেছিলো ছেলে আর বর মোটামুটি ওনার কথাতেই চলে। ওদের বাড়ির ঠিক উল্টোটা। তবে ওনার কথা শুনে মনে হলো ওদের সবকিছুই মোটামুটি পছন্দ। শুভ্রাংশু পড়াশোনার কথাই জিজ্ঞেস করে,কি বই পড়তে ভালোবাসে। বেড়াতে ভালোবাসে কি না সবটাই। হৈম জিজ্ঞেস করেন কি খেতে ভালোবাসে,আশ্চর্য হয়ে যায় বসুধা এর আগেও ওর দুএকটা সম্বন্ধ দেখা হয়েছে তারা প্রথমেই জিজ্ঞেস করেছে রান্নাবান্না করতে পারে কিনা,ঘরের কি কাজ করতে পারে এইসব। তারপর সব শেষে জানিয়েছে মেয়ের রঙ ফর্সা নয় তাই তাদের পছন্দ হয়নি।এ কেমন পাত্রপক্ষ সম্বন্ধ দেখতে এসে মেয়ে কি খেতে পছন্দ করে তা জিজ্ঞেস করছে। বসুধা মুখ খোলার আগেই ওর মা বলেন," দিদি মেয়েটা আমার খাওয়ার সময় পায় কই?আমার শরীরের জন্য উনুনের ধারে যেতে পারিনা। ঐ মেয়ে সবটা করে রেখে কলেজে যেত। এখন পরীক্ষা হয়ে গেছে বলে একটু সময় পাচ্ছে তাও বেশ অনেকগুলো টিউশন করে।"..হৈমদের অবস্থা আর বসুধাদের অবস্থার মধ্যে অনেক ফারাক তবুও কেমন যেন মায়ায় পড়ে গেলেন। সবারই পছন্দ হয়ে গেলো বসুধাকে তবুও খটকা রয়ে গেলো হৈমর কথায়," এবার আপনারা আসুন আমাদের বাড়িতে ওখানেই বাদবাকি কথা হবে। যাওয়ার সময় হৈম বসুধাকে মাথায় হাত দিয়েই আশীর্বাদ করে গেলেন। কারণ আশীর্বাদ করার মত প্রস্তুতি নিয়ে আসেননি।
তবে ছেলের বাড়িতে যাওয়ার পর আর কোন খটকাই থাকেনা। " মেয়েকে কোথায় দিচ্ছেন একবার দেখে যাবেননা,তাই একটু ডেকে আনা আপনাদের। আমাদের কোন চাহিদা নেই,চাই শুধু একটা লক্ষ্মীমন্ত বউ। বসুধাকে আমার খুব ভালো লেগেছে।"
দুই বাড়িতেই জোগাড় চলছে পুরোদমে,যদিও হৈম বলে দিয়েছেন বিশেষ কিছু ব্যাবস্থা করার দরকার নেই যেটুকু দরকার সেটুকু করলেই হবে। মাঝে মাঝেই ফোন করে জেনে নেন বসুধার পছন্দ অপছন্দ,বসুধা আশ্চর্য হয়ে যায়,এমন মানুষও আছে! যেখানে পণ নিয়ে কত দরদাম হয় সেখানে লালপাড় সাদা শাড়ি হলেও চলবে এমন বলে দিয়েছেন ওর শাশুড়িমা। মায়ের অসুখে বাবার হাতে তেমন কিছু নেই,তাই বেশি কিছু চাইলে ওরা পারতই না।
শুভ্রাংশু মাকে প্রণাম করে,ও কিছু বলার আগেই শুনতে পায়। " ঘরের লক্ষ্মী নিয়ে আসিস। যেন দুহাতে আগলে রাখে সংসারটাকে।"..পাশ থেকে ওর পিশিমা বলেন," বল তোমার জন্য...".ওনাকে থামিয়ে দিয়ে হৈম বলেন," থাক ও সব কথা এখন আর চলেনা,আয় দুগ্গা দুগ্গা।"
বসুধার গা ভর্তি গয়না,পরনে সুন্দর লাল বেনারসি ওর মা আদর করে বললেন,"আমার দুর্গা প্রতিমা,দশ হাতে আগলে রাখে সব কিছু।".." কিন্তু মা তোমাদের কি হবে,সংসারের কাজ.."
" সব হবে,দেখি আয় একটু আদর করে দিই.."
মুখে হাসির মধ্যেও জল গড়িয়ে পড়ে মায়ের চোখ থেকে,শরীরটা কেন যেন ভালো লাগছেনা। তবে পাগলী মেয়ে শুনলেই কান্নাকাটি করবে।
আত্মীয়স্বজনরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো,অনেকে কানাকানি করলো সবই বোধহয় শ্বশুরবাড়ি থেকে পাঠিয়েছে সত্যি কপাল করে এসেছে মেয়েটা। কারো আবার গা জ্বললো।
সৌমেন্দ্রর ওপর সব দায়িত্ব দিয়েছেন হৈম,যাতে কোন সমস্যা না হয়। বসুধার হাতদুটো যত্নে নিজের দুই হাতে ধরলো শুভ্রাংশু। মায়ের পছন্দের ওপর ওদের সবারই ভরসা, তাই আত্মীয়স্বজনরা বসুধাদের অবস্থা নিয়ে সমালোচনা করলেও ওরা কান দেয়নি।
শুভদৃষ্টি মালাবদলের সাথে সাথে হয়ত দুটো মনেরও আদানপ্রদান হলো একান্তে নিভৃতে।
মা বাবাকে আর ভাইকে কাঁদিয়ে চোখের জলে ভিজে বসুধা পরম নির্ভরতায় শুভ্রাংশুর হাত ধরে পা বাড়ালো এক নতুন সংসার আর নতুন জীবনের দিকে। সৌমেন্দ্রর মনটাও ছুঁয়ে গেলো, মনে হলো ভাগ্যিস তার মেয়ে নেই,এ যেন এক বড় কষ্টের অভিজ্ঞতা। যত্নে আগলে রাখা সন্তানকে বলে দেওয়া, 'যে ঘরে এতদিন ছিলি তা তোর নিজের ঘর নয় যা মা তোর নিজের ঘর খুঁজে নে এবার।'
বসুধাকে আদর করে ঘরে নিলেন হৈম,চারিদিকে যেন তার নজর। " এসো,দেখি এবার যেমন বলবো সেভাবে পা ফেলো।"..লাল আলতায় পা ডুবিয়ে অনুরাগের রঙে রাঙা হয়ে বসুধা একটু দুরুদুরু মনে পা রাখলো ওর নতুন সংসারে। শাশুড়ির একটা কথাই মনে প্রথম দিনই লেগেছিলো,' আমার কিছু চাইনা একটা লক্ষ্মীমন্ত বউ চাই। আর বসুধার ভীষণ লক্ষ্মীশ্রী আছে।"
বৌভাতের দিন সুন্দর করে সাজানো হয়েছে বসুধাকে,সত্যি মায়ের পছন্দ আছে মুগ্ধ হয় শুভ্রাংশু। পাশাপাশি ছেলে বৌমাকে দেখে খুশি হয় হৈম,কি সুন্দর মানিয়েছে! সত্যিই ওর ছেলের তুলনা হয়না,ভদ্র,নম্র সুন্দর স্বভাবের। সৌমেন্দ্র অবশ্য সবটুকু কৃতিত্বই দেন হৈমকে ছেলেকে ভালো করে মানুষ করার জন্য। হৈম অবশ্য মজা করে বলেন," না না ও তোমার মত হয়েছে,বাধ্য বাবার বাধ্য ছেলে।"হাসেন সৌমেন্দ্র হয়ত হৈমর এই গুণটাই তাকে বেশি মুগ্ধ করে।সবাইকে প্রশংসা করতে জানে হৈম,সবসময় ওর নজরে পড়ে সবার স্বভাবের ভালো দিকগুলো। তাইতো বসুধাকে নিয়ে বাড়িতে একটু কথা হলেও বলেছিলেন,"একসাথে সব পেতে হলে তো কুমোরটুলি থেকে আনতে হবে বৌ।"
আত্মীয়স্বজনে ভরা বাড়ি,বসুধাকে বসানো হয়েছে ফুলে ফুলে সাজানো দোলনায়। চারিদিকের আলোতে ঝলমল করছে বসুধা। বেশ অনেকটা রাত হয়ে গেছে এখনো ও বাড়ি থেকে কেউ আসছেনা কেন। আসলে সে সময় মোবাইল ফোন ছিলোনা তাই একবার ওর এক ননদকে জিজ্ঞেস করে। শোনে আরেকটু বাদেই এসে পড়বে। সবাই আসে বাবা একটু বাদে আসে,কিন্তু মা কোথায়? মাকে দেখছেনা কেন? বাবা বুঝিয়ে বললেন মায়ের শরীরটা খুব একটা ভালোনা,ও তো সবই জানে। তাই আর আসেনি,তাই বাবাও একটু তাড়াতাড়ি চলে যাবে। সবাইকে হাসিমুখে নমস্কার জানালেও মুখটা বড় করুণ হয়ে যায় বসুধার,সত্যি মায়েরা যেন কেমন,সন্তান জন্ম দেয় অথচ সন্তানের শুভ অনুষ্ঠানে মায়েদের নাকি থাকতে নেই। আজ বড় ইচ্ছে করছে মাকে কাছে পেতে,মায়ের শরীরটা অনেকদিনই ভালো নেই। মায়ের এই রোগ যে আর সারবেনা সবই ও জানে,তাই হয়ত মাও দেখে যেতে চেয়েছিলো ওকে ওর নতুন সংসারে ভালো থাকতে। আর আজ মা আসতে পারলোনা। খুব অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলো,হঠাৎই একটা নরম স্পর্শ পেলো," উঠে এসো তো,চলো দেখে আসি আমরা যেখানে তোমার বাড়ির লোকেরা খেতে বসেছেন। মায়ের জন্য মন খারাপ করছে? কালই আমরা যাবো দিদিকে দেখতে। এখন তো বাড়িতে সব নিমন্ত্রিত লোক তাই একটু মনকে বুঝিয়ে রাখ মা।"..অদ্ভুত এক স্নেহের স্পর্শ পেলো বসুধা। অথচ যে মানুষটাকে একসময় দেখে মনে হয়েছিলো সংসারে ছড়ি ঘোরানোই ওনার কাজ। হৈমর কথাতে একটু হাসি ফুটলো বসুধার মুখে।" এই তো আজকের দিনে ঘরের লক্ষ্মীর মুখে হাসি না থাকলে হয়?"
বাড়ির সবাই চলে গেলে,আরেকটু রাত হলে শাশুড়ির নির্দেশেই ওর ননদ দেওররা প্রায় ঠেলেঠুলে ওদের ঘরে ঢুকিয়ে দিলো। " যাও যাও,কাকিমা বলে দিয়েছে যাতে আমরা আর তোমাদের না জ্বালাই,তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ো। তবে দেখো দাদাভাই ঘুমোতে দেবে তো?"..ভালো লাগা,মনখারাপ,ভয় সব মিলেমিশে অদ্ভুত এক শিহরণ হলো বসুধার। সুন্দর করে ফুলে ফুলে সাজানো হয়েছে ঘরটা,তেমন করে খুব কাছে এসে কথা বলা হয়নি শুভ্রাংশুর কারণ তখন বিয়ের আগে দেখা করে ঘোরার চল তেমন ছিলোনা। বসুধার হাতটা ধরে শুভ্রাংশু কাছে টেনে নেয় যত্ন করে,গলা থেকে খুলে দেয় ফুলের হার,একেক করে খুলে দেয় মাথার মুকুট আরো সব ফুলের গয়না। শুভ্রাংশুর ছোঁয়ায় শিহরণ জাগে বসুধার। বসুধাকে খুব কাছে টেনে একদম বুকের কাছে এনে বলে," অনেক গল্প আছে তোমার সাথে,একটু একটু করে করবো। ভালোবাসবো এমনি করেই একদম শক্ত করে ধরে রাখবো বুকের মাঝে। আজ তুমি খুব ক্লান্ত,তোমার মায়ের জন্য মন খারাপ। ঘুমিয়ে পড়ো,কাল আমাদের যেতে হবে ও বাড়িতে।"..
বসুধার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দেয় শুভ্রাংশু,ভালোলাগা আর নির্ভরতার আবেশে চোখটা বুজে আসে বসুধার। কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলো বুঝতে পারেনি হঠাৎই ঘুমটা ভেঙে যায়,কানে আসে কথার আওয়াজ। দরজার বাইরে ওর শাশুড়িমা,শুভ্রাংশুকে কি যেন বলছে। তাড়াতাড়ি উঠে বসে বিছানায়,শাশুড়িমা কাছে আসেন। " বসুধা,আমাদের বেড়িয়ে পড়তে হবে এখনি,আমি কালই তোমায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম রাতে। তোমার মা বারণ করে পাঠিয়েছিলেন তার ইচ্ছে মেয়ের ফুলশয্যাটা হয়ে যাক ভালো মত কোন ত্রুটি যেন না থাকে।"
বসুধা আর শুভ্রাংশুকে দেখে চোখ জুড়িয়ে গেলো ওর মায়ের। কাল সারারাত যন্ত্রণায় ছটফট করেছেন,আজ যেন বড় শান্তি লাগলো। বসুধা অঝোরে কাঁদছে,হৈম আগলে রেখেছেন ওকে,ডাক্তার বলেছেন আর খুব একটা কিছু করার নেই। উনি যা চান সেটাই করা ভালো।
বেলার দিকে একবার চোখ খুলে সবাইকে কাছে দেখলেন। হাত রাখলেন হৈমর হাতে,কাছে ডাকলেন ছেলেমেয়ে দুটোকে। শান্তিতে চোখ বুজলেন আবার।
সব শেষ করে ভোর রাত হয়ে গেলো ওদের ফিরতে,বসুধার দিকে তাকানো যায়না। সকালে পিসিশাশুড়ির মুখে শুনলো," কি অলক্ষুণে কান্ড গো,বিয়ের তিন রাত্রি যেতে না যেতেই মাকে..." কঠিন গলায় বললো হৈম," অলক্ষুণে তো কিছুই নয় দিদি,ক্যানসারের রোগী ছিলেন দিদি। দিন গুনছিলেন,সবাইকে চোখের সামনে রেখে গেলেন সেটাই তো অনেক।".." তা নয়,ব্যাপারটা তো অশুভ,নতুন বৌ বাড়িতে ঢুকতে না ঢুকতেই অশৌচ এখনো অষ্টমঙ্গলার গিট খোলেনি।"
বসুধাকে আগলে ঘরে নিয়ে যান হৈম, বৌমাকে ওর মুখের সামনে কেউ অলক্ষ্মী অপয়া বলবে তা কিছুতেই হতে দেবেননা। শোকে দুঃখে ভেঙে পড়া মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে মনে পড়লো আজ থেকে বত্রিশ বছর আগে নিজের বিয়ের দিনটার কথা। কনে সেজে এক গা গয়না আর বেনারসি পরে বসে আছেন বছর উনিশের হৈম,হঠাৎই খবর আসে ছেলের বাবা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বরযাত্রী আসবেনা,সারা বাড়িতে তখন হৈ হৈ অবস্থা। বাবা আর দাদারা অনেক অনুরোধ করেও সেই সন্ধ্যেয় বর আনতে পারেনি। সবাই বলেছিলো হৈম অলক্ষ্মী,তাই এমন হয়েছে। কিছুতেই এই বিয়ে হবেনা।
কান্নার রোল উঠেছিলো বাড়ি জুড়ে,এগিয়ে এসেছিলেন ওর শ্বশুরমশাই। উনি ওর মাসির ভাসুর,শেষ পর্যন্ত সেই লগ্নেই কোন প্রস্তুতি ছাড়াই ওর বিয়েটা হয়ে যায়। পরে জানা যায় যে বাড়িতে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছিলো সেই ভদ্রলোক সুস্থ হয়ে ফিরেছিলেন। যাক হৈমকে বাঁচিয়েছিলেন ওর শ্বশুরমশাই অলক্ষ্মী আর লগ্নভ্রষ্টা হওয়ার হাত থেকে। তাই আজ কোনমতেই বসুধাকে অলক্ষ্মী বা অলক্ষুণে হতে দেবেননা হৈম। সব দুর্ভাগ্যের আর কলঙ্কের দায় চিরকাল কেন মেয়েদেরকেই নিতে হবে। কলঙ্ক এক গাঢ় কালির দাগ তা হয়ত কিছুতেই মোছা যায়না,মনে একবার ঠাঁই দিলে চেপে বসে চিরকাল। সবচেয়ে কষ্ট তো মেয়েটার ও হারালো মাকে,আর তারপর খোঁচা মারা হবে ওকেই!
আশ্চর্য হয় বসুধা,কে জানে এমন শাশুড়িও আবার হয় নাকি! সবটাই হয়ত ওর মায়ের আশীর্বাদ। শ্বশুরবাড়ি মানে এক অগ্নিপরীক্ষা যেখানে নিজেকে প্রমাণ করতে বছরের পর বছর কেটে যায় সেখানে ওর শাশুড়িমা কি করে যে বলেন কথায় কথায়, "আমার বৌমা খুব লক্ষ্মীমন্ত।" অনেক পরে একদিন জানতে চেয়েছিলো। হৈম বলেছিলেন তার নিজের জীবনের ঘটনা। তারপর হেসে বলেছিলেন," আমি জানি শাশুড়ি কখনো মা হয়না,তোমাকেও আমি বৌমার মতই দেখতে চাই তবুও বলি তোমার ছোঁয়ায় ভালো থাক আমার পরিবার আর উত্তরসূরী।"
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment