Skip to main content

Samudrar preme..100 words

পরশমণি#
রুমাশ্রী#
ইংরাজী হাতের লেখা শেখাতে হিমশিম খাচ্ছে সোমা।কিছুতেই শেখানো যাচ্ছেনা নতুন হোমের ছেলেটাকে। সোমবার ক্লাশে ঢুকে মনটা ভরে যায় ওর,বোর্ড জুড়ে কে যেন এঁকেছে মা সরস্বতীর একটা খুব সুন্দর ছবি।
"কে আঁকলো রে? দারুণ সুন্দর হয়েছে।"
ছেলেরা আঙুল তুলে দেখায়..'ও'।
চায়ের দোকানে কাজ করত রবি ওরাই ওকে হোমে এনেছে।আজ রবির ভেতরের ছাইচাপা আগুন প্রজ্জ্বলিত হয়েছে। প্রতিজ্ঞা করে সোমা কিছুতেই নিভতে দেবেনা ঐ আগুন। হাজার রবি এগিয়ে যাক বিকশিত হোক সুপ্ত প্রতিভা।
'আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে।'
#শুভ পয়লা#
রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী
"বৌমা শুনছো কাল তো পয়লা বোশেখ তা ঐ বাড়ির মুখুজ‍্যে গিন্নি গণেশপুজোর নেমন্তন্ন করতে এসেছিলো। এবার আর তোমার ওখানে গিয়ে কাজ নেই,তোমার ছেলেপুলে হবে। ঐ বাড়ির বৌমার তো এই সাতবছরেও কিছু হলোনা। তাই তো বললাম দিদি এতবছর গণেশ পুজো করছো এখনও তোমার ঘরে লক্ষ্মী গণেশ কেউই এলোনা।"
সুনয়নার খুব ভালো লাগে দুর্গাদিকে, হাসিখুশি আর সুন্দর কথা বলে। তবুও শাশুড়ির কথা মানতেই হবে তাই যাওয়া হলোনা।
       শাশুড়ি ফিরে এলো হাতে একটা বড় মিস্টির বাক্স। "মা এত মিস্টি! আর বোলোনা ও বাড়িতে তো ঘটা লেগেছে। কোথা থেকে একটা ছেলে দত্তক নিয়ে যত আদিখ‍্যেতা বলে কিনা দুর্গার কোলে গণেশ এসেছে।"

#সমুদ্রার প্রেমে#
রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

চোখ আটকে গিয়েছিলো ঐ কালো গভীর চোখে শঙ্খর,কাকে মনে পড়েছিলো ওর?না না কোন ইংরেজী গল্পের নায়িকাকে নয় তাহলে কি জীবনানন্দ নাকি রবীন্দ্রনাথের কৃষ্ণকলি? শেলি কিটস্ সব মিলেমিশে যেন এক হয়ে গিয়েছিলো। প্রথম দেখেই মন ছুঁয়ে গিয়েছিলো ওর। কিন্তু সমুদ্রা এমন নাম আবার হয় নাকি?
            বসন্তের একগোছা পলাশের গুচ্ছ মাথায় পরনে হলুদ শাড়ি আর কপালে বড় টিপ পরা সমুদ্রার চোখে খেলেছিলো বিদ‍্যুৎ।হাতে রঙিন সুন্দর একগোছা চুড়ি ঝিনঝিনিয়ে হেসেছিলো ও, কেন হয়না,নিশ্চয় হয়,তাই বোধহয় দাদু রেখেছিলেন এমন নাম,আসলে আমার মনে এতো ঢেউ তো।".." কিন্তু সমুদ্র তো একটা দস‍্যি ছেলে," বলে শঙ্খ। "আচ্ছা তাই না হয় হলো মেনে নিলাম,কিন্তু দস‍্যি সমুদ্রর মেয়ের নাম তো সমুদ্রা হতেই পারে যার মনের মাঝে লুকিয়ে আছে সাদা গোলাপী আরও কত রঙের মুক্তো। শঙ্খর ইচ্ছে করে বলেছিলো," কত কি জানে মেয়েটা! সমুদ্রের বৌয়েরও খবর রাখে। তুমি কি জানো সমুদ্র বড় অশান্ত তাকে বাঁধা যায়না বাহুডোরে তাই তো সে বেলাভূমিকে নিজের তান্ডবে এসে ভেঙে গুড়িয়ে সিক্ত করে আবার ফিরে যায়। এর মাঝে সমুদ্রা এলো কোথা থেকে। " সমুদ্রের প্রেমেই যে সমুদ্রার সৃষ্টি,দামাল উদ্দাম প্রেমের থেকে এসেছিলো ভেসে মুক্তোর সাজে সেজে।"
            ইংরেজীর ছাত্র শঙ্খ হার মেনেছিলো বাংলার ছাত্রী সমুদ্রার কাছে,ততক্ষণে যে মন দিয়ে ফেলেছে। বসন্ত উৎসবে 'বসন্তে ফুল গাঁথলো আমার জয়ের মালা' গানের সাথে নাচছিলো সমুদ্রা। ওর গালে মাখানো ময়ূরকন্ঠী আবিরের রঙ। হাতে পলাশের মালা। মন জয় করে নিয়েছিলো শঙ্খর। ভালোবেসে ফেলেছিলো ওকে পাগলের মত।
   কিন্তু কি করে বলবে প্রেমের কথা,সাহিত‍্য পড়ার বিষয় ওরও কিন্তু অত আবেগের কথা যে ওর আসেনা। কি বলবে ও আমি ডুব দিতে চাই তোমার ঐ কালো গভীর চোখে অথবা আলিঙ্গনে ছুঁতে চাই সমুদ্রার ঢেউ তোলা শরীরটাকে আর আঁকড়ে ধরতে চাই মনের মুক্তোকে। আচ্ছা এটা ইংরেজিতে বলা যায়না, না না তেমন ভাব আসছেনা। প্রেম দুঃখ এইসব বাঙলায় না বললে ঠিক ভালো লাগেনা।
সমুদ্রা বলতো আর শঙ্খ শুনতো,সাক্ষী হত ছাতিমতলা কখনো বা আম্রকুঞ্জ। শঙ্খর বন্ধুরা বলত,ইশ্ তুই শেষে কিনা এত ইংরেজী শিখে শেষে পড়লি ঐ নেকুটার প্রেমে। দিনরাত কাঁধে ঝোলা,কপালে বড় টিপ আর খোঁপা বেঁধে ঘুরে বেড়ায় আর কবিতা লেখে। কি সব অনুভূতির কবিতা। শঙ্খ কি করে বোঝাবে কখন যে শেলি কিটস আর জীবনানন্দ এক হয়ে গেছে ওদের প্রেমে।
            সময় পেলেই ক্লাশের ফাঁকে চলে আসতো শঙ্খ সমুদ্রার ঢেউয়ের কলতান শুনবে বলে। একেকদিন সমুদ্রা বলে,"আজ তোমার কবিদের কথা শোনাও। শুনি ওরা কি লিখেছেন,কতটা গভীর ওদের প্রেম,অনুভূতির কি ছোঁওয়া আছে তাতে আমাদের মতই যা মন ছুঁয়ে যায়?"
                    শঙ্খ তখন ওখানেই গবেষণা করছে
         পড়া শেষে শঙ্খর সুযোগ পেলো বিদেশে পড়তে যাবার ওর। শঙ্খর চোখ ভর্তি স্বপ্ন,ভালোবাসে পড়াশোনাকে আর সমুদ্রাকেও। যেন মনে হয় ওর পড়াশোনার মাঝে একটুকরো স্নিগ্ধ হাওয়া সমুদ্রা। তবে সমুদ্রা তো তাই মাঝে মাঝেই ঝোড়ো হাওয়া হয়ে সব উড়িয়ে নিয়ে যায় রাগ হলেই। " আচ্ছা তুমি যখন বিদেশে পড়তে যাবে তখন কি আমাদের বিয়েটা হয়ে যাবে?".." ধ‍্যাৎ বিয়ে আবার কি প্রেমিকাকে আবার কেউ বিয়ে করে নাকি তাহলে তো প্রেমটাই মরে যায়। মানে বিয়ে করা মানে প্রেমকে খুন করা। তার চেয়ে এই ভালো লাগে সমুদ্রার প্রেমে ভেসে যেতে আর ভিজতে।"
    ...." এই বুড়ো খোকা তোমার নাহয় বয়েস হচ্ছেনা,কিন্তু আমার তো হচ্ছে। মা ফোন করেছিলো আমার নাকি অনেক সম্বন্ধ আসছে। বাবা যদি আমার বিয়ে দিয়ে দেয়।"
   ...." বাবাকে বলবে আমার প্রেমিক আছে।"
..." তাই নাকি তাহলে তুমিই গিয়ে বলো তোমার বাবাকে তোমার প্রেমিকা আছে।"..." সে তো কবে বলেছি,আর এটাও বলেছি তোমাদের কোন চাপ নেই আমি এখন বিয়ে করবোনা লেখাপড়া শেষ না করে।"...খুব রাগ হয় সমুদ্রার তাই বলে," তুমি আর আসবেনা একদম দেখা করতে। আমি বাবা যাকে বলবে তাকেই বিয়ে করে নেবো।"..সমুদ্রার ছলছলে মুখটা দেখে খুব মায়া হয় শঙ্খর তবুও বলে," সেটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে,কারণ আমার পড়া শেষ হতে এখনো অনেক বাকি।"
                দুদিন আসেনি শঙ্খ,সমুদ্রাও রাগ করে খবর নেয়নি,আরো কেটে গেছে দুটো দিন। সেদিন বড় অস্থির লাগছিলো সমুদ্রার চুপ করে বসেছিলো ছাতিমতলায় ওর প্রতীক্ষায়। " কি রে এখানে কেন,কিন্তু তোমার কেষ্টঠাকুর তো চলে গেছে।"..রঞ্জিনী,শঙ্খদের ডিপার্টমেন্টের। একটু বেশিই স্মার্ট,অনেকেই বলে শঙ্খর কাছের বান্ধবী। তবে শঙ্খ বলত ধ‍্যাৎ তোমাদের মেয়েদের শুধু সন্দেহ। রঞ্জিনীর কাছে জানতে পারে শঙ্খ বাড়ি গেছে,ওর তো পরের মাসেই বিদেশ যাবার কথা সবাই তো জানে। বড্ড রাগ আর অভিমান হয় সমুদ্রার কান্না পায় খুব শুধু ও জানলোনা। তখন ফোন ছিলোনা,ল‍্যান্ডফোনই ভরসা।সমুদ্রা জানতো ওদের ফোননম্বর চেষ্টা করলো ফোন করতে কিন্তু বারবার রিং হয়ে যাচ্ছে। চিঠিও লিখেছিলো তবে উত্তর পায়নি, তবে কি ও বিদেশেই চলে গেলো এমন হঠাৎ!
             প্রায় একমাস কোন যোগাযোগ করেনি শঙ্খ,সমুদ্রাও চেষ্টা করে অভিমানে বোবা হয়ে গেছে। কদিন শরীরটা ভালো নেই ওর,বন্ধুরাও নানা কথা বলছে। এমন কি শঙ্খ আর রঞ্জিনীকে নিয়েও নানা কথা কানে এলো।
               পুজোর ছুটিতে বাড়ি চলে যায় সমুদ্রা। মা বাবা দেখে খুব বকুনি দেয়।" এত চেহারা খারাপ হলো কি করে তোর? আমরা এদিকে বিয়ের চেষ্টা করছি। ইশ্ কি অবস্থা মুখখানার! বোন এসে বলে যায়," দিদিভাই,মেসোর এক বন্ধুর তোর ছবি দেখে খুব পছন্দ হয়েছে। ওরা একদম রাজি প্রায়,কয়েকদিন বাদে তো আসার কথা এই বাড়িতে।"..তাহলে শঙ্খই ঠিক বলেছিলো প্রেমিকা কোনদিন বৌ হয়না। না না তবুও বিয়েটা ও করতে পারবেনা কিছুতেই। অপেক্ষা করবে দরকার হলে সারাজীবন।
             দেখতে দেখতে পুজোর কটা দিন কেটে গেলো। আজ সকাল থেকেই মেঘলা মন সমুদ্রার,বার বার চোখটা ভিজে যাচ্ছে। যদিও মাকে বলেছে এখনি বিয়ে ও করবেনা। জানেনা মা কতটা বুঝেছে শুধু বলেছে," তোর মেসোর বন্ধু,আমাদের একটা সম্মান আছে। অন্ততপক্ষে সেটা একটু ভাব। ওরা বেড়াতে আসছে আমাদের বাড়ি। তোকে সেজেগুজে বসতে হবেনা,শুধু একটু কথা বলিস তাহলেই হবে।"..সত‍্যি সাজেনি সমুদ্রা তবুও ওদের ভালো লাগলো ওকে। ছেলের বাবা মা খুবই অমায়িক,কোন রকম প্রশ্ন করে ওকে অস্বস্তিতে ফেললোনা। কিন্তু এ কি এরা তো যাওয়ার নামই করেনা। মাকে বলতেই মা বকুনি দিলো," ছিঃ আমাদের বাড়ি লোক বেড়াতে আসেনা? তোর মেসোর বন্ধু ওনারা। আগেই বলেছিলেন গ্ৰাম ওদের খুব ভালো লাগে একদিন থাকবেন। তাছাড়া ছেলে তো কাল আসবে,কি একটা কাজে আটকে গিয়েছে তাই আসতে পারেনি।"...বাড়িটা যেন বড় বেশি জমজমাট,সমুদ্রার বড় কান্না পায় ওর মনটা কি কেউ বুঝবেনা? শঙ্খকে বড় জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে প্রেমিকাকে বিয়ে করলে প্রেম খুন হয়। কিন্তু প্রেমিকাকে অন‍্য কেউ বিয়ে করলে কি হয়?
      এর মধ‍্যে ওর বোন খুব ভাব জমিয়েছে ছেলের বোনের সাথে। হঠাৎই দুজন দৌড়ে আসে," দিদিভাই তোর হবু বরের ছবি দেখবি?..কই দাও তো দেখি ছবিটা।" সমুদ্রার একটুও দেখতে ইচ্ছে করেনা তবুও চোখটা চলে যায়,ইশ্ জঘন‍্য দাড়িওয়ালা চোখে কালো চশমা মাথায় টুপি পরা একটা ছেলে। নাহ্ কাল একদম সবার সামনে বলবে এই বিয়েটা ও করতে পারবেনা।
           সকাল থেকে বাড়িতে রান্নার ঘটা লেগেছে। মা মাসি কাকিমা সবাই ব‍্যস্ত। এমন হ‍্যা়লা ছেলের বাড়ির লোক দেখেনি আগে তিনবেলা ধরে ভালোমন্দ খাচ্ছে আর মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছে। মায়ের উৎপাতে সকাল সকাল বাথরুমে ঢুকতে হলো,স্নান করে বেড়িয়ে খাটের ওপর শাড়িটা দেখে গা জ্বলে যায় ওর কান্না বেড়িয়ে আসে একটু চিৎকার করে ওঠে," আমি আর অন‍্য কিছু পরবোনা। যা পরে আছি তাই চলবে। সেই বিয়েই যদি দিয়ে দেবে তো এত পড়ালে কেন?"..রাগ করে ছাদে চলে আসে সমুদ্রা,ছাদের এই কোণটাই ওর একমাত্র নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা। রেলিঙে হেলান দিয়ে গড়িয়ে পড়লো চোখের জল সবার ওপর অভিমানে। ঠিক আছে তাই হবে,বিয়ে করে নেবে ও। হঠাৎই বাড়ির সামনে গাড়িটা থামে বেড়িয়ে আসে বাবা আর কাকা,যার জন‍্য সব আয়োজন হচ্ছে তিনি এলেন বোধহয়,ঐ দাড়িওয়ালা কালো চশমা পরা বাঁদরটা। মুখ ফিরিয়ে চলে যেতে গিয়েও থমকে দাঁড়ায় সমুদ্রা। কে যেন একবাটি সিঁদুর ঢেলে দিয়েছে ওর মুখে। বুকের মধ‍্যে সুখের পায়রাটা বড় বেশি ডানা ঝাপটালো মনে হলো হয়ত বা ওখানেই অজ্ঞান হয়ে যাবে। ততক্ষণে নীচ থেকে ছুটে এসেছে বোন," দিদি জলদি জলদি মা ডাকছে।"...পা দুটো আজ যেন বড় তাড়াতাড়ি নামতে চায়,ইচ্ছে করে নিজেকে সাজাতে মনের মত করে। মা তো ওকে দেখে অবাক,ইচ্ছে করলো একটা কালো টিপ এঁকে দেন কপালে," এই তো লক্ষ্মী মেয়ে,কি সুন্দর লাগছে! এক সময় এই শাড়িটা পরার কি বায়না ছিলো তোর। আয় একটু আদর করে দিই। আমার সোনা মেয়ে,শুধু একটু পাগলী এই যা।"
                ....বুঝতে পারলো এক জোড়া দুষ্টু চোখ ওর সামনে বসে ওকে দেখছে তবুও চোখ নামিয়ে রইলো সমুদ্রা। ওর শ্বশুরমশাই বলেন," আমরা তো কাল থেকে এসে জ্বালাচ্ছি,আসলে অনেকদিন বাদে মাটির গন্ধ পেলাম। কিন্তু মামনি কাল থেকে তেমন কথা বলেনি আমাদের সাথে। বোধহয় আমাদের পছন্দ হয়নি,তোমাদের কিছু কথা থাকলে বলে নাও।"..মুখ তোলে সমুদ্রা ওর দুচোখ ভরা জল,এ যে অনেক দিনের জমানো জল। খারাপ লাগে শঙ্খরও,ততক্ষণে সমুদ্রা এসে প্রণাম করে ওর মা বাবাকে আর বড়দের।
          সিঁড়ির দরজাটা বন্ধ,সমস্ত অভিমান ঝরে পড়ছে কান্না হয়ে। " উফ্ এবার তো মাফ্ করে দাও আমাকে। একদম সোজা ছাদনাতলায় যেতে ভালো লাগে? সত‍্যিই একটা সেমিনার ছিলো বাইরে। আবার হয়ত যেতে হবে বছর দুয়েকের জন‍্য। বাবা মা তো সবটাই জানে বড্ড ঝামেলা করছিলো বিয়েটা করার জন‍্য তাই এই বিরহের ব্রেকটা নিলাম। এবার দেখবে প্রেমটা আরো জমবে।"...শঙ্খর বুকে অনেকক্ষণ মুখটা গুঁজে আছে সমুদ্রা বড় পরিচিত একটা গন্ধ। ওকে দুহাতে নিবিড় করে ধরে আছে শঙ্খ।" তাহলে অন‍্য ছেলের ছবি দেখিয়েছো কেন শুনি?".."নাহ্ বিয়েটা ক‍্যানসেল,এতদিনের প্রেমকে যে চিনতে পারেনা। আরে ওটা তো আমিই,ওটা নাটকের একটা রোলের ছবি।"...দুমদাম্ কয়েকটা কিল খেতে হয় এবার শঙ্খকে.." বাঁচাও কে আছো মরেছি যে প্রেম করে,সমুদ্র কন‍্যা ক্ষেপেছে এবার। ছাড়ো এবার কিন্তু সবাই খারাপ ভাববে। বলবে ছেলেমেয়ে দুটো সেই যে গোপন কথা বলতে গেলো আর আসছেনা কেন?"
             বিকেলের পড়ন্ত রোদ্দুরে অনেকদিন বাদে দুটো চোখ যেন বলতে চাইলো 'তোমার চোখে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।'
  
          
...কিন্তু আমি যদি খারাপ হয়ে যাই,কেউ যদি ভাসিয়ে নিয়ে যায় আমাকে?"...হাসে সমুদ্রা,আমার গভীরতা যে তোমায় ছুঁয়েছে তাই ভয় আমি পাইনা। সাক্ষী থাকলো বাংলাভাষা।
        মাঝে কেটে গেছে সাতটা বছর,একসময় চিঠি আসাও বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। সমুদ্রা গাইছে আমার মনের মানুষ আছে প্রাণে,দরজার হাল্কা শব্দে পেছন ফিরে আর কথা বলতে পারেনা,বন্ধ হয় গান। আমি এসেছি সমুদ্রা নাহলে যে মিথ‍্যে হত মায়ের ভাষা। আবার সুর ওঠে সমুদ্রার তানপুরায়।

#শত_শব্দের_গল্প#
#আজও_আছো_নিরালায়#

সাজুগুজু করে পৌঁছতে একটু দেরি হয়েছিলো রুমির ওর পঁচিশ বছরের বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে। ক‍্যামেরার ঝলকে আর ভীড়ের মধ‍্যে পঁচিশবছর আগের মত একটা মুখকেই খুঁজেছিলো রুমি...বাবা। ঐ তো বাবা...দুচোখ ভরে ওকে দেখছে। ছুটে গিয়ে প্রণাম করে বলেছিলো," বাবা দেখোনা,মানতাসাটা পরতে পারিনি।"..ঝুঁকে পড়েছিলো বাবা গয়না পরাতে। বাবার চওড়া হাতটা ছুঁয়েছিলো ওর মাথাটা, উজাড় করে দিয়েছিলো আশীর্বাদ। আজও জরির পাড় শাড়ি,গয়নায় সেজে খোঁপা বেঁধে জানলার গ্ৰীলে মাথা রাখে রুমি, মনে হয় এই তো বাবা বলবে,' দেখি তো আমার খুকুকে কেমন লাগছে?".."তোমায় আজও খুঁজি কখনো ব‍্যস্ত সকালে, ক্লান্ত বিকেলে,কখনো বা একলা দুপুরে। আমার হৃদয় জুড়ে আছো তুমি বাবা।"

#শত_শব্দের_গল্প#
#মাতৃভাষা#

#মিঠে_মায়ের_ভাষা#

ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছে কথা,কবে যে মা বলে ডেকেছিলো মনেই পড়েনা। শুধু মনে পড়ে মায়ের কাছে বাংলা কবিতা শোনা। বিয়ের পর ভেবেছিলো শ্বাশুড়িকে প্রাণভরে মা ডাকবে,উনি শিখিয়েছিলেন মামণি বলতে কারণ ওনার তিন ছেলেমেয়ে মা ডাকে। সত‍্যি বোধহয় মায়ের মত কেউ হয়না। কথা মা হয়েছে,মেয়ের নাম রেখেছে কবিতা। কিন্তু দুবছর বয়েস হয়ে গেলো কবিতা কথা বলেনা কেন? লুকিয়ে কাঁদে কথা,তবে কি ও কোনদিন? সারাক্ষণ ওর সাথে একাই বকবক করে কথা,লাভ হয়না। কথার খুব জ্বর শুয়ে আছে,মেয়ে ছড়ার বই এনে হঠাৎ ডাকে...'মা'। সত‍্যি কি 'মা' ডাক এতো মিঠে! ধন‍্য 'মাতৃভাষা',ধন‍্য 'মা' ডাক,এ যে প্রাণজুড়োনো।

মোদের গরব মোদের আশা
আ মরি বাঙলাভাষা
তোমার কোলে তোমার বোলে
কতই শান্তি ভালোবাসা।
বাঙলা আমার প্রাণের ভাষা,বাংলা আমার মায়ের ভাষা। মনের সাধারণ অনুভূতিগুলো নিজের মাতৃভাষায় না বললে মন ভরেনা। আজ ভাষাদিবস,বাংলাভাষাকে মাতৃভাষার সর্বোপরি রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতির দাবীতে প্রাণ দিয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ‍্যালয়ের এবং ঢাকা মেডিক‍্যাল কলেজের একদল কৃতী ছাত্র। যাদের রক্তে রাঙা হয়েছিলো দেশের মাটি। মায়ের ভাষা হোক রাষ্ট্রভাষা এই দাবীতে শহীদ হয়েছিলো তরতাজা কতগুলো প্রাণ। তাদের প্রাণদান অবশ‍্য বৃথা হয়নি তাই প্রশাসন বাধ‍্য হয়েছিলো বাংলাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষার সম্মান দিতে। এই শহীদ দিবসকেই ভাষাদিবস হিসেবে পালন করা হয় শুধু বাংলাদেশেই নয় আমাদের পশ্চিমবঙ্গেও এমনকি সারা পৃথিবীতে যেখানে বাঙলাভাষী মানুষ আছেন। বাংলা আমার মায়ের ভাষা,বাংলাভাষায় অপার সুখ। বাংলাভাষায় কথা বলে আনন্দে ভরে ওঠে বুক। আন্তর্জাতিক ভাষাদিবসে এই শপথ থাক,পরিস্কার উচ্চারণে বাঙলা বলবো,বাঙলাভাষাকে এগিয়ে নিয়ে যাবো এবং সমৃদ্ধ করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবো। তাই শুরু হোক এক নতুন স্বপ্নের...বাঙলা ভাষাকে ভালো রাখার,মাতৃভাষাকে পরিপূর্ণ ভাবে শেখার।

ছোট থেকেই রিনি ওর মা দেবীকে দেখেছে সারাদিন মুখ বুজে সংসারের কাজ করতে। সবাই যেন চাইতো আরো বেশি কিছু মায়ের কাছে। বাবা তো কথায় কথায় বলতো," ওহ্ সারাদিন বাড়িতে বসে হাড়ি ঠেলেই তো গেলে ঐ এক কাজ। অফিসের ঝক্কি আর তুমি কি বুঝবে?"..ঠাকুমাও বলতো," কোনদিকে মন দাও কে জানে,এতো বছরেও এ বাড়ির মত রাঁধতে শিখলেনা।"..শুধু ওর মা হারানো বন্ধু সাম‍্য মায়ের রান্না খেয়ে বলতো,"কাকিমার রান্না যেন অমৃত,মা হচ্ছে সবচেয়ে সেরা শেফ।খুব মিস্ করি মায়ের রান্না"।
      ৮ই মার্চ বাবার চোখটা খবরের কাগজে আটকে যায়,পরপর চারটে নিরামিষ পদ আর তার সাথে খুবই পরিচিত মানুষটার ছবি। যার রান্নাকে কোনদিন গুরুত্বই দেননি সে হঠাৎ এখানে কিভাবে! বাবার তলব শুনে আঁচলে হাত মুছতে মুছতে মা আসে মুখে হাসি। ততক্ষণে দুহাত তুলে রিনি বলছে," মাই মম ইজ দ‍্য বেস্ট। আমার দেখা সেরা নারী।"

প্রতিদিন কিছু শিখতে চাই,
মুঠোয় ধরি ছোট ছোট খুশি।
যেটুকু পেয়েছি যত্নে রাখি,
চাইনা কিছু অতিরিক্ত বেশি।

মুঠোয় সুখ সবাই ধরতে চায়
না পাওয়া আনে গভীর হতাশা,
তবুও লড়াইটা চালাতেই হবে,
এগোতেই হবে মনে নিয়ে আশা।

বদলায় দ্রুত সম্পর্কগুলো,
অন্ধকারে ঢেকে যায় আলো।
চশমার কাঁচ ঝাপসা লাগে..
মনে হয় না দেখাই ছিলো ভালো।
যত্নে মুছে ফেলি ঝাপসা চশমা,
আবার স্বপ্ন সাজাই চোখে...
থাকতেই হবে আমাকে ভালো
সবাইকে যত্নে ভালো রেখে।

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...