Skip to main content

প্রজাপতির ফাঁদ

#প্রজাপতির ফাঁদ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

হুল্লোরবাজ আর ডানপিটে ছিলো রাধিকা কলেজে। বাবার আদুরে ছিলো ওরা দুইবোন,যখন যা বলত বাবা এনে দিতেন। মা মাঝে মাঝে বলতেন আদর দিয়ে মাথা খাচ্ছে দুই মেয়ের। একসময় মানে ওদের ছোটবেলায় যখন মেয়েদের স্বাধীনতা খুব বেশি ছিলোনা তখনই ওরা দুইবোন অনেক বেশি হৈ চৈ করত। দুজনেই তখন পড়ত কলকাতার নামী কলেজে। বন্ধুদের মধ‍্যেও খুব ডানপিটে আর সাহসী ছিলো রাধিকা। ওর বোন জয়িতাও কম যেতোনা দিদির থেকে।
                     রাধিকা তখন ইংরেজী অনার্স ফাইনাল ইয়ার আর জয়িতা সবে কলেজে ঢুকেছে। প‍্যান্ট শার্ট পরে দুজনেই বাড়িময় ঘুরে বেড়াতো। মা বলতো," কে বলবে এই দুটো মেয়ে,বাপরে যেমন হাত পা চলছে তেমন মুখ। আর বদবুদ্ধিরও শেষ নেই। সারাক্ষণ এর ওর পেছনে লেগে আছে।"
    দুষ্টুমির ফল যে কতটা মারাত্মক হতে পারে তা হয়ত বুঝলে আর দুষ্টুমি করতো না রাধিকা। এখনকার মত তখন ইন্টারনেট বা মোবাইল ছিলোনা তাই অবসর সময়ে ওদের কাটতো বই পড়ে,সিনেমা দেখে বা খেলাধূলা আর আড্ডা দিয়ে। রাধিকার ছিলো খুব ইংরেজী ম‍্যাগাজিন পড়ার শখ। রাজ‍্যের ম‍্যাগাজিন কিনে ঘর ভরত,ওর কাছ থেকে নিয়ে পড়ত বন্ধুরাও।
               রবিবার ঘুম থেকে উঠতে দেরী করে দুই বোনই। সদর দরজার বেলটা বেজে ওঠে,এত সকালে আবার কে এলো। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বড় বিরক্ত হন অশোকবাবু। দরজা খুলে একটু আশ্চর্য হয়ে যান একজন বিদেশি নাগরিক
দেখে মনে হচ্ছে বয়েসটা খুব বেশি নয়। তবে হঠাৎ কেন ওদের বাড়িতে,কাকে খুঁজছে?ইংরেজিতেই কথা হয়,ওদের বাবাও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী তাই কোনই অসুবিধে নেই কথাবার্তা বলতে।
       রাধিকা তখন ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখছে হঠাৎই বাবার গুরুগম্ভীর গলায় চোখ খোলে,একি গলার আওয়াজ বাবার! অনেকদিন এমন গলার স্বর শোনেনি। " এক্ষুণি তোমরা দুইবোন আমার সাথে বসার ঘরে আসবে।".." বসার ঘরে কেন যাবো এখন? আরেকটু ঘুমোব বাবা,আমি তাছাড়া ঘর নো়ংরা করিনি,এই সকালে গুছোতে পারবোনা। তুমি বোনকে বলো।" "দুজনকেই যেতে হবে এত সাহস তোদের আমি তো ভাবতেই পারছিনা। পাঁচমিনিটের মধ‍্যে তৈরি হয়ে নেমে আয় বসার ঘরে।"
            বাবার অগ্নিমূর্তি দেখে সত‍্যিই টেনশন হয় ততক্ষণে জয়িতাও উঠে পড়েছে। দুজনেই মাকে খোঁজে এদিক ওদিক।কোথায় যে যায় মহিলা কে জানে,নিশ্চয় ঠাকুরের জন‍্য ফুল তুলছে বাগানে। কোথায় অসময়ে বাঁচাবে তা না...
           দুজনে বসার ঘরে নেমে অবাক হয় এক লালমুখো সাহেবকে দেখে। বেশ জাঁকিয়ে বসে ওদের সোফায়,ওকে দেখেই বাবাকে ইশারা করে। শেষে ওকে দেখায় কেন,জয়িতাটা ওর পেছনে মুখ লুকায়। ওদের কলেজ থেকে এসেছে নাকি?
        আর বেশিক্ষণ ভাবতে হয়না,বাবার গলা শুনতে পায়," তুমি নিজের বিয়ের সম্বন্ধ করেছো?"..হাঁ হয়ে যায় রাধিকা.."বিয়ে! কোন ইচ্ছাই নাই আমার বিয়ে করার।".." তবে এটা এলো কোথা থেকে শুনি?"...খোলা খামটা বাবা এগিয়ে দেন ওর দিকে মুখটা হাঁ হয়ে যায় ওর,বছর দেড়েক আগে একটা ম‍্যাগাজিনের ম‍্যাট্রিমনি সাইটে কোন একজন বিদেশি ভারতীয় মেয়ে বিয়ে করতে চায় দেখে দুষ্টুমি করে বন্ধুদের সাথে নিজের বায়োডেটা আর ছবি দিয়ে এই চিঠিটা বেশ খরচ করে তো ঐ পাঠিয়েছিলো। আর ভুলেও গেছে সেটা কবেই। হায় ভগবান,ও যীশু,ও বুদ্ধদেব কি হবে এখন। দিদির বোকা বোকা ঘাবড়ে যাওয়া মুখের দিকে তাকিয়ে ভয় হয় জয়িতারও।
      " বাবা আমি ভুলেই গেছি কবে এটা করেছি,তুমি প্লিজ ওনাকে বুঝিয়ে বলো।".." আমি কিছুই বলতে পারবোনা,তোমার এই চিঠিটা পেয়ে ভদ্রলোক শিকাগো থেকে এখানে এসেছে। এটা কি একটা মজা করার মত ঘটনা!"
       লালমুখো সাহেবটাকে দেখে গা জ্বলে যায় ওর মনে হয় দেয় দূর করে পাজিটাকে। কিরকম ভালোমানুষের মত বসে আছে। কি অবস্থা বাঙালী মেয়ে বিয়ে করার জন‍্য এত দূরে ছুটে এসেছে। হচ্ছে তোমার করাচ্ছি বিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে মনে মনে রাধিকা। মনে হচ্ছিলো দেয় একটা বসিয়ে। ততক্ষণে উনি কফি পান করছেন,ওহ্ মাতৃদেবী কফি বানাচ্ছিলেন তাহলে!
         " এখন কি করবে তুমিই বলো,কারণ তোমার জন‍্যই উনি এই দেশে এসেছেন,এই যে ওর বায়োডেটা দেখো। দেখে সিদ্ধান্ত নাও।"
      বাবা ততক্ষণে বেশ গল্পে মশগুল হয়েছে লালমুখোটার সাথে। ওরা নাকি বেলুরমঠ আর গোলপার্ক রামকৃষ্ণ মিশনের সাথে নিয়মিত যুক্ত। বাবাকে বলছে পাজিটা খোঁজ নিতে ওখানে ওর সম্বন্ধে। স্বামী বিবেকানন্দ নাকি ওর আদর্শ। কি ভাবে যে মাখন লাগাচ্ছে বাবাকে,বাবাও তো স্বামীজির ভক্ত আর বেলুরমঠের শিষ‍্য ওরা।
              রাধিকা আর দাঁড়াতে পারেনা বেড়িয়ে আসে ঘর থেকে। সত‍্যি খুব খারাপ লাগে কেন যে এইরকম বদমায়েশি করতে গেলো। মায়ের কাছে শুনলো একটু বাদে যে আপদটা বিদায় হয়েছে। বাবা এলেন বায়োডেটা হাতে নিয়ে," শোন আমি ভদ্রলোক,এক কথার মানুষ আমার মেয়ের অসভ‍্যতার খেসারত অন‍্য কেউ দেবে তা হয়না। এটা শুধু আমার নয় আমাদের দেশের অপমান। আমি খোঁজ নেবো ওদের পরিবারের সম্বন্ধে।"
            এবার সত‍্যি কান্না পায় রাধিকার। ভয় পায় জয়িতাও,ওর সবজান্তা দিদি যে এমন একটা মুখ করে বসে আছে যেটা দেখলেই খারাপ লাগে। লালমুখোটার নাম জানা হয়ে গেছে জোনাথন,মা বাবার একমাত্র ছেলে। ভালো চাকরি করে মাল্টিন‍্যাশনাল কোম্পানীতে,বাবা মাকে নিয়ে থাকে। স্বামীজীর বই পড়ে প্রতিদিন,শ্রদ্ধা করে ভারতীয় সংস্কৃতিকে। হতচ্ছাড়া একটা আর তার সঙ্গে ভারতীয় মেয়েকে বিয়ে করতে চাই সেটা বলিসনা কেন বাপু।
              মায়ের কাছে শুনলো ভারতীয়রা সুন্দর পরিবারে থাকে,সবাইকে নিয়ে থাকতে পারে তাই ওরা এত আগ্ৰহী এই সম্পর্কের ব‍্যাপারে।
            সারাদিন বাবাকে আর চোখে দেখতে পায়নি ওরা। রাতে খাবার টেবিলে বাবার গুরুগম্ভীর মুখটা দেখে। কেন যেন খাওয়াটা বড় বিস্বাদ লাগলো।" আমি খোঁজ নিয়েছি দুজায়গায় ওর কথা শুনে,এছাড়া বেলুড়মঠেও বলেছি। এখান থেকে শিকাগোতে খবর নিয়ে ডিটেলস আমাকে সব জানাবে বলেছে। ঠিক আছে ততদিন অপেক্ষা করা যাক।"
        খাড়ার ওপরে ঝুলছে রাধিকা,বাবার পায়ে কেঁদে পড়লো," আর হবেনা বাবা,তুমি ঐ আপদটাকে বিদায় করো এখান থেকে। দরকার হলে আমিও যাবো ঝাঁটা হাতে করে।"..কিন্তু কে কার কথা শোনে। পরের রবিবার চোখটা কপালে ওঠে রাধিকার সকাল থেকেই মা রান্নাঘরে ব‍্যস্ত ঘুম ভাঙলো খাবারের খুশবুতে। "মা আজ কি কেউ আসবে গো আমাদের বাড়িতে? এত সকাল সকাল রান্না করছো।"..গম্ভীরভাবে মা উত্তর দেয় হুঁ,সে ঘড়ি ধরে খায় তাই।"
     স্নান করে বেড়িয়ে খাবার টেবিলে যাকে দেখলো তাকে দেখে খাবার ইচ্ছে চলে গেলো। সেই লালমুখোটা বসে বসে পোস্ত,ডাল ইলিশমাছ সবই খাচ্ছে। আর গুণগান করছে কতদিনের ইচ্ছে ঐসব খাওয়ার। হায় ভগবান হতচ্ছাড়াটাকে বাবা আবার এনে জুটিয়েছে এখানে! কি ভেবেছে বাবা, এবার সত‍্যিই চিৎকার করতে ইচ্ছে করে ওর। মিটিমিটি হেসে বদমায়েসটা হ‍্যালো হাই করতে শুরু করেছে ওর দিকে তাকিয়ে। বাবার সাথে চেঁচিয়ে কথা বলার সাহস ছিলোনা, তবুও মৃদু প্রতিবাদ করলো কিন্তু বাবা শুনলেননা কিছুই। উল্টে বললেন দুদিন বাদে ছেলেটা চলে যাবে এতদিন বড় হোটেলে থাকতে হলো ওকে শুধু ওর বাঁদরামির জন‍্য তাই আজ ওরা দুইবোন ওকে একটু ঘুরিয়ে শহর দেখাবে।
                বাবাঃ কোথা থেকে একখানা ঢাউস গাড়ি নিয়ে এসেছে একেবারে সাহেবী কায়দার লালমুখোটা। রাধিকাকে দেখে সামনের দরজাটা খুলে দেয় জোনাথন,বাবা দাঁড়িয়ে আছে তাই উঠে পড়ে,শহর দেখাতে দেখাতে যেতে হবে বাছারামকে। হাঁদাটাকে জব্দ করার অনেক চেষ্টা করলো,কিন্তু কেন যেন একদম শেষে মনে হলো রাধিকার ছেলেটা সত‍্যিই ভালোমানুষ আর নিপাট ভদ্রলোক। ওদের পাল্লায় পড়ে ঝাল ফুচকা খেয়ে বেচারার চোখমুখ লাল হয়ে সে কি অবস্থা। শেষে ওরাই জল টল খাইয়ে ম‍্যানেজ করলো। তবুও মুখে হাসি লেগেই আছে।
            সব শেষে রাধিকা আর জয়িতার জন‍্য দিয়ে গেলো একবাক্স চকোলেট,মিষ্টি দুটো পারফিউম,বাবাকে স্বামী বিবেকানন্দর একটা অসাধারণ ফটো আর মাকে গরদের শাড়ি। "ওহ্ বাবা এইসব কোথা থেকে কিনলো বাছাধন,আবার প্রণাম করলো পায়ে হাত দিয়ে।"..এটা সত‍্যি একটা ঝটকা রাধিকার কাছে। বোন বললো," দিভাই,সাহেবটা তো খুব ম‍্যানেজমাস্টার,মনে হচ্ছে বাবাকে শ্বশুর বানিয়েই ছাড়বে।"
       জোনাথন চলে গেলো, যতই বিরক্ত হোক রাধিকা তবুও হয়ত একটা মিষ্টি ছোঁয়া রেখে গেলো ওর মনের কোণে। বাবার কাছে দিয়ে গেছে অনেকগুলো ছবি ওদের বাড়ির,অফিসের। ওর বাবা মাও নাকি ফোনে কথা বলেছেন বাবার সাথে। এর মধ‍্যে অনেক কিছু হয়ে গেছে অথচ ও কিছু জানেনা। তবুও আজকাল ল‍্যান্ডফোনটা বাজলে অদ্ভুত একটা শিহরণ হয় রাধিকার,একটু ছুটেই যায় ধরতে। " কি রে দিভাই,লালমুখোটা আবার ফোন করেছে নাকি?"..অমন দুষ্টু দিদির মুখেও একটু রাঙা তুলির ছোঁয়া দেখে জয়িতা।
           ফোন আসেনি রাধিকার তবে একদিন বাবাই তুলে দিয়েছিলো একটা মোটা এনভেলাপ বাইরের স্ট‍্যাম্প দেওয়া। আজ সত‍্যিই দরজা বন্ধ করে রাধিকা। বুকের মাঝটা কেমন যেন তির তির করে কাঁপে। রাধিকাকে দেখা,ওর চিঠি পাওয়া ওদের বাড়িতে আসা,একসাথে বেড়ানো সব কথাই লিখেছে জোনাথন এমন কি ঝাল ফুচকার কথাও। আচ্ছা ওর এমন লাগছে কেন হঠাৎ! মনটা বড় উড়ু উড়ু হয়ে গেছে মনে হচ্ছে। বুকে হাত রাখে রাধিকা," কলেজের ডানপিটে তুখোড় আড্ডাবাজ আর দুষ্টুর শিরোমণি রাধিকার বুক ধড়ফড় নাহ্ একদম ঠিক নয়।"
          আর কিছু করা গেলোনা,নিজেরই পাতা প্রজাপতির ফাঁদে ধরা পড়লো রাধিকা। বাবা তো প্রথম দিনই বকেছিলেন,তারপর খোঁজখবর নিয়ে একদম রাজি। এখন ও ঠিক আর না বলতে পারলোনা। জোনাথন আর ওর মা বাবা আর এক বন্ধু এসে এক ফাল্গুন মাসে রাধিকাকে মালা আর সিঁদুর পরিয়ে একদম সাতপাকে শক্ত করে বাঁধলো। অবশ‍্য সবটাই বাঙালী রীতি নীতি মেনে,জোনাথন দেখতে ভালোই তবে ঐ লালমুখোটাকে ধুতি পরে পুরো... ধুতি টোপর পরা সাহেব বরকে দেখেই পানপাতা সরিয়ে ফিক্ করে হেসে ফেলে রাধিকা মনে মনে বলে বোঝো বিয়ের ঠ‍্যালা। এরপর কেঁদে বাঁচবেনা,যাক মানে মানে ভালোভাবেই বিয়েটা হয়ে গেলো। ওর শ্বশুর শাশুড়িও বেশ খুশি। শ্বশুরমশাইয়ের আর বাবার বেশ ভাব দেখলো।
         শ্বশুরবাড়িতে যাওয়ার সময় কান্নাটা ঠিক এলোনা রাধিকার কারণ মা বাবা আর বোন যে ওর সঙ্গেই যাচ্ছে। তাই একটু নিশ্চিন্তই লাগলো,ভাবলো ওরা যখন ফিরবে তখন ওদের সাথে ফিরে আসবে। এখন মনে হলে হাসি পায়,সত‍্যি কি ছেলেমানুষ ছিলো তখন। কখন যে এই বাড়িটাই নিজের বাড়ি আর লালমুখো সাহেবটাই ভালোবাসার মানুষ হয়ে গেছে বুঝতেই পারেনি। ওর শ্বশুরবাড়ি আসার পরের পর্বটার কথা মনে পড়তেই আবার হাসি পায় রাধিকার,বাগানের ফুলগাছগুলোর যত্ন করতে করতে হেসে ফেলে ফিক করে,যাক তবু হাসিটা বেঁচে আছে এত বছরেও।
            শ্বশুরবাড়িতে আসা মানেই অনেকটা পথ প্লেনে আসা। কিন্তু এখানে এসে,ওদের মানে ও লালমুখো আর বাবা মা বোন সবার ঠাঁই হলো একবেলার জন‍্য হোটেলে। শ্বশুর শাশুড়ি বাড়ি চলে গেলেন। নতুন দেশ নতুন জায়গা মনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো রাধিকার। বন্ধুদের ছেড়ে একদম দেশের বাইরে,তখন তো ফেসবুক হোয়াটসআ্যপ ছিলোনা যে সাথে সাথে স্ট‍্যাটাস দেবে।
      বিকেলের মুখে সাজানো গাড়ি এলো,রাধিকার আর জোনাথনের জন‍্য এলো নতুন পোশাক আর প্রচুর সুন্দর সুন্দর ফুল। জয়িতার জন‍্যও এলো লালটুকটুকে গাউন। ফুলের চাদরে পা রেখে রাধিকার আরেকবার বিয়ে হয়ে গেলো দুধ সাদা গাউন পরে একদম ওদের মত করে চার্চে। হাতে হীরের আঙটি পরিয়ে ভালোবাসায় নিবিড় করে বাঁধলো রাধিকাকে ওর নতুন দেশের হঠাৎ আসা সঙ্গী।
                         এরপর বাড়ি যাবার পালা,বাড়িতে ঢুকতে গিয়েই চমকে উঠেছিলো রাধিকা এসব কি! দুধে আলতায় গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো থালা রাখা,সুন্দর মখমলের কাপড় বিছানো ঢোকার মুখে। শাশুড়িমা শাড়ি পরে দাঁড়িয়ে বরণডালা হাতে। এবার সত‍্যিই অবাক হওয়ার পালা..." এসো রাধিকা,পা রাখো দুধে আলতায়। আস্তে আস্তে এবার পা ফেলো।" কে বাংলা বলছে এত সুন্দর যদিও একটু টান আছে,চমকে ওঠে রাধিকা,হুইলচেয়ারে বসা কাউকে দেখে। বাবার মুখে তখন মিষ্টি হাসি। জোনাথন আলাপ করিয়ে দেয়,ওর সুইট গ্ৰ‍্যানি ওর প্রথম প্রেম,তবে এখন উনি খুব অসুস্থ। আর তাইতো ওর ইচ্ছে ছিলো গ্ৰ‍্যানির মত কেউ হবে ওর ভালোবাসার মানুষ। লাল রাঙা পা নিয়ে ঘরে ঢুকে হাঁটু মুড়ে পাশাপাশি বসে রাধিকা আর জোনাথন হুইলচেয়ারে বসা মানুষটার সামনে। যে দুহাত বাড়িয়ে আছে স্নেহের স্পর্শে ওদের মাখিয়ে দেবে আশীর্বাদ।
        কেন যেন বড় নিশ্চিন্ত লাগলো রাধিকার গ্ৰ‍্যানিকে দেখে। বিদেশেও পেলো একটুকরো দেশের মাটির তাজা গন্ধ। আরো বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছে হলো জোনাথনকে যে ভালোবেসেছে ভারতীয় সংস্কৃতিকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভারততীর্থ কবিতাটা বাবা ওদের ছোটবেলায় বলতেন...' হে মোর চিত্ত পুণ‍্য তীর্থে জাগোরে ধীরে।'..সত‍্যিই বোধহয় যুগে যুগে এভাবেই চলেছে মানুষে মানুষে মেলবন্ধন। ঝরঝরে আমেরিকান ইংরেজীতে কথা বলা জোনাথন যখন রাধিকাকে প্রথম আই লাভ ইউর বদলে আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি বলে ঠোঁটে একটা লম্বা চুমু দিয়েছিলো সত‍্যিই আবার ঝটকা লেগে ছিলো রাধিকার। দেখতে দেখতে দশটা বছর কেটে গেছে গ্ৰ‍্যানি আর নেই ওদের মাঝে তবে রাধিকার ভালোবাসার ঝটকা আজ আছে।
সমাপ্ত:-
             

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...