#গোপন#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
এবার কণকাঞ্জলিটা দিয়ে দে মা,ঐ চালটা তুলে নিয়ে মুঠো করে তারপর...কেঁদে ভাসাচ্ছিলো ইন্দু,মায়ের তো ও ছাড়া আর কেউ ছিলোনা মা এবার সত্যিই একা হয়ে গেলো। ওর মাসিকে থামিয়ে পেছন থেকে মা বললো," ওর আবার কিসের ঋণ রে ঝুমা,মেয়েটার জন্য তো আমি কিছুই করতে পারিনি বরং ও অনেক কষ্ট সয়ে সেই ছোট্টবেলা থেকে সংসারের হাল ধরেছে। ও আমার ছেলে মেয়ে সবই এমন কি ওর বাবারও...
কানটা চেপে ধরে ইন্দু ইশ্ আজকের দিনেও ঐ লোকটার নাম! সত্যি মেয়েরা নিজেরাই বোধহয় নিজেদের দুর্ভাগ্যের জন্য দায়ী। আমাদের দেশের মেয়েরা বোধহয় অন্ধভাবে জীবনে একজনকেই পরম দেবতা হিসেবে মানে তার পতি মানে সে হাতি আর মশা যাই হোক আসলে পরমেশ্বর। মা আর কাজ পেলোনা যে লোকটা ওদের দুজনের জীবনটা শেষ করে দিয়েছে নিজের ভোগ লালশা মেটাতে তাকেই এখনও বসিয়ে রেখেছে হৃদয়ের সিংহাসনে।
আর কিছু শোনেনা ও, মুঠো করে চালটা মায়ের আঁচলে ফেলে দেয় তখন আর কান্নাও পাচ্ছেনা। আজ আর পেছনে ফিরলোনা ইন্দু ,পার্থর হাতের কড়ে আঙুল ধরে পা রাখলো এক নতুন জীবনে। মাকে তো আর আলাদা করে দেওয়ার কিছু নেই,মা তো থাকবেই ওদের সাথে তেমনি কথা হয়েছে বিয়ের আগে।
অনেকদিন ধরেই পার্থদের বাড়ি থেকে বিয়ের কথা বলছিলো। মায়ের জন্যই মত দিতে পারেনি ইন্দু। শেষে দুই বাড়ির মায়ের জন্যই মত দিতে হলো। আচ্ছা শাশুড়িরা কি সত্যিই এত ভালো হয়! হয়ত বা হয় কখনো,ওর মত কপাল খারাপ মেয়েরও ভালো বর আর নতুন ঘর জুটে যায়। একসময় ওকেই শুনতে হয়েছে মেয়েটার কপালটাই খারাপ তাইতো ওর জন্মের পরেই বাবা চলে গেলো ঘর ছেড়ে। মায়ের আর মেয়ের দুজনেরই কপাল পুড়লো।
বাবার নাকি অবৈধ সম্পর্ক ছিলো মানে এখনকার দিনে যাকে বলে এক্সট্রাম্যারিটাল। নিজের রূপ আর ব্যবসার টাকাকে বাবা অন্য কাজে লাগাতো সুযোগ মত। ছোটবেলায় বাবার জন্য অপেক্ষা করতে করতে কখন যে ঘুমিয়েই পড়ত বুঝতেই পারতোনা। একদিন বাড়িতে খুব ঝামেলা দেখেছিলো,লজ্জায়,ঘেন্নায় আর কান্নায় ভেঙে পড়েছিলো ওর মা। ইন্দুকে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছিলো ওর পাশের বাড়ির কাকিমা। একটু বড় হয়ে সবটা জেনেছিলো ইন্দু বাবার অবৈধ সম্পর্কটাকে মা বৈধ করার জন্য বাবাকে মুক্তি দিয়েছিলো কারণ সেই মেয়েটা জানিয়েছিলো যে সে অন্তঃস্বত্তা,এরপর ওকে মরতে হবে। অপমানে, লজ্জায় বাবাকে তাড়িয়ে দিয়েছিলো মা,তারপর আর যোগাযোগ রাখতে চায়নি এমনকি কোন সাহায্যও চায়নি ইন্দুকে মানুষ করতে। অবশ্য বাবাও কোনদিন আসেনি ওদের পাশে দাঁড়াতে। কখনো সেলাই করে,কখনো বা ছোটবাচ্চাদের পড়িয়ে। আবার প্রয়োজনে আয়ার কাজ করেও মা চালিয়েছে সংসার। আর ইন্দু টিউশন শুরু করেছিলো ক্লাস সেভেন থেকে। আর সেই থেকেই মা আর মেয়ের যৌথ চেষ্টায় চলে ওদের সংসার। বাবা নামটা মুছে ফেলতে চেয়েছিলো ইন্দু লজ্জায় আর রাগে। তবুও কেন যে মা মাঝে মাঝেই ঐ লোকটাকে মনে করে চোখ ছলছল করত কে জানে? আর তখনই মায়ের ওপর খুব রাগ হত ওর।
বৌভাতের দিন পার্থ আলতা সিঁদুর শাড়ি খাবার সাজানো থালাটা হাতে নিয়ে বলে," বলবো,আচ্ছা বলেই দিই। শোন বাজারটা আমি ভালোই করি। রান্নাটাও তুমি ভালোই জানো মানে আমি চেখেছি। তাই জোগাড় সব আমি করে দেবো,কাপড়ও কিনে দেবো,শুধু পেটুকটাকে একটু ভালোমন্দ খাইয়ো ছুটির দিনে।"..হেসে ফেলে ইন্দু। বকুনি দেন শাশুড়িমা," এসব কি কথা! বল আজ থেকে তোমার ভাত কাপড়ের দায়িত্ব আমার।".." মা চাকরি করা মেয়েদের ওসব বলতে নেই,ঠাকুর পাপ দেবে। আমি শুধু আমার বেকার দুই মায়ের দায়িত্ব নেবো।"..পার্থর কথাটা শুনে কেমন যেন হাল্কা লাগে ইন্দুর আসলে মানিয়ে নিতে বোধহয় তখনি ভালো লাগে যখন কিছু মেনে নেওয়াও হয়।
ফুলশয্যার রাত্রে এক পরম নির্ভরতায় ফুলের সাজে আর আবেশে পার্থর বুকে মাথা রাখে ইন্দু। এটাই কি নির্ভরতার ছোঁয়া,হয়ত এই জন্যই আজও নারী পুরুষের পারস্পরিক বন্ধনে এগিয়ে চলছে সমাজ সৃষ্টি হচ্ছে নতুন প্রাণ। হয়ত এই নির্ভরতা আর নিরাপত্তা মা কোনদিন পায়নি বলেই মায়ের চোখ দুটো আজও ব্যাথায় ছলছল করে। মায়ের চোখের জলে মেশানো আছে হয়ত অনেক অনুভূতি। ওকে অন্যমনস্ক দেখে পার্থ আরো নিবিড় বন্ধনে আঁকড়ে ধরে বলে,"এভাবেই আদরে যত্নে আগলে রাখবো সারাজীবন একদম এই বুকের কাছে।"..মুখ টিপে হাসে ইন্দু," ইশ্ কমার্সের লোকেরাও শেষে সাহিত্য করছে প্রেমে! আর নেওয়া যাচ্ছেনা।"..ইন্দুর আহত মনের ব্যাথা বোঝে পার্থ তাই বলে," সাহিত্য নয় সামলে রাখবো,সাথে থাকবো তোমার সুখে দুঃখে আর ভালোমন্দে।"
দেখতে দেখতে কেটে গেছে দুবছর,ইন্দু এখন পাকা গিন্নি। ওর মা ওদের বাড়িরই একতলায় থাকে। শাশুড়ি আর মায়ের সম্পর্কটা বেশ ভালো,মানে দুজনের মধ্যে বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। এই তো কিছুদিন আগেই দুজনে হরিদ্বার বেড়িয়ে এলো। টুয়েলভের একগাদা খাতা দেখে,খাতার বোঝা হেড এক্সামিনারের বাড়িতে জমা দিয়ে ফিরতে হঠাৎই ঝড় ওঠায় আর বৃষ্টি নামায় বেশ একটু দেরি হয়ে যায় ওর। পার্থরও ইয়ার এন্ডিং চলছে তাই ও নিতে আসতে পারেনি ওকে। স্যারের বাড়ির এদিকটা বড় ফাঁকা ফাঁকা,ইশ্ একটা রিক্সাও নেই। রেললাইনের ধার দিয়ে পা চালায় ইন্দু একটু জোরেই। কেন যেন এই বসন্তেও একটু আগেই ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি হয়ে গেলো। তাই চারদিক একটু বেশিই চুপচাপ। হঠাৎই সামনে দাঁড়ায় দুজন,"ওহ্ বৌদি তো,তা একলা একলা এই ঝড়ের সন্ধ্যেয়। দাদাকে দেখছিনা তো?"..কোথা থেকে এগিয়ে আসে আরো দুটো ছেলে বড় ভয় হয় হঠাৎ ইন্দুর। ওরা বলে," আজ বৌদি দেওরদের সাথে রাতটা কাটিয়ে যাবে তাই আর দাদা আসেনি।".."চলো বৌদি,আজ শুধু মস্তি চলবে সারা রাত।"..জোরে পা চালায় ইন্দু," সাবধান,আমি লোক ডাকবো চিৎকার করে এবার। সরে যান আপনারা,ভদ্রভাবে বলছি ।"
...দৌড়তে শুরু করলেও ইন্দু পারেনা। চিৎকার করতে থাকে বাঁচাও,দুজন এসে ওর মুখটা চেপে ধরে। " ইশ্ চিৎকার কোরোনা,আজ তোমাকে আমরা দ্রৌপদী করে দেবো,মডার্ণ দ্রৌপদী। আর আমরা পাঁচ দেওর। এই তো গুরু এসে পড়লো বলে।"..ভয়ে,উৎকন্ঠায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে ইন্দু,অসাড় হয়ে যায় হাত পা,হঠাৎই একটা বাইকের আলো পড়ে ওর মুখে। গুন্ডাগুলো চেঁচিয়ে ওঠে," ঐ তো গুরু এসে গেছে।"..তীব্র আলোতে চোখটা ধাঁধিয়ে যায় ইন্দুর। বাইকের আলোটা তখনও জ্বলছে,স্টার্টটা বন্ধ হয়নি। এগিয়ে আসে কেউ একজন,ওরা চেঁচিয়ে ওঠে গুরু বলে। হঠাৎই শুনতে পায় একটা চিৎকার," শালা,মেয়েদের ইজ্জতে হাত দিয়েছিস,বলেছিলামনা ঐসব ঝামেলায় যাবিনা। সামনেই ভোট আসছে। ছেড়ে দে শালা,নাহলে একদম শেষ করে দেবো।"..ইন্দুর মনে অদ্ভুত একটা আশা জাগে,একটুকরো আলোর ঝলকানি দেখতে পায়।.."কিন্তু তুমি যে আগের দিন ফলো করেছিলে এই বৌদিকে। বলেছিলে ভালো লেগেছে তোমার ওকে দেখতে।"...শিবেনের ভালো লাগেনা ওদের কথার উত্তর দিতে,কেন ভালো লেগেছে কি করে বলবে ও। না না আগে ওনাকে পৌঁছে দিতে হবে নিরাপদে।গম্ভীর গলায় ধমকের সুরে বলে," এই ঝড়ের সন্ধ্যেয় এখানে কি করছিলেন? উঠে আসুন আপনাকে রেললাইনের ওপারে দিয়ে আসি। ওখানেই অটো পাবেন।"..ততক্ষণে ইন্দুও সামলে উঠেছে," কেন এই রাস্তাটা কি আপনার গুন্ডাদের সম্পত্তি যে এখানে সাধারণ মানুষ হাঁটতে পারবেনা? আমি একা হেঁটেই যেতে পারবো।"..."যা বলছি তাই করুন,বেশি কথা আমার ভালো লাগেনা। উঠে আসুন।" বাইকের পেছনে উঠে বসে ইন্দু মানে বাধ্য হয়,রাগে আর কিছুটা আশঙ্কায় তখনও সারা শরীর কাঁপছে।
রেললাইনের এপারে আলোতে ছেলেটাকে দেখতে পায় দেখতে বেশ সুন্দর জিমে যাওয়া বলিষ্ঠ দেহ মাথায় রঙ করা চুল।কতই আর বয়েস হবে বড় জোর ওর থেকে দু তিন বছরের ছোট,নাকি ওরই বয়সী কে জানে। কিন্তু মনে হয় কোথায় যেন আগে দেখেছে ওকে।এখনই এইসব অপরাধীদের মাথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কি যে যুগ এলো! " সরি কিছু মনে করবে না,আমার ফোননম্বরটা রেখে দিতে পারেন।কোন অসুবিধায় পড়লে ফোন করে দেবেন,এখানে সবাই আমার চেনা।"...ইন্দুর খুব বলতে ইচ্ছে করলো," এই কাজ ছেড়ে অন্য কাজ করে ভালো মানুষ হও।"..কিন্তু কি লাভ এসব বলে?
বাড়ি ফিরে শরীরটা বড় বিধ্বস্ত লাগে ইন্দুর,পার্থ তখনও ফেরেনি বাড়িতে। শুয়ে শুয়ে ভাবে পার্থকে কি বলবে কথাটা? হঠাৎই মনে হয় বড় স্পর্শকাতর আর সন্দিগ্ধ মানুষের মন। যদি পার্থর মনের কোথাও উঁকি মারে একথা ইন্দুকে কতগুলো ছেলে ধরেছিলো,কি করেছিলো কে জানে। সীতার যদি বনবাস হয় তো পার্থর ক্ষেত্রেও সন্দেহের শিকড় যে কোথায় পৌঁছবে ভেবে ভয় পায় ইন্দু। সত্যি তো ওর আর মায়ের এখন প্রধান ভরসাই পার্থ,না না যদি এই আশ্রয়টুকুতেও অসুখ বাসা বাধে? বড় ভয় হয় ইন্দুর। আবার গোপন করতেও অপরাধবোধ হয়। নাহ্ শেষ পর্যন্ত ইন্দু কিছু বললোনা বাড়িতে, চেপেই গেলো ব্যাপারটা।
মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েক মাস,কিছুদিন বাদেই পুজো। মা অনেকদিনই ওর শ্বশুরবাড়িতে থাকে। পুরোনো বাড়িতে অনেকদিন যাওয়া হয়না,পরিস্কার করাও দরকার। মায়ের কতগুলো জিনিসও আনতে হবে এইভেবে ইন্দু ঐ বাড়িতে যায়। বাড়িতে বলেই গেছে সবাইকে। যতটা পারে ঘরটা পরিস্কার করে। তারপর আলমারি খুলে বসে। সত্যি মা পারে! কত পুরোনো কাগজ যে জমিয়ে রেখেছে। অনেক কিছু বাদ দিতে থাকে ইন্দু। হঠাৎই চোখটা আটকে যায় শাড়ির নিচে রাখা কতগুলো কাগজ আর খামে। একলা ঘরে অনেকটা সময় কেটে যায় ইন্দুর। শরীরটা খুব অস্থির লাগে,জানলাগুলো ভালো করে খুলে দেয়। ফিরতে অনেকটা দেরি হয়ে যায়। পার্থ ফিরে এসেছে। "কি ব্যাপার তোমার কি শরীরটা খারাপ? চোখ মুখগুলো এমন লাগছে কেন?".."আসলে একটু পরিশ্রম হয়েছে আজ। অনেকদিন ঘরদোর বন্ধ।".." তুমিও পারো,একটা লোক ঠিক করলেই তো হত।"..রাতে খুব একটা বেশি কিছু খেতে ইচ্ছে করেনা ইন্দুর। শাশুড়িমাও বকলেন সেজন্য। মাকে কিছু কথা জিজ্ঞেস করে জানতে হবে,কিন্তু থাক একটু সময় নিয়ে কাল বলবে।
কেটে গেছে আরেকটা মাস। পার্থর কেন যেন মনে হয় ইন্দু একটা অস্থিরতায় আছে। এর মাঝে দুদিন বেশ দেরি করে ফিরলো। সেদিন কাকে যেন ফোন করছিলো বাইরে গিয়ে। ইন্দুকে জিজ্ঞেস করে পার্থ," বাইরে গিয়ে কাকে ফোন করছিলে?কোন সমস্যা হয়েছে?".."ঐ স্কুলের ফোন এসেছিলো। তেমন কিছু নয়।"
পুজো আসছে,বাজার হচ্ছে পুজোর। ওয়ার্ডোবটা খুলে নীল টি শার্টটা দেখে খুব খুশি পার্থ।" এই এটা কখন কিনলে,রঙটা দারুণ তো। কিন্তু সাইজটা একবার দেখলেনা? আমার তো ছোট হবে।"..স্কুলে যাবার জন্য তাড়াহুড়োয় ইন্দু অন্যমনস্ক হয়ে বললো," ওহ্! আচ্ছা খেয়াল করিনি।"
সেদিন অফিসের কাজে বেড়িয়ে পার্থর হঠাৎ চোখ আটকে যায় রাস্তায়। হাতে জামাকাপড়ের প্যাকেট নিয়ে ইন্দু অটোতে, উঠছে। কোথায় যাচ্ছে এখন ও?আশ্চর্য লাগে পার্থর। হয়ত সন্দেহ করাটাও মানুষের চরিত্রেরই একটা দিক। কৌতূহল এড়াতে না পেরে অনুসরণ করে ইন্দুকে। একি এদিকে থো ওর স্যারের বাড়ি,তাহলে কি? কিন্তু রেললাইনের পাশে কোথায় যাচ্ছে ইন্দু? এদিকটায় তো ও খাতা নিতে আসেনা,ওটা তো ঐ রাস্তায়। একটা বস্তিতে ঢুকে পড়ে ইন্দু। নাহ্ আর ভালো লাগেনা পার্থর ইচ্ছে করেনা ভেতরে যেতে।একটা চায়ের দোকানে বসে সিগারেট ধরায়।
প্রায় ঘন্টাখানেক বাদে ইন্দুকে দেখতে পায়। হাসতে হাসতে আর কথা বলতে আসছে একটা ছেলের সাথে। দেখে মনে হলো এখানকার দাদা তবে দারুণ দেখতে একেবারে রূপে কার্তিক। " চলো তোমাকে এগিয়ে দিই,উঠে বোসো বাইকে।"অবাক হয়ে যায় পার্থ ইন্দু দিব্যি ওর বাইকের পেছনে উঠে বসে। নাহ্ আজ ইন্দুর সাথে বোঝাপড়া করতেই হবে। একটু একটু করে সন্দেহের মেঘ বোধহয় আজ ঝড় হয়ে উঠলো ইন্দুর জীবনে। পার্থর এই রূপ এর আগে কখনো ইন্দু দেখেনি। " তোমাকে বলতেই হবে ইন্দু তুমি কোথায় গিয়েছিলে আজ। আমি তোমাকে দেখেছি। কে ছিলো তোমার সঙ্গে? আমি ভাবতে পারছিনা তুমি ওর বাইকে?"..." তুমি আমাকে সন্দেহ করে ফলো করেছো আমায়! যদি না বলি তাহলে কি হবে?"..গলায় আরো জোর আনে পার্থ,"ওহ্! এই জন্যই পরিবার দেখতে হয়..পিসিমা বলেছিলো তোমার বাবার কথা।"..চিৎকার করে ওঠে ইন্দু," ঐ লোকটার কথা বলবেনা প্লিজ। আমাকে যা শাস্তি দেবার দাও,তাড়িয়ে দেবে তো? তাই দাও,আমি চলে যাবো।"
হঠাৎই ইন্দুর ফোনটা বেজে ওঠে,স্ক্রীনে একটা ইংরেজী এস ভেসে ওঠে। ফোনটা ধরে পার্থ," আপনি কে? কে বলছেন?"..." আমি শিবেন,দিদি আছে?" একটা নিস্তব্ধতা নেমে আসে ঘরে। সেদিন রাতটা পার্থর কোলে মাথা গুঁজে অনেক অভিমানে কান্নায় ভাসলো ইন্দু বলে ফেললো অনেক গোপন কথা যা এতদিন বলতে পারেনি। " মায়ের আলমারির পুরোনো আ্যলবাম থেকে বাবার ছবি দেখে বড় চেনা লাগে শিবেনকে। ওর দেওয়া ফোন নম্বরে সেদিনই ফোন করে জানতে চাই ওর বাবার নাম কিছুতেই বলতে চায়না রাগে ঘেন্নায়। জানতে পারি আমার মত ও বাবার কামনার ফসল। বাবা ওর জন্মের পর আবার নতুন নারী নিয়ে ঘর ছেড়েছিলো। ওদের ঠাঁই হয়েছিলো বস্তিতে। ওর মা লোকের বাড়ি রান্না করত। এখন একদম শয্যাশায়ী,হয়ত একসময় ওর জন্যই আমাদের সংসার ভেঙেছিলো। তবুও শিবেন আমার ভাই পার্থ,ওকে ভাই বলে হয়ত আমি মানতাম না,কিন্তু ও তো আমারই মতই দুর্ভাগ্যের শিকার। সেদিন ফেরার সময় ও না থাকলে আমার যে কি হত!"
কেটে গেছে মান অভিমানে ভরা একটা অন্ধকার রাত। সকালের সূর্য ধুয়ে মুছে দিয়েছে সব সন্দেহের অন্ধকার। বড় সুন্দর একটা সকালে প্রাণভরে শ্বাস নিতে ইচ্ছে করলো ইন্দুর। পার্থ তখনও বুকের কাছে আলতো আদরে ধরে রেখেছে ইন্দুকে," এই যে বরের কাছে কিছু গোপন করতে নেই। যদিদং হৃদয়ং তব তদিদং হৃদয়ং মম মন্ত্রটা মনে নেই?".."সত্যিই খুব ভুল হয়ে গেছে গো আর কখনো কিছু গোপন করবোনা,প্রমিস।"
এবারের ভাইফোঁটাতে ইন্দুর অনেক কাজ। আজ যে ভাই আসবে ওদের বাড়িতে। ওরা মা আর মেয়ে জমিয়ে রান্নায় লেগে পড়েছে সকাল থেকেই। মাকে সবটা বুঝিয়েছে ইন্দুই। কেন যেন মায়ের বড় ইচ্ছে শিবেনকে একবার দেখার,সত্যিই কি ও একদম ইন্দুর বাবার মত দেখতে ! যদিও মেয়েকে কিছু জিজ্ঞেস করেননা ভয়ে। বাইকের আওয়াজটা শুনে দরজা খুলে দেয় পার্থ," ওহ্ এই নীল গেঞ্জিটা তাহলে হিরোর জন্য কেনা হয়েছিলো। এসো শালাবাবু।"
বাঁ হাতের কড়ে আঙুলটা শিবেনের কপালে রেখে মন্ত্র ভাইয়ের দীর্ঘায়ু কামনা করে ইন্দু। যে মানুষটাকে সবচেয়ে বেশি ঘৃণা করে তারই সূত্রেই হয়ত মিলে গেলো ওরা। শিবেন মনে মনে ভাবে এবার সত্যিই ভালো হতে হবে। মেয়েদের অসম্মান করতে দেবেনা কাউকে কোনভাবেই। হয়ত এমন একটু ভালোবাসা আর সম্পর্কের বন্ধনে পাল্টাবে আমাদের সমাজের এমন অনেক শিবেন।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment