#ভালোলাগার_এপ্রিলফুল#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
গল্প ১-
ওহ্ বেশ অনেকটা বেলা হয়ে গেছে চমকে উঠে পড়ে অর্ক,তৃণাটাও উঠে পড়েছে। সময় দেখার জন্য মোবাইলটা নিতে যায় হাত বাড়িয়ে। হঠাৎই মোবাইল চাপা খামটা নজরে পড়ে যায়,এটা আবার কি? ভেরি আর্জেন্ট লেখা। ওহ্ আজ তো এপ্রিলের এক,নিশ্চয় তৃণার কান্ড। নাহ্ কিছুতেই খামটা খুলবেনা। তবুও মনটা উশখুশ করতে থাকে,এদিক ওদিক তাকিয়ে খুলেই ফেলে খামটা,যাক্ পাজিটা নেই কাছাকাছি। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারেনা,তৃণার প্রেগন্যান্সি টেস্টের রিপোর্ট,পজেটিভ। প্রায় পাঁচবছর ধরে চিকিৎসা চলছে। কিন্তু এটা কি সত্যি না এপ্রিলফুল? ছুটে যায় বাইরে,পর্দার আড়ালে তৃণা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে দুষ্টুমি ভরা মিষ্টি হাসি মাখিয়ে বললো, " ইশ্ আজ আর এপ্রিলফুল করা হোলনা।"
...." আমি তো এমনিতেই ফুল মানে বুদ্ধু বনে গেছি।"
-------------------------------------------------------------------
গল্প ২:
শান্তিধাম বৃদ্ধাশ্রমে প্রায় পাঁচবছর এসেছেন সুষমাদেবী,বয়েস এখন পঁচাত্তর। সব কিছু ঠিকঠাক আছে শুধু একটু কানে কম শোনেন।
এখানে আসার পর তেমন কেউ উঁকি মারেনা। এটাই এখন ওনার বাড়িঘর। এখানেই এখন বন্ধুবান্ধবী সব। রবিবার সকালেই দুএকবার বোকা বনেছেন এখানকার বন্ধুদের কাছে। ওহ্ এইবয়সেও এরা বেশ আছে। আসলে এটাই জীবন। হঠাৎই কেয়ারটেকার জীবন ডাক দেয়," ও মাসিমা একবার গেষ্টরুমে আসুন,নাতি এসেছে।"
....." সাতসকালে মশকরা, পাজি,বদমায়েশ
বলে কিনা হাতি এসেছে। যা আপদ,সকাল থেকে শুরু হয়েছে এপ্রিলফুলের ঘটা।"
......" একটু কাছে এগিয়ে এসে,কানের কাছে এসে বলে আপনার নাতি এসেছে, বসে আছে।"
বিশ্বাস করতে পারেননা সুষমা,যখন এখানে আসেন সে তো অনেক ছোট। বদমায়েশটা নিশ্চয় ঠকাচ্ছে, তবুও এগিয়ে যান সুষমা। একটা কমবয়েসি ছেলে এসে পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে একদম মিলনের ছোটবেলার মুখটা বসানো। চোখটা ঝাপসা হয়ে যায় সুষমার এপ্রিল ফুলে সত্যি বোকা হয়ে জড়িয়ে ধরেন নাতিকে।©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
------------------------------------------------------------------
গল্প ৩:
"ঐ দিভাই আরে শোননা, কাল ক্যুরিয়ার সার্ভিসের লোক এসে ফিরে গেছে ওরা আর আসবেনা,লেটার বক্সে দেখলাম একটা নোটিফিকেশন রেখে গেছে। ইশ্ আমরা মুভি দেখতে গিয়েছিলাম না। তুই আজকে গিয়ে ওটা কালেক্ট করে নে।"
....." তোর্সা,আমাকে কত বোকা বানাবি বলতো? সারাজীবন বোকাই বানালো সবাই।"
...." বিলিভ মি ডিয়ার দিভাই, একদম সত্যি বলছি সোনা।"
...."এই আজ তো এপ্রিলফুল, তাহলে তো আরো যাবোনা। আগে দেখা দেখি নোটিফিকেশন।" সত্যিই নোটিফিকেশনটা দেখালো তোর্সা তিস্তাকে। অগত্যা ঠকবে জেনেও রওনা দিলো। চিঠিটা হাতে পেয়ে খোলে তিস্তা,আড়চোখে তাকায় তোর্সার দিকে।
খামটা খুলে চোখটা কচলে নেয় আবার,বেশ কিছুদিন আছে সেপারেশনে উত্তীয়র সাথে। সমস্যা শুধুই ইগোর লড়াই আর কিছুনা।
ছোট্ট কয়েকটা লাইন," হার মানা হারটা আমারই থাক, তোমাকে ছাড়া দিনগুলো বড় রঙচটা। একটুকরো রঙ ছড়িয়ে দাওনা আবার নতুন করে আমার ফ্যাকাশে জীবনে। অপেক্ষায় আছি যদি ডাকো,আসবোই।"
"কি রে কার চিঠি? চোখে জল কেন? এবার বিশ্বাস হলোতো? আমি লিখিনি।"
সত্যি হয়ত চিঠিটা না আনতে এলে আজকে পুরো ফুল হয়ে যেতো।
ফ্রুট আ্যন্ড নাটটা চিবোতে চিবোতে তোর্সা বললো," চিঠি খুলে হলি ফুল, এখন কেঁদে পাসনা কুল।"©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
-------------------------------------------------------------------
গল্প৪:
রবিবার সকালে কোচিং ক্লাশে বেশ গম্ভীর হয়ে বসে আছেন রাজেন স্যার। আজ তো এপ্রিলফুল,ছেলেগুলো যা এক একটা রামবিচ্ছু কি মতলব আঁটছে কে জানে। প্রথমেই কয়েকটা কঠিন অঙ্ক দিয়ে বসিয়ে দিলেন সবকটাকে। এইবার জব্দ হবে আর বিশেষ কিছু করতে পারবেনা। একজনের কাছে বোকা হলেই পুরো ক্লাশ মিষ্টি খেয়ে ছাড়বে যেমন গতবার করেছে।
খাতাগুলো ওদের খুলে দিতে বলে এক এক করে চেক করছেন সাবধানে। শুধু বিট্টুটা কিছুতেই খাতাটা খুলে দিলোনা। " স্যার একটু খাতাটা খুলুননা।"
"ওটা রেখে যা,পরের সপ্তাহে ফেরত পাবি।"
খুব মিস করলেন কিন্তু স্যার ,সারপ্রাইজ ছিলো একটা।"
মনটা একটু গলেও গেলো,এতো করে বলছে ছেলেটা। দেখাই যাকনা খুলে। সত্যিই খুলে চোখটা ছানাবড়া হয়ে যায় রাজেনস্যারের সত্যিই তো বোকা বানিয়েছে ছেলেটা। এতোদিন ধরে যাকে মনে হয়েছে কিছুই হবেনা সে কিনা পুরো খাতা জুড়ে এঁকেছে স্যারের গোমড়ামুখের হুবহু একখানা ছবি। সত্যিই চমকে দিয়েছে বিচ্ছুটা। এও একরকমের বোকা হওয়া, আর এমন বোকা হতে আজ এপ্রিলফুলের দিন বেশ লাগলো। ওরে তার সাথে একটা মজার ছড়াও লিখেছে,এতো গুণ ছেলেটার!
হাসতে স্যার করবেননা ভুল
আজ কিন্তু এপ্রিলফুল।
আমরা সবাই খাবো মিষ্টি
নইলে হবে অনাসৃষ্টি।
মুগ্ধ রাজেন স্যার আর পারলেন না দুএক লাইন না লিখে।
"বেশ হয়েছে
হয়েছি ফুল।
ছবি আঁকিস তুই
ওয়ান্ডারফুল।"
"এই নান্টু আর জগু যা তো নগেনের দোকান থেকে,গরম ছানার জিলিপি আর রসগোল্লা নিয়ে আয়।"©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
-------------------------------------------------------------------
Comments
Post a Comment