Toggle navigation
পরিবারের দখল, রাষ্ট্রের সম্মতি
সায়ন্তনী শূর
৭ মার্চ , ২০১৯, ০০:০০:০০
শেষ আপডেট: ৬ মার্চ , ২০১৯, ২২:৪৩:০৭
কলাবতীর বয়েস কুড়ি, বাড়ি কর্নাটকে। দশ মাস হয়েছে বিয়ের, স্বামী এইচ গুরু সেনা জওয়ান। ছুটি কাটিয়ে যে দিন কাজে যোগ দেন গুরু, সে দিনই পুলওয়ামা কাণ্ডে প্রাণ হারালেন। এক মুহূর্তে গৃহস্থ বাড়ির বৌ কলাবতী উত্তীর্ণ হলেন ‘শহিদের স্ত্রী’-এর সম্মানে। এখন তাঁর অনেক কদর। রাষ্ট্রের কাছে, সাধারণ মানুষের কাছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং সিআরপিএফ-এর ক্ষতিপূরণের অর্থ ছাড়াও, কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী পঁচিশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছেন পরিবারের জন্য। কলাবতীকে সরকারি চাকরি দেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। একটি বহুজাতিক সংস্থা দশ লক্ষ টাকা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে, কেউ বা জমি দিতে চায়।
যখন সবাই মিলে কলাবতীকে এই আশ্বাস দিতে ব্যস্ত যে তিনি একা নন, ঠিক তখনই কলাবতী টের পেয়েছেন— তিনি সত্যিই একা নন। স্বামী মারা যাওয়ার তেরো দিনের মধ্যে তাঁকে পুলিশ ডাকতে হয়েছে পরিবারের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে। কলাবতী জানিয়েছেন, শ্বশুরবাড়ির থেকে তাঁকে জোর করে দেওরের সঙ্গে বিয়ে দিতে চায়, যাতে ক্ষতিপূরণের টাকা পরিবারের মধ্যেই থেকে যায়।
এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রের ভূমিকা কী?
আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, সেনা আর পরিবার, এই দুটো যেন পরস্পর পরিপন্থী। বারংবার জওয়ানদের স্ত্রীরা বলেছেন, দেশই স্বামীর প্রথম ভালবাসা। কিংবা, দেশের জন্য নিজের ভালবাসা, ভাল লাগা পরিত্যাগ করেছেন জওয়ানের স্ত্রী। এই দ্বন্দ্বের সম্পর্ক স্থাপন করার কাজে সবচেয়ে সক্রিয় (এবং সর্বাধিক লাভবান) হল রাষ্ট্র। রাষ্ট্রই আইন তৈরি করে, যা দিয়ে সেনাবাহিনীকে এবং পরিবারকে একই সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কেমন হয় সে নিয়ন্ত্রণের চেহারা, তা-ও বলে দিচ্ছে কলাবতীর কাহিনি।
২০১৭ সালের নভেম্বর মাস অবধি যে আইন বলবৎ ছিল, তাতে ‘গ্যালান্ট্রি অ্যাওয়ার্ড’ বা বীরত্বের পদকপ্রাপ্ত শহিদ সৈনিকের স্ত্রীকে কেন্দ্র ভাতা দেবে তত দিন, যত দিন না তিনি আবার বিয়ে করেছেন। ফের বিয়ে করলেই স্ত্রী ভাতা হারাবেন। তবে যদি ‘শহিদ’ জওয়ানের ভাইকে বিয়ে করেন, তা হলে ভাতা চালু থাকবে। অর্থাৎ যে রাষ্ট্র পরিবারের চাইতে দেশকে বেশি মর্যাদা দিতে বলে মেয়েদের, সে-ই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় পরিবারের গুরুত্ব।
শহিদের পরিবারের দায়িত্ব অবশ্যই রাষ্ট্রের, কিন্তু সেই পরিবারের প্রকৃতি ও গঠনও কি রাষ্ট্রের মাথাব্যথার বিষয়? কয়েক বছর ধরেই এই আইন বদলের দাবি উঠছিল। ২০১৭-র নভেম্বর মাসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের উদ্যোগে আইনটি বাতিল হয়। কিন্তু সমাজ তা শুনবে কেন? আইন মরে গেলেও, মেয়েদের বন্দি করে রাখার উপায় মরে না। বরং চর্চার মধ্যে দিয়ে মেয়েদের পরিবার-বন্দি করে রাখার অনুশীলন পরিণত হয় রীতিতে। রাষ্ট্রের দেখানো পথেই হাঁটতে হয় মেয়েদের, নিজেকে বাঁচাতে, পরিবারকে বাঁচাতে।
শত্রুর কব্জা থেকে দেশকে বাঁচাতে প্রাণ দেন জওয়ান। কিন্তু তাঁর বধূটির শরীর, স্বাস্থ্য, শ্রম, যৌনতা এবং অর্থ কব্জা করতে চায় তাঁর পরিবার। শহিদের স্ত্রী সেই আগ্রাসন থেকে বাঁচবেন কী করে?
কলাবতীর অভিযোগ নেয়নি পুলিশ। বলেছে, এটা পারিবারিক সমস্যা, নিজেদের মধ্যেই মিটিয়ে ফেলা দরকার। অর্থাৎ প্রথমে রাষ্ট্র এসে পথ দেখায়, কী ভাবে পরিবারের অর্থ পরিবারের মধ্যেই রাখা যায়। তার পর রাষ্ট্রই বিধান দেয়, ওই আইন খারিজ হয়ে গেল। সেনা জওয়ানের স্ত্রী যখন নতুন আইনের ভরসায় বুক ঠুকে প্রতিবাদ করেন, রাষ্ট্রের সাহায্য দাবি করেন, তখন আবার সেই রাষ্ট্রই তাঁকে বলে দেয়— এটা পারিবারিক বিষয়, এখানে তারা প্রবেশ করতে পারবে না।
পরিবার এবং নিজের অবস্থানকে ঘিরে এই ধোঁয়াশা মেয়েদের ঠেলে দেয় আরও অসহায়তার দিকে। তাঁরা বুঝতে পারেন না সমাজে তাঁদের অবস্থান কী? তাঁরা কি শুধু পরিবারের অংশ, না তাঁদের স্বতন্ত্র সত্তারও স্বীকৃতি দেবে রাষ্ট্র? পরিবারে তাঁদের ভূমিকা কী? কী ভাবে তাঁরা সেই ভূমিকার বৈধ স্বীকৃতি প্রতিষ্ঠা করবে? শ্রম দিয়ে, অর্থের ভাগ দিয়ে, না কি যৌনতাও দিতে হবে? তবে কি একটা মেয়ে তাঁর কোনও কিছুই পরিবারের দখল থেকে আড়াল করতে পারবেন না? সে অধিকার তাঁর নেই?
এই অসহায়তা থেকে কেউ কেউ ক্রমে হয়তো স্বামীর পরিবারের মধ্যে বিয়েতে রাজি হন। এ যেন ঠিক সহমরণের মতো, সতী হওয়ারই আর এক রূপ। মেয়েটির সম্মতি সমাজ নিজের মতো করে আদায় করে নেয়। আর রাষ্ট্র একটাই পরিচয় মেয়েদের মাথায়, মনে চেপে বসিয়ে রাখে— তাঁরা মৃত জওয়ানের স্ত্রী। তাঁরা শহিদের সহধর্মিণী। মৃত স্বামীকে বিদায় জানিয়ে, অন্ত্যেষ্টির তেরো দিনের মাথায় স্বামীর ছোট ভাইকে বিয়ে করতে হতেই পারে। যেন স্বামীর সঙ্গে সঙ্গে মেয়েটির সংজ্ঞা, বোধ, অনুভূতি, সব চিতায় মিশে গিয়েছে। আগুনের মতো জ্বলছে একটিই পরিচয়, তিনি মৃত জওয়ানের স্ত্রী। এ ভাবেই আইনের বাইরে আইন টিকে থাকে মেয়েদের শরীর, যৌনতা, শ্রমের উপর ভর করে। রাজায় রাজায় যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলা হয়, কিন্তু সতীর মরণ মরে কে? যিনি কোনও দিন যুদ্ধ করতে চাননি।
TAGS : Indian Army CRPF Pulwama Terror Attack
আরও খবর
জলহারা চোখে ওঁদের ভয় সেই যুদ্ধ
কে আমায় খণ্ডাসুর বানাল
কিন্তু জয় কিসান?
সম্পাদক সমীপেষু: দেশ কাকে বলে
4EVER Care Now Standard on The New Vento.Volkswagen India|
Top Things To Do In The Great Barrier ReefSingapore Airlines | Tourism & Events Queensland|
The buzzing culture of Osaka and beyond - World Travel GuideWorld Travel Guide|
Community guidelines
You May Like
5 ways to be free of financial repayment pressureHDFC Bank
সম্পাদকের পছন্দ
এখনও ২২টি ঘাঁটি পাকিস্তানে, দাবি ভারতের
মধ্যস্থতায় কেন রবিশঙ্কর, উঠছে প্রশ্ন
কংগ্রেসকে চাপে রেখে দুই কেন্দ্রে প্রার্থী ঘোষণা বামেদের
আপনার পছন্দ
ফৌজি টুপিতেই বিরাটরা, তুলে দিলেন ‘কর্নেল’
মালগাড়ি থেকে ক্যাব, স্টিয়ারিং তাঁদের হাতেই
Financing your Big Dream Car: Simple stepsHDFC Bank|
সিনেমা চাইলে মেয়েকে যৌন সুবিধে দিতেই হবে! শুনতে হয়েছিল অভিনেত্রীর মাকেAnandabazar
ওয়াঘা সীমান্তে অভিনন্দনের পাশে কে ওই মহিলা?Anandabazar
ঋতুপর্ণা আর শাশ্বতর ‘মেয়ে’ এই প্রথম প্রকাশ্যে এল...Anandabazar
ক্ষতিপূরণ যেন ‘ঘরে’ থাকে, পুলওয়ামায় নিহতের স্ত্রীকে দেওরকে বিয়ের জন্য চাপAnandabazar
You May Like
Reliance Jio Urgent RequirementRojgar Center
Equity Market & Investment Scenario: Outlook 2019MF101
Samsung ups its ‘A game’ with new Galaxy A SeriesThe Times of India | Samsung
Silk Saree Only Rs 999/-Silk Saree Only Rs 999/-
Asset Allocation Is Key To Wealth Creation. Listen Now.Bloomberg|Quint
Benefits Of A Charcoal MaskBeBeautiful
© 2019 ABP Pvt. Ltd.
COMMERCIAL BREAK
TAP TO ENGAGE
Comments
Post a Comment