Skip to main content

বদল

#বদল#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"শোনো বৌমা বিয়ের পর আবার পড়াশোনা কিসের শুনি?অনেক তো হয়েছে,আর কত! বাড়ির বৌ বাড়ির কাজকর্ম মন দিয়ে করবে তা নয় উনি চললেন কাঁধে ব‍্যাগ ঝুলিয়ে কলেজে।"..
    "এমন তো কথা ছিলোনা,আমি তো তখনই বলেছিলাম আমাকে পড়তে দিতে হবে। তাই চান্স যখন পেয়েছি আর ছাড়বোনা,দেখতে দেখতে একবছর কেটে যাবে।"...একটু রুখে দাঁড়িয়েছিলো সৃষ্টি। সত‍্যিই একটা বছর কোথা দিয়ে কেটে গেছিলো হয়ত বা কেটে গেছে আরো অনেকগুলো বছর শুধু লড়াই করে পায়ের তলার মাটিটা শক্ত করতে সৃষ্টির।
            বাড়িতে রান্না শেষ করে অনভিজ্ঞ পোড়া হাত কখনো বা পেটে ফোস্কা নিয়ে চুলের জল মুছতে মুছতে বি.এড কলেজে দশটার ক্লাশটা ধরা। হয়ত এই ডিগ্ৰীটা থাকলে চাকরিটা হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি। না না টিফিনের বালাই ছিলোনা,কখনো বা জুটতো বন্ধুদের দয়ায় একমুঠো ঝালমুড়ি অথবা চিনেবাদাম ভাজা। বর নিজের হাতখরচটুকু রেখে সব টাকাটাই তুলে দিতো সংসারে কারণ স্বল্প মাইনের যুগে সেখানেও প্রতিনিয়ত শুনতে হত..দুজনে সকাল বিকেল খাচ্ছো এই টাকাতে কি সংসার চলে? তার মধ‍্যেই দু তিন টাকা বরাদ্দ থাকতো সৃষ্টির জন‍্য। বাসভাড়া তখন খুবই অল্প মাত্র সত্তর পয়সা। তবুও সৃষ্টি চেষ্টা করত ওর থেকেই কিছু বাঁচিয়ে রাখতে চার্ট পেপার রঙ পেন্সিল কেনার খরচের জন‍্য। বাড়তি পাওনা হিসেবে কখনো জুটে যেত মা বাবার দেওয়া একশো দুশো টাকা যা জমিয়ে তখন ফুটপাথের দোকানগুলো থেকে শখে কিনে ফেলতো ওর কল্পনার রঙে রঙিন সবুজ লাল অথবা নীল কাঁচের পুতির মালা অথবা টেরাকোটার দুল। কখনো বা গ্ৰেট ইস্টার্ন হোটেল থেকে জোড়া দেওয়া শিফন শাড়ি সস্তায়। কলেজেই বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিলো সুরভীর সাথে, ওরই মতই মধ‍্যবিত্ত ঘরের বৌ,বাংলার ছাত্রী। একেকদিন সুরভীর সাথে হেঁটে চলে আসতো গল্প করতে করতে বাড়ির স্টপেজ পর্যন্ত বেঁচে যেত সেদিনের বরাদ্দ ফেরার ভাড়াটাও। বাড়িতে এসে খিদে পেলেও জুটতোনা তেমন কিছুই সেভাবে। তবে এটা ঠিক না খাওয়া আর বেশি পরিশ্রম করা ফিগারটা কিন্তু বেশ মেদহীন আর টানটান ছিলো তখন। সে এক অন‍্য জীবন,মানে পড়াশোনার ফাঁকে সংসার আবার শ্বশুরবাড়ির শাসনকে ফাঁকি দিয়ে বরের সাথে সিনেমা হলের প্রথম বা দ্বিতীয় সারি তে বসে ঘাড় উঁচু করে সিনেমা দেখে বহু প্রতীক্ষিত অনাদির মোগলাই বা গোলবাড়ির কষামাংস আর রুটি খেয়ে বাড়ি আসা। কখনো বা কম বাজেটে মুড়িমাখা অথবা কচুরী তরকারি খেয়েই মুখে ফুটতো এক সরলতায় মাখা হাসি,মনে হত এই বেশ ভালো আছি। একই গল্প ছিলো সুরভীরও,ওকে রান্না কম করতে হত তবে সবটা গুছিয়ে দিয়ে আসতে হত শাশুড়িকে। দুটাকার ঝালমুড়ি বা একটাকার ঝাল ঝাল কুলের আচার চাটতে চাটতে বাড়ি ফিরতো দুজনেই। তার ফাঁকেই হয়ে যেত কত গল্প আর হাসি মজা। কলেজ ছাড়ার পর কিছুদিন যোগাযোগ ছিলো ওর সাথে,তারপরে একদিন গিয়ে শুনেছিলো ওরা যেন কোথায় ট্রান্সফার হয়ে গেছে। ইশ্ সুরভীটা একবার জানালো না,সত‍্যি খুব খারাপ লেগেছিলো সেদিন।
           মাঝে কেটে গেছে অনেকগুলো বছর,সৃষ্টিকে এখন আর দুটাকার ঝালমুড়ি কেনার কথা ভাবতে হয়না,মানে পাওয়া যায়না ঐ দামে কিছু। বাসভাড়াও সাতটাকা হয়ে গেছে,তবে সৃষ্টির এখন মানিব‍্যাগে পাঁচশো,দুহাজার আর একশোর নোট থাকে। ইচ্ছে হলেই অনেক কিছু কিনতে পারে মানে দামি বুটিকের শাড়ি,সোনার গয়না। তবে ওর আলমারিতে এখনও খুঁজলে দুএকটা জোড়া শাড়ি আর কাঁচের দুল পাওয়া যাবে। অতীতকে এত তাড়াতাড়ি ভুলতে চায়না সৃষ্টি। আসলে অতীতই তো শেখায় অনেক কিছু।
                     চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা অঞ্জন দত্তের সেই জনপ্রিয় গানটার মত একদিন হঠাৎই চাকরিটা হয়ে গিয়েছিলো সৃষ্টির। মাইনে পেয়ে বুঝতে পেরেছিলো মেয়েদের স্বাবলম্বী হওয়াটা কতটা জরুরী,ভালো লেগেছিলো। সত‍্যি তারপর লড়াই ছিলো কিন্তু স্বপ্নেরা একটু একটু করে কখন যে মুঠোয় ধরা দিয়েছিলো বুঝতেই পারেনি। সব বাবা মায়ের মত সৃষ্টিও নিজের জীবনের না পাওয়াগুলো দিয়ে মানুষ করতে চায়নি সন্তানকে,চেষ্টা করেছে সে যেন শিক্ষায় দীক্ষায় আর আচরণে সেরার সেরা হতে পারে।
                     ...ছোট্টটা একটা সময় অনেক কষ্টও করতে দেখেছে মাকে। কে জানে ছেলের মনে আছে কিনা সেইদিনগুলো। বাড়িতে কেবল্ আনার মত সংস্থানও ছিলোনা তখন। অনেক চিন্তা তখন মাথায়,ভাড়া বাড়িতে আর থাকা যায়না ছেলে বড় হচ্ছে,ততদিনে বাড়ির বড়রা অসুস্থ তাদের নিয়ে টানাপোড়েনের মধ‍্যেও সব সময় চোখ থাকতো ছেলেটার দিকে ও যাতে ভালো মানুষ হয়,ওর যাতে কোন অযত্ন না হয়।..." মা আমার বাংলাটা ঠিক হচ্ছেনা গো।".."আচ্ছা ঠিক আছে আমি আরেকটা টিউশন দেখছি তোর জন‍্য। আর আমি তো আছিই। রান্নার ফাঁকে দেখিয়ে দেবো।"..সৃষ্টির ব‍্যাগে তখনও গোনা টাকা। ডাইরিতে টিক পড়তো কজনের মাইনে দেওয়া হলো। ফ্ল্যাটের ইএম আই টাও চলছে তখন। ছুট ছুট ছুট,চলছে দৌড়ে ছোটা," বাবা তোকে যে অনেক বড় হতে হবে,যা খরচ লাগে আমি করবো। স্পেশাল কোচিং টিউশন কিছুরই ঘাটতি রাখেনি সৃষ্টি। নাহ্ ছেলেও নিরাশ করেনি ওকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার বেশ সামনের দিকেই নাম ছিলো।
            সত‍্যিই সৃষ্টির এখন সুদিন অনেকটা হাল্কা লাগে এখন। মানিব‍্যাগটা বেশ ভরা এখন তাই ইচ্ছে করলেই বড় হোটেলে ডিনারটা সারতে পারে । তবুও বাসে ট্রামে বেড়াতেই ভালো লাগে বেশি। তবে ছেলের একদম গাড়ি ছাড়া খুব একটা চলেনা।" ওহ্ মা,এত কেন চাপ নাও,একটা উবার ডেকে নিলেই তো পারো।".." ইশ্ শুধু শুধু অতগুলো টাকা খরচ করবো!বাসে বেশ হাওয়া খেতে খেতে যাওয়া যায়।".."সত‍্যি তোমরা পারো,আমার অত পোষায়না।"..সত‍্যি বোধহয় মা বাবারাই পারে,তাই সৃষ্টির আর ওর কর্তার এখনও অফিস সামলে বাড়ির কাজ করতে কষ্ট হয়না। অত বড় ছেলে এখনও বাজারের মুখ দেখলোনা। সত‍্যি বলতে মনে হয়," আহা থাক কতটুকু আর বয়েস!এত মাথার কাজ করে ছেলেটা,আহা বিশ্রাম নিক।"
                     নিজের মোবাইলটা কদিন ছেলেকে ব‍্যবহার করতে দিয়েছিলো সৃষ্টি,ওর মোবাইলটা খারাপ হয়ে গেছে নতুন ফোন কিনতে হবে।"আচ্ছা তোর মাইনের টাকাগুলো কি করিস বলতো?আর এত দাম দিয়ে ফোন কেনারই বা কি আছে?".."মা সবার হাতে এখন সত্তর হাজারের আইফোন,আমার যে প্রেস্টিজ থাকেনা।".."আচ্ছা দাঁড়া দেখছি,আমিই কিনে দেবো একটা ফোন,একটা মাস অপেক্ষা কর বাবা। কিন্তু তোর সব সময়ই শুনি টানাটানি কি করিস মোটামুটি খারাপ তো পাসনা,আমাদের সময়ে ভাবতেই পারতামনা এতগুলো টাকা সত‍্যিই অকল্পনীয় ছিলো । আর আমরাও তো কিছু চাইনা তোর কাছে।".."মা এত কথা বোলোনা প্লিজ,থাক ফোনটা আমিই কিনে নেবো,নাহলে তোমায় শোধ দিয়ে দেবো একটু একটু করে। এখন আর সেই তোমাদের বাদাম ভাজা খাবার দিন নেই। একটা ক‍্যাফেতে বা রেস্তোরায় বসতে এখন এক ধাক্কায় কত খরচ হয়ে যায় জানো?".."কে জানে বাবা,আমার তো এখনও রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে বেশ লাগে। আর মুড়িমাখা সেটাও বেশ ভালো শরীর খারাপ হয়না।".." উহ্ মা,তোমার কষ্টের গল্পটা প্লিজ আবার শুরু কোরোনা।"
           যাক্ ফোন কিনে দেওয়াতে ছেলে বেশ খুশি,মনটা ভরে যায় মায়েরও। ওদের আনন্দেই তো আনন্দ যদিও এক ধাক্কায় প্রায় একমাসের মাইনেটাই খরচ হয়ে গেলো ওর।
  সৃষ্টির পুরোনো ফোনটা এখন আবার ওর কাছে ফিরে এসেছে। ইশ্ কত মেসেজ এসেছে দেখাই হয়নি। একটা একটা করে মেসেজ দেখতে দেখতে একদলা কান্না জমা হয়ে ওর চোখদুটোকে ভিজিয়ে দেয়। ছেলের নানান কারণে নাইট ডিউটির বেশ কয়েকটা রাত কেটেছে শহরের নামী পাঁচতারা অথবা চারতারা হোটেলে বান্ধবীর সঙ্গে,খরচ হয়েছে মোটা টাকা। অথচ অনেক সময়ই মায়ের জন্মদিনে ব‍্যস্ততার কারণে হ‍্যাপি বার্থডেটুকুও বলতে পারেনা ছেলে। হাসিমুখে দুটো অবিবাহিত ছেলেমেয়ে দু তিন মাসের পরিচয়ে রাত কাটাচ্ছে একসাথে আর বাড়ি ফিরে মিথ‍্যে দিয়ে ধুয়ে ফেলছে সব সত‍্যি ভাবতেই গা টা গুলিয়ে ওঠে ওর। তাহলে কি সত‍্যিই বদল আসছে মানে পরিবর্তনের জোয়ারে ভেসেছে ওদের মত সাধারণ মধ‍্যবিত্তরাও। বিদেশের মত এদেশেও ছেলেমেয়েরা কনট্রাসেপ্টিভ পিল অথবা কন্ডোম মুঠোতে নিয়ে প্রস্তুত শরীরের খেলায়। মনটা ভেঙে যায় টুকরো হয়ে সৃষ্টির,বদলাচ্ছে যুগ বদলাচ্ছে বান্ধবী আর তার সাথে পাল্টাচ্ছে হোটেলের ঘর। সত‍্যি বোধহয় শুধু সৃষ্টিই মানসিকতায় সেই এঁদো গলির মধ‍্যবিত্ত বৌ রয়ে গেলো।
                 ভারী মন আর ভেজা চোখ এক নিমেষেই পেয়ে গেলো ছেলের খরচের হদিস। কদিন ধরেই সংবাদপত্রে দেখছে প্রাপ‍্য চাকরি না পেয়ে অনশনে বসেছে কতগুলো ছেলেমেয়ে,অনেকেই তাদের মধ‍্যে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। কি চায় এরা? হয়ত অন্নসংস্থানের জন‍্য একটা প্রাইমারী স্কুলের চাকরি। একদিন ওরও এই দশাই ছিলো। সংসারে তোর কোন দায় নেই তুই হোটেলের মত এখানে আয়,খা আর আরাম কর। এটা শিখিয়ে তো ওরাই মানুষ করছে পরবর্তী প্রজন্মকে। তাই ওদের উপার্জিত টাকা এভাবেই খরচ হয়ে যায় কখনো হোটেল, মল বা ক‍্যাফের বিল মেটাতে। চাওয়া পাওয়ার টানাপোড়েন থেকে ছেলেকে বাঁচাতে গিয়ে বোধহয় একটু বেশিই দিয়ে ফেলেছে মনে হলো সৃষ্টির। সেদিন চলে গিয়েছিলো ফুটপাথে অনশন করা ছেলেমেয়েগুলোকে দেখতে হয়ত বা মেলাতে চেয়েছিলো নিজের সন্তানের চাওয়ার সাথে ওদের চাওয়ার বৈপরীত‍্যকে।
         হঠাৎই ভিড়ের মধ‍্যে অনেকদিনের চেনা একটা শুকনো মুখ দেখে এগিয়ে যায় সৃষ্টি। ইশ্ কতদিন খুঁজেছে ওকে সেই কত বছর আগে দেখা তবুও চেনা যায়। যদিও ভেঙে গেছে শরীরটা।"সুরভী! চিনতে পারছিস?"..গলাটা জড়িয়ে ধরে সৃষ্টি।" ইশ্ কতদিন বাদে,তুই কি রে,কত খুঁজেছি তোকে। তুই ফেসবুকও করিসনা!"...সুরভীর কথাগুলো নচিকেতার একটা গান মনে করিয়ে দিলো সৃষ্টিকে। ও যেন বলতে চাইলো,"আমার তো এখানেই থাকার কথা ছিলো বন্ধু। বরের প্রাইভেট ফার্মের চাকরিটা গেছে। ভেবেছিলাম ছেলেটা চাকরি পেলে বাঁচবো। এখন তো দেখছি ছেলেটাই বাঁচবে কিনা!"..কান্নায় ভেঙে পড়ে সুরভী। স্তব্ধ হয়ে যায় সৃষ্টি এ কেমন বদল ভগবান! কারো কাছে টাকাটা বড্ড দরকার,যেমন ওর ছিলো পঁচিশ বছর আগে। আর কারো কাছে উদ্বৃত্ত টাকা শুধুই ভোগের জন‍্য অথচ ওরা দুজনেই প্রায় সমবয়সী। পিওরসিল্ক শাড়িটা পরে ঘামছিলো সৃষ্টি,মাটিতেই বসে পরে সুরভীর পাশে,সুরভী ভেজা রুমাল দিয়ে মুছিয়ে দিচ্ছে ছেলের মুখ। তবুও বোধহয় অনেক না পাওয়ার মাঝেও সুরভীই জিতে গেছে কোথাও,ওর সন্তান আজও ওর কোলে মাথা রেখে শান্তি খোঁজে।"ভাবিসনা সব ঠিক হয়ে যাবে,হয়ত আগুনে পুড়েই সোনা খাঁটি হয়।"
সমাপ্ত:-

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...