Skip to main content

অঙ্কুর

#অঙ্কুর#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

'কাশ্মীরে নয় শিলংয়েও নয় আন্দামান কি রাঁচিতেও নয়, আরও যে সুন্দর, আকাশ প্রান্তর রয়েছে কাছে এইখানে এই মনে প্রাণে আরো নির্ভয় || .....
    বেড়ানোর আনন্দে সবাই গানে মশগুল। একদম মনপ্রাণ মেতে উঠেছে সবার। গাছে গাছে শিমূলে পলাশে বসন্তের ছোঁয়া। মনেও রঙ ধরিয়েছে প্রকৃতি তাই উইকএন্ডে চলো যাই ঘুরে আসি। ব‍্যাস বেড়িয়ে পরেছে ওরা একদম লেটস্ গো বলে। মন কেড়েছে চারিদিকের প্রকৃতি তাই চলছে মনের আনন্দে গান। কখনো হেমন্ত কখনো বা মান্না দে। ওরা পাঁচজন আনন্দী,মেহুলী,সুবর্ণা,নন্দা আর বন‍্যা সবাই একসাথে ইউনিভার্সিটিতে পড়ে। পাঁচজনেই মোটামুটি পান্ডব গোয়েন্দা তবে এই স্বাধীনতা কে উপভোগ করতে দিচ্ছে? তাই সাথে পাহারাদার হয়ে যাচ্ছে তিন দাদা। ওদেরকে কে পাত্তা দেবে? একদম পকেটে ভরে রেখে দেবে ওদের।
              এরই মাঝে বলে ওঠে আনন্দী," এই গাড়ি রোকো ঐ পলাশ গাছের তলায় সেলফি তুলেগা।"..ওর দাদা আওয়াজ দেয়," কি হিন্দির ছিরি,এ তো একদম মায়ের মত।" সবাই হেসে ওঠে হো হো করে। টুকটাক খাওয়া গান আর হাসির মাঝে কখন যে জঙ্গলের মাঝে রিসর্টে এসে পৌঁছলো বুঝতেই পারলোনা। সত‍্যি গ্ৰুপে বেড়ানোর মজাই আলাদা। মুখ হাত পা ধুতে না ধুতেই ডাক পড়লো খাবারের জন‍্য,আগে থেকে বলাই ছিলো তাই একদম সব রেডি। গরম ভাত,ডাল আলুভাজা,পটলের ডালনা,দেশি চিকেন কষা আর পাতলা করে চাটনি। চেটেপুটে সব শেষ। খেয়েদেয়ে বিশ্রামের পর ওরা বেড়িয়ে পড়ে জায়গাটা সত‍্যি অসাধারণ,একদম নির্জন প্রকৃতি,সবুজে ঘেরা লম্বা লম্বা গাছ। দূরে পাহাড়,কিছু কিছু গাছ সেজেছে বসন্তের মনোহর সজ্জায় ফুলে ফুলে। " আচ্ছা তোরা কি শুধু ছবি তুলতে এসেছিস নাকি? ভগবান মায়েরা আমাদের কি এখানে ফটোগ্ৰাফার আর পাহারাদার হতে পাঠিয়েছে? সবসময় লেডিসদের আ্যটেনসন দাও উফফ্।"
         হেসে গড়িয়ে পরে ওরা," বোঝো এবার বোনেদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করার ফল।"
           রাতের খাওয়াটাও বেশ জমলো রুটি মাটন আর স‍্যালাডে। দাদাগুলো সব মাংস ছাড়া আর কিছুই বোঝেনা। অবশ‍্য ওরাই বা কম কিসে?" এই যে ভালোই তো সাটালি,ভালো করে ঘুরতে হলে কিন্তু সকাল সকাল উঠতে হবে। এখানকার কেয়ারটেকার হরিয়া যাবে আমাদের সাথে ও বললো সকালে অনেক পাখি,ময়ূর আর হরিণও দেখা যায়। বকবক না করে ঘুমিয়ে পড় যা।"..অগত‍্যা একটু আড্ডা মেরেই শুয়ে পড়লো ওরা। ভোরবেলা দাদাদের জ্বালায় উঠে বেড়িয়ে পড়লো ওরা। সত‍্যি ভোরের সৌন্দর্যই আলাদা। মন ছুঁয়ে গেলো প্রকৃতির সদ‍্য ঘুম ভাঙা রূপ।
"আরে ঐ তো ময়ূর,দেখ দেখ চারটে।"..বলে ওঠে আনন্দী। বকা দেয় ওর দাদা অংশু," আস্তে,জঙ্গলে জোরে কথা বলতে নেই। বুদ্ধিশুদ্ধি আর হলোনা।"মন হারিয়ে গিয়েছিলো সবার তার মধ‍্যে আছে ছবি তোলা। হঠাৎই হরিয়া বলে ওঠে," চুপ কর বাবু,একটো আওয়াজ শুনছিস কেনে। ঐ দূরের থেকে আসছে। তবে উখানে তো জঙ্গল,বিশেষ কেউ যায়না কাঠকুটো লিতে যায় কেউ মাঝে মাঝে।"
             হরিয়া কথা বলতে বলতে এগিয়ে যায় পেছন পেছন ওরাও এগোয়। কাঁটাঝোপ সরিয়ে সাবধানে চলতে থাকে। আওয়াজটা আরও পরিস্কার শোনা যায়। এগিয়ে যায় ওরা কিন্তু যা দেখে তা দেখে কারো মুখে কথা সরেনা। তবে হরিয়া এগিয়ে যায়..হাত পা ছুড়ে কাঁদছে এক শিশু। ওর শরীরের দুএকটা জায়গা ছড়ে গেছে। গায়ে পিঁপড়ের কামড়,কয়েকটা পিঁপড়ে ঘুরছে চারিদিকে।"হে ভগবান ইয়ারা কি মানুষ না জানোয়ার! দেখে তো মনে হচ্ছে ভদ্রলোকের বাচ্চা। কে জানে কে পাপটো ফেলে গেছে ইখানে মারবার লেইগ‍্যে।"
              সত‍্যি একটা ফুটফুটে মেয়ে হরিয়ার কোলে। একটা তোয়ালে পড়ে ছিলো পাশে। সত‍্যি মানুষ কি না পারে। এভাবে একটা বাচ্চাকে মরবার জন‍্য ফেলে গেছে এখানে। সবার মনটা ভরে উঠলো বিষাদে,বাচ্চাটাকে এখনি ডাক্তার দেখানো দরকার তাছাড়া পুলিশেও খবর দিতে হবে। হরিয়া বাচ্চাটাকে আনন্দীর কোলে তুলে দেয়," দিদিমুণি একটু ধরনা একে,আমি একটু চারপাশে খুঁজি। কেউ আছে লাকি দেখি,একটু খোঁজ লাগাই।"..ওকে কোলে নিতে কাড়াকাড়ি পড়ে গেলো ওদের। কে জানে সঠিক কদিন বয়েস হবে ওর,তবে কোলের গরম পেয়ে বেশ পিটপিট করে তাকাচ্ছে। ওমা দুটো আঙুলও মুখে ঢুকিয়ে দিয়েছে । নাহ্ কিছুই হলোনা,কেউ নেই কাছাকাছি।
          ওরা বাচ্চাটা নিয়ে বেশ কিছুটা দূরে থানায় এলো। সব শুনে পুলিশ ওকে ওদের হেপাজতে রাখাই ঠিক করলো,আর এর মধ‍্যে খোঁজ নিতে হবে যদি কেউ আসে ওর দাবী নিয়ে। আনন্দী এগিয়ে আসে," আচ্ছা আমরা ওকে নিয়ে যেতে পারিনা আমাদের সাথে"..পাশ থেকে বকা লাগায় ওর দাদা," কিসব বলছিস? কত লিগ‍্যাল ফর্মালিটি আছে জানিস?"..পুলিশ অফিসারটি হেসে বলে," ম‍্যাডাম এতো কুকুর বেড়াল নয়,যে বাড়ি নিয়ে গিয়ে পুষতে শুরু করলেন। মানুষের বাচ্চা বলে কথা। আইন আদালত অনেক হ‍্যাপা। আর আপনার তো বিয়েও হয়নি দেখছি,বাচ্চা নিয়ে কি করবেন শুনি?"..কথার উত্তর দিতে গিয়েও ঢোক গেলে আনন্দী,মনে মনে বলে মানুষের বাচ্চা! তাই বোধহয় এভাবে মরার জন‍্য ফেলে গেছে মনুষ‍্যত্বহীন মানুষ সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জীব।
              কাল বাদে পরশু ওদের ফেরা। কেমন যেন মুডটা অফ হয়ে গেলো সবার। আনমনা হয়ে যায় মেহুলীও,শরীরের চাহিদায় প্রায়ই অনিকের সাথে মিলে যায় ইচ্ছেমত। দুটো সাহসী শরীর খোঁজে উষ্ণতার ছোঁয়া। সত‍্যিই তো বেশ কয়েকদিন হয়ে গেলো ওর পিরিয়ড হয়নি এবার। তেমন কিছু হলে হয়ত..আর ভাবতে পারেনা। না না আ্যবরসন আর একটা জলজ‍্যান্ত বাচ্চাকে ফেলে চলে যাওয়ার মাঝে অনেক ফারাক আছে। আগে ব‍্যবস্থা নিলেই তো পারতিস বাপু। এই দুটোদিন ওরা সময় পেলেই একবার ফোন করে জেনেছে বাচ্চাটার খবর পেয়ে কেউ এসেছে কিনা নিতে? কিন্তু নাহ্ কোন খবর নেই। ওরা ফিরে আসার দিন আনন্দী আর অন‍্য মেয়েদের বায়নায় যেতেই হলো বাচ্চাটাকে দেখতে,ওরে বাবা কি সুন্দর লাল ফ্রক পরেছে কুট্টিটা মাথা নেড়ে পিটপিট করে তাকালো। শুনলো ওকে হোমে দিয়ে দেওয়া হবে। সরকারী হোম,ব‍্যবস্থা ভালো  এর আগেও অনেক বাচ্চা গেছে হোমে। তবে এ একটু বেশিই ছোট।
                   ফেরার সময় আজ আর গান গাইতে ইচ্ছে করলোনা ওদের,বড় মনটা খারাপ হলো ঐটুকু শিশুর ভবিষ‍্যত ভেবে। জন্মেই অনাথ আর অবাঞ্ছিত হয়ে গেছে বাচ্চাটা। অথচ এমনও মা বাবা আছে যারা একটা বাচ্চার জন‍্য ঘুরছে কত ডাক্তারের চেম্বারে। ওখান থেকে ফোননম্বরটা নিয়ে এসেছিলো ওরা জানতে পারলো বাচ্চাটাকে হোমে দেওয়া হয়েছে। ওখানে ভালোই আছে ও। দুজন মাসি ওকে আপাতত দেখছে,খাচ্ছে ঠিকমত আর শরীরও ভালো আছে।
                মাঝে কেটে গেছে বেশ কয়েকটা মাস। ওরাও পরীক্ষা নিয়ে ব‍্যস্ত ছিলো। হঠাৎই একদিন আনন্দী বলে," এই যাবি একদিন বাচ্চাটাকে দেখতে? আরে অনেকদিন ওর কোন খোঁজ পাইনি,একবার দেখতে ইচ্ছে করে।".." ওটা হোম,আমাদের কি দেখতে দেবে নাকি?"
                যাক অনুমতিটা করে নিয়েছিলো ওরা তাই অসুবিধা হয়নি বেশি। আয়ামাসি কোলে করে নিয়ে আসে ওকে। বেশ ফুটফুটে হয়েছে আর কথা বললে হাসে,বসতেও পারে। তবে একদম আঁকড়ে ধরে আছে আয়ামাসিকে।" আর বোলোনা,আমাকে ছাড়তেই চায়না টুকটুকি। ওর সবটাই তো আমি করি। বড় মায়া পড়ে গেছে গো। আচ্ছা তোমরা কি চেনো ওর বাবা মাকে?"..অদ্ভুত কথা বলে তো মহিলা,ওরা চিনবে কেনো!মেহুলী আর সুবর্ণা রেগে যায়। আনন্দী বলে," হঠাৎ এমন বলছেন কেন? আমরা চিনলে কি ও এই হোমে থাকতো?".." না আসলে কত কি দেখলাম,বাচ্চাকে ফেলে দিয়ে লুকিয়ে দেখতে আসে অন‍্য লোক সেজে। আসলে সন্তানের মায়া তো,তাই কাটাতে পারেনা।"
                  নাহ্ সেদিন টুকটুকির দুটো ছবি তুলে নিলেও আর কখনো আসেনি ওরা দেখতে ওকে। মানুষের মনে কখন কি সন্দেহ হয় বলা যায়না। তাই কি দরকার? মাঝে কেটে গেছে চারটে বছর।
এর মধ‍্যে ওদের তিনজনের বিয়ে হয়ে গেছে নন্দা আর বন‍্যা ছাড়া। নন্দাটা নাকি বিয়ে করবেনা,আর বন‍্যারটা ঝুলছে। পান্ডবগোয়েন্দার দল ভেঙেছে, আনন্দীটা আবার একদম দেশান্তরে চলে গেছে। মানে বরের হাত ধরে একেবারে আমেরিকায়।
                         হঠাৎই একটা খবরে চোখ আটকে যায় আনন্দীর। আজকাল ফেসবুকের কল‍্যাণে খুব তাড়াতাড়ি সব খবর পেয়ে যায়। খুবই কষ্টের খবরটা,আনন্দী নিজেও মা ওর একটা ছোট মেয়ে আছে তাই ও খুব অনুভব করলো কষ্টটা। ভাবতেই কান্না পেলো। কিন্তু এটা কার কথা লিখেছে ওরা? মেহুলীকে একটা কল করতেই হবে আজ.." হ‍্যালো মেহুলী তুই দেখেছিস,আরে এর মধ‍্যেই ভুলে গেলি? দাঁড়া তোকে লিঙ্কটা দিই। ভালো করে দেখ এবার.. টুকটুকির কথা মনে নেই তোর,টুকটুকিকে দত্তক নিচ্ছে এক আমেরিকান দম্পতি। যাক্ এতদিনে হয়ত মেয়েটা ভালোভাবে মানুষ হওয়ার একটা ঠিকানা পাবে।"..বুকের ভেতরটা মুচড়ে ওঠে মেহুলীর,টুকটুকিকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলো কেউ আপদ ভেবে মরার জন‍্য জঙ্গলে। ও জানেনা সেই মায়ের কোথায় সমস‍্যা ছিলো। ও নষ্ট করেছে.. মানে অঙ্কুরেই বিনাশ করেছে দুবার নিজেদের লাগামছাড়া চাহিদায় সৃষ্টি হওয়া ভ্রূণকে নার্সিংহোমে গিয়ে একান্ত গোপনে। তাই হয়ত এই চারবছরে ওর কোন সন্তান হলোনা,ডাক্তার বলেছে সম্ভাবনা কম। অথচ শাশুড়ি বারবার বলে একটা নাতি নাতনির জন‍্য। " কি রে কথা বলছিসনা কেন? তুই দেখেছিস খবরটা।"...গলাটা একটু পরিস্কার করে মেহুলী বলে" দেখেছি রে,আমি পুরোটা পড়েছি। আমার শাশুড়ি জানিস তো বাচ্চা বাচ্চা করে মাথা খারাপ করে,অথচ দত্তক নিতে দেবেনা। আর টুকটুকিটা কোথায় চলে যাচ্ছে সাতসমুদ্র তেরো নদীর পারে। খবরের কাগজে দিয়েছে খুব কাঁদছিলো মেয়েটা আয়ামাসির আঁচলটা শক্ত মুঠোয় চেপে ধরেছিলো কিছুতেই ছাড়ানো যাচ্ছিলোনা। চোখের জলে ভেসেছে আয়ামাসিও ভালোবাসার টান তো। তবে ও কেমন আছে ওখানে সব খবর দিতে হবে এদেশে ওর নতুন বাবা মাকে এটাই নিয়ম। খুব কান্না পেলোরে,কে জানে যাদের এতদিন আপনজন ভেবেছে তাদের ছেড়ে,নিজের ভাষা,নিজের দেশ ছেড়ে নতুন বাবা মায়ের কাছে কেমন থাকবে মেয়েটা?"
             টেলিফোনের দুইপ্রান্তে দুই নারী একজন একটা ছোট্ট সন্তানের মা। আরেকজন অঙ্কুরেই বিনাশ করছিলো সন্তানদের অবাঞ্ছিত ভেবে আর লোকলজ্জার ভয়ে। আজ সাধ‍্য সাধনা করছে মা হবার জন‍্য। দুজনেরই মনটা বড় ভারাক্রান্ত আনন্দী বোঝে সন্তানের ব‍্যাথা। মেহুলীও বোঝে মা না হতে পারার যন্ত্রণা। হয়ত বা মনে প্রাণে নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচনায় দগ্ধ হতে হতে বলে রক্তের ডেলাই হোক বা রক্তমাংসের মানুষই হোক যত্নে ভূমিষ্ঠ হোক সন্তানেরা আদরে মানুষ হোক মায়ের কোলে। টুকটুকির মত যেন তাদের নিজের ঠিকানা খুঁজতে অন‍্য দেশে অপরিচিত কারো সাথে পাড়ি দিতে না হয়।
সমাপ্ত:-

           

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...