Skip to main content

শুভ বৈশাখ

#শুভ_বৈশাখ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"আমের পল্লব,ডাব,সুপুরী আর আর...মা একটু আবার বলবে,কি কি আনতে হবে? আমি শুনে নিয়েছি তবে মনে হচ্ছে কয়েকটা ভুলেছি।"
"ওহ্ বাবা একদম ঝড় বইয়ে দিলি,অত কিছু মনে রাখার কি আছে শুনি এত সব ঝামেলার মাঝে? তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আয়। আচ্ছা আমি হোয়াটস আ্যপ করে দিচ্ছি। যতটা পারবি আন,বাকিটা রমলা আর তোর বাবা এনে দেবে।"
         মাঝে মাঝে খুব অবাক লাগে অসীমার ভাবেন কে আপন বেশি ছেলে না ছেলের বৌ? সারাদিনে ছেলে যত বেশি না মা বলে ডাকে তার থেকে বেশি মা মা করে ঐ মেয়েটা। আজ আটবছর একসাথে থাকতে থাকতে মাঝে মাঝে ভুলেই যান ও বৌমা। না হলে কেউ বরের সাথে ঝগড়া করে মাঝরাতে এসে শাশুড়ির পাশে গুটিসুটি মেরে শোয়? একই ঘরে দুটো খাটে ঘুমোন ওরা কর্তা গিন্নি। সকালে উঠে শ্বশুরমশাইও হেসে ওঠেন বৌমার কান্ড দেখে। আবার বেশি জ্বালাতন করলে অসীমাই বলেন," যা তো বাপু যে যার মত আলাদা থাক। অনেক হয়েছে আর জ্বলতে পারছিনা। এরপর সবাই বলবে শাশুড়ি দজ্জাল। প্রতিদিন চেঁচামেচি করে। কেউ এখন ছোট নও নিজের বরকে নিজে সামলাও।"..ছেলে কিছু বলার আগেই এসে গলাটা জড়িয়ে বলে," অত সহজে মুক্তি নেই তোমার, আমরা চলে যাবো আর বাবুর সাথে জমিয়ে প্রেম করবে তা হবেনা। আমি মাঝে মাঝেই রাতে এসে শুয়ে পরবো এই খাটে।"
      সত‍্যি এই কথার পর আর কিছু বলা চলেনা। যদিও ওর বোন বলে," দিদি আজকালকার মেয়েগুলো বড় চালাক,মিস্টি কথায় শাশুড়িকে ভুলিয়ে গায়ে হাওয়া লাগিয়ে থাকে।"
                ওহ্ সত‍্যি ফোনটা আসার পর কিসব ভাবছেন তখন থেকে। কাল তো বাড়িতে গণেশ পুজো। প্রতিবছরই বছরের প্রথম দিনটায় করেন গণেশ পুজো। তার সাথে আবার বৌমা সত‍্যনারায়ণও জুড়ে দিয়েছে ওর বায়না ছিলো," মা ঐ যে দুধ কলা আটা গুড় ক্ষীর এই সব দিয়ে মাখা হয় যেটা দারুণ লাগে খেতে। এক জোগাড়েই তো হয়ে যাবে মা। বছরে তো একটাই পুজো, করোনা গো।" তারপর থেকেই আরো বেড়েছে। আর দিনদিন বেড়েই চলেছে। এবার তো আরো বড় করে হবে পুজো। যদিও খাওয়াটা ক‍্যাটারিং বলে দিয়েছেন তবুও কাজ কি কম?
                  সন্ধ‍্যের পরে স্কুটিটা নিয়ে বাড়ির রাস্তায় ঢোকে দুর্গা। সাবধানে কলাগাছ দুটো,ডাব আর ব‍্যাগটা নামায়। উল্টোদিকে ঘুরতেই দেখতে পায় ওদের সামনের বাড়ির পাশের বাড়ি থেকে মুখার্জী কাকিমা দেখছেন ও তাকাতেই ঘরে ঢুকে যায়। ওকে দেখলেই অদ্ভুত বিহেভ করে কাকিমা অথচ ওনার ছেলের বৌ খুব ভালো হয়েছে। একদম ছেলেমানুষ মিস্টি একটা মেয়ে। দেখলেই হাসে কথা বলতে চায়,তবে শাশুড়িকে বোধহয় ভয় পায়। ওর মত চাকরি করা প‍্যান্টশার্ট পরা বৌমার সাথে মিশে যদি খারাপ হয়ে যায়। জিনিসগুলো নিয়ে বাড়িতে ঢুকে যায় দুর্গা।
             ঘরে ঢুকে মুখটা ব‍্যাকান মুখার্জী গিন্নি," বাব্বা এই বৌ ছেলেদের ওপর দিয়ে হাঁটে। বাইক চালিয়ে কলাগাছ কাঁধে করে বাড়ি ঢুকলো। সাধে কি আর ছেলেপুলে হলোনা। যতই ঘটা করে গণেশ পুজো করো আজ পর্যন্ত তো গণেশ এলোনা ঘরে।"..শাশুড়ির কথা শুনে খুব খারাপ লাগে ঈশিতার।" মা ওটা তো স্কুটি, বাইক কোথায়?যাই বলো দিদিভাই কিন্তু খুব ভালো। কাল যাবো তো মা আমরা পুজোতে? আমাদের বলেনি এবার যেতে?"..." তা আবার বলবেনা,তবে তুমি এবার যাবেনা মা। তোমার বাচ্চা হবে আমি এখনো কাউকে বলিনি বাপু। আগে ভালোয় ভালোয় পাঁচটা মাস যাক তারপর। কি দরকার বছরের পয়লা দিনে ওর মুখ দেখার এই অবস্থায়? আমি একাই যাবো।"...অবাক হয়ে যায়  শাশুড়ির কথা শুনে। ভাগ‍্যিস দুবছরের মধ‍্যে ওর একটা কিছু খবর হয়েছে নাহলে হয়ত উঠতে বসতে। এদের মানসিকতা ভাবতেই গায়ে কাঁটা দিলো ওর।
            আটবছর হয়ছে কিন্তু দুর্গা মা হতে পারেনি। হয়ত অসীমার মনেও দুঃখ আছে এ নিয়ে কিন্তু ভুলেও কখনো প্রকাশ করেননা। মেয়েটার মনের কষ্টটা খুঁচিয়ে কি হবে? বুঝতেই পারেন ডাক্তার দেখাচ্ছে ওরা। হরমোন ইঞ্জেকশন নেওয়া,ছোটখাটো অপারেশন সবই হয়েছে। অনেক কষ্ট সহ‍্য করছে মেয়েটা। তাই যেসব জায়গায় গেলে বংশরক্ষার কথা শুনতে হয় আজকাল এড়িয়ে চলান সেইসব আত্মীয়স্বজনের বাড়ি। তবুও প্রতিরাতে শোওয়ার সময় দুগ্গা ঠাকুরকে বলেন," তোমার কোলে চার সন্তান। আমার ঘরের দুর্গাকে অন্তত একটা দাও মা।"
                উল্টোদিক থেকে কাজের ফাঁকে মুখার্জী গিন্নী নজর রাখেন এই বাড়িতে। সকাল থেকেই শুধু গাড়ি আসছে। বাবা ও বাড়ির বৌকে তো চেনাই যায়না,বরাবরই দেখেন হেলমেট মাথায় দিয়ে নামতে। আজ চুল ছেড়ে,সুন্দর হলুদ লাল সবুজের ঢাকাই পরে বরের সাথে চললো কোথায়? বাড়িতে তো পুজো। যদিও ওর শাশুড়ি বলেছে একটু দুপুরের দিকে পুজো হবে। নিজের মনে মনেই গজগজ করেন," উঃ উল্টোদিকে বাড়ি হয়ে এক জ্বালা হয়েছে পয়লা বোশেখের দিন সকাল সকাল ঐ বৌটার মুখ দেখতে হলো।"..কপালে দুহাত ঠেকিয়ে প্রণাম করেন," ভালোই ভালোই বৌটার কোল ভরুক যা সব চারদিকে। বাচ্চাকাচ্চা হওয়াটাই একটা সমস‍্যা।"
                     মাঝে গড়িয়ে গেছে বেশ কিছুটা সময়। ঐ বাড়ি থেকে শঙ্খঘন্টার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। হাতের কাজ কিছুটা সেরে কাপড়টা গুছিয়ে পরে ওরা কর্তা গিন্নি রওনা হন পুজোর বাড়িতে। ঠাকুরমশাই এসে পড়েছেন,অসীমা আর ওর বোন পুজোর কাছে বসে সব এগিয়ে দিচ্ছে। সারা বাড়ি ধূপধুনোর গন্ধে ভরে গেছে। বাড়িতে ঢুকে চোখটা কপালে উঠে যায় মুখার্জী গিন্নির বাবা কত সাজানোর ঘটা এ যেন বিয়ে বাড়ি। ফুলে ফুলে সাজানো বাড়িটা,কখন হলো এসব? তাহলে কি আজ এ বাড়ির দিদির বিয়ের দিন নাকি? ধ‍্যুৎ পয়লা বৈশাখে বিয়ে কে জানে? জন্মদিন হতে পারে তাহলে। কর্তাকে বলতেই মুখ ঝামটা খান উনি বলেন,'খেতে এসেছো,খাবে দাবে চলে যাবে,অত মাথাব‍্যাথা কিসের তোমার!'
                   ভেতরে আসতেই অসীমা হাসিমুখে ইশারায় বসতে বলেন। চারিদিকে তাকান মুখার্জীগিন্নি বৌমাকে দেখতে পাননা,অন‍্যবার তো ঐ মাতব্বরি মেরে বেড়ায়,সবাইকে আসুন বসুন করে। হাতে হাতে সব এগিয়ে দেয়। এবার গেলো কই? অসীমাকে একবার উঠে আসতে দেখেই জিজ্ঞেস করেন," বৌমা কই? দেখছিনা কেন?"অসীমা হাতের ইশারা করে আসছে দেখিয়ে চলে গেলেন।
                   হঠাৎই উলুর আওয়াজ শোনা গেলো বাইরে। অসীমা ঠাকুর মশায়কে বলে ওঠেন,"পঞ্চপ্রদীপ আর শান্তি জলটা নিয়ে আসুন না তাড়াতাড়ি ওরা এসে পড়েছে।" হৈ হৈ করে ওঠে সবাই এসে গেছে এসে গেছে বলে। ব‍্যাপারটা কি হলো দেখতে উঠলেন মুখার্জী গিন্নি বাবা ততক্ষণে লাইন লেগে গেছে দরজার সামনে। কিন্তু একি? কোলে একটা সুন্দর ফুটফুটে মেয়ে নিয়ে দাঁড়িয়ে দুর্গা। ন‍্যাকামি করে গায়ে আঁচল আর মাথায় আধো ঘোমটা দিয়েছে। অন‍্য সময় তো পেন্টু পরে ঘুরে বেড়ায়। ওর বান্ধবীরা ফুল ছুঁড়ে দিচ্ছে,ভিডিও রেকর্ডিং হচ্ছে। এগিয়ে যান অসীমা ঠাকুরমশায়কে নিয়ে। ঠাকুরমশায় পঞ্চপ্রদীপের তাপ ঠেকাচ্ছেন দুর্গা আর বাচ্চাটার মাথায়। শাঁখ বাজিয়ে উলু দিয়ে অসীমা বললেন," আয় মা দুর্গা লক্ষ্মী কোলে নিয়ে।"
                         টেবিলের ওপর ঠক করে মিস্টির বাক্স আর প্রসাদ নামিয়ে রাখেন মুখার্জীগিন্নি। ছুটে আসে ঈশিতা," প্রসাদ এনেছো মা? কত বড় মিস্টির বাক্স!".."হ‍্যাঁ মা ও বাড়িতে আর থাকতে পারলাম না। কোথা থেকে এক রাস্তার বাচ্চাকে দত্তক নিয়ে এসে যা আদিখ‍্যেতা শুরু করেছে। কি কান্ড! বলে কিনা লক্ষ্মী এলো ঘরে। কালে কালে কত কি দেখবো বাপু।"
                   ঈশিতার খুব ইচ্ছে করলো আজ কুট্টি লক্ষ্মীটাকে দেখতে। কিন্তু সাহস পেলোনা বলার। ঐ বাড়িতে তখনও হৈ চৈ চলছে। মনে মনে বললো ঠাকুর ভালো রেখো সবাইকে আর তার সাথে আমাকে আর যে আসছে তাকেও।@ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
সমাপ্ত:-

                           

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...