Skip to main content

হসপিটালের এমার্জেন্সি গুলো সেরে বাড়ি ফিরতে বেশ দেরি হয়ে গেলো ডঃ চৌধুরীর। মালতি দরজা খুলে দিলো যথারীতি। রাকা এখনো বাড়ি ফেরেনি তাহলে। অবশ‍্য আজকাল এইসব নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননা বেশ আছেন দুজনে দুজনের মত। রাকা ওর বন্ধু বান্ধব আর শপ়িং নিয়ে ব‍্যস্ত। সব সময় ওয়ার্ডোবে নিত‍্যনতুন শাড়ি আর গয়না আসতেই আছে। আর ওনার বেশিরভাগ সময়টাই কেটে যায় হসপিটাল,রোগী আর ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে।
                   আজ সারাদিন বড় ব‍্যস্ততায় কেটে গেছে এবার সত‍্যি একটু বিশ্রামের দরকার। হঠাৎই শৌর্যর মুখটা মনে পড়ে গেলো। ছেলেটা এত ভালো আর খুব শেখার আগ্ৰহ। কিন্তু ওর চেহারা দেখে মনে হয় বোধহয় ভালো করে খাওয়াদাওয়াও হয়না। খুবই কুন্ঠিত হয়ে দাঁড়িয়েছিলো সামনে। মনে হয় পরীক্ষার ফি নিয়ে কিছু বলতে এসেছিলো তখন এত ব‍্যস্ত ছিলেন যে ওকে পরে আসতে বলেন। হয়ত কখনও পদের গাম্ভীর্যেও একটু দূরত্ব রাখতে চান ছাত্রদের সাথে।
পরে মনে হয়েছিলো ছেলেটার কথা শুনলেই হত। যাক দেখা যাক কাল যদি আবার আসে।
                এর মধ‍্যে মালতি কফি দিয়ে গেছে,ফ্রেস হয়ে কফিতে চুমুক দিচ্ছেন রাকা আসে। রাকা কোনদিনই তেমন ভাবে সংসারকে ভালোবাসেনি হয়ত এও এক ধরণের অবসাদ। বললেই বলে,"কি দিয়েছে আমাকে তুমি আর তোমার সংসার এই কুড়ি বছরে?সারাদিন তোমার রোগী আর হসপিটাল। যখন বাড়ি আসো ওদের সাথে করেই নিয়ে আসো। যদি একটা ছেলেমেয়ে থাকতো তবুও হয়ত..." এই কথাগুলো এতবার শুনেছেন যে শুধু মনের ভেতরে গভীর ক্ষতই সৃষ্টি হয়েছে। অনেক চেষ্টা করেও বাবা মা হতে পারেননি তারা। তবে ডক্টর চৌধুরীর তাতে এমন কিছু এসে যায়না মনে কখনোও হয়ত শূন‍্যতা জাগে তবে তাকে স্থান না দিয়ে বলেন এই বেশ ভালো আছি। কি আর হত একটা সন্তান থাকলে।
             "কি ভাবছো বসে বসে,আমি এলাম যেন দেখতেই পেলেনা। সারাদিন বাদে কি একটু দেখতেও ইচ্ছে করেনা আমাকে। কি পরেছি কেমন আছি? না হয় পেশেন্ট ভেবেই একটু নজর দিয়ো।"রাকার কথার খোঁচাটা বুঝতে পারেন।অথচ একটা সময় প্রেমটা রাকার জন‍্যই হয়ে গিয়েছিলো। শুভ্র চৌধুরী তখন এম ডি শেষ করছেন,রাকা ছিলো স‍্যারের মেয়ে। মনে অনেক উচ্চাশা,স্বপ্নের মাঝে মধ‍্যবিত্ত শুভ্রকে নিজের মনের মত জামাই হিসেবে বেছে নিতে স‍্যার দেরি করেননি। তিনি কি ইচ্ছুক ছিলেন না? মনে ভিড় করে প্রশ্ন,নাকি বড় লোকের সুন্দরী মেয়ে রাকার জন‍্য এক মুহূর্তেই মুছে ফেলেছিলেন সমস্ত পিছুটান।
             শ্বশুরবাড়ি,দেওর ননদ এদেরকে কোনদিনই নিজের জীবনে তেমন ভাবে কতৃত্ব করতে দেয়নি রাকা। হয়ত শিকড়টাকেই একদম ছিঁড়ে ফেলেছিলেন শুভ্র। মাঝে মাঝে টুকরো কর্তব‍্য করেই অথবা বিরক্ত হয়েই দায়ভার এড়াতেন। বাবা মা চলে যাওয়ার পর একটু একটু করে ছিঁড়েছিলো সম্পর্কের সুতোগুলো। বছরে দু তিন বার বাইরে যাওয়া,হোটেল পার্টি আর কনফারেন্স এই নিয়েই কেটে যেত সময়।
            ......দিন পাঁচেক পর শৌর্য আবার এসেছিলো ভাঙা ভাঙা বাঙলায় বলেছিলো ওর মায়ের শরীরটা খারাপ হওয়াতে এখনও ও ফাইনাল ইয়ারের ফি দিতে পারেনি যদি কয়েকটা দিন সময় পাওয়া যেত।" আমার বলতে খারাপ লাগছে,তবে এখানে ভর্তির সময় তুমি নিশ্চয় খরচ জেনেই ভর্তি হয়েছো। তোমার একার জন‍্য আমি কি নিয়ম বদলাতে পারি?..আচ্ছা তোমার বাড়ি যেন কোথায়?"...ওহ্ ধানবাদে বড় হয়েছে তাই এমন ভাঙা বাঙলায় কথা বলে।
       
          

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...