"ইশ্ আমাদের বৌমার একটা ছেলে হলোনা,ছেলেটার এত শখ ছেলের তা আর কি হবে ঐ এক টিকটিকে মেয়ে নিয়েই জীবন কাটাতে হবে আরকি?"..এমন কথা যে কত শুনেছে সুরমা তার কোন শেষ নেই। এই জন্যই হয়ত সবার অলক্ষ্যে কখনো ঠাকুরবাড়ি হাতে মাদুলি নেওয়া বা মন্ত্রপূত জল কলা কত কি খেয়েছে। বুঝতো ওর স্বামী সুবিমলেরও খুব ইচ্ছে একটা ছেলের। তবে নাহ্ শেষপর্যন্ত ডাক্তার বদ্যি তাবিজ আর কবজে কোন কাজ হয়নি,ভগবান আর মুখ তুলে তাকাননি। ঐ টিকটিকে মেয়েকে নিয়েই ওদের খুশি থাকতে হয়েছে।সুরমার মেয়ে মিমি ছোট থেকেই বাধ্য আর পড়াশোনায় ভালো কিন্তু কেন যেন তবুও মনটা মাঝে মাঝেই খচখচ করত।তবুও কিছু করার নেই,যা আছে তা নিয়েই খুশি থাকতে হয়েছে। মিমিও বুঝতো কোথাও যেন বাবা মায়ের দুঃখ ওর কোন ভাই বোন নেই বলে।" মা তুমি নীলের উপোশ করবেনা?".." আমাদের নেই রে ঐ উপোশ।"মায়ের ঐ ছোট কথাটা কেমন যেন মন ছুঁয়ে গিয়েছিলো ওর।..দেখতে দেখতে মিমি বড় হলো,সুবিমল ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন মেয়েকে বিয়ে দেবার জন্য।" শোন মেয়েমানুষ,আজকাল দিনকাল ভালোনা বিয়ে দিতে পারলেই নিশ্চিন্ত।"মেয়েটা পড়াশোনায় ভালো সুরমার ইচ্ছে না থাকলেও কম বয়েসেই বাবা মাকে দায়িত্বমুক্ত করে মিমি নতুন জীবনের স্বপ্ন সাজাতে পা রাখে শ্বশুরবাড়িতে। শুরু হয় আরেক অধ্যায় তখনও পড়াশুনো শেষ হয়নি পুরোপুরি,তবুও বাবার মতের অমর্যাদা করেনি মিমি। বিয়ের পরে বাদবাকি পড়াশুনাটা করতে দুটো বছর কেটে যায়। এর মধ্যেই শ্বশুরবাড়িতে শুরু হয়ে গিয়েছিলো নানান কথা," দুই বছর হয়ে গেলো,এখনও কোন খবর নেই। কে জানে হয় কিনা? মায়ের তো ঐ একটা,মেয়ের আবার হবে কিনা কে জানে?"..অসহ্য লাগলেও পাত্তা দেয়নি মিমি আসলে সবটাই মানসিকতা নির্ভর পড়াশুনা শেষ করতেই তাড়া লাগায় মা বাবাও," আমাদের তো ছেলে হয়নি। তাই আমাদের খুব ইচ্ছে একটা নাতি হোক মেয়ের ঘরে।".." নাতি নিয়ে তোমাদের কি হবে বলতে পারো? ও তো বাতি দেবে এদের বংশেই।".." তবুও আমাদের খুব শখ একটা ছেলের। আমার তো ছেলে হয়নি।"..একটু দেরিতে হলেও মেয়ের সন্তান আসার খবর শুনে খুব খুশি হয় সুবিমল আর সরমা। কিন্তু খুব মানসিক চাপ হয় মিমির,বাবা মাকে একটা নাতি দিতে পারবে তো? এদিকে শ্বশুরবাড়ি থেকে কেন যেন ওরা সবসময় মেয়েই হবে মনে হচ্ছে বলে এক স্বর্গীয় আনন্দ লাভ করতো। মেয়ের মায়েরাই নাকি বেশ গোলগাল আর সুন্দর হয়ে যায় দেখতে তাই মেয়েই হবে সবাই বলে। মনটা ফাঁকা হয়ে যায় মিমির,নিজে মেয়ে হয়ে বাবা মাকে খুশি করতে পারেনি। আবার......মনে ঘনায় একটা মন খারাপের মেঘ। সাধের দিন শিলপাটার নিচে কি সব চাপা থাকে সেখানেও সবাই হৈ হৈ করে উঠলো মেয়ে মেয়ে...খুশি হলো ওর বর," আমার তো মেয়েরই খুব শখ। আমার ভাই দারুণ লাগবে।"
সময় এগিয়ে এলো,সুবিমল আর সুরমারও মনটা বড় অস্থির ডাক্তার জানিয়েছে সিজার হবে। একমাত্র মেয়ে প্রথম মা হতে যাচ্ছে,ভয়ে ভয়ে আছে মেয়েটাও। অপারেশন থিয়েটারে যাবার আগে হাতদুটো কপালে ঠেকিয়ে মেয়ের মাথায় হাত রাখে ওরা ভয়ে মিমির মুখটা ছোট হয়ে গেছে। অনেকটা অন্ধকার প্রথমে তারপর একটা কান্না আর অনেকের কথা খুব চোখ খুলতে ইচ্ছে করে মিমির পারেনা। আধো ঘুমে হাল্কা চোখ খোলে ডাক্তাররা বলে ওকে দেখাও ওর ছেলেকে। একবার ছোট্ট গোলাপি মুখটার দিকে তাকিয়ে বড় নিশ্চিন্তে চোখ বোজে মিমি। সত্যিই পেরেছে মা বাবার মনের একটা সাধ পূরণ করতে।
খুশির ঝর্ণা নিয়ে এলো সুবিমল আর সুরমার ছোট্ট দাদুভাই। ওহ্ নিজের সন্তানের সন্তান..এক হাড়ি না না একঝুড়ি মিষ্টি কোন কিছুর সাথেই হয়ত তুলনা চলেনা সেই আনন্দের স্বাদের। চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করেনা দাদুভাইকে। সুবিমল তো নার্সিংহোমে মেয়ে থাকতেই বাজার ঘুরে ঘুরে গানের রেকর্ড কিনে ফেললেন অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো এই গানটা মেয়েকে উপহার দেবেন মাতৃত্বের প্রথম স্বাদের মিঠে গান।..'আমার সোনা, চাঁদের কণা, ভুবনে তুলনা নাই রে-----শত বরষ পরমায়ু হোক, ঘুচুক যতো বালাই রে | '
এলো দোলনা কাম প্যারামবুলেটর,নানান খেলনা,জামাকাপড় আরও কত কি! এত খুশি দিতে পেরেছে বাবা মাকে ঐ গোলাপী কাপড়ে মোড়ানো ছোট প্যা প্যা পুতুলটা! মনটা ভরে যায় মিমির। যদিও শ্বশুরবাড়িতে যেন একটু আনন্দ কম মনে হলো শুনলো ওর বাবা বড় বাড়াবাড়ি শুরু করেছে নাতি হওয়ার আনন্দে।
একটু একটু করে বড় হচ্ছে দত্তাত্রেয় নামটা একটু কঠিন। তবুও ওদের পছন্দ তাই থাক তবে সুবিমল ডাকেন আনন্দ বলে,আর আদরের নাম দাদু। দাদুটাই মুখে আসে বারবার দুজনেই দুজনের দাদু। সুরমার ছোট বর । সারাদিন মেয়ের যত্ন আর ছোট বরের যত্নে কেটে যায় সুরমার মজা করে বলেন সুবিমল," আচ্ছা মানুষ তো তুমি,এতোদিন আমি তোমায় আগলে রাখলাম যত্নে। আর তুমি কিনা ঐ ছোট বরকে পেয়ে সব ভুলে গেলে! খুব অন্যায় কিন্তু,আমার খুব হিংসে হচ্ছে এবার। মিষ্টি হাসি হেসে বলতেন
#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...
Comments
Post a Comment