Skip to main content

সুখের খোঁজে

#সুখের_খোঁজে#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"এত সকালে তুমি বাথরুমে ঢুকেছো কেন বৌমা?
তুমি জানোনা,এই সময় অনিয়ম করলে তোমার শরীর খারাপ করবে?"
             শাশুড়ি আশা নিয়ে বসে আছেন এবার হয়ত বংশের মুখ উজ্জ্বল হবে আর তাই আদরও বেড়েছে সুরমার। পাঁচবছরের না পাওয়ার অনেক দুঃখ ধুয়ে মুছে গেছে ও মা হতে চলেছে এই খবরটা দেবার পর। বাড়িতে দুই বৌয়ের মধ‍্যে ও বড়। দেওরের মাস ছয়েক হলো বিয়ে হয়েছে।
              স্বামী শাশুড়ি সবাই আগলে রাখে ওকে,আগে সকালে উঠে রান্নাঘরে না গেলে শাশুড়িমায়ের মুখ ভার হত। এখন মুখে হাসি নিয়ে উনি সবটা সামলাচ্ছেন। বিছানায় বসেই হাতের কাছে সব পাচ্ছে,সময়ে খাবার,ফল আর দুধের গ্লাস। কলকাতার হসপিটালে কার্ড করেছে অমল,মাঝে মাঝেই বৌকে দেখিয়ে নিয়ে যায়। গাইনি ওয়ার্ডের বাইরে অপেক্ষা করে বাবা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। সেদিনটা ভালোই কাটে,হসপিটালে দেখিয়ে একটু ঘুরে বাড়ি ফেরে।
                      এর মাঝে মাস তিনেক কেটে গেছে। খবর এসেছে ওর ছোট জাও মা হতে চলেছে,ওরা শিলিগুড়িতে থাকে। শাশুড়িমায়ের খুশির শেষ নেই,একসাথে আসছে বাড়িতে অনেক খুশি।
                          সুরমার সাতমাসের সাধ বেশ ঘটা করে দিলো ওরা ওদের সাধ‍্যমত। পাড়ার গীতাকাকিমা বললেন," পেটটা তেমন বাড়েনি কেন? ভালো করে খাও বৌমা। বাচ্চাটা বোধহয় ছোট হয়েছে,এখনও বাড়েনি তেমন।"
                 শাশুড়ির আর বরের যত্ন আরও বাড়ে,যেটুকু সম্ভব ওদের নিম্ন মধ‍্যবিত্ত পরিবারে।
কারণ সুরমার মা নেই,এইসময় বাপের বাড়ি থাকলেই ভালো তবুও উপায় নেই।
                      আজকাল বেশিরভাগ ঘরেই কাটে ওর শাশুড়ি বেরোতে দিতে চায়না,শুধু হসপিটালে আসার দিন দেখিয়ে আসে গাড়ি করে।
                   মাঝে ওর জাও একবার ঘুরে গেছে।" দিদি তুমি কত আদর পাচ্ছো,আমি তো ওখানে একা।" সুরমার মনে পড়ে যায় একটা সময় গ্ৰামের রাস্তায় বেরোলে অনেকেই ওর মুখ না দেখে মুখ আড়াল করে যেত। শাশুড়ি উঠতে বসতে খোঁটা দিতো। চোখের জল ফেলে গঞ্জনার ভাত তুলতো গালে।
                  তখন প্রায় আটমাস পেরিয়েছে একদিন রাতে হঠাৎ ব‍্যাথায় কাহিল হয় সুরমা। মাঝরাতে বাধ‍্য হয়ে অমল ওকে নিয়ে আসে কিছুটা দূরে একটা নার্সিংহোমে।
                        সুরমাকে ওরা ভেতরে নিয়ে যায়,ভোরের দিকে চোখটা লেগে আসে অমলের।
  " সুরমা দাসের বাড়ির লোক? ভেতরে আসবেন। ডাক্তারবাবু ডাকছেন।"
         ডাক্তারবাবু অমলকে যা বললেন তা কোনদিন শুনতে হবে ও ভাবেনি জীবনে।
       " আপনার স্ত্রী প্রেগন‍্যান্ট হওয়ার অভিনয় করেছেন,উনার মধ‍্যে কোন মা হওয়ার চিহ্ন নেই। আশ্চর্য ব‍্যাপার এতগুলো মাস হয়ে গেলো আপনি কিছু বুঝলেননা? হসপিটালে নিয়ে যেতেন ওখানে কিছু বলেনি।"
            অমল কি করে বলবে হসপিটালে গাইনি ডিপার্টমেন্টে সুরমা একাই ঢুকে যেত,ওর পাড়ার এক বোন ওখানে আছে বলে।
       " এটা সম্পূর্ণ একটা মানসিক অসুখ এমন হয় যেখানে নিজেকে মেয়েটি প্রেগন‍্যান্ট মনে করে। এক্ষেত্রে অন‍্যের ছোটবাচ্চাও এদের প্রতিহিংসার শিকার হয়। উনাকে অবিলম্বে মানসিক ডাক্তার দেখান নাহলে ভবিষ‍্যতে অনেক সমস‍্যা হতে পারে।"
            সুরমাকে দেখে আজ বড় রাগ হয় অমলের এতটা ঠকালো ওদের সবাইকে? ছিঃ! নার্সিংহোমের বাইরে কান্নায় ভেঙে পড়ে সুরমা। " তুমি সবাইকে বোলো আমার বাচ্চাটা মরে গেছে তবুও তো আমার বন্ধ‍্যা নামটা ঘুঁচবে। নাহলে তো আবার সবাই আমাকে অপয়া বলবে,মুখ দেখবেনা। বলোনা বলবে তো, বলনো গো? আমায় তাড়িয়ে দেবেনা তো? আমার যে যাবার মত কোন জায়গা নেই।"
             অমলের মনে জমা কান্না আর রাগ তখন  জল হয়ে জমেছে চোখের কোণে সুরমার কান্না দেখে। কি বলবে ও মাকে বাড়ি গিয়ে? সত‍্যি বলবে না মিথ‍্যা? অনেক প্রশ্নের মধ‍্যেও সুরমার হাতদুটো শক্ত করে ধরে অমল। ওর হাতের মুঠোয় সাইক্রিয়াটিক ডাক্তারের ফোননম্বরটা। ততক্ষণে মুঠোফোনটা বাজছে,মায়ের ফোন। নিজেকে সামলে উত্তর দেয়," সুরমার শরীরটা ভালো নেই মা,ডাক্তার দেখছে আমি তোমাকে পরে জানাচ্ছি। তুমি চিন্তা কোরনা।"

সমাপ্ত:-

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...