#ছোট_বর#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
"ইশ্ আমাদের বৌমার একটা ছেলে হলোনা,ছেলেটার এত শখ ছেলের তা আর কি হবে ঐ এক টিকটিকে মেয়ে নিয়েই জীবন কাটাতে হবে আরকি?"..এমন কথা যে কত শুনেছে সুরমা তার কোন শেষ নেই। এই জন্যই হয়ত সবার অলক্ষ্যে কখনো ঠাকুরবাড়ি হাতে মাদুলি নেওয়া বা মন্ত্রপূত জল কলা কত কি খেয়েছে। বুঝতো ওর স্বামী সুবিমলেরও খুব ইচ্ছে একটা ছেলের। তবে নাহ্ শেষপর্যন্ত ডাক্তার বদ্যি তাবিজ আর কবজে কোন কাজ হয়নি,ভগবান আর মুখ তুলে তাকাননি। ঐ টিকটিকে মেয়েকে নিয়েই ওদের খুশি থাকতে হয়েছে।সুরমার মেয়ে মিমি ছোট থেকেই বাধ্য আর পড়াশোনায় ভালো কিন্তু কেন যেন তবুও মনটা মাঝে মাঝেই খচখচ করত।তবুও কিছু করার নেই,যা আছে তা নিয়েই খুশি থাকতে হয়েছে। মিমিও বুঝতো কোথাও যেন বাবা মায়ের দুঃখ ওর কোন ভাই বোন নেই বলে।" মা তুমি নীলের উপোশ করবেনা?".." আমাদের নেই রে ঐ উপোশ।"মায়ের ঐ ছোট কথাটা কেমন যেন মন ছুঁয়ে গিয়েছিলো ওর।..দেখতে দেখতে মিমি বড় হলো,সুবিমল ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন মেয়েকে বিয়ে দেবার জন্য।" শোন মেয়েমানুষ,আজকাল দিনকাল ভালোনা বিয়ে দিতে পারলেই নিশ্চিন্ত।"মেয়েটা পড়াশোনায় ভালো সুরমার ইচ্ছে না থাকলেও কম বয়েসেই বাবা মাকে দায়িত্বমুক্ত করে মিমি নতুন জীবনের স্বপ্ন সাজাতে পা রাখে শ্বশুরবাড়িতে। শুরু হয় আরেক অধ্যায় তখনও পড়াশুনো শেষ হয়নি পুরোপুরি,তবুও বাবার মতের অমর্যাদা করেনি মিমি। বিয়ের পরে বাদবাকি পড়াশুনাটা করতে দুটো বছর কেটে যায়। এর মধ্যেই শ্বশুরবাড়িতে শুরু হয়ে গিয়েছিলো নানান কথা," দুই বছর হয়ে গেলো,এখনও কোন খবর নেই। কে জানে হয় কিনা? মায়ের তো ঐ একটা,মেয়ের আবার হবে কিনা কে জানে?"..অসহ্য লাগলেও পাত্তা দেয়নি মিমি আসলে সবটাই মানসিকতা নির্ভর পড়াশুনা শেষ করতেই তাড়া লাগায় মা বাবাও," আমাদের তো ছেলে হয়নি। তাই আমাদের খুব ইচ্ছে একটা নাতি হোক মেয়ের ঘরে।".." নাতি নিয়ে তোমাদের কি হবে বলতে পারো? ও তো বাতি দেবে এদের বংশেই।".." তবুও আমাদের খুব শখ একটা ছেলের। আমার তো ছেলে হয়নি।"..একটু দেরিতে হলেও মেয়ের সন্তান আসার খবর শুনে খুব খুশি হয় সুবিমল আর সরমা। কিন্তু খুব মানসিক চাপ হয় মিমির,বাবা মাকে একটা নাতি দিতে পারবে তো? এদিকে শ্বশুরবাড়ি থেকে কেন যেন ওরা সবসময় মেয়েই হবে মনে হচ্ছে বলে এক স্বর্গীয় আনন্দ লাভ করতো। মেয়ের মায়েরাই নাকি বেশ গোলগাল আর সুন্দর হয়ে যায় দেখতে তাই মেয়েই হবে সবাই বলে। মনটা ফাঁকা হয়ে যায় মিমির,নিজে মেয়ে হয়ে বাবা মাকে খুশি করতে পারেনি। আবার......মনে ঘনায় একটা মন খারাপের মেঘ। সাধের দিন শিলপাটার নিচে কি সব চাপা থাকে সেখানেও সবাই হৈ হৈ করে উঠলো মেয়ে মেয়ে...খুশি হলো ওর বর," আমার তো মেয়েরই খুব শখ। আমার ভাই দারুণ লাগবে।"
সময় এগিয়ে এলো,সুবিমল আর সুরমারও মনটা বড় অস্থির ডাক্তার জানিয়েছে সিজার হবে। একমাত্র মেয়ে প্রথম মা হতে যাচ্ছে,ভয়ে ভয়ে আছে মেয়েটাও। অপারেশন থিয়েটারে যাবার আগে হাতদুটো কপালে ঠেকিয়ে মেয়ের মাথায় হাত রাখে ওরা ভয়ে মিমির মুখটা ছোট হয়ে গেছে। অনেকটা অন্ধকার প্রথমে তারপর একটা কান্না আর অনেকের কথা খুব চোখ খুলতে ইচ্ছে করে মিমির পারেনা। আধো ঘুমে হাল্কা চোখ খোলে ডাক্তাররা বলে ওকে দেখাও ওর ছেলেকে। একবার ছোট্ট গোলাপি মুখটার দিকে তাকিয়ে বড় নিশ্চিন্তে চোখ বোজে মিমি। সত্যিই পেরেছে মা বাবার মনের একটা সাধ পূরণ করতে।
খুশির ঝর্ণা নিয়ে এলো সুবিমল আর সুরমার ছোট্ট দাদুভাই। ওহ্ নিজের সন্তানের সন্তান..এক হাড়ি না না একঝুড়ি মিষ্টি কোন কিছুর সাথেই হয়ত তুলনা চলেনা সেই আনন্দের স্বাদের। চোখের আড়াল করতে ইচ্ছে করেনা দাদুভাইকে। সুবিমল তো নার্সিংহোমে মেয়ে থাকতেই বাজার ঘুরে ঘুরে গানের রেকর্ড কিনে ফেললেন অনেকদিনের ইচ্ছে ছিলো এই গানটা মেয়েকে উপহার দেবেন মাতৃত্বের প্রথম স্বাদের মিঠে গান।..'আমার সোনা, চাঁদের কণা, ভুবনে তুলনা নাই রে-----শত বরষ পরমায়ু হোক, ঘুচুক যতো বালাই রে | '
এলো দোলনা কাম প্যারামবুলেটর,নানান খেলনা,জামাকাপড় আরও কত কি! এত খুশি দিতে পেরেছে বাবা মাকে ঐ গোলাপী কাপড়ে মোড়ানো ছোট প্যা প্যা পুতুলটা! মনটা ভরে যায় মিমির। যদিও শ্বশুরবাড়িতে যেন একটু আনন্দ কম মনে হলো শুনলো ওর বাবা বড় বাড়াবাড়ি শুরু করেছে নাতি হওয়ার আনন্দে।
একটু একটু করে বড় হচ্ছে দত্তাত্রেয় নামটা একটু কঠিন। তবুও ওদের পছন্দ তাই থাক তবে সুবিমল ডাকেন আনন্দ বলে,আর আদরের নাম দাদু। দাদুটাই মুখে আসে বারবার দুজনেই দুজনের দাদু। সুরমার ছোট বর । সারাদিন মেয়ের যত্ন আর ছোট বরের যত্নে কেটে যায় সুরমার মজা করে বলেন সুবিমল," আচ্ছা মানুষ তো তুমি,এতোদিন আমি তোমায় আগলে রাখলাম যত্নে। আর তুমি কিনা ঐ ছোট বরকে পেয়ে সব ভুলে গেলে! খুব অন্যায় কিন্তু,আমার খুব হিংসে হচ্ছে এবার। মিষ্টি হাসি হেসে বলে সুরমা,"আচ্ছা মাত্র কদিনের জন্য এসেছে ছোট বরটা আমার এরপর তো আবার ওর ঠাকুরদার বাড়ি চলে যাবে তখন কি আর এমন করে কাছে পাবো? এসো তো ছোটবর এই তো সোনা। ওমা কি মিষ্টি লাগছে দেখো নতুন জামাটা পরে। না বাবা নজর দেবোনা,এমনি ভালো থেকো তুমি।
একটু একটু করে বড় হয় সুরমা আর সুবিমলের আনন্দদাদুভাই। মাঝে মাঝে কর্তা গিন্নী ছুটে আসতেন মেয়ের বাড়ি। আর তখন কতটুকুই বা বয়েস তাদের শরীরে তখনও অনেক ক্ষমতা। সাথে থাকতো হাতে বানানো খাঁটি ঘি,ক্ষীর,নাড়ু,সন্দেশ যা যা দাদুভাই ভালোবাসতো। আনন্দ তো আনন্দে আত্মহারা হত দাদুকে পেলেই। দাদুর হাতটা ধরে বেড়িয়ে পড়ত যেখানে যেখানে যেতে ইচ্ছে করত। তখন কাউকে চিনতোনা। স্কুলের থেকে আনা নেওয়া সব দাদু করবে। বাবা মা বারণ করলেও শুনতোনা। ছোট্ট গলায় বলত," দাদু,তুমি আমাকে স্কুলে নিয়ে যাবে তো?"
আদরের নাতির এমন মিষ্টি অনুরোধ ফেলার সাধ্যি কার? তাই সুবিমল মেয়ের কাছে থাকলেই দায়িত্ব ছিলো নাতিকে পৌঁছে দেবার। এ যে বড় আনন্দের কাজ এতে কোন ক্লান্তি নেই। এর মধ্যে মিমি আরেকটি সন্তানের জন্ম দিয়েছে। নাতির পরে নাতনি দারুণ ব্যাপার। বড় আনন্দ ওদের সবার,খুব খুশি মিমির বরও। অনেকদিন একটা মেয়ের সাধ ছিলো।
সময় বড় অস্থির, কখন যে এগিয়ে যায় সবকিছু পেছনে ফেলে বোঝাই যায়না। তাই আনন্দও বেশ বড় হয়ে গেলো দেখতে দেখতে,ওর মাধ্যমিকের সময়ও হাজির সুবিমল আর সুরমা সেই প্রথমবার ইঞ্জেকশন দেবার মতই অবস্থা সেই সময়ও তো নিপুণ হাতে সামলেছেন নাতিকে সুরমাই আসলে মিমির শাশুড়ি নেই তাই এই দায়িত্বগুলো তাকেই নিতে হয়েছে। আর ছেলেটাও হয়েছিলো তেমনি যখনি দাদু দিদার বাড়ি যেতো অসুখ করত। নাতিকে কোলে নিয়ে কত রাতই না জেগেছেন সুরমা। অস্থির হয়েছেন সুবিমল," ওহ্ তোমার ছোটবর তো ভালোই থাকেনা,মেয়েটা একটু এসেছে বাপের বাড়ি। সেই ছেলেকে নিয়ে ওর মন খারাপ। দাদুটা আসলে বাবার ভক্ত। বাবা চলে যেতেই অসুখ হয়েছে।"
নিজে বসে থেকে নাতিকে পরীক্ষা দিয়ে আনতেন সুবিমল। মিমিও অনেক আগেই একটা চাকরি পেয়েছে তাই চাইতেন মেয়েটা একটু বাঁচুক তাছাড়া নাতনিটাও বেশ ছোট তখন। সকাল সকাল ঘি ভাত,শুক্তো আলুভাজা সব রান্না করে ফেলতেন সুরমা মেয়ের সাথে হাত লাগিয়ে রান্নাঘরে। " এসো তো দাদু আমি তোমায় খাইয়ে দিই। তুমি চিন্তা কোরনা সব ভালো হবে।"..সুরমার এই সব ভালো হবে কথাটা ছিলো মিমির জীবনের অমৃতবাণী। খুব ভরসা পেত শুনে।
দাদুভাইয়ের মাধ্যমিকের ভালো রেজাল্টের কথা বোধহয় কাউকে বলতে বাকি রাখেননি সুবিমল। বাবা মায়ের এত আনন্দ ছুঁয়ে যায় মিমিকেও। সবার শুভকামনা আর ভালোবাসায় আনন্দ উচ্চমাধ্যমিকের পর ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পায়। বাবার হাসিমুখটা বড় ছুঁয়ে গিয়েছিলো মিমিকে,মনে হয়েছিলো বাবাই বোধহয় সুযোগ পেয়েছে পড়ার। সুরমার মন ভরে গিয়েছিলো সুবিমলকে দেখে। নিজের জীবনের সমস্ত অপূর্ণতা কানায় কানায় পূর্ণ করে দিয়েছিলো নাতি।
জীবনের যোগের হিসেবগুলো বোধহয় একটা সময় হঠাৎই পাল্টে যায় বিয়োগে। কিছু পাওয়ার আনন্দ অনেক সময় আর পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করা যায়না। আনন্দের পুরোপুরি ডাক্তার হবার খবরটা শুনে যেতে পারলেননা সুবিমল। হঠাৎই স্ট্রোক,ছেলের রেজাল্টের দিন সকালে বাবাকে হারিয়ে শোকে পাথর তখন মিমি।পড়ন্ত বেলায় রেজাল্ট বেরোলো এলো পাশের খবর। যার বড় বেশি আশা ছিলো তারই জেনে যাওয়া হলোনা সেদিনের ছোট্ট দাদুভাই ডাক্তারি পাশ করলো। বাবাকে হারানোর শোকে মিমি তখন দিশেহারা অদ্ভুত মনের জোর সুরমার।ভগবানে বিশ্বাসী সুরমা মেয়েকে বোঝালেন," বাবা কষ্ট পায়নি,বার্ধক্যের জ্বালা ভোগ করেনি। হঠাৎ মৃত্যু এমন কজন পায়? মনকে শক্ত কর যা হবার ছিলো হয়েছে।কেঁদে বলেছিলো মিমি," তুমি কি করে থাকবে মা এতদিনের সঙ্গীকে ছেড়ে?" "কিছু ভাবিসনা ভগবান তো আছেন তিনি সব রক্ষা করবেন।"
ছেলের কনভোকেশনে গিয়ে বাবাকে বড় মিস্ করে ছিলো মিমি কত খুশি হত এই দিনটায় থাকলে। দাদুভাইকে বুকে জড়িয়ে কত ছবি তুলতো। ভগবান আর একটা বছর তোমার ধৈর্য সইলোনা? অনেক বলেও মাকে সাথে আনতে পারেনি সেদিন ওরা।
সুবিমল সবটা না শুনে যেতে পারলেও সুরমা অনেকটাই দেখলেন সুবিমল চলে যাওয়ার পর দুটো বছরের মধ্যে। সুরমার ছোট বর এখন যে সার্জেন হবে। উচ্ছ্বাসে চোখে জল চলে এসেছিলো সুরমার," তোর বাবা থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হত। আর আমাদের কোন চিন্তা নেই।"
নিজের বহুদিনের পুরোনো সঙ্গীহারা সুরমা কখন যে ভেতরে ভেতরে একদম ক্ষয়ে গিয়েছিলেন কাউকেই বুঝতে দেননি। সুবিমল চলে যাবার পর মাত্র দুবছরের কিছুদিন বাদেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলো মিমি," ঠাকুর মা ছাড়া যে আমার মাথার ছাদটাই ফাঁকা হয়ে যাবে।কেন তুমি এমন করলে বলো। আমার যে আর কেউ থাকবেনা মাথার ওপর।"...মিমিকে শান্ত করতো সুরমা," তোর ভরা সংসার রইলো,ছেলে বর তোর মেয়ে সবাই।তবে তবুও তোর জন্য আমার আরো কিছুদিন বাঁচতে ইচ্ছে করে রে। আমি চলে গেলে তোর যে আর কেউ থাকবেনা।".....মা আর দিদার কথা চুপ করে শোনে আনন্দ। আজ নিজেকে বড় বেশি বড় মনে হয় মাকে যেন খুব ছোট। রবিঠাকুরের কবিতার কথাটা বড় বেশি মনে হয় খুকু তোমার কিছু বোঝেনা মা খুকু তোমার ভারী ছেলেমানুষ। দিদার যে ধরণের ক্যানসার হয়েছে তাতে হয়ত বড়জোর ছয়মাস। হসপিটাল থেকে এসে যত্নে দিদার ড্রেসিংটা প্রতিদিন নিজের হাতে করতে করতে মনে হত আর কেউ আলুভাজা ভেজে দেবেনা। যত্ন করে ক্ষীর করেও হয়ত খাওয়াবেনা আর কেউ কোনদিন। সুরমা পরম নির্ভরতায় নিজেকে সঁপে দিতেন ছোটবরের কাছে। কোন ছোটবেলায় সুবিমল ঠাট্টা করে বলেছিলেন কথাটা। আজ সুবিমল নেই,আছে ছোট বর যত্নে ড্রেসিং করছে মন দিয়ে। কেন যেন অনেক অসুস্থতার মধ্যেও বড় আরাম লাগে। ক্ষতের যন্ত্রণা স্পর্শ করেনা সুরমাকে।
নার্সিংহোমের শেষ চারটে দিনে দিদাকে দেখতে যেতে পা উঠতো না আনন্দর। কিন্তু ও যে ডাক্তার এমন তো কতই দেখে হসপিটালে। তবুও বড় আড়ষ্ট পা দুটো। মা খুব অভিমান করে বুঝতে পারে। কান্নাভেজা মায়ের চোখ দুটো বড় অসহায় লাগে আনন্দর। এক এক সময় শুধু বলে," মনকে শক্ত করো মা। ভগবানকে ডাকো। দিদাকে হয়ত কেমোটাও দেওয়া যাবেনা। তাতে আরো কষ্ট বাড়বে।"..নার্সিংহোমে মায়ের বিছানার পাশে বসে মিমি,এই দেড়মাস টানা মায়ের পাশে শুয়েছে ও। সারা শরীরে বড় মা মা গন্ধ মাখানো ওর। বিয়ের পর এই টানা এতদিন বরকে ছেড়ে আবার সেই ছোটবেলার মত মায়ের পাশে শুয়ে কত গল্প আর টিভি দেখে মনকে ভুলিয়ে রাখা সব কথাগুলো মনে পড়ছে। সুরমার আজ বড় কষ্ট হচ্ছে। ঠাকুরের নাম করে মায়ের গায়ে হাত রাখে মিমি। সুরমা হয়ত তখন মনে মনে ছোটবরকে খুঁজছেন। আনন্দর সেদিন হসপিটালে নাইট ডিউটি মনটা ভালো নেই মা ফোন করেছিলো। মাঝ রাতের দিকে হাল্কা চোখটা লেগে আসে। এদিকে নার্সিংহোমের বেডে শুয়ে বড় অস্থির লাগে সুরমার খুব কষ্ট আজ। ওরা কি সব ওষুধপত্র দিচ্ছে সুবিমল যেন ডাকছেন দূর থেকে," চলে এসো সুরমা,আর কষ্ট কোরোনা।"...কিন্তু পা গুলো বড় ফোলা সুরমার উঠতে কষ্ট হয়,বিড়বিড় করে বলেন," ছোটবর আমায় একটু ওঠাওনা,তোমার দাদু সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে।" হঠাৎই মনে হয় কে যেন বলছে," দিদা এই যে আমার হাতদুটো ধরো আমি তোমায় এগিয়ে দিচ্ছি। আছিতো আমি।"
পরম শান্তিতে চোখ বোজে সুরমা। ভোরের আবছা আলো তখনো ফোটেনি তারমধ্যেই সুরমা যাত্রা করলেন এক অনন্ত যাত্রায়। প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে তখন দুর্গা আসছে আর কদিন বাদেই তো পুজো। অঝোরে কাঁদে মিমি ছেলের হাত ধরে।বুকটা কষ্টে কেঁদে ওঠে আনন্দর তবুও মাকে বলে," মন শক্ত করো দিদা কষ্ট পায়নি ভালোভাবে গেছে।"
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment