Skip to main content

সুখে অসুখে

অনেকদিন বাদে আলমারির সাজানো সংসারে হাত দিলো নয়না। খুঁজে খুঁজে ওর সবচেয়ে পছন্দের শাড়িটা মানে হলুদ মেরুনের বাটিকের শাড়ি যেটার আঁচলে গণেশজননী দুর্গার মোটিফ আঁকা সেই অতি পছন্দের শাড়িটা বের করলো। সেই কবে একবার পরে যত্নে তোলা ছিলো আর পরাই হয়নি। ফ‍্যাটফেটে সাদা চোখদুটোতে আজ ছোঁয়ালো হাল্কা কাজলের আদুরে স্পর্শ আর ঠোঁটে একটু রোমান্টিক লালের ছোঁয়া। গলায় ডোকরার লকেটটা পরে নিতেই বেশ অন‍্যরকম লাগলো দেখতে ওকে।
              " ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিস এতো সেজে?হুঁ এই সাজটা যদি আগে সাজতিস!"
.." কেন মা,নিজেকে ভালো রাখতে চাওয়াটা কি অপরাধ? খুব কি খারাপ কিছু লাগছে তাহলে খুলে ফেলি।"
          মাকে কিছু না বলতে দেখে ব‍্যাগটা নিয়ে বেড়িয়ে যায় নয়না।আধঘন্টার মধ‍্যেই ডাক্তারের চেম্বারে পৌঁছে যায়। তখনও ডাক্তার আসেননি তাই মোবাইল হাতে বসে অপেক্ষা করে। যদিও তার মধ‍্যেও অদ্ভুত একটা অস্থিরতা হয়। আজকাল নিজেকে নিজে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
       " ডাক্তারবাবু কখন আসবে আমার ভালো লাগছেনা,কখন থেকে বসে আছি।"
  মোবাইল থেকে মাথা তোলে নয়না।একটা কমবয়েসী বৌ মাথায় চওড়া সিঁদুর আঁকা মনেহয় নতুনই বিয়ে হয়েছে। সাথে মনে হয় স্বামী আর মা এসেছে। যত্নে বের করে দেওয়া বোতল থেকে জল খেয়ে স্বামীর ঘাড়ে মাথা রাখে মেয়েটি। পাশে একটা হাতে মায়ের হাত ধরা।
                 "একটু চুপ করে বসোনা এক জায়গায়,সবসময় এত অস্থিরতা কেন করছো? আবার বাইরে যাচ্ছো কেন?"
        স্ত্রীর জেরায় কটমট করে তাকায় ভদ্রলোক," তাহলে কি করবো সারাদিন বাড়িতে শুয়ে থাকবো? একটা সিগারেট খেতেই হবে আর ভালো লাগছেনা।"
            বৌ বাধা দিতেই একটা চাপা চিৎকার করে ওঠে। একটা সময় ডাক্তারবাবুর চেম্বারে এসে দমবন্ধ লাগত নয়নার। সবাই মোটামুটি চুপচাপ,অথবা কেউ একটু বেশিই অস্থির। কত রকম রোগ একএক জনের কারো হাইপারটেনশন,কারো বা মনের অসুখ। দরজার বাইরে একদল সুখী মানুষের মধ‍্যে কিছু অসুখী রোগী।
        কিন্তু এই তো ওরা সুখে অসুখে অন্তত দুজনের হাত ধরে বা অবলম্বনে আছে। তাহলে ওর এমন হলো কেন?
      ওর মাধ‍্যমিক পরীক্ষার ঠিক দুদিন আগে ওর বাবার হঠাৎ চলে যাওয়ার পরই একদম চুপ করে গিয়েছিলো নয়না। কখনও হাউহাউ করে কাঁদতো কখনও বা চুপ করে ছাদের ধারে একা বসে থাকতো। আর কোন কিছু নিয়েই বায়না করতনা।
      তখন মাও নাজেহাল,ওকে দেখার সময় কোথায়?নয়নার মনের অসুখ হয়ে গিয়েছিলো কে জানে কখন বুঝতেই পারেনি। কোন টেনশন এলে নিতে পারতোনা,বেশি চাপ এলেই মনে হত সবসময় পড়ে ঘুমোই আর পারছিনা। অথবা মরে গেলেই ভালো হত জুড়োত সব জ্বালা। কখনও বা অযথা মায়ের ওপর চ‍্যাঁচামেচি করত। মায়ের জীবনও যেন অসহ‍্য হয়ে উঠেছিলো। একেকদিন এমন হত দুজনেই ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়েছে।
                নিজের রোগটাকে চিনতে চিনতে অনেকটাই দেরি করে ফেলেছিলো ততদিনে ডাক্তারের ওষুধের ডোজে কখনও বা জিভ জড়িয়ে যেত ওর। মাঝে কিছুদিন বেশ ভালো ছিলো একটা চাকরি পেয়ে। চাকরি করা মেয়ে মানে সোনার ডিম পাড়া হাঁস। একবার দেখেই পছন্দ হয়ে গিয়েছিলো ওকে পাত্রপক্ষের। নয়না বলতে চাইলেও ওর মা বলতে দেয়নি কিছু।" ও আবার কি সারাজীবন আমার ঘাড়ে পরে থাকবি?"..এই মিষ্টিমুখটা দেখেই বর সব ভুলে থাকবে।কারা যেন বিয়েবাড়িতে রটিয়েছিলো মেয়ে পাগল যদিও তখন কিছু জানতে পারেনি নয়না। বিয়েটা ভালোভাবেই হয়ে গিয়েছিলো। একটা অবলম্বন পাবার স্বপ্ন দেখেছিলো নয়না দীপ্তর হাত ধরে। কিন্তু সব হাতে হাত রাখাই কি শান্তির হয়?

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...