Skip to main content

ভালো রাখা

#ভালো_রাখা#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

লম্বা চুলটা ভালো করে বিনুণী করে, মুখটা ধুয়ে শাড়িটা গায়ের ওপর ফেলে দেখে নিচ্ছিলো স্নেহা। নাহ্ সত‍্যিই মা দারুণ সুন্দর শাড়িটা বের করে দিয়েছে। কিন্তু শাড়ি পরা নিয়েই যত সমস‍্যা ওর,ঠিকমত ম‍্যানেজ করতে পারেনা। অথচ মিঠুটা এখনও এলোনা। বিয়ে করে ওর বারোটা বেজে গেছে।এইসব সাতপাঁচ ভাবছিলো ও।
"ছেলের বাড়ি থেকে বলে দিয়েছে জানিস তো যতক্ষণ না ওর দিদি দেখবে ততক্ষণ ওরা পাকা কথা দিতে পারবেনা। ছোট ভাই তো তাই দিদির কথাতেই বোধহয় ওঠবোস করে।"
                   মায়ের কথা শুনে তখন তাই মনে হয়েছিলো,ছেলের থেকে দিদি বেশ কিছুটা বড় শুনেছে। ছেলে তো অনেকবারই দিদি দিদি করেছে। মায়ের পরেই নাকি দিদি। কথায় বলে 'ননদিনী রাইবাঘিনী' কে জানে আজ দেখতে এসে আবার কি হবে। আজ ছেলের মায়ের আর দিদির আসার কথা।
        ওরা এসে পড়েছে,মা সরবত দিয়েছে। একবার এসে তাড়া দিয়ে যায়," চলে আয় তাড়াতাড়ি আর কত দূর তোর?"
      তখনও শাড়ি নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে স্নেহা,মা কুচিটা একটু ঠিক করেই দৌড়লো।
       ঘরে আসে স্নেহা সবার দিকে তাকিয়ে একটু হাসে। মনে হচ্ছে এই ছেলের দিদি, হঠাৎই ভদ্রমহিলা উঠে আসেন। " মনে হচ্ছে শাড়ি পরার অভ‍্যেস নেই তাই তো?"
           অদ্ভুত একটা স্নেহে ওর আঁচলটা গুছিয়ে দিলো দিদিভাই। সেই থেকেই দিদিভাই ডাকের শুরু। সব মেয়ের মতই একটু দুরুদুরু বুকেই পা রেখেছিলো শ্বশুরবাড়িতে দুধ আলতায় পা দিয়ে।
" সাবধানে একটু একটু করে এগিয়ে আয় তো পা ফেলে। আমাদের বাপের বাড়িতে একগাদা নিয়ম তবুও মাকে বলেছি একটু ছাড় দিতে।"..বলেই দিদিভাই ওর দিকে তাকিয়ে হাসে। সবার মুখেই বোধহয় কিছু সুন্দর জিনিস ভগবান দিয়েছেন ওর ননদের মুখের হাসিটা বোধহয় বলে যায় একদম ফিল্মি ঢঙে,ম‍্যায় হুঁ না..
          একটু ভয় পায় স্নেহা এই বাড়িতে এসে দিদিভাইকে দেখে,চারিদিকে ছুটে বেড়াচ্ছে। কখনও মাকে আবার কখনও ভাইকে ধমকাচ্ছে একেবারে দশভুজা। আর সেই তুলনায় ও..একটু ঢোক গেলে স্নেহা, মা বলতো,'ঢ‍্যাড়স..কখনও বা কুম্ভকর্ণ আবার কখনও লেটলতিফ।
                       ভাত কাপড়ের অনুষ্ঠানে গতানুগতিক বুলি আওড়ালো ওর বাধ‍্য বরটা শুধু দিভাই বললো," আজকাল মেয়েরা শুধু ভাতকাপড়েই সন্তুষ্ট থাকেনা তার সাথে ঘোরা বেড়ানো,বিউটি পার্লার,শখ সব আছে। সব কিছুর দায়িত্ব নে।" সবার সাথে হাসে স্নেহাও।
" এই যে তোরও ছাড় নেই,বলে ফেল আজ থেকে নিজে ভালো থাকার আর সবাইকে ভালো রাখার দায়িত্ব নিলাম।"
তার মধ‍্যেই এখানে ঘি ভাত দিতে গিয়ে ফেলে ছড়িয়ে একাকার করেছে। বাড়িতে অপকর্ম করলে মায়ের দিকে তাকাতো এখানে হঠাৎ চোখ পড়লো দিদিভাইয়ের দিকে আর ওর বরের দিকে। পাজিটা মিটমিট করে হাসছে দিদির দিকে তাকিয়ে যেন বলতে চাইছে একেবারে কাজে অষ্টরম্ভা। হঠাৎই দিদিভাইয়ের গলা শোনে," এই একদম হাসবিনা,ছেলেমানুষ নার্ভাস হয়ে গেছে নতুন জায়গা। তার ওপর নতুন শাড়ি, মাথায় ঘোমটা। অনেক হয়েছে এবার ওকে নিয়ে খেতে যা তো, মুখটা শুকিয়ে গিয়েছে মেয়েটার।"
                      এই হচ্ছে স্নেহার ননদ যাকে ও দিদিভাই বলে ডাকে। প্রথমে মনে হলেও আজকাল আর কিছু মনে হয়না এমন কি বকা দিলে বা শাসন করলেও রাগ হয়না স্নেহার। আসলে দিদিভাইয়ের কথায় বড় মায়ের ছোঁয়া পায়। পাজি বোধহয় ওর বরটাই,দিদির আদরে একদম বিগড়ে গেছে। আর শাশুড়িমা তো মোটামুটি মেয়েকে ভয় পান,আসলে দুবেলা ফোন করে ওষুধপত্র খাওয়াদাওয়া সব কিছুর খবর নেয় দিভাই। স্নেহাও আজকাল উনি অনিয়ম করলেই বলে," ঠিক আছে, আমি তো পারবোনা তোমায় কন্ট্রোল করতে তাহলে দিভাইকে একটা ফোন করি।"ব‍্যাস ম‍্যাজিকের মত সব হয়ে যায়,আর উনিও একদম বাধ‍্য মেয়ে হয়ে যান।
                     স্নেহার বিয়ের পর এবার প্রথম পুজো ওর খুব ইচ্ছে কদিন বাপের বাড়ি থাকলে ভালো হত।অথচ শাশুড়িমাও একা হয়ে যাবেন তাই বর একটু কিন্তু কিন্তু করছে। ও বুঝতে পারছে হয়ত দিদিভাইকেও ভয় পাচ্ছে। শেষে মুশকিল আসান করলো দিদিভাই," এখানে দুটো দিন থেকে যা,তারপর ওখানে গিয়ে অষ্টমী নবমী কাটিয়ে একেবারে বিজয়া করে আসিস। ঐ কয়েকটা দিন আমি দেখবো মাকে।আশ্চর্য লাগে স্নেহার সবটাই ম‍্যানেজ হলো অথচ কারো রাগ হলোনা।এইজন‍্যই বোধহয় দিদিভাই আসছে শুনলে ওর সবসময় আনন্দ হয়,যাক ওর পক্ষে কেউ তো কথা বলবে এবার।
                       " সামনে ভাইফোঁটা মনে আছে তো?"
      " তুমি সেদিন আসছো তো এই বাড়িতে সবাইকে নিয়ে?"
  "একদম নয়,একটা ভাই আমার সারাবছর হা পিত‍্যেশ করে থাকে দিদি খাওয়াবে বলে। তাই তোরা দুজনেই চলে আসবি। তুই একা একা কি করবি শুনি সারাদিন?"
            স্নেহার ভাই নেই তাই সকালে সেজেগুজে একদম সুন্দর লাল জড়ি পাড়ের সাউথ সিল্ক পরে সাথে হাল্কা গয়না পরে ননদের বাড়ি যাবার জন‍্য একদম রেডি। " ওরে বাবা অনুষ্ঠান কার আমার না তোমার? যা ড্রেস দিয়েছো,রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়াই তো মুশকিল।".বরের দিকে হাসে স্নেহা," দিভাই বলে দিয়েছে ভালো করে সাজুগুজু করতে আর তার সাথে তোমাকেও করাতে। মানে ভালো থাকা আর রাখা।"
             সত‍্যি দিদিভাই পারে কোন ভোরবেলা উঠে রাজ‍্যের রান্না করেছে ওদের জন‍্য। ওর পেটুক কর্তাটি তো মোটামুটি শুরু করে দিয়েছে খাওয়া। ধমক লাগায় দিভাই," আগে ফোঁটা তারপর খাওয়া,বসে পড় ভাই। স্নেহা একটু এগিয়ে দেতো জিনিসগুলো হাতে হাতে।"..দিভাইয়ের হাতে হাতে মেঝেতে বাবু হয়ে বসে সব এগিয়ে দেয়। প্লেট ভর্তি সাজানো কতরকমের মিষ্টি,লুচি তরকারি পায়েশ। ফোঁটার পর ভাইয়ের হাতে তুলে দেয় পায়েশ মিষ্টিটা দিভাই," খাবি দাঁড়া,কিন্তু একটু পরে।"
    " আবার পরে কেন? লুচি ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে তো!"
        ততক্ষণে ভাইয়ের পাশে আরেকটা আসন পেতে শাসনের সুরে ডাকে দিভাই," স্নেহা,বসে যাও এখানে জলদি।"
         সবাইকে অবাক করে স্নেহার কপালে কাজল চন্দনের ফোঁটা দিয়ে প্রদীপের শিখা আর ধান দূর্বায় আশীর্বাদ করে ওর গায়ে হলুদ ঢাকাইটা জড়িয়ে দিভাই বলে," সব অনুষ্ঠান শুধু ছেলেদের কেন? এটা বোন ফোঁটা। ও বাড়ির সবাইকে ভালো রেখেছিস তুই তো যত্নে। এই ভাই ছবি তোল আমি বোন ফোঁটা দিচ্ছি।"
       মুচকি হেসে ওর ভাই বলে," আচ্ছা দিদি সম্পর্কটা কেমন খটোমট হয়ে গেলোনা? ও যদি তোর বোন হয় তাহলে!"
.." এই পাজি চুপ সব ব‍্যাপারে টিপ্পুনি কাটা।"
                         ফেসবুকে ওর বোনফোঁটার ছবি দেখে ফোন করে মিঠু, হেসে হেসে ওকে সবটা বলে স্নেহা। মিঠুর বিয়ে প্রায় দুবছর আগে হয়েছে। ননদদের কথার বাণে ভয়ে ভয়ে থাকে শ্বশুরবাড়িতে এই বোধহয় কিছু ভুল করে ফেললো। ওরও ভাই নেই তবে ননদরা ওকে ভাইফোঁটায় ডাকেনা প্রথম বছরেরই বলে দিয়েছিলো," ভাইবোনের অনুষ্ঠান সেখানে ভাইবৌ আবার কি করবে? তাই সেদিন বাড়িতে একাই কাটে ওর। একটু খাবারও পাঠায়না ওর জন‍্য। কে জানে কজন স্নিগ্ধার মত এমন ননদ পায় যারা বোঝে ভালো রাখার জন‍্য ভালো থাকতে দেওয়াটাও জরুরী।©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
(ভালো লাগলে লেখিকার নামসহ শেয়ার করুন।)

সমাপ্ত:-

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...