#শুভ_ষষ্ঠী#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
"না না ঐ মাছটা কিছুতেই নেবোনা,দেখি ঐ ইলিশমাছটা দেখান তো?ইশ্ এর পেটটা তো তেমন চওড়া নয়,আর মাথাটাও হেড়েমুন্ডী এর স্বাদ হবেনা। মাথা ছোট চওড়া পেট আর রূপোলী রঙ তবে তো স্বাদ হবে।"
বিনুণী দুলিয়ে মাছওয়ালার সাথে ঝগড়া করছে মেয়েটা,আর ব্যাটা মাছওয়ালা সুন্দরী মেয়ে দেখেই একদম গলে পড়েছে এদিকে যে লোকজন গরমে ঘামছে কোন তোয়াক্কা নেই।
" এই তো এর ভেতরটা বেশ সাদা,তেলটাও পরিস্কার,এটার স্বাদ মনে হয় হবে। আমাকে ঠকালে জানো তো কাল প্লাস্টিক সমেত ফেরত দেবো,পাঁচবছর ধরে আসছি বাজারে।"
পাঁচবছর! মেয়েটার মুখটা এবার ভালো করে দেখে রঙ্গন। লালকালো বাঁধনী চুড়িদারে একটা শ্যামলা মেয়ে চোখেমুখে কথা বলছে একেবারে, আর একহাতে নিজেই মাঝেমধ্যে লম্বা বিণুনীটা পাকাচ্ছে। কত বয়েস হবে কে জানে! বাড়ির লোকও পারে একেবারে জন্ম থেকেই বোধহয় বাজারে পাঠিয়ে দিয়েছে।
সেখানে ছাব্বিশ বছরের রঙ্গন বোধহয় ছয়বারও বাজারে এসেছে কিনা কে জানে? প্রথম কথা মাছ খেতে ভালো লাগলেও মাছের বাজারের পচা গন্ধে ওর অন্নপ্রাশনের ভাত উঠে আসে আর দ্বিতীয় কথা প্রয়োজনই হয়না।ওর বাবা মায়ের চরম আদুরে রাঙা ছেলেটা পড়াশোনা করুক,অফিসে যাক শুয়ে থাক ক্ষতি নেই তবে ছেলের গায়ে আঁচড় লাগতে দেয়না ওর মা বাবা। বাবা কদিনের জন্য বাইরে গেছে বলে বাজারে আসা।
দজ্জাল খদ্দেরকে খুশি করে মাছওয়ালা অন্যদিকে নজর দেয় ততক্ষণে রঙ্গনের ঘামে গলদঘর্ম অবস্থা। " কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছি,বাবা নিয়ে যায় এখান থেকে বলে দিয়েছে। আপনি জানেন তো যেটা ভালো হয় দিন।"
পাশের থেকে কানে আসে তাহলেই হয়েছে। তাকাতেই রঙ্গন দেখে একটা গা জ্বালানো হাসি হেসে মেয়েটা যাচ্ছে।এতক্ষণ খুব রাগ হয়েছে তাই আর পারলোনা," কি বললেন আপনি?".." কেন খুব খারাপ কিছু বলেছি নাকি? ওর ওপর বিশ্বাস করলে আজ পচা মাছ খেতে হবে। বাজারে নতুন তাইনা?"
আর কথা বলতে পারেনা রঙ্গন বাপরে এই মেয়ে তো একেবারে এক্সরে মেশিন তবুও শুকনো মুখে বলে,"ওরা ভালোই দেবে?"
একটা পাজিমার্কা হাসি হেসে চলে যায় মেয়েটা। বাড়িতে গিয়ে বাজারের থলেটা ফেলে দিয়ে বলে," উঃ এই দিয়ে যা হয় চালাও,আমি আর যাচ্ছিনা বাজারে।"খাওয়ার টেবিলে খেতে গিয়ে নিজেরই মাছটা বড্ড কেমন যেন কাদা কাদা খেতে লাগলো। গলা দিয়ে যেন নামছেনা। যদিও মা তেমন কিছু বললোনা শুধু বললো," তোর বাবাকে বলবো মাছওয়ালাকে বলতে একি কান্ড নতুন লোক পেয়ে ঠকাবে?"
রঙ্গনের তখন খুব রাগ হচ্ছে ঐ মেয়েটাই ঠিক করে মাছ ফেরত দিয়ে, ইচ্ছে করছিলো মাছের ঝোলের থালাটা মাছওয়ালার মাথায় ঢালে। বাবা সামনে সপ্তাহে আসবে, তাই মাকে বলে দিলো ডিম,চিকেন,পনীর এই দিয়ে যেন চালিয়ে নেয়।
তবুও তিনদিন বাদে বাজারে গিয়ে মাছওয়ালাকে এক হাত নিতে গেলো,দূর থেকেই মেয়েটাকে দেখে আর এগোতে সাহস পেলোনা। সেই ঝগড়া করছে দরদাম নিয়ে। চলে যাবে ভাবলেও যেতে পারলোনা,আজ টিয়ে সবুজ আর লাল বাঁধনী চুড়িদারে বোধহয় আরেকটু বেশি ভালো লাগছে ওকে। একটু অন্যমনস্ক ছিলো হঠাৎই শুনলো,"সেদিনের মাছটা নিশ্চয় ভালো ছিলোনা?"
মাছ কিনতে এসে প্রেমে হাবুডুবু খাওয়া কইমাগুরের মত কে জানে কারও হয়েছে কিনা তবে রঙ্গনের হলো। বাজারে এখন নিয়মিত মাছ কেনে তবে আর পচা নয় তিস্তা ঝগড়াঝাটি করে একদম বেছে ছোটবড় সব মাছ কিনে দেয়।
ও তখন শুধু ওর চোখপাকিয়ে ধমকধামক দেখে আর খুব হাসি পায়।
শুধু ওর বাবা মা ভাবে ছেলেটার হলো কি? তবে বেশ ভালো বাজার করতে শিখেছে। যাক্ বিয়ের পর আর কোন চিন্তা থাকবেনা। আর বছর দুয়েক বাদেই দেখেশুনে একটা ভালো বৌমা আনতে হবে। কোন কম্মের নয়,এতদিনেও একটা ভালো মেয়ে পেলোনা!
তিস্তার বাবা একটু ব্যস্ত বিয়ের জন্য মা মরা মেয়ে তারপর ওনারও শরীর ভালোনা। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে অনেকদিন, বাইরে থাকে। পাঁচবছর ধরে সংসারের সবটাই দেখে তিস্তা, অদ্ভুত একটা বদল এসেছে মেয়েটার মায়ের আদুরে মেয়েটা কখন যে কান্না মুছতে মুছতে মায়ের মতই হয়ে উঠেছে বুঝতেই পারেননি। কোন কাজেই ভুল হয়না,ওনার হাঁটার সমস্যার জন্য বাজার হাট সবই ঐ মেয়ে করে।
রঙ্গনের কাছে শুনে রমলা একটু আপত্তিই করেছিলেন। " মা নেই বলছিস,বাবা অসুস্থ ঐ মেয়েই সংসার চালায় বাজারহাট করে এই শ্বশুরবাড়িতে জামাই আদর তো কিছুই পাবিনা। আমার একটা মাত্র ছেলে কত আদরের সে কিনা শ্বশুরবাড়িতে গিয়েও ব্যাগ হাতে বাজারে ছুটবে? তারপর শ্বশুরের দায়িত্বও আছে। আমার ঠিক ভালো লাগছেনা স্পষ্ট কথা বললাম বাপু। তারপর মেয়েও তো খুব একটা ফর্সা নয়। বাজার দোকান করে আর সংসারের হাড়ি ঠেলে তেমন লালিত্য নেই।"
রমলার আপত্তি তেমন টিকলোনা বাস্তবে,বকুনি খেলেন কর্তার কাছে ছেলে যখন রাজি তখন আর কি বলার আছে। আর ওদের ননীগোপাল ছেলের জন্য এমন বৌমা ই ভালো। চটপটে মেয়ে সংসারী কাজকর্ম জানে এমন মেয়েই তো সবাই চায়। তাই একদিন কর্তার সঙ্গে রমলা গিয়ে তিস্তাকে দেখে এলো,দেখতে গিয়ে রান্নাঘরের দিকে চোখ পড়তেই মনটা খারাপ হলো রমলার মেয়েটা রান্নাঘরে ময়দা মাখছে। এরা এত কিছু করছে কেন কে জানে?ছেলের তো মেয়ে পছন্দ হয়েই গেছে শুধু নিয়মরক্ষা আর পাকাদেখার জন্য আসা এখানে।
" শুনুন ওকে আসতে বলুন,একসাথে বসে একটু গল্প করি। আমরা তো এত কিছু খাবোও না।"
ওদের কথার মাঝেই তিস্তাকে নিয়ে ওর দিদি আসে। মেয়েটার মুখ তখনও ঘামে ভেজা। তবে রমলার চোখটা আটকে গেলো ওর চুলে। রঙ্গন বলেছিলো তবে এতটা চুল ভাবতেই পারেনি রমলা, তবে গায়ের রঙটা বেশ চাপা। তারপর তেমন কিছু বোধহয় সাজতেও পারেনা।
" ইশ্ একদম রান্নাঘর থেকে নিয়ে এলে মেয়েটাকে একটু সাজতেও দিলেনা।"
"মাসিমা আমি অনেক বলেছি ও সাজতে চায়না।"
" সাজার আবার কি আছে শুনি?আমার ছবি দেখেছেন তো? আমি আসলে এই রকমই,মুখকে মুখোশের আড়ালে ঢাকতে ভালোবাসিনা।"
" কিছু মনে করবেন না আমার স্ত্রী মারা যাবার পর অদ্ভুত পরিবর্তন হয়েছে মেয়েটার। দেখতে দেখতে কেমন যেন ডানপিটে হয়ে গেছে। আসলে সবটাই তো ওকেই সামলাতে হয়।"
মুখে মুখে এত কথা বলা বড় বাহাদুর মেয়ে যেন,একদম উত্তর তৈরী মুখে। ঘরের বৌয়ের এতটা মুখ একদমই ভালো লাগেনা যদিও মোটামুটি একটা বিয়ের তারিখ ঠিক করেই এলেন ওরা।
রমলা বাজার করার সময় ডেকে নিয়েছিলেন তিস্তাকে। যদিও আসতে চাইছিলোনা এই বলে.." আমিই তো সব কিনি পছন্দ করে,নিজের দিভাইয়ের,জিজুর বাবার। আপনি যা কিনবেন তাই হবে।"
তবুও বাজারে এসে রমলার মতেই মত দিলো মেয়েটা তবে বেনারসী কেনার সময় আশ্চর্য হলেন যখন বলে উঠলো.." এত দাম দিয়ে কেনার কি দরকার! এই দামে দুটো শাড়ি হয়ে যাবে।" " তুমি পছন্দ করো,তোমাকে অত ভাবতে হবেনা।" মনে মনে রমলা ভাবেন সস্তার জিনিস কিনে কিনে মেয়েটা হিসেবী হয়ে গেছে। তবে বেশি হিসেব করতে শিখলেও তো মুশকিল।
ছেলে অনেক করে বললেও বিয়েতে যাননি রমলা এদিকে অনেক কাজ বৌ আসার পর। ফোনে তো শুনেছেন ভালোই ব্যবস্থা করেছে ওরা,রঙ্গনের বাবা নিরুপম তাই বললেন। বৌমার ছবিও দেখলেন,সাজগোজ করে ভালোই লাগছিলো দেখতে। রমলার যা ভয় ছিলো তা হয়নি,সুন্দর বেনারসী গা ভরা গয়না আর পায়ে মল পরে আলতামাখা পা দুটো তিস্তা রাখলো দুধে আলতায়। শাশুড়িমায়ের কথা শুনে বাধ্য মেয়ের মত ধীরে ধীরে পা ফেললো মেঝেতে। রঙ্গনের একটু হাসি পেলো,নাহ্ এই বেনারসী পরা লক্ষ্মীমন্ত বৌয়ের থেকে ঐ বাজারের ঝগড়ুটে তিস্তাই বেশি মিষ্টি। তবে ঐ ঝগড়ুটে মেয়ে যে এত ক়াঁদতে পারে তা ভাবেনি। মায়ের ছবির সামনে দাঁড়িয়ে বাবার গলা ধরে ওর কান্না দেখে রঙ্গনেরই কান্না পাচ্ছিলো।
" মা ও খুব কান্নাকাটি করছিলো,বেশি নিয়ম করিয়োনা,বোধহয় শরীরটাও ভালো নেই।"
" এখন থেকেই শুরু হয়ে গেছে দেখেছো? আগে সব শেষ হবে তবে বিশ্রাম।"
তবে ল্যাটামাছ ধরা থেকে,ছড়ানো চাল গুছোনো সবেই পাশ করলো তিস্তা। ওহ্ রঙ্গন চমকে উঠেছিলো ওর মাছ ধরা দেখে। একেবারে কোমরে বেনারসী গুজে খুব সহজেই বাজিমাত করলো।
ঘরে আসার পর রমলা এসে বলে গেলেন," এই শাড়িটা পরে নাও বাড়িতে লোকজন আছে আঁচলটা একটু গায়ে রেখো।"
বাথরুম থেকে বেড়িয়ে চুল আঁচড়াচ্ছিলো তিস্তা,রমলাকে দেখেই আঁচলটা দিতে যায় গায়ে। " আমাকে দেখে এসব করতে হবেনা,দেখি এটা আবার কি খোঁপা বাঁধা হলো?"
তাড়াতাড়ি করে এসে চুলটা গুটিয়ে গার্ডার আটকে দেন গজগজ করতে করতে আজকালকার মেয়েগুলো সব উড়নচন্ডী,কেবল বাইরে মন কোনকিছুর যত্ন নেই। দেখানোর মধ্যে আছে তো শুধু ঐ চুলটা।
রমলার ইঙ্গিত বুঝলেও একটু হাসে তিস্তা,ঠিক এমনি ওর মা বলতো। কালো মেয়েদের নিয়ে মায়েদের কেন যে এত চিন্তা কে জানে?
বৌভাতের পরেই রমলা বলেছিলেন," আমি বুঝতে পারছি মুখে হাসি নেই কেন,নিশ্চয় বাবার জন্য মন খারাপ। তা কালই তো যাবে,যদিও ওখানে গেলে তোমার সেই খাটনির বাসা। আমার ছেলেটার তো কপাল নেই শাশুড়ির আদরের।"
রঙ্গন আগেই বলেছে তিস্তাকে মায়ের আপত্তির কারণ। " বাবা আমায় রান্না করতে দেবেনা মা,হোম ডেলিভারি আসবে সব।" " ইশ্ অর্ডারের খাওয়ার কথা আর বোলোনা।"
লাল হ্যান্ডলুমের শাড়িতে গাঢ় নীল পাড়ে জড়ির কাজ আঁচলে জড়ির পদ্মলতা। শাড়িটা পছন্দ করে কিনেছিলেন রমলা তারসাথে ছেলের লাল পাঞ্জাবী। ওরা বেরোনোর সময় রমলা ছেলের হাতে একটা ভারী ব্যাগ ধরিয়ে দেন আর কতগুলো প্যাকেট। " শ্বশুরমশাইয়ের হাতে দিস।"
তিস্তা ভাবতে পারেনি ওর শাশুড়িমা রান্না করা খাবার সাথে দিয়ে দিয়েছেন। ওর বাবা কৌটোগুলো খুলতেই ওর একটু রাগ হয়,উনি কি ভাবেন এমন শ্বশুরবাড়ি ছেলের যারা জামাইকে একদিন খাওয়াতেও পারেনা।
শুনতে পায় বাবাও ফোনে একই অভিযোগ করে উত্তর পেলো.."আপনার জামাইকে আপনি যা খুশি খাওয়ান,এগুলো আপনার জন্য আমি নিজে বানিয়েছি।"সত্যি এরপর আর কিছু বলা চলেনা।
শ্বশুরবাড়িতে তিস্তার কেটে গেছে বেশ অনেকগুলো মাস। আবার শালোয়ারকামিজে পুরোনো তিস্তা, তবে রমলা মোটেই বাজারে যাওয়া পছন্দ করেননা। তাই আজকাল মাঝে মাঝে গিয়ে বাবার বাজার দোকান করে আসে মানে আসতেই হয়,ও বোঝে শাশুড়ির রাগ হয় বেশি বাইরে ঘুরলেইতিমধ্যে বলেন ছেলে করে দিয়ে আসবে যা লাগবে। তিস্তার তাতে ঘোর আপত্তি,নাইবা হলো ও ছেলে তবে কোন কাজটা পারেনা?আর করবেইনা বা কেন? এ বাড়ির বৌ হওয়ার আগে তো ঐ বাড়ির মেয়ে। দুজনের ঝামেলা মন কষাকষির মাঝেই রমলা বলেন," মেয়ে না ডানপিটে মেয়ে কে জানে?"
জামাইষষ্ঠী নিয়ে একটা ঝামেলা হচ্ছে কদিন ধরেই শাশুড়ি বৌমাতে। " আচ্ছা তোমার এখন বিয়ে হয়ে গেছে,তুমি দিদিকে ষষ্ঠীর নেমন্তন্ন করে যে আনছো সব তো তোমাকেই করতে হবে। ব্যাস তারপর ঐ সব করে কাহিল হয়ে পড়ো আরকি?
পেছনে হটার পাত্রী তিস্তাও নয়," আমি তো প্রতিবারই দিদি জামাইবাবুকে ষষ্ঠীতে রান্না করে খাওয়াই,তাই এবারও খাওয়াবো।".." আরে আমার ছেলেটাও তো এবছর নতুন শ্বশুরবাড়িতে যাবে নাকি আর সেখানে গিয়ে তুমি সারাদিন উনুনে পুড়বে আগের থেকে বাজার করবে। এতই যখন তখন হোটেলে খেয়ে নিলেই তো হয়।"
" হোটেলে সব আনন্দ হয়না মা,হাতের রান্নার আলাদাই স্বাদ আর আন্তরিকতা।"
" তুমি কি শাশুড়ি নাকি? কি ভাবো নিজেকে? উঃ এই মেয়ের মাথায় সারাক্ষণ বাপের বাড়ি ঘুরলে আমার সংসারটার!"
কথাটা আর শেষ করা হয়নি রমলার তার আগেই চোখটা জলে ভরে গিয়েছিলো তিস্তার,ঘরে ঢুকে গিয়েছিলো। বালিশে মুখ ঢেকে খুব কেঁদেছিলো মায়ের কথা ভেবে,সত্যি মা যে কেন চলে গেলো? আর মায়ের মত যে কেউই হয়না,যতই মুখে বলুকনা কেন।
মায়ের সাথে ছেলেরও একটু অশান্তি হয় এই নিয়ে। রমলা তাতেও গলেননা," তখনই বলেছিলাম এই ঝামেলাগুলো হবেই। সারাদিন যদি মেয়ে বাপেরবাড়ির জন্য চিন্তা করে তবে সংসার করবে কি?"
অবশেষে ঠিক হলো জামাইষষ্ঠীর দিনই সেজেগুজে যাবে ওরা,যেমন নতুন ছেলে বৌমা যায় তেমন। তারপর ওখানে গিয়ে যা হয় করবে। তিস্তা দুদিন ধরে ভালো করে কথা বলেনা রমলার সাথে। বাপেরবাড়ি যাওয়া নিয়ে ওনার যে কি সমস্যা বুঝতে পারেনা।
উফ্ ঘুম ভাঙতে একটু দেরিই হয়ে গেছে,রঙ্গনটা তখনও ঘুমোচ্ছে কোন চিন্তা নেই ঐ বাড়িতে কত কাজ পড়ে আছে। তাড়াতাড়ি উঠে স্নান করে তৈরি হয় তিস্তা,সাথে রঙ্গনও। সকাল থেকে শাশুড়ি একবারও এদিকে আসেনি রান্নাঘরে খুটখাট করছে। তিস্তাও ওদিকে যায়নি,তাড়াহুড়ো করছে।
বেল বাজার আওয়াজ শোনে,দুবার বাজলো অথচ কেউ খুলছেনা। শাড়ির আঁচলটা ঠিক করতে করতে ছুটে যায় তিস্তা। দরজা খুলে অবাক হয়ে যায়,দিদি জামাইবাবু আর পুচকেটা, বাবা সবাই এই বাড়িতে কেন?
পেছনে উলুর শব্দ শুনতে পায়,"এসো এসো ভেতরে এসো। আসুন বেয়াইমশাই। আচ্ছা আমার মত একটা জলজ্যান্ত মা থাকতে এই মেয়েগুলো খেটেখুটে রান্না করে খাবে ষষ্ঠীর দিন তা হয়?
ততক্ষণে ছাদ থেকে নেমে এসেছেন নিরুপম," আরে আসুন আসুন,কবে সেই বিয়ের পর পর কয়েকবার ষষ্ঠীতে নেমন্তন্ন পেয়েছিলাম তারপর তো সব ফক্কা বুড়ো জামাইকে কে আর পাত্তা দেয়? আজ বাড়িটা বেশ জমজমাট হবে আর জমিয়ে খাওয়াদাওয়া হবে।"
আশ্চর্য হয়ে যায় তিস্তা চোখের কোলে জমে থাকা জলটা গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। "ও এই জন্যই এত অশান্তি কদিন ধরে, মা একবারও তুমি বললেনা কেন? আমি যে তোমায় কত খারাপ ভেবেছি রাগ করেছি।"
"আচ্ছা মায়ের ওপর রাগ করতেনা কখনও। আমি নাইবা হলাম মা,মায়ের মত কেউ তো? দেখি মুখটা,আজকের দিনে কেউ চোখের জল ফেলে নাকি? সন্তানদের মঙ্গলের জন্যই তো মা ষষ্ঠীর পুজো।"
রঙ্গন হেসে ফেললো " মা আমার পেট পুজোটা বানচাল করলে এইভাবে?"
পাখার বাতাস দিয়ে হাতে হলুদ সুতো বাঁধতে বাঁধতে রমলা বলেন ছেলেমেয়েদের হাতে আগে সুতো বাঁধি প্রসাদ খা তারপর এবেলা আমার হাতের রান্না,সন্ধ্যায় বিয়াইমশাই খাওয়াবেন।"
সবাই খুশিতে হই হই করে উঠলো। রমলা তখন তিস্তাকে পাখার বাতাস দিয়ে ষাট যাট করে বলছেন মা আমার এই পাগলী মেয়েটাকে ভালো রেখো। মাথা পেতে দেয় তিস্তা,এইটুকু ভালোবাসা পেলে বোধহয় অনেক বকুনিই হজম করা যায়।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment