Skip to main content

প্রাপ্তি

#প্রাপ্তি#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"এইটুকুস খানি মেয়ে সে আবার ডাক্তারবাবু!কি জানি মেয়েটার কি হবে?"
           মিনমিনে গলায় প্রতিমা বলে,"কাঁদিসনা মা একটু জোরে দম নে। সব ঠিক হয়ে যাবে।"
             " মেয়েটাকে একটু দেখুন ডাক্তারবাবু,অনেকক্ষণ কাতরাচ্ছে ব‍্যাথায় এত দেরি হচ্ছে কেন? বাচ্চা মানুষ ব‍্যাথায় অস্থির হচ্ছে।"
          মেয়েটার দিকে তাকায় সোহিনী এই দেশের আর উন্নতি হবে কি করে যেখানে মেয়েদের জন্মের পর থেকেই ট্রেনিং শুরু হয়ে যায় শ্বশুরবাড়ি যাবার। অথচ ও নিজে তো মেয়ে হয়েও এক আকাশ স্বপ্ন দেখে ভালো থাকার আর ভালো রাখার। হাজার একটা ঝামেলায় আর পেশেন্ট পার্টির বাড়ির লোকের উৎপাতে সত‍্যিই উত‍্যক্ত লাগে এক এক সময়। সারাদিন এক কথা বারবার বোঝাতে হয় আর বলতে হয়। সবেই জুনিয়র ডাক্তারদেরকে নিগ্ৰহের প্রতিবাদে আন্দোলন শেষ হয়েছে। প্রচুর চাপ এখন,তার ওপর বাকি অনেক কাজ।
  " এদিকে বলছেন বাচ্চা মেয়ে অথচ তাকে বিয়ে দিয়ে আবার বাচ্চা জন্ম দেবার জন‍্য এনেছেন! তখন মনে ছিলোনা কথাগুলো? জানেন এতে জীবন নিয়েও টানাটানি হয়? অপেক্ষা করুন বাইরে এভাবে বিরক্ত করবেননা। আমরা আছি তো।"
         সোহিনীর কথা শুনে বাইরে অপেক্ষা করে রমেন আর প্রতিমা আর ওদের বাড়ির লোকজন।"বাবা এইটুকুস মেয়ে কি ডাক্তারি করবে কে জানে কিন্তু কথা শুনেছো কেমন!আমার মেয়েকে কবে বিয়ে দেবো ও ঠিক করবে!মেয়েদের যা ধর্ম তাই করছে।এই জন‍্যেই এরা মার খায়।"রেগে ওঠে রমেন।
             অনেকগুলো ডেলিভারি কেস আজ,সোহিনীর এখন গাইনি চলছে, পুরোপুরি ডাক্তার হবার জন‍্য হাতে কলমে শিক্ষা আর তার সাথে খাটুনি। বকাও খাচ্ছে প্রচুর সিনিয়রদের কাছে ভুল হলেই। রাতের খাবার খাওয়ার সময় হয়নি। মাঝে চা খাওয়া হয়েছে একবার। মেয়েটা যন্ত্রণায় ছটফট করছে,মাগো মাগো বলে ডাকছে,চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে জল। গত ছয়মাস মাকে দেখতে পায়নি সোহিনী, শুধু ফোনেই যা কথা হয়। ওর নিজের পেটের ভেতরটাও মুচড়ে ওঠে,এর মধ‍্যে পিরিয়ড হয়েছে আজ সেকেন্ড ডে। মেয়েদের বোধহয় হাজার জ্বালা।
                   "ভয় পেয়োনা,আছি তো আমরা। একটু চেষ্টা করো আর জোরে শ্বাস নাও। সব ঠিক হয়ে যাবে। মেয়েটার হাতটা ধরে সোহিনী,ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সত‍্যি খুব কষ্ট পাচ্ছে মেয়েটা। হাজার স্বপ্নের ঝিকিমিকি দেখার সময়ে সন্তান প্রসবের যন্ত্রণা ভোগ করছে মেয়েটা। কিশোরী বেলা থেকে যৌবনে পা দিতে না দিতেই মাতৃত্বের যন্ত্রণা আর দায়িত্ব তুলে নিচ্ছে ওর নরম অপরিণত শরীরে।
                  সারা রাত যন্ত্রণায় ভুগে ভোরবেলায় জন্ম দিলো মেয়েটা বাচ্চার,ফুটফুটে নিষ্পাপ একটা মুখ। ওরা বাচ্চাটাকে পিঠে চাপড়াতেই কেঁদে উঠলো। পৃথিবীতে এলো আরেকটা মানুষ যে মিশে যাবে মানুষের ভিড়ে। হয়ত বা কোনদিন আবার ইট,লাঠি আর পাথর হাতে ছুটে আসবে ডাক্তার মারতে।
              মেয়েটা এখন অনেক শান্ত তবে নেতিয়ে পড়েছে,ওকে বেডে দেবে কিছুক্ষণ বাদেই। আর কিছুটা বাদেই সোহিনীও যাবে হস্টেলে। ওর শরীরও আর চলছেনা এবার ও নিজেই টলছে। হস্টেলে এসে স্নান করে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছিলো বুঝতেই পারেনি। অনেকবাদে উঠে ফোনটার দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য হলো,ইশ্ এতগুলো কল। বুঝতেই পারেনি। অনেকগুলো আননোন নম্বর। হসপিটালের ফোনও আছে। তাড়াতাড়ি করে উঠে তৈরি হয়ে পা বাড়ায় হসপিটালের দিকে। " দিদি,আপনি কোথায় ছিলেন আমি ফোন করেছিলাম তো?"
" আমি তো হস্টেলে গেছিলাম, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। কোন সমস‍্যা হয়েছে নাকি? সব ঠিক আছে তো? ঐ মেয়েটা মানে ঐ যে ছোট্ট মেয়েটা?".." না না সব ঠিক আছে,আপনাকে অনেকক্ষণ ধরেই ঐ মেয়েটার বাড়ির লোকজন
খুঁজছে।মনে একটু ভয় হয় সোহিনীর, কাল খুব বিরক্ত লাগছিলো ওদের ওপর। এইটুকু একটা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে জীবনটা শেষ করেছে। একটু বেশী রুড হয়ে গিয়েছিলো।
           হঠাৎই শুনতে পায়,"ঐ তো সেই এইটুকুস ডাক্তারবাবু"ওদের হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসতে দেখে এদিক ওদিক তাকায় সোহিনী,ভয়ও পায় একটু কে জানে কি বলবে আবার! ওর কো ইন্টার্নকেও দেখছেনা।
         "ডাক্তারবাবু অনেকক্ষণ ধরে খুঁজতেছি আপনারে। মেয়েটা আমারে বলেছে ওর ব‍্যাথার সময় আপনি যা করেছেন...এটা আপনেরে দিতে চাই। আমরা গরীব মানুষ তাই এইটুকুন...
        হাতটা বাড়িয়ে দেয় সোহিনী, প্রতিমা ওর হাতে দেয় একটা নতুন গামছা আর একবাক্স মাখা সন্দেশ। " আমাদের তাঁতে বোনা গামছা আর এই সন্দেশটুকুনি আপনাদের সবার জন‍্য। আমার কচি মেয়েটা বেঁচেছে আপনাদের জন‍্য।"
            এক ফোঁটা জল চিকচিক করে প্রতিমার চোখের কোলে। সোহিনী যত্নে ধরে গামছাটা আর মিষ্টির বাক্স। অনেক ঘাম পরিশ্রম আর তির্যক মন্তব‍্যের মাঝে এটাই ওর সেরা প্রাপ্তি। মনে আশা জাগে একটু একটু করে হয়ত সাধারণ মানুষ বুঝবে দিনরাত এক করে এই ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো আগলে রেখেছে হসপিটাল চেষ্টা করছে ভালো রাখতে আর সুস্থ করতে। তাই সবার ভালো থাকার জন‍্য ওদের ভালো রাখাটাও জরুরী।©ইচ্ছেখেয়ালে শ্রী
ভালো লাগলে লেখিকার নাম সহ শেয়ার করুন।
সমাপ্ত:-
        

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...