Skip to main content

খাঁচা

"এই নিয়ে তো পাঁচ ছটা সম্বন্ধ এলো গেলো,কেউই তো এত পছন্দ করেনি। সবাই না বলে চলে গেছে। এরাই শুধু পছন্দ করলো,আর ছেলের দাদা বৌদি যে কি ভালো মানুষ!"
"মা আমি দাদা বৌদির সঙ্গে ঘর করবোনা,তুমি তো জানোই ওদের ছেলের পায়ে খুঁত আছে পা টেনে টেনে হাঁটে। তুমি কি চাইছো আমি সারা জীবন ঐ খোঁড়া বরকে নিয়ে কাটাই?আমি কি খুব বোঝা তোমাদের?"
           " তোরা যখন তিন ভাইবোন ছোট তোর বাবা চলে গেছে,তোর পরে আরও একজন আছে। সেটা একবার ভেবেছিস?"
            " আমি তো নিজেরটা চালিয়ে নিই মা,ব‍্যায়াম শিখিয়ে যা রোজগার করি তার থেকে তোমাকেও তো দিই।"
   "আমার টাকার দরকার নেই বাপু। যা দিনকাল পড়েছে দুটো বয়স্থা মেয়ে ঘরে রেখে দিই কি করে? তার ওপর ভাইয়ের ভবিষ্যত আছে।ছেলে ভালো রোজগার করে বাড়ি গাড়ি সব আছে।আর ছেলেরা হলো ইয়ে মানে সোনার আংটি,একটু খুঁতে কিছু এসে যায়না।"
        " ও তাই নাকি,তাহলে আমিই ফালতু তাইতো?".."অমন বলতে নেই সোনা,তবে কত সম্বন্ধই তো দেখলাম,কোনটাই তো এগোলোনা আর। সবাই তো না করলো, এখানেই পছন্দ করলো।
                 মাকে কন‍্যাদায় থেকে মুক্তি দিতে মুখে হাসি আর মনে অভিমান নিয়ে প্রবীরকে বিয়ে করতে রাজি হলো অনিতা। মনে করিয়ে দিলো মা বার বার ছেলেরা সোনার আংটি তাই ওদের খুঁত ধরতে নেই।
   " দিদি কি সুন্দর শাড়ি গয়না দিয়েছে ওরা আশীর্বাদে দেখেছিস? খুব সুন্দর। সত্যি তোর কপাল আছে।"
            ছোটবোনকে একবার বলতে ইচ্ছে হয়েছিলো,শাড়ি গয়না কি কপাল বানায়? কে জানে?ওর মায়ের দেওয়া হাল্কা গয়নাগুলো ঢাকা পরে গিয়েছিলো শ্বশুরবাড়ির গয়নায়। প্রবীররা অনেক ভাইবোন,সবাই মোটামুটি আলাদা থাকলেও খুব বন্ডিং সবার সাথে। জায়েরা সবাই বেশ সুন্দরী আর গুণী। কেউ কেউ আবার চাকরিও করে। ছোট ভাইয়ের বিয়েতে তাই সবাই দিয়েছিলো সোনার দামি উপহার।
     " আমার বৌদিদের সাথে আলাপ হয়েছে?সবাই খুব সুন্দর আর ভালো। ওদের বাপের বাড়ির অবস্থাও খুব ভালো। আমারই আর..."
           অনিতার বড় জা পাশেই ছিলো," কি বলছিস,আমাদের অনিতাই বা কম কি? মাসিমার হাতের যা সুন্দর রান্না আমি তো তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম এমন শ্বশুরবাড়িতেই দেওরকে দেবো। হ‍্যাঁ অনিতার হয়ত একটু চাপা রঙ তবুও খুবই মিষ্টি। আর শুনলাম গ্ৰ‍্যাজুয়েট হবার পর অনেক রকম ট্রেনিং নিয়েছে।"
            " শুনেছি,ব‍্যায়াম শেখাতো কোন সেন্টারে, আর বাড়িতে গিয়ে। তবে আমাদের পাড়ায় একটা সুনাম আছে,সবাই চেনে গুহ পরিবারকে। সেই বাড়ির বৌ লোকের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ব‍্যায়াম শেখাবে তা হবেনা। সরকারি চাকরী হলে আমি কিছু বলতামনা করতো।"
            প্রবীরের সাথে কিছুদিন ঘর করার পরই অনিতা বুঝেছিলো প্রবীরের শরীরের খুঁতটা কোথায় যেন গিয়ে ওর মনটাকেও খুঁতখুঁতে করে দিয়েছে। নতুন বৌ অনিতা তটস্থ থাকতো কখন কি লাগবে প্রবীরের,হাতের কাছে সবটা না পেলেই ওর মাথা গরম হয়ে যেত। মনে হত অনিতা যেন ওকে অবহেলা করছে। এমন কি ওর দাদা বৌদিরাও ভয় পেত ওর মেজাজকে। ওর বড় জা বলেই ফেললো," শোন অনিতা প্রবীর আমাদের সবার আদরের,আমার তো সন্তান নেই তাই দেওরকেই ছেলের মত মানুষ করেছি। আমার যখন বিয়ে হয়েছে কতটুকু ছেলে তখন! তোকে এদিকে দেখতে হবেনা তুই বরং খেয়াল রাখিস ওর কি লাগবে অফিস বেরোনোর সময়। তুই আসাতে আমি অনেকটা নিশ্চিন্ত এখন।"
           অনিতা শ্বশুরবাড়িতে মোটামুটি বন্দী হয়ে গিয়েছিলো ওকে ছাড়া প্রবীরের চলতোনা,আর ওর মেজাজের ভয়ে বৌদিও চাইতোনা অনিতা মায়ের কাছে গিয়ে থাকুক। "শোন তুই মায়ের কাছে গিয়ে সারাদিন থাক তবে সন্ধ‍্যেতে ফিরে আসিস বাপু। যা মেজাজ ছেলের আমারই ভয় লাগে।" ওর মা কখনও থাকার আব্দার করলে ও বেশ রাগ করেই বলতো," বড়লোক শ্বশুরবাড়িতে মেয়ের বিয়ে দিয়েছো,আমার জন‍্য পেয়েছো সোনার খাঁচা আর সোনার শিকল। তাই আর থাকতে বোলোনা। তোমাদের জামাইয়ের অসুবিধা হয়। জানোই তো ওর পায়ের অসুবিধে।"
        মা মুখটা কালো করে বলত," বারবার এক কথা বলিস কেন? আমার উপায় ছিলোনা। অত ভালো ঘর কি পেতাম বল? ছোট ভাইবোন গুলোর কথা তো ভাববি?"
" তাহলে আর বলো কেন মা? আমার ডানাটাও তো ছেঁটে দিয়েছো। আগে মাসে অন্ততঃ পাঁচ হাজার রোজগার করতাম। এখন বড়লোকের বাড়ির বৌ হয়েছি তাই হাত পাততে হয় হাতখরচের জন‍্য। আবার হিসাবও দিতে হয়।"
        " এখন তো সবটাই তোর মা,পাঁচ হাজার দিয়ে আর কি হবে?"
        অনিতার মুখের হাসিটা বড় করুণ দেখায়,মাকে কি করে বোঝাবে ঐ পাঁচহাজার টাকা ওর নিজের ছিলো,খুব নিজের। আর ছিলো কিছুটা নিজের সময়। এখন সব সময় টুকুই অন‍্যের,সব সময় ভয়ে থাকতে হয় এই বুঝি সব কাজ ঠিক মত হলোনা। প্রবীরের মুখ দেখে বোঝে দিনটা কেমন যাবে ভালো না খারাপ। এই তো সেদিন টাকার কথা বলতে বললো," এক তারিখেই তো দিলাম তোমায় এক হাজার টাকা,আজ পাঁচ এর মধ‍্যেই শেষ! দেখো অন‍্য টাকা থেকে খরচ কোরনা আবার। ফোনে একটু কম টাকা ভরাও। মায়ের সাথে অত কথা না বললেও চলবে। মাকে বোলো ল‍্যান্ডফোনে ফোন করতে।"
             এভাবেই কেটে গেছে বেশ কিছুদিন,অনিতার সন্তান আসতে চলেছে। শরীরটা বেশ ভারী হচ্ছে দিনে দিনে। ওর মা নিয়ে যেতে চেয়েছিলো প্রবীর স্পষ্টই জানিয়েছে ওখানে নিয়ে গেলে সব খরচ ওনাকে করতে হবে।
  অনিতার তাই আর যাওয়া হয়নি,অবশ‍্য বড় জা খুবই যত্ন করছে ওকে। কখনও প্রবীর কিছু বললে উনিই বকেন ওকে," শোন এই সময় কিছু বললে মেয়েটার মনের ওপর চাপ বাড়বে।"
            অনিতার মেয়ে হলো,প্রবীরের একটু চাপা অভিযোগ হলো বাড়িতে দাদাদের সবারই প্রথম ছেলে শুধু ওরই মেয়ে হলো।" তাতে কি রে?আমার তো হয়নি কিছুই। বল লক্ষ্মী এলো ঘরে।"
               "তবে আমার মেয়ে মানুষ হবে এই বাড়ির মত। ওর দাদুর বাড়ির মত নয়।"
        ধাক্কা খেলো অনিতা,মাঝে মাঝেই খায় এমন হোঁচট যখন কথায় কথায় নিচু করে প্রবীর ওর বাপের বাড়িকে। তবে ওর মায়ের গড়িয়ে দেওয়া সোনার আংটিকে অনিতা কিছু বলতে পারেনা হাজার হোক পতিদেবতা বলে কথা। যার বাপের বাড়ির জোর নেই তাকে এমন দেবতাকে মাথায় করেই থাকতে হবে। তবে ওর বড় জা সত‍্যিই বোধহয় মায়ের মত।ভগবান হয়ত একসাথে সবটা খারাপ করেননা।
            অনিতার মেয়ের বয়েস দেখতে দেখতে পাঁচবছর। মেয়েকে ভালো স্কুলে ভর্তি করেছে প্রবীর,দেখতেও সুন্দর হয়েছে। আর তেমন সাজাতে ভালোবাসে মেয়েকে বাবা। সেবার পুজোতে অনিতা মাকে বললো," মা এবার থেকে টাকা দিয়ো পুজোয়,তোমার দেওয়া জামা ওর বাবার পছন্দ হয়না, পরাতে দেয়না।তার থেকে টাকাই ভালো।"মায়ের মনটা খারাপ হলেও বলতে বাধ‍্য হয়।
               সেদিন সকালে হঠাৎই চেঁচামেচি শুরু করে প্রবীর," সারাদিন বাড়িতে থাকছো,তবুও সবকিছু গুছিয়ে রাখতে পারোনা। কাল মাম্মার জন‍্য যে কেকটা এনেছি সেটা কই? আর আমার জামাটা আয়রন করে আসেনি এখনও।"
"এই সামান‍্য কারণে এত চেঁচামেচি করছো! ওটা রেখে দিয়েছি স্কুল থেকে ফিরে খাবে। আর এই নাও জামা।"..এর মধ‍্যেই ওর বৌদি এসে বকা লাগায়," কি ঘেমেছিস তুই! আরে চুপ করে একটু বোস। ঘামটা শুকোক।"
    তবুও থামানো যায়না প্রবীরকে চিৎকার চলতেই থাকে। " আচ্ছা দিভাই ওর কি এটা স্বভাব না আমাকে দেখলেই এমন করতে ইচ্ছে করে ওর?".." কি জন‍্য চিৎকার করি তা আমি বুঝি এই বাড়িতে একটা কাজও যদি ঠিকমত হয়!".." সারাদিন তো আমার নিজের সব কিছু ছেড়ে আমি তোমাকে খুশি করার জন‍্যই আছি। এটা সংসার না জেলখানা কে জানে! কয়েদীগুলোও বোধহয় এর থেকে ভালো থাকে।"
     ওর জা ধমকায় অনিতাকে," বলছিনা চুপ কর,এতদিনেও বুঝলিনা ওর মেজাজ।".." দেখেছো তো বৌদি কেমন মাথাটা গরম করাচ্ছে ও নাকি কয়েদী?"
"অনেক হয়েছে এবার অফিসে বেরো তো,আর মাথা খারাপ করিসনা।"
        প্রবীর বেড়িয়ে গেলো,অনিতার কেন যেন আজ মনে হলো শুধু পা কেন প্রবীরের মাথাটাও বোধহয় খারাপ হয়ে যাচ্ছে দিনে দিনে।
      বিকেলের দিকেই ফোনটা আসে প্রবীর অফিসে চেঁচামেচি করছিলো হঠাৎই কথা জড়িয়ে যায় ,মুখটা বেঁকে যায়। ওরা হসপিটালে নিয়ে যাচ্ছে।
   " হলো তো তখন বারবার বললাম ওর মুখে মুখে কথা বলিসনা। এখন সামলা,হে ভগবান আমার তো হাত পা কাঁপছে। কি যে করি? ঠাকুর ছেলেটাকে রক্ষা কোরো।"
      তারপর কয়েকটা দিন কোথা দিয়ে গেছে অনিতার মনে নেই। প্রবীরের মুখটা এখন আরও বিকৃত,এক দিকটা এখনও অনেকটাই প‍্যারালাইজড্। দিন দশেক বাদে নার্সিং হোম থেকে ছেড়ে দিয়েছে। বাড়িতে প্রচুর ওষুধ,ব‍্যায়াম,ফিজিওথেরাপি সব চলছে। টাকা যে কোথা দিয়ে জলের মত বেড়িয়ে যাচ্ছে ঠিক নেই। প্রবীরের সেই চিৎকার আর নেই,জিভটা জড়ানো কথাগুলো এখনও অস্পষ্ট। অনিতার কাছে এখন ইঁদুরের মত থাকে। সেই সিংহের মত হাঁকডাক আর নেই। চোখে মুখে হতাশা তার সাথে চিন্তাও। ওর দাদারাও সাধ‍্য মত চেষ্টা করছে।
     " এ কি আপনি ওর হাতটা তো করালেনই না,এভাবে তো হাতটা ইনভ‍্যালিড হয়ে যাবে। "ম‍্যাডাম আমি আগেই বলেছি হবে সব একটু একটু করে। আগে ওনাকে হাঁটাই,তারপর হবে।এখন বেশি ব‍্যাথা দিলে উনি নিতে পারবেন না।"
"কিন্তু ব‍্যাথা না দিলে তো আর কাজই করবেনা হাত পা ঠিক মত।"
"শুনুন আমরা ট্রেনিংপ্রাপ্ত,সেন্টারে কাজ করি। এভাবে আমার কাজে বাধা দিলে তো আমার কাজ করাই মুস্কিল।"
" তাই বলে আমার চোখের সামনে আপনি ভুল করবেন,ওকে হাতে রেখে দেবেন পরে ঠিক হবে বলে। আর ও পঙ্গু হয়ে যাবে। তাই তো?"
" আপনি যখন এত বোঝেন তো নিজেরাই করুন। আমাদের ডাকা কেন? আমার কাজের সময় কেউ থাকলে আমি আর কাজ করবোনা।"
      ছুটে আসে ওর জা,অস্পষ্ট ভাবে কি যেন বলতে থাকে প্রবীর।
       সবাই অনিতাকে ভুল বুঝলেও দরজা বন্ধ করে অনিতা শুরু করলো ওর মরচে পড়ে যাওয়া বিদ‍্যার অনুশীলন নিজের মত করে। প্রবীর যন্ত্রণায় কাতরালে বলতো,"একটু সহ‍্য করো,তোমার ভালোর জন‍্যই করছি।" অনেকদিনই প্রবীর সহ‍্য না করতে পারে আঁচড়ে দিয়েছে কখনও বা হাত আর পা তুলেছে। সহ‍্য করেছে অনিতা।
         সব অবিশ্বাস জয় করে অনিতা একটু একটু করে সারিয়ে তুলছে প্রবীরকে। ছয়মাসের মধ‍্যে মোটামুটি ভালো হয়ে গেলো প্রবীর। দিন পনেরো বাদে অফিসে যাবে।
                      প্রবীর এখন আর চিৎকার করেনা তবে অনিতা জানে অসুস্থ তাই হয়ত স্বভাবটা বদলেছে। আবার ঠিক হ‍য়ে গেলেই হয়ত আগের মত হয়ে যাবে। তবুও ঠিক হয়ে উঠুক মানুষটা। সবার মুখে আবার হাসি ফুটুক।
                      এক বিরাট ঝড়ের পর আবার ফিরেছে ছন্দ,প্রবীর আজকাল একটু বেশিই চোখে হারায় অনিতাকে। ভালোবাসতে চায় আর কাছে টানতে চায়। তবে অনিতার আদিখ‍্যেতা মনে হয় সবটাই। মেলাতে পারেনা আগের প্রবীরকে এখনকার সাথে।
           " তোমাকে একটা কথা বলবো,শুনবে।"
  " আমি মামের টিফিন করবো,আসছি একটু বাদে।"
   অনিতার হাতদুটো ধরে প্রবীর," না এখনি শুনবে,আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে এখনি।"
" সব কিছু তোমার ইচ্ছেতে চলবে নাকি? আমার কোন ইচ্ছে অনিচ্ছা নেই? কোন দিন দাম দিয়েছো তার?
     " সত‍্যিই দিইনি,তাইতো দিতে চাই এখন। তুমি আবার তোমার কাজ শুরু করো। এত ভালো হাত তোমার!"
        মাথাটা হঠাৎই গরম হয়ে যায় অনিতার," গুহ বাড়ির বৌ বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ব‍্যায়াম শেখাবে। লোকের হাত পা ধরে টানবে তোমাদের সম্মান যাবেনা?খাঁচায় বন্দী থেকে আমার পাখার সেই শক্তি আর নেই,আমি উড়তে ভুলে গেছি। কি জানতাম তাও ভুলে গেছি।"
  " তোমার সব মনে আছে নাহলে আমি সুস্থ হতাম না। তুমি আবার শুরু করো অনিতা।"
    চিৎকার করে ওঠে অনিতা," না আমি আর শুরু করবোনা,আমার আর ইচ্ছে করেনা লোকের বাড়ি ঘুরে ঘুরে রোজগার করতে। আমি কি তোমার হাতের পুতুল যখন যেদিকে সুতো ঘোরাবে সেদিকে নাচবো? এখন খাঁচাটাই আমার অভ‍্যেস হয়ে গেছে। আমার মুক্তি চাইনা। আমি সংসার করতে এসেছিলাম,পরে দেখলাম এটা সংসার নয় সংশোধনাগার। আমার ইচ্ছা অনিচ্ছা খুশি পছন্দ এমনকি বাপের বাড়ি যাওয়া তুমি নিয়ন্ত্রণ করেছো। আর আমি তোমার ইশারায় নাচবোনা।"
        আজ শুধুই অনিতার বলার দিন প্রবীর চুপ করে থাকে। অপমানিত হতে হতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অনিতাকে আজ সত‍্যিই অচেনা মনে হলো ওর।
সমাপ্ত:-
        
          
            

         

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...