Skip to main content

নির্বন্ধ

#নির্বন্ধ#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#

"এই যে আমার রাণীবিটিয়া,দেখতো এই শাড়িটা পরবি না এটা?"
"আচ্ছা মা আমি কি তোমাদের এত‌ই বোঝা যে আমাকে শাদী দিয়ে দিতে চাইছো এত জলদি।"
  "এত জলদি আবার কি রে,এই বয়েসে বিয়ে করবিনা তো আর কবে করবি চুল পেকে গেলে? আমার তো এই সময়.."
ওহ্ মাম্মা তোমার পুরানা রেকর্ড আর কত বার বাজাবে শুনি? তুমি দাদাজীর বোঝা ছিলে আরে আমি তো নই। আমি হলাম তোমার আর পাপার রাণীবিটিয়া,তাই না বলো?"
         পরমা আর কিছু বলতে পারেনা,পায়েল এসে ওর গলাটা জড়িয়ে ধরে। সত‍্যি এত কষ্ট করে আদর দিয়ে মেয়েটাকে মানুষ করে কার ঘরে যে যাবে,ভাবলেই এখনই চোখ ভরে আসে।
                       ছেলের বাড়ির লোকজনের খাবার দাবার সব রেডি করে একবার মেয়েকে দেখে আসে। দুই বন্ধুতে হেসে গড়িয়ে পড়ছে,ওরে বাবা বেশ সুন্দর সাজিয়েছে পূজা পায়েলকে। পরমারা স্বামীর কর্মসূত্রে রাঁচিতে থাকে। তাই পায়েলের কথাতেও একটু হিন্দি টান আছে। কি সুন্দর লাগছে আমার রাণীবিটিয়াকে,এই সবুজ শাড়িটা খুব ভালো লাগছে তোকে। আর তার সাথে লাল চুড়িগুলো খুব খুলেছে।"
    " সব এই পূজার পাকামি,আমার এত পসন্দ না। তবে মা তোমার ঐ কলকাত্তার লোকজন যদি ফালতু সওয়াল করে আমি কিন্তু ছাড়বোনা।"
            "অমন বলেনা",মেয়েকে একটু আদর করে একতলায় নেমে আসে ছেলের বাড়ির লোকজন এসে পড়েছে ততক্ষণে। ছেলের মা বাবা আর মাসি মেসো এসেছে।
         টুকটাক কথার পর পায়েলকে নিয়ে আসে ওরা। মেয়েকে দেখে মনে মনে ভাবেন ছেলের মা আশা,বাবা এতো একেবারে চীনে আহ্লাদী পুতুল মনে হচ্ছে। সাজ গোজে একদম পরিপাটি। যদিও ওরা সুন্দরী মেয়ে বলেই যোগাযোগ করেছেন তবে ছবিটা দেখে সবার পছন্দ হলেও আশার প্রথম থেকেই একটু কিন্তু ছিলো,ওনারও এক ছেলে আবার এই মেয়েটাও একমাত্র মেয়ে। আজকালকার ছেলেরা মোটামুটি কাকের বাসায় বড় হওয়া কোকিল ছানার মত। এত যত্ন করে ছেলেকে মানুষ করে শেষে তো শ্বশুরবাড়ির কথায় উঠবে বসবে। আরও একটা দুটো ভাইবোন থাকলে হত,ছেলেটা খুব তাড়াতাড়ি পর হয়ে যাবে। তাছাড়া এই তো আহ্লাদী মেয়ে এখনি মনে হচ্ছে বাবা মা চোখে হারাচ্ছে। এই মেয়ে বাপের বাড়ি সামলাবে না শ্বশুরবাড়ি সামলাবে? বাপের বাড়িতেই তো মন পরে থাকবে সংসার করবে কি?
মোটামুটি বিয়ে হতে না হতেই ছেলেটা বিক্রি হয়ে যাবে শ্বশুরবাড়ির কাছে,আর বৌয়ের কথায় ওঠবোস করবে।
        ততক্ষণে ওর বোন এ কথা সে কথা শুরু করেছে," তুমি তো বাইরে মানুষ হয়েছো,কলকাতা ভালো লাগবে তো? মা বাবাকে কিন্তু ছেড়ে যেতে হবে। অবশ‍্য আমরাও একদিন ছেড়ে এসেছিলাম,তোমার মাও এসেছিলো।"
        মেয়ের উত্তর শুনে অবাক হয়ে যায় আশা।
" পাপাকে আর মাকে ছেড়ে তো আমি কোথাও যাবোনা,আমাদের তো ওখানে ফ্ল্যাট আছে। মা পাপাকে ওখানে নিয়ে চলে যাবো পাপার রিটায়ারমেন্টের পর। আমরা সবাই একসাথে থাকবো।"
            বাহ্ এতো সব পরিকল্পনা করেই রেখেছে অবাক হয়ে যায় শুনে। নিজেই কথা বলে আশা," পড়াশোনা তো করেছো,মাকে বাড়িতে সাহায‍্য করো তো?অবশ‍্য মেয়েরাই তো মায়েদের কষ্ট বোঝে।"
   পায়েল বলার আগেই পরমা বলে," দিদি ঐ টুকটাক সবই জানে মোটামুটি, আমার শরীর খারাপ হলে চালিয়ে নেয়।
" না গো মা ঠিক বাত বলছেনা,আমি বাড়িতে থাকলে কাজ করতে চাইনা মা বকা দেয়। তবে হাল্কা কাজ করে নিই যখন দরকার হয়।আন্টি তোমার যে ছেলে আছে সে বাড়িতে তোমাকে হেল্প করে তো?"
    " এমা ও তো ছেলে! ও আবার কি করবে?আমার যদি মেয়ে থাকতো তাহলে নিশ্চয় করতো। তাহলে তো কোন চিন্তাই থাকতোনা আমার।"
"কেন আমার পাপা তো মাকে হেল্প করে কখনও আবার কুক করে আমাদের মাটন খাওয়ায়। একদম ইয়ামি হয়।"
  বাবা এই মেয়ে তো বচন সর্বস্ব মুখে কিছুই আটকায়না।ভাগ‍্যিস ছেলেটা আসেনি,নাহলে তো রূপ দেখেই হয়ত। না না এই মেয়েকে কি করে ঘরের বৌ করবে? এ তো একেবারে ঠোঁটকাটা। তখনই কর্তাকে বলেছিলো,এই সব মেয়ে চলবেনা। তা একেবারে সবাই বলে উঠলো এমবিএ করছে সুন্দরী। সব দিক দিয়েই ঠিকঠাক। তাও তো আশা কি কি রান্না জানো,ঘর গোছাতে পারো কিনা?এমন কিছুই বলেননি। তাতেই এমন কথা! পায়েলের আরও দুএকটা কথা শুনে ওদের আর ভালো লাগেনা। তখনি ঠিক করে নেন এই মেয়ে যতই সুন্দরী হোক,কিছুতেই চলবেনা। বলে কিনা,চাকরি তো এখন ছেলে মেয়ে দুজনেই করে তবে শুধু মেয়েরাই কাম করবে কেন? আর বাবা মায়েরও শাসন নেই,মেয়ে যে এত কিছু বলছে কোন শাসন নেই। উল্টে মা বলছে," দিদি আমার মেয়েটা খুব সরল,মনটাও খুব ভালো। আসলে আজকালের মেয়ে তো।"
         আশা মনে মনে ভাবেন তাই বড়ই হিসেবি হয়েছে। তারপর একটাই সন্তান বাবা মায়ের।
                 পরমার কথায় কিছু হলোনা,ওরা পরে জানাবেন বলে উঠে গেলেন। সবাই বুঝলো কি হবে পরে। তবে পরে পরমা জানতে পেরেছিলেন কারণটা ঘটকের কাছে,আর অবাক হয়েছিলেন। মায়ের থেকে ছেলেকে আলাদা করবেন এই শিক্ষা ওদেরও নেই আর মেয়েকেও দেননি। মেয়েও সবার সাথে মিলেমিশে থাকতেই ভালোবাসে।
            মাঝে কেটে গেছে চারটে বছর,আশা ছেলের বিয়ে দিয়েছেন বড় পরিবারে। মেয়েরা তিন ভাইবোন। যাক ভালো হয়েছে,আর ভুলেও এক মেয়ের ঘরে সম্বন্ধ দেখা নয়। সেবার ফিরে এসেই ছেলেকে বলেছিলেন," খুব সভ‍্য মেয়েটা,আজকাল পড়াশোনা শিখে ছেলেমেয়েগুলো একেবারে যা খুশি তাই বলে। শুধু ভাবে পড়াশোনা শিখে একেবারে মাথায় উঠে গেছে। আর মা বাবাও হয়েছে তেমনি,প্রশ্রয় দেয় ছেলেমেয়েকে আর কিছুই বলেনা। আমি কোন কথাই বলিনি,বলে কিনা তোমার ছেলে তোমাকে হেল্প করে তো? ছেলেটা যদি খেটেই মরে,কাজের থেকে এসে এক গ্লাস জলও না পায় তাহলে বৌ আনছি কেন ঘরে শুনি?"
             ছেলে হেসে বলে,"ছবিতে তো ভালোই লাগছিলো। তবে কথাগুলো কিন্তু একদম ফেলনা নয় মা। আমি বাড়িতে আছি তাই। আমার বন্ধুরা যারা বাইরে থাকে সবাই মোটামুটি রান্নাবান্না, কাপড় কাচা সবই করে। ওরাই মজা করে আমাকে বলে একদম লাল মূলো হয়ে মায়ের আদর খাচ্ছিস এখনো।"
        " যার যেমন কপাল বাপু,চিরকাল আদরে মানুষ করেছি। একটা কুটোও ভাঙতে দিইনি কখনো এ নিয়ে বলে কি হবে? মায়ের কাছেই তো আহ্লাদ করবে ছেলেপুলে।"
             তবে আশার কপালে বেশিদিন ছেলেকে আদর দেওয়া হলোনা। ওর নতুন বৌমা মলি প্রথম প্রথম ঠিকই ছিলো। তারপর যা হয় খুঁটিনাটি ব‍্যাপারে মনোমালিন্য,কথা বন্ধ কখনো বা চেঁচামেচি।বাচ্চা হওয়ার পর ছেলেকে স্কুলে দেবার অজুহাতে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে একদম বাপের বাড়ির পাড়ায় ফ্ল্যাট কিনে চলে গেলো। আর ছেলেও স্বাভাবিক ভাবেই বৌয়ের পিছুপিছু বাড়ি ছাড়লো। ছেলে মাসে এক দুবার এলেও বৌ বিশেষ কারণ না থাকলে আসেনা। আশা বাটি চচ্চড়ি,মুড়িঘন্ট,কচুর লতি রাঁধতে রাঁধতে চোখের জল ফেলে ভাবেন, ইশ্ ছেলেটা যে কি খাচ্ছে! কত ভালোবাসত এই রান্নাগুলো। এতটা দূরে চলে গেছে যে পাঠানোর পায়ও নেই। আর ঐ বৌ তো হাতে নখপালিশ লাগায় দিনরাত, রাঁধুনি না এলেই চলো হোমডেলিভারি বা অনলাইনে খাবার নেয়।
                         আশার মনখারাপের গতানুগতিক জীবনের মধ‍্যে এবার পুজোতে হঠাৎ বোনই প্ল‍্যান করলো ," দিদি চল অনেকদিন বাইরে বেরোসনা। এবার পুরীতে যাওয়ার প্ল্যান করছি। আর না করিসনা। অনেক তো ছেলে ছেলে করলি। কি লাভ হলো? ওরাও বেরোচ্ছে পুজোতে,চল আমরা আমাদের মত ঘুরে আসি।"
              সত‍্যি অনেকদিন বাদে এক টুকরো মুক্তির নিশ্বাসে আশার মনটা ভরে গেলো। পুরীতে এর আগে কতবার এসেছেন,একেক বারের এক এক রকম স্মৃতি। তবুও ভালো লাগে প্রত‍্যেকবারই।
             সমুদ্রের ধারে বসে আছেন আশা আর কর্তা সাথে বোনও ওদের পাশেই বসে চা খাচ্ছিলেন এক ভদ্রলোক ভদ্রমহিলা আর ছেলে,মেয়ে। বেশ আলাপ হয়ে গেলো ওদের সাথে। আশা প্রথমে বুঝতে না পেরে বলে ফেলেছিলো," বাহ্ আপনারা বেশ ছেলে বৌমা নিয়ে এসেছেন,খুব সুন্দর দুজনেই।"
  " না না দিদি এরা আমার ছেলে আর মেয়ে।"
আশা অবাক হয়ে দেখেন মেয়ে তো বিবাহিতা মনে হচ্ছে,আর ছেলে? বাঙালী বরাবরই কৌতূহলপ্রবণ। কিন্তু কিন্তু করে জিজ্ঞেস করতে যাবেন এর মাঝেই ফোন এলো আর ভদ্রমহিলা, ছেলে,মেয়ে ভদ্রলোক সবাই কথাতে ব‍্যস্ত হয়ে পরলেন। ভদ্রমহিলা তো হেসে গড়িয়ে পরছেন,আর হাসছে মেয়েও। " দেখেছো,কেমন চোটপাট করছে ওখান থেকেই। খাজাগজা যা খাবার খেয়ে নাও,কালই তো এসে পরবে এক বিরাট দল নিয়ে।"
                 কথাতে বুঝতে পারে আশা ওদের বৌমার ফোন আর বৌমার শাসনে সবাই গদগদ হয়ে আছে একেবারে।
      আশা কিছু বলার আগেই ভদ্রমহিলা বললেন," বৌমার ফোন,ফোনেই শ্বশুরকে একচোট নিলো মিষ্টি খাচ্ছে বলে। আমিও বাদ যাইনা। আসলে ওই তো ইনসুলিন দিয়ে দেয় বাড়ি থাকলেই। খুব দাপট,কিন্তু মনটা ভীষণ ভালো। মনেই হয়না বৌমা,একেবারে ঘরের মেয়ের মত।"
  " তা ও এলোনা কেন? আর আপনার জামাইও তো আসেনি।"
" আর বলবেননা,মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে তো ছেলের বৌ পছন্দ করে ফেললাম। সে এক কান্ড! আসলে যার যেখানে চাল মাপা।"
  " আমার জামাইয়ের মাসতুতো বোন হচ্ছে আমার বৌমা। দুই ভাইবোন আবার একই অফিসে কাজও করে। হঠাৎই ওদের একটা কনফারেন্স হলো। তাই বললো অনেকদিন ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথাও যাওনি যাও তোমরা, আমি আর দাদা আসছি দুদিন বাদে। ততক্ষণ আমাদের গালমন্দ করো ওখানে। আরে কি বলবো,ওরা না এলে ভালো লাগে!"
           দীর্ঘশ্বাস ফেলেন আশা,কত ভালো কপাল! ছেলে মেয়ে জামাই বৌমা সবাইকে নিয়ে কেমন সুখের সংসার। আর ওরা কেমন একা একা দিন কাটাচ্ছেন। ছেলে বেড়াতে যায় তবে বেশিরভাগ শ্বশুরবাড়ির সাথে।
                           মাঝে দুদিন জগন্নাথ দর্শন সমুদ্র স্নান আর কেনাকাটায় ব‍্যস্ত ছিলেন। কাল চলে যাওয়া তাই আজ আবার আশা বোনের সাথে এসে বসেছেন সমুদ্রের ধারে। মনটা উদাস হয়ে যায় ঢেউয়ের আনাগোনা দেখে। বোন চায়ের অর্ডার দিয়েছে। হঠাৎই পরিচিত গলার আওয়াজে পেছনে ফিরেই চোখাচোখি হয়ে যায়।
" এই তো দেখা হয়ে গেলো আবার। আসলে আমরা কালই চলে যাবো। এই সময়টা এখানে বসতে খুব ভালো লাগে।"
   " আমরা আরো দুটো দিন থাকবো। ওরা তো সবেই কাল এলো। ঐ যে আমার জামাই মেয়ে।"
     কথার মাঝেই আশা দেখেন,ভদ্রলোকের হাত নিয়ে আসছে ছেলে বৌমা।
   " আমার বেয়াই বেয়ান আর জামাইয়ের মাও এসেছেন। নাতিটাকে তো বৌমার মা বেশি সামলায়,আমার যা হাঁটু ব‍্যাথা ঐ দুষ্টুটাকে নিয়ে হিমসিম খাই।"
          " মাম্মিজি...এই নাও তোমার হ‍্যাজবেন্ডকে সামলাও। আমরা এবার পানিপুরী খাবো। তোমরা এখানে বোসো সবাই,গল্প করো। আমরা আসছি।"
          সবাই সামনে আসতেই আশার মুখটা একটু ছোট হয়ে যায়। অনেক খুঁজেও আশা অত সুন্দরী ছেলের বৌ পাননি তাই চেহারাটা মনে ছিলো। এখন আরও সুন্দর হয়েছে পায়েল,কোলে ছটফট করছে ওর বাচ্চাটা।
         " দেখলেন তো,কি শাসন! আর কিছু ছুটতে আর ছোটাতেও পারে সবাইকে।"
            আশার সাথে চোখাচুখি হয়ে যায় পায়েলের মায়ের। তাড়াতাড়ি ওদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এগিয়ে যান অন‍্য দিকে। হয়ত সেদিন ঠিকই বলেছিলেন ওর মা যে মেয়েটার মনটা ভালো। কিন্তু আশা ভয় পেয়েছিলেন একমাত্র মেয়ে তাও আবার আহ্লাদী আর ঠৌঁটকাটা হয়ত এরা ওর ছেলেটাকে পর করে নিজেদের করে নেবে।
        " দিদি মন খারাপ করিসনা,সবই আমাদের কপাল।কথায় বলেনা নির্বন্ধের চোখ কানা, হয়ত আমরাই মানুষ চিনিনি। আসলে সবটাই ভেতরের শিক্ষা,সেটা আমরা বুঝিনি। চল ওই দিকটায় গিয়ে বসি।"
          চারিদিকে আবছা অন্ধকারে সমুদ্রের ঢেউ দেখতে দেখতে আশার মনে হয় আসলে সবটাই কপাল নয়,অনেক সময় কপাল আমরাই তৈরি করি। আর সবটা বুঝতে অনেক দেরি হয়ে যায় তখন আর কিছু করার থাকেনা।
  সমাপ্ত:-
       
       
 
        

Comments

Popular posts from this blog

কথা দিলাম

#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...

চিত্রাণী (উপন‍্যাস ১)

 দক্ষিণের জানলাটা খুলে দিয়ে ওদের ঝুল বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছে রাঙা আজও সানাইয়ের মিঠে সুর টানে ওকে সেই কতবছর আগের ওর বিয়ের দিনের মতই। সেদিনের ছেলেমানুষী ভরা রাঙা আজ মাঝবয়েসে পা রেখেছে। পরনে লাল চেলীর বদলে শান্তিপুরের সরু পাড়ের আসমানী নীল শাড়ি। নিজের এলোমেলো চুলগুলো গুছিয়ে একটা খোঁপা বেঁধে বারান্দায় একটু ঝুঁকে দেখে রাঙা। ওর জা মানে বড়দি অবশ‍্য দেখলেই বলত, " সত‍্যি রাঙা তোর স্বভাব আর গেল না। এক রকম রইয়‍্যা গেলি, মাঝবয়সী বিধবা মানুষ তার আবার অত কি শখ বিয়েবাড়িতে উঁকি মারার? যা একবার নিচে গিয়া রান্নাঘরে ঢুইক‍্যা দ‍্যাখ গিয়া সুলতা কি করত‍্যাছে।"      আজ অবশ‍্য সেই চিন্তা নেই,দিদি দাদার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছেন সেই কোন সকালে। ফিরতে নাকি দুপুর গড়াবে একদম প্রসাদ পেয়ে আসবেন। বাবু ইউনিভার্সিটি গেছে ফিরবে সেই বিকেলে। মনে পড়ে যায় একসময় সবাই ওকে রাঙা বৌ বলে ডাকত।  ওর বর প্রথমদিনই বলেছিল," ইশ্ আমি প্রথম যখন শুনছিলাম রাঙা নামটা তখন এত হাসি পাইছিল কি কমু আর। রাঙা, এ আবার ক‍্যামন নাম? তবে মুখখানা দেইখ‍্যা বুঝলাম এমন লাল টুকটুকে সুন্দরীরে রাঙাই বলে বোধহয়। তুমি হইল‍্যা গিয়া আমার রাঙা ...
বাড়ি থেকে বেরিয়ে এয়ারপোর্টে আসা পর্যন্ত সময়ের মধ‍্যেই একটা ছোটখাটো কনটেন্টের ওপর শর্টস বানিয়ে নেবে ভেবেছে পিউলি। তারপর যখন এয়ারপোর্টে ওয়েট করবে তখন আরেকটা ছোট ভ্লগ বানাবে সাথে থাকবে প্লেনের টুকিটাকি গল্প। দেশে ফেরার আনন্দের সাথে অবশ‍্যই মাথায় আছে রেগুলার ভিডিও আপডেট দেওয়ার ব‍্যাপারটা। আর এই রেগুলারিটি মেনটেইন করছে বলেই তো কত ফলোয়ার্স হয়েছে এখন ওর। সত‍্যি কথা বলতে কী এটাই এখন ওর পরিবার হয়ে গেছে। সারাটা দিনই তো এই পরিবারের কী ভালো লাগবে সেই অনুযায়ী কনটেন্ট ক্রিয়েট করে চলেছে। এতদিনের অভিজ্ঞতায় মোটামুটি বুঝে গেছে যে খাওয়াদাওয়া,ঘরকন্নার খুঁটিনাটি,রূপচর্চা,বেড়ানো এইসব নিয়ে রীলস বেশ চলে। কনটেন্টে নতুনত্ব না থাকলে শুধু থোবড়া দেখিয়ে ফেমাস হওয়া যায় না। উহ কী খাটুনি! তবে অ্যাকাউন্টে যখন রোজগারের টাকা ঢোকে তখন তো দিল একদম গার্ডেন হয়ে যায় খুশিতে। নেট দুনিয়ায় এখন পিউলকে অনেকেই চেনে,তবে তাতে খুশি নয় সে। একেকজনের ভ্লগ দেখে তো রীতিমত আপসেট লাগে কত ফলোয়ার্স! মনে হয় প্রমোট করা প্রোফাইল। সে যাকগে নিজেকে সাকসেসফুল কনটেন্ট ক্রিয়েটার হিসেবে দেখতে চায় পিউল।         এখন সামার ভ‍্যাকেশন চলছে ...