#নাচুনি#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
"আমার দুই মেয়েকে আমি নাচ আঁকা সব শিখিয়েছি। মৌ দিদির সার্টিফিকেটগুলো নিয়ে আয় তো।"..."শুনুন ঐ তাতা থৈ নৃত্য আমার পাশের বাড়িতেও দেখেছি,বিয়ের পর সব শেষ। আমি ঘরের বৌ চাই। আমার সংসার গুছিয়ে রাখবে,লক্ষ্মীমন্ত হবে। আমার ছেলে তো তোমাকে দেখেই ভুলেছে,তাই আমি তো শুধুই সাক্ষ্মীগোপাল মানে ঐ হ্যাঁ তে হ্যা়ঁ মেলানো আর কি।" মনটা ভারী হয়ে যায় পিয়ার,পলাশকে ও ভালোবাসে। পলাশ তো জানে ও নাচে তবে মা এমন করে বলছেন কেন! মাকে বলতেই উত্তর পায়,"একটু মানিয়ে নিস সব ঠিক হয়ে যাবে দেখিস। প্রথমেই অশান্তি করতে যাসনা।"পলাশকে বলতেও একই উত্তর পেয়েছিলো," মা ঐ রকমই কথা বলে,একটু মানিয়ে নিয়ো সব ঠিক হয়ে যাবে। প্রথমেই মায়ের মুখে মুখে কথা বলতে যেয়োনা। মানে আমরা কেউই বলিনা।"..দীর্ঘশ্বাস ফেলে পিয়া এই মেনে আর মানিয়ে নিতেই হয়ত একদিন খুন হয়ে যাবে বা চাপা পড়ে যাবে স্বপ্নগুলো।
চন্দন আর লাল বেনারসীতে সেজে চোখে অনেক স্বপ্ন সাথে কিছুটা উৎকন্ঠা নিয়ে পলাশের হাত ধরে শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলো পিয়া। মানিয়ে নিতে আর মেনে নিতে পারবে তো সব কিছু। বাবা রাগ করে বলেছিলেন," তোর পছন্দ করা পাত্র,আমি নিজে দেখে দিলে এমন হোতনা।"..সত্যি কি তাই? কে জানে? তাহলে হয়ত মায়ের গানের রেওয়াজটাও থাকতো। ছোটবেলায় দেখেছে বাবা অফিস থেকে এসে মাকে হারমোনিয়াম নিয়ে বসে থাকতে দেখলে বাবার মুখ ভার হত। জল চা সব ঠিক সময়ে না পেলে গলার স্বর পাল্টে যেত বাবার।
দুধ আলতার থালাটা এগিয়ে দেন শাশুড়িমা," শোন সাবধানে থালায় আলতো করে পা ডুবিয়ে একটা একটা করে পা ফেলো। নাচের তালে পা ফেলার মত নয় কিন্তু। যা নাচুনি এখনকার মেয়েরা,সারাক্ষণ ছটফট করছে।" বলে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে একটু হাসেন। সত্যি এবার রাগ হয় পিয়ার,নিজের বাড়ি হলে হয়ত ফোঁস করত। কিন্তু নতুন বৌ হয়ে প্রথম পা রাখা বাড়িতে। সব কিছুই ভালো ভাবে শেষ করলো। উফ্,শাড়ি পরে টিপে টিপে পা ফেলা আর যেন পারা যাচ্ছেনা। বাড়ি হলে এতক্ষণে ওর প্রিয় রঙচটা নাইটিটা পরে ফেলতো। হঠাৎই শাশুড়িমা পদার্পণ করলেন,ওনাকে দেখলেই একটু তটস্থ হয় পিয়া আবার কি টিপ্পুনি মার্কা কথা বলবে কে জানে?.." একি এখনো শাড়ি ছাড়োনি? শাড়ি ছেড়ে নাও। এখন বাড়িতে লোকজন তাই কটা দিন একটু কষ্ট করো।তবে আজ রাতে আর বাবুর সাথে দেখা কোরনা। জানো তো এগুলো আমরা মানি।" অবাক হলো পিয়া,শাড়ি পরে ওর কষ্ট হচ্ছে এটা উনি বুঝতে পারছেন তাহলে!
প্রথমে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলো ভোর রাত থেকে এপাশ ওপাশ করে রাতটা কাটলো,খুব মনে হলো মায়ের আর বোনের কথা। শাশুড়ি মা পাশে শুয়েছেন যে কখন বুঝতে পারেনি। হঠাৎই দেখে ওর গায়ে একটা চাদর দেওয়া,আর গুটিশুটি মেরে ওনার গায়ের সাথে লেগে ঘুমিয়েছে। ঘুম ভাঙতেই সরতে চায় বুঝতে পারে ওনার শাড়ির আঁচলটা ওর গায়ে জড়িয়ে। তাই আর নড়তে পারেনা। ওনার গায়ের গন্ধটা পিয়ার নাকে লাগে,কেমন যেন একটা মা মা গন্ধ। কিন্তু ওর মায়ের মত কেউ,মা নয়।
আজ পিয়ার বৌভাত আর ফুলশয্যা। সকাল থেকে পলাশ অনেকবারই এসেছে এই ঘরে। অনেক রান্নাবান্না হচ্ছে বাড়িতে। মাসতুতো ননদ সাজিয়ে দেয় পিয়াকে সুন্দর করে। ফটোগ্ৰাফার পর পর ছবি তুলছে। শাশুড়িমা ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন ভাত কাপড়ের সময় হয়ে যাচ্ছে।
পিয়াকে এনে একটা পিড়ের ওপর দাঁড় করিয়ে দেয় ওরা। সবুজ গা আর লাল পাড়ের কাঞ্জিভরমে খুব সুন্দর লাগছে ওকে, পলাশের পরনেও লাল পাঞ্জাবি চিকনের কাজের। ওর সামনে দাঁড়িয়ে পলাশ,মুখে ওই দুষ্টু হাসিটা। সত্যি ছেলেটার একদম লজ্জা নেই,মাথা নিচু করে হাসে পিয়াও। " মুখটা এবার তোলো,তখন থেকে শুধু হাসছে। খাওয়া দাওয়া হবেনা নাকি? নে এবার থালাটা ওর হাতে দিয়ে যা বলতে বলেছি তাই বল।"
" উফফ্ কি ভারী থালাটা মা! কি যেন বলতে বলেছিলে? আরেকবার বলবে প্লিজ।"..."আজ থেকে তোমার ভাত কাপড়ের সব দায়িত্ব আমার আর যা বলেছিলাম..."চোখাচোখি হয় মা আর ছেলের,হাসেন শাশুড়িমা। ততক্ষণে পিয়ার হাতে থালাটা দিয়ে পলাশ বলে," আজ থেকে তোমার ভাত কাপড়ের আর হাসিমুখে রাখার সব দায়িত্ব আমার। আর নাচের দায়িত্বটাও নিলাম। কি বলো মা ঐ যে থৈ থৈ নৃত্যের।"থালায় কাপড়ের নীচ থেকে ঘুঙুর জোড়া আর একগোছা চাবি পলাশ তুলে দেয় পিয়ার হাতে। "এদিকে এসো তো আগে,তারপর ঘি ভাত দিয়ে খেতে বসবে। ওদের নীচের হলঘরটা পিয়াকে খুলতে বলেন শাশুড়িমা,খুলেই চোখটা জুড়িয়ে যায় পিয়ার। মেঝেতে কার্পেট আর দেওয়ালে পিয়ার অনেকগুলো নাচের ল্যামিনেশন করা ছবি। কে করলো এসব!
চোখ ফেরাতেই শাশুড়িমায়ের হাসিমুখটা নজরে পরে যায়। হাততালি দিয়ে ওঠে ননদরা। " চলুক তা থৈ নাচ,আরে বিয়ের পর সব শেষ হবে কেন। হোকনা আবার নতুন করে শুরু।"copyright protected
ভালো লাগলে লেখিকার নামসহ শেয়ার করুন।
Image source.google
সমাপ্ত:-
#কথা_দিলাম# #রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী# "চৌধুরীদের বাড়ির ছোটমেয়ে না? কি চেহারা হয়েছে গো! এই তো গত পুজোর আগের পুজোতে ওদের দুগ্গাদালানে দেখেছিলাম চুল ছেড়ে ধুনুচি সাজাচ্ছিলো।কি সু...
Comments
Post a Comment