#রঙের_ছোঁয়া#
#রুমাশ্রী_সাহা_চৌধুরী#
হবু শাশুড়িমায়ের জরুরী তলব প্রায়দিনই মোবাইলে দেখে তিয়াসা হোয়াটস আ্যপ খুললেই.." একদিন সময় কোরো,সময় তো এগিয়ে এলো। এবার তো বিয়ের বাজারপত্র শুরু করতে হবে।" সময় এগিয়ে আসছে কিন্তু তিয়াসার সময় কই?অফিসের কাজের চাপে সময় বের করাই মুশকিল।
তিয়াসের আ্যরেঞ্জ ম্যারেজ হচ্ছে শেষপর্যন্ত। চিরকাল বোকাসোকাই রয়ে গেলি ওর বন্ধুরা বলতো। তাই ওরা যখন বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে ডেটে যেতো তখন তিয়াসা একা একা ফুচকা খেতে খেতে বলতো," দাদা ঝালটা একটু জমিয়ে দেবেন আর টকটাও,ওহ্ এত কিপ্টের মত ছোলা দেবেননা তো। ধনেপাতা দিননা একটু গন্ধই তো পাচ্ছিনা।"
সেই সময় কেউ ফোন করলে যথারীতি আনএবল টু আনসার। আর তারপরেই উঃ আঃ করতে করতে ফোন ধরা," ওহ্ সবসময় ভুলভাল সময়ে ফোন করিস কেনরে?"
" তা কি করছিলি শুনি,কোন স্পেশাল মানুষের সাথে কোয়ালিটি টাইম কাটাচ্ছিলি নাকি?"
" একদম তাইরে,খুব ডিস্টার্ব করলি,এখনও উত্তেজনায় হাঁপাচ্ছি,দেখছিসনা।"
" কে রে বলনা,বলনা।"
" আরে আমার গোপন প্রেম ফুচকা সঙ্গে বেশি করে ঝাল আর টক।"
"তোর আর কিছু হবেনা,একদম হোপলেস।"
সেই তিয়াসার কদিন বাদেই বিয়ে,ঘটক স্বয়ং শাশুড়িমা নিজে। সান্ধ্যভ্রমণ সেরে বেশ কিছুটা ক্যালোরি কমিয়ে অনুজা ফুচকাওয়ালার সামনে,খুব বেশি নয় দশ পনেরো টাকা বাজেটে যে কটা পাওয়া যায়। তার সাথে ফাউটাউ দিয়ে মোটামুটি হয়ে যায়। ফুচকাওয়ালার সাথে ফাউ নিয়ে ঝামেলা করতে গিয়েই আলাপ হয়েছিলো তিয়াসার সাথে। " বাজে কথা বোলোনা কাকু,আমার একটা ফুচকা কম আছে,গুনেছি আমি। আর ওনাকে ফাউ দেবেনা কেন শুনি।"
" আরে মাইজি একটা বেশি লিয়েছেন।"
" আরে তুমি নতুন বসছো নাকি? জানোনা দশটাকায় কটা দেয়?"
ফাউ নিয়ে ঝামেলায় সমর্থন করা ঝগড়ুটে তিয়াসাকে ভালো লেগে গিয়েছিলো অনুজার। আবার দেখা হয়েছিলো দিন পনেরো বাদে সেদিন কায়দা করে গল্প করে জেনে নিয়েছিলেন অনেক কিছু। ওনার নিষ্কর্মা ছেলে যে একটা প্রেমিকা জোটাতে পারেনি আঠাশ বছরেও তার সাথে বেশ মানাবে মেয়েটাকে। এই করে তিয়াসার বাড়িতে একদম হানা,আর মোটামুটি বিয়ে পাকা হয়ে গেলো দুই পক্ষের সম্মতিতে। বন্ধুরা হেসে বললো," আরে তোর কপাল বটে,শেষে ভালোই শ্বশুরবাড়ি আর বর পাচ্ছিস।"
শ্বশুরবাড়ি কেমন হবে জানেনা,তবে শাশুড়িমা আর সবাই বেশ ভালোই। বরটাও মন্দ নয় তবে মায়ের পছন্দে তার অগাধ বিশ্বাস। ওর মা নাকি খুব সুন্দর সুন্দর শাড়ি পরে। দারুণ রান্না করে। তিয়াসা বলেছিলো," আমি তো শাড়িই পরিনা। আমি এইসব শুনে কি করবো?"
" ওমা মা তো পুজোতে তোমার জন্য শাড়ি আর কুর্তি কিনেছে। আমাকে দেখাচ্ছিলো সেদিন।"
তবে পুজোর জামাকাপড় দেখে তিয়াসার চোখ কপালে,যদিও ওর মায়ের আর সবার ভালোই লেগেছে। ওরে বাবা সব লাউড লাউড কালার,লাল নীল হলুদ সবুজের মেলা। হবু শাশুড়িমাকে তবুও গদগদ হয়েই বলতে হয় মায়ের ধমকানিতে," হ্যাঁ আন্টি খুব ভালো হয়েছে,আমার পছন্দ হয়েছে।"
" পুজোতে পরবে তো? আর কুর্তি টপগুলো অফিসে পরবে?আমাকে ছবি পাঠিয়ো।"
তেমন হয়েছে ছেলেটা মায়ের জন্য কিনেছে একদম একটা চওড়া লাল পাড়ের মাহেশ্বরী সিল্ক। ওকে দেখালো," শোনো মা ভীষণ লাল ভালোবাসে তাই মায়ের জন্য আমি সব সময় লালই কিনি।"তিয়াসার ফাটিয়ে বলতে ইচ্ছে করলো," ওরে বুদ্ধুরাম,লাল ছাড়াও জগতে আরও কিছু রঙ আছে যেগুলো চোখকে আরাম দেয়।"
নিজের বিয়ের শাড়ি কিনতে গিয়ে প্রথমে একদম চুপ করে থেকেও শেষে না বলে পারেনা,"আন্টি এই শাড়িটা একটু লাইট কালার হলে ভালো হত।ঐ রঙটা নিই?"
নেবো না বলে নিই বলতেই হা হা করে ওঠে অনুজা," সে কি নতুন বৌ এমন ম্যাটমেটে রঙ কেনে নাকি?"মায়ের ছেলেটাও হয়েছে তেমনি সেও হাঁটে মায়ের পেছনে। যাক্ শেষ পর্যন্ত অনুজাই বললো," ঠিক আছে ছাড় ওকে নিতে দে পছন্দ করে।"
শ্বশুরবাড়িতে এসে দুধে আলতায় পা ডুবিয়ে হোঁচট খায় তিয়াসা চারিদিকে রঙের সমাহার আর তার মাঝে ওর রঙিন শাশুড়িমা আর শ্বশুরমশাই। বিয়ের দিন অনুজা যায়নি,অনুজা পুরোনোপন্থী কিছুটা এখনও ওসব খুব মানে, ছেলের বিয়ে মায়েদের দেখতে হয়না এইসব আরকি। আজ শাশুড়িমাকে সত্যিই সুন্দর লাগছে,সাত্যকি ঠিকই বলেছিলো মাকে লাল শাড়িতে খুব ভালো লাগে। আর গিন্নির আব্দারে বোধহয় ওর শ্বশুরমশাইও সেজেছেন। বাড়িও সেজেছে একদম রঙিন হয়ে নতুন বৌয়ের আসার অপেক্ষায়।
শ্বশুরবাড়িতে প্রথম আসার অভিজ্ঞতা ভালোই। অনুজা হাসতে হাসতে বলে গেলো," শোনো কাল ফুচকাওয়ালা আসবে,আমি বলে দিয়েছি সাজানোর আগেই তোমাকে কয়েকটা খাইয়ে দেবে।" বয়েস বোধহয় ইচ্ছেতেই কমে যায়,অনুজারও হয়ত তাই হয়েছে। আজ তিয়াসাও মুগ্ধ হলো অনুজাকে দেখে বেনারসি আর গয়নায়। সত্যিই খুব ভালো লাগছে।
ফুলশয্যার দিন দুপুর থেকেই ঘরের দরজা বন্ধ,ঘর সাজানো চলছে তবে ওরা বর বৌ দেখতে পারবেনা। " আরে সাজগোজ করোনা ভালো করে। এত টাকা দিয়ে লোক এনেছি সাজানোর ঘরে তো তোমরাই শোবে আমরা তো আর শোবোনা।" পাশের থেকে ওর পিশিশাশুড়ি বলে," বৌদি,ছেলের বিয়েতে তুমি যা দিচ্ছো তোমাদের ফুলশয্যাটা আরেকবার হলে মন্দ হয়না।" এবার লজ্জা পায় অনুজা,ননদকে বকুনি দেয় তবে শাশুড়িমা আর শ্বশুরমশাইয়ের চোখে চোখে প্রেম তিয়াসার নজর এড়ায়না। ইশ্ ওর বাবা মা যদি এমন হত। মা তো একেবারে ঠাকুমা হয়ে গেছে,কিছু বললেই বলে.." আরে বয়েস তো হচ্ছে নাকি?" আর এদিকে শাশুড়িমা যেন উড়ে বেড়াচ্ছেন মনে মনে এখনো বোধহয় পঁচিশ।
বৌভাতের পরে ফুলশয্যার ঘরে ঢোকার সময় ননদবাহিনী এসে পথ আটকালো," দাদা আগে টাকা দে তবে বৌ পাবি।"সে এক কান্ড! সেখানেও অনুজা এসে বকাঝকা করে সামলালেন। " দেখো এবার তোমার ঘর,লাল গোলাপ আর রজনীগন্ধায় সেজেছে ওদের ঘর। বিছানার চাদরটাও লাল।"মনে মনে তিয়াসা বললো ওহ্ রক্তাক্ত হচ্ছে হৃদয় এখন থেকেই এত লাল দেখে। সত্যি এরা লাল ছাড়া কিছু বোঝেনা।
তবে আজ আর সাত্যকিকে বলতে ইচ্ছে করলোনা তিয়াসার ওর শোয়ার ঘরে হাল্কা রঙের চাদর পাতা থাকে। আজ যে রঙের ছোঁয়া লেগেছে তিয়াসার মনেও আর সেই রেশটুকু হয়ত রয়ে যাবে সারা জীবন।
" মা তোমার মত কিন্তু লাইট কালার মামণিকে দিয়োনা,জানোতো ডিপ কালার পছন্দ করে।" ওর মা একটু বিরক্ত হয়ে বলে," শোন অফিস থেকে একদিন আসবি নিজে পছন্দ করে নিবি শাশুড়ির শাড়ি।"
" কত বুদ্ধি করে চলতে হয় জানো? যে দেবতা যে ফুলে সন্তুষ্ট।"
মেয়ের কথা শুনে ওর মা হেসে ফেলে বাবা একেবারে পাকা গিন্নি হয়েছে এই কদিনেই।
অনুজার ছোট ছোট ভালো থাকার টিপসগুলো খুঁটিয়ে লক্ষ্য করে তিয়াসা। " মামণি কোথায় যাবে গো আজ? কই বাপি সাজেনি কেন?" ওর শ্বশুরমশাই ইশারায় দেখান মাথাটা গেছে।
" আমার আজ মনটা ভালো নেই গো তাই একটু সাজলাম। যাই একটু হেঁটে আসি সামনে থেকে।"তিয়াসা বুঝতে পেরে ঠেলে শ্বশুরমশাইকেও পাঠায়। সাত্যকি বাড়ি ফাঁকা দেখে অবাক মা নেই বাবা নেই,তিয়াসা ততক্ষণে কিছুটা স্ন্যাকস আর কফি করে নিয়ে আসে ওর পরনেও সুন্দর অরেঞ্জ সবুজ কুর্তি।
হয়ত অনুজার মন ভালো করতে গিয়ে তিয়াসাও একটু স্পেশ পেয়ে গেলো,একঘেঁয়ে জীবনে একটু মুচমুচে স্বাদ। ঘন্টা দেড়েক বাদে ফিরলো ওর মামণি বাপি,দুজনের মুখেই হাসি। " কেমন কাটলো সন্ধ্যেটা,বাপি মামণিকে আর একা ছেড়োনা সাথে যেয়ো। এতক্ষণ কোথায় ছিলে?"
" আরে আমাদের ঝিলের পারে একটা ক্যাফে হয়েছে ওখানেই একটু কফি খেলাম।"
একটু খুশির ছোঁয়ার রঙ আজ খেললো শাশুড়ি বৌমা দুজনের গালেই। "বাড়িতে সবসময় ঝগড়া না করে দুজনে একটু ঘুরে এলেই তো পারো।"সাত্যকিও বলে।
" যা কিপ্টে তোর বাবা!ও নাকি আমায় নিয়ে বেরোবে?আমি তো আর তিয়াসার মত চাকরি করিনা।"
"মা তোমার পকেটমানি আছে না?ওটা খরচ করবে।"
" পকেটমানি খরচ করবে তাহলে শাড়ি কিনবে কি দিয়ে?"
"আবার অশান্তি কোরনা বাপি প্লিজ।"
আলমারি গুছোলে নাকি মন ভালো হয়,লকারে গেলে নাকি মেজাজই ফুরফুরে হয়ে যায়। ফুচকা খেলে নাকি ডিপ্রেশন উধাও হয়। অদ্ভুত অদ্ভুত টিপস অনুজার তিয়াসা অবাক হয়ে যায়। একঘেঁয়ে সংসারের মধ্যে নিজেকে তরতাজা বোধহয় এইভাবেই রাখে অনুজা।
"মা,আজ শুধু সেদ্ধ ভাত?"..হ্যাঁ রে আজ রান্না করতে ইচ্ছে করছিলোনা তাই ভাবলাম গরম গরম ভালোই লাগবে। একটু ঘি দেবো?
খাওয়ার পর হাত চেটে সাত্যকি বললো," ভালো খেলাম মা,মাঝে মধ্যে এমন সেদ্ধভাত করে নিয়ো যেদিন ভালো লাগবেনা।
তিয়াসা বোঝে ভালো থাকতে হলে বোধহয় সংসারের কাছের মানুষগুলোর ভালো হওয়াটাও জরুরী। বাপি আর সাত্যকি সেটুকু জায়গা দেয় মামণিকে।
তিয়াসার মাঝে মাঝে কিছুটা বাড়াবাড়ি মনে হলেও বুঝতে চেষ্টা করে,হয়ত বা সংসারে থাকতে হলে আপনজনকেই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগে তাই।
এখন বেশ ভালো হয়েছে ঐ পহেলে আপের মত অবস্থা। " মা কোন শাড়িটা নেবো দেখো।"
"না না তুমিই দেখো কোনটা ভালো লাগছে। আমি বরং ঐ দিকটায় একটু বসি, পায়ে একটা ব্যাথা হচ্ছে।"
তিয়াসা বোঝে ওরা দুজনেই দুজনকে আজকাল স্পেশ দিতে চাইছে। তবে রেষারেষি আর রাগারাগিও হয় যথেষ্ট। আরে পাশাপাশি শাশুড়ি বৌ থাকবে আর রাগারাগি হবেনা তাই হয়? সেটা তো মা আর মেয়েতেও হয়। আসলে অনুজা মায়েরই মত।রাগ হলে কিছুটা চ্যাঁচামেচি করে নেয় ঠিক তেমনি তিয়াসাও। তারপরই দেখা যায় সাত্যকির আনা ফুচকার প্যাকেট থেকে ফুচকা খাচ্ছে দুজনে। রাগ গলে জল হয়ে তেঁতুলজলের মত বেশ টক ঝাল হয়ে গেছে। আসলে দুজনেই ঝামেলাটা নিজেদের মধ্যে মিটিয়ে নেয় বরগুলোকে ঢুকতে দেয়না।
" মামণি আমি কিন্তু ওকে বলবো এবার,এখানে আর থাকা যাবেনা।"
"ছিঃ এখনও নাবালিকা তুমি,আমার সাথে তোমার ঝামেলা এর মধ্যে বরকে ঢোকাচ্ছো কেন? আমি কি আমার বরের কাছে শেলটার চেয়েছি?আমি পছন্দ করে আনলাম এখন আমিই শত্রু।"
অনুজার কথায় এমন একটা ঝাঁঝালো মজা লুকোনো থাকে তিয়াসা আর রাগ করতে পারেনা।
আজকাল অনুজা ফিরোজা খুঁজলেও তিয়াসা লাল খোঁজে। খুঁজতেই হবে আবার তো অনুষ্ঠান বাড়িতে,নাতনির মুখেভাত বলে কথা।
সংসারে কাজ বেড়েছে নতুন মানুষকে ঘিরে। আগে বাড়ি চুপচাপ থাকলেও এখন নানা সুরে সানাই বাজে। মেয়েটাও হয়েছে তেমন,বিকেল হলেই ঠাম্মুকে সেজেগুজে নিতে হবে তাকে,কিছু না হলে ছাদে নিয়ে যেতে হবে।
" যাক তোমার শাড়িগুলো একটু হাওয়া পাচ্ছে নাতনির কল্যাণে,আর বিকেলে বেরুবেরুও হচ্ছে।"
" তা আর হবেনা! পুরোনো শাড়ি পরা দেখলে মুখ ঘুরিয়ে নেয় রীতিমত।
দেখতে দেখতে মেয়ের তিনবছর হতে চললো অনেদিনই তেমন করে দূরে কোথাও যাওয়া হয়না ওদের তাই সাত্যকি বেড়ানোর কথা বলতেই তিয়াসা রাজী হয়ে গেছিলো। " আচ্ছা মামণি বাপিকে বলো একবার ওরা যদি যায়?"
" বলে দেখো মনে হয় রাজি হবেনা,অনেকটা দূরের পথ তারপর আবার পাহাড়। বাবা আজকাল যেতে চায়না অতদূরে।"
কদিন ধরেই চলেছে গোছগাছ তারপরে যাওয়া। একগাদা শীতের জামাকাপড় কেনা।
যাওয়ার সময় শ্বশুরমশাই বললেন," দিদিভাইকে দেখে রেখো আর কি কদিনের জন্য আমরা বেকার হয়ে গেলাম। এবার শুধু ঘুমোবো।"
"তা কেন শুনি?মামণির তো অভ্যেসই হয়ে গেছে বিকেলে সাজুগুজু করার। তাই দুজনে বেরুবেরুতে চলে যাবে বিকেল হলেই। " ধ্যুৎ দিদিভাই ওকে নড়াতে পারে,আমি বললেই বলবে পায়ে ব্যাথা।"
সারাদিন মেয়ে সামলাতে বেড়াতে এসেও ওরা হিমসিম খাচ্ছে। সত্যিই ঠাম্মু দাদানের আদরে খুব বেড়েছে দুষ্টুটা। শুধু বায়না আর বায়না। "দাঁড়া এই তো দুদিন পরেই যাবো,খুব বকা দেবো দাদান আর ঠাম্মুকে তোকে আদরে বাঁদর করার জন্য।"
সাত্যকির ফোনটা বাজছে," হ্যালো বলো,কি বলছো? কখন? কোথায় আছে এখন? আমি কিছু বুঝতে পারছিনা। আচ্ছা চিন্তা কোরনা সব ঠিক হয়ে যাবে। যে করেই হোক কাল দুপুরের মধ্যে পৌঁছে যাবো।
ছুটোছুটি উৎকন্ঠা সবটুকুই শেষ হয়ে গেলো,হয়ত ওদের আসারই অপেক্ষায় তখন বাড়ির অন্যরা সবাই। কেমন যেন সবটাই দুঃস্বপ্নের মত একটা ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যাওয়া এলোমেলো বাড়িতে ঢুকলো তিয়াসা। ওর রঙিন হাসিখুশি সংসারটা আজ বড়ই রঙহীন। অনুজাকে নিয়ে এলো ওরা,সাত্যকিকে কখনও এমন বাচ্চাদের মত কাঁদতে আর চিৎকার করতে দেখেনি তিয়াসা। " আমার মা কখনও এমন শাড়ি পরবেনা,আমি কিছুতেই তোমাকে পরতে দেবোনা। নিয়ে যাও তোমরা এই সব।"
কেউ কিছু বুঝিয়ে পারছেনা,কান্নায় ভেঙে পরে সাত্যকি। কেটে গেছে দুটো দিন,এই দুইদিনে অনুজা তেমন ঘর থেকে বেরোয়নি। সবটাই সামলাচ্ছে তিয়াসা,অদ্ভুত শান্ত হয়ে গেছে ওর ছোট্ট মেয়েটা। এই ঘর ও ঘর দাদানকে খুঁজে এখন বড় ক্লান্ত,ঠাম্মুকে ও ভয় পায় তাই কাছে যায়না,অনুজা আজ অপরিচিত নাতনির কাছে। সাত্যকিও এদিকে ওদিকে থাকে,খুব একটা মায়ের কাছে আসেনা। তিয়াসা সবটাই বোঝে,বরকেও বোঝায়। দুজনেই কাঁদে কখনও মনের ভার হাল্কা হয়।
গঙ্গায় স্নান করে শুদ্ধ হয়েছে ওরা সবাই। আত্মীয়রা সমালোচনা করলেও ওর মাকে তিয়াসা আগেই বলে দিয়েছিলো কি রঙের শাড়ি কিনতে হবে। শাশুড়িমাকে গোলাপি পাড় দেওয়া ফিরোজা রঙের শাড়িটা যত্নে পরিয়ে দেয় তিয়াসা। " এত রঙিন শাড়ি আমি?"
আর বলতে দেয়না তিয়াসা.." বাপি খুশি হবে মা,তোমার ছেলে খুশি হবে। আমার মেয়েটা আবার তোমার কাছে আসবে। তুমি কি তা চাওনা?"
অনেকদিন বাদে ছেলেটা এসে কাছে বসেছে,নাতনিটা কোলের কাছে এসে খেলা করছে। অনুজার রঙ মুছে যাওয়া জীবনের ক্যানভাসে আজ ছোট ছোট রঙের শিশিতে একটু ভালোবাসার ছোঁয়া নিয়ে একদম ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ওর আপনজনেরা যাদের আন্তরিকতা আর ভালোবাসা হয়ত ধীরে ধীরে প্রলেপ লাগাবে রক্তাক্ত হৃদয়ের ক্ষতে। copyright protected
ভালো লাগলে লেখিকার নামসহ শেয়ার করুন।
সমাপ্ত:-
Comments
Post a Comment